মানুষের প্রতি জ্বিনের আসক্তি। বাস্তব ঘটনা। বাঁচার ১০টি আমল।







মানুষের প্রতি জ্বিনের আসক্তি বাস্তব ভয়ানক ঘটনা বাঁচার ১০টি আমল

https://youtu.be/GMht4tBNRsg

তিনি কথাগুলি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলছিলেন আমি মনযোগ দিয়ে শুনছিলাম আর আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছিল

তিনি আমাদের মসজিদের ইমাম বয়স প্রায় ৭০ হবে, অত্যন্ত পরহেজগার, তাহাজ্জুদ গুজার গত ৩০ বছর যাবৎ উনাকে দেখে আসছি উনার কাছে মানুষ নানা ধরনের জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যা, বান টোনা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসেন তিনি নাম মাত্র হাদিয়া নিয়ে মানুষের সমস্যার কুরানী চিকিৎসা করেন 

আজ মাগরিবের পর সে ইমাম সাহেবের সাথে কিছুক্ষন বসলাম তিনি বললেন তাঁর জীবনের ভয়ংকর কয়েকটি ঘটনা তাই আজ আমি আপনাদের কাছে শেয়ার করব, আশা করি আপনারা ঘটনাগুলি শুনে নিজেরা সতর্ক হবেন এবং শয়তান জ্বীনের অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন

তিনি কথাগুলি কিছুটা এভাবে বলছিলেন

আমাদের এলাকার কলেজের প্রফেসর বোনের বাড়িতে গেল তার বোন মাসের গর্ভবতি রাতে যখন বোনের সাথে বসে বসে কথা বলছিল হঠাৎ কেউ যেন সে প্রফেসরকে থাপ্পর মারল প্রফেসর বুঝতে পারল, প্রফেসর আমাকে আগে থেকেই চিনে সে পরের দিন আমাকে নিয়ে তাঁর বোনের বাড়ী গেল আমি সব বৃত্তান্ত শুনে যথাযথ ব্যবস্থা নিলাম মেয়েটি ভয় পাচ্ছিল আমাকে সব বলতে কারন জ্বিনটি নাকি তাকে বলেছে যদি সে জ্বিনের কথা অন্য কাউকে বলে তাহলে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দিবে সে ভয়ে মেয়েটি কাউকে কিছু বলে না জ্বিনটির স্ত্রীকে অন্য স্থানে বন্ধী করা হয়েছে তাই জ্বিনটি মহিলার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে, প্রতিদিন তার কাছে আসে তো আমি কিছু তদবির আমল দিলাম কয়েক সপ্তাহ সে তদবির আমল করার পর আলহামদুলিল্লাহ সে দুষ্ট জিন সে মহিলাকে ছেড়ে দিয়েছে



ইমাম সাহেব আফসোস করে বলছিলেন ইদানিং ধরনের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে সম্ভবত মহিলারা বেপর্দা চলাচল করার কারনে এসব বেশী হচ্ছে এক মহিলার স্বামী বিদেশ থাকে আর সে একা বাসায় ভাড়া থাকে, সে ঘরে প্রতিদিন এক জ্বিন এসে নাকি তার সাথে জবরদস্তি করে শেষ মেষ সে তার ভাইকে নিয়ে আমার স্মরণাপন্না হয়, আমি কিছু তদবির আমল দিলাম আল্লাহর রহমতে সেও এখন ভাল আছে



তবে খুব চিন্তায় পরড়লাম যখন এক ইন্টার পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে তাঁর মা আমার কাছে আসল, তাঁরা বিষয়টি বলতে লজ্জা পাচ্ছিল, আমি বললাম লজ্জা করলে কিভাবে চিকিৎসা করব? অবশেষে সব কিছু খুলে বলল, মেয়েটি বলল হুযুর আমি ভয় পাই, তাই রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাই কিন্তু আমি লাইট জ্বালিয়ে শুয়ার পর জ্বিনটি এসে আমার কামরার লাইট বন্ধ করে আমার পাশে শুয়ে পড়ে আর আমার সাথে জবরদস্তি করে, আর কথা কাউকে বললে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় 

বিষয়টি খুবই চিন্তার গত বছর যাবৎ আমি ধরনের সমস্যা বেশী দেখতে পাচ্ছি তাঁকেও কুরানী চিকিৎসা দিলাম আল্লাহর ফযলে সেও এখন ভাল আছে

