আল্লাহর কাছে দোয়া করার নিয়ম ও দোয়া সংক্রান্ত সকল মাসায়ালা
রবিউস সানি মাসের ১ম খুতবা
আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজিম বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর কাছে দোয়া করার নিয়ম ও দোয়া সংক্রান্ত সকল মাসায়ালা
(ফাইজা ছাআলাকা ইবাদি আন্নি ফাইন্নি করিব, উজিবু দাওয়াতাদ্দাঈ ইজা দাআনি ফালি
এয়াছতাজিবু লি ওয়ালিইউমিনু বি
লাআল্লাহুম এয়াতাফাক্কারুন)
সম্মানিত মুসল্লীবৃন্ধ
খোতবাওয়ালা আল্লামা ইবনে নাবাতা (রহঃ) উনার প্রসিদ্ধ খুৎবা গ্রন্থে রবিউস সানি মাসের
১ম খুতবার শেষের দিকে আমার পঠিত আয়াতখানি উল্লেখ করেছেন। এ আয়াতের ভিত্তিতে আমি আজ
দোয়া সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূণ বিষয় আপনাদের সামনে পেশ করব বিষয়গুলি হল
---
মানুষের শ্রবণ শক্তি
হল অপরিপূর্ণ যেমন একজন মানুষ শুধু একজন মানুষের কথাই কেচ করতে পারে কিন্তু আল্লাহর
শ্রবণশক্তি পরিপূর্ণ। যদি হযরত আদম (আঃ) থেকে নিয়ে সর্বশেষ সৃষ্টি মানুষটি যদি একটি
ময়দানে একত্রিত হয়ে সকলে এক সাথে দোয়া করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা সকলের দোয়া পুঙ্খানুপুঙ্খ
রুপে শুনতে বুঝতে সক্ষম।
মনে রাখবেন আমাদের কাছে
যা কিছু আছে এসবকিছু আমাদের নিজের নয়, আমাদের মালিকানার নয়, বরং এ সবকিছু আল্লাহ তায়ালার
দান। যদি আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে স্বাস্থ না দিত হালে আমরা অসুস্থ হতাম। যদি আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে সম্পদ না দিত তাহলে আমরা ভিখারী হতাম। যদি আ্ল্লাহ আমাদেরকে দৃষ্টিশক্তি
না দিত তাহলে আমরা অন্ধ হতাম। বাক শক্তি না দিলে আমরা বোবা হতাম, শ্রবণশক্তি না দিলে
আমরা বধির হতাম। পাত পা না দিলে লেংড়া লুলা হতাম। যদি আল্লাহ আমাদেরকে খাবার না দিত
তাহলে আমরা ক্ষুধার্থ হতাম। যদি পানি না দিতেন পিপাসার্থ হতাম, সন্তান না দিলে বংশহীন
হতাম, ঘর না দিলে গৃহহীন হতাম। যদি আল্লাহ আমাদেরকে ইজ্জত না দিতেন তাহলে আমরা দুনিয়ায়
বেইজ্জত হতাম।আল্লাহ যদি আমাদেরকে ব্রেইন না দিত তাহলে আমরা পাগল হতাম। বুঝা গেল এই
যে ইজ্জতভরা জীবন আমরা অতিবাহিত করছি এ সব কিছু আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের রহম ও করম ছাড়া
আর কিছুই নয়।
আমরা যে আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করি তার জীবনে কত গ্যালন
পানি পান করেছি তার কোন হিসাব নাই, আর আমাদের জীবনে মাত্র এক গ্লাস পানির মুল্য কতটুকু
তা একটি ঘটনা বললে বুঝতে পারবেন।
ঘটনা: বাদশাহ হারুন
অর রশিদ এর দরবারে এক বিজ্ঞ জ্ঞানী লোক বসা ছিলেন এমন সময় তিনি প্রচন্ড তৃষ্ণার্থ অবস্থায়
১ গ্লাস পানি চাইলেন উনার খেদমতে পানি আনা হল, পানি পান করার আগে সে জ্ঞানী লোকটি বাদশার
কাছে প্রশ্ন করল বাদশা ছালামত আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন তাহল আপনি এখন খুব তৃষ্ণার্থ
এমন সময় যদি সারা দুনিয়াতে মাত্র ১ গ্লাস পানি আছে তাছাড়া পান করার মত আর কোন পানি
নাই এখন এমন প্রচন্ড রকমের তৃষ্ণার্থ অবস্থায় আপনি এক গ্লাস পানি কত মূল্য দিয়ে কিনে
নিবেন? বাদশাহ জবাব দিলেন আমি তখন এক গ্লাস পানি আমার গোটা রাজ্যের অর্ধেক দিয়ে কিনে
নিব। এবার বিজ্ঞ লোকটি আবার প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বাদশা সালামত আমার আরো ১টি প্রশ্ন
তাহল ধরুন আপনি পানি পান করলেন এখন আপনার শরীরে গিয়ে সে পানি আটকে গেল কোন ভাবেই আপনার
পশ্রাব হচ্ছে না, পেশাব আটকে যাওয়ায় আপনি প্রচন্ড ধরনের যন্ত্রণায় ভুগছেন আর এহেন মুহুর্তে
সারা দুনিয়ায় মাত্র একজন ডাক্তারই আছেন যার কাছে আপনার পেশাব আটকে যাওয়ার যন্ত্রনা
থেকে মুক্তির ঔষদ আছে আপনি সে ঔষধ কত মূল্য দিয়ে কিনে নিবেন? বাদশাহ জবাব দিলেন আমি
তখন আমার যন্ত্রনা থেকে মুক্তির জন্য আমার বাকী অর্ধেক রাজ্য দিয়ে দিব।
তখন বিজ্ঞ জ্ঞানী বললেন
বাদশাহ এবার আপনি চিন্তা করুন আপনার গোটা রাজ্যের মুল্য মাত্র এক গ্লাস পানির সমপরিমান।
আর এবার আপনি হিসাব করুন আপনি জীবনে কত গ্লাস পানি পান করেছেন। আর কতবার পেশাব করেছেন।
প্রিয় সম্মানিত মুসল্লীবৃন্দ
আপনারা নিজেরা চিন্তা করুন আল্লাহর ভাষায়
(ফাবিআয়্যি আলাই রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান) তোমরা আল্লাহ তায়ালার কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার
করবে?
