ঘর ঝাড়ু দিতে দিতে এ আমল করলে কি কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়? ঝাড়ুতে কি এত কারামত আছে?
ঘর ঝাড়ু দিতে দিতে
এ আমল করলে কি কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়? ঝাড়ুতে কি এত কারামত আছে?
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সকল প্রসংশা আল্লাহর জন্য, তিনিই নেক লোকদের
বন্ধু। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদে বরহক নাই। তিনি এক তার কোন শরিক
নাই। তিনিই সব মাখলুকাতের মাবুদে বরহক। আর আমি এটাও সাক্ষী দিচ্ছি আমাদের নবী (দ) আল্লাহর
বান্দা ও তার রাসুল।
তিনি তামাম আম্বিয়া কেরাম ও রাসুলদের সরদার।
হে আল্লাহ নবীর উপর তার আহলে বায়ত ও তামাম সাহাবায়ে কেরামের উপর রহমত সালামতি ও বরকত
নাজিল ফরমাও।
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আজ আমি একটি গুরুত্বপূণ
বিষয় নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি, যা ঘরের প্রতিটি কোনায় কোনায় স্পর্শ করে, এটার জন্য ঘর
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে। আর তা হল ঝাড়ু। জি হ্যাঁ আজ আমি আপনাদেরকে ঝাঁড়ুর ব্যপারে
কিছু গুরুত্বপূণ কথা বলতে যাচ্ছি। যা জানা প্রত্যেক মানুষের জন্য জরুরী।
মনে রাখবেন কুরআনের ফয়সালা- মানুষের সাথে যা কিছু হয়, তা
তার নিজের কাজেরই ফল। সে কারনে অনেক সময় ভুল ছোট আকারের হয় কিন্তু এর ক্ষতি অনেক বড়
আকার ধারন করে। সে জন্য এই কথাগুলিকে ইগনুর করবেন না। আর ঝাড়ুর ব্যপারে সম্পর্কিত এই
গুরুত্বপূণ কথাগুলি জানার জন্য আলোচনাটি শেষ পযন্ত অবশ্যই দেখবেন।
বন্ধুরা আপনাদেরকে সবার আগে মসজিদে নববীতে ঝাড়ু দান কারী
এক মহিলার ঘটনা বলছি শুনুন
বুখারী শরীফের ৪৫৮, মুসলিম শরীফের ৯৫৬ নং হাদীস
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন কালো মহিলা
অথবা একটি যুবক (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মসজিদে নাবাবী ঝাড়ু দিত। একদিন রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে পেলেন না। তিনি সে মহিলা অথবা যুবকটির খোঁজ
নিলেন। লোকেরা বলল, সে ইন্তিকাল করেছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে জানালে না কেন? (তাহলে
আমিও জানাযায় শরীক থাকতাম।) বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা এ মহিলা বা যুবকের বিষয়টিকে ছোট
বা তুচ্ছ ভেবেছিল। (তাই রাসুলুল্লাহ (দ) কে জানানোর প্রয়োজন মনে করেন নি)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে কোথায়
কবর দেয়া হয়েছে আমাকে দেখাও। তারা তাঁকে তার কবর দেখিয়ে দিল। তখন তিনি তার (কাছে গেলেন
ও) কবরে জানাযার নামাজ আদায় করালেন, তারপর বললেন, এ কবরগুলো এর অধিবাসীদের জন্য ঘন
অন্ধকারে ভরা ছিল। আর আমার নামাজ আদায়ের ফলে আল্লাহ তাআলা এগুলোকে আলোকিত করে দিয়েছেন।
দেখুন একজন সাধারণ পাবলিক এর জানাযা পড়তে না পারায় হুজুর
(দ) তার কবরে গিয়ে জানাযা আদায় করেছেন আর হুজুর (দ) এর জানাযার ফলে সে ঝাড়ুদাতা ও তার
ও আশে পাশের কবরগুলি আলোকিত হয়ে গেছেন, যদিও সে কাজ করত মসজিদ ঝাড়ু দেয়ার, কিন্তু প্রিয়
নবীর কাছে তার এই আমলটি আদৌ নগন্য ছিলনা।
আমাদের প্রিয় নবীর কলিজার টুকরা কন্যা হযরত ফাতেমা (রা)
ও ঘর ঝাড়ু দিতেন, ঝাড়ু দেয়ার কারনে তার কাপড় চোপর ময়লা হয়ে যেত
এ ব্যপারে আবু দাউদ এর ২৯৭৮ নং হাদীস এর মফহুম হল
ইবন আ'বূদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আলী (রাঃ)
আমাকে বলেন যে, আমি কি তোমাকে আমার ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
প্রিয়পাত্রী ফাতিমা (রা) সম্পর্কে কিছু বলব না? তখন আমি বলিঃ হ্যাঁ অবশ্যই। তিনি বলেনঃ
তার (ফাতিমার) হাতে যাতা পেষার কারনে ফোসকা পড়ে গেছে। আর কূপ থেকে মশকে পানি ঊঠাবার
কারণে তাঁর বুকে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে এবং ঘর ঝাড়ু দেওয়ার কারণে তাঁর সমস্ত