যে ঘটনাটা শুনে আমি শিউড়ে উঠলাম তা হল ক্লাস নাইনের এক উঠতি বয়সের ছেলে মাত্র বালেগ হয়েছে, সে আসল তার বাবার সাথে ছেলেটি তাঁর সাথে জ্বিনের কার্যকলাপের কথাগুলি বলতে খুবই লজ্জা পাচ্ছিল, তবুও তাঁর বাবার ধমকের মুখে সব কিছু আমাকে খুলে বলল তবে সে কথাগুলি তার বাবার সামনে বলতে পারল না তাই তার বাবাকে বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে সে যে কথাগুলি বলল তা খুবই ভয়ংকর সে বলল হুযুর আমি আপনাকে কথাগুলি বললে আমার ক্ষতি হবে, কারন জ্বিনটি আমাকে সাবধান করে দিয়েছে, তখন আমি ছেলেটিকে অভয় দিলাম বললাম জ্বিন তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না তখন ছেলেটি বলল আমি সবে মাত্র বালেগ হয়েছি, আমি রুমে যখন স্টাডি করে ঘুমাতে যাই এক সুন্দরী নারী জ্বিন আমার রুমে এসে আমার বিছানায় শুয়ে পড়ে আর সে আমার সাথে মজা করে, আমাকে ব্যবহার করে, আমাকে জোর জবরদস্তি করে, আর এসব কথা কাউকে বললে সে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তাঁকেও কুরানী চিকিৎসা আমল দিলাম সে তা পালন করে রাতে শুল তখন জ্বিনটি তাকে দুর থেকে তাঁকে ফুসলাতে লাগল তুমি এসব করিও না, তোমার গায়ের তাবিজটা খুলে ফেল, কিন্তু ছেলেটি আমার দেয়া আমলগুলি নিয়মিত করার ফলে এখন সে জ্বিনটি তাকে ছেড়ে চলে গেছে এখন সেও আল্লাহর ফজলে সুস্থ 

এরপর ইমাম সাহেব বললেন

গত সপ্তাহ যাবৎ ঢাকা থেকে এক লোক আমার কাছে ফোন করছে তিনি অনেক জায়গায় চেষ্টা করে ব্যথ হয়ে জানিনা কার কাছ থেকে আমার নাম্বার পেয়েছে উনার মেয়েকে নাকি এক ছেলে জ্বিন চালান দিয়েছে ছেলেটি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল সে প্রস্তাবে মেয়েটির অভিভাবক রাজি না হওয়ায় ছেলেটি জিন চালান দিয়েছে, আর যখনই মেয়েটির বিয়ের জন্য অন্য কোথাও থেকে প্রস্তাব আসে সেদিন রাতেই সে দুষ্ট জ্বিন এসে সে মেয়েটিকে মারতে থাকে, নানান ভাবে ভয় লাগাতে থাকে এখন তাঁরা চায় আমি ঢাকা গিয়ে সে জ্বিন হাজির করে তাঁকে বন্ধি করি কিন্তু আমি অসুস্থ ঢাকায় গিয়ে এসব করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিলাম, তারা বলল তাহলে অন্য একজন কে ঠিক করে দিতে, কিন্তু আমি তেমন কাউকে দেখছি না যারা ভাল আমেল, বর্তমানে বেশীরভাগই হল ধান্দাবাজ যদি আমি অন্য কারো ঠিকানা দিই আর সে যদি কাজ না করে তাহলে আমার বদনাম হবে, তাই থেকে বিরত থাকলাম

আমি ইমাম সাহেবকে প্রশ্ন করলাম হুযুর আপনি বলছেন ইদানিং জ্বিনেরা বেশী মানুষের উপর আসক্ত হচ্ছে মানুষকে ভোগ করছে এর কারন কি?

তখন ইমাম সাহেব বললেন বিশেষ করে বেপর্দা চলাফেরা করলে, অপবিত্র নোংড়া জীবনযাপন করলে, ভিতু টাইপের লোক হলে, নামাজ কোরান তেলাওয়াতের প্রতি উদাসিন হলে, ঘরে কোরান তেলাওয়াত না করলে জ্বিনের আছর হতে পারে, গর্তে পেশাব করলে, ঘরের সাপ মারলে, সন্ধ্যাবেলা যখন অন্ধকার নেমে আসে তখন বাহিরে থাকলে েইত্যাদি কারনে জ্বিনের আছর হতে পারে

আমি আবার প্রশ্ন করলাম হুযুর থেকে পরিত্রানের উপায় কি?

তখন ইমাম সাহেব বললেন- জ্বিনের অনিষ্ঠ আছর থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত কয়েকটি আমল করতে হবে প্রথমত নামাজ কালাম নিয়মিত করতে হবে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন

]

وَمَن يَعْشُ عَن ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا
فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ


যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর জিকির থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে- হয় তার সঙ্গী [ সুরা যূখরুফ ৪৩:৩৬ ]



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেহ যখন ঘুমিয়ে যায় শয়তান তখন তার মাথার কাছে বসে তিনটি গিরা লাগায় প্রতিটি গিরা দেয়ার সময় একটি কথা বলে: তোমার সামনে আছে দীর্ঘ রাত, তুমি ঘুমাও যখন সে নিদ্রা থেকে উঠে আল্লাহর জিকির করে তখন একটি গিরা খুলে যায় এরপর যখন সে অজু করে তখন আরেকটি গিরা খুলে যায় এরপর যখন নামাজ পড়ে তখন শেষ গিরাটি খুলে যায় ফলে সে সারাদিন কর্মতৎপর সুন্দর মন নিয়ে দিন কাটায় আর যদি এমন না করে, তাহলে সারাদিন তার কাটে খারাপ মন অলসভাব নিয়ে” (বর্ণনায় : বুখারী মুসলিম)

হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল:

(
) ঠিকমত অজু করলে, নামাজ আদায় করলে শয়তানের চড়াও থেকে মুক্ত থাকা যায়

(
) খারাপ মন নিয়ে থাকা অলসতা শয়তানের কুমন্ত্রণার ফল

(
) রীতিমত নামাজ আদায় করলে শরীর মন প্রফুল্ল থাকে কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায় অলসতা দূর হয়ে যায়

(
) ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে অজু গোসল করার আগেই আল্লাহর জিকির করা উচিত ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার নির্দিষ্ট দুআ আছে এটি পাঠ করা সুন্নত এতে শয়তানের কুপ্রভাব দূর হয়ে যায়

পেশাব পায়খানাতে যাওয়ার সময় দুআ পাঠ করতে হবে:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সকল পেশাব পায়খানার স্থানে জিন শয়তান থাকে অতএব তোমাদের কেহ যখন এখানে আসে সে যেন বলে, আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজু বিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ (বর্ণনায় : ইবনে হিব্বান)

প্রতিদিন সকালে সন্ধ্যায় দুআটি তিনবার পাঠ করতে হবে

(
আউজু বিকালি মাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা) অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্যাবলীর মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় নিচ্ছি (বর্ণনায় : মুসলিম, তিরমিজী, আহমাদ)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে- একটি জিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আছর করতে চেয়েছিল তার সাথে আরেকটি জিন ছিল জিব্রাইল এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনি বাক্যটি বলুন (আউজু বিকালি মাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা) তাহলে ওরা আপনাকে কিছু করতে পারবে না (বর্ণনায় : ইবনে আবি হাতেম)

প্রতিদিন নিদ্রা গমনকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করতে হবে



হাই তোলার সময় মুখে হাত দিতে হবে :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ হাই তোলে তখন সে যেন তার মুখে হাত দিয়ে বাধা দেয় কারণ হাই তোলার সময় শয়তান প্রবেশ করে (বর্ণনায় : মুসলিম আবু দাউদ)

ঘরে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহ বলে ঘরে প্রবেশ করেতে হবে

পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করতে হবে :

খারাপ জিন শয়তান অপবিত্র নাপাক স্থানে বিচরণ করে থাকে জিনের আছর থেকে বাঁচতে সর্বদা অপবিত্র ময়লাযুক্ত স্থান থেকে দূরে থাকতে হবে

সন্ধ্যার সময় বাচ্চাদেরকে বাহিরে বের হতে না দেয়া:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন রাত্রি ডানা মেলে অথবা তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হও, তখন সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখবে বাহিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখবে কারণ, তখন শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে যখন রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়ে যায় তখন তাদের ছেড়ে দিতে পারো আর দরজা বন্ধ করে দেবে আল্লাহর নাম স্মরণ করবে জেনে রাখো, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না (বর্ণনায় : বুখারী)

কোন গর্তে পেশাব-পায়খানা না করা:

হাদীসে এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন কাতাদাহ রা. কে জিজ্ঞস করা হল নিষেধের কারণ কি? তিনি বললেন, বলা হয়ে থাকে গর্ত হল জিনদের থাকার জায়গা (বর্ণনায় : আবু দাউদ)

ঘরে কোন সাপ দেখলে তা মারতে তাড়াহুড়ো না করা :

যদি ঘরে কোন সাপ দেখা যায় তবে সাথে সাথে তাকে না মেরে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা তাকে ঘর ছেড়ে যেতে বলা তারপর যদি না যায় তাহলে মেরে ফেলা কারন জিনেরা সাপের সুরত ধরে থাকে

স্ত্রীর সাথে মিলনের সময় দুআ পাঠ করা :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেহ যখন নিজ স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে ইচ্ছে করে তখন যদি বলে, বিছমিল্লাহ, আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতান, অজান্নিবিশ শাইতান মা রাযাকতানা (আল্লাহর নামে আমরা মিলিত হচ্ছি, হে আল্লাহ আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখুন আর আমাদের যে সন্তান দান করবেন তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখুন) তাহলে মিলনে সন্তান জন্ম নিলে সে সন্তানকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না (বর্ণনায় : বুখারী মুসলিম)

আসুন আমরা আলোচনায় বণিত আমলসমুহ করে নিজেকে নিজেদের সন্তান পরিবারের লোকজনকে দুষ্ট জ্বিন শয়তানের আছর থেকে নিরাপদ রাখি আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন আমিন


কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.