দারিদ্রতা ধ্বংসকারী অভাবের কবর রচনাকারী নববী নুসখা কুরান তেলাওয়াতের ফজিলত
দারিদ্রতা
ধ্বংসকারী অভাবের কবর রচনাকারী নববী নুসখা
কুরান
তেলাওয়াতের ফজিলত
মাও: এস. এম. নিজাম উদ্দীন (এম এ ফাষ্ট ক্লাশ) (এম.এম ফাষ্ট ক্লাশ)
বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক
সম্মানিত
দর্শক শ্রোতা মন্ডলী আজ আমি পবিত্র কুরানের অলৌকিক শক্তি এবং আমাদের প্রিয় নবীর দেয়া
এমন এক নুসখা আপনাদেরকে বলব যা আমল করলে আপনার ঘর থেকে দারিদ্রতা দুর হবে সাথে সাথে
আপনার প্রতিবেশীও সে আমলের বরকতে ধনী হয়ে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন (ওয়াইজা কুরিয়াল কুরআন,
ফাসতামিউ লাহু ওয়া আনসিতু
লায়াল্লাকুম তুরহামুন)
যখন কুরান তেলাওয়াত
করা হয় চুপ থাক
এবং শ্রবন কর তারফলে
রহমত নাজিল হবে
যে
কুরান শুনলে রহমত নাজিল
হয় তা পড়লে কতটুকু
রহমত নাজিল হয় একবার
চিন্তা করে দেখুন।
এ রহমত মুলত রুহের খাদ্য,
আমরা প্রতিদিন সকালে উঠে যেমন নাস্তা করি তেমনি কুরান পাঠ করাটাও মুলত রুহের নাস্তা,
রুহের খোরাক।
ফেরেশতাদের
মধ্যে শুধু হযরত জিবরাইল (আঃ) কুরান পড়তে জানেন “অন্য কোন ফেরেশতা কুরান পাঠ করতে জানে
না তাই যখনই কোন লোক কুরান পড়তে শুরু করেন সেখানে সাথে সাথে ফেরেশতারা হাজির হয়ে যান
কারন তারা যেহেতু পড়তে জানেন না সেহেতু তারা এ কুরান যেখানে তেলাওয়াত হয় সেখানে শুনতে
একত্রিত হয়ে যান। এমনকি ফেরেশতাদের লাইন এত লম্বা হয়ে যায় যে সে লাইন আরশ পর্যন্ত গিয়ে
পৌঁছে। সুবহানাল্লাহ
সহিহ মুসলিম
১ম খন্ড হাদীস নয় ২৬৯:
নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন এক লোক সুরা কাহাফ পড়ছিলেন এবং তিনি তাঁর পাশে ২টি লম্বা
রশি দিয়ে বেঁধে রাখলেন, কিছুক্ষন পর একটি মেঘখন্ড নিচের দিকে নামতে লাগল, সেটিকে দেখে
সে ঘোড়াটি ভয়ে নড়াচড়া করতে লাগল, সে সাহাবী নবী করিম (দঃ) এর কাছে গিয়ে সব ঘটনা বর্ণনা
করলেন তখন নবী করিম (দঃ) সে সাহাবীকে বললেন সেটি হল তাসকিন বা প্রশান্তি যা কুরান তেলাওয়াতের
কারনে নাযিল হচ্ছিল, অপর বর্ণনায় আছে সেটি ফেরেশতা যে ফেরেশতা কুরান তেলাওয়াতের দরুন
রহমত নিয়ে নাযিল হচ্ছিল।
অপর
এক হাদীসে আছে যখন কোন ক্বারী কুরান তেলাওয়াত করেন তখন ফেরেশতা সে ক্বারীর নিকটে যেতে
যেতে তার এতই নিকটে পৌঁছে যান এমনকি সে ক্বারীর মুখের সাথে তার মুখ মিলিয়ে দেন। (সুবহানাল্লাহ)
ক্বারী মুখ থেকে
সুগন্ধ
ইমাম
