নামাজে যে কাজ জায়েজ আর যে সব কাজ না জায়েজ
নামাজের অজানা বিষয়সমুহ
নামাজে যে সব কাজ করা জায়েজ
সুপ্রিয় সুধী
মন্ডলী আজ আমি পবিত্র সহিহ বুখারী শরীফের বেশী কিছু হাদীস শরীফের আলোকে নামাজের অবস্থায়
যে সব কাজ করা বৈধ তা আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব, আমরা অনেকে এসব বিষয় না জানার
কারনে নামাজে এসব বৈধ কাজ করতে ভয় পায়, যদি এ বিষয়গুলি আমাদের জানা থাকে তাহলে আমরা
অনেক ধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারব, তাছাড়া এ হাদীসগুলির মধ্যে একটি চমৎকার হাদীসও
আসবে যাতে প্রিয় নবীজি শক্তিশালি শয়তানকে ধাক্কা দেয়া ও পাকড়াও করে মসজিদের খুঁটিতে
বেঁধে ফেলার ঘটনাটিও আসবে চলুন বিস্তারিত আলোচনা করি..
বুখারী শরীফের
দরসে আজকে পরিচ্ছেদ হল নামাজে হাত দ্বারা কংকর সরানোর পরিচেছদ।
ইসলামের প্রথম
যুগে নামাজ পড়ার সময় বতমান যুগের মত তেমন জায়নামাজের ব্যবহার ছিল না, যার ফলে অনেক
সময় সিজদার জায়গায় কংকর এসে যেত, যার কারনে কপাল জমিনে রেখে সিজদা করা কষ্টকর হয়ে যেত,
আর শরীয়ত আমলে কলিল অথ্যাৎ হালকা ভাবে একবার শুধু সে কংকর সরানোর এজাজত দিয়েছে। বুখারী
শরীফের হাদীস নং ১২০৭ হযরত মুয়াইকিব (রাঃ) হতে বনিত তিনি বলেন নবী করিম (দঃ) ঐ ব্যক্তির
ব্যপারে ফরমায়েছেন, যে তার সিজদার জায়গা থেকে কংকরসমুহ পরিস্কার করে, নবীজি এরশাদ করেন
যদি তুমি এ কাজ কর তাহলে একবার কর, অথ্যাৎ নবী করিম (দঃ) একবার করার এজাজত দিয়েছেন
যদি বার বার করা হয় তাহলে আমলে কাছির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, আর এটা নামাজের খুশু খুজু
বা একাগ্রতার বিরুধী একটা কাজ।
বুখারী শরীফ এবারের পরিচ্ছেদ হল নামাজে সিজদার জায়গায় কাপড় বিছানোর পরিচ্ছেদ
হাদীস নাম্বার
হল ১২০৮, হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) এ হাদীসের বণনাকারী তিনি বলেন আমরা নবী করিম (দঃ)
এর সাথে প্রচন্ড গরমে নামাজ পড়তাম, যখন আমরা আমাদের কারো চেহেরা জমিনে রাখতে না পারতাম
তখন নিজের কাপড় জমিনে বিছিয়ে সে কাপড়ের উপর সিজদা করতাম।
অথ্যাৎ তখন জামা
ছিল খুব ঢিলা ঢালা আর জামার হাতা বা আস্তীন ছিল বড় বড় আর সে আস্তিন বিছিয়ে গরমের সময়
সাহাবায়ে কেরাম সিজদা করে নিতেন। আমাদের নবী করিম (দঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম খুবই সাদাসিদা
জিন্দেগী যাপন করত তারা বেশীরভাগই জমিনের উপর সিজদা করত, বতমান জামানার মত তেমন জায়নামাজ,
কাপেট এসব ছিল না তাই সে সুন্নতকে আদায় করার জন্য কখনো কখনো আমাদেরও সরাসরি জমিনে সিজদা
করা উচিত। এর ফলে নম্রতা আসে। যখন মসজিদে গেলেন সেখানে সামান্য ধুলাবালি থাকলেও তাতে
সিজদা করতে দিধাদ্বন্দ করা উচিত নয়, মাটি যদিও কপালে লেগে যায় তাতে যদি রিয়ার সম্ভাবনা
আসে তাহলে তা নামাজ শেষে কপাল থেকে মুছে ফেলতে পারবেন। তেমনি ভাবে যদি ঈদগাহে নামাজ
পড়তে গেলেন সেখানে যদি পরিস্কার জমিন হয় তাহলে চেষ্টা করুন সোজা জমিনে সিজদা করার।
