ডকুমেন্টরি-মৌমাছি আল্লাহর বিষ্ময়কর কুদরত। মৌমাছির জীবনচক্র ও মধুর উপকারিতা
ডকুমেন্টরি-মৌমাছি আল্লাহর বিষ্ময়কর কুদরত। মৌমাছির জীবনচক্র ও মধুর উপকারিতা
আজকে আমি আপনাদের যে ছোট পোকাটির ব্যপারে বলতে যাচ্ছি, যাকে বাংলায় মৌমাছি বা মৌমাছি, আরবীতে নাহাল এবং ইংলিশে হানি বি বলে।
এর দ্বারা যে রস অর্জিত হয় তাকে বাংলায় মধু, আরবিতে আছল আর ইংলিশে হানি বলা হয়।
আরবি পরিভাষায় মধুপোকা বা মৌমাছিকে ‘নাহল’ বলা হয়। পবিত্র কোরআনে এই নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা বিদ্যমান আছে।
মৌমাছিটি প্রাণী হিসেবে অতি ছোট কিন্তু তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গে আল্লাহর কুদরতের বড় বড় নিদশন মওজুদ আছে।
আর মধুতে এত বেশী উপকারিতা যা জানার পর মানুষ অবাক না হয়ে পারেনা। এটি শুধুই খাবার বস্তু নয় বরং এটি অসংখ্য রোগের জন্য শেফাও বটে।
সূরা নাহল এর আয়াত ৬৯-এ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-- “ইয়াখরুজু মিমবুতুনিহা শারাবুম মুখতা লিফুন আল্ওয়া নহু ফীহি শিফাউল লিন্নাসি।” "তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।"[১২]
এই মৌমাছি দলের কিছু প্রধান পোকা খুব ভোরে নিজ বাসা থেকে রিজিকের অন্বেষনে বের হয়ে যায়। যখনই সে পোকার কোন ১টি তাদের খোরাক জোগাড়ের স্থান খুঁজে পায় সাথে সাথে খুব দ্রুত তার বাসার কাছে এসে এক বিশেষ পদ্ধতিতে তার শরীরকে নাচাতে থাকে এবং রাউন্ড দিয়ে ঘুরতে থাকে। তার এই আচরনের ফলে অন্যসহ পোকা বুঝে নেয় যে তাদের খোরাকের স্থান কোন দিকে আছে। যদি প্রধান পোকা স্বল্প পরিসরে ঘুরতে থাকে তখন এর অর্থ হল তাদের খোরাক অতি নিকটেই আছে।
আর এই পোকা যখন কোন ফুলের উপর গিয়ে পৌঁছে তখন এদের মাথার উপর লাগানো ২টি এন্টিনা তাদের সাহায্য করে ফুলের কোন স্থানটাতে সে লেন্ড করবে সে ব্যপারে। যেরুপ বিমানের পাইলটকে এয়ারপোর্টের রানওয়ের সিগনাল বিমান কোথায় ল্যান্ড করবে সে ব্যপারে সহযোগিতা করে।
মৌমাছির চোখও আল্লাহর কুদরতী শক্তির এক চমৎকার বহিপ্রকাশ। ফুলের রস আহরনের জন্য আল্লাহ তায়ালা এই মৌমাছির চোখে স্পেশাল শক্তি দান করেছেন।মানুষের চোখে ২টি লেন্স থাকে কিন্তু মৌমাছির ১টি চোখে আল্লাহ তায়ালা ৬ হাজার লেন্স লাগিয়ে রেখেছেন, অথ্যাৎ ১টি মৌমাছির ২টি চোখে আল্লাহ তায়ালা ১২ হাজার লেন্স ফিট করে ছেড়ে দিয়েছেন। সেজন্য মৌমাছি ফুলের মধ্যে থাকা অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যা অনুবিক্ষন যন্ত্র দিয়ে দেখা যায় এমন সব কিছুই দেখতে সক্ষম হয়।কোন অতিক্ষুদ্র জীবানুকে বাদ দিয়ে তারা ফুলের সলিড রসটা আহরন করতে সক্ষম হয়।
ফুলের রস আহরনের জন্য আল্লাহ তায়ালা মৌমাছিকে টিউবের মত জিহ্বা দান করেছেন। যেভাবে আমরা স্ট্র দ্বারা কোন শরবত পান করি, তেমনি ভাবে মৌমাছি তাদের সে স্ট্র এর মত জিহ্বা দ্বারা ফুলের রস পান করে।
রস পান করার সময় এই মৌমাছি ফুলের যে হলুদ রং তা থেকে হলুদ নিজের পিছনের পায়ের সাথে থাকা টুকরিতে সংগ্রহ করে নিজের বাসায় নিয়ে আসে। মধু পোকা ফুলের রস ও সে হলুদ দ্বারা নিজ বাসায় মধু তৈরী করে।
মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের রেণু ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করে পাকস্থলীতে রাখে। তারপর সেখানে মৌমাছির মুখ নিঃসৃত লালা মিশ্রিত হয়ে রাসায়নিক জটিল বিক্রিয়ায় মধু তৈরি হয়।
মধুর আরো একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে, নিজেও নষ্ট হয় না এবং অন্যান্য বস্তুকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত নষ্ট হতে দেয় না। এ কারণেই হাজারো বছর ধরে চিকিৎসকরা একে অ্যালকোহল (Alcohol)- এর স্থলে ব্যবহার করে আসছেন।
