দিনে ১৭ বার সুরা ফাতেহার ওজিফা। সুরা ফাতেহার ফজিলত ও আমল।
দিনে ১৭ বার সুরা ফাতেহার ওজিফা।
সুরা ফাতেহার ফজিলত ও আমল।
আসসালামু আলাইকুম, জা আল হকের
প্রিয় বন্ধুরা, আমি আশা করি আপনারা ভালো আছেন, আমি দোয়া করি আল্লাহ পাক আপনাদেরকে সুস্থ
ও শান্তিতে রাখুক। প্রিয় বন্ধুরা কুরআন ও সুরা ফাতেহার মধ্যে হাকিকি সম্পক কিতাব ও
তার ভুমিকার কারনে নয়। বরং দোয়া ও তার জবাবের কারনে হয়েছে। সুরা ফাতেহা বান্দার পক্ষ
থেকে ১টি দোয়া, আর কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জবাব।
বান্দা দোয়া করেন হে পরওয়ারদিগার
আমার প্রতি দয়া কর, জবাবে পরওয়ার দিগার পুরা কুরআন তার সামনে রেখে দেয়, আর বলে এটাই
হল তোমার প্রতি সে দয়া যার দরখাস্ত তুমি আমার কাছে করেছ। সে জন্য কোন কোন মুফাসিরিনে
কেরাম বলেছেন পুরা কুরআনে কারিমের সারমম হল সুরা ফাতেহা।
বন্ধুরা আজকের এই ভিডিওতে আমি
আপনাদেরকে সুরা ফাতেহার ব্যপারে বিস্তারিত বলতে যাচ্ছি, এই সুরাতে আল্লাহ তায়ালা কি
স্পেশালিটি রেখেছেন? আর হাদীস শরীফে এসব বিষয়ে কি বয়ান করা হয়েছে? আর আপনাদেরকে এটাও
জানাব যে এই সুরার দ্বারা কিভাবে লোকেরা নিজের তকদীরের
ফয়সালা করিয়ে থাকেন? এবং কিভাবে আপনি এ সুরার দ্বারা আপনার তকদীরের ফয়সালা করাবেন?
বিস্তারিত জানার জন্য আপনার কাছে
অনুরোধ আজকের ভিডিওটি শেষ পযন্ত অবশ্যই দেখবেন।
প্রিয় বন্ধুরা ইমাম নাসাঈ (রহ)
লিখেন হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বয়ান করেন, একদা
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট জিবরাঈল (আঃ) ছিলেন, হঠাৎ জিবরাঈল (আঃ) উপর দিকে একটি শব্দ
শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে
কোনদিন খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হ’লেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
নিকট এসে বললেন, ‘আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে।
তা আপনার পূর্বে কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাক্বারার
শেষ দু’আয়াত। তুমি সে দু’টি হ’তে কোন অক্ষর পড়লেই তার প্রতিদান তোমাকে প্রদান করা হবে’।
মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ৬ষ্ঠ
খন্ড, ৩১০ পৃষ্ঠা হাফেজ নুরুদ্দীন হায়ছমি (রহঃ) বয়ান করেন, হযরত আবু জায়েদ (রাঃ) বর্ণনা
করেন আমি নবী করিম (দঃ) এর সাথে মদীনার কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম এক লোক তাহাজ্জুদ
নামাজে সুরা ফাতেহা পাঠ করছিল, নবী করিম (দঃ) তাঁর তেলাওয়াত শুনে দাঁড়িয়ে গেলেন সুরা
ফাতেহা তেলাওয়াত শেষ হলে নবী করিম (দঃ) ফরমালেন পবিত্র কুরআনে এর মত আর কোন সুরা নাই।
বন্ধুরা এ কথা সকলেই জানে যে
ইবলিশ কে আল্লাহ তায়ালা প্রচুর জ্ঞান দান করেছেন, কিন্তু সে অহংকার করল, আল্লাহর নাফরমানি
করে বসল, আর এভাবেই অভিশপ্ত হয়ে গেল, আর সে আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করে বসল যে সে আল্লাহর
বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে, কিন্তু যখন আল্লাহ তায়ালা এই সুরা ফাতেহা দিয়ে বান্দাকে
সম্মানিত করল তখন শয়তানের খুব বেশী কষ্ট হল, কারন শয়তান আল্লাহর বান্দাকে পথভ্রষ্ট
করার জন্য যে সব মেহনত করবে সকল মেহনত এই সুরার বরকতে ধ্বংস হয়ে যাবে। সে জন্য যখন
এই সুরা নাজিল হল তখন শয়তান বিলাপ করে কান্না করা আরম্ভ করল। আর চিন্তায় পরে গেল এখন
কিভাবে মুহাম্মদ (দ) এর উম্মতকে পথভ্রষ্ট করবে?
