জিলহজ মাসের আমল। মক্কা, কাবা, হাজরে আসওয়াদ, মকামে ইবরাহিম এর ফজিলত
কাবা, হাজরে আসওয়াদ, জমজম, মকামে ইবরাহিম ও জিলহজের ১০ দিনের ফজিলত ও আমল
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ
لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ
নিঃসন্দেহে
সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে
এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য
হেদায়েত ও বরকতময়। [সুরা ইমরান - ৩:৯৬]
মক্কাকে বাক্কা বলার কারন কি?
এ স্থানে আসলে সকলের অহংকার চুন হয়ে যায় যেমন আবরাহা বাদশার অহংকার চুণ হয়ে গিয়েছিল হস্তি বাহিনি নিয়ে এসেছিল মক্কা নগরীতে আল্লাহ তায়ালা আবাবিল পাখি দিয়ে তাদের সব দম্ভ অহংকারকে চুণ করে দিয়েছিলেন
মক্কার আর কি কি নাম আছে?
যে জিনিষের নাম বেশী সেটির দাম ও সম্মানও বেশী
মক্কার আরো অনেক নাম আছে যেমন
বায়তুল আতিক, বায়তুল হারাম, বালাদুল আমিন, উম্মে রহম, হাতিম, বাইয়্যেনা, কাদিস, মুকাদ্দাস, বাসসাহ, কাওছা, বালাদা, মক্কা, বাক্কা ইত্যাদি
মক্কার কয়েকটি পয়েন্ট
মক্কা হল মুসলমানদের কেবলা, সারা বিশ্বের মুসলমানদের বাৎসরিক মোলাকাতের স্থান হজ্বের মরকজ হল এই মক্কা নগরী। একদম শুরু থেকেই এই মক্কা নগরী হল হারাম তথা মর্যাদাময় শহর।
এই শহরের সবচেয়ে সম্মানিত ঘর হল কাবা, যে কাবা ঘর আল্লাহর তৈরী সর্বপ্রথম ঘর নির্মিত।
এই শহরের আরেকটি নাম হল নিরাপত্তার নগরী। হারাম শরীফে গাছের পাতাও ছিড়া নিষিদ্ধ এমন কি পশু পাখিকেও মারা ভয় লাগিয়ে তাড়িয়ে দেয়া নিষিদ্ধ।
হারামে হত্যাকারীর প্রতিশোধ নেয়া !
#এই হারামের এরিয়ায় তখন কোন হত্যাকারীও প্রবেশ করলে তার থেকে প্রতিশোধ নেয়া যেতনা যতক্ষণ না সে হারাম এরিয়া থেকে বের হত।
মক্কা বিজয়ে নবী কেন এই হারামে যুদ্ধ করেন?
#এই নগরীতে যুদ্ধ বিগ্রহ হারাম, সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পযন্ত হারাম, তবে নবী করিম
(দ) বলেন মক্কা বিজয়ের দিন কয়েক ঘন্টার জন্য আমাকে অনুমতি দেয়া হযেছে এরপর কেয়ামত পযন্ত এই এলাকায় আর কোন যুদ্ধ বিগ্রহ বৈধ নয়।
- শিকারযোগ্য যে কোনো হালাল
জানোয়ার হত্যা করা হারাম।
- শিকারযোগ্য প্রাণী হত্যার
জন্য অস্ত্র সরবরাহ কিংবা ইসারা করে দেখিয়ে দেয়ার দ্বারা সাহায্য করাও হারাম।
- হারাম সীমানায় গাছ কাটা
এমনকি তাজা ঘাস কাটা বা ছেঁড়াও হারাম।
- হারাম সীমানায় কোনো জিনিস
পড়ে থাকলে সেটা ওঠানোও যাবে না। তবে ওই ব্যক্তি তা ওঠাতে পারবে; যে তার প্রকৃত মালিকের সন্ধান দিতে পারবে।
পবিত্র
কোরআনের ঘোষণা—
اِنَّمَاۤ اُمِرۡتُ اَنۡ اَعۡبُدَ رَبَّ هٰذِهِ الۡبَلۡدَۃِ
الَّذِیۡ حَرَّمَهَا وَ لَهٗ کُلُّ شَیۡءٍ ۫ وَّ اُمِرۡتُ اَنۡ اَکُوۡنَ مِنَ
الۡمُسۡلِمِیۡنَ
‘আমি তো আদিষ্ট হয়েছি এই নগরীর রবের ইবাদত
করতে, যিনি একে করেছেন সম্মানিত। সবকিছু তাঁরই। আমি আরো
আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি আত্মসমর্পণ কারীদের অন্তর্ভুক্ত হই।’ (সুরা
নামল: ৯১)
কাবার সম্মান কিভাবে করব?
