মহানবীর (দঃ) কান্না। হৃদয়কারা ৮টি ঘটনা।





মহানবীর কান্নার ৮টি ঘটনা
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের অনেক কান্নার ঘটনা আছে যা বিভিন্ন হাদীস শরীফে আমরা দেখতে পাই, আজ সেসব ঘটনা থেকে হাদীস শরীফের আলোকে কিছু কান্নার ঘটনা উল্লেখ করব; এবং কান্না সংক্রান্ত অনেক অজানা বিষয় জানতে পারব।
প্রথম ঘটনাটি মুমুর্ষ রোগী দেখতে গিয়ে মহানবীর কান্না; ঘটনাটি বুখারী শরীফের ১২২৬ নং হাদীসে উল্লেখ আছে
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা’দ ইবনু উবাদাহ (রাঃ) রোগাক্রান্ত হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবদুর রহমান ইবনু আওফ সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস এবং আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে সাথে নিয়ে তাকে দেখতে আসলেন। তিনি তাঁর ঘরে প্রবেশ করে তাকে পরিজন-বেষ্টিত দেখতে পেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কি মৃত্যু হয়েছে! তাঁরা বললেন, না ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেঁদে ফেললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কান্না দেখে উপস্থিত লোকেরা কাঁদতে লাগলেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেনঃ শুনে রাখ! নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাক চোখের পানি ও অন্তরের শোক-ব্যথার কারণে আযাব দিবেন না। তিনি আযাব দিবেন এর কারণে (এ বলে) জিহ্বার দিকে ইশারা করলেন। অথবা এর কারণেই তিনি রহম করে থাকেন। আর নিশ্চয় মৃত ব্যাক্তির জন্য তার পরিজনের বিলাপের কারণে তাকে আযাব দেওয়া হয়।
উমর (রাঃ) এ (ধরণের কান্নার) কারণে লাঠি দ্বারা প্রহার করতেন কংকর নিক্ষেপ করতেন বা মাটি ছুড়ে মারতেন।

এবার আসুন মহানবী (দ) এর নামাজরত অবস্থায় কান্নার ঘটনা শুনি
২য় ঘটনা- আবু দাউদ ১১৯৬ আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদিন সূর্যে গ্রহণ লাগলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়তে খাড়া হলেন। তাতে তিনি সুদীর্ঘ ক্বিরাআত করে প্রত্যেক রাকআতে লম্বা লম্বা দু’টি ক’রে রুকূ করলেন। এই নামাযে তিনি কাঁদতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন,
رَبِّ أَلَمْ تَعِدْنِى أَنْ لاَ تُعَذِّبَهُمْ وَأَنَا فِيهِمْ أَلَمْ تَعِدْنِى أَنْ لاَ تُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
হে আমার প্রতিপালক! তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি যে, আমি ওদের মাঝে থাকা অবস্থায় তুমি ওদেরকে আযাব দেবে না? তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি যে, ওদের ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকা অবস্থায় তুমি ওদেরকে আযাব দেবে না?
৩য় ঘটনা- যা ইবনে হিব্বানের ৬২০ নং হাদীস এবং সহিহ তারগিবের ১৪৬৮ নং হাদীস
উবাইদ বিন উমাইর (রহঃ) বলেন, একদা আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে সবচেয়ে বড় আশ্চর্যময় ঘটনা কী দেখেছেন, তা আমাদেরকে বলুন। তিনি ক্ষণকাল নীরব থেকে বললেন, এক রাত্রে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, আয়েশা! আজ রাতে আমাকে আমার প্রতিপালকের ইবাদতের জন্য ছেড়ে দাও। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আপনার নৈকট্য চাই এবং তাই চাই, যা আপনাকে আনন্দ দান করে। সুতরাং তিনি উঠে ওযূ করলেন এবং নামায পড়তে শুরু করলেন। নামাযে তিনি কাঁদতে লাগলেন।
তিনি বসে ছিলেন, (চোখের পানিতে) তাঁর কোল ভিজে গেল। তারপরও কাঁদতে লাগলেন। (সিজদায় গেলে অশ্রুতে) মাটি ভিজে গেল! (ফজরের আগে) বিলাল নামাযের খবর দিতে এলেন। তিনি যখন তাঁকে কাঁদতে দেখলেন, তখন বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কাঁদছেন? অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন! তিনি বললেন, আমি কি (আল্লাহর) শোকরগুযার বান্দা হব না? আজ রাত্রে আমার উপর কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। ধ্বংস তার জন্য, যে তা পড়েছে, অথচ তা নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করে দেখেনি।
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
অর্থাৎ, নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকেদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (আলে ইমরানঃ ১৯০ এর পরবর্তী সকল আয়াত)।
৪থ ঘটনা- আবদুল্লাহ ইবন সিখখির (রা.) বলেন, ‘আমি মহানবী (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি নামাজরত ছিলেন। তাঁর বক্ষদেশ থেকে জ্বলন্ত চুলার পানি ভরা পাত্র থেকে যেরূপ আওয়াজ আসে সেরূপ আওয়াজ আসছিল।’ (শামায়েলে তিরমিজি : ৩০৭/১)

