হিজরী নববর্ষের গুরুত্ব। মহররমের ফজিলত আমল। আশুরার ফজিলত আমল। Maulana Niz...







১লা
সেপ্টেম্বর ২০১৯
মহররম
আসার আগে
অবশ্যই
এ ভিডিওটি দেখবেন

চাঁদ উঠলেই আগামী ১লা
সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১লা মুহররম মাত্র ৬দিন বাকী তাই এখনই জানতে হবে এ হিজরী সনের
গুরুত্ব প্রথম মাস মহররম মাসের কি কি ফজিলত এবং এ মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল
দোয়া িরোজা জিকিরের নিয়মসমুহ তা আজ ইনশা আল্লাহ বিস্তারিত আলোচনা করব আশা করি
আপনারা শেষ পযন্ত শুনবেন আপনাদের অবশ্যই ভাল লাগবে।

এই চান্দ্রবর্ষের ও চান্দ্রমাসের প্রভাব
মুসলমানদের জীবনে ব্যাপক। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব ও গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষত
ইবাদতের তারিখ
,ক্ষণ ও মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিজরী সনের
প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম। একারণে হিজরী
 সনের হিসাব
স্মরণ রাখা মুসলমানদের জন্য জরুরি। অনেক ক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। যেমন রমযানের
রোযা
,দুই ঈদ,হজ্ব,যাকাত
ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে চান্দ্রবর্ষ বা হিজরী
 সন ধরেই
আমল করতে হয়। রোযা
 রাখতে হয় চাঁদ দেখেঈদ করতে
হয় চাঁদ দেখে। এভাবে অন্যান্য আমলও। এমনকি স্বামীর মৃত্যুর পর মহিলাদের ইদ্দতের
ক্ষেত্রগুলোতেও চান্দ্রবর্ষের হিসাব গণনা করতে হয়। অর্থাৎ
 মুসলমানদের
ধর্মীয় কতগুলো দিন-তারিখের হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্র রয়েছে
,সেগুলোতে
চাঁদের হিসাবে দিন
,তারিখ,মাস ও বছর
হিসাব করা আবশ্যকীয়।
 
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে,চান্দ্রবর্ষের
হিসাব অনুযায়ী হওয়ায় একটি ইবাদত বিভিন্ন মৌসুমে পালনের সুযোগ মুসলমানরা পান।
কখনও রোযা
 ছোট দিনের হয়,কখনও দীর্ঘ দিনের।
কখনও ঈদ ও হজ্ব
 হয় শীতকালে,কখনও
গ্রীষ্মকালে। মৌসুমের এই বৈচিত্র্যের কারণে মুসলমানরা একটি ইবাদত বা উৎসব আল্লাহর
দেওয়া সব ক
টি মৌসুমেই পালন করতে পারেন।

মনে রাখতে হবে,ইসলামী
তারিখ বা চান্দ্রবর্ষের হিসাব রক্ষা করা মুসলমানদের জন্য ফরযে
 কেফায়া।
একথা মনে করার কোনোই অবকাশ নেই যে
,হিজরী সনটি আসলে
আরবী
 বা কেবল আরবদের একটি সনবরং এটি
মুসলমানদের সন এবং ইসলামী সন। এক্ষেত্রে শুধু একটা চাঁদ দেখা কমিটি করে একটি
মুসলিম
-রাষ্ট্রের দায়িত্ব পুরোপুরি পালিত হয় না। বরং
সব মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রের উচিত
,তাদের
স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে ইসলামী বা হিজরী
 সনকে
প্রাধান্য দেওয়া।

একটি মহল
বিশ্বব্যাপী একদিনে ঈদ পালন ও একসঙ্গে রোযা রাখার দাবি তুলেছে। এ দেশের কিছু কিছু
গ্রামে এভাবে পালিতও হচ্ছে।
অথচ-
 সাহাবায়ে
কেরামের যুগেও ইসলাম যখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল তখনও ভিন্ন
ভিন্ন এলাকা ভেদে ঈদ ও রোযার দিন ভিন্ন হয়েছে। সিরিয়া ও মদীনায় একই দিনে ঈদ
হয়নি। হাদীসের কিতাবে
لكل أهل بلد رؤيتهم
নামে একটি
অধ্যায় রয়েছে। সুতরাং পুরো বিশ্বে একই দিনে রোযা ও ঈদ করার নামে দেশের কোনো কোনো
গ্রামে অগ্রিম রোযা বা ঈদ করে ফেলা ঐক্যের নামে অনৈক্যেরই একটি নিদর্শন। তবে এসব
বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করা বা পরস্পর তিক্ততার সৃষ্টি করা কিছুতেই কাম্য নয়।
মনে রাখতে
হবে যে
, মুসলমানদের মূল সৌন্দর্য এবং ঐক্যের ভিত্তি
হচ্ছে শরীয়তের অনুসরণের মধ্যে। পুরো পৃথিবীতে একই দিনে রোযা ও ঈদ করা জরুরি কোনো
বিষয় নয়।
যেমনিভাবে
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায বিভিন্ন সময়ে পড়ে থাকে।
যেমন আপনি যখন ফজর পড়ছেন জাপানে তা পড়া হয়ে গেছে আরো ৩ ঘণ্টা আগে। আর সৌদী আরবে
তা পড়া হবে ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে। এতে তো কোনো অনৈক্য সৃষ্টি হয় না।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন
, তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে ইফতার
কর।-সহীহ বুখারী
, হাদীসহ : ১৯০৯; সহীহ
মুসলিম
, হাদীস : ১০৮৯; মুসনাদে
আহমদ
, হাদীস : ৯৫৫৬
কুরআন মজীদেও (সূরা বাকারা : ১৮৯) হজ্বের
বিষয়কে চাঁদের ওপর নির্ভরশীল ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি হাজার বছর ধরে মুসলমানদের
মাঝে মীমাংসিত। সুতরাং এ বিষয়ে নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ নেই।

মহররম হিজরি বছরের
প্রথম মাস। এই মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। বছরের প্রথম মাস আশুরা অত্যন্ত
সম্মানিত
; এর রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। অনুরূপ ১০
মহররম বা আশুরার রয়েছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস।
ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের সৃষ্টিকুলের
প্রাথমিক বিভাজন-প্রক্রিয়ার সূচনা হয় আশুরায়। হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি
, স্থিতি, উত্থান ও পৃথিবীতে অবতরণসব ঘটনাই ঘটেছিল আশুরায়। হজরত নুহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রা আরম্ভ এবং
বন্যা-প্লাবনের সমাপ্তি আশুরাতেই ঘটেছিল।
হজরত মুসা (আ.) সমুদ্রপথে রওনা হওয়ার
দিনটি ছিল আশুরা। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) আশুরায়
কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। আশুরা এলে তিনি বিনয়ে
বিনম্র থাকতেন এবং রোজা পালন করতেন। (তাফসিরে তাবারি
, মুহাম্মাদ ইবনে জারির)।
আশুরা শব্দটি আরবি
আশারা
থেকে এসেছে। এর
অর্থ ১০। আর আশুরা মানে দশম। ইসলামি পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলে।
সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
সংঘটিত হয়েছে। ফলে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফোরাত
নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবীর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত এই দিনকে
বিশ্ববাসীর কাছে সর্বাধিক স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে।
আশুরার রোজা সব
নবীর আমলেই ছিল। নবী করিম (সা.) মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর
মদিনায় এসে নবীজি (সা.) দেখতে পেলেন
,
ইহুদিরাও এই দিনে
রোজা রাখছে। প্রিয় নবী (সা.) তাদের এই দিনে রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলেন। জানতে
পারলেন
এদিনে মুসা (আ.) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর
পক্ষ থেকে তাওরাত কিতাব লাভ করেন। এই দিনেই তিনি বনি ইসরাইলদের ফেরাউনের জেলখানা
থেকে উদ্ধার করেন এবং তাদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউন সেই সাগরে
ডুবে মারা যান। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এই দিন রোজা রাখে।
মহানবী (সা.)
বললেন
, মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের
চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য। এরপর তিনি ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ মহররম অথবা ১১ মহররম
মিলিয়ে ২টি রোজা রাখতে বললেন। কারণ
,
ইহুদিদের সঙ্গে
মুসলমানদের যেন সাদৃশ্য না হয়। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে
আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজা রাখার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক
গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত
অন্য যেকোনো মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। (মুসলিম ও আবু দাউদ)।
১০ মহররম আশুরার
রোজা রাখা সুন্নত। আশুরার দিনে ও রাতে নফল নামাজ পড়া। মহররম মাসের ১৩
, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের সুন্নত রোজা;
২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ নফল রোজা এবং প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা। এ মাসে প্রতি রাতে ১০০ বার দরুদ শরিফ ও ৭০ বার ইস্তিগফার পড়া
অত্যন্ত ফজিলতের আমল।
(রাহাতুল কুলুব
,
ইমাম রাজিন
(রহ.)]।
আশুরার রোজা রাখার চারটি নিয়ম রয়েছে: যথাপ্রথম থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত মোট ১০টি রোজা রাখা। তা সম্ভবপর না হলে ৯, ১০ ও ১১ তারিখ মোট ৩টি রোজা রাখা। তাও সম্ভব না হলে ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১
তারিখ মিলিয়ে ২টি রোজা রাখা। এটাও সম্ভব না হলে শুধু ১০ তারিখে ১টি রোজাও রাখা
যাবে। যদি কেউ শুধু ১০ তারিখে রোজা রাখেন এবং ৯ বা ১১ তারিখ রাখতে না পারেন
; তবে এই ১টি রোজার জোড়া মেলানোর জন্য অন্য দিন রোজা রাখার প্রয়োজন হবে না।
হজরত কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলে
আকরাম (সা.) বলেন
, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহ তাআলা এর অছিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘রমজানের রোজার পরে মহররমের রোজা হলো
সর্বশ্রেষ্ঠ
; যেমন ফরজ নামাজের পরে শেষ রাতের
তাহাজ্জুদ নামাজ সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন।
আসুন,
আশুরার দিনে (আগে
বা পরে এক দিনসহ) আমরা রোজা রেখে আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ লাভ করার সুযোগ গ্রহণ
করি।
 


কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.