মাওলানা রুম (রহ) তার মসনবি শরীফে একটি ঘটনা বয়ান করেন- তিনি বলেন একদিন নবী করিম (দ) সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে কোথায় তশরীফ নিয়ে যাচ্ছিলেন, রাস্তায় খাবারের সময় হয়ে গেল, তখন সাহাবায়ে কেরামের কাছে রুটি খাওয়ার মত কোন তরকারী ছিলনা, এমন সময় একটি মৌমাছি হুযুর (দ) এর বারেগাহে উপস্থিত হলেন।আর গুন গুন করে কি যেন বললেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন এয়া রাসুলাল্লাহ (দ) এই মৌমাছি আপনাকে কি বলছে? তখন হুযুর (দ) বললেন এই মৌমাছি আমাকে বলছে যে নিকটে একটি পাহাড়ের কিনারায় তাদের একটি বাসা আছে সেখানে মধু আছে আমি যেন তোমাদেরকে সেখানে পাঠাই আর তোমরা সে মধু নিয়ে আসলে আমরা যেন সে মধু দ্বারা রুটি খাই। অতঃপর হুযুর (দ) সাহাবায়ে কেরামকে পাঠালেন তারা সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসলেন, এর মধ্যে সে মৌমাছি পুনরাং হুযুরের কাছে এসে গুন গুন করে কি যেন বলছে, তখন সাহাবা প্রশ্ন করল েএয়া রাসুলাল্লাহ এ মৌমাছি আবার কি বলছে? হুযুর ফরমালেন আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম কোন কোন ফুলের রসতো তিতাও হয়, টকও হয়, কিন্তু সে রস থেকে তোমরা যে মধু বানাও তা খুবই মিষ্টি হয় এর কারন কি? তখন মৌমাছি জবাব দিল এয়া রাসুলাল্লাহ আমরা যখন ফুলের রস আহরন করি এবং আহরন করে ফিরে আসি এবং নিজের টুকরিতে তা জমা করি তখন আমরা মৌমাছিরা আপনার উপর দরুদ পাঠ করি আর এই দরুদের বরকতে আল্লাহ তায়ালা সব তিতা মিঠা খাট্টা রসকে মধুতে পরিবর্তন করে দেন।
মৌমাছি যে বাসায় থাকে তা অনেকগুলো চাকের সমষ্টি। এ চাকগুলো একের সঙ্গে অন্যটি সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। প্রতিটি চাকেই অসংখ্য প্রকোষ্ঠ রয়েছে। প্রকোষ্ঠ ষড়ভুজ আকৃতির। দেখে মনে হয় যেন কোন আর্কিটেক্ট এর ম্যাপ মোতাবেক এই প্রোকষ্ঠগুলি তৈরী। মৌমাছির শরীরের আকার ও আয়তন অনুযায়ী প্রকোষ্ঠ গুলি নির্মাণ করা হয়। রাণীর জন্য বেশ বড় প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করা হয়। শ্রমিকদের জন্য নির্মিত প্রকোষ্ঠগুলির আকার মাঝারী। সাধারণত মৌচাকের উপরের দিকে প্রকোষ্ঠগুলোতে মধু জমা থাকে। আর নিচের প্রকোষ্ঠ গুলোতে ডিম এবং বাচ্চা জন্মায়।
১। নিয়মিত ১ চামচ মধু পান করলে ভালো ঘুম হয়
২। নিয়মিত মধু পান করলে শরীরের চর্বি দুর হয়ে যায়
৩। এর দ্বারা কাশির জন্য খুবই উপকারী
৪। ডাইরিয়ার অভিযোগ দুর করে
৫। শরীরে জ্বলে যাওয়া স্থানে লাগালে সে স্থান দ্রুত শুকিয়ে যায় ইনফেকশনও হয়না
হজরত ইবনে ওমর (রা.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তার শরীরে ফোঁড়া বের হলেও তিনি তাতে মধুর প্রলেপ দিয়ে চিকিৎসা করতেন
৬। মধু পানে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পায়
৭। মৌমাছি যদি কাউকে হুল ফুটিয়ে দেয় তাতেও অনেক শারিরিক উপকারিতার কথা চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা বর্ননা করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বৃদ্ধদের জোড়ার ব্যথা দুর হয়।
চায়ের সঙ্গে মধু ও আদার রস মিশিয়ে খেলে সর্দি ও শ্লেষ্মা রেগের উপশম হয় (১ চামচ মধু + ১ চামচ আদার রস)।
২ চা চামচ মধু ১ গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে সকালে ও সন্ধ্যায় খেলে সর্দিকাশি দূর হয়।
দুর্বল শিশুকে এক ফোঁটা মধু দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুবার খাওয়ালে তার স্বাস্থ্য ভালো হয় ও শক্তি লাভ করে।
মধুর সঙ্গে গুড়ের রস মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিদিন হাতের তালুতে অল্প পরিমাণ মধু নিয়ে চেটে খেলে হৃদরোগ থাকে না।
আমাশয় ও পাতলা পায়খানা থাকলে গরম পানিতে আড়াই চা-চামচ মধু মিলিয়ে শরবত বানিয়ে বারবার ‘সেবন করতে হবে’।
কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এক গ্লাস গরম দুধ বা গরম পানিতে ২চা-চামচ মধু মিশিয়ে কয়েকবার খেতে হবে।
জার্মান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ই কচ বলেছেন, ‘উপযুক্ত ঘাস খেয়ে ঘোড়া যেমন তেজী হয় তেমনি নিয়মিত সকালে এক চা-চামচ করে খাঁটি মধু খেলে হৃদপি- শক্তিশালী হয়। এ ছাড়া মধু আয়ুও বৃদ্ধি করে।’
Jaalhaq Bangla Islamic Channel
Youtube link
https://www.youtube.com/c/jaalhaq
Blog
https://myjaalhaq.blogspot.com/
Facebook Link
https://www.facebook.com/Jaalhaqbd
Instagram Link
কোন মন্তব্য নেই