বন্ধুরা মনে রাখবেন এই সুরা মুলত
একটি দোয়া যা আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতকে শিখিয়েছেন, আর এই সুরা ফাতেহা প্রত্যেক নামাজে
পড়ার হকুম আছে, বান্দা যখন নামাজে এই সুরা ফাতেহা পাঠ করে তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন
সে বান্দার প্রতিটি আয়াতের জবাব দেন,
ইমাম মুসলিম রেওয়ায়েত
করেন হাদীসটি ১ম খন্ডের ১৭০ পৃষ্ঠায় রয়েছে যার সার সংক্ষেপ হল
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)
হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলে করিম (দঃ) এরশাদ করেন আল্লাহ তায়ালা বলেন আমি ও আমার বান্দার
মধ্যে সুরা ফাতেহাকে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করা হয়েছে, সুরা ফাতেহার অর্ধেক অংশ বান্দার
জন্য অর্ধেক অংশ আল্লাহর জন্য যেমন
বান্দা বলে- আলহামদুলিল্লাহি
রাব্বিল আলামিন
আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা
আমার প্রসংশা করেছে
বান্দা বলে- আররাহমানির
রাহিম
আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা
আমার গুনগাণ করেছে
বান্দা বলে- মালিকি এয়াউমিদ্দিন
আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা
আমার সম্মান করেছে
বান্দা বলে- ইয়্যাকা নাবুদু
ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন
আল্লাহ বলেন- আমার বান্দার
জন্য তাই নির্ধারিত আছে যা আমার বান্দা আমার কাছে চায়
বান্দা বলে- ইহদিনাস সিরাতাল
মুসতাকিম সিরাতাল্লাজিনা আন আমতা আলাইহিম গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লিন
আল্লাহ বলেন- ইহা আমার
বান্দার জন্য, এবং আমার বান্দার জন্য সেই জিনিষ রয়েছে যার জন্য সে দোয়া করে।
যদি ৫ওয়াক্ত নামাজে শুধু ১৭ রাকাত
ফরযে সুরা ফাতেহা পড়ে বান্দা ১৭ বার আল্লাহর সাথে মুলত কথা বলে, আর সুন্নত নফল বিতির
সহ ৪৬ রাকাত হয়, যদি তার সাথে ইশরাক, চাশত, তাহাজ্জুদ, আওয়্যাবিন যুক্ত হয় তাহলেতো
একজন বান্দা আল্লাহর সাথে অনেক বার কথা বলার সৌভাগ্য অজন করে, আর এটাই শয়তানের জন্য
কষ্টকর।
ইমাম দারেমি (রহঃ) সুনানে
দারেমির ২য় খন্ডে ৩২০ পৃষ্ঠায় হাদীস বর্ণনা করেন- আবদুল মালেক বিন ওমায়ের থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন হুযুর (দঃ) এরশাদ করেন সুরা ফাতেহা দ্বারা সকল রোগের শেফা হয়।
আর এই হাদিসের আলোকে আকাবিরিনে
কেরাম ১টি ওজিফা পেশ করেছেন যা সাধারণত সব ধরনের রোগের মহৌষধ, এ ওজিফার নিয়ম হল, ১
গ্লাস পানি নিবেন আর তাতে ১ বার দরুদে ইবরাহিমি পড়বেন, এরপর ৪১ বার সুরা ফাতেহা পাঠ
করবেন, আর সবশেষে ১ বার দরুদে ইবরাহিমী পড়বেন, এভাবে পড়ে পানিতে দম করবেন, আর সে পানি
রোগীর চেহেরায় ছিটিয়ে দিবেন, আর বাকী পানি রোগীকে পান করিয়ে দিবেন, সে পানি দিনে ২/৩
বার রোগীর মুখে ছিটাবেন আর তাকে পান করতে দিবেন। আল্লাহর ফজলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে
উঠবে।
এই সুরা দিয়ে ঝাড়ফুক করা হাদীসের
দ্বারাও প্রমাণিত, যে রোগের জন্যই ঝাড়ফুক করবেন ইনশা আল্লাহ শেফা হাসিল হবে। তবে শত
হল পূন একিনের সাথে এই আমল করতে হবে।
বন্ধুরা এই সুরার একটি নাম হল
সুরাতুল রুকাইয়্যা, অর্থ্যাৎ ঝাড়ফুকের সুরা, হাদীসে পাকে আছে নবী করিম (দ) এরশাদ করেন
সুরা ফাতেহা সকল রোগের জন্য শেফা।
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন,
একদা এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিয়ে
সাপের বিষ ঝাড়েন ও তিনি সুস্থ হন, এজন্য এ সূরাকে রাসূল (ছাঃ) ‘রুক্বইয়াহ’ (الرُّقْيَةُ) বলেছেন
তাই যে কোন রোগীর জন্য এর চেয়ে
বড় দোয়া আর নাই বললেই চলে, তাই যে কোন ধরনের রোগে এই সুরার ঝাড়ফুক যেমন খুবই উপকারী,
তেমনি বেশী বেশী এই সুরা পাঠ করার দ্বারা আল্লাহর রহমত নাজিল হয়, শয়তান ব্যথ হয়ে যায়।
আর নামাজী বান্দা এই সুরা পড়লে আল্লাহ সুরা ফাতেহার প্রতিটি আয়াতের জবাব দেন ফলে নামাজ
হয়ে যায় বান্দার জন্য মেরাজ, আল্লাহর সাথে কথা বলার মাধ্যম, এর চেয়ে বড় নেয়ামত আর বান্দার
জন্য কি হতে পারে?
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ৫ ওয়াক্ত
নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ বেশী বেশী পড়ার দ্বারা আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার
তৌফিক দান করুন, সুরা ফাতেহার দ্বারা সব ধরনের রোগ ব্যধী থেকে নিরাপত্তা লাভের তৌফিক
দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই