আহলে বায়তের মর্যাদা। আহলে বায়তের ফজিলত ও ভালোবাসার বিষ্ময়কর ফজিলত
মুহররম ১৪৪২ হিজরী ৩য় খুতবা
আহলে বায়তের মর্যাদা
আহলে বাইতের ফজিলত ও আহলে বায়তে ভালোবাসার বিষ্ময়কর ঘটনা
#আল্লাহ তায়ালা আহলে বায়তকে মহব্বত করা আমাদের জন্য ফরয করেছেন, যেমন আল্লাহ
তায়ালা সুরা শুরা এর ২৩ নং আয়াতে এরশাদ করেন
قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا
الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى।
অথ্যাৎ (হে রাসুল) বলুন, আমি আমার দাওয়াতের জন্যে তোমাদের কাছে
কেবল আত্নীয়তাজনিত সৌহার্দ চাই।
হাদীস- ইমাম আহম্মদ, তাবরানি, হাকেম বর্ণণা করেন, যখন কোরআনের এ আয়াত নাযিল হলো তখন সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার যেসব আপনজনের প্রতি ভালবাসা পোষণ
করতে এ আয়াতের মাধ্যমে আমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে তারা কারা? মহানবী (দ.) বললেন, আলী ফাতেমা হাসান হোসাইন। তাঁরাই আমার
আপনজন।
এবার আসুন সুরা শুরার ২৩ নং আয়াত
قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي
الْقُرْبَى
হে হাবীব! আপনি বলে দিন আমি তোমাদের নিকট এর বিনিময়ে কোন পারিশ্রমিক চাইনা, কিন্তু একমাত্র আমার নিকটাত্মিীয়দের
ভালবাসা (সূরা শুরা, আয়াত-২৩)
এ আয়াতের তফসির করতে গিয়ে ২জন মহান তাফসীর কারক কি কি বেলেছেন তা জেনে ঈমানকে তাজা করি
“আল্লামা যামাখশারী ও আল্লামা ফাখরুদ্দীন রাজী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রখ্যাত দুজন তাফসীরকারক” ও বিজ্ঞ আলেম, তারা তাদের সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থদ্বয় “আল কাশশাফ ও আল কাবীর” তাফসিরদ্বয় এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন- যখন উক্ত আয়াত নাযিল হলো (সূরা-শুরা-আয়াত-২৩) তখন রাসূল (সাঃ) বলেন:-
(১) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে শহিদী মর্যাদা পায়। (২) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের
ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে নাজাত প্রাপ্ত হয় ইহজগৎ ত্যাগ করে । (৩) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে তওবাকারী হিসাবে ইহজগৎ ত্যাগ করে। (৪) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে পূর্ণ ঈমানের সঙ্গে ইহজগৎ ত্যাগ করে । (৫) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তাকে মালাকুল মউত, মুনকীর ও নকীর ফেরেশতারা সুসংবাদ দেয়। (৬) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের
ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তাকে এমন ভাবে বেহেশতে নিয়ে যাওয়া হবে যেমন বিবাহের দিন কন্যা তার শ্বশুরালয়ে যায়। (৭) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তার কবরে জান্নাত মুখী দু’টি দরজা খুলে দেয়া হবে। (৮) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের
ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, আল্লাহ তার কবর�কে রহমতের ফেরেশতাদের জিয়ারতের স্থানের মর্যাদা দেন। (৯) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের
ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে নবীর সুন্নত ও খাঁটি-মুসলমানদের দলভুক্ত হয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করলো।
সাবধান যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের
শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, কিয়ামতের দিনে তার কপালে লেখা থাকবে সে আল্লাহ পাকের রহমত হতে বঞ্চিত। (*) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের
শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে কাফের হয়ে মারা যায়। (*) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না। সূত্রঃ- তাফসী�রে কাবির, খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৫, (মিশর); তাফসীরে আল কাশশাফ ওয়াল বায়ান, খঃ-৩, পৃঃ-৬৭, (মিশর); তাফসীরে কুরতুবি, খঃ-১৬, পৃঃ-২২, (মিশর);
হাদীস- ইবনে মাজায় বর্ণিত আছে, কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মোমেন হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমাকে ভাল
না বাসবে। আমার ভালবাসা অর্জন হবেনা, যে পর্যন্ত সে
আমার আহলে বাইতকে ভালবাসবেনা।
হাদীস- দায়লামি শরিফে আছে, নবী করিম (দ.) ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানকে তিনটি বিষয়ের আদব
শিক্ষা দাও-১. তোমাদের নবীর প্রতি ভালবাসা, ২. নবীর আহলে
বাইতের প্রতি ভালবাসা এবং ৩. কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি ভালবাসা ও আকর্ষ
কুরআনে
আহলে বায়তের পবিত্রতা ঘোষনা
পবিত্র কুরআনে তাদের পবিত্রতা ঘোষণা করে আল্লাহ পাকের ইরশাদ হয়-
إِنَّمَا يُرِيدُ
اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ
تَطْهِيرًا
অর্থাৎ- হে আহলে বাইত! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। [সূরা আহযাব-৩৩]
হাদীস- আহলে বায়াতগন হলেন উম্মতের নাজাতের উছিলা সরূপ এবং হযরত নুহ (আ:) এঁর কিস্তির মত।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ : إِنَّمَا مَثَلُ أَهْلِ بَيْتِي فِيكُمْكَمَثَلِ سَفِينَةِ نُوحٍ، مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَمَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا غَرِقَ
উচ্চারণঃ ‘আন আবী সা’ইদিল খুদরী, ক্বালাঃ ছামি’তু রাসুলুল্লাহি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামা, “ইন্নামা মাছালু আহলি বায়তী ফীকুম কামাছালি ছাফিনাতি নূহি, মান রাকিবাহা নাজা ওয়ামান তাখাল্লাফা ‘আনহা গারিকা।“
অনুবাদঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি,”তোমাদের মধ্যে আঁমার আহলে বায়াতের দৃষ্টান্ত হযরত নুহ (আলাইহিস সালাম) এঁর কিস্তির মত। এতে যে আরোহণ করেছে সে মুক্তি পেয়েছে, আর যে এটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,সে ধ্বংস হয়েছে।”
*১. তাবরানী কৃত মুজামুল কাবির ১২/৩৪, হাঃ ২৩৭৭, ২৬৩৭,২৬৩৮,২৬৩২
*২. মুজামুল আউছাত ৪/১০ হাঃ ৩৪৭৮ *৩. মুজামুল ছাগির ১/২৪০ হাঃ ৩৯১
*৪. মুসতাদরেকে হাকেম ৩/১৬৩ হাঃ ৪৭২০
হাদীস-. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,এই উম্মতের যারা আঁমার আহলে বায়েতকে ভালোবাসবে (অনুসরণ করবে) তারাই নাজাত পাবে ও যারা অনুসরণ করবে না,তারা ধ্বংস হবে।”
[মেশকাত শরীফ,১১ তম খন্ড,হাদিস- ৫৯২৩]
আহলে বায়ত কারা?
