হিংসার ভয়ানক পরিণাম

রজব মাস ১৪৪২ হিজরী ১ম খুতবা

হিংসা পরশ্রীকাতরতার জেলাস এর পরিণাম


وَذَرُواْ ظَاهِرَ الإِثْمِ وَبَاطِنَهُ
তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন গোনাহ পরিত্যাগ কর। [ সুরা আন’য়াম ৬:১২০ ]

প্রকাশ্য গুনাহ যা আমরা দেখি যেমন চুরি করা, নামাজ ত্যাগ করা, মিথ্যা বলা, মা বাবার সাথে নাফরমানি করা, মদ খাওয়া, সুদ খাওয়া, মানুষের উপর জুলুম অত্যাচার করা, হত্যা ধর্ষন ইত্যাদি।
আর অপ্রকাশ্য বা বাতিনি গুনাহ গুলি এমন যা আমরা দেখতে পায়না এমনকি এসব গুনাহে আমরা প্রায় সকলেই লিপ্ত কিন্তু এসব যে গুনাহ আমরা তা জানিওনা। তেমনি একটি বাতেনি বা গোপন গুনাহ হল হাসদ বা হিংসা।

-হাসদ কি?
যদি কেহ কোন নেয়ামত প্রাপ্ত হয় তখন যদি আপনার খারাপ লাগে, মনে জ্বলে, কিংবা কেহ কোন নেয়ামত প্রাপ্ত হলে মনে মনে এই কামনা করা যে তার সে নেয়ামত তার সে সম্মান তার সে মর্যাদা তার সে ধন তার সে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাক এটাকে হিংসা বলা হয়।

-হাসদ এর প্রথম উদাহারণ আদমের প্রতি ইবলিশের
আজাজিল এবাদত করতে করতে তাউসুল মালায়িকা হয়ে গেলেন, এবং সে নিজেকে একটা কিছু ভাবতে লাগল, যখন আল্লাহ তায়ালা আদম (আ) কে সৃষ্টি করলেন ফেরেশতাদের হকুম দিলেন (উসজুদু লি আদম) সকল ফেরেশতা সিজদা করল কিন্তু এই ইবলিশ চিন্তা করল এই সম্মানতো আমার প্রাপ্য সে সম্মান আদম কেন পেল সে হিংসায় সে সিজদা থেকে বিরত থাকল। আর এই হিংসার কারনে তার মনে অহংকার সৃষ্টি হল আর শেষ পরিণতি হল তার হাজার বছরের এবাদত ধ্বংস হয়ে গেল এবং আল্লাহ তাকে মালউন লানতী বানিয়ে দিলেন।

- হাসদ এর ২য় উদাহারণ হাবিল কাবিল
পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম অপরাধ সংগঠিত হয় তাও হাসদ এর কারনে। নিয়ম অনুযায়ী যে মেয়েটি সুন্দর সেটি হাবিলের স্ত্রী হিসেবে নির্ধারিত হল, আর হাবিল সুন্দর স্ত্রী কেন পেল সেটা কাবিলের সহ্য হলনা ফলে হাবিলকে কাবিল হাসদের কারনে হত্যা করে ফেলল।

-ইহুদীদের ভয়ংকর হাসদ (শেষ নবীর ইসমাইল বংশে)
ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হিংসার ঘটনা ঘটিয়েছে ইহুদীরা, তারা মনে করত তাদের মধ্য থেকে শেষ নবী আসবে। হযরত ইবরাহিম (আ) এর ২ জন ছেলে ইসহাক ও ইসমাইল, ইসহাক (আ) এর বংশে আল্লাহ তায়ালা ১০ হাজার নবী প্রেরণ করেণ কিন্তু ইসমাইল (আ) এর বংশে কোন নবী আসেনি, এখন ইহুদীরা ভাবত শেষ নবী ইহসাক (আ) এর বংশে জন্ম নিবে, কিন্তু সে চিন্তাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে যখন আখেরী নবী হযরত ইসমাইল (আ) এর বংশে জন্ম নিল ইহুদী পন্ডিতেরা হিংসার বশবর্তী হয়ে সত্য ধর্ম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ থেকে বিরত থাকল। এত বেশী হাসদ ইহুদীদের মধ্যে আজো পযন্ত বিরাজ করছে পৃথিবীতে এমন হাসদ এর উদাহারণ আর খুজে পাওয়া দুস্কর।