মুলত আমরা মাথা থেকে
পা পর্যন্ত মহান রাব্বুল ইজ্জতের নেয়ামতের মাঝে ডুবে আছি। আমরা কি রকম নেয়ামতে ডুবে
আছি তা বুঝতে পারবেন আরেকটি উদাহারন দিলে
ঘটনা: এক আল্লাহওয়ালা
বলেন আমি হাসপাতালে কোন এক কারনে থাকতে হয়েছিল পাশের বেডে যিনি ছিলেন তাঁকে জিজ্ঞেস
করলাম তাঁর কি অসুখ? সে বলল আমার খাদ্য নালির যে বল আছে তা লিগ হয়ে গেছে তাই আমি বিছানায়
শুতে পারি না, শুলেই আমার সব খাদ্য মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়, তাই আমি বসে বসে ঘুমায়, আমি
দেখলাম বেচারা সারা রাত বসে বসে রাত কাটিয়ে দিয়েছে, তখন মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়
করলাম আর বললাম হে আল্লাহ বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমানোও তোমার অনেক বড় নেয়ামত।
এভাবে আমরা যে চোখের
পলক বার বার ফেলি এটাও আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত- কেমন নেয়ামত তা একটা উদাহারন দিলেই
বুঝতে পারবেন
ঘটনা: এক লোক এক্সিডেন্টে
তার একটা চোখের পুতুলির উপরের পর্দা গেটে গেল, ডাক্তারের কাছে যখন গেল তখন তাকে ডাক্তার
পরামর্শ দিল আমাদের বাতাসে সবসময় ধুলা ময়লা উড়তে থাকে তা আমাদের চোখে প্রবেশ করে তা
তাই এখন যেহেতু আপনার চোখের পর্দা নাই আপনাকে প্রতিদিন ঘন্টা দুইঘন্টা পরপর চোখে পানি
দিতে হবে। সে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চোখে পানি দিতে লাগল, কিন্তু কিছুদিন পর তার
চোখে বার বার পানি দেয়ার ফলে চোখের উপরের আবরনটি এতটাই সেনসেটিভ হয়ে গেল যে সে এখন
আর পানি দিতে পারে না পানি দিলেই ব্যথা অনুভব করে, তখন সে আবার ডাক্তারের কাছে গেল
তখন ডাক্তারে তাকে বলল, গাড়ির আয়না পরিস্কার করার জন্য যেমন ওয়াইফার আছে তেমনি প্রতিনিয়ত
বাতাসে উড়ে বেড়ানো ধুলাবালি আমাদের চোখে প্রবেশ করে আর সে চোখের ময়লা সারাক্ষন পরিস্কার
করার জন্য আল্লাহ তায়ালা একটা ওয়েফার সিস্টেম আমাদের সকলের চোখে চালু করে রেখেছেন যা
প্রতিক্ষন আমাদের চোখ পরিস্কার করে, আল্লাহ তায়ালা চোখের পর্দার নিচে সব সময় পানি জারি
করে দিয়েছেন আর চোখের পলক যখন উঠা নামা করে সে উঠা নামার সাথে সাথে আমাদের চোখের সকল
ময়লা সাফ হয়ে যায়। তখন সে লোকটি বুঝতে পারল যে প্রতিটি মুহুর্তে যে মানুষ চোখের পাতা
উঠা নামা করেন সেটাও আল্লাহর অনেক বড় একটা নেয়ামত।
যেহেতু আমরা আল্লাহর
মুখাপেক্ষি তাই আল্লাহর কাছে আমাদেরকে চাইতে হবে।
নবী করিম (দঃ) এরশাদ
করেন (আদ দোয়াউ মুখখুল এবাদাহ) দোয়া হল এবাদতের মগজ।
অপর এক হাদীসে এরশাদ
হয়েছে (আদ দোয়াউ হুয়াল এবাদাহ) দোয়াই হল এবাদত।
যখন বান্দা দোয়া করেন
তখন আল্লাহ তায়ালা খুশী হন। দোয়া না করলে আল্লাহ নারাজ হন। যেমন এরশাদ হচ্ছে (মান লাম এয়াছ আলিল্লাহা এয়াগদাব আলাইহ) যে বান্দা দোয়া চাই
না আল্লাহ তায়ালা সে বান্দার উপর অসন্তুষ্ট হন। আমরা মাখলুকের কাছে চাইতে পারি চাইতে
জানি কিন্তু আল্লাহ কাছে চাওয়ার নিয়ম আমাদের জানা নাই।
মনে রাখবেন আল্লাহর
কাছে চাওয়া এবং বান্দার কাছে চাওয়ার মধ্যে আকাশ পাতাল পাথক্য রয়েছে।
দোয়ার
৭টি র্পাথক্য (আল্লাহ বনাম বান্দা)
১) মাখলুকের কাছে আপনি যদি বার বার চান তাহলে মাখলুক নারাজ
হয়। আর আল্লাহর কাছে বার বার চায়লে আল্লাহ খুশী হন। আপনি আপনার বন্ধুর কাছে ১ম বার