পেশাব পায়খানা- কাবাঘরের সম্মান ও মর্যাদার কারণে
পায়খানা প্রসাবের সময় তা সামনে বা পেছনে রাখতে নিষেধ করেছেন নবীজি (স.)। একইভাবে
কেবলার দিকে ফিরে সহবাস করাও নিষিদ্ধ। ইসলামি শরিয়তের এই বিধানের রহস্য হলো, আল্লাহর ঘর ও নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, বুখারীর ৩৯৪ নং হাদিস
لاَ
تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ
غَرِّبُوا.
যখন তোমাদের কেউ পায়খানা-প্রস্রাব করে, তখন যেন সে কেবলার দিকে
মুখ বা পিঠ দিয়ে না বসে। (সহিহ বুখারি: ৩৯৪)
কাদের মুখে কিয়ামতের দিন কফ লাগানো থাকবে?
নামাজে ও নামাজের বাহিরে কিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করা
কঠোরভাবে নিষেধ
তারগিবের ২৮১ নং হাদিস আল্লাহর রাসুল (সঃ) বলেছেন, “কিবলার দিকে যে কফ ফেলে,
তাঁর চেহারায় ঐ কফ থাকা অবস্থায় সে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন
পুনরুত্থিত করা হবে।”
কিবলার দিকে পা লম্বা করা
যদি অসম্মান করার নিয়তে কিবলার দিকে কেহ পা লম্বা করে তাহলে
তা কুফুরি হবে, আর যদি অসম্মান করার উদ্দেশ্যে না করে তাহলে মকরুহ হবে। আর যে
এলাকায় পম্চিম দিকে পা দেয়াকে খারাপ মনে করে সেখানে পশ্চিম দিকে পা দেয়াটা মকরুহ
হবে।
হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ফতোয়ায়ে আলমগিরিতে আছে
—وَيُكْرَهُ مَدُّ
الرِّجْلَيْنِ إلَى الْكَعْبَةِ فِي النَّوْمِ وَغَيْرِهِ عَمْدًا ‘
ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় অথবা অন্য কোনো অবস্থায় কাবা
শরিফের দিকে পা দেওয়া মাকরুহ। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩১৯, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৯/১৭৪)
আদব কায়দা সম্মান প্রদশন এসব হল তাকওয়ার লক্ষণ
وَمَن يُعَظِّمْ
شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ
এটা
শ্রবণযোগ্য কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমুহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো
তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত। [সুরা হাজ্জ্ব - ২২:৩২]
কাবার ছবি যুক্ত যায়নামাজ
আল্লাহর ঘরের আকাশচুম্বি মর্যাদা, সে মর্যাদাবান ঘরের ছবি যদি জায়নামাজে থাকে আর সে জায়নামাজ যদি মানুষ পা দিয়ে পারায় সেটাও না জায়েজ। তাই যে সব জায়নামাজে কাবা ঘরের ছবি আছে তা মসিজদে বিছানো না জায়েজ।
যদি কেহ ইচ্ছাকৃত এ কাজ করে সে কুফুরি করল।
কাবা ঘরের জন্য আদম (আ) এর আবেদন
আদম (আ) কে যখন পৃথিবীতে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিল,
তখন হযরত আদম (আ) আল্লাহর কাছে ৭ আকাশে ফেরেশতাদের যে কাবা ঘর বায়তুল মামুর যাতে ফেরেশতারা তাওয়াফ করে, সে ঘরের মত একটি ঘর পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আবেদন করেন – আর আদম (আ) এর সে আবেদনের প্রেক্ষিত সে বায়তুল মামুরের সোজা নিচে দুনিয়াতে ফেরেশতাদের মাধ্যমে কাবা ঘর নির্মাণ করে দিলেন।
এই কাবা ঘরে আদম (আ) কতবার হজ্ব করেছেন?