-ইহুদীদের নবীর সাথে দুষমনি (পাথর, বিষ, যাদু, রাইনা)
এই হাসদের কারনে তারা হুজুরের সাথে সারা জীবন দুষমনি করেছে- যখন তিনি কোন প্রাচীরের ছায়ায় বসতেন তারা প্রাচীরের উপর থেকে পাথর নিক্ষেপ করে মারতে চেয়েছে, ইহুদী নারী দাওয়াত দিয়ে বকরীর গোস্তের সাথে বিষ মিশ্রণ করে মারতে চেষ্টা করেছে, যাদু টোনাও করেছে যাতে নবীজির চুল মোবারকে গিড়া লাগিয়ে লাগিয়ে যাদু করেছে আর এরই প্ররিপ্রেক্ষিতে সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাজিল হয়।

আর সে সুরা ফালাকেই আল্লাহ এসব হিংসুক এর অনিষ্ট থেকে বাঁচার দোয়াও শিখিয়েছেন
(ওয়ামিন সাররি হাসিদিন ইজা হাসাদ)
(আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।
ইহুদীরা নবীজিকে প্রশ্ন করার ছলে বলত (রাইনা) হে আমাদের রাখাল নাউজুবিল্লাহ- তখন আল্লাহ ঘোষনা দিলেন (লা তাকুলু রাইনা ওয়াকুলু উনজুরনা) তোমরা যখন প্রশ্ন করবে তখন বল উনজুরনা

-নবীকে জিবরাইলের ফুঁক
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্হ হয়ে পড়লে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এ দুআ পড়ে তাকে ফুঁকে দিলেনঃ
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
(অর্থাৎ) আল্লাহর নামে, তিনি আপনাকে (রোগ) মুক্ত করুন, সব রোগ হতে আপনাকে নিরাময় করুন, আর হিংসুকের অনিষ্ট হতে-যখন সে হিংসা করে আর সব বদ নযরওয়ালার অনিষ্ট হতে। (মুসলিম ৫৫১১)

-হাসদ আল্লাহর বন্টনের বিরুদ্ধে এতেরাজ
যারা হাসদ করে তারা মুলত আল্লাহর বন্টনের বিরুদ্ধেই এতেরাজ করে, আর যে আল্লাহর বিরুদ্ধে এতেরাজ করল সে মুলত কুফুরি করল।
أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَى مَا آتَاهُمُ اللّهُ مِن فَضْلِهِ
‘তারা কি মানুষের প্রতি এজন্যই হিংসা করে যে, আল্লাহ তাদের স্বীয় অনুগ্রহ দান করেছেন।’ [ সুরা নিসা ৪:৫৪ ]
-হাদীসের ভাষায় হিংসা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী (সা.) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ ‏”‏ ‏.‏ ‏.‏
অর্থাৎ, ‘তোমরা হিংসা করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা নেক আমলকে সেভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।’ (সূনান আবু দাউদ, ইফাঃ ৪৮২৩)

-হিংসা, শিরিক, নবীর শানে বেয়াদবীর কারনে আমল বরবাদ
হিংসা যেমন নেক আমলকে বরবাদ করে দেয় তেমনি (লাইন আশরাকতা লা এয়াহবাতান্না আ’মালুক) যদি শিরিক কর তাহলে কৃত সকল আমলকে বরবাদ করে দেয়া হবে।

নবীর শানে বেয়াদবীও এমন গুনাহ যা সকল আমল বরবাদ করে দেয় (লা তারফাউ আসওয়াতুকুম ফাউকা সাউতিন নাবিয়্যি) (আন তাহবাতা আমালাকুম ওয়া আনতুম লা তাশউরুন) নবীর আওয়াজের উপর তোমার আওয়াজ করিও না, যদি কর তাহলে তোমাদের সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে যা তোমরা বুঝতেও পারবেনা।
عَنْ أَبِي، هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ تَحَاسَدُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَجَسَّسُوا وَلاَ تَحَسَّسُوا وَلاَ تَنَاجَشُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا ‏"‏ ‏
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরে হিংসা করবে না, একে অপরের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবে না, ছিদ্রান্বেষণ করবে না, গুপ্ত দোষ অনুসন্ধান করো না এবং পরস্পরে ধোঁকাবাজী করবে না। আর তোমরা আল্লাহর বান্দা রূপে ভাই ভাই হয়ে থাক।

