বিশ্বনবী ও আম্মা আয়শার ভালবাসার হৃদয়কারা ঘটনাসমুহ

 বিশ্বনবী ও আম্মা আয়শার ভালবাসার হৃদয়কারা ঘটনাসমুহ



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

আজ আমাদের স্ত্রীর হকসমুহ জানা নাই তাই চারদিক থেকে শুধু আগুন আর আগুন। একজন দাঈ বলেন আমি রমজান মাসে ধুরবান নামক জায়গায় চলে যায়, সেখানে মসজিদে আসরের পর বয়ান করি, সে রজমানে মসজিদের ইমামের স্ত্রী ৮ম দিন আমার ঘরে আমার স্ত্রীর কাছে এসে বলে, আমি আপনার এবং মাওলানা সাহেবের শুকরিয়া আদায় করতে এসেছি।  আজ আমার জীবনের প্রথম সপ্তাহ যে আমার স্বামী আমাকে পিটায়নি।স্বামী হল মসজিদের ইমাম, একজন আলেম। ১০ ম দিন ইমাম সাহেব আসলেন আমার কাছে বলল মাওলানা সাহাব  আমার জানাই নেই যে জীন্দেগী কিভাবে কাটাতে হয়। আমাদের সমাজে যেভাবে চলছে আমরাও সেভাবেই স্ত্রীর সাথে আচরন করি। আজ আমি জিবনে প্রথমবার আপনার মুখে শুনেছি যে স্ত্রীর সাথে কিভাবে আচরন করা শিখিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী।

জিন্দেগী ফতোয়া দিয়ে চলে না, জিন্দেগী চলে সুন্দর আখলাকের মাধ্যমে, মিষ্টি কথার দ্বারা। আমার নবী হযরত আয়শাকে লোকমা বানিয়ে খাওয়াতেন। আল্লাহর কসম এটা শুধু আমাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য করেছেন। নবী আমাদের শিখিয়ে গেছেন কিভাবে জিন্দেগী কাটাতেহবে।

প্রথম প্রথম আয়শা আটা মলতে পারতেন না নবীজি আয়শাকে আটা মলে দিতেন। হযরত আয়শা যেখানে মুখ লাগিয়ে খেতেন আমার নবীও সেখানে মুখ লাগিয়ে লাগিয়ে খেতেন। আল্লাহর কসম এসব আমার নবী শুধু উম্মতের শিক্ষার জন্য করে দেখিয়েছেন। তখন বড় বড় মগ হত আম্মা আয়শা যেখানে ঠোঁট রেখে পানি পান করতেন হুযুর সেখানে মুখ রেখে পানি পান করতেন। শুধু আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য। আমাদের নবী নিজ চোখে আল্লাহর দিদার করেছেন তার জন্য নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রশ্ন আসেনা। জান্নাতে লোকেরা যখন আল্লাহর দিদার লাভ করবে তারা বলবে এয়া আল্লাহ আমাদের আর কিছু চাই না শুধু আপনার দিদার চাই। আর আমাদের নবী দুনিয়াতেই আল্লাহর দিদার করে নিয়েছেন এখন তিনি কিভাবে কোন নারীর প্রতি রগবত হতে পারেন? নবী এসব করে দেখিয়েছেন আমরা উম্মতের শিক্ষার জন্য শুধু উম্মতের শিক্ষার জন্য।

এক হাদীস শুনিয়ে দিচ্ছি (মা তাজাওয়্যাজতু ওয়ামা তাজাওয়্যাজতু  ইল্লা বি ওয়াহিয়্যিন মিনাস সামা নাজালা বিহি জিবরিল) আমি নিজে বিয়ে করতে এবং নিজের মেয়ে বিয়ে দিতে প্রথমে আসমান থেকে অহি এসেছে তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আল্লাহর কসম নবী শুধু আমাদেরকে শিখানোর জন্যই করেছেন।

একদিন কোন সফর থেকে ফিরার পথে নবী সাহাবাদের বললেন চলো ভায়েরা তোমরা দ্রুত আগে বাড় যখন সব সাহাবী আগে চলে গেল, পিছনে শুধু নবী আর আয়শা রয়ে গেলেন। নবী আয়শাকে প্রস্তাব দিলেন আয়শা চলো দৌঁড় প্রতিযোগিতা লাগাই। আয়শা বলেন চলেন। আয়শা তখন পাতলা ছিল তাই নবীর আগে আয়শা পৌঁছে গে’ল আর জিতে গেল। এভাবে কয়েক বছর পর অন্য এক সফর থেকে আসার সময় আবার দৌড় লাগালেন এবার আম্মা আয়শা একটু মোটা হয়ে যাওয়ায় নবী আগে পৌঁছে গেল আয়শা হেরে গেল। এবার নবীজি বললেন আয়শা ১ বার তুমি জিতেছ ১ বার আমি জিতেছি এখন দুজনই সমান সমান।

আল্লাহর কসম আমার নবী এসব জিন্দেগী শিখানোর জন্য করেছেন।

আরেকবার জিহাদের সফর আম্মা আয়শা উটের উপর বসে হঠাৎ দেখেন গলার হারটি গায়েব। আয়শা নবীকে বলেন আমার হার হারিয়ে গেছে আগে আমার হার তালাশ করে দেন, তখন আমার নবী বলেননি চল রওয়ানা দিই দরকার নাই হার তালাশের, দেরী হয়ে যাচ্ছে, নবী আয়শাকে একদম ধমকালেন না বরং সকলকে বললেন আয়শার হার তালাশ কর, সকলেই হার তালাশে লেগে গেলেন। তালাশ করতে করতে হার পাওয়া গেলনা কিন্তু সুয ডুবে গেল, এরপর অন্ধকার হয়ে গেল হার খোঁজাও বন্ধ হয়ে গেল। এখন পানি এশারের সময়ই শেষ হয়ে গেছে, ফজরের ওয়াক্ত চলে আসছে, পানিও নাই তখন তায়াম্মুমেরও বিধান ছিল না।

লোকেরা হযরত আবু বকরকে বলতে লাগল তোমার মেয়ের কারনে আজ নামাজ কাজা হয়ে যাবে। আবু বকর অত্যন্ত রাগ নিয়ে আম্মা আয়শার তাবুতে গেল, তখন আল্লাহর নবী আয়শার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। এখন আবু বকর এসে আয়শাকে মুখে নয় বরং ইশারায় ধমকাতে লাগল। আর পাশে খোচা দিতে লাগল যে তোমার কারনে আজ এই অবস্থা। আয়শা বলেন আমার বাবা রাগের মাথায় আমাকে যখন খোচা মারছিল আমি এমন শক্ত হয়ে গেলাম যেন আমার নড়াচড়ার কারনে নবীর ঘুমের ব্যাঘার না ঘটে। তখন আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ।

প্রথম বারের মত ৮ হাজার বছরে এই বিধান নাযিল হচ্ছে, মাটি দিয়ে মানুষ পাক হবে। আল্লাহ বলেন ফাতায়াম্মামু চলো তায়াম্মুম করো। এখন সকল সাহাবীর মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে গেল। আর সাদ বিন ওবাদা বলতে লাগলেন হে আলে আবু বকর এটা প্রথম নেয়ামত নয় যা তোমার ঘরের লোকের অছিলায় আমরা পেয়েছি,  এর আগেও তোমার ঘরের তোফায়েল অনেক বড় নেয়ামত আমরা পেয়েছি।

 এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় আমার নবী ততক্ষন কাফেলাকে অগ্রসর হতে দেননি যতক্ষন আম্মা আয়শার হার খুঁজে পাননি। অবশেষে আম্মা আয়শাই বললেন এয়া রাসুলাল্লাহ বাদ দিন হার মনে হয় পাওয়া যাবে না এবার চলুন রওয়ানা দেয়া যাক। আয়শা বলার পরই নবী কাফেলা চলার অনুমতি দিলেন। যখন আয়শার উট বসা থেকে দাঁড়ালো দেখা গেল হার উটের গায়ের নিচে পরে আছে।

এটাই হল আমার নবীর জিন্দেগী। ওস্তাদদের বলছি ছাত্রদের এসব পড়ান।মুফতিগনকে বলছি এই জিন্দেগী ছাত্রদের পড়ান। যাতে তাদের বিবি তাদের দোয়া দেয়, তাদের মা বাবা তাদের দোয়া দেয়, তাদের সন্তানরা তাদের দোয়া দেয়। সে বাবা নয় যাকে দেখে বাচ্চা ভয়ে কাপে, তিনি ওস্তাদ নয় যাকে দেখে ছাত্র ভীত হয়, সে হল থানেদার দারোগা। সে স্বামী নয় যাকে দেখে স্ত্রী ভীত সন্ত্রস্থ হয়, সে হল থানেদার। (স্বামী হল সে যাকে দেখে স্ত্রী খুশি হয়, বাবা হল সে যাকে দেখে সন্তান আনন্দিত হয়, শিক্ষক হল সে যাকে দেখে সাগরিদ পুলকিত হয়।

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.