পাকিস্তানের ভয়ে যুদ্ধ বিরতি দিল ভারত- মোদির দিন শেষ। মুফতি আমির হামজার ওয়াজ
পাকিস্তানের ভয়ে যুদ্ধ বিরতি দিল ভারত- মোদির দিন শেষ।
মুফতি আমির হামজার ওয়াজ
লালমনিরহাটের আকবর বর্ডার এলাকায় বিজিবি সদস্যরা মাত্র ১১ জন নিয়ে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। বিপরীতে ভারতীয় অংশে ২২ জন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। একজন বিজিবি সদস্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এত কম জনবল নিয়ে তাদের ভয় লাগে না? উত্তরে তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, শত্রুপক্ষ ২২ জন নয়, ৩৩ জন হলেও তারা শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করে তাদের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তাদের সাহস আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস থেকে আসে।
পাকিস্তানের সৈন্যরা আল্লাহর নামে শপথ নিয়ে যুদ্ধে যায় এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে। তাদের প্রেরিত ৪০ জনের একটি দল সম্প্রতি আক্রমণ করেও অক্ষত ফিরে এসেছে। এর কারণ হলো তাদের ঈমান ও আল্লাহর উপর ভরসা। এর তিন দিন আগে, প্রথম আক্রমণের সময় এক ক্যাপ্টেন তার আর্মি চিফ বাবাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি দেশ ও মানবতার রক্ষার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যাচ্ছেন। কারণ ভারত মিথ্যা তথ্যের উপর ভিত্তি করে যুদ্ধ শুরু করতে চেয়েছিল।
ভারত ৫৪ বছর ধরে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল হতে দেয়নি এবং মিথ্যা তথ্যের উপর ভর করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও একই কাজ করেছে। তারা জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলার মিথ্যা অজুহাতে মসজিদ ও মাদ্রাসা ভেঙেছে এবং নিরীহ মানুষ ও শিশুদের হত্যা করেছে। এর কোনো জবাবদিহি তারা করেনি। এ কারণে পাকিস্তানের জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ। এমনকি সৈন্যদের বাবারাও এসে বলছেন, তাদের ছেলেরা দেশ ও মানবতার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত, তবে তারা যেন পিঠে গুলি লাগা অবস্থায় ফিরে না আসে।
এক ক্যাপ্টেনের শাহাদাতের ঘটনা উল্লেখ করে বক্তা বলেন, তার বাবার নির্দেশ অনুযায়ী, বুকে ২২টি গুলি লাগার পরেও তাকে সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। বিপরীতে, গরুর মদ ও শুকর খাওয়া শত্রুদের সাথে এঁরা পারবে না। তবে, শত্রুরা এখন অন্য কৌশল নিতে পারে, তাই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সূরা বাকারার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ নবীর মনের খবরও জানেন এবং মুশরিকরা মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়।
বক্তা বলেন, মুশরিকদের জীবনে মায়া-মহব্বত বেশি থাকে। সামান্য আঘাত পেলেই তারা আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। ২৮ বার চেষ্টা করেও শত্রুরা সফল হয়নি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। কোরআনের আয়াতের প্রতি বিশ্বাস রেখে তিনি বলেন, যারা মানুষের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্বে যারা আসবে, তাদেরও যেন মানুষের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ না দেওয়া হয়।
আজকের মাহফিলে কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরার সামান্য অংশ তেলাওয়াত করা হয়েছে। একটি আয়াতের সামান্য অংশের ব্যাখ্যা কেয়ামত পর্যন্ত শেষ হবে না। আল্লাহ কোরআনে অগুনতি তথ্য রেখেছেন। বক্তা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এবং নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর দরুদ ও সালাম পাঠান, যাঁকে আল্লাহ তিনটি মিশন ও ভিশন দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। উম্মত হিসেবে আমাদেরও সেই তিনটি মিশন থাকা উচিত: তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা।
কেয়ামতের ময়দানে তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় যদি কোনো মুমিনের অন্য আমল কমও থাকে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কারণ তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ নবী ও রাসূল পাঠিয়েছিলেন। সূরা আলে ইমরানের একটি আয়াত উল্লেখ করে তিনি আহলে কিতাব তথা কিতাবধারীদেরকে একটি অভিন্ন কথার দিকে আসার আহ্বান জানান: আল্লাহ ছাড়া কারো এবাদত না করা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা।
বক্তা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও তাদের কিতাবের প্রতি বিশ্বাস রাখে। হযরত মুসা (আঃ)-কে ইহুদিরা জোসেফ এবং ঈসা (আঃ)-কে খ্রিস্টানরা যীশু নামে ডাকে। আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ), নাকি বঙ্গবন্ধু - এই নিয়ে তাকে রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়েছে। মুসলিম জাতির পিতা হিসেবে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর স্বীকৃতি আল্লাহর দেওয়া।
বক্তা তার জেলখানার তিন বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, যেখানে তার কারারক্ষীরা অধিকাংশই অন্য ধর্মের লোক ছিলেন। একদিন তিনি তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়ার জন্য চেয়েছিলেন, কিন্তু ভালো কোনো বই সেখানে ছিল না। পরে বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের বই আনা হয়েছিল। তিনি এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানান।