-ঈর্ষা জায়েজ - ঈর্ষা ও হিংসার পার্থ্যক্য
কারো কাছে নেয়ামত দেখলে তার নেয়ামত নষ্ট হওয়ার কামনা করাকে বলে হিংসা আর কারো কাছে কোন নেয়ামত দেখে সে নেয়ামত লাভের জন্য কামনা করাকে ঈর্ষা বা গিবতাহ বলে, এটি জায়েজ। তবে হিংসা জায়েজ নাই।

-হিংসার দুনিয়াবী পরিণতি
হিংসুক ব্যক্তি অন্যকে ক্ষতি করার আগে সে নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কেননা (১) শুরুতেই সে হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। হিংসা দূর না হওয়া পর্যন্ত এটাই তার জন্য স্থায়ী দুনিয়াবী শাস্তি। (২) তার চেহারা সর্বদা মলিন থাকে। তার সাথে তার পরিবারে হাসি ও আনন্দ থাকে না। (৩) অন্যের ক্ষতি করার চক্রান্তে ও ষড়যন্ত্রে সে সর্বদা ব্যস্ত থাকে। প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে সে সর্বদা ভীত ও সন্ত্রস্ত থাকে। নিশুতি রাতে বাঁশঝাড়ে কঞ্চির শব্দে কল্পিত জিনের ভয়ে হার্টফেল করার মত হিংসুক ব্যক্তিও সর্বদা কল্পিত শত্রুর ভয়ে আড়ষ্ট থাকে। (৪) তারই মত লোকেরা তার বন্ধু হয়। ফলে সৎ সঙ্গ থেকে সে বঞ্চিত হয়। (৫) ঘুণ পোকা যেমন কাঁচা বাঁশকে ভিতর থেকে কুরে কুরে খায়, হিংসুক ব্যক্তির অন্তর তেমনি হিংসার আগুন কুরে কুরে খায়। এক সময় সে ধ্বংস হয়ে যায়, যেমন ঘুণে ধরা বাঁশ হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে শেষ হয়ে যায়।
* হাসাদ শারীরিক রোগের জন্ম দেয়।
* মানুষের কাছে হিংসুকের সামাজিক মর্যাদা কমে যায়।
* মানুষ তাকে ঘৃণা করে।
* সে আল্লাহর নাখোশি অর্জন করে।
* আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট করে।
* হাসাদ থেকে গিবত ও চোগলখোরি নাম দুইটি বদখাসিলত সৃষ্টি হয়।
* হাসাদের কারণেই জুলুম, শত্রুতা, চুরি, হত্যাকান্ড ইত্যাদি ঘটনা ঘটার পথ তৈরি হয়।
যে যত বড় নেয়ামপ্রাপ্ত তার হিংসুকও তত বেশী, আপনি যত বেশী আল্লাহর নেয়ামত হাছিল করবেন আপনার হিংসুকও তত বেশী হবে

-যে যত নেয়ামত প্রাপ্ত তার হিংসুকও বেশী ইমাম আবু হানিফাকে প্রশ্ন (পায়খানার স্বাদ কেমন?)
ইমাম আজম আবু হানিফা (র) যত বেশী হিংসুকের মুখুমুখি হয়েছেন ততবেশী আর কোন আলেম হননি, ইমাম শাফেয়ী (রহ) বলেন ইমাম আবু হানিফা এত বড় ফকিহ ছিলেন যে তিনি যে কোন প্রশ্নের জবাব অনায়াসেই দিয়ে দিতে পারতেন।এক হিংসুক তাকে প্রশ্ন করল হুজুর আপনি নাকি সব প্রম্নের জবাব দেন? আমাকে একটি প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন? ইমাম সাহেব বললেন হ্যাঁ বলুন সে প্রশ্ন করল হুজুর বলতে পারেন পায়খানার স্বাদ কেমন? ইমাম আবু হানিফা ১ সেকেন্ডও চিন্তা না করে বললেন পায়খানার স্বাদ মিস্টি, সে লোক এবার বলল দলিল দেন, তখন ইমাম আবু হানিফা বললেন আপনি জানেন সকলে জানে মাছি কোন লবনাক্ত জিনিষে বসে না, মিষ্টি জিনিষে বসে, যেহেতু পায়খানা মিঠা তাই মাছি পায়খানাতে বসে। যদি লবনাক্ত হত তাহলে বসতনা।

