মহানবীর (দঃ) চুল মোবারকের আশ্চর্য্য কারামত
মহানবীর (দঃ)
চুল মোবারকের আশ্চর্য্য কারামত
সম্মানিত সুধী
আজ আপনাদের সামনে আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় নবীর চুল মোবারকের যে অলৌকিক কারামত সে
বিষয়ে ইনশাআল্লাহ বিস্তারিত আলোচনা করব। আজ অনেক কিছু নতুন তথ্য জানতে পারবেন, আশা
করি শেষ পর্যন্ত শুনে ঈমানকে তাজা করবেন।
হযরত ওসমান বিন
আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, হযরত উম্মে সালমা যিনি মহানবী (দঃ) এর বিবি, উনার কাছে
কিছু চুল মোবারক ছিল, মদীনায় যখন কেহ অসুস্থ হয়ে যেত সে হযরত উম্মে সালমার কাছে চলে
আসত তিনি সে চুল মোবারক বের করে ১ পাত্র পানিতে
তা চুবিয়ে দিতেন, আর সে পানি রোগী পান করলে আল্লাহ তায়ালা তার বরকতে শেফা দান করে দিতেন।
সাহাবীদের মধ্যে
এমন একজনের নাম যিনি জীবনে কখনো যুদ্ধে পরাজয় বরন করেন নি, তিনি হলেন হযরত খালেদ বিন
ওলিদ (রাঃ)। তাঁকে সাইফুল্লাহ বা আল্রাহর তরবারী বলা হত। হযরত খালেদ বিন ওলিদের আরজু
ছিল তিনি যেন আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত বরণ করেন, কিন্তু সে আরজু উনার পুরা হয়নি, কারন
কেহই তাঁকে হারাতে পারত না। তিনি যে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতেন সে যুদ্ধে জয়লাভ করতেন।
হযরত ওমর বিন
রাফে আততাঈ তিনি এক যুদ্ধে হযরত খালেদ বিন ওলিদের সাথে ছিলেন, হযরত ওমর বিন রাফে বলেন
মনে হচ্ছিল এ যুদ্ধে মুসলমানরা হেরে যাচ্ছে, এবারই প্রথম যে যুদ্ধে খালেদ বিন অলিদ
আছে সে যুদ্ধে মুসলমানরা পিছপা হচ্ছে, এদিকে মুসলমানগন যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছে অদিকে হযরত
আবু ওবায়দা মদীনায় ঘুমের মধ্যে নবী করিম (দঃ) কে স্বপ্নে দেখছেন আর নবীজি আবু ওবায়দাকে
বলছেন তুমি এখানে ঘুমাচ্ছ আর আল্লাহর তরবারী খালেদ বিন ওয়ালিদের উপর মছিবত চলছে। স্বপ্ন
দেখে জাগ্রত হয়ে হযরত আবু ওবায়দা মদিনায় এলান করে দিলেন বললেন হে মদিনার মুজাহিদগন
দ্রুত তৈরী হয়ে নাও হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ এর সাহায্যে ঝাপিয়ে পরতে হবে। মদিনার মুজাহিদগন
হযরত আবু ওবায়দার সাথে যখন বের হলেন, পথিমধ্যে তারা এক দৃশ্য দেখল যে তাদের সৈন্যদলের
কিছুটা আগে আগে এক নেকাব বাঁধা ছওয়ারী অগ্রসর হচ্ছে, হযরত আবু ওবায়দা কয়েকজন সৈন্যকে
পাঠালেন সে নেকাপ পরিহিত ছওয়ারীকে পাকড়াও করার জন্য, নেকাব পরিহিত ছওয়ারী মুসলিম সৈন্যদেরকে
তাঁর দিকে আসতে দেখে বলল আমাকে কিছু করিও না আমি হলাম হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ এর বিবি,
তারা জিজ্ঞেস করল তুমি এমন বিপদের সময় কেন যুদ্ধের ময়দানের দিকে যাচ্ছ? তিনি জবাব দিলেন
যখন আবু ওবায়দা মুসলিম সৈন্যদের যুদ্ধে যেতে নির্দেশ দিলেন এবং বললেন যে হযরত খালেদ
বিন ওয়ালিদ বিপদে আছেন, একথা শুনে আমি পেরেশান হয়ে গেলাম কারন আল্লাহর এ সিংহের তো
কোন দিন যুদ্ধের ময়দানে বিপদ আসতে শুনিনি, আজ কেন এমন বিপদ আসল? তখন আমি হঠাৎ দেখতে
পেলাম যে আমার স্বামী হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ তার প্রিয় টুপিটি ঘরে রেখে গেছেন যে টুপির
ভিতর নবী করিম (দঃ) িএর চুল মোবারক সেলাই করা ছিল। যখনই তিনি কোন যুদ্ধে যেতেন সে টুপি
সাথে করে নিয়ে যেতে ভুলতেন না, আজ যখন তিনি বিপদে তখন আমি চিন্তা করলাম উনার টুপিটি
আজ ঘরে ভুলে রেখে যুদ্ধে চলে গেছেন, তাই আমি সে টুপি নিয়ে উনার কাছে ছুটে যাচ্ছি, হযরত
খালেদ বিন ওয়ালিদ ও মুসলিম সৈন্যরা পরাজয় বরণ করতে যাচ্ছেন এমন সময় হযরত খালেদ বিন
ওয়ালিদের স্ত্রী উম্মে তামিম সে টুপি নিয়ে উপস্থিত হলেন আর সে মহানবীর চুল মোবারকের
বরকতময় টুপি পরিধান করে লড়াই চালিয়ে গেলেন আর তাতেই মুসলমানরা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হলেন
এবং দিন শেষে মুসলমানরা পুর্ণাঙ্গ বিজয় অর্জন করে নিলেন। সুবহানাল্লাহ।
বিভিন্ন সময় আমরা
দেখতে পায় বিভিন্ন দেশে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর চুল মোবারক প্রদর্শন করা হয়,
আশেকগণ খুবই আদব ও সম্মানের সাথে তা জে’য়ারত করেন, ফয়েজ ও বরকত হাছিল করেন। আবার অনেকে
প্রশ্ন তুলেন এসব যে মহানবীর চুল মোবারক তার দলিল কি?। তাঁদের কাছে উল্টা প্রশ্ন করা
যায় যে মহানবীর চুল প্রমাণ করার জন্য যে দলিল বা সনদ দরকার হবে এমন কোন দলিল আছে কিনা?
