প্রচলিত কিছু ভুল নাম, এসব নাম ভুল কেন?

প্রচলিত কিছু ভুল নাম, এসব নাম ভুল কেন?
পারভেজ, মুহাম্মদ ওবাইদ, মুহাম্মদ আসগর,
সোহরাব, রুস্তম, তাহরীম, আরহাম, লা রাইবা
খতিব মাও:  মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন (এম.এ, এম.এম ফাষ্ট ক্লাস)

নাম নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারনা আছে, যেমন অনেকে বলে থাকেন আবদুল্লাহ নাম সন্তানের জন্য খুব ভারী নাম, গরম নাম এ নাম রাখলে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।অথচ আমাদের নবী করিম (দঃ) এর ফরমানে আলিশান হল নামসমুহের মধ্যে সবচেয়ে ভাল নাম হল আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। সুতরাং আবদুল্লাহ আবদুর রহমান এ ২টি নামের ব্যপারে রহমতের নবীর সার্টিফিকেট রয়েছে বিধায় এ ২টি নামে কোন ধরনের বেড এফেক্ট নাই। তবে যদি খারাপ নাম হয় তাহলে অবশ্যই সে খারাপ নামের আছর বাচ্চার উপর পরবে।  আমাদের নবী করিম (দঃ) অনেকের নাম পরীবর্তন করে দিয়েছেন। হযরত আয়শা (রাঃ) বয়ান করেন নবী করিম (দঃ) মানুষের এমন নামসমুহ পরিবর্তন করে দিতেন যার অর্থ খারাপ। এবং যে সব নামের অর্থ বড়ত্ব প্রকাশ পায় এ ধরনের নাম প্রিয় নবী করিম (দঃ) পছন্দ করতেন না তাই পরিবর্তন করে দিতেন।
এবার আসুন কিছু নাম আছে যা আমাদের মুসলমানদের মধ্যে অহরহ পাওয়া যায় অথচ এসব নাম মুসলমানের নাম হতে পারে না। যেমন পারভেজ নামটি। মুলতঃ ‘পারভেজ’ ছিল একজন অগ্নিপুঁজক বাদশাহ যার কাছে প্রিয় নবী করিম (দঃ) ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর পর সে প্রিয় নবীর সে দাওয়াতনামাটি ছিরে টুকরা টুকরা করে ফেলেছিল। যখন নবীজি বাদশা পারভেজের এমন আচরনের কথা শুনলেন তিনি খুব কষ্ট পেলেন এবং তাঁর নুরানী জবান থেকে বের হয়ে গেল যে  পারভেজ যেভাবে আমার চিঠিকে টুকরা টুকরা করেছে তার রাজ্যও তেমনি টুকরা টুকরা হয়ে যাবে এবং সেও ধ্বংস হবে, নবীর নুরানী জবান মোবারকের সে কথা খুব অল্প দিনের মধ্যেই সত্যে পরিনত হয়ে গেল।সে ধ্বংস হল এবং তার রাজ্যও টুকরা টুকরা হয়ে গেল।
নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন তোমরা ভাল লোকদের নামে নাম রাখ এখন পারভেজ হল মুলত গোস্তাকে রাসুল তাই কোন মুসলমান এমন নাম রাখা উচিত নয়। পারভেজ হল অগ্নিপুঁজারীদের মাঝে প্রচলিত একটি নাম। কিন্তু এ নামটি আমাদের মুসলমানদের মধ্যে বেশ প্রচলিত হয়ে গেছে তাই যদি সম্ভব হয় এ ধরনের নাম পরিবর্তন করে নেয়া উচিত।
একই ভাবে সোহরাব, রুস্তম এ ২টি নামও মুসলমানদের মধ্যে দেখা যায়। অথচ এ সোহরাব ও রুস্তম ২ জনই ছিল মুর্তিপুঁজারী। এরা হযরত ওমর (রাঃ) যামানায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যেহেতু সোহরাব, রুস্তম পাক্কা ইসলামের দুশমন ছিল মুর্তিপুঁজারী ছিল তাই কোন মুসলমানের সন্তানের নাম সোহরাব রুস্তম রাখা সমীচিন নয়।
অনেকে নামের মাঝে নতুনত্ব খুঁজতে থাকে যার আযব ধরনের অর্থ হয় যেমন (লায়েবা) যদি আইন দ্বারা পড়া হয় তখন এর অর্থ হল খেলার সামগ্রী । তেমনি ভাবে অনেকে কোরানের সুরার নাম হিসেবে নাম রাখে, যেমন (তাহরীম) এর অর্থ হল হারাম করা সুতরাং অর্থের দিকে তাকালে তাহরীম শব্দটি নামের অযোগ্য। কুরানের সুরার নাম সুরা বাকারাও আছে আর বাকারা অর্থ হল গাভী এখন কেহ যদি তাঁর সন্তানের নাম কুরানের সুরার নামের সাথে মিল রেখে বাকারা বা গাভী রাখে সেটাকি সমীচিন হবে? অতএব কারো নাম তাহরীম রাখাটাও বোকামী।