-আবু হানিফাকে নারীর সাথে মিথ্যা অপবাদ
দুনিয়ার মধ্যে হিংসার কারনে এত বড় বড় মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে আমার মতে ইমাম আবু হানিফার সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা অন্যতম শ্রেষ্ঠ-
উনাকে যারা হিংসা করত তারা েএক বিধবা নারীকে টাকার লোভ দেখিয়ে বলল আবু হানিফা যখন এশা পড়ে ঘরে যাবে তুমি তাকে বলবে তোমার ঘরে কে একজন মৃত্যু বরণ করছে সে অসিয়ত করতে চাচ্ছে সে যেন তোমার সাথে আসে, সে মহিলা রাজি হল টাকার লোভে, ইমাম সাহেব সরল মনে ঘরে গেলেন কিন্তু সেখানে হিংসুকরা আগে থেকেই ঘাপটি মেরে বসে ছিল, যখন ইমাম সাহেব ঘরে ঢুকল তারা বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ নিয়ে আসল আর তাদেরকে এক ঘর থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল, জেল খানায় তাদের বন্ধী করে রাখল ইমাম আবু হানিফা যেহেতু এশারের অজু দিয়ে ফযর পরেন তাই তিনি নামাজ পড়তে লাগলেন, এই মহিলা যখন দেখল ইনি যেন তেন লোক নয় তাই সে মহিলা তার ভুল বুঝতে পারল আর ইমামকে সব ঘটনা বলে দিল, ইমাম সাহেবের কাছে ক্ষমা চাইল, ইমাম সাহেব তাকে বলল ঠিক আছে তোমাকে এখন আমি কিছু কথা বলব তা শুন আর সে মোতাবেক কাজ কর, বলল তুমি পুলিশকে কেঁদে কেঁদে বল তোমার ঘরে একটা জরুরী কাজ আছে সে যেন তোমাকে ঘরে নিয়ে যায় আর তুমি সে কাজ সেরে পুলিশের সাথে আবার চলে আসবে,িআর তুমি সোজা আমার ঘরে যাবে আর আমার স্ত্রীকে সব কথা খুলে বলবে এবং তোমার বোরখাটি আমার স্ত্রীকে দিবে সে বোরখা পরে পুলিশের সাথে চলে আসবে, যা বলা তােই করা হল, মহিলা গিয়ে বোরখা দিয়ে ইমাম সাহেবের বউকে পাঠালো, ইমাম ও মহিলাকে সকালে দরবারে ডাকা হল, সেখানে ইমামের শাশুড়ও ছিল হিংসুকেরাও ছিল, তারা খুব খুশি, আজ আবু হানিফার সকল গৌরব ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু হাকিম যখন প্রশ্ন করল আপনি পর নারীর সাথে কি করছিলেন? েইমাম বললেন কে পরনারী বোরখার মধ্যে এই নারী হল আমার স্ত্রী আমার শাশুড়কে বলুন সে যেন বোরখার নেকাব সড়িয়ে দেখে সেটা তার মেয়ে কিনা/ শাশুড় চেক করে দেখে যে বোরখার ভিতর তার মেয়ে এবং তিনি বলেন হ্যাঁ এটা আমার মেয়ে েএবং একে আমি ইমাম সাহেবের সাথে সাক্ষির সামনে বিয়ে দিয়েছি, যখন এমন অবস্থা দেখল তখন হিংসুকেরা অবাক হয়ে গেল।
ইমাম আবু হানিফা এমনই জ্ঞানি ছিলেন সুবহানাল্লাহ।

-হাসদের কারনে অপরের নেয়ামত বন্ধ করার দোয়া
ঘটনা- এক লোক খুব এবাদত করে আল্লাহকে রাজি করে সে দোয়া করে হে আল্লাহ আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রতিদিন তৈরী খাবারের ব্যবস্থা করে দাও তাহলে আমি তোমার এবাদত করতে পারব, তাই হতে লাগল, এক প্রতিবেশী হিংসুক সে যখন তার অবস্থা ভালো দেখল তাকে নানান ভাবে ফুসলিয়ে এই গায়েবী খাবারের রহস্য কি জানতে চাইলো সে বলল আমি এবাদত করে আল্লাহকে রাজি করেছি আর তিনি আমার দোয়া কবুল করেছেন, এখন এই লোকও খুব এবাদত করতে লাগল যখন তারও দোয়া কবুল হওয়ার ওয়াক্ত এলো সে দোয়া করল হে আল্লাহ আমার প্রতিবেশীর কাছে যে রেডিমেইড খাবার প্রতিদিন আসে তা বন্ধ করে দাও। এটাই হল হাসদ।