কাপড়-চোপড় নোংরা হয়ে গিয়েছে। কেননা ঘরের সব কাজ একাই করে থাকেন। আর তাঁর কোন দাস-দাসী
ছিল না।
হযরত ফাতেমা (রা) যখন নবীজির কাছে একজন দাস দাসীর জন্য আবেদন
করলেন তখন নবী করিম (দ) দাস দাসী না দিয়ে ১টি আমল শিখিয়ে দিলেন
তিনি বলেনঃ হে ফাতিমা! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং স্বীয় রব্বের
ফরয হুকুম আদায় কর এবং নিজের ঘরের কাজ নিজেই কর। আর (দিন শেষে) যখন বিছানায় যাবে, তখন
৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আক্বার পড়বে। যার
সর্বমোট সংখ্যা হলো ১০০ বার। বস্তুত তোমার জন্য এই তাসবীহ খাদিমের চাইতেও উত্তম।
বুঝা গেল- যে সব নারী ঘরে কাজ করার পাশা পাশি ফরয আমল গুলি
করে এবং রাতে বিছানায় গিয়ে ১০০ বার তসবিহ গুলি পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ক্লান্তি
থেকে মুক্তি দান করবেন।
মহিলারা যদি ঘরের কাজ করার সময় বিভিন্ন তসবিহ, তাহলিল, দোয়া
দরুদ পাঠ করে সে তার জিকিরের সাওয়াব অবশ্যই পাবে। তবে অনেকে বলেন ঝাড়ু দেয়ার সময় জিকির
করলে কাবা ঘর ঝাড়ু দেয়ার সমান সাওয়াব পাবে, এ ধরনের কোন কথা হাদীসে পাকে নাই,তবুও কেহ
যদি জিকির করে সে সাওয়াব থেকে সে মাহরুম হবেনা।
তেমনি ভাবে সন্ধ্যা বেলা ঝাড়ু দিলে ঘরে দারিদ্রতা আসে এ
ধরনের কথা আমাদের প্রতিটি ঘরের মহিলাদের মনে আকিদা প্রতিষ্ঠিত আছে। মনে রাখবেন অভাব
অনটন, সচ্ছলতা এ সব কিছুর সম্পর্ক আল্লাহর বন্টনের সাথে। ঝাড়ুতে এমন কোন কারামত নাই
যে তা সন্ধ্যায় দিলে বা রাতে দিলে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। অথচ আপনারা শুনেছেন হাদীসের
বাণী পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক, এখন ঝাড়ু দেয়ার মধ্যেও পবিত্রতা রয়েছে, আর যে কাজটি
ঈমানের অর্ধেক তা কিভাবে দারিদ্রতার কারন হতে পারে? সুতরাং সঠিক মাসায়ালা হল ঝাড়ু দ্বারা
দারিদ্রতার কোন সম্পর্ক নাই। চাই আপনি রাতে দিন বা দিনে দিন।
উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে দুবাইতে দেখবেন রাতেই সব কিছু যেমন
দোকানা, মল রাস্তা ঘাট সব ঝাড়ু দেয়া হয়, সকালে উঠে সকলে তা পাক সাফ দেখতে পায়। যদি
রাতে ঝাড়ু দেয়াতে গরীব হয়ে যেত তাহলে তারা আমাদের চেয়ে গরীব হত।
তবে যেহেতু আমাদের অনেক মা বোনদের ঈমান খুব দুবল, তারা মনে
প্রাণে বিশ্বাস করে রাতে ঝাড়ু দিলে ঘড়ে ঝগড়া হবে, অভাব আসবে, তাদের ব্যপারে কোন কোন
বুযুগ তাদের কিতাবে লিখেন এ ধরনের দুবল ঈমানদার মহিলারা রাতে ঝাড়ু না দেয়াই উত্তম,
কেননা যদি সে কুরআন হাদীসের উপর আমল করতে গিয়ে নিজের আকিদার বিরুদ্ধে গিয়ে রাতে ঝাড়ু
দেয় আর তাতে যদি সত্যি সত্যি ঘরে ঝগড়া বা দারিদ্রতা নেমে আসে তখন তার আকিদা আরা খারাপ
হয়ে যাবে।
অতএব ইসলামী বিধান হল আপনি যে কোন সময় ঝাড়ু দিতে পারবেন,
তাতে শরীয়তের পক্ষ থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা নাই।
ঝাড়ু নিয়ে এ ধরনের আরো অনেক কুসংস্কার আছে যেমন-
যারা বিশ্বাস করে ঘরের লোকেরা বাহিরে কাজে যাওয়ার আগে ঝাড়ু
দিতে হবে, কাজে চলে যাওয়ার পর ঝাড়ু দেয়া যাবেনা এটা ভুল বিশ্বাস
ঝাড়ু খাড়া ভাবে রাখা যাবেনা,ঝাড়ু দিয়ে ঘরের দেওয়ালের ময়লা
সাফ করা যাবেনা শুধু ফ্লোর সাফ করা যাবে, ইত্যাদি কুসংস্কার প্রচলিত আছে।
একটি উদু ভিডিওতে দেখলাম ঘর ঝাড়ু দেয়ার সময় যদি আল্লাহর
৩টি নাম যেমন (এয়া আল্লাহু এয়া রাহমানু এয়া ছুব্বুহু) পড়ে তাহলে সে ঘরে এত বেশী ধন
দৌলত আসবে যে পুরা এলাকার মানুষ গুনে শেষ করতে পারবেনা, অথচ আমি আগেই বলেছি টাকা পয়সা
আসা না আসার ফয়সালা সম্পূণ আল্লাহর, ঝাড়ুতে কোন কারামত নাই যে ঝাড়ুর সময় এই নামগুলি
জপলে আপনি বেতাহাশা ধনী হয়ে যাবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহর নামের জিকিরে ফজিলত আছে তবে
সে জিকির ঝাড়ু দেয়ার সময় করতে হবে এমন কোন কথা নাই।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন।
আমিন।
কোন মন্তব্য নেই