আসেম কুফি (রহঃ) অনেক বড় একজন ক্বারী ছিলেন তিনি একবার মদীনা শরীফ জেয়ারতে যান, সেখানে
বেশ কিছুদিন থাকেন, সেখানে উনার আশে পাশে যারা থাকত তারা উনার মুখের থেকে প্রচন্ড রকমের
সুগন্ধি বের হতে দেখেন, একজন প্রশ্ন করল জনাব আপনি কি ব্যবহার করেন আপনার মুখ থেকে
এত মিষ্টি খুশবু কেন বের হয়? তখন তিনি জবাব দিলেন আমি কিছুই ব্যবহার করিনা, তবে আমি
প্রতিদিন রাতে শোবার সময় কুরান তেলাওয়াত করি, একদিন কুরান পড়তে পড়তে আমি ঘুমিয়ে গেলাম,
রাতে নবী (আঃ) কে স্বপ্নে দেখলাম নবী করিম (দঃ) আমাকে বললেন আসেম তুমি যখন কুরান পাঠ
কর তখন আমার খুব ভাল লাগে তোমার কুরান তেলাওয়াতের সৌন্দর্য্যে আমি মুগ্ধ, আস আজ আমি
তুমি যে জবান দ্বারা আল্লাহর কালাম পাঠ কর সে জবানে চুমা দিব, সেদিন স্বপ্নে আমার প্রিয়নবী
আমাকে চুমু দিলেন সেদিন থেকেই আমার মুখ থেকে এমন চমৎকার খুশবু বের হয় । সুবহানাল্লাহ
এ
ছিল আগের যুগের লোকজনের অবস্থা-
আর
আজকাল আমাদের অবস্থা হল শুবার সময় বালিশের পাশে থাকে রিমোট, মোবাইল আর জাগ্রত হওয়ার
সাথে সাথেই হাতে উঠে রিমোট মোবাইল।
মনে
রাখবেন কেয়ামতের দিন প্রত্যেককে সে অবস্থায় উঠানো হবে যে অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে,
একবার চিন্তা করুন রাতে মুভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেছেন যদি সে ঘুমেই আপনার মৃত্যু এসে
যায় তাহলে কেয়ামতে কি অবস্থায় আপনি উত্তিত হবেন?
কুরান একটি লটকানো
রশি
নবী
করিম (দঃ) এরশাদ করেন কুরান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি লটকানো রশি যার একটি মাথা তোমার
হাতে অপর মাথা তোমার প্রভুর হাতে, সুতরাং সে
সব লোক সৌভাগ্যবান যারা এ কিতাবের সাথে জুড়ে যান।
কুরান পড়তে পারে
না কিন্তু কবর আলোকিত
এক
লোক কুরান পড়তে জানত না কিন্তু তার মৃত্যুর অনেক বছর পর কোন কারনে সে লোকটির কবর খুলে
গেল লোকজন দেখল তার কবর থেকে খুশবু বের হচ্ছে, সকলে চিনতে পারল সে লোকটির লাশ, লাশও
একদম তরুতাজা, গ্রামবাসী সে লোকটির স্ত্রীর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল তাঁর স্বামীর কি আমল
ছিল যে কারনে তাঁর কবর এত আলোকিত এত খুশবু ছড়াচ্ছে? স্ত্রী বলল আমার স্বামী একজন মুর্খ
দীনমুজুর ছিলেন, তবে তিনি প্রতিদিন বিকালে কাজ থেকে এসে ঘরে এসে কুরানে কারিম নিয়ে
বসে যেতেন, তিনি কুরান পড়তে পারতেন না, কিন্তু কুরানের প্রতিটি লাইনে তিনি প্রতিটি