বক্তা মাওলানা মামুনুল হকের সাথে তার তিন বছরের কারা জীবনের কথা উল্লেখ করেন এবং কোরআন ও হাদিস থেকে অনেক জ্ঞান লাভ করার কথা বলেন। তিনি আবার সেই কিতাবধারীদের প্রতি আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আসার আহ্বান জানান। পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার ধর্মের লোক বাস করলেও, প্রত্যেকেরই ধর্মীয় কিতাব রয়েছে। আল্লাহ চান সবাই এক আল্লাহকে ইবাদত করুক।
বিপদে পড়লে মানুষ আপনাআপনি আল্লাহকে ডাকে। বক্তা তার শৈশবের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন, যেখানে ঝড়ের সময় অন্য ধর্মের এক ব্যক্তিও 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' পড়েছিল। যদিও অনেকে বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করতে পারে না, তবুও তারা মনে মনে এক আল্লাহকেই বিশ্বাস করে।
ইয়াহুদিরা ওজর (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিস্টানরা মারিয়াম ও ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর স্ত্রী ও পুত্র মনে করে। কোরআনে আল্লাহ তাদের এই বিশ্বাসের খণ্ডন করেছেন। সূরা ইখলাসের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর একত্ব, অমুখাপেক্ষিতা এবং সন্তান ও সমকক্ষহীনতা বর্ণনা করেছেন।
যারা ঈমানদার, তারা এই চারটি বিষয়ের উপর বিশ্বাস রাখে। অন্যান্য কিতাবের বিশ্বাসীরাও অন্তত একজনকে বিশ্বাস করে। বক্তা যশোরের এক বিসিএস ক্যাডার অধ্যাপকের মুসলমান হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন, যিনি তিন মাস কোরআন পড়ার পরেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। বিবেক জাগ্রত হলেই মানুষ মিথ্যা ধর্ম ত্যাগ করবে।
গিরীশচন্দ্র সেনের কোরআনের জ্ঞানের কথা উল্লেখ করে বক্তা বলেন, তিনি কোরআনের অনুবাদ ও তাফসীর লিখেছিলেন, কিন্তু হেদায়েত পাননি। কারণ হেদায়েতের জন্য একটি মন প্রয়োজন। আল্লাহ জোর করে কাউকে হেদায়েত দেন না। তিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং কোরআন পাঠিয়েছেন। সূর্যের আলো যেমন সবাই পায়, তেমনি কোরআনের আলোও সবার জন্য। দোষ সূর্যের নয়, বরং গ্রহীতার।
যারা ইসলামের খাদেম, তারা কেবল খেদমত করে, ইসলামের মালিক নয়। এই দেশে ইসলাম কায়েম হলেও তাদের লাভ-ক্ষতি নেই। সূরা নাহলের আয়াত উল্লেখ করে বক্তা বলেন, মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর এবাদত চালিয়ে যেতে হবে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা উচিত।
নারী কমিশন কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার সমালোচনা করে বক্তা বলেন, এর ৩১৮ পৃষ্ঠার মধ্যে ১০টি আয়াতে কোরআনের সরাসরি বিরোধিতা করা হয়েছে। 'দেহ আমার, সিদ্ধান্ত আমার' - এই বক্তব্য কোরআনের বিরোধী। সূরা আরাফের আয়াত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই জমিন আল্লাহর এবং সিদ্ধান্তও তাঁর। মায়ের গর্ভে মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিস্তারিত বর্ণনা দেন তিনি এবং বলেন, আল্লাহই মানুষকে আকৃতি দেন, কারো দেখে দেখে নয়।
মানুষের সাড়ে তিন হাত দেহের ভেতরে পাঁচটি জিনিস এমন আছে যা কারো সাথে মেলে না। হাতের রেখা, চোখের গঠন, চামড়ার প্রকারভেদ, জিহ্বার স্বাদ গ্রহণের স্তর এবং মাথার তার - এগুলো আল্লাহ তায়ালার বিশেষ সৃষ্টি। চামড়ার ভিন্নতার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একজনের চামড়া অন্যজনের সাথে মেলে না, এমনকি নিজের শরীরের এক জায়গার চামড়াও অন্য জায়গার সাথে হুবহু মেলে না।
বক্তা জিহ্বার স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতার বিস্ময়কর বর্ণনা দেন এবং বাংলাদেশে ১২০ প্রকার ভর্তা পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। মাথার ভেতরে ৭০ হাজার তারের বিন্যাসও আল্লাহর এক अद्भुत সৃষ্টি। আল্লাহ মানুষকে ৪০ দিন করে তিন ধাপে তৈরি করেছেন। ছয় মাসের মধ্যে যখন খাবারের প্রয়োজন হয়, তখন আল্লাহ আকার দেন এবং মায়ের নাপাক রক্ত বন্ধ করে নাভির মাধ্যমে রিজিক পৌঁছান।
আল্লাহ মায়ের গর্ভে মুখকে পবিত্র রাখেন, কিন্তু দুনিয়ায় এসে মানুষ সুদ ও ঘুষের মতো হারাম জিনিস খায়। যারা সুদের কারবারে জড়িত, তারা মায়ের সাথে জেনা করার শামিল। ঘুষও হারাম। বক্তা মুখকে যাবতীয় নাপাকি থেকে বাঁচানোর আহ্বান জানান।
নারী কমিশনের নীতিমালার বিরোধিতা করে বক্তা বলেন, এর কোনো সিদ্ধান্ত কোরআনের সাথে মেলে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিশনে ইসলামিক স্কলার থাকলে এই ভুলগুলো ধরা পড়ত। নারী-পুরুষের সমান অধিকার কেয়ামত পর্যন্ত সম্ভব নয়।
পুরুষ ও নারীর শারীরিক ভিন্নতার উদাহরণ দিয়ে বক্তা বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার বাস্তবসম্মত নয়। যারা এই নীতিমালা তৈরি করেছেন, তাদের পাবনার মানসিক হাসপাতালে পাঠানো উচিত।
আল্লাহ ছাড়া কারো এবাদত করা যাবে না - এটাই তাওহীদ এবং নবীর প্রধান মিশন ছিল। বক্তা সকলকে এই এক কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো এবাদত না করার প্রতিজ্ঞা করেন।
কোন মন্তব্য নেই