মদীনার অলৌকিক, বিষ্ময়কর, অভুতপূর্ব সকল ফজিলত। মদীনা শরীফ জেয়ারতের আদব কায়দা।


মদীনার অলৌকিক, বিষ্ময়কর, অভুতপূর্ব সকল ফজিলত মদীনা শরীফ জেয়ারতের আদব কায়দা
https://www.youtube.com/watch?v=-jYWDCxNocQ
সুপ্রিয় সুধী আজ আমি মদীনাতুল মুনাওয়ারার জেয়ারতে আদব এবং মদীনা শরীফের এমন কিছু বিষ্ময়কর ফজিলতের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরব যা শুনার পর যারা দুনিয়ায় সামর্থ থাকা সত্বেও সে মদীনার জেয়ারত করেননি তাঁরা নিজেদের জীবনটাকেই বৃথা মনে করবেন। আসুন দেরি না করে মুল আলোচনায় ঢুকে পরি।
মক্কাও নবী করিম ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম এর শহর, মদীনাও নবীজির শহর। এ ২টি সম্মানিত শহরকে আল্লাহ তায়ালা একত্র করে দিয়েছেন। এক শহরে আল্লাহর ঘর ২য় টিতে রসুলুল্লাহ (দরুদ) এর ঘর। এক শহরকে খলিলুল্লাহ আবাদ করেছেন। ২য় টিকে রসুলুল্লাহ (দরুদ) আবাদ করেছেন। এক শহরে জালালিয়তের রং অন্যটিতে জামালিয়তের রং। যদি মক্কার লোকদের সাথে কথা বলেন, মিশেন তখন জালালিয়ত দেখতে পাবেন, আর যদি মদীনা শরীফের লোকদের সাথে মিশার সুযোগ হয় সেখানে জামালিয়ত দেখতে পাবেন। মদীনা শরীফের বাসিন্দাদের মধ্যে আন্তরিকতা, ভালবাসা, আতিথেয়তা বেশী পরিলক্ষিত হয় এটা রহমাতুলিল আলামিন হুযুর পাক (দরুদ) এর বরকতেই হয়েছে।
এ ২টি শহরের সাথেই আমাদের অন্তরের সম্পর্ক। যদি এ দুনিয়ায় আপনি ঈমানের সাথে এ ২টি শহর না দেখেন তাহলে মনে করুন আপনি দুনিয়ায় কিছুই দেখলেন না। মক্কা শরীফ কে আল্লাহ তায়ালা খলিলুল্লাহর দোয়ার বরকতে হেরেম ঘোষনা করেছেন, আর মদীনা শরীফকে আল্লাহ তায়ালা হেরেম বানিয়েছেন রসুলুল্লাহর দোয়ার বরকতে।
আমাদের নবী মদীনায় তশরীফ নেয়ার আগে এ শহরের নাম ছিল এয়াছরিব বা অলক্ষুনে শহর কিন্তু আমাদের নবী করিম (দরুদ) যখন মদীনায় তশরীফ নিয়ে গেলেন হুযুরের কদমের বরকতে সে অলক্ষুনে দুর হয়ে গেল এবং এ মদীনায়ে তৈয়্যবার মাঠিকে নবী করিম (দরুদ) শেফা ঘোষনা করেছেন, মদীনার কুয়াতে নবীজির থুথু দেয়ার পর সে কুয়ার পানি শেফা হিসেবে ব্যবহারের ইশারাও দিয়েছেন। ফলে হুজুরের অবস্থানের বরকতে সে অলক্ষুনে শহর যার নাম এয়াছরিব ছিল তা মদীনায়ে তৈয়্যবা হয়ে গেল। যে শহরের বাতাসেও শেফা এসে গেল। এখন আর মদীনাকে এয়াছরেব বলা না জায়েজ, এক রেওয়ায়েতে আছে যে ব্যক্তি মদীনাকে এয়াছরেব বলবে সে তাঁর কাফফারা স্বরুপ ১২ বার মদীনা তাইয়্যেবা বলতে হবে। নবী করিম (দরুদ) মদীনার বাহির থেকে যখন মদীনায় তশরীফ আনতেন তখন ছওয়ারীকে দ্রুত চালাতেন যাতে মদিনার বাতাসের ধুলা বালি শরীরে লাগে, আর কেহ যদি মদীনার ধুলাবালি থেকে বাঁচার জন্য মুখ ঢাকতেন তাঁকে নিষেধ করতেন, বলতেন মদিনার ধুলাবালি থেকে তোমরা তোমাদের চেহেরাকে আড়াল করিও না। কারন আল্লাহ তায়ালা মদীনা শরীফের মাটিতে শেফা রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ।
মদীনার আরো অনেক নাম আছে তাবা, তাইবা, মিসকিনা, বাতহা, আর সে শহরের যে স্থানে হুজুর পাক (দঃ) অবস্থান করছেন, যে জায়গাটাতে মহানবী (দরুদ) এর নুরানী শরীর মোবারক লেগে আছে সে স্থানটিকে আরশের চেয়েও আফযল বলা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ।
ওলামায়ে কেরাম বলেন দুনিয়ার মধ্যে যদি সবচেয়ে আফযল কোন শহর থাকে সেটি হল মদীনা শহর। তবে  ওলামায়ে কেরাম এর মধ্যে এ ব্যপারে মতানৈক্য আছে যে মক্কা শরীফ আফযল? নাকি মদীনা শরীফ আফযল? কেহ বলেছেন মক্কা আফযল আর কেহ কেহ বলেছেন মদীনা আফযল। উভয় পক্ষের দলিল আছে। তবে শেখ আবদুল হক মুহাদ্দেছ দেহলভি (রহঃ) বলেন যখন নবী করিম (দরুদ)মক্কায় ছিলেন তখন মক্কা আফযল ছিল আর যখন মদীনায় তশরীফ নিয়ে গেছেন তখন মদীনা আফযল হয়ে গেল।
মদীনা এমন এক শহর যেখানে প্রতিদিন সকালে ৭০ হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হয় আর ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়, আর হুযুরের বারেগাহে সালাম পেশ করেন। আর যে ফেরেশতা ১ বার সেখানে উপস্থিত হন কেয়ামত পযন্ত সে ফেরেশতা ২য় আসার সুযোগ পান না। আর আপনারা আমরা কতই সৌভাগ্যবান যে হুযুরের গোলামির কারনে হুযুর (দঃ) আমাদেরকে বারবার আহ্বান করছেন।যারা সৌভাগ্যবান তাঁরাই কেবল এ শহরে হাজির হওয়ার সুযোগ পায়।
মদীনা তাইয়্যেবা মসজিদে নববীতে হাজির হতে পারা অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যপার। হাদীস শরীফে আছে নবী করিম (দরুদ) এরশাদ করেন (মান জায়া কাবরি ওয়াজাবাত লাহু শাফায়াতি) অথ্যাৎ যে আমার কবরকে যেয়ারত করবে তাঁর জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে। মক্কা শরীফে ১ রাকাত নামাজের ছাওয়াব ১ লক্ষ নামাজের সমান। আর মদীনা শরীফের ১ রাকাত নামাজের ছাওয়াব ৫০ হাজার নামাজের সমান।
যারা মসজিদের নববীতে উপস্থিত হতে পেরেছেন তারা যত বেশী পারেন মসজিদে নববীতে অবস্থান করাটাকে গনিমত মনে করবেন, চেষ্টা করবেন হারামাইন শরীফাইনে ১ খতম কোরান পাঠ করার, যতক্ষন থাকবেন ততক্ষন নফল এতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করবেন। মসজিদে নববীতে যখনই নবী করিম (দরুদ) কে ছালাম পেশ করতে যাবেন তখন রওজা মোবারকের সামনে কিছুসময় দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করার চেষ্টা করবেন, হযরত আবু হাজিম (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন এক ব্যক্তি উনার কাছে আসল আর সে বলল আমি হুযুর পাক (দরুদ) কে স্বপ্নে দেখেছি, হুযুর (দুরুদ) এরশাদ করেছেন- যে তুমি হাজিম কে বলে দিও যে সে আমার রওজার পাশ দিয়ে হেটে চলে যায় দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করে না, সে কথা শুনে হযরত হাজেম (রাঃ) আতকে উঠলেন এবং সেদিন থেকে উনার অভ্যাসে পরিনত হল যে যখনই নবীজির রওজার পাশ দিয়ে যেতেন দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করতেন।