কিছু চাইলে সে দিয়ে দিবে. ২য় বার চাইলেও দিয়ে দিবে, ৩য় বার চাইলে মুড দেখাবে, ৪র্থ
বার আপনার সাথে কথা বলা বন্ধু করে দিবে এবং ৫ম বার চাইলে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষনা
করবে।বলবে তুমি কেমন মানুষ সবসময় শুধু চাইতেই থাক? পক্ষান্তরে আল্লাহর মোয়ামালা আযব
ধরনের, বান্দা আল্লাহর কাছে যত বেশী চাই আল্লাহ তত বেশী খুশী হন। এমনকি যে বান্দা সদা
সর্বদা সবকিছু আল্লাহর কাছে চায় আল্লাহ তায়ালা সে বান্দাকে নিজের বন্ধু বানিয়ে নেন।
২) ২য় পার্থক্য হল যদি মাখলুকের কাছে কেহ চাই কখনো কখনো দিয়ে
দেয় কিন্তু অনেক সময় অত্যন্ত রাগান্বিত অবস্থায় দিয়ে থাকে। যেমন এক লোক ড্রাইভিং করছে
পাশের সিটে মা আছেন, রেড লাইটে গাড়ি যখন দাঁড়ালো ভিক্ষুক এসে গাড়ীর জানালায় টুকা দিল,
সে মাফ করতে বলল কিন্তু ভিক্ষুক নাছোড় বান্দা সে যখন বার বার চায় তখন পাশে বসা মা বলে
বেটা কিছু দিয়ে দাও, তখন সে ২ টাকা পকেট থেকে বের করে তো সে ভিক্ষুক কে দিয়ে দেয় কিন্তু
অত্যন্ত রাগের সাথে দেয় আর এমন ভাব দেখায় যে এ নাও আর এখান থেকে দুর হয়ে যাও, সুতরাং
দিল কিন্তু বোঝা মনে করে দিল। পক্ষান্তরে আল্লাহ যখনই বান্দাকে দিয়ে থাকেন সবসময় পে”য়ার
মহব্বতের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন।
৩। মাখলুক যদি কোটিপতি হয় আর আপনি তার কাছে গিয়ে যদি চার আনা,
আট আনা সাহায্য চান তাহলে সে আপনার প্রতি রাগ করবে, তেমনি ভাবে আপনি কোন গরিব ভায়ের
কাছে ১০ লক্ষ টাকা কর্জ চান তাতেও সে নারাজ হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর মোয়ামালা ভিন্ন
বান্দা আল্লাহর কাছে যেমন চাই আল্লাহ তেমনই দিয়ে থাকেন এমনটি হাদীসে পাকে রয়েছে যদি
কোন বান্দা তাঁর জুতার ফিতাও আল্লাহর কাছে চাই আল্লাহ সে বান্দাকে সে সামান্য জিনিষটি
দিয়েও খুশী হন।
৪। মাখলুক যদি দানশীলও হয় তবুও তার দান সদকা হয় দিনে গভীর রাতে
কোন দানশীলের দরজা দানের জন্য খোলা থাকে না। পক্ষান্তরে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের দরজা
এমন যে তা সদা সর্বদা খোলা থাকে।
(লা তাখুজুহু সিনাতুও ওয়ালা নওম) আল্লাহর কোন ধরনের তন্দ্রাও
আসে না নিদ্রাও আসেনা। আল্লাহ এমনই পরওয়ার দিগার যে তার দরজা কখনো বন্ধ হয় না।
৫। অনেক সময় মাখলুকের কাছে আপনি চাইলে সে উ”ল্টা আপনার কাছে
তার ১০টি হাজতের কথা শুনিয়ে দিবে, যেমন আমার মেয়ের বিয়ে, স্ত্রীর অসুখ, ব্যাংকের লোন
দিতে হবে ইত্যাদি। পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালা এমন এক জাত সকলেই তার মুহতাজ তিনি কারো
মুহতাজ নন।
৬। মাখলুক কখনো তার শত্রুকে নাফরমানকে দে”য় না, কিন্তু আল্লাহ
তায়ালা এমন দয়াবান যে তিনি তার বান্দা যারা ফরমাবরদার তাদেরকেও দেন যারা তাকে অস্বিকার
করে তার নাফরমানি করে তাদেরকেও দিয়ে দেন। যদি
মুমিনগন নিরাশ হওয়ার ভয় না থাকত তাহলে আমি কাফেরদেরকে এত দান করতাম তাদের ঘরের সিড়ি
ছাদ তথা পুরা ঘরকে স্বর্ণের করে দিতাম।কারন এ দুনিয়া আল্লাহ কাছে মাছির পালকের বরাবর
মূল্যও রাখে না।
৭। মাখলুকের কাছে গেলে হাতে করে কি নিয়ে গেলেন কি গিফট এনেছেন
তা দেখে। আর পক্ষান্তরে আল্লাহর কাছে খালি হাত উঠিয়ে দিলেও আল্লাহ বলেন হে আমার বান্দা
তুমি আমার কাছে কি নিতে এসেছ? তুমি আমার কাছে কি চাও?
