যে ১০টি ভুলে কুরবানি নষ্ট হয়ে যায়। কুরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম
যে ১০টি ভুলে কুরবানি নষ্ট হয়ে যায়। কুরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম, মুফতি সাহেব। আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির পশু জবেহ
করার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা জানতে চাই।
মুফতি সাহেব: ওয়া
আলাইকুমুস সালাম, কোরবানির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যা জানতে চান,
জিজ্ঞাসা করুন। ইনশাআল্লাহ,
আমি সঠিকভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
১. মুফতি সাহেব,
কোরবানির পশু জবেহ করার সঠিক সময় কখন?
মুফতি সাহেব: কোরবানির
পশু জবেহ করার সময় শুরু হয় ঈদের নামাজের পর থেকে। অর্থাৎ,
১০ই যিলহজ্ব ঈদের নামাজ ও খুতবা শেষ
হওয়ার পর থেকে কোরবানি করা যাবে। এই সময়কাল ১২ই যিলহজ্বের সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকে।
তবে, প্রথম
দিনেই (১০ই যিলহজ্ব) কোরবানি করা উত্তম।
২. জবেহ করার সময় কোন বিষয়গুলো বিশেষভাবে
খেয়াল রাখতে হবে?
মুফতি সাহেব: জবেহ
করার সময় এ বিষয়গুলো বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে:
- ধারালো ছুরি: অত্যন্ত ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হবে, যাতে পশুর কষ্ট কম হয়।
- বিসমিল্লাহ বলা: জবেহ করার সময় "বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার"
বলা ওয়াজিব। ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিলে জবেহ হালাল হবে না।
- চারটি রগ কাটা: কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী এবং দুটি শাহরগ
(রক্তনালী) – এই চারটি রগ কাটা নিশ্চিত করতে হবে। কমপক্ষে তিনটি রগ
কাটলে জবেহ সহীহ হবে।
- কিবলামুখী করা: পশুকে কিবলামুখী করে শোয়ানো মুস্তাহাব।
- অন্য পশুর সামনে জবেহ না করা: এক পশুর সামনে অন্য পশুকে জবেহ করা অনুচিত।
৩. জবেহ করার জন্য কি কোরবানির মালিকের
উপস্থিত থাকা জরুরি?
মুফতি সাহেব: না,
কোরবানির মালিকের জবেহ করার সময় উপস্থিত
থাকা জরুরি নয়। মালিক যদি জবেহ করতে সক্ষম হন, তবে নিজের হাতে জবেহ করা উত্তম। তবে যদি
তিনি জবেহ করতে না পারেন বা অন্য কাউকে দিয়ে জবেহ করান,
তাহলে তার পক্ষ থেকে অন্য যে কেউ জবেহ
করতে পারবেন। তবে জবেহ করার সময় মালিকের অনুমতি বা নিয়াফত (প্রতিনিধিত্ব) থাকতে
হবে।
৪. নারী বা অপ্রাপ্তবয়স্করা কি কোরবানি
জবেহ করতে পারবে?
মুফতি সাহেব: মুসলিম
নারী, পুরুষ,
প্রাপ্তবয়স্ক,
অপ্রাপ্তবয়স্ক –
যে কেউ বিসমিল্লাহ বলে শরীয়তসম্মতভাবে
জবেহ করলে তা হালাল হবে। তবে, জবেহকারীকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে এবং জবেহ করার নিয়ম
সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, যাতে পশুর কষ্ট কম হয় এবং রগগুলো সঠিকভাবে কাটা হয়।
৫. কোরবানির পশুকে জবেহ করার আগে কি পানি
পান করানো উচিত?
মুফতি সাহেব: হ্যাঁ,
কোরবানির পশুকে জবেহ করার আগে যথেষ্ট
পরিমাণে পানি পান করানো মুস্তাহাব। এতে পশু শান্ত থাকে এবং জবেহ প্রক্রিয়ায় কম
কষ্ট হয়।
৬. জবেহ করার পর পশুর অঙ্গচ্ছেদ কি দ্রুত
শুরু করা যাবে?
মুফতি সাহেব: না,
জবেহ করার পর পশুর সম্পূর্ণ প্রাণ বের
হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। সাধারণত, রক্ত সম্পূর্ণ বের হয়ে যাওয়া এবং পশুর
নড়াচড়া সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার পরই চামড়া ছাড়ানো বা অঙ্গচ্ছেদ শুরু করা উচিত।
দ্রুত অঙ্গচ্ছেদ শুরু করলে পশুর অপ্রয়োজনীয় কষ্ট হয়,
যা মাকরূহ।
৭. জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে
গেলে কি হবে?
মুফতি সাহেব: যদি
জবেহ করার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে "বিসমিল্লাহ" না বলা হয়,
তবে সেই জবেহকৃত পশু হালাল হবে না। আর
যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলবশত ভুলে যাওয়া হয় এবং স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে বলা হয়,
তাহলে জবেহ সহীহ হবে,
ইনশাআল্লাহ। তবে সতর্ক থাকা অত্যন্ত
জরুরি।
৮. কোরবানির পশুর রক্ত কী করা উচিত?
মুফতি সাহেব: কোরবানির
পশুর রক্ত নাপাক। তাই জবেহ করার পর রক্ত প্রবাহিত হওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং
পরবর্তীতে সেই রক্ত মাটিচাপা দেওয়া বা এমনভাবে অপসারণ করা উচিত,
যাতে পরিবেশ নোংরা না হয় এবং
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয়।
৯. কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির বিধান কী?
মুফতি সাহেব: কোরবানির
পশুর চামড়া বিক্রি করা জায়েজ, তবে সেই বিক্রিত অর্থ নিজেদের কাজে লাগানো জায়েজ নয়। বরং
সেই অর্থ গরিব-মিসকিন বা মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং-এ দান করা আবশ্যক। চামড়া
বিক্রি না করে সরাসরি গরিবকে দান করাও জায়েজ।
১০. কোরবানি করার সময় যদি কেউ অমুসলিম হয়,
তাহলে কি কোরবানি সহীহ হবে?
মুফতি সাহেব: না,
কোরবানি জবেহকারীকে অবশ্যই মুসলিম হতে
হবে। অমুসলিম দ্বারা জবেহকৃত পশু কোরবানি হিসেবেও হালাল হবে না এবং সাধারণভাবে
খাওয়ার জন্যও হালাল হবে না, যদি না আহলে কিতাবের (ইহুদি ও খ্রিস্টান) জবেহের নির্দিষ্ট
শর্তাবলী পূরণ হয়। কিন্তু কোরবানির ক্ষেত্রে মুসলিম হওয়া পূর্বশর্ত।
মুফতি সাহেব: আশা
করি, এই
প্রশ্নোত্তরগুলো কোরবানির পশু জবেহ করার বিষয়ে আপনার ধারণা স্পষ্ট করতে সাহায্য
করবে। আল্লাহ তায়ালা আপনার কোরবানি কবুল করুন।
কামাল সাহেব: জাযাকাল্লাহ
খাইরান, মুফতি
সাহেব। আপনার মূল্যবান পরামর্শের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় জানা হয়ে গেল।
কোন মন্তব্য নেই