মদীনা শরীফের কোন কিছুতে দোষ বের করার চেষ্টা করবেন না, একজন লোক মদীনা শরীফের দই খেয়ে বলল যে মদীনার দই খুব টক, আমাদের দেশের দই খুব মিষ্টি, সে রাতে সে ব্যক্তির কাফেলার আমিরকে হুযুর পাক (দরুদ) স্বপ্নে এসে বলল তোমার কাফেলার অমুকের কাছে আমার শহরের দই টক লাগে, সে কেন এ শহরে এসেছে? মদীনার দোষ তালাশ করার জন্য? এ স্বপ্ন দেখে আমির আঁতকে উঠলেন আর সে ব্যক্তিকে সতর্ক করে দিলেন। সে জন্য সকল হাজ্বী সাহেবগন এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। মোটামোটি হজ্ব করতে গিয়ে মক্কা মদীনা শরীফের কোন সমালোচনা না করাই হল ঈমানদারের আলামত।
পৃথিবীর যে কোন জায়গার মানুষকে কষ্ট দিলে মারলে তা জুলুম হিসেবে গণ্য হবে, যার নরমাল শাস্তি আছে, কিন্তু একই কাজ যদি মদিনার বাসিন্দাদের সাথে করে সে ব্যপারে সহিহ মুসলিমের ১৩৮৬ নং হাদীস হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী করিম (দরুদ) ফরমান যে কেহ মদিনাবাসীদের সাথে মন্দ কাজের শুধুমাত্র ইচ্ছা করলে মদীনার মানুষকে কষ্ট দেয়ার নিয়ত করলে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে এমনভাবে গলিয়ে শেষ করে ফেলবেন যেমন আগুনে শিষা গলে শেষ হয়ে যায়, পানিতে লবন গলে শেষ যায়। (সুবহানাল্লাহ) 
এ হাদীস থেকে মদীনা শরীফ এবং মদীনার বাসিন্দাদের মর্যাদা কত বড় তা আমরা কল্পনাও করতে পারব না।
তেমনি ভাবে সহিহ বুখারী ১৭৬৮ নং হাদীস হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী করিম (দরুদ) এরশাদ করেন আমার শহর মদীনার বৃক্ষরাজিও যেন কাটা না হয় এ শহরে যেন কোন ধরনের ফিতনা সৃষ্টি করা না হয়, ফিতনার কাজও যেন এ শহরে স্থান না পায়, এমন কাজ কারীদের উপর কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর লানত, সমস্ত ফেরেশতাদের লানত এবং সমস্ত মানুষের লানত। আর যারা মদীনাবাসীদেরকে কষ্ট দিবে তারা মুলত যুলম করল আর কিয়ামতের দিন তাদের কোন ফরযও কবুল হবে না, তাদের কোন নফলও কবুল হবে না।
আমাদের প্রিয় নবীর জন্ম হল মক্কায় কিন্তু তিনি মদীনাকে বেশী ভালবাসেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফের মুত্তাফাক আলাই  হাদীস নবী করিম (দঃ) দোয়া করেন হে রাববুল আলামিন যতটুকু বরকত তুমি মক্কায় দান করেছ মদীনায় তার দ্বিগুন বরকত দান কর।
অপর এক হাদীসে দেখা যায় নবী করিম (দঃ) দোয়া করছেন হে আল্লাহ তুমি আমার অন্তরে মদীনার প্রতি এমন ভালবাসা দান কর যেমন ভালবাসা মক্কার প্রতি ছিল, বরং মদীনার প্রতি মক্কার চাইতে বেশী মহব্বত আমার অন্তরে দান কর। এবং আল্লাহ তায়ালা নবীজির মনে মদীনার জন্য মক্কার চেয়ে ভালবাসা বাড়িয়েই দিয়েছেন তাইতো হুযুর (দঃ) কেয়ামত পযন্ত থাকার জন্য মদীনাকেই পছন্দ করেছেন। সুবহানাল্লাহ।
মদীনায়ে তৈয়্যেবার আরো একটি মুযেজা হল পৃথিবীর জমিনে যতগুলি শহর আছে সবগুলি শহরের চাইতে মদীনা শহরের প্রসংশাই সর্বাধিক হয়েছে, মদীনা শরীফকে নিয়ে যতগুলি শেয়ার, নাত, কবিতা, পদ্য, প্রবন্ধ, আরটিকেল রচিত হয়েছে আজ পযন্ত অন্য কোন শহরকে নিয়ে এত রচনা রচিত হয়নি এত চর্চা হয়নি এবং কেয়ামত পযন্ত হবেও না।