কোরোন বা হাদীসে কোথাও এমন কোন হকুম আছে কিনা যে দুনিয়াতে মহানবীর চুল দাবীকারীর কাছে
দলিল তালাশ কর। তাই এসব মুর্খতাসুলভ প্রশ্নে কান না দিয়ে আশেকে রাসুলগণ তা থেকে ফয়েজ
ও বরকত অর্জন করে থাকেন। কপালপোড়া দুর্ভাগারাই এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।
মুল কথা কেহ যদি
দাবী করে এসব নবী করিম (দঃ) এর চুল মোবারক তাহলে তার সে কথা বা দাবীকে মেনে নেয়াতে
শরীয়তের পক্ষ থেকে কোন বাঁধা নাই।
তবে মনে রাখবেন
সারা দুনিয়ায় মহানবীর চুল মোবারক ছড়িয়ে আছে, যখন মহানবী শেষ হজ্ব পালন করেন, মিনায়
যখন মাথা মুন্ডন করলেন তখন হযরত আবু তালহা (রাঃ) কে ডাকলেন এবং ফরমালেন এ চুলসমুহ আমার
সাবাহাদের কাছে বন্টন করে দাও।
এখন প্রশ্ন আসে
মহানবী কোন কারনে নিজের চুলসমুহ বন্টন করেছেন?
এ থেকে বুঝা যায় নবী করিম (দঃ) নিজেই চাচ্ছেন তাঁর চুল মোবারকগুলি
সকল সাহাবাদের কাছে হেফাজতে থাকুক, সাহাবাদের মাধ্যমে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে পৌঁছে
যাক। আর সাহাবাগন সারা দুনিয়ায় ইসলাম প্রচারে বের হলে তা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে যাবে এবং
এ সব চুল মোবারক থেকে কেয়ামত পর্যন্ত কারামত প্রকাশিত হবে। এবং লোকজন তা থেকে বরকত
অর্জন করবে। যারা মহানবীকে দেখেননি তাঁরা অন্তন নবীজির চুল মোবারক দেখে হলেও চক্ষু
ঠান্ডা করবে। এটি সহিহ হাদীস দ্বারা জানা যায় যে নবীজি নিজেই তাঁর চুল গুলি সাহাবাদের
দিয়েছেন এবং তা থেকেই সারা দুনিয়ায় এসব মোবারক চুল ছড়িয়ে পরেছে।
আজো মহানবীর চুল
মোবারক এর কারামত হিসেবে দেখা যায় যে কারো কাছে শুধু নবীজির ১টি চুল মোবারক আছে, আর
তা থেকে আরো অনেক চুল মোবারক বের হয়ে একটি চুলের গুচ্ছে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ।
অনেকে প্রমাণ
স্বরুপ বলে থাকে এসব চুল আগুনে জ্বালিয়ে দেখতে হবে যদি না জ্বলে তাহলে বুঝা যাবে এসব
প্রিয়নবীর চুল মোবারক, অন্যথায় বুঝতে হবে এসব মহানবীর চুল মোবারক নয়। অনেকে বলে চুল
মোবারক রোদে নিয়ে গেলে যদি মেঘমালা ছায়া দেয় তাহলেই বুঝা যাবে এসব মহানবীর চুল মোবারক।
এমনতর পরীক্ষা নিরীক্ষা, এসবই হল মুর্খতাসুলভ আচরণ, কারন এ ব্যপারে কোরান ও হাদীসে
কোন নির্দেশনা নাই যে মহানবীর চুল মোবারক হলে তা জ্বলবে না, তাতে মেঘ ছায়া দিবে, তাই
এসব পদ্ধতিতে জ্বালানোর চেষ্টা করাটা হবে বেয়াদবীর শামিল। তাই এ ব্যপারে সতর্ক থাকতে
হবে।
এক জায়গায় মহানবীর
চুল মোবারকের প্রদর্শন চলছিল সকলে লাইন ধরে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে, একজন নওজোয়ান
লাইনে দাঁড়ালো না, তখন তাঁকে একজন মুরুব্বী প্রশ্ন করল তুমি মহানবীর চুল মোবারক জেয়ারত