কুরান ও হাদীসের আলোকে হযরত শেখ আবদুল হক মুহাদ্দেছ দেহলভী (রহঃ) সমস্ত ওলামায়ে কেরাম গনের মতামতের উপর রিসার্চ করে আহলে বাইত কারা সে বিষয়ে সারাংশ এভাব বয়ান করেছেন যে বায়ত ৩ ধরনের (১) বায়তে নসব অথ্যাৎ বংশ হিসেবে (২) বায়তে সাকনি বা মাসকান অথ্যাৎ ঘরে অবস্থান হিসেবে। (৩)বায়তে বেলাদত সন্তান বা আউলাদ হিসেবে এ ৩টি ক্যাটাগরি হল আহলে বায়তে আতহারের।
আর এ ৩ প্রকারের মধ্যে হযরত আবদুল মুত্তালিবের
আউলাদের মধ্যে থেকে বনু হাশিম নবী করিম (দঃ) এর আহলে বাইতে নসব হল।
আর ঘরে অবস্থানকারী হিসেবে হুযুর পাক (দঃ) এর স্ত্রীগন উম্মাহাতুল মুমিনিন গন আহলে বাইতে মাসকান হল। তেমনি হযরত জায়েদ ও তাঁর ছেলে হযরত ওসামা যেহেতু মহানবীর ঘরেই থাকত সে সুবাধে এ ২ জনকেও সাহেবে মেশকাত আহলে বাইত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আর নবী করিম (দঃ) এর আউলাদ যারা তারা জন্মসুত্রে আহলে বাইতে বেলাদত হল। মহানবী সকল আউলাদগনই আহলে বাইতের অন্তভূক্ত। তবে এদের মধ্যে হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন (রাঃ) বেশী মর্যাদা রাখেন।
#আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আপনার আহলে বায়েত (পরিবারের) এর মধ্যে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় কে ? তিনি বলেন : হাসান ও হুসাইন । আনাস (রাঃ) বলেন : তিনি ফাতিমা (রাঃ) কে বলতেন আমার দু'সন্তানকে ডাক । এরপর তিনি তাঁদের উভয়কে নাকে শুকতেন ও বুকে চেপে ধরতেন । ( তিরমিজি
শরীফ, ষষ্ঠ খণ্ড, হাদিস নং-৩৭৭২)।
নবীর বংশের লোককে সম্মান করার ফজিলতের ঘটনা
১. সাহাবারা সম্মান দেখাতেন (গোলামের ছেলে গোলাম
২. ইমাম আবু হানিফা সম্মান দেখান (দরসে ৩ বার দাঁড়িয়ে
গেলেন) (সুত্র কাজি সাহাবুদ্দিন দৌলতাবাদী (রহ) এর তফসীর বাহরে মাওয়্যাজ)
৩. কিতাবুল বিররু ওয়াস সিলা আল্লামা ইবনে জওজি লিখেন
(এক বিধবা সৈয়দজাদি বিধবা হওয়ার পর সমরকন্দ হিজরত করেন সেখানে ২জন ধনী একজন মুসলিম
অন্যজন ইহুদী)
গোলামের ছেলে গোলাম
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)উনার সাথে চলাচল করতেন, উঠাবসা করতেন। কোনো এক প্রসঙ্গে হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)উনাকে বলেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এটা শুনে তিনি বিষয়টার শরঈ (শরিয়তী) ফায়সালার জন্য উনার পিতা খলিফা হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জানালেন যে, হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)আমাকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এখন জানার বিষয় হচ্ছে- আমি কি প্রকৃতপক্ষেই গোলামের ছেলে গোলাম? হযরত উমর বললেন, বেশ ভালো কথা। এ বক্তব্যের শরঈ ফায়সালা করতে হলে মৌখিকভাবে বললে হবে না বরং লিখিত আনতে হবে, কাগজে-কলমে থাকতে হবে। গোলামের ছেলে গোলাম কথাটি ইমাম হোসেন যেন লিখে
দেন। ইমাম হোসেন তা লিখে দিলেন এখন এ বিষয়ে সঠিক শরঈ ফায়সালার জন্য সে কাগজটা ওমরের নিকট পেশ করা হয়েছে। তখন হযরত উমর হযরত রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ইমাম হুসাইনকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি আপনি লিখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এটা আমার লিখিত, আমি বলেছি এবং লিখেছি। যখন জিজ্ঞাসা করে উনার স্বীকৃতি মুবারক নেয়া হলো, বিষয়টা সবাইকে জানানো হলো যে, হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)এ কথা বলেছেন এবং দয়া করে লিখেও দিয়েছেন। এটা সকলেই শুনলেন। তখন হযরত উমর বিন খত্তাব বললেন যে, এখন এ বিষয়ে হাক্বীক্বী শরঈ ফায়সালা করা হবে।
হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ঘোষণা করলেন, এই যে কাগজটা যার মধ্যে লিখিত রয়েছে, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। অর্থাত হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)আমার ছেলেকে বলেছেন, ‘গোলামের ছেলে গোলাম’। এর অর্থ হচ্ছে- খলীফাতুল মুসলিমীন উমর হচ্ছেন গোলাম আর উনার ছেলে হচ্ছে ‘গোলামের ছেলে গোলাম’।
এর শরঈ হাক্বীক্বী ফায়সালা হচ্ছে- আপনারা সকলেই সাক্ষী থাকুন, আমি আমার যিন্দিগীর অনেক সময় অতিবাহিত করেছি, পূর্ববর্তী কুফরী যিন্দিগী বাদ দিয়েছি, আমার অতীতের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যা ছিলো সেটা আমি ত্যাগ করেছি, পবিত্র ইসলামী শরীয়ত নির্দেশবহির্ভূত আহলিয়া ছিলো তাদেরকেও পরিত্যাগ করেছি মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্য। আমার চাওয়া এবং পাওয়ার বিষয় এটাই ছিলো যে, মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তুষ্টি। তবে এ গোলামীর ব্যাপারে আমার একটা লিখিত দলীলের প্রয়োজন ছিলো, যে লিখিত দলীলের আমি প্রত্যাশা করেছিলাম। আজকে হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)এটা লিখিত দিয়েছেন। এখন থেকে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম আমি উনাদের গোলাম। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, বর্তমানে আমার ওছীয়ত হচ্ছে আপনাদের প্রতি, আমি ইন্তিকাল করলে এই কাগজখানা আমার কাফনের ভিতরে, আমার সিনার উপর রেখে দিবেন। আমি ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরজু করবো যে, ইয়া রসূলাল্লাহ ! আপনার যিনি লখতে জিগার হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)আমাকে লিখিত দিয়েছেন যে, ‘আমি গোলাম’। কাজেই, আমার আমল যা-ই রয়েছে কমপক্ষে এই দলীলের খাতিরে আমাকে গোলাম হিসেবে কবুল করুন। সুবহানাল্লাহ!
উনি যখন এটা ফায়সালা করলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমের মধ্যে সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন সকলেই হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামের প্রতি হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুর মুহব্বত ও তা’যীম মুবারক দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন ।
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে হলে প্রত্যেক উম্মতের জন্য দায়িত্ব হলো আহলে বাইত শরীফ এবং হযরত আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালামের প্রতি সুধারণা পোষণ করা, উনাদেরকে মুহব্বত করা ও সম্মান-ইজ্জত করা। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘হে আমার হাবীব ! আপনি উম্মতদেরকে বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাইনা, তবে আমার যারা ঘনিষ্ঠজন ( তথা আল-আওলাদ) তাদের প্রতি অটল ভালবাসা ব্যতিত।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত-২৩) সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য। আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা ,মুহব্বত করা ঈমান ও জুযই ঈমান বা ঈমানের অঙ্গ। উনাদেরকে মুহব্বত করা এবং উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম করা প্রত্যেক মুসলমান উনাদের জন্য ফরযে আইন।
হাসান ও হোসেন
কে আপনারা কি জানেন?
হুযুর (দঃ) হযরত হাসান ও হোসেনকে কুস্তি
লাগিয়ে দিল, হুযুর ইমাম
হাসানকে কুস্তি শিখিয়ে দিচ্ছেন তখন ফাতেমা বলল এয়া রাসুলাল্লাহ হাসান বড় হোসেন ছোট আপনি শুধু হাসানকে উৎসাহ দিচ্ছেন শিখিয়ে দিচ্ছেন হোসেনকে উৎসাহও দিচ্ছেন না শিখিয়েও দিচ্ছেন না, তখন হুযুর
ফরমালেন ফাতেমা চুপ কর যা আমি দেখছি তা যদি তুমি দেখতে তাহলে এভাবে বলতে না আমি হাসানকে শিখিয়ে দিচ্ছি আর হোসেন কে জিবরিলে আমিন শিখিয়ে দিচ্ছে। সুবহানাল্লাহ।
#হোসেন ইবনে
আলী ছোট একদিন মসজিদে হুযুর খুতবা দিচ্ছিলেন ইমাম হোসেন মসজিদে আসার সময় হুছট খেয়ে পড়ে গেল হুযুর তৎক্ষনাৎ খুতবা বন্ধ করে হোসেনকে উঠালেন।
#একদিন মসজিদে
যাওয়ার সময় হুযুর ফাতেমার ঘরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ঘর থেকৈ হোসেন এর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল হুযুর (দঃ) ফরমালেন ফাতেমা
হোসেনকে চুপ করাও (আলা তালামি আন্না বাকাআহু
ইউজিনি) তুমি কি জান না তাঁর কান্নার আওয়াজ আমাকে কষ্ট দেয়? হোসেন বিন
আলীকে হুযুর কান্না করতে দিতেন না। কারন হুযুর (দঃ) জানতেন এ
হোসেন জীবনে অনেক কষ্ট ভোগ করবে।
#হযরত আবদুল্লাহ
বিন সাদ্দাদ বয়ান করেন হুযুর একদিন সিজদায় ছিল সিজদা এমন লম্বা হয়ে গেল আমরা মনে করলাম হয়ত হুযুরের কাছে অহি নাজিল হচ্ছে কিংবা হুযুরের রুহ কবজ হয়ে গেছে, হযরত আবদুল্লাহ বিন সাদ্দাদ বলেন যখন আমি মাথা তুলে দেখলাম হোসেন বিন আলী হুযুরের পিঠের উপর বসে আছে আর হুযুর তাঁর জন্য সিজদাকে লম্বা করে দিলেন
সুবহানাল্লাহ সিজদা থেকে উঠলে আদরের নাতি পড়ে যাবে সে আশংকায় হুযুর (দঃ) সিজদা
লম্বা করে দিলেন। ।
#একদিন হুযুর
এর কাঁধের উপর হোসেন বিন আলী ছওয়ার হয়ে গেলেন, হযরত ওমর বললেন ওয়াহ ওয়াহ কেমন ছাওয়ারী, তখন হুযুর বললেন ওমর ছাওয়ারী দেখছ যে ছাওয়ার হয়েছে তাঁর দিকেও দেখ। অথ্যাৎ ছাওয়ারী যেমন উত্তম যে ছওয়ার হয়েছে সেও উত্তম। (আল্লাহু আকবার)
# হযরত ওসামা বিন জায়েদ বিন হারেসা বলেন একদিন রাতে কোন এক প্রয়োজনে আমি হুযুরের কাছে গেলাম হুযুরের গায়ে একটি চাদর ছিল আর আমি হুজুরকে আমার প্রয়োজনের কথা বললাম হুযুর আমার প্রয়োজন পুরন করলেন কিন্তু আমি হুযুরের চাদরের ভিতর কিছু নড়াচড়া আঁচ করলাম, আমি আর থাকতে পারলাম না প্রশ্ন করলাম এয়া রাসুলাল্লাহ আপনার চাদরের ভিতর কি? হুযুর চাদর
সড়ালেন আমি দেখলাম হুযুরের দুই পাশে দুই নাতি হাসান ও হুসেন হুযুরের
কোলে বসে আছে। এবং হুযুর ফরমালেন এরা আমার সন্তান আমার ফাতেমার সন্তান হে আল্লাহ আমি এদের ভালবাসি তুমিও তাদের ভালবাস। যারা আমার এই দুইজন নাতীকে মহব্বত করে তাদেরকেও হে আল্লাহ তুমি মহব্বত কর