হজ্বের সময় কিংবা জেয়ারতে গিয়ে অনেক ভাই বোন সময় পেলে পাশের হাজ্বির সাথে গল্পে মেতে উঠেন মনে রাখবেন এখানে গল্প করার জায়গা নয়, যতক্ষন থাকবেন ততক্ষন জিকির দোয়া, কোরান তেলাওয়াত, দরুদ এসবের মধ্যে সময় কাটাবেন। 
পবিত্র হজ্ব উপলক্ষে নবীর দেশে আগমনকারী একজন মুমিনের কর্তব্য হলো আগে বা পরে অন্তত একবার প্রিয় নবীর শেষ- শয্যার পাশে গিয়ে তাঁকে সম্বোধন করে সালাত ও সালাম পেশ করা। তাঁর সাথে সাক্ষাত করা হাজীদের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ বা বিশেষ গুরুত্ব আরোপিত একটি কাজ। এটি হাজার বছর ধরে অনুসৃত একটি ইসলামী ঐতিহ্য। মহানবী (দরুদ.) এর যিয়ারত বা দর্শন এখানে হয়ে থাকে বলেই আমরা বেহেশতের একটি বাগান ''রওদাতুম মিন রিয়াদিল জান্নাতে'' তাঁর অবস্থানে গিয়ে বলে থাকি আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ্! হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি সালাত ও সালাম নিবেদন করছি। পরম শ্রদ্ধার মোড়কে গভীর ভালোবাসা ও অভিবাদন জ্ঞাপন করছি। তিনি যেয়ারতকারীকে দেখেন এবং তার সালামের জবাবে তাকেও "ওয়া আলাইকুমস্ সালাম'' বলেন। এখানে এক পক্ষ না দেখলেও ওদিক থেকে প্রিয় রসূল যেয়ারতকারীকে দেখে থাকেন। তিনি তার নাম, তার বাপ-দাদার নামও তখন স্মরণ করেন। এ জন্যেই এই দর্শনকে যেয়ারত বলা হয়।