-অলির বিরুদ্ধে হাসদ ও অজুর মাসায়ালা
(হযরত শাহ রুকনে আলম, বাদশা গিয়াস উদ্দীন বলবন)
আল আখবারুল আখয়ার নামক কিতাবে হযরত আবদুল হক দেহলবী (রহ) এক ঘটনা লিখেন- বাদশা গিয়াস উদ্দীন বলবনের এক পীর ছিল নাম হযরত শাহ রুকনে আলম (রহ) সে পীরের এলাকার একজন বয়স্ক আলেম ছিলেন, তিনি একদিন বাদশার দরবারে গেলেন বাদশা আলেম এর খুব কদর করলেন কারন সে আলেম তার পীর সাহেবের এলাকার, বাদশা সে আলেমকে প্রশ্ন করলেন তার পীরের কোন কারামত সে জানে কিনা, তখন সে আলেম বললেন আপনার পীরের অনেক কারামত তবে একটি কারামত আমার সাথে ঘটেছে, তা হল আমার মসজিদ ও আপনার পীরের মসজিদ পাশাপাশি জুমার দিন আমার মসজিদে লোক কম হত আপনার পীরের মসজিদে লোক বেশী হত, আমি হিংসায় পরে তাকে আটকানোর জন্য একটি কঠিন মাসায়ালা রেডি করলাম যা তাকে করব, মাসায়ালাটি হল ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তহাব এভাবে বড় থেকে ছোট কিন্তু অজুতে দেখা যায় আগে সুন্নত হাত, কুলি, নাকে পানি তারপর ফরয মুখ ধোয়া হয় এমন কেন? এ প্রশ্ন নিয়ে আমি তার কাছে যাব কিন্তু রাতে আমি স্বপ্ন দেখলাম আপনার পীর আমার ঘরে হালুয়া নিয়ে আসলেন আর আমাকে হালুয়া খেতে দিলেন আর বললেন আপনি অনেককষ্ট করে প্রশ্ন রেডি করেছেন এখন একটু হালুয়া খান, আমি হালুয়া খেয়ে শেষ করলে ঘুম ভাঙ্গল দেখি মুখ তখনও মিষ্টি লেগে আছে, ফজরের নামাজ পড়ে আমি আপনার পীরের মসজিদে গেলোম তখন তিনি মাসায়ালা বয়ান করছেন আমাকে দেখে পীর সাহেব বললেন হুজুর আসুন বসুন আজ আমি অজুতে আগে সুন্নত পরে ফরয কেন তরতীব হল সে মাসায়ালা বয়ান করছি।

-হাসাদে নিপতিত হওয়ার কারণ:
হাসাদ বা হিংসায় নিপতিত হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ইমাম গাজালি (রহ.) হিংসায় নিপতিত হওয়ার সাতটি কারণ বর্ণনা করেছেন। যেমন—
১। শত্রুতা : শত্রুতা হিংসা সৃষ্টি করে। কোনো মানুষ কখনও তার শত্রুর ভালো দেখতে পারে না।
২। নিজেকে অধিক সম্মানিত মনে করা :
৩। অহঙ্কার : অহঙ্কার মানুষকে হিংসুক বানায়। কারণ অহঙ্কারী সর্বদা নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে থাকে।
৪। তাআজ্জুব বা উজবধারী হওয়া : উজব হলো নিজের সিদ্ধান্তকে ভালো ও একমাত্র সঠিক মনে করা। এ অভ্যাস মানুষকে হিংসুক বানায়।
৫। উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হওয়া : কেউ যদি অন্যের কারণে নিজের উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয়, তখন সে ওই ব্যক্তির প্রতি হিংসা করতে শুরু করে।
৬। নেতৃত্বের লোভ : নেতৃত্বের লোভ মানুষকে হিংসুক বানায়।
৭। মনের কুটিলতা : অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই শুধু নফসের অপবিত্রতার কারণেও মানুষ অন্যের প্রতি হিংসা করে থাকে।