যারা তাদের
সাথে মহব্বত রাখে তারা আমার সাথে মুহব্বত রাখে, যারা তাদের সাথে শত্রুতা রাখে তারা আমার সাথে শত্রুতা রাখে।
#হযরত হুযায়ফা
বিন এয়ামান (রাঃ) এরশাদ করেন
আমি হুযুরের খেদমতে মাগরীবের নামাজে যাচ্ছিলাম আমার মা আমাকে বলল হুযায়ফা আজ হুযুরকে বলবে আমার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করতে, আমি মাগরীব পড়লাম কিন্তু হুযুরের সাথে কথা বলা সুযোগ হল না, এশা পড়ার
পর অপেক্ষা করতে লাগলাম যখন হুযুর এশা পড়ে হুযরার দিকে চলে যাচ্ছিল আমি তাড়াতাড়ি হুযুরের পিছে পিছে যেতে লাগলাম আমার পায়ের আওয়াজ শুনে হুযুর পিছনে না ফিরে বললেন আমার পিছনে কি হুযায়ফা নাকি? হুযায়ফা বলে জি হুযুর আমি হুযায়ফা। তখন হুযুর হুযায়ফা বলার আগেই বলে ফরমালেন (গাফারাল্লাহু লাকা ওয়ালি উম্মিকা) আল্লাহ তোমাকে আর তোমার মাকে ক্ষমা করুক। হুযুর হুযায়ফা যে আশায় এসেছে সে কথা বলার আগেই হুযুর তাঁর মনের সে গোপন আরজু মোতাবেক দোয়া করে দিলেন। এরপর হুযুর হুযায়ফাকে বললেন হুযায়ফা এ মাত্র আমার
কাছে একজন ফেরেশতা এসেছে যে এর আগে কখনো আর আসেনি, সে ফেরেশতা আজ ২টি কাজ নিয়ে এসেছে ১টি হল আমার প্রতি সালাম দিবে আর ২য় সুসংবাদ দিয়েছে যে আমার কন্যা ফাতেমা জান্নাতি নারীদের সরদার আর আমার নাতী হাসান ও হোসেন জান্নাতের
যুবকদের সরদার।
#একদিন হোসেন
যখন ছোট হুযুর হুসেন এর ২ হাত ধরলে
হুসেন হুযুরের পায়ের উপর পা রাখল, হুসেন হুযুরের শরীরে পা দিয়ে উঠতে উঠতে পা হুযুরের পেট মোবারকে রাখল এবং হুযুর হুসেন এর মুখে নিজের জিহ্বা রাখলেন, রাবি বলেন হুযুর এরপর হোসেনকে শুকতে লাগল রাবি প্রশ্নকরেন হুযুর আপনি হোসেন এর খুশবু কেন নিচ্ছেন? তখন হুযুর ফরমারেন আমি হোসেন থেকে জান্নাতের খুশবু পাই।
হাদীস বিশারদগন
বলেন হুযুর হোসেন এর কারবালার পিপাসার্থ অবস্থায়ও যাতে পিপাসার যন্ত্রনায় সত্য থেকে ছিটকে না পড়ে সে যন্ত্রনা যাতে না হয় সে জন্য হুযুরের লোয়াবে দাহান দিয়ে হোসেনের পিপাসার যন্ত্রনা চিরতরে দুর করে দিয়েছেন।
#একদিন হুযুর
হোসেনকে আদর করা অবস্থায় ছিলেন জিবরাইল এসে বলল হুযুর আপনার এ সন্তানকে কারবালার
ময়দানে শহিদ করে দেয়া হবে, আর জিবরাইল
হুযুরকে সে কারবালার মাটি দিলেন, হুযুর সে মাটি হযরত উম্মে সালমাকে দিলেন, এবং বললেন যেদিন দেখবে এ মাটিগুলি রক্তে
পরিণত হয়েছে সেদিন বুঝে নিবে আমার হোসেন শহিদ হয়ে গেছে। উম্মে