কেউ কেউ বলেন, যেয়ারত হজের অংশ নয় যেয়ারত না করলেও ফরজ হজ্ব আদায় হয়ে যাবে কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যিয়ারতকে নিরুত্সাহিত করা অথচ মহানবী (দরুদ) বলেছেন, মান্-হাজ্জা ওয়া লাম্ ইয়াযুরনী ফাকাদ জাফা-নী- "যে হজ্ব করল অথচ আমার যিয়ারত করলো না, সে আমার সাথে রূঢ় ব্যবহার করল'' আল্লামা ইবন হাজার আসকালানী (রহ.) বলেছেন এটি মহানবী (দরুদ)-এর পক্ষ থেকে সতর্কবাণী কারণেই ইমাম সুবকী বলেছেন, মহানবীর যেয়ারত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ হওয়ার ব্যাপারে মুসলিম মিল্লাতের ঐকমত্য বা ইজমা হয়েছে (দেখুন, ফাতাওয়া শামী : ৫৪-৫৫ লাইলুল আওতার :১০৪)

উক্ত হাদিসটি বিভিন্নসূত্রে বর্ণিত সিহাহ সিত্তার বাইরেও  ইবন আদী, দারাকুতনী এসব কিতাবে হাদীস খানা সংরক্ষিত রয়েছে। হজ্বের সময় যেয়ারতের কথা বলা হয়েছে একথা বুঝানোর জন্য যে, এতদূর থেকে যখন মক্কা পর্যন্ত এসে হজ্ব করলেন তখন যার উসিলায় তা পেয়েছেন সে নবীকে এত কাছে এসেও সালাম না দিয়ে যাওয়া তো রূঢ় আচরণেরই শামিল
নিঃসন্দেহে মক্কা মদীনা ২টি শহরই পৃথিবীর জমিনে মুসলমানদের জন্য শ্রেষ্ঠ ২টি শহর এখন কেহ যদি মদীনা তায়্যেবাকে ছোট করে দেখানোর জন্য মক্কা মোকারমাকে বড় দেখানোর নিয়তে এদিক সেদিকের কথা বলে যুক্তি দেয় তাহলে মনে করতে হবে তার হৃদয়ে রোগ আছে।

ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন যদি কেহ হুযুরের পাক রওজা থেকে আসে সে যেন না বলে যে আমি হুজুরের রওজা থেকে আসছি বরং সে বলবে আমি হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করে আসছি, আমি হুজুরের সাথে দেখা করে আসছি,  কারন-
 মহানবী (দরুদ) বলে গেছেন ''মান্-যা-রা কাবরী বা'দা মাউতি ফাকান্নামা যা-রানী ফী হায়াতী "যে আমার ওফাতের পর আমার কবর যেয়ারত করলো সে যেন আমার জীবনকালেই সাক্ষাত্ করল" সুবহানাল্লাহ্! কত বড় সৌভাগ্য! কত বড় সুসংবাদ যারা ঈমান অবস্থায় মহানবী (দরুদ) এর সাহচর্য পেয়ে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তারা তো সাহাবী আর আমরা যারা যেয়ারত করেছি তারা সাহাবী হব না, কিন্ত তাঁর জীবনকালে শুভ দর্শনের মত এক বিরাট মাহাত্ম্য লাভ করবো, এতে সন্দেহ কী
আমরা জেনে না জেনে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় গুনাহ করে থাকি, তওবা করি সে তওবা কবুল হল কি হলনা তার কোন গ্যারান্টি নাই, কিন্তু আমরা যখন হজ্ব করতে গিয়ে সে সুযোগে প্রিয় নবীজির রওজায় গিয়ে নিজেদের গুনাহসমুহ ক্ষমা চাই তাহলে আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবীর সুপারিশে আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন—
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয় আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেতসুরা নিসা :৬৪ ]

এ আয়াত বলা হয়েছে- যখনই যেকোন যুগের কোন মুসলিম পাপ করার পর তার কাছে আসবে তার তাওবা আল্লাহ কবুল করবেন, যদি মহান রসূলও তার জন্য ক্ষমা চান। এতে বুঝা যায় মহানবী (দরুদ). যেয়ারতকারীকে দেখেন, শোনেন, জানেন এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, তার জন্য দু'আ করেন। এজন্যই তাকে বলা হয় জীবিত নবী হায়াতুন্নবী। বরযখে তাঁর একটি অনন্য জীবন সক্রীয় আছে। অপর এক হাদীসে তো তা আরও স্পষ্টভাবে আছে, "আমার দুনিয়ার জীবন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, তোমরা কিছু কাজ করে বস, এবং তোমাদের জন্য বিধান আসে। এবং আমার ওফাতও তোমাদের জন্য কল্যাণকর, তোমাদের আমল আমার নিকট উপস্থাপিত হয়। ভাল দেখলে তো আল্লাহর শোকর করি, খারাপ দেখলে তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি।'' এ হাদীসটি সহীহ (হাইসাম :মাজমা', ৯:২৪, বায্যার, সুয়ূতী: আল খাসায়েস ২:২৮১)।
মহানবী (দরুদ) এর রওদা যেযারত একজন মুমিনের সারা জীবনের লালিত প্রত্যাশা। হজ্বের সময় বিশেষ করে এ সুযোগটি আসে। যে কয়দিন মদীনা মুনাওয়ারায় থাকবেন প্রতিদিন অন্তত একবার যেয়ারতের চেষ্টা করবেন। আদবের সাথে মহানবীর  (দরুদ)-রওযার সামনে এসে বিনীতভাবে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে বলবেন—