আয়াতে তিনি আঙ্গুল ফিরাতেন আর বলতেন হে রব্বে কায়েনাত আমি অভাগা কুরান পড়তে পারিনা
তবে আমি স্বাক্ষি দিচিছ তুমি এ আয়াতে যা বলেছ সত্য বলেছ, এভাবে প্রতিটি লাইনে তিনি
আঙ্গুল ফিরাতেন আর এ কথাটি বার বার বলতেন আর চোখের পানি ছেড়ে দিতেন, আল্লাহ হয়ত উনার
সে আমলের বরকতে উনাকে এমন সম্মান দান করেছেন।
দারিদ্রতা
ধ্বংসকারী অভাবের কবর রচনাকারী নববী নুসখা
পবিত্র
কুরানে পাকে কিছু কিছু সুরা আছে যে সব সুরার বিশেষ ফযিলত রয়েছে তার মধ্যে সুরা এখলাছ
সে সুরাটি মাত্র ৩ বার পাঠ করলে এক খতম কুরানে পাক পড়ার সাওয়াব পাওয়া যায়, সে সুরা
এখলাছের আরো একটি আমল হল-
দারিদ্রতা ধ্বংসকারী
ওয়াজিফা: এক সাহাবী নবী
করিম (দঃ) এর কাছে নিজের অভাব অনটনের অভিযোগ করলেন এবং বললেন এয়া রাসুলাল্লাহ আমার
পরিবার বড়, আয় রোজগার কম আমার জন্য দোয়া করুন কিংবা আমাকে এমন নুসখা বলে দিন যাতে আমার
দারিদ্রতা/অভাব দুর হয়ে যায়, নবী করিম (দঃ) এরশাদ করলেন যখনই তুমি ঘরে যাবে ঘরবাসীকে
সালাম করবে এবং ঘরে ঢুকে একবার সুরা এখলাছ পাঠ করবে, (এটি দারিদ্রতাকে ধ্বংসকারী নুসখা) যখনই ঘরে যাবেন আসসালামু আলাইকুম এরপর
১ বার শুধু সুরা এখলাছ। এরপর আমার হুযুর এরশাদ করেন যদি কখনো এমন হয় তুমি ঘরে গিয়েছ
আর ঘরে কেহই নাই তখনও এ আমল ছেড়ে দিও না (ফাসাল্লিম আলাইয়্যা) তখন আমাকে সালাম বলে
দাও, সাহাবী বলেন সেদিন থেকে আমি আমল শুরু করে দিলাম ঘরে গেলেই আসসালামু আলাইকুম এরপর
সুরা এখলাছ ১ বার পড়ে নিতাম, এ আমলের বরকতে আমিতো ধনী হয়েই গেছি সাথে সাথে আমার প্রতিবেশীও
ধনী হয়ে গেল।
তাহলে
এ হাদীস শরীফ থেকে আমরা দারিদ্রতার কবর রচনা করার জন্য যে নববী ওয়াজিফা জানতে পারলাম
তা হল, যখনই ঘরে প্রবেশ করবেন ঘরের বাসিন্দাদেরকে সালাম দিতে হবে (আসসালামু আলাইকুম)
এরপর একবার সুরা এখলাছ (কুল হুয়াল্লাহু আহাদ ---- কুফুয়ান আহাদ) পড়তে হবে।
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
اللَّهُ الصَّمَدُ
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ
يُولَدْ
وَلَمْ يَكُن لَّهُ
كُفُوًا أَحَدٌ
আর
যদি ঘরে কোন লোকজন না থাকে তখন আমাদের নবীজিকে সালাম দিতে হবে বলতে হবে (বিসমিল্লাহি
ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ) এরপর সুরা এখলাছ পড়তে হবে। ইনশা আল্লাহ আল্লাহ
তায়ালা এই নববী ওয়াজিফার বরকতে আপনার এবং আপনার প্রতিবেশীর দারিদ্রতা দুর করে দিবেন।
হযরত ওমরের ভাষায়
কুরান নাযিল হয় কেন?
