সুরা ইখলাসের ফজিলত। Sura Ikhlas ১১, ১২, ৪১ বার পড়ার মুজেযা।

 

সুরা ইখলাসের ফজিলত। Sura Ikhlas ১১, ১২, ৪১ বার পড়ার মুজেযা।

 


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা, আজ আমি আপনাদেরকে সুরা এখলাসের ফজিলত, সুরা এখলাস পড়লে কি নেকি হয়,  সুরা এখলাসের সে ওজিফা যার দ্বারা ধন দৌলতে বরকত হয়, এবং সকাল বেলা এই সুরা পাঠ করলে এর দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতে আপনার কি কি হাছিল হবে। এই সুরা এখলাসের ব্যপারে বিস্তারিত আজ আপনাদেরকে জানাব, তবে সবগুলি ওজিফা ও পড়ার নিয়মাবলী জানার জন্য আমাদের ভিডিওটি শুরু থেকে শেষ পযন্ত অবশ্যই দেখবেন।

 প্রিয়বন্ধুরা সুরা এখলাস ৪ আয়াত, ১৫ কলমা এবং ৪৭টি হরফ দ্বারা গঠিত একটি ছোট সুরা। যা আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাত বুঝানোর জন্য নাজিল হয়েছে।এই সুরাতে আল্লাহর একত্ববাদকে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বয়ান করা হয়েছে। সে জন্য এই সুরাকে সুরা এখলাস বলা হয় । ইখলাস অর্থ গভীর অনুরাগ, একনিষ্ঠতা, নিরেট বিশ্বাস, খাঁটি আনুগত্য। শিরক থেকে মুক্ত হয়ে তাওহিদ বা এক আল্লাহর ওপর খাঁটি ও নিরেট বিশ্বাসী হওয়াকে ইখলাস বলা হয়। যদিও সুরাটি খুব ছোট কিন্তু অর্থ ও মর্যাদার দিক দিয়ে অনেক বড়।

হযরত আবদুল্লাহ বিন মসউদ (রা) হতে বর্ণিত কুরাইশের লোকেরা প্রেয় নবী (দ) কে বলল- আপনার রবের বংশ পরিচয় আমাদেরকে বলুন, জবাবে এই সুরা নাজিল হয়। আহলে আরবের এই অভ্যাস ছিল যখন তারা  নতুন কারো সাথে মিলিত হত প্রথমেই তার বংশ পরিচয় জিজ্ঞেস করত।

হযরত আনাস (রা) বয়ান করেন খায়বারের কিছু ইহুদি ওলামা হুজুর পাক (দ) এর কাছে এসে বলতে লাগল, হে আবুল কাসেম আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে নুর দিয়ে, আদমকে মাটি দিয়ে, পৃথিবীকে পানির ফেনা থেকে, ইবলিশকে আগুন দিয়ে, আসমানকে ধুয়া দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এখন আপনার রবের ব্যপারে বলুন তিনি কিসের তৈরী? তিনি কি সোনার তৈরী নাকি তামার তৈরী নাকি লোহার তৈরী? তিনি কি খাওয়া দাওয়া করেন? তিনি কার ওয়ারিশ এবং তার পর তার ওয়ারিশ কে হবে? তাদের এই প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ তায়ালা এই সুরা নাজিল ফরমান।

 

এই সুরাটির অনেক বড় বড় ফজিলত হাদীস শরীফের মধ্যে রয়েছে

 


কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ: হাদিসে এসেছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা সবাই একত্র হয়ে যাও, আমি তোমাদের কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ শোনাব। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) সুরা ইখলাস পাঠ করলেন। (মুসলিম, তিরমিজি)

বিশ্বাসের এক-তৃতীয়াংশই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের কথাই বর্ণিত হয়েছে এই সুরাতে। আপনি যদি শুধু বোঝেন যে এই সুরাতে কী বলা হয়েছে, তাহলে দ্বীনের পথচলা শুরু করার মূলটা আপনি ধরতে পেরেছেন।