সালমা বলেন একদিন আমি ঘুমে হুযুরকে স্বপ্ন দেখলাম (ওয়া বিয়াদিহি কারুরা) হুযুরের হাতে ১টি শিশি, যার ভিতর রক্তে ভর্তি ছিল, আমি জিজ্ঞাসা
করলাম হুযুর এগুলি কি? হুযুর বললেন্
আমি হোসেন এর কতলগাহ থেকে আসছি, আর এগুলি হোসেন ইবনে আলীর রক্ত। হযরত উম্মে সালমা বলেন আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল সেদিন ছিল ১০ মহররম আমার কাছে হুযুরের দেয়া সে মাটি ছিল সে শিশি দেখলাম তা রক্তে পরিণত হয়ে গেছে।
#ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন হাসান ও হুসাইন হলেন দুনিয়ায় আমার দু'টি পুষ্প। ( তিরমিজি শরীফ, ষষ্ঠ খণ্ড, হাদিস নং-৩৭৭০)।
#ইয়ালা ইবনে মুরয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : হুসাইন আমার আর আমি হুসাইনের। হুসাইন কে যে ভালবাসবে আল্লাহ্ তাঁকে ভালবাসবেন হুসাইন তো হল আমার সন্তান-সন্ততিদের একজন। (তিরমিজি শরীফ, ষষ্ঠ খণ্ড,হাদিস নং-৩৭৭৫)।
হাদীস-. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন ”যে ব্যাক্তি আঁমার আহলে বায়েতকে শত্রু মনে করবে বা তাদের প্রতি হিংসা করবে যে কেয়ামতের দিন ইয়াহুদী রূপে আসবে। ”
[এহইয়াউল মাইয়াত,আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়তী,পৃঃ-৭]
হাদীস- ”নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন আহলে বায়েতের পরিচিতি লাভ দোজখ মুক্তির উসিলা।আর আহলে বায়েত কে ভালোবাসা অর্থ পুলসিরাত পাড়ি দেওয়া।আর তাঁদের কে বিশ্বাস করা আল্লহর আযাব থেকে নিরাপত্তা সদৃশ।”
[মাাদারেজুন নবুওয়াত,৩য় খন্ড,পৃঃ ১১৫]
#আমাদের নবী এরশাদ করেন তোমরা আমার উপর লেজ কাটা দরূদ পড়িওনা। সাহাবারা বলনলন লেজকাটা কেমন?
নবীজি উত্তরে বলেন,
আমার আহলে বায়েত কে বাদ দিয়ে শুধু আমার উপর দরূদ পড়া। যেমন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ বলে চুপ থাকা। আমার ‘আহলেকে’
অবশ্যই সংপিক্ত করতে হবে।
“আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদ ওয়া আলে মুহাম্মদ” মাসনাদে আহমদ ৫ম খন্ড পৃ:
৩৫৩,
কানযুল উম্মাল ১ম খন্ড পৃ:-১২৪ ইত্যাদি।)
মজার কথা হল এই নবীর বংশধরকে নামাজের দরুদ শরীফের মাধ্যমে সালাম না দিলে আমাদের
নামাজও পূণাঙ্গ হয়না। সুবহানাল্লাহ।
নবী বংশ ইমাম মাহদী
আমাদেরকে নবীকে যেমন ভালবাসতে হবে তেমনি
নবীর পরিবার, আহলে বায়ত, নবীর বংশধরকে ভালবাসতে হবে, নবীর বংশধর এখনও দুনিয়ায় আছেন
কেয়ামত আগে নবী বংশ থেকেই ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমন হবেন। আর নিঃসন্দেহে যার ইমাম
মাহদীর পক্ষে থাকবে আহলে বায়তে রাসুলের পক্ষে থাকবে তারাই নাজাত পাবে।
কোন মন্তব্য নেই