তাই বান্দার উচিত মাখলুকের মুহতাজ না হয়ে আপন পরওয়ারদেগারের
কাছে চাওয়া।
৩ টি পদ্ধতিতে
আল্লাহ অবশ্যই অবশ্যই
দোয়া কবুল
করেন এবং প্রতিদান দেন
আমরা সাধারণত দোয়া করতে
করতে অতি অল্প সময়ে বিরক্ত হয়ে যাই। আমরা চাই দোয়া করার সাথে সাথেই যেন কবুল হয়ে যায়।
এবং বলে থাকি যে আমার দোয়া আল্লাহ কবুল করেনা। জেনে রাখুন হাদীস শরীফে রয়েছে আল্লাহ
তায়ালা সব দোয়া কবুল করেন তবে এ কবুলের ধরন ৩ প্রকার।
(১) প্রথম প্রকারের
দোয়া হল আপনি যেমনটি দোয়া করেছেন তেমনটি কবুল হয়
(২) দ্বিতীয় প্রকারের
দোয়া যেমন আপনি যে দোয়া করেছেন সেটি কবুল হলনা কিন্তু আপনার সে দোয়ার বরকতে আল্লাহ
তায়ালা আপনার উপর থেকে কোন বড় বিপদ দুর করে দিলেন।
৩) অথবা আপনার দোয়ার
বদলায় আপনি কিছুই পেলেন না কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আপনার সে দোয়ার বদলায় আখেরাতে এত বেশী
প্রতিদান দিবেন যে সে প্রতিদান দেখে বান্দা বলবে আল্লাহ দুনিয়ায় আপনি যদি আমার কোন
দোয়াই কবুল না করতেন এবং সব দোয়ার বদলা যদি আপনি আমাকে পরকালে আজকের মছিবতের সময় দিতেন
তাহলে কতইনা ভাল হত।
এই ৩ প্রকারের কোন এক
প্রকারে দোয়ার বদলা অবশ্যই আপনি পাবেন। মনে রাখবেন আল্লাহ তায়ালা আপনার আমার দোয়া কবুল
করতে বাধ্য নন, আমরা যে দোয়া করব আল্লাহ সে দোয়া মোতাবেক কাজ করবেন এমনটা ভাবাটা বড়
ভুল। কারন আল্লাহ তায়ালা হলেন হেকমত ওয়ালা তিনি জানেন কোন দোয়া কবুল করলে আমাদের জন্য
কল্যান হবে আর কোন দোয়া কবুল করলে আমাদের জন্য অকল্যান হবে।
যেমন আমরা অনেক সময়
ধন দৌলত প্রার্থনা করি কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ধন দৌলত দেননা আজীবন গরীব রেখে দেন কারন
আল্লাহ তায়ালা যা জানেন আমরা তা জানি না। আল্লাহ তায়ালা জানেন যে এ লোকটি যে ধন সম্পদ
প্রার্থনা করছে এখন যদি তাকে ধন সম্পদ দান করি তাহলে সে ঈমান থেকে মাহরুম হয়ে যাবে,
দ্বীন ধর্ম থেকে মাহরুম হয়ে যাবে।
আল্লাহ দোয়া
কবুল না করার রহস্য কি?
যেমন একটা উদাহারন দিলে
বুঝতে পারবেন বাচ্চা আগুনের কয়লা দেখে সে কয়লা ধরতে চাইছে কিন্তু মা কিছুতেই সে কয়লা
ধরতে দিচ্ছে না, বাচ্চা বারবার সে কয়লা চাইছে কিন্তু তবুও মা আগুনের কয়লা তার সন্তানের
হাতে দিচ্ছে না, কারন মা তার সন্তানকে ভালবাসে। আর মা জানে কয়লা যদি সন্তানের হাতে
দেয়া হয়, তাহলে সন্তান পুরে যাবে, ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সন্তান কয়লার বাহ্যিক চাকচিক্য
দেখে তা নিতে চাচ্ছে, সে বুঝতে পারছে না যে, কয়লা নিলে তার মারাত্মক ক্ষতি হবে। তবে
মা যেহেতু বুঝতে পারছেন এটি যদিও বাহিরে চকচক করছে কিন্তু এটি আমার আদরের সন্তানের
জন্য ক্ষতিকর তাই সন্তানের সে চাওয়াটাকে মা কিছুতেই পুরন করে না। ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের
ভালমন্দ আল্লাহ তায়ালা বেশী জানেন তাই আমরা যদি দোয়া করে কিছু না পাই মনে করতে হবে
এ না পাওয়াটাই মুলত আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।
বিশেষ করে বর্তমানে
বিয়ে শাদীর ব্যপারে এয়াং জেনারেশন পছন্দের কাউকে পাওয়ার জন্য কত দোয়া করে, কত তদবীর
করে কিন্তু তার সে দোয়া কবুল হয়না তখন বলে আল্লাহ আমার কথা শুনেনা, অথচ সে জানেনা আল্লাহ
কেন তার দোয়া কবুল করছে না, হয়ত সে যাকে চাচ্ছে তাকে যদি পেয়ে যায় হতে পারে বিয়ের পরের
দিনই সে কোন এক্সিডেন্টে মৃত্যু বরণ করল তখন কি হবে?
তেমনি ভাবে অনেকে চাকরী
খুঁজেন কিন্তু চাকরী পান না, দোয়া করেন কিন্তু তবুও চাকরী হয় না, পেরেশান হয়ে যায়,
অবশেষে দোয়া করাই ছেড়ে দেন, অথচ সে জানেনা হয়ত চাকরী করাটা তার জন্য মঙ্গলজনক নয় বরং
আল্লাহ তায়ালা হয়ত তার জন্য অন্যভাবে আরো উত্তম রিযিকের ব্যবস্থা করে রেখেছে। তাই চাকরী
না হলে নিরাশ না হয়ে অন্য ফিকির করাই হল বুদ্ধিমানের কাজ, যাতে হয়ত আল্লাহ তায়ালা তার
জন্য বরকত রেখেছেন।
অনেক সময় আমরা দোয়া
করি তা কবুল হয় না, অথচ আল্লাহ তায়ালা আমাদের সে দোয়ার বদলায় কোন মসিবত থেকে বাঁচিয়ে
দেন, যেমন দেখা যায় অনেক সময় এক্সিডেন্ট হতে হতে বেঁচে যাই, হতে পারে আল্লাহ তায়ালা
আপনাকে সে এক্সিডেন্ট থেকে আপনার কোন দোয়ার বদলায় বাঁচিয়ে দিলেন।
তেমনি ভাবে ভুমিকম্প
হল তাতে অসংখ্য লোক হতাহত হল, কিন্তু আপনার কিছুই হল না, এই যে আপনি বেঁচে গেলেন, এ
বেঁচে যাওয়ার কারন হল- আপনি যে সদা আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, আর যেমন দোয়া করেন তেমনটি
ফল পান না, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আপনি যা চেয়েছেন তা যদিও দেননি, তবে সে দোয়ার বদলায়
আল্লাহ আপনাকে আজকের এ ভুমিকম্পের ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তাই প্রত্যেকের উচিত
ধৈর্য্য ও আশার সাথে আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতে থাকা। দোয়া করে তার ফলাফলের জন্য
তাড়াহুড়া করা উচিৎ নয়। বরং ধারাবাহিক ভাবে কাকুতি মিনতির সাথে দোয়া করতে থাকা এটাই
হল বান্দার কাজ। কবুল করা না করা এটা আল্লাহর ইচ্ছাধীন।
আমরা আল্লাহর
কাছে কিভাবে চাইব?