হযরত
ওমর (রাঃ) যাই বলেন আল্লাহ সেটি নিয়েই আয়াত নাযিল করে দেন: (ক) একদিন হযরত ওমর (রাঃ)
প্রিয় নবীজিকে প্রস্তাব দিলেন এয়া রাসুলাল্লাহ মকামে ইবরাহিমে নামাজ পড়লে কেমন হয়?
সাথে সাথে জিবরাইল আয়ান নিয়ে হাজিল (ওয়াত্তাখিজু মিম মাকামে ইবরাহিমা মুসাল্লা)
(খ)
আরেকদিন ওমর (রাঃ) নবীজিকে বলেন এয়া রাসুলাল্লাহ আপনার কাছে নেক লোকও আসেন অনেক দুষ্ট
লোকেরাও আসেন আপনি উম্মাহাতুল মুমিনীনদেরকে পর্দার হকুম কেন দেন না? হযরত ওমরের এ কথা
শেষ হয়নি সাথে সাথে পর্দার আয়াত নিয়ে হযরত জিবরাইল নাযিল হয়ে গেলেন।
এর
কারন কি ছিল? হযরত ওমরের ভাষায় কেন কুরানের আয়াত নাযিল হয়? এর জবাবে হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে উমর বলেন- আমার বাবা হযরত ওমরের আমল এটাই ছিল (কানা ইজা দাখালাল বাইত নাশারাল মুসহাফ কারাআ ফি)
অথ্যাৎ তিনি যখনিই ঘরে আসতেন সাথে সাথে কুরান মজিদ খুলে বসে যেতেন। আজ থেকে ২০ বছর
আগেও এটাই ছিল মুসলমানদের হালত লোকজন সকাল সকাল কুরান মজিদ নিয়ে বসে বসে তেলাওয়াত করত।
কতদিনে কুরান খতম
করা উচিত? হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে ওমর (রাঃ) রসুলুল্লাহ (দঃ) এর কাছে প্রশ্ন করলেন কত দিনে কুরান খতম করা উচিত?
তখন তিনি জবাব দিলেন ৪০ দিনে অন্তত এক খতম কুরান পড়া উচিত। যদি এর চেয়ে বেশী পড়তে চায়
তাহলে ৩০ দিনে, তারচেয়ে বেশী পড়তে চাইলে ২০ দিনে, তার চেয়ে বেশী পড়তে চাইলে ১০ দিনে
তার চেয়ে বেশী পড়তে চাইলে ৭ দিনে।
তাহলে
বুঝা গেল আমাদের প্রিয় নবী আমাদেরকে ৪০ দিনে অন্তত এক খতম কুরান পড়তে বলেছেন।
ইমাম
শাফেয়ী (রহঃ) এর কাছে কিছু ফকিহ আসলেন তিনি তখন কুরান পাঠ করছিলেন অনেকক্ষন হয়ে গেলে
সে সব ফোকাহাগন বলল হুযুর আপনার শেষ হলে আপনার সাথে কিছু কথা ছিল, তখন ইমাম শাফেয়ী
বলেন আমি যখন এশা পড়ে কুরান খুলে বসি তখন তাতে এতই ডুবে যায় অনেক সময় ফজরের আযান হয়ে
যায় আর তাথে আমি এতই মজা পাই যে ফজরের আযান
হয়ে গেলেও কুরান বন্ধ করতে মন চাই না।
হযরত
এয়াহিয়া বিন মুয়াজকে (রহঃ) কেহ প্রশ্ন করল আপনার আখেরী শ্বাস চলছে এখন আপনার শেষ ইচছা
কি? তিনি বললেন আমার ২টি আখেরী ইচ্ছা তা হল
আমার ঘরটা খালি হবে আর আমি তাতে কুরান তেলাওয়াত করব।
কোন মন্তব্য নেই