তবে এ হাদীস থেকে এটাও প্রমানিত হল যদি কেহ কাপড় বিছিয়ে তার উপর সিজদা করে তাও নিষেধ
নাই, বরং জায়েজ, যারা মক্কা মদিনায় হজ্ব কিংবা ওমরায় যান তারা দেখবেন সেখানে কি গরম
আর এমন গরমে জমিনের উপর সিজদা করাটা খুবই কষ্ট সাধ্য তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে কাপড়
বিছিয়ে কিংবা জায়নামাজ বিছিয়ে তাতে নামাজ পড়াটা জায়েজ আছে। তবে কখনো কখনো সোজা জমিনে
সিজদা করার চেষ্টা করুন।
এবারের বাব বা পরিচ্ছেদ হল – সে সব আমলের পরিচেছদ যা নামাজে জায়েজ
মুল কথাটা এমন
যে হুজরা ছিল ছোট মা আয়শা (রাঃ) পা লম্বা করে শুয়ে থাকতেন আর নবী করিম (দঃ) আয়শা (রাঃ)
যে পাশে পা লম্বা করে বিছানো থাকত সে পাশে গিয়ে কিবলার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতেন,
যখন নবী করিম (দঃ) সিজদায় যেতেন তখন সৈয়দা আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ) নিজের পা গুটিয়ে ফেলতেন
যেন নবী করিম (দঃ) সিজদা করতে পারেন।
হাদীস নং ১২০৯,
হযরত আয়শা (রাঃ) হতে বনিত তিনি বলেন আমি নবী করিম (দঃ) এর কিবলার দিকে (অথ্যাৎ তিনি যেখানে সিজদা করবেন সেখানে)
পা লম্বা করে শুয়ে থাকতাম, আর তিনি নামাজ পড়তেন, যখন তিনি সিজদা করতেন তিনি আমাকে ইশারা
করতেন তখন আমি পা গুটিয়ে ফেলতাম, যখন তিনি আবার দাঁড়িয়ে যেতেন তখন আমি পা আবার লম্বা
করে বিছিয়ে দিতাম,
এ হাদীস দ্বারা
এ মাসায়ালা জানতে পারলাম প্রয়োজনে নামাজের হালতে ইশারা করা যায় তাতে নামাজ ভঙ্গ হয়
না।
পরের হাদীস ১২১০নং
হাদীস হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত তিনি বলেন, নবী করিম (দঃ) একবার নামাজ পড়ানোর
পর ফরমালেন, যে শয়তান আমার কাছে আসল আর আমার উপর হামলা করল যাতে আমার নামাজ নষ্ট করে
দিতে পারে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে এটার উপর শক্তি দিল তাই আমি তাকে ধাক্কা দিলাম আর আমি
ইচ্ছা করলাম যে তাকে আমি কোন একটা পিলারের সাতে বেঁধে রাখব, এমনকি তোমরা তাকে সকালে
উঠে দেখতে পেতে, কিন্তু আমার হযরত সুলায়মান (আঃ) এর এ দোয়া মনে পড়ে গেল, আয়াতটি সুরা
সোয়াদ এর ৩৫ নং আয়াত,
قَالَ رَبِّ
اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَّا يَنبَغِي لِأَحَدٍ مِّنْ بَعْدِي إِنَّكَ
أَنتَ الْوَهَّابُ
সোলায়মান বললঃ হে
আমার পালনকর্তা, আমাকে
মাফ করুন এবং
আমাকে এমন সাম্রাজ্য দান করুন যা
আমার পরে আর
কেউ পেতে পারবে
না। নিশ্চয় আপনি
মহাদাতা। [ সুরা সা’দ ৩৮:৩৫ ]
এ হাদীসে এটা পরিস্কার হল যে ইবলিশ যে আদম (আঃ) কে সিজদা করতে অস্বিকার
করেছে, সে শয়তান হল জিন জাতীর মধ্য থেকে, আর জিনদের মধ্যে কাফের মুসলমান এভাবে বিভিন্ন
ধমের জ্বিন আছে, আর এ সব জ্বিনদের মধ্যে যারা কাফের ও দুষ্ট প্রকৃতির হয় তাদেরকে শয়তান
বলা হয়, আর এ হাদীসে দেখা যাচ্ছে নবী করিম (দঃ) এর উপর নামাজ অবস্থায় একটা শয়তান আক্রমন
করে বসল, আর নবীজি তাকে ধাক্কা দিল, অপর এক রেওয়ায়েতে আছে আমি তাকে ঘাড়ে শক্ত করে ধরলাম