আপনারা দেখে থাকবেন
ছোট বাচ্চা কিছু চাইল মা প্রথমে বলেদেয় না দিব না, কিন্তু বাচ্চা বার বার চাইতে থাকে,
মা তবুও দেয় না, অবশেষে বাচ্চা যখন কান্না করতে থাকে, তখন মা সে জিনিষটি বাচ্চার জন্য
ক্ষতিকর না হলে তা বাচ্চাকে দিয়ে দেয় এবং বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদরও করে দেয়। তেমনি ভাবে
আমাদেরও উচিত আল্লাহ কাছে বার বার চাইতে থাকা, না পেলে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে, কান্না
করে করে চাইতে থাকা, দেখবেন আপনি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে যে দোয়া করলেন তা আল্লাহ তায়ালা
কবুল করে নিবেন বরং আপনার চোখের পানির কারনে আল্লাহ আপনাকে আপন করে নিবেন, আপনাকে আরো
বেশী দিবেন যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। তাই আমাদের উচিত নিরাশ না হয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে
দোয়া করতে থাকা।
দোয়া করা এবং দোয়া পড়া, কিভাবে দোয়া করবেন?
দোয়াতে আরো একটি বিষয়
প্রনিধানযোগ্য, তা হল কিছু লোক দোয়া করেন, আর কিছু লোক দোয়া পড়েন। দোয়া পড়ার ফলে দোয়া
কবুল হয় না। বরং দোয়া করার ফলে দোয়া কবুল হয়। যেমন দোয়া পড়া হল (রাব্বানা আতিনা ফিদ
দুনিয়া…..) এভাবে তোতা পাখির মত অর্থ না বুঝে শুধু পড়তে থাকা। এমন হাজারো লোক আছে যারা
নামাজের পর এ দোয়াটি পড়েন আপনি যদি তাকে জিজ্ঞেস করেন এর অর্থ কি? সে বলতে পারবে না।
আবার অনেকে নামাজের পর হাত উঠায়ে দোয়া পড়ে, যদি কেহ তাকে প্রশ্ন করে আপনি এখন মুনাজাত
করেছেন তাতে আল্লাহ কাছে কি চাইলেন? সে বলবে জানি না। অথ্যাৎ অত্যন্ত অমনযোগীতার সাথে
অধিকাংশ মানুষ দোয়া করে থাকেন, যাকে দোয়া করা বলা যাবেনা, বলতে হবে দোয়া পড়া। সুতরাং
না বুঝে অমনোযোগিতার সাথে দোয়া পড়াতে কোন ফায়দা নাই। দোয়া করতে হবে অত্যন্ত আন্তরিকতার
সাথে, মনযোগসহকারী, কাকুতি মিনতি করে করে, চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে চাইতে হবে। তাহলেই
আমাদের দোয়া দ্রুত কবুল হবে।
দোয়াতে চোখের
পানির গুরুত্ব
আল্লাহ তায়ালা বলেন
(উদউ রাব্বাকুম তাদাররুয়ান ওয়া খুফিয়া) আপন রবের কাছে কাকুতি মিনতির সাথে কেঁদে কেঁদে
ও গোপনে গোপনে দোয়া কর, আল্লাহ তায়ালার কাছে চোখের পানির অনেক মুল্য। গুনাহগারের চোখের
পানি আল্লাহর রাগের আগুনকে ঠান্ডা করে দেয়।
ঘটনা: এক বুজুর্গ তিনি
খুবই দীলদরিয়া ছিলেন, তার কাছে যেই আসত তিনি তাকে যা চাইত তাই দিয়ে দিতেন। নিজের কাছে
না থাকলে অন্যের কাছ থেকে ধার করে হলেও তিনি দিয়ে দিতেন। এভাবে দিতে দিতে তাঁর কর্জের
ভোজা অনেক ভারি হয়ে গেল। তার জন্য আখেরী সময় আসল তখন সকল পাওনাদার তার উঠানে এসে জমা
হয়ে গেল, সে দিকে এক ছেলে হালওয়া বিক্রী করার জন্য যাচ্ছে, সে বুজুগ সে ছেলেকে বলল
তার কাছে যে হালওয়া আছে তা উঠানে বসে থাকা লোকদের দিতে, ছেলেটি খুব খুশী হয়ে গেল কারন
তার আর বাজারে গিয়ে বেঁচতে হবে না রাস্তাতেই তার হালওয়া বিক্রী হয়ে গেল। হালওয়া যখন
খাওয়ানো শেষ ছেলেটি বুজুর্গের কাছে গেল টাকার জন্য, বুজুর্গ বল তুমিও ওদের সাথে বসে
অপেক্ষা কর ওরা সবাই আমার পাওনাদার ওদেরকে যখন আমি পাওনা মিটাব তখন তোমারটাও মিটিয়ে
দিব। ছেলেটি এ কথা শুনে বলল হুযুর আমার মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি এক এতিম এ হালওয়া