কাবা ঘরে হযরত আদম (আ) কোন কোন বননায় ৫৫ বার হজ্ব পালন করেছেন। তাওয়োফ করেছেন।
কোন নবীর যুগে এই কাবা ঘর ধ্বংস হয়ে যায়?
হযরত নুহ (আ) এর যুগে যখন মহা প্লাবন হয় তখন এই কাবা ঘর ভেঙ্গে যায় ১৫০ দিনের বন্যায় কাবা ঘর পলিমাটিতে ঢাকা পরে যায়। আমাদের দেশে মাত্র সপ্তাহ ১০ দিন বন্যা হলে পুরা এলাকা অচল হয়ে যায়, আর নুহ নবীর যুগে ৫ মাস যাবৎ বন্যা ছিল। সুবহানাল্লাহ পৃথিবীর সব কিছুই তছনছ হয়ে গিয়েছিল
কোন কো ন নবী এই কাবা ঘরের তাওয়াফ করেছেন
১ লক্ষ ২৪ হাজার অথবা ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবীর সকলেই এই কাবা ঘরে এসেছেন, তবে ২ জন নবী কাবা ঘরে আসতে পারেন নি তার কওমের অত্যাচারের কারনে
কোন কোন নবী কাবা ঘরে আসতে পারেন নি?
যে ২ জন নবী কাবা ঘরে আসতে পারেন নি তারা হলেন-
(১)
হযরত হুদ
(আ) আদ জাতির অত্যাচার এত বেশী ছিল যে তিনি কাবা ঘরে আসতে পারেন নি
(২)
হযরত সালেহ (আ) সামুদ জাতির অত্যাচারে কাবা ঘরে আসতে পারেন নাই। মাত্র ৪৫০ মাইল দুর থেকেও হযরত সালেহ (আ) মাদায়েনে সালেহ থেকে মক্কায় আসতে পারেন নি।
কতদিন কাবা অদৃশ্য ছিল?
নুহ নবী থেকে নিয়ে প্রায় ২৬০০ বছর পযন্ত এই কাবা ঘর অদৃশ্য ছিল, ২৬০০ বছর পর হযরত ইবরাহিম (আ) পুনরায় এই কাবা ঘর একই জায়গায় নির্মান করার জন্য নির্দেশ পেয়ে ইবরাহিম নবী সিরিয়া থেকে মক্কায় গেলেন সে মক্কা নগরীতে ৬৫০০ পাহাড়ের ভিতর কাবা ঘর কোন পাহাড়ের চিপায় আছে তিনি বের করতে পারছিলেন না। তখন আল্লাহ তায়ালা এক খন্ড মেঘ পাঠালেন আর ইবরাহিমকে বললেন এই মেঘ যেখানে গিয়ে দাঁড়াবে সেস্থানেই কাবা ঘরের পুরাতন চিহ্ন খুঁজে পাবে। সে মোতাবেক হযরত ইবরাহিম (আ) মেঘের ছায়ার দ্বারা কাবা ঘর এর সিমানা খুঁজে পেলেন। সুবহানাল্লাহ
ইবরাহিম কিভাবে ঘরে বুঝিয়ে দিলেন?
ইবরাহিম নবী কাবা ঘর নির্মান করে সে ঘর আল্লাহকে বুঝিয়ে দিলেন দোয়া করে করে আর বললেন সুরা বাকারার ১২৭ নং আয়াতে
وَإِذْ يَرْفَعُ
إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ
مِنَّا إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা'বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে
কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। [সুরা বাকারা - ২:১২৭]
হাজরে আসওয়াদের ফজিলত
সাদা পাথর কিভাবে কালো হয়ে গেল?
হাজরে আসওয়াদ মানে কালো পাথর এটি দুধের চেয়ে সাদা ছিল যেমন তিরমিজি শরীফের পরে মানুষের গুনাহ এটি কালো করে দিয়েছে যেমন তিরমিজির ৮৭৭ নং হাদিস
عَنِ ابْنِ
عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " نَزَلَ
الْحَجَرُ الأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ
فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ "
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত হতে হাজরে আসওয়াদ অবতীর্ণ
হয়েছিল দুধ হতেও বেশি সাদা অবস্থায়। কিন্তু এটিকে আদম সন্তানের গুনাহ এমন কালো
করে দিয়েছে।
কি গুনাহ?