করবে না? সে নওজোয়ান বলল মানুষের কাছে কি কোন দলিল আছে যে এটা মহানবীর চুল? তখন মুরুব্বী
সে নওজোয়ানকে প্রশ্ন করল তোমার নাম কি? সে জবাব দিল আকরাম, আবার প্রশ্ন করল তোমার বাবার
নাম কি সে বলল আবদুর রহমান, তখন মুরুব্বী বলল বেটা তোমার বাবা যে আবদুর রহমান তার কি
কোন দলিল তোমার কাছে আছে? তখন ছেলেটি বলল আমার মা বলেছে, যে আবদুর রহমানই আমার বাবা,
তখন মুরুব্বী বললেন শুধু তোমার মা এর দাবীর প্রেক্ষিতে আবদুর রহমানকে তোমার বাবা মেনে
নিয়েছ এখানে হাজারো মুসলমান এটাকে মহানবীর চুল বলে দাবী করার পরও এটিকে মহানবীর চুল
মোবারক মেনে নিতে তোমার কি সমস্যা? অবশেষে সে নওজোয়ান লজ্জিত হল এবং লাইনে দাঁড়িয়ে
গেল।
সুতরাং এসব বিষয়ে
বেহুদা জবান চালানো সুখকর নয়,
তবে এমনও চিটিং
আছে যারা জেনে বুঝে ধান্দাবাজী করার জন্য মিথ্যা দাবী করে এবং নাজরানাও গ্রহণ করে,
লোকজন আসে তা দেখে আর টাকা পয়সাও নাজরানা হিসেবে দিয়ে থাকে, এভাবে অনেকে চিটিংও করে,
এ ধরনের লোকদের অবশ্যই আল্লাকে ভয় করা উচিত, তাই যারা মিথ্যা দাবী করছেন তাঁরাও সাবধান,
আর যারা প্রমাণ তালাশ করে করে সত্যিকারের মহানবীর চুল মোবারকের সাথে বেয়াদবী করে বসেছেন
তারাও সাবধান।
এমন একজন লোক
সম্পর্কে খবর শুনেছি, তাঁর কাছে মহানবীর একটি চুল মোবারক আছে সে তাকে রুপার বক্সে ঘরের
মধ্যে সবচেয়ে উঁচু জায়গায় অত্যন্ত আদবের সাথে রেখেছে, সে যখন কোন কারনে ছাদে পানির
ট্যাংকির উপর উঠে তখন সে চুল মোবারক তার মাথার উপর বেঁধে নেয় এবং টাংকির উপর চড়ে, যাতে
কোন ভাবেই মহানবীর চুল মোবারক তার পায়ের নিচে না থাকে। সুবহানাল্লাহ।
(বা আদব বা নসিব-
সম্মানকারী হল সৌভাগ্যবান।
(বে আদব বে নসিব-
অসম্মানকারী হল দুর্ভাগা।
সবশেষ কথা হল
যেহেতু সারা দুনিয়ায় মহানবীর চুল মোবারক আছে তা প্রমাণিত, তাই যদি কেহ দাবী করে এটা
মহানবীর চুল মোবারক যদি তা সত্যি হয় তাহলে সেটিকে তাজিম করাটা হল ঈমানের দাবী। আর যদি
দাবীকারীর দাবীটি মিথ্যা হয় তাহলে যে মিথ্যা দাবী করছে সে গুনাহগার হবে, যিনি মহানবীর
চুল মোবারক হিসেবে তাজিম করছেন তিনি নিয়তের কারনে ছাওয়াব পাবেন।এখন আপনি আমি কনফারম
নই যে কোনটি সত্যিকারের চুল মোবারক আর কোনটি ভুয়া তাই নিরাপত্তা হল সবগুলিকেই সম্মান
দেখানো, যদি সত্যিকারের মহানবীর চুল মোবারক হয় আর আপনি সেটিকে অস্বিকার করে সেটির সাথে
বেয়াদবী করেন তাহলেতো মহাবিপদ।তাই নিরাপত্তা হল এসব বিষয়ে বেশী জবান দারাজ না করে মহব্বতের
সাথে সম্মান বা তাজিম করা।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে
সঠিক বিষয়টি বুঝার তৌফিক দান করুন।
হাদিসে রাসুল(সাঃ) এর চুলের যে আকার বর্ণনা করা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শিত চুলের আকার তার দ্বীগুনেরো বেশী ।
উত্তরমুছুন