-নেককার হিংসা করেনা
প্রবাদ বাক্য হয়ে রয়েছে, هل مَاتَ الْبُخَارِيُّ غَيْرَ مَحْسُوْدٍ ؟ ‘ইমাম বুখারী কি হিংসুকের হামলা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করতে পেরেছেন’? অন্য একজন পন্ডিত বলেন,
الناسُ حاسدٌ ومحسودٌ، ولكلِّ نعمةٍ حَسودٌ
‘মানুষ হিংসুক ও হিংসাকৃত। আর প্রত্যেক নে‘মতের জন্যই হিংসুক রয়েছে’। এর পরেও প্রকৃত মুমিনগণ পাল্টা হিংসা করেন না। বিদ্বেষ করেন না। বরং প্রতিপক্ষের হেদায়াত কামনা করেন।

-হিংসাহিন সাহাবীকে জান্নাতের সার্টিফিকেট
ঘটনা- একদিন হুজুর (দ) বলেন কেহ জান্নাতি দেখতে চাইলে দরজার দিকে দেখ, এভাবে পরপর তিনদিন বলা হল তখন সে সাহাবী কি আমল করে তা জানার জন্য হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর তার সাথে থাকলেন কিন্তু তিনি কোন অতিরিক্ত আমল করেনা স্বভাবিক আমল করেন, যখন তাকে প্রশ্ন করা হল তিনি বলেন আমার অন্তরে কারো প্রতি কোন হাসদ নাই। মুলত এই কারনেই হুজুর (দ)তাকে জান্নাতি বলে ঘোষানা করেছেন।

-হিংসুকের আখেরাতের পরিণতি :
মৃত্যুর পর কবরে তাকে গ্রাস করে ভয়াবহ আযাব। অতঃপর কিয়ামতের দিন সে উঠবে ভীত-নমিত ও মলিন চেহারায় অধোমুখি হয়ে। আল্লাহ বলেন,
وَوُجُوْهٌ يَوْمَئِذٍ عَلَيْهَا غَبَرَةٌ- تَرْهَقُهَا قَتَرَةٌ- أُوْلَئِكَ هُمُ الْكَفَرَةُ الْفَجَرَةُ
‘অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে ধূলি-ধূসরিত’। ‘কালিমালিপ্ত’। তারা হ’ল অবিশ্বাসী পাপিষ্ঠ’ (‘আবাসা ৮০/৪০-৪২)। তাদেরকে দেখে যেমন দুনিয়াতে চেনা যেত। আখেরাতেও তেমনি চেনা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেন,
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِيْ وَالْأَقْدَامِ
‘অপরাধীদের চেনা যাবে তাদের চেহারা দেখে। অতঃপর তাদেরকে পাকড়াও করা হবে কপালের চুল ও পা ধরে’ (রহমান ৫৫/৪১)।

-হাসাদ পরিত্যাগে সহায়ক গুণাবলি:
হাসাদ বা হিংসা করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। তাই তা তরক করা জরুরি। কিছু অভ্যাস আছে যা চর্চা করলে হাসাদ পরিত্যাগ করা সহজ হয়। যেমন—
* মানুষের মুআমেলা থেকে অন্তরকে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহর প্রতি মনকে ঝুঁকিয়ে রাখা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা।
* দুনিয়ার বিষয় নয়, বরং আখেরাতের বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা।
* মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করার ব্যাপারে ছোটকাল থেকে অভ্যাস গড়ে তোলা।
* অন্যের কল্যাণ দেখলে মাশাআল্লাহ বলার বা বরকতের দোয়া করার অভ্যাস গড়ে তোলা।
* অন্যের জন্য দোয়া করা। বিশেষ করে কারও মাঝে কোনো নেয়ামত দেখলে তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা।
* আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা।
* হিংসার পরিণতি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা। এমন ভাবা যে, হিংসা নেক আমলকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।
* মানুষের ঘৃণার ভয় করা। কারণ হিংসুককে সবাই ঘৃণা করে।
* হিংসার বিপরীত কাজ করা। যেমন— হিংসা অনেক সমালোচনা করতে উৎসাহিত করে। তা না করে অন্যের প্রশংসা করা।
* শাহওয়াতকে দমন করে তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করা।

আল্লাহ আমাদেরকে হাসদ করা থেকে এবং হাসদকারীর হি’ংসা থেকে হেফাজত করুন আমিন।

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.