যাতে তার জিহ্বা বাহিরে বের হয়ে গেল, আর সে জিহ্বা আমার হাতে লাগল সে জিহ্বার ঠান্ডা
আমি হাতে অনুভব করলাম, আমরা সাধারান লোকেরা জিনকে দেখতে পাই না কিন্তু আল্লাহ তায়ালা
যাদেরকে রুহানি শক্তি দেন তারা এদেরকে দেখতে পারেন আর এদেরকে পাকড়াও করতে পারেন, জিনেরা
হয় খুব শক্তিশালি কিন্তু আমাদের আকা (দঃ) এমনভাবে ধরল যে শক্তিশালি জিনের জিহ্বাও বের
হয়ে গেল, নবী করিম (দঃ) আরো বলছেন আমি যদি তাকে মসজিদের খুটির সাথে বেঁধে ফেলতাম তাহলে
তোমরা তাকে দেখতে পেতে, অথ্যাৎ এটাও প্রিয় নবীজির একটা মুযেজা যে তিনি নিজ হাতে শয়তানকে
বেঁধে ফেলল তাকে সকলে দেখতে পারত। অপর এর রেওয়ায়েতে আছে যে আমি চিন্তা করছিলাম তাকে
বেঁধে রাখব আর সকালে মদিনার বাচ্চারা এসে তার সাথে খেলবে, কিন্তু পরক্ষনেই আমার ভাই
হযরত সুলায়মান (আঃ) এর দোয়া মনে পড়ল, তিনি দোয়া করেছিলেন হে আল্লাহ আমাকে এমন বাদশাহি
দান করুন যা আর কারো হবে না, আল্লাহ তায়ালা
হযরত সুলায়মান (আঃ) কে জ্বিনদের উপর শক্তি দিয়েছিলেন তাদের উপর কতৃত্ব দিয়েছিলেন, আর
তিনি জ্বিনদের থেকে কাজ আদায় করে নিতেন, আমাদের প্রিয় নবী করিম (দঃ) ও শয়তান ও জ্বিনদের
উপর ক্ষমতা রাখা সত্বেও সুলায়মান (আঃ) েএর সে দোয়ার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি নিজের
ক্ষমতা প্রকাশ করলেন না, বরং সে শয়তান কে ছেড়ে দিলেন। এখান থেকে এটাও পরিস্কার হল যারা
বিভিন্ন ওয়াজিফা বা আমল করে জ্বিনকে কাবু করে তা শরীয়তে এজাজত নাই, কারন আমাদের প্রিয়
নবীজি হযরত সুলায়মান (আঃ) এর কথা চিন্তা করে নিজেই জিন বা শয়তানকে ছেড়ে দিলেন।
আর এ হাদীস থেকে
আরেকটি বিষয় ক্লিয়ার হল, যে শয়তান যেখানে সবশ্রেষ্ট নবীর উপর হামলা করতে পারে সে শয়তানের
কাছে আমি আর আপনি কি? সুতরাং আমাদেরকে শয়তান মরদুদ এর শয়তানি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর
নিকট সদায় আশ্রয় প্রাথনা করা জরুরী। আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজিম।
বুখারী পরের পরিচ্ছেদ- নামাজের হালতে যদি সওয়ারী পালিয়ে যায়
হাদীস নং ১২১১
হযরত আজরক বিন কায়েস (রাঃ) হতে বনিত তিনি বলেন আমরা আহওয়াসে খারেজিদের বিরুদ্ধে জিহাদ
করছিলাম, সে সময় আমি নদীর পারে ছিলাম আর তখন িএকজন নামাজ পড়ছিল আর তার সওয়ারীর লাগাম
তার হাতে ছিল, সওয়ারী যখন পালিয়ে যাচ্ছিল সে সে সওয়ারীর পিছনে পিছনে দৌড়তে লাগল, শোবা
বলেন সে ব্যক্তি হযরত আবু বরজা আসলামী (রাঃ)ছিলেন, খারেজীদের মধ্যে একজন উনাকে দেখে
বলল হে আল্লাহ এ বুড়ার সাতে এমন এমন কর, বুড়া নামাজ শেষ করে তাকে বলল আমি তোমার কথা
শুনেছি, আমি রসুলুল্লাহ (দঃ) এর সাথে ৬/৭/৮ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, আর উনার দেওয়া সব
শরীয়তের সহজতার ক্ষেত্রে আমি উপস্থিত ছিলাম, আর আমি আমার সওয়ারীর সাথে ফিরে যাব এটা
আমার কাছে বেশী পছন্দনীয় ছিল যে আমি আমার সওয়ারীকে ছেড়ে চলে যাব সওয়ারী তার চারনক্ষেত্রে
চরতে থাকবে তা আমার কাছে কষ্টকর।
মুলত খাওয়ারেজ