বেচা পয়সা দিয়েই আমার ঘরের চুলা জ্বলে, এতিম ছেলেটি টাকার জন্য জারে কাতার কান্না করতে
লাগল। বাচ্চাটি যখন কান্না করতে লাগল আল্লাহর রহমতের দরিয়ায় জোশ এসে গেল, এমন সময় এক
লোক আশরাফির থলে নিয়ে হুযুরের খেদমতে হাজির হল। সে থলে নিয়ে হুযুর তা থেকে যত কর্জদার
ছিল সকলের কজ এবং সাথে সে বাচ্চাটির কর্জও চুকিয়ে দিলেন। পাওনাদারা প্রশ্ন করল হুযুর
বাচ্চাটি কান্না করার সাথে সাথে আপনি এত পয়সা কোত্থেকে জোগার করলেন? সে বুজুর্গ ব্যক্তিটি
বললেন তোমদের মধ্যে যারা এখানে বসেছিলে তাদের মধ্যে কেহই কান্নাকারী নাই, যখন এ বাচ্চাটি কান্না করতে লাগল
আল্লাহ তায়ালার রহমতের দরিয়ায় ঢেউ খেলে গেল এবং তাঁর কান্নার বরকতে তাঁর অভাবও পুরন
হল এবং সাথে সাথে তোমাদের সকলের প্রয়োজনও আল্লাহ মিটিয়ে দিল।
আন্তরিকভাবে
দোয়া করার ফলে
দোয়া কবুল
হওয়ার চমৎকার উদাহারন
ঘটনা: হাজ্জাজ বিন ইউসুফ
তাওয়াফ করছিলেন, তিনি দেখলেন এক অন্ধ লোক কাবা ঘরের সামনে বসে বসে দোয়া করছেন ‘আল্লাহ
আমাকে দৃষ্টি দাও’, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তার সামনে গিয়ে বলল হে অন্ধ! তুমি কি জান, আমি
কে? সে বলল আপনি কে? হাজ্জাজ বলল আমি হলাম বাদশাহ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ
ছিলেন খুবই কঠোর প্রকৃতির মানুষ, সকলেই তার ব্যপারে জানত।তিনি যা বলতেন তাই করতেন,
অন্ধ লোকটি হাজ্জাজের নাম শুনে ভয় পেয়ে গেল। হাজ্জাজ অন্ধকে বলল আমি শুনলাম তুমি দৃষ্টির
জন্য কবাঘরে বসে বসে দোয়া করছ, এখন আমি তাওয়াফ করছি আমার তাওয়াফ শেষ হওয়ার আগে আগে
যদি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে না আসে তাহলে আমি তোমাকে কতল করার হকুম দিব। এ কথা বলে
অন্ধের পাশে ২ জন পুলিশ দাঁড় করিয়ে দিলেন যেন অন্ধ সেখান থেকে পালাতে না পারে, এরপর
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তাওয়াফে লেগে গেলেন, এতক্ষন অন্ধ অমনোযোগিতার সাথে দৃষ্টির জন্য
দোয়া করছিল, কিন্তু যখন কতলের কথা শুনল সে ভয়ে কাপতে শুরু করল, আর দু চোখ দিয়ে পানি
গড়িয়ে পরতে লাগল, আর এত আন্তরিকভাবে দোয়া করতে লাগল ‘হে আল্লাহ এতক্ষন আমি দৃষ্টির
জন্য দোয়া করেছি, এখনতো আমার জীবন নিয়ে টানা টানি শুরু হয়েছে’, সে অল্প সময়ে এত কাকুতির
সাথে দোয়া করল যে হাজ্জাজ তাওয়াফ শেষ করে আসার আগে আগেই আল্লাহ তায়ালা তার দৃষ্টি ফিরিয়ে
দিলেন। সুবহানাল্লাহ। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এসে দেখলেন অন্ধ সত্যি সত্যি দৃষ্টি শক্তি
ফিরে পেয়েছেন। তখন হাজ্জাজ অন্ধকে বললেন, আমি কতলের হুমকি দেয়ার আগে তুমি বসে বসে যে
ভাবে দোয়া করছিলে আন্তরিকতা ছাড়া সে স্টাইলে যদি তুমি কাবার সামনে বসে বসে তোমার পুরা
জীবন দোয়া করতে তাহলে সে দোয়া কবুল হত না, কারন তোমার সে দোয়া শুধু তোমার মুখ থেকে
বের হচ্ছিল তাতে আন্তরিকতা ছিল না। যখন জীবনের ভয় হল তখন তুমি যে দোয়া করেছ তা তোমার
হৃদয়ের গভীর থেকে করেছ, আর অন্তরের গভীর থেকে যে দোয়া করা হয় তা আল্লাহ তায়ালা কবুল
করেন। সুতরাং যখনই আমরা দোয়া করব তখন অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাকুতিমিনতির সাথে দোয়া
করব। তাহলে তার ফলাফল আমরা সহসাত দেখতে পাব।
দোয়া করার
ষ্টাইল কেমন হওয়া উচিত?