৫ম ঘটনা- কবরের পারে বসে কান্নার ঘটনা
সুনানে ইবনে মাজার ৪১৯৫ নং হাদীস
বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে এক জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি কবরের কিনারে বসে কাঁদলেন, এমনকি তাঁর চোখের পানিতে মাটি ভিজে গেলো। অতঃপর তিনি বলেনঃ ‘‘হে ভাইসব! তোমাদের অবস্থাও তার মতই হবে, সুতরাং তোমরা প্রস্ত্তুতি গ্রহণ করো’’।
৬ষ্ঠ ঘটনা- বুখারী শরীফের ১৩৪২ নং হাদীস
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (উম্মু কুলসুমের) দাফনের সময় উপস্থিত ছিলাম। আর যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরের পাশে বসেছিলেন। এমতাবস্থায় আমি দেখলাম, তাঁর দু’চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ এমন আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়নি? আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ আছি, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি। তিনি বললেন, (মাইয়্যিতকে ক্ববরে রাখার জন্য) তুমিই ক্ববরে নামো। তখন তিনি ক্ববরে নামলেন। (বুখারী
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু কুলসুম-এর ক্ববরে নামার জন্য এমন একজন লোক খুঁজলেন যে, রাতে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেনি। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল যে, যদি রাতে সহবাসকারী কোন ব্যক্তি ক্ববরে নামে তাহলে রাতে যা করেছে হয়ত তা মনে পড়ে যাবে। এর দ্বারা বুঝা যায় ভাল মনের মানুষদের দ্বারা লাশ ক্ববরে রাখা উত্তম।
৭ম ঘটনা হল মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নার ঘটনা হাদীস নং আবু দাউদ ৩১৬৫, তিরমিযী ৯৮৯, সহীহ ইবনে মাজাহ ১৪৫৬
আয়েশা (রাঃ) বলেন, উসমান বিন মাযঊন (রাঃ) মারা গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে গেলেন। তিনি তাঁর চেহারার কাপড় খুলে ঝুঁকে তাঁকে চুম্বন করলেন। অতঃপর তিনি এমন কাঁদলেন যাতে দেখলাম, তাঁর চোখের পানি তাঁর গাল বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) ‘উলামায়ে কিরামের মতামত উল্লেখ করে বলেন, মৃত ব্যক্তিকে যে কান্নার কারণে শাস্তি দেয়া হয় তা হল, বিলাপসহ উচ্চৈঃস্বরে কান্না। কেউ যদি শুধু চোখের পানি ছেড়ে বিনা আওয়াজে কাঁদে তাহলে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয় না। কারো মৃত্যুতে বিলাপ ছাড়া কান্না করা জায়েজ আছে।
৮ম ঘটনা- কুরআন তেলাওয়াত শুনে কান্নার ঘটনা
মহানবী (সা.) একবার আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.)-কে বলেন, হে আবদুল্লাহ! তুমি আমাকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাও। আবদুল্লাহ বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, আর আমি আপনাকে কোরআন পড়ে শোনাব! মহানবী (সা.) বলেন, আমার মন চায় অন্যের মুখে কোরআন তিলাওয়াত শুনি। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) যখন তিলাওয়াত করতে করতে সুরা নিসার আয়াত ‘ফা কাইফা ইজা জি-না মিন কুল্লি উম্মাতিম বি শাহিদিন ওয়া জি-না বিকা আলা হাওলায়ে শাহিদা’ পর্যন্ত পৌঁঁছেন, তখন তিনি (রাসুল) কাঁদতে থাকেন। (শামায়েলে তিরমিজি : ৩০৮/২)




মহানবী (সা.) বিভিন্ন সময় কান্না করেছেন। তিনি অনুচ্চ আওয়াজে কান্না করতেন। কখনো বিলাপ করে কান্না করতেন না। বেশির ভাগ সময় তিনি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনারত অবস্থায় কাঁদতেন। আমাদেরও কম হাসা বেশী বেশী কাঁদা উচিত।

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.