সারা বছর অফুরন্ত বরকত লাভের আমল। ২০২২ সালে দুঃখ বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

 সারা বছর অফুরন্ত বরকত লাভের আমল। ২০২২ সালে দুঃখ বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সকল প্রসংশা আল্লাহর জন্য, তিনিই নেক লোকদের বন্ধু। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদে বরহক নাই। তিনি এক তার কোন শরিক নাই। তিনিই সব মাখলুকাতের মাবুদে বরহক। আর আমি এটাও সাক্ষী দিচ্ছি আমাদের নবী (দ) আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল।

তিনি তামাম আম্বিয়া কেরাম ও রাসুলদের সরদার। হে আল্লাহ নবীর উপর তার আহলে বায়ত ও তামাম সাহাবায়ে কেরামের উপর রহমত সালামতি ও বরকত নাজিল ফরমাও।

আর মাত্র ৩ দিন পর ২০২২ সাল শুরু ২০২১ সাল অনেক ঘটনা দুঘটনার মধ্যে দিয়ে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছে, অনেকে অনেক আপনজনকে এই বছর হারিয়েছেন বিষেষ করে মহামারীর ছোবল। আগামী ২০২২ সালটা আসার আগে আমাদের এমন কিছু কাজ করা দরকার যাতে বছরটি আমাদের জন্য বরকতময় হয়, এমন কোন ভুল করা যাবেনা যাতে ২০২২ সালটা আমাদের জন্য দুঃখ কষ্ট ও বিপদের হয়। আজকের ভিডিওতে আমি আজ এমন কিছু কাজের কথা বলব যা করে আপনি গোটা বছরটাকে বরকতময় করতে পারবেন, তাই প্রত্যেকের জন্য এ ভিডিওটি খুবই গুরুত্বপূণ হবে- আশা করি শেষ পর্যন্ত সম্পূণ আলোচনা শুনবেন।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ঘরোয়া পরিবেশে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয় স্বজনের মাঝেই নতুন বছরের প্রথম দিনে ভালো খাবার-দাবারের আয়োজন, নতুন পোশাক গ্রহণের মধ্যেই বর্ষবরণ উদযাপন সীমাবদ্ধ ছিল। ঘটা করে কখনো কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন হতো না। সময়ের আবর্তে বর্তমানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঘটা করে নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই বর্ষবরণ উদযাপন করে থাকে। ইসলামে বর্ষবরণের কোনো রুসুম-রেওয়াজ অনুমোদন নেই। হোক তা ইংরেজি, বাংলা কিংবা আরবি নববর্ষ।

উপমহাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আতশবাজি, ঘণ্টাধ্বনি, ফল খাওয়া, কাঁচ তথা তৈজশপত্র ছুঁড়ে মারা, যৌবন হারানো ও চুল-ভ্রু সাদা হওয়ার ভয়ে নির্ঘুম রজনী পার করার মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করা হয়। কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে যার কোনো ভিত্তি নেই। অথচ নির্দিষ্ট সময় ও সূর্যকে আহবান করতে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ টা ০১ মিনিটে নববর্ষ উদযাপনের উদ্দেশ্যে আতশবাজি, বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচ-গান, তরুণ-তরুণীর ফ্রি স্টাইলে ফুর্তিসহ বিভিন্ন আনন্দ উৎসব শুরু হয়। যার ফলশ্রুতিতে ঘটে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অথচ অন্যায় ও যৌন উত্তেজনামূলক কোনো কাজ এবং আতশবাজিসহ অপচয়মূলক  কাজ কোনো ধর্মই সমর্থন করে না।

আনাস ইবনে মালিক(রা.) বর্ণিত:রাসূলুল্লাহ(সা.) যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন মদিনাবাসীদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। নবী(সা.) বললেন, এ দুটো দিনের তাৎপর্য কি? তারা বলল, জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম। রাসূলুল্লাহ(সা.) বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে এর পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন: ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর । [সূনান আবু দাউদ]
এ হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং নতুনভাবে উৎসবের জন্য দুটো দিনকে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে অমুসলিমদের অনুসরণে যাবতীয় উৎসব পালনের পথকে বন্ধ করা হয়েছে।