আরেকটি নাম হল (আরহাম) এর অর্থ হল সবচেয়ে বেশী দয়াকারী এ শব্দের মধ্যে বড়ত্ব প্রকাশিত হয় আর এ শব্দটি আল্লাহ তায়ালার শানের জন্যই উপযুক্ত। যেমন আমরা বলি (আরহামুর রাহিমিন) অর্থ সকল দয়াকারীদের, রহমকারীদের মধ্যে হতে সবচেয়ে বেশী দয়াকারী। যেহেতু এ নামটি আল্লাহর শানের উপযুক্ত তাই কোন মানুষের জন্য এ নামটি রাখা উচিত নয়।
অসংখ্য হাদীস শরীফে মুহাম্মদ নামের প্রচুর ফযিলতের বর্ণনা পাওয়া যায়। নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেছেন যে ঘরে কারো নাম মুহাম্মদ হবে সে ঘরে আল্লাহ তায়ালা বরকত নাযিল করেন। অপর রেওয়ায়েতে আছে নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন যার নাম মুহাম্মদ হবে হাশরের মাঠে তাঁর হিসাব নিকাশে সহজ করা হবে।  অনেকে বলে এসব জঈফ হাদীস কিন্তু মনে রাখবেন জঈফ মানে জাল হাদীস নয় বরং হাদীসের মুল মতন সহিহ, শুধু বর্ণনাকারীর কারনে হাদীসকে জঈফ বা দুর্বল বলা হয় আর সকল হাদীসবেত্তাদের মতে ফযিলতের ক্ষেত্রে সকল জঈফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। সুতরাং  সন্তান যদি ছেলে হয় তাহলে তার নাম সবসময় মুহাম্মদ রাখবেন এবং ডাকার জন্য অন্য একটি নাম দিবেন যেমন সন্তানের নাম রাখলেন মুহাম্মদ বেলাল মুল নাম হবে মুহাম্মদ, ডাকার জন্য দিবেন বেলাল পুরাটা মিলে হবে মুহাম্মদ বেলাল।
অনেকে নাম রাখেন মুহাম্মদ ওবাইদ আর ওবাইদ শব্দের অর্থ হল অতি ক্ষুদ্র গোলাম সুতরাং মুহাম্মদ ওবাইদ অথ দাঁড়াই (নাউজুবিল্লাহ) মুহাম্মদ অতিক্ষুদ্র গোলাম। তেমনি ভাবে মুহাম্মদ আসগর আর আসগর অর্থ হয় অপরের তুলনায় ছোট যার অর্থ দাড়ায় (নাউজুবিল্লাহ) মুহাম্মদ অপরের তুলনায় ছোট। যেহেতু আমাদের নবীর নাম মুহাম্মদ তাই মুহাম্মদ নামের সাথে এ ধরনের ছোট ক্ষুদ্র গোলাম এসব রাখার ফলে মুহাম্মদ নামের অসম্মান হয় তাই অনেক আকাবির এ ধরনের মুহাম্মদ ওবাইদ, মুহাম্মদ আসগর নাম রাখতে নিষেধ করেছেন।
অনেকের নাম দেখা যায় আবদুন নবী এ ধরনের নামের ব্যপারে অনেকে অভিযোগ করে, কারন আবদুন শব্দটি যখন আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হয় তখন এর অর্থ হল বান্দা। আবদুন শব্দের ২টি অর্থ ১টি হল গোলাম অপরটি হল বান্দা।  সচরাচর আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান এসব নাম রাখা হয় যার অর্থ হল আল্লাহর বান্দা । কিন্তু যখন আবদুন শব্দটি নবীর নামের সাথে সম্পৃক্ত করে আবদুন নবী রাখা হয় তখন যদি এর অর্থ নবীর বান্দা নেয়া হয় তাহলে তা মারাত্মক ধরনের ভুল হবে। কিন্তু যদি আবদুন নবী দ্বারা নবীর গোলাম অর্থ নেয়া হয় তখন আবদুন নবী নাম রাখাতে কোন ধরনের সমস্যা নাই।
নাম রাখতে হবে সুন্দর অর্থ বাচক কিন্তু অনেক নাম রাখেন যে নাম অর্থবাচক নয় যেমন লা রাইব, এর অর্থ হল (কোন সন্দেহ নাই) অর্থের দিকে তাকালে বুঝা যায় এ শব্দ নামের জন্য উপযুক্ত নয়। যদিও এটি কুরানের শব্দ কিন্তু এ শব্দ দিয়ে নাম রাখাটা অর্থপূর্ণ নয়। তবে যে সব নাম অথবাচক না হলেও যদি আমাদের আকাবের গন পছন্দ করেন, সাহাবায়ে কেরাম পছন্দ করেন সে সব নাম রাখালে বরকত হবে। যেমন আবু হুরায়রা যার অর্থ হল বিড়ালের বাবা, তিনি তাঁর পাঞ্জাবীর আস্তিনের ভিতর সবসময় ছোট বিড়াল রাখতেন তা দেখে দয়াল নবী তাঁকে আবু হুরায়রা বলে ডাকতেন আর আবু হুরায়রা নবীজির সে ডাকা নামটি দিয়ে নিজেকে পরিচয় করতে বেশী পছন্দ করতেন, সুতরাং কারো নাম আবু হুরায়রা রাখাটা দোষের নয় বরং বরকতের কারন হবে।

২টি মন্তব্য:

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.