কলমা পড়ে আত্মহত্যা। রিয়াজের শ্বশুড়ের আত্মহত্যা। তিনি জান্নাতি নাকি জাহান্নামী?

 কলমা পড়ে আত্মহত্যা। রিয়াজের শ্বশুড়ের আত্মহত্যা। তিনি জান্নাতি নাকি জাহান্নামী?

গত রাতে বাংলাদেশের এক চিত্রনায়কের শ্বাশুড় ফেসবুক লাইভে এসে নিজের জীবনের নানান দুঃখ ও হতাশার কথা বলে কলমা পড়ে নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন,

কলমা পড়তে পড়তে আত্মহত্যার ব্যপারে ইসলামের বিধান কি? আত্মহত্যা করলে কি হয়? আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া যাব কিনা? আমাদের প্রিয় নবী আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়েছেন কিনা? এসব বিষয়ে আজ স্পষ্ট ধারনা দিব ইনশা আল্লাহ

বুখারী শরীফের ২৬৯৮ নং হাদীস

সাহল ইবনু সাদ সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুশরিকদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয়পক্ষ তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ সৈন্যদলের কাছে ফিরে এলেন, মুশরিকরাও নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যাক্তি ছিল, যে কোন মুশরিককে একাকী দেখলেই তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করত এবং তাঁকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমন করত। বর্ণনাকারী [সাহল ইবনু সাদ (রাঃ)] বলেন, আজ আমাদের কেউ অমুকের মত যুদ্ধ করতে পারেনি। তা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ত জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। একজন সাহাবী বলে উঠলেন, আমি তাঁর সঙ্গী হব। তারপর তিনি তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন, সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন এবং সে দ্রুত চললে তিনিও দ্রুত চলতেন। তিনি বললেন, এক সময় সে মারাত্মকভাবে আহত হল এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করতে লাগল। এক সময় তলোয়ারের বাট মাটিতে রাখল এবং তাঁর তীক্ষ্ণ দিক বুকে চেপে ধরে আত্মহত্যা করল।

অনুসরণকারী লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কী ব্যাপার? তিনি বললেন, যে লোকটি সম্পর্কে আপনি কিছুক্ষন আগেই বলছিলেন যে, সে জাহান্নামী হবে। তা শুনে সাহাবীগণ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করলেন। তারপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম এমন সময় লোকটি মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং সে শিঘ্রই মৃত্যুকামনা করতে থাকে। তারপর তাঁর তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণধার বুকে চেপে ধরল এবং তাঁর উপরে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল।

বুখারী শরীফের ১২৮১ নং হাদিস আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যাক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নাম (অনুরূপভাবে) বর্শা বিঁধতে থাকবে।

দেখুন এই হাদীস থেকে বুঝা যায় যারা আত্মহত্যা করবে তারা জাহান্নামি এবং তারা যে অস্ত্র দিয়ে বা যেভাবে দুনিয়ায় আত্মহত্যা করবে জাহান্নামে তারা সেভাবে নিজেকে নিজে বার বার হত্যা করবে।

দেখুন দুনিয়া হল খুবই ক্ষনস্থায়ী এই দুনিয়ার কষ্ট আখেরাতের কষ্টের তুলনায় কোন কষ্টই না, তাই কেহ যদি দুনিয়ার সামান্য দুঃখ কষ্টে ধৈর্য্য ধারন করতে না পারে অসহ্য হয়ে আত্মহত্যা করে মুলত সে আখেরাতের অনন্ত জীবনকে নষ্ট করে দিল, যদি সে ধৈর্য্য ধারন করত সে ধৈর্য্যের প্রতিদান সে আখেরাতে পেত, এখন দুনিয়াতেও সে কষ্ট পেয়েছে আর আত্মহত্যার কারনে আখেরাতেও সে কষ্টে থাকবে।

প্রকৃত বুদ্ধিমান লোক কখনোই দুনিয়ার যন্ত্রনায় অধৈর্য্য হয়ে আত্মহত্যা করে নিজের আখেরাতকে বরবাদ করতে পারেনা। কারন আখেরাতের সুখ বা আখেরাতের শাস্তি শেষ হবার নয়

যেমন মুসলিম শরীফের ২০১ নং হাদিস

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি কোন ধারাল অস্ত্র দ্বারা আত্নহত্যা করবে, সে অস্ত্র তার হাতে থাকবে, জাহান্নামের মধ্যে সে অস্ত্র দ্বারা সে তার পেটে আঘাত করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যাক্তি বিষপানে আত্নহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অবস্থান করে উক্ত বিষ পান করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যাক্তি নিজকে পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করে আত্নহত্যা করবে, সে ব্যাক্তি সর্বদা পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে জাহান্নামের আগুনে পতিত হতে থাকবে, এভাবে সে ব্যাক্তি সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।

তাছাড়া যারা আত্মহত্যা করে মৃত্যু বরণ করেন তাদের জানাযা পড়াটাও প্রিয় নবীজি পছনদ করতেন না

যেমন তিরমিজি শরীফের ১০৬৮ নং হাদিস

জাবির ইবনু সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতার সালাতুল জানাযা আদায় করেন নি।

তবে আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়ার ব্যপারে ফোকাহায়ে কেরামের মধ্যে মতানৈক্য আছে তবে প্রসিদ্ধ মত হল আত্মহত্যাকারী জানাযা পড়া যাবে তবে গন্যমান্য ও সম্মানিত ব্যক্তিরা এবং বড় আলেম ওলামারা জানাযা পড়বেন না, সাধারণ জনগন জানাযা পড়ে তার দাফন কাফন করবেন। যাতে মানুষ এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যে আত্মহত্যা করলে বড় আলেম ওলামা ইমাম ও সম্মানিত ব্যক্তিদের দোয়া থেকে বঞ্চিত হতে হবে।

যাই হউক গতকাল যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন তাকে দেখা গেছে কলমা ও দরুদ শরীফ পড়ে পড়ে নিজের গায়ে নিজে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন, আমরা জানি যার শেষ কলমা হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সে জান্নাতি, আবার অপরাপর হাদিসে দেখা যায় যারা আত্মহত্যা করে তারা জাহান্নামি, এখন সাধারণ পাবলিক এটা নিয়ে নানান ধরনের মন্তব্য করছেন কেহ বলছেন সে জাহান্নামি আবার কেহ বলছে সে জান্নাতি।

মনে রাখবেন জান্নাত দেয়া না দেয়া সম্পূণ আল্লাহর এখতেয়ার, তিনি যদি চান সে ব্যক্তিকে শেষ কলমার কারনে তাকে ক্ষমা করতেই পারেন, আবার আত্মহত্যার কারনে জাহান্নামের শাস্তিও দিতে পারেন, এটা সম্পূণ আল্লাহর এখতেয়ার, সে ব্যপারে আমাদের নিশ্চিত করে কিছু বলা উচিত নয়, আমাদের অতি উৎসাহি হয়ে কাউকে জান্নাতি বা জাহান্নামি বলা উচিত নয়। তবে আমাদের উচিত মানুষকে বুঝানো যে আত্মহত্যা করা মহাপাপ, আত্মহ্ত্যাকারীর ব্যপারে জাহান্নামের শাস্তির হুমকি রয়েছে। আমরা নিজেরাও যেন আত্মহত্যার মত জঘন্য অপরাধ থেকে বাঁচি এবং অন্যদেরকেও আত্মহত্যার ইহ ও পরকালিন ক্ষতিসমুহের ব্যপারে ওয়াকিফহাল করি।

 

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.