ছিল সাহাবাদের বিরুধী একটি গ্রুপ, তাদের কিছু নিজস্ব ধ্যান ধারনা ছিল আর তাদের সাথে
জিহাদ ছিল সাহাবিদের, আর হযরত আবু বরজা আসলামী নামাজ ভঙ্গ করে নিজের পলায়নরত সওয়ারীর
পিছনে ছুটেছিল তখন খাওয়ারেজটি কটু কথা বললে হযরত আবু বরজা আসলামী সুন্দর জবাব দিলেন
যে আমি নবী করিম (দঃ) এর সাথে অনেক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি আর তিনি যে সব ক্ষেত্রে আমাদেরকে
সহজতা প্রদান করেছেন তার মধ্যে এটাও যে কেহ যদি নামাজের হালতে নিজের কোন কিছু ক্ষতি
হচ্ছে দেখে তাহলে সে নামাজ ভঙ্গ করতে পারে।
সুতরাং এ হাদীস
থেকে এটা পরিস্কার যে যদি আমরা নামাজের হালতে থাকি আর তখন যদি দেখা যায় কোন ক্ষতি হতে
যাচ্ছে তখন সে ক্ষতি থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য নামাজ ভঙ্গ করার এজাজত শরীয়ত আমাদেরকে
দিয়েছে। যেমন আপনি নামাজে দঁড়ানো আর এমন সময় দেখছেন আপনার দিকে কোন হিংস্রপ্রানি আসছে
যেমন কোন সাপ আসছে সে সাপ এসে আপনাকে ছোবল মারবে বিচ্ছু আপনাকে কামড় দিবে তাহলে এমতাবস্থায়
আপনি নামাজ ভঙ্গ করে সে সব হিংস্রপ্রানিকে আপনি মারতে পারেন।
তেমনি ভাবে অনেক
বোনেরা চুলায় দুধ গরম করতে দিয়ে ভুলে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল আর এমন সময় মনে আসল যদি দুধ
উপচে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে তাহলে এ ধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য নামাজ ভঙ্গ করা যায়েজ
আছে। তেমনি ভাবে কোন স্টেশন এ নামাজ পড়ছেন আর আপনার ব্যাগ আছে পাশে কেহ আপনার বেগ নিয়ে
যাচ্ছে তখন আপনি নামাজ ভঙ্গ করে আপনার ব্যাগ উদ্ধার করতে পারবেন। এসব উদাহারন দেয়া
হল যদি সত্যিকারের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাহলে নামাজ ভঙ্গ করা যায়েজ আছে, যেন ক্ষতি
থেকে বাঁচা যায়। এগুলিতো হল নিজেকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করা, তেমনি ভাবে আপনি অন্য কারো
উপকারাথেও নামাজ ভঙ্গ করতে পারবেন, যেমন আপনি নদীর পারে নামাজ পড়ছেন আর কেহ নদীতে পড়ে
গেল সে সাতার জানে না তখন আপনি নামাজ ভঙ্গ করে সে সাতার না জানা ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে
পারেন। তেমনি ভাবে আপনি নামাজ পড়ছেন আর আপনার বাচ্চা আগুনের দিকে চলে যাচ্ছে সে গিয়ে
আগুনে হাত দিয়ে দিবে, কিংবা গরম গরম ডেস্কিতে হাত দিবে তাতে তার হাত জ্বলে যাবে এমন
সম্ভাবনা থাকলে মা যদি নামাজে থাকে তখন মা এর উপর জরুরী হল নিজের নামাজ ভঙ্গ করে বাচ্চাকে উদ্ধার
করা।
বুখারী শরীফের
এসব হাদীসের আলোকে এতক্ষন যেসব মাসায়ালা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম আল্লাহ তায়ালা
সকলকে তা বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।,
surah tin bangla translation | সূরা তীন | noor
উত্তরমুছুনsurah al bayyinah bangla translation | সূরা বাইয়্যিনাহ |noor
উত্তরমুছুনsurah al bayyinah bangla translation | সূরা বাইয়্যিনাহ |noor
উত্তরমুছুন