"আস্সালাতু আস-সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ !

"আস্সালাতু আস-সালামু আলাইকা ইয়া নাবীয়্যাল্লাহ!

"আস্সালাতু আস-সালামু আলাইকা ইয়া হাবীবাল্লাহ!

এভাবে যত বার সম্বোধন করা যায়, করবেন।  তারপর এক মিটার ডানে সরে সাইয়েদুনা আবু বকর (রা.) কে সম্বোধন করে বলবেন— আস্সালামু আলাইকা ইয়া আবা বকর! আস্সালামু আলাইকা ইয়া আওয়্যালা খালীফাতি রাসূলিল্লাহ! এরপর এক মিটার ডানে সরে সাইয়েদুনা উমার (রা.) কে সম্বোধন করে বলবেন- আস্সালামু আলাইকা ইয়া উমার আল ফারূক! আস্সালামু আলাইকা ইয়া ছানী খালীফাতে রসূলিল্লাহ! এরপর আল্লাহর কাছে মুনাজাত করবেন। তবে অবশ্যই রওদা শরীফকে পিছনে রেখে নয়। এটি বেয়াদবী হবে। কারণ, মহানবী (দরুদ) তো পবিত্র কা'বারও কেবলা। তিনি কা'বার চেয়েও বেশি মর্যাদাবান। সংক্ষিপ্তভাবে এভাবে যেয়ারত শেষ করে অন্যকে জায়গা করে দেবেন। কারণ, হজ্ব মৌসুমে ভিড় থাকে।
মদীনা শরীফ অনেক বেশী আদবের জায়গা, সেখানে শোর চিৎকার, ঝগড়া এসব থেকে বিরত থাকবেন, বিশেষ করে রওজা মোবারকের সোনালী জ্বালির সামনে গিয়ে সেলফি তোলা ভিডিও করা, ছবি তোলা এসব থেকে সম্পূণভাবে বেঁচে থাকবেন।
মদীনা শরীফ যাওয়া সেখানে থাকতে পারা অনেক সৌভাগ্যের ব্যপারে কিন্তু অনেক হাজী হজ্ব করার পর যখন মদীনা শরীফ যান সেখানে তাঁদের মন উচাটাং উচাটাং মারে, দেশে যাওয়ার জন্য ছটফট করে, কোন কারনে ফ্লাইট কেনচেল হলে মারাত্মক ধরনের বিরক্তি প্রকাশ করে যা কখনো একজন নবী প্রেমিক উম্মতের জন্য কাম্য নয়। সুতরাং মদীনায়ে তৈয়্যেবা যতদিন থাকবেন অত্যন্ত সৌভাগ্য মনে করে খোশ মেজাজে থাকবেন।
আশা করা যায়, মহানবী (দরুদ) আপনার উপস্থিতিকে দেখেছেন আপনার সালামের জবাব দিয়েছেন। সারাজীবন আমরা যেন সেই পবিত্র স্মৃতি ধরে রেখে জীবনের পথে এগিয়ে যাই। আল্লাহ পাক আমাদের সকলের হজ্ব ও মদীনা শরীফের জেয়ারতকে কবুল করুন আমিন। আমীন!

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.