সহিহ হাদিসে আছে, সুরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে এক খতম কোরআন তিলাওয়াতের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে এক রেওয়ায়েতে উল্লেখ আছে, এক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে আমির বা নেতা নিযুক্ত করে দেন, তিনি নামাজে ইমামতিকালে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা শেষে প্রতি রাকাতেই সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে লোকেরা এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে তিনি তাঁকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন, নেতা উত্তর দেন যে এই সুরায় আল্লাহর পরিচয় পাই, তাই এই সুরাকে ভালোবাসি। এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে আল্লাহও তোমাকে ভালোবাসেন।

 

সুরা ইখলাস যিনি ভালোবাসবেন, তিনি জান্নাতে যাবেন। হাদিসে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে এসে আরজ করলেন, আমি এই সুরাকে ভালোবাসি, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সুরা ইখলাসের প্রতি ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে। (মুসনাদে আহমদ ৩/১৪১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর আগে কুলহু আল্লাহু আহাদ, কুল আউযু রাব্বিল ফালাক, কুল আউযু বিরাব্বিন নাস পড়ার কথা বলেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বিছানায় ঘুমানোর জন্য যেতেন, তখন তিনি তাঁর দুই হাতের তালু একত্র করতেন, তারপর সেখানে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর দুই হাতের তালু দিয়ে শরীরে যতটুকু সম্ভব হাত বুলিয়ে দিতেন। এভাবে তিনবার করতেন। (বুখারি, আবু দাউদ, তিরমিজি)

 

হজরত ওকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি তোমাদেরকে এমন তিনটি সুরার কথা বলছি, যা তাওরাত, ইঞ্জিল, জবুর এবং কুরআনে অবতীর্ণ হযেছে। রাতে তোমরা ততক্ষণ ঘুমাতে যেয়ো না, যতক্ষণ সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস না পাঠ কর। ওকবা বলেন, সেদিন থেকে আমি কখনও এ আমল পরিত্যাগ করিনি। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

 

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কাজ ইমানের সঙ্গে করতে পারবে জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। (১) যে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেবে। (২) যে ব্যক্তি গোপন ঋণ পরিশোধ করবে। (৩) এবং যে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে (তাফসিরে কাসির)।

হজরত সাহল ইবন সাদ সায়েদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দারিদ্র্যতার অভিযোগ করল তিনি বললেন, যখন তুমি ঘরে যাও তখন সালাম দেবে এবং একবার সুরা ইখলাস পড়বে। এ আমল করার ফলে কিছু দিনের মধ্যে তার দারিদ্র্যতা দূর হয়ে যায়।’ (তাফসিরে কুরতুবি)

বিপদে-আপদে উপকারী: হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকেল সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে, তাকে বালা-মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ি)

 

যারা কবর জিয়ারত করে কবরস্থানে যদি ১১ বার সুরা এখলাস পাঠ করে সমস্ত কবরবাসীর উপর সাওয়াব পৌছানো হয় তাহলে যতজন কবরবাসীকে সে সাওয়াব পৌছাবে ততগুলি সাওয়াব সে নিজেও পাবে।

 

তাছাড়া ফজরের নামাজের পর ৩ বার, জুহর, আসর ও এশারের পর ১ বার করে মোট ৩ বার এবং মাগরিবের পর ৩ বার আর সবশেষে রাতে শোবার সময় ৩ বার মোট ১২ বার ১ দিনে সুরা এখলাস পড়ার নির্দেশ পাওয়া যায়।

 

যদি স্বামী স্ত্রী র মধ্যে বনিবনা না হয় তাহলে ৪১ বার সুরা এখলাস পাঠ করে কোন মিষ্টি জাতিয় জিনিষে ফুক দিয়ে তা উভয়কে খাওয়ালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

 

সুরাটির উচ্চারণ, অর্থ, মর্যাদা ও তেলাওয়াতের ফজিলতগুলো তুলে ধরা হলো-

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ - اللَّهُ الصَّمَدُ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ - وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারণ : কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুচ্চামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ। (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি )
অর্থ : (হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই। (সুরা ইখলাস)

 

খুব ছোট সুরা কিন্তু এর মাঝে আল্লাহ তায়ালা অফুরন্ত ফজিলত ও বরকত দিয়ে রেখেছেন যার মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন উপকৃত হতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে প্রতিদিন েএই সুরাটি বেশী বেশী পড়ার এবং এই সুরাকে মহব্বত করার মাধ্যমে জান্নাত হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.