আপনারা
জানেন এই কাবা ঘরের মধ্যেই ৩৬০টি মুর্তি ছিল এই যে মহা জুলুম কাবা ঘরের মধ্যেই চলত
সে গুনাহই হাজরে আসওয়াদকে কালো করে দিয়েছে, আল্লাহ তায়াল বলেন
(ইন্নাশ
শিরকা লা জুলমুন আজিম) শিরিক হল অনেক বড় জুলুম)
এই শিরিক যদিও মুসলমানরা করেনা
কিন্তু তারা জুলুম করে নানা পন্থায় আমরা জুলুম করে থাকি যার কারনে আমরা ফকির হয়ে
যাব নিঃস্ব হয়ে যাব
কুরবানী উপলক্ষে বরপক্ষের জুলুম
সামনে
কুরবানি আসছে, এই কুরবানি নিয়ে চট্টগ্রামে রমরমা জুলুম শুরু হবে, বর পক্ষ কনে
পক্ষকে নানান ভাবে চাপ সৃষ্টি করবে কুরবানিতে গরু ছাগল দেয়ার জন্য, অনেক বাবা
মেয়ের শান্তির জন্য জায়গা জমি বন্ধক রেখে গহনা বন্ধক রেখে, ঋণ করে হলেও গরু দেয়,
এর চেয়ে বড় জুলুম আর কি হতে পারে?
কনের বাবার কাছ থেকে কুট কৌশলে কিছু নেয়া এটা জুলুমও আবার লোভও
মুসলিম শরীফের
৬৩৪০ নং হাদিস
اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ
قَبْلَكُمْ.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যুলুমকে ভয় কর।
কেননা কিয়ামত দিবসে যুলুম অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা লোভ-
লালসা
থেকে সাবধান থেকো।। কেননা এই লোভ- লালসাই তোমাদের
পুর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে।
মুসলিম শরীফের ৬৩৪৪ নং
হাদিস
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
" لَتُؤَدُّنَّ الْحُقُوقَ إِلَى أَهْلِهَا يَوْمَ
الْقِيَامَةِ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক
পাওনাদারকে তার পাওনা চুকিয়ে দিতে হবে।
** আমরা যে জোর জবরদস্তি করে, কুটকৌশল করে কনের বাবা থেকে যৌতুক নিই, গরু ছাগল
নিই, আমরা কি এটার হকদার? যদি হকদার না হই তাহলে আমরা যা যা নিয়েছি তা তা কনের
বাবাকে ফেরত দিতে হবে, দুনিয়াতে না দিলে কিয়ামতের মাঠে দিতে হবে। যদি ফেরত দিতে না
পারি এখন থেকে শপথ করে নিব কনের বাবা থেকে আর কিছু নিব না, যা নিয়েছি তা ফেরত দিব,
যদি ফেরত দিতে না পারি বেয়াইর হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিব। তাহলেই নিস্তার পাব,
না হয় কিয়ামতের মাঠে আমার পাওনাদার, মজলুম আমল না করেও আমার সমস্ত আমল নিয়ে
জান্নাতে চলে যাবে আর আমি আমলকারী হয়েও জাহান্নামের হকদার হয়ে যাব।
হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়েমেনি:
গুনাহের কাফফারা
- হাদিস: যে ব্যক্তি হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়েমেনি স্পর্শ করে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (তিরমিজি: ৯৫৯)
- উদাহরণ: হযরত ইবনে উমর (রাঃ) ভিড় ঠেলে এ দুই রুকন স্পর্শ করতেন, কারণ রাসূল (সা.) বলেছেন, “এদের স্পর্শ করা গুনাহের কাফফারা।”
সুন্নত কোনটি?