দুনিয়ার কোন ফকিরকে
দেখবেন সে যখন মাত্র ১টি টাকা আপনার কাছে ভিক্ষা চায়তে আসে সে ভিক্ষা পাওয়ার জন্য ফাটা
পুরানা কাপড় পরে, চেহেরাকে মলিন করে, চাওয়ার সময় বেছে বেছে শব্দ বলে, যাতে আপনার অন্তরে
তার কথাগুলির এফেক্ট হয়, তারপর করুন স্বরে চাইতে থাকে। দুনিয়ার মাখলুকের কাছে ১/২ টাকা
ভিক্ষা চাইতে যদি এত কিছু লাগে তাহলে যিনি আমাদেরকে সবকিছু দিচ্ছেন সে মহান রবের কাছে
চাইতে কেমন নম্রতা অবলম্বন করতে হবে তা একবার চিন্তা করে দেখুন।
দোয়ার ভাষা
কেমন হওয়া উচিৎ
দোয়া কবুল হওয়ার জন্য
আরেকটি কৌশল হল ভাষার মধ্যে অত্যন্ত নম্রতা থাকতে হবে। একটা উদাহারন দিলে বুঝতে পারবেন
মসজিদে নববীর এক কোনায় এক লোক দোয়া করছে (আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নাকা আনতাল্লাহ
লা ইলাহা ইল্লা আনতা) হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে এ জন্যই প্রার্থনা করছি তুমিই যে আমার
আল্লাহ, তুমি ছাড়াতো আমার আর কেউ নাই যে তার কাছে চাইব) হুযুর (দঃ) ফরমালেন ঐ কোনাতে
বসে থাকা লোকটিকে গিয়ে বল যে তার দোয়া কবুল হয়ে গেছে।
যখন কোন বান্দা এভাবে
দোয়া করে (আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি ওয়াআনা আবদুকা) হে আল্লাহ আমি তুমি আমার রব আমি
তোমার বান্দাহ, এভাবে যখন বলে তখন আল্লাহ সে বান্দার দোয়া কবুল না করে পারে না।
মুর্তির আগে হাত জোড়
করে জুলাইখা আজিবন দোয়া করেছে এয়া সানামু, আমাকে ইউসুফের সাথে মিলিয়ে দাও, এভাবে সে
গোটা জীবনভর দোয়া করেছে, দোয়া করতে করতে বৃদ্ধ হয়ে গেছে একদিন বয়সের ভাড়ে জিহ্বার আড়ষ্টতায়
এয়া সানামু এর স্থানে এয়া ছামাদু হে অমুখাপেক্ষি রব, বলে দিল তখন আল্লাহ তায়ালা জিবরিলকে
নির্দেশ দিল জিবরিল তাড়াতাড়ি যাও আমার ইউসুফের ঘোড়ার মোড় ঘুরিয়ে দাও আমার এ বান্দির
সাথে মিলিয়ে দাও, জিবরাইল বল এয়া রব সে তো আপনাকে ডাকেনি আল্লাহ বলল ভুলক্রমে হলেও
যেহেতু সে আমাকে আজ ডেকেছে, আজিবন মুর্তির কাছে চেয়েছে আজ আমার কাছে চেয়েছে, এখন আমি
যদি তার দোয়া কবুল না করি তাহলে সে কিভাবে বুঝতে পারবে সনম ও সমদ এর পার্থক্য। তাই
আসুন আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
আল্লাহ তায়ালা
বান্দা যা চায় তার চেয়েও বেশী দান করেন
আল্লাহ তায়ালা অনেক
সময় আমরা যা চাই তার চেয়ে এত বেশী দান করেন যা আমাদের কল্পনারও বাইরে, যেমন হযরত ইবরাহিম
(আঃ) মা হাজেরা ও হযরত ইসমাইল (আঃ) কে শাম দেশ থেকে মক্কা মুকাররামায় নিয়ে আসলেন, সেখানে
মরুভুমি ছিল কোন গাছপালা ছি”ল না এবং দোয়া করলেন (ওয়ারজুকহুম মিনাছ ছামারাত) হে আল্লাহ
তাদেরকে খাওয়ার জন্য ফল দান কর। আল্লাহ তায়ালা জবাবে বলেন হে আমার প্রিয় খলিল ইবরাহিম
(ইলাইহি ছামারাতু কুল্লে শাই) আমি এ স্থানে সব ধরনের ফল পৌঁছাব। ইবরাহিম (আঃ) শুধু
চেয়েছেন ফল আর আল্লাহ ঘোষনা দিয়েছেন সব ধরনের ফল চাই তা সবজি ফল ফলাদি, গাছ পালার ফলফলাদি,
পেক্টরীর প্রোডাক্ট জাতীয় ফল, মানুষের মনের আকাংখার ফল, যেমন প্রত্যেক মানুষের জীবনের
আকাংখা হয় সে মক্কা মদীনায় যাবে, এভাবে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামত পর্যন্ত সে মক্কা মুকাররামাকে,
মদীনা মনোয়ারাকে সারা জাহানের যত প্রকারের ফল আছে সব ধরনের ফল পৌঁছাচ্ছেন। এটা হল আল্লাহ
তায়ালার দয়া এবং তার প্রিয় বান্দার প্রতি মহব্বত।
তেমনি আল্লাহ যে বেশী
দান করেন তার আরেকটি উদাহারন হল, ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া যখন আল্লাহর উপর ঈমান
আনলেন তখন ফেরাউন তা জানতে পারল, প্রথমে ওয়ারনিং দিল কিন্তু দেখল বিবি আছিয়া আল্লাহর
উপর অকাট্যভাবে ঈমান এনেছে, তখন ফেরাউন বিবি আছিয়াকে খুব শাস্তি দিল এবং অত্যন্ত অসম্মানের
সাথে ঘর থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল, একজন নারীর জন্য স্বামী তার ঘর থেকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া এর চেয়ে বড় শাস্তি
আর কোন কিছু নাই। নারীকে ঘরওয়ালী বলা হয়, আর যখন ঘরওয়ালীকে গৃহহীন করে দেয়া হয় তা তার
জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখজনক ঘটনা হয়। তো বিবি আছিয়াকে ঈমানের কারনে তার স্বামী যখন অত্যন্ত
অপমান অপদস্থ করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছেন তখন বিবি আছিয়া কেঁদে কেঁদে দোয়া
করেছেন (রাব্বি ইবনিলি ইনদাকা বাইতান ফিল জান্নাহ) হে আল্লাহ তুমি আমাকে তোমার নিকটে
জান্নাতের ঘর দান কর। এ জালেম স্বামী আমাকে গৃহহীন করে দিয়েছে, হে আল্লাহ এ ঘরের বিনিময়ে