অমুসলিম, কাফির কিংবা মুশরিকদের উৎসবের দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দিন, এদিনে তারা নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার। এমনকি খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বহুলোক তাদের পবিত্র বড়দিনেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে মদ্যপ হয়ে ওঠে, এবং পশ্চিমা বিশ্বে এই রাত্রিতে কিছু লোক নিহত হয় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালানোর কারণে।
অপরদিকে মুসলিমদের উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই বিষয়টি বুঝতে হলে ইসলামের সার্বিকতাকে বুঝতে হবে। ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়, বরং তা মানুষের গোটা জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়। তাই একজন মুসলিমের জন্য জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত, যেমনটি কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন: (ওয়ামা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিআবুদুন)
আমি জ্বিন ও মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনি। [সূরা যারিয়াত:৫৬]

সেজন্য মুসলিম জীবনের আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং তা নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন করতে পারার মাঝে, কেননা মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। তাই মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালবাসা ।

কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, মুসলিমদেরকে এ ধরনের কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে ইসলামের যে মূলতত্ত্ব: সেই তাওহীদ বা একত্ববাদের ওপর পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

আমাদের সমাজে নববর্ষ যারা পালন করে, সে অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে: পটকা ফুটিয়ে বা আতশবাজি পুড়িয়ে রাত ১২টায় হৈ হুল্লোড় করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের শান্তি বিনষ্ট করে নববর্ষকে স্বাগত জানানো, ব্যান্ড সঙ্গীত বা অন্যান্য গান-বাজনার ব্যবস্থা, সম্ভ্রান্ত পল্লীর বাড়ীতে বা ক্লাবে গান-বাজনা, মদ্যপান শেষে ব্যভিচারের আয়োজন ইত্যাদি এছাড়া রেডিও টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান ও পত্রপত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্র ও রাশিফল প্রকাশ। নতুন দিন তথা সূর্যকে স্বাগত জানানো এ ধরনের কর্মকান্ড মূলত সূর্য-পূজারী ও প্রকৃতি-পূজারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুকরণ মাত্র,

নতুন বছরকে বরণ করতে গিয়ে মুসলমান যুবক যুবতীরা যে উদাম নৃত্যে মেতে উঠে সে সময়টি হল আল্লাহর রহমত নাজিল হওয়ার সময়, আপনি যদি আগামী বছরটাকে যদি সত্যিকার অর্থে বরকতময় করতে চান তাহলে আপনার উচিত সে সময়টিতে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া নামাজ পড়ে আল্লাহর রহমত কামনা করা। বিগত বছরের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাওয়া আর আগামী বছরের জন্য রহমত প্রাথনা করা। কারন প্রতিদিন রাতের শেষ অংশে আল্লাহ তায়ালা আহ্বান করে বলেন কে আছ গুনাহ মাফ চাওয়ার গুনাহ মাফ চাও, কে আছ রিজিক চাওয়ার, কে আছ রহমত চাওয়ার আমার কাছে চাও, আর সে সময়টাকে এবাদতের মাধ্যকে আল্লাহকে রাজি করে আল্লাহর কাছ থেকে নেয়ামত গ্রহণ করাই হল বুদ্ধিমানের কাজ

বর্ষবরণে ইসলামি সংস্কৃতি হওয়া উচিত ছিল, রাতের অন্ধকারে বিদায় নেয়া বছরের সকল অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজের জন্য আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করা এবং আগামীর দিনগুলোতে সুন্দর ও সৎ জীবনযাপনে দৃপ্ত শপথে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। কিন্তু আজকের মুসলিম আক্বিদা বিশ্বাসের মানুষ ভিন্নধর্মী সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হয়ে নিজেদের দ্বীন ও ঈমানকে করছে কুলষিত। আসুন, আমরা বিগত জীবনের ভুল সংশোধনে আমলনামা সমৃদ্ধকরণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হই। সুতরাং আমরা বর্তমান সময়ে ফেতনার সে অন্ধকারে বাস করছি, আমাদের চারপাশে ঘোর মূর্খতার অন্ধকার, কুসংস্কারের অন্ধকার, বিদআতের অন্ধকার ও শিরকের অন্ধকারে সঠিক পথ খুজে পাওয়া দুষ্কর। বিশেষ করে ইহুদি-খৃস্টান ও কাফেরদের সংস্কৃতি আমাদের ঘ্রাস করে রেখেছে। আমরা তাতে গভীরভাবে মগ্ন হয়ে পড়েছি। নিজেদের দ্বীন ও আদর্শের পরিবর্তে তাদের কালচার ও আবিষ্কৃত অনুষ্ঠানে মেতে আছি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে, আমাদের পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্তুতিসহ মুসলিম উম্মাহকে অন্যায় ও ফাহেশা কাজ থেকে হেফাজত করে কল্যাণের পথে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.