রুকনে শামী ও রুকনে ইরাকি স্পর্শ সুন্নত নয়,
কারণ সেগুলো কাবার মূল ভিত্তির বাইরে।
নবীজী (সা.) শুধু হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়েমেনি স্পর্শ করতেন।
হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন: কিয়ামতের সাক্ষ্য
·
ফজিলত: কিয়ামতের
দিন হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা ব্যক্তি সম্পর্কে পাথরটি সাক্ষ্য দেবে। (ইবনে
মাজাহ: ২৯৪৪)
·
বর্ণনা: পাথরটির
চোখ ও মুখ থাকবে—যা
দেখে ও বলবে, কে
তাকে সত্যতার সাথে চুমু দিয়েছে।
মকামে ইবরাহিম: নামাজ ও ইতিহাস
·
আল্লাহর
নির্দেশ:
“ইবরাহিমের দাঁড়ানোর স্থানকে নামাজের জায়গা বানাও।” (সূরা
বাকারা: ১২৫)
·
তাওয়াফের
পর ২ রাকাত নামাজ:
ওয়াজিব, যদি
সময় মাকরুহ না হয়।
·
ঐতিহাসিক
ব্যাখ্যা:
এখানে দাঁড়িয়ে হযরত ইবরাহিম (আ.) কাবা তৈরি করেন। পাথরটি “লিফট” হিসেবে
উঠানামা করত। (জিবরাইল আ. জান্নাত থেকে এনেছিলেন।)
·
আলো: এটি
জান্নাতের উজ্জ্বল ইয়াকুত। আল্লাহ এর নূর কমিয়ে না দিলে, তা
পূর্ব-পশ্চিম আলোকিত করত। (তিরমিজি: ৮৭৮)
জমজমের পানি: বরকত ও শিফা
·
শ্রেষ্ঠ
পানি: রাসূল
(সা.)-এর বুক চিরে পরিষ্কার করার কাজে এ পানি ব্যবহৃত হয়েছে। সেরা পানি না হলে এটা
ব্যবহার হত না।
·
দাঁড়িয়ে
পান: রাসূল
(সা.) নিজে দাঁড়িয়ে পান করেছেন, তাই এটি সুন্নত। (বুখারি: ১৬৩৭)
·
কখন নিষেধ?: সাধারণ
পানিতে দাঁড়িয়ে পান করা মাকরুহে তানযিহি (হালকা
অপছন্দনীয়)। প্রয়োজন হলে দাঁড়িয়ে পান করা যায়। (তিরমিজি ১৮৮০, ইবনে মাজাহ
৩৪২৩)
·
অজুর পানি: নবীজি
(সা.)-এর অজুর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করাও সুন্নত। (সুনানে নাসাঈ: ৯৫)
জমজম: শেফা, বরকত ও বৈজ্ঞানিক তথ্য
·
হাদিস: "জমজম যে
নিয়তে পান করবে, তা
পূর্ণ হবে।" (ইবনে মাজাহ: ৩০৬২)
·
দোয়া:
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَّرِزْقًا وَّاسِعًا وَّشِفَاءً مِّنْ كُلِّ دَاءٍ
হে আল্লাহ, কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত
রিজিক ও সকল রোগের আরোগ্য দিন। (দারাকুতনি: ৪৬৬)
জমজমের চমকপ্রদ
বৈশিষ্ট্য:
·
প্রতিদিন
উত্তোলন হয় ৬৯০ মিলিয়ন লিটার।
·
এটি
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ও বিশুদ্ধ কূপ।
·
পানি রঙ ও
গন্ধ পরিবর্তন হয় না,
ছত্রাক জন্মায় না।
·
জাপানি
বিজ্ঞানী মাসারুর গবেষণা: এক ফোঁটা জমজম ১০০০ ফোঁটা পানি বিশুদ্ধ করতে পারে।
·
এতে
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম
বেশি এবং জীবাণু জন্মায় না।
·
ক্ষুধার
সময় এই পানি খেলে ক্ষুধা দূর হয়।
যিলহজের প্রথম দশ দিন কেন শ্রেষ্ঠ?
আগামী ২৮ মে থেকে জিলহজ মাস শুরু হবে
ইনশা আল্লাহ
১. আল্লাহ এই দশ রাতের কসম খেয়েছেন
➡ কসম দেওয়া মানেই তা
গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ।
قوله تعالى:
وَٱلۡفَجۡرِ
• وَلَيَالٍ عَشۡرٖ
“শপথ ফজরের, এবং শপথ দশ রাতের।”
[সূরা আল-ফাজর, ৮৯:১–২]
অধিকাংশ মুফাসসির বলেন—এ দশ রাত মানে যিলহজের প্রথম দশ দিন।
২. আল্লাহ এই দিনগুলোতে নিজের জিকির করার আদেশ দিয়েছেন
➡ এ দিনগুলোতে তাকবীর, তাহলীল, তাসবীহ
ইত্যাদি জিকিরের গুরুত্ব রয়েছে।
📖 قوله تعالى:
وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ
“...নির্দিষ্ট কয়েক দিনে যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে...” [সূরা
আল-হাজ্জ, ২২:২৮]
🔸 মুফাসসিরগণের
মতে, এই
নির্দিষ্ট দিনগুলো হচ্ছে যিলহজের প্রথম ১০ দিন।
৩. এ দিনেই
ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করা হয়
📖 قوله
تعالى:
ٱلۡيَوۡمَ
أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي
“আজ
আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত
পূর্ণ করলাম...”
📚 [সূরা
আল-মায়েদা, ৫:৩]
🔸 এই আয়াত
নাজিল হয় আরাফার
দিন, অর্থাৎ
৯ যিলহজ।
৪. রাসূল ﷺ বলেছেন, এ দশ দিন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন
হাদীস: “দুনিয়ার
শ্রেষ্ঠ দিন হলো যিলহজের দশ দিন।”[মুসনাদ বাযযার, হাদীস ১১২৮]
এমনকি জিহাদের চেয়েও এই দিনে আমল উত্তম—সেটিও হাদীসে এসেছে।
৫. এ দশকে সব মৌলিক ইবাদতের সমন্বয় ঘটে
➡ সালাত, সিয়াম, হজ্জ, কুরবানি, সাদাকা—সবই এই
দশকে হয়।
ইবনে হাজার র. বলেন:
“এই দশ
দিনের বৈশিষ্ট্য হলো,
এতে সকল গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সমাবেশ ঘটে।” [ফাতহুল বারী, ২/৪৬০]
যিলহজের
প্রথম দশ দিনে করণীয় আমলসমূহ:
১. রোযা রাখা:
প্রতিদিনের রোযা = এক বছরের রোযা
প্রত্যেক রাতের ইবাদত = লাইলাতুল কদরের মতো
[তিরমিজি, হাদীস ৭৫৮]
২. রাত জেগে ইবাদত করা
➡ তাহাজ্জুদ, কুরআন
তিলাওয়াত, জিকির, ইস্তিগফার
ইত্যাদি।
৩. বেশি বেশি জিকির করা
“তাহলীল (লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ),
তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ)”📚 [মুসনাদ আহমদ]
কুরবানীর
সাথে সংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
❌ কোরবানি করার ইচ্ছা থাকলে—
➡ যিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে
চুল/নখ কাটা নিষেধ।
📖 হাদীস:
"إِذَا
دَخَلَ الْعَشْرُ... فَلاَ يَمَسَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلاَ بَشَرِهِ شَيْئًا"
“যে
কোরবানি করতে চায়, সে
যেন চুল-নখ না কাটে।”
📚 [সহীহ
মুসলিম, হাদীস
১৯৭৭]
যারা কুরবানী করবেন না—তারা কী করবেন?
➡ তারা চুল-নখ কাটতে পারেন। তবে যদি
না কাটে, তাহলে পুরো
কুরবানির সাওয়াব পাবে।হাদীস: [আবু দাউদ, হাদীস
২৭৮৯]
সতর্কতা:
নখ/চুল ৪০ দিন ছাড়িয়ে না যাক
হাদীস:
"لا نترك أكثر من أربعين ليلة"
“৪০ দিনের বেশি চুল-নখ ফেলে রাখা উচিত নয়।”📚 [সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮]
➡ যদি কেউ আগেই না কাটে এবং দশ দিন না
কাটায় ৪০ দিন পার হয়ে যায়,
তাহলে গুনাহগার হবে।
উপসংহার:
যিলহজের প্রথম দশ দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দিন
এ সময় ইবাদত করলে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বহু গুণ সাওয়াব
তাই এ সময়টাকে হেলায় না কাটিয়ে, যত বেশি সম্ভব ইবাদত ও
কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ মানার চেষ্টা করাই মুমিনের কর্তব্য।
কোন মন্তব্য নেই