আমি তোমার কাছে জান্নাতে তোমার নিকটতম ঘর প্রার্থনা করছি। আল্লাহর কাছে বিবি আছিয়ার
এ দোয়াটি এতই পছন্দ হয়েছে যে তিনি তা কুরানে মজিদে জিকির করেছেন। এখানে মজার বিষয় হল,
বিবি আছিয়াতো শুধু জান্নাতে ঘর প্রার্থনা করেছে
কিন্তু যিনি জান্নাতের মালিক তিনি বিবি আছিয়াকে ঘরও দিয়েছেন সাথে সাথে জান্নাতে ঘর
ওয়ালাও দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ।
কিভাবে দিয়েছেন? আসুন
জেনে নিই। তফসিরে রুহুল মায়ানিতে বয়ান করা হয়েছে যখন খদিজাতুল কুবরার ওফাত হচ্ছিল,
তখন হুযুর (দঃ) মা খদিজাকে বললেন তুমি জান্নাতে গিয়ে আমার বিবিদেরকে আমার সালাম বলিও।
খদিজা (রাঃ) অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন এয়া রাসুলাল্লাহ আমি দুনিয়াতে আপনার প্রথম স্ত্রী,
জান্নাতে আবার আপনার স্ত্রী কে? তখন নবী করিম (দঃ) ফরমালেন আল্লাহ তায়ালা বিবি মরিয়ম
ও আছিয়া কে জান্নাতে আমার স্ত্রী হিসেবে সাব্যস্থ করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ। প্রার্থনাকারী
শুধু ঘর চেয়েছেন আর মহান দাতা আল্লাহ তায়ালা কত মহান দাতা যে তাকে ঘরের সাথে সাথে তার
মাহবুব নবীর সঙ্গও দান করে দিয়েছেন।
আরেকটি উদাহারন: হযরত
ওমর (রাঃ) এক সফরে গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে আকাশে চাঁদ দেখে মদীনার চাঁদ নবীজির কথা মনে
পড়ল, তিনি উঠে অজু করে তাহাজ্জুদ নামা পড়ে ২টি দোয়া করলেন (আল্লাহুম্মারজুকনি শাহাদান
ফি ছাবিলিক) আল্লাহ তুমি আমাকে তোমার রাস্তায় শাহাদাতের মর্যাদা দান কর (ওয়াজায়াল কাবারি
ফি বালাদে হাবিবি) এবং তোমার মাহবুব এর শহরে অথ্যাৎ মদীনা শরীফে আমার কবরের তৌফিক দান
কর। তিনি ২টি দোয়া করলেন আল্লাহ ২টি দোয়াই কবুল করেছেন, আর এমন ভাবে কবুল করেছেন যা
হযরত ওমরের দোয়ার চাইতে হাজার গুন উত্তম।যেমন তিনি দোয়া করেছেন শহীদি মৃত্যুর, উনার
শাহাদাত যে কোন মাঠে ময়দানে হতে পারত, কোন পাহাড়ের চুড়ায় হতে পারত, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা
উনাকে এমন শাহাদাত দান করেছেন যে মসজিদে নববীতে, রিয়াজুল জান্নায়, হুযুর পাক (দঃ) এর
মসল্লায় নামাজ রত অবস্থায় তিনি দুবৃত্তের দ্বারা
আক্রান্ত হলেন এবং এর ফলে উনি শাহাদাতের মর্যাদায় ভুষিত হলেন। তারপরের দোয়া ছিল নবীর
শহরে যেন দাফন হতে পারে, যদি জান্নাতুল বাকীতে দাফন হয়ে যেতেন তাও উনার জন্য যথেষ্ট
ছিল কিন্তু আল্লাহ তায়ালা হযরত ওমরকে একেবারে নবীর কদমে দাফন হওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
সুবহানাল্লাহ। অতএব এটাই প্রমাণিত হল প্রার্থনাকারী যা চাই দানকারী নিজের শান মোতাবেক
সে প্রার্থনাকারীর আকাংখার চাইতেও অনেক বেশী দান করে থাকেন। সে দানকারী বড় দয়াবান।
তাই আমাদের উচিত সবসময় সে মহা দয়াবানের নিকট দোয়া করা। আমরা চাওয়াতে গাফলতি করলেও তিনি
দিতে গাফলতি করেন না, বরং তিনি বান্দা চাইলে খুশি হন এবং বান্দাকে দিয়ে খুশি হন।
দোয়া কবুল
হওয়ার সময় কোনটি?
আমরা দোয়া কবুল হওয়ার
সময়ে ঘুমের প্রেমে পড়ি, আরামের বিছানা ত্যাগ করতে পারি না। হাদীসে পাকে আছে তাহাজ্জুদের
সময় এক ফেরেশতা আহ্বান করে বলে (হাল মিন সাঈলিন ফাউতিয়ালাহ) আছে কেউ প্রার্থনাকারী
যার প্রার্থনা পুরণ করে দেয়া হবে। কিন্তু যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এভাবে ঘোষনা হচ্ছে
যে যা চাওয়ার চাও আমি দিয়ে দিব, সে গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে আমরা অঘোর ঘুমে অচেতন। অনেক
লোক রমজান মাসে সেহেরীর জন্যও উঠতে পারে না। অথচ সেহেরীর সময়টিই হল তাহাজ্জুদের সময়
আর সে সময়টিতে আল্লাহর স্পেশাল রহমত নাযিল হয়, আল্লাহ দোয়া কবুল করার সময়।
অতএব আসুন আমরা আল্লাহর
কাছে চাইতে উত্তম সময় তাহাজ্জুদের সময় পছন্দ করি, আল্লাহ কাছে বার বার দোয়া করি, দোয়া
কবুল হলেও দোয়া করি, দোয়া কবুল না হলে নিরাশ না হয়ে বার বার দোয়া করি, দোয়ার সময় অত্যন্ত
নম্রতা ও কাকুতি মিনতির সাথে দোয়া করি, দু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে দোয়া করি, অমনোযোগীতা
ও অবহেলার সাথে দোয়া করা থেকে বিরত থাকি। আরবী দোয়া করার জন্য দোয়াসমুহের অর্থ জেনে
নিই, অর্থ না জেনে শুধু দোয়া পাঠ করা থেকে বিরত থাকি বরং অর্থ বুঝে দোয়া করি, এবং দোয়ার
বদলা দুনিয়ায় না পেলে আখেরাতে তার উত্তম বদলা পাওয়ার আশা রাখি। আল্লাহ আমাদের সকলকে
বুঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই