নারী অধিকার ও সমাজের প্রেক্ষাপট: একটি বিশ্লেষণ
নারী সংস্কার নিয়ে এতো সুন্দর করে কেউ বলেনি |
ড. শামীমা তাসনিম| সম্মিলিত নারী প্রয়াস
নারী অধিকার ও সমাজের প্রেক্ষাপট: একটি বিশ্লেষণ
১. বিতর্কের সারসংক্ষেপ:
বক্তা এখানে সেই বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
করতে আসেননি, যেগুলোর বিষয়ে জনগণ ইতোমধ্যে অবগত।
বরং তিনি এতক্ষণ ধরে উত্থাপিত বিষয়গুলোকে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ
থেকে দেখার এবং সুপারিশগুলোকে একত্র করে উপস্থাপনের জন্য দাঁড়িয়েছেন।
২. খন্ডিত ব্যাখ্যার বিপদ:
ছয়জন অন্ধ ব্যক্তির হাতি দেখার গল্পের analogy টেনে বক্তা বলেন, প্রত্যেকে হাতির একটি অংশ ধরে সম্পূর্ণ হাতির
ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছিল।
একইভাবে, নারী অধিকারের বিষয়টিকে খন্ডিতভাবে না দেখে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা
করা প্রয়োজন।
৩. ব্যক্তিজীবনের সংস্কার ও অধিকারের প্রশ্ন:
প্রতিবেদনে ব্যক্তিজীবনে সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, যেখানে দেহ ও সিদ্ধান্তকে ব্যক্তির নিজস্ব
বলা হয়েছে।
এর অর্থ কি স্বেচ্ছাচারিতা? যদি বিবস্ত্র হয়ে বাইরে যাওয়া অধিকার হয়, তবে হিজাব পরলে কেন পরীক্ষা কেন্দ্রে নেকাব
খুলতে বাধ্য করা হয়? কমিশন এই বিষয়ে নীরব।
৪. পারিবারিক পর্যায়ে হস্তক্ষেপ:
সমাজের ক্ষুদ্রতম প্রতিষ্ঠান পরিবারে হস্তক্ষেপ করে পুরুষকে
প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে, যেখানে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
বক্তার প্রশ্ন, কেন নারীকে পুরুষের প্রতিপক্ষ করা হলো? তারা তো একে অপরের পরিপূরক ছিলেন।
৫. বৈবাহিক ধর্ষণ (মেরিটাল রেপ):
বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে আলোচনা চলছে। বক্তার মতে, সমাজে এমন ঘটনা সত্যি ঘটলেও, যারা এটি করেন তারা মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং
তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন।
শারীরিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে নারী নির্যাতন মামলা করার সুযোগ
তো রয়েছেই, তবে কেন একটি ফৌজদারি মামলা দাম্পত্য জীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে
দেবে?
৬. সম্পদের সমবন্টন:
প্রতিবেদনে সম্পদের সমান বণ্টনের কথা বলা হয়েছে, যা নারীদের জন্য একটি বড় সুযোগ।
বক্তা বলেন, ইসলাম নারীদের যে অধিকার দিয়েছে, সমাজ তা নিশ্চিত করেনি। ভাইয়ের কাছ থেকে
প্রাপ্য সম্পদও অনেক নারী পায় না।
সম্পদের সমবন্টনের বিষয়টি বাস্তবে আসা উচিত ছিল।
৭. ধর্মের অপপ্রয়োগ ও নারীর প্রতি বৈষম্য:
প্রতিবেদনে ধর্মকে নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টিকারী হিসেবে উল্লেখ
করা হয়েছে।
বক্তা জোর গলায় বলেন, ধর্ম নারীকে বৈষম্য করেনি, বরং ধর্মের ভুল প্রয়োগ হয়েছে।
ইসলাম দেনমোহরের মাধ্যমে বিবাহের কথা বললেও, সমাজ যৌতুকের দিকে ঠেলে দেয় এবং যৌতুক না
দিলে নারীর জীবন কেড়ে নেয়। এর জন্য ধর্ম দায়ী নয়, সমাজ দায়ী।
৮. পতিতাবৃত্তি উন্মুক্তকরণ:
প্রতিবেদনে পতিতাবৃত্তিকে উন্মুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
এর ফলে দাম্পত্য সম্পর্ক ও পারিবারিক সম্পর্কে সংঘাত বাড়বে।
স্বামী ফৌজদারি মামলা এড়াতে পতিতালয়ে যেতে পারে। অনেক ছাত্রী
হোটেলে এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।
পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে সমাজ ভেঙে পড়বে এবং
এর দায় কমিশনকে নিতে হবে।
৯. গণমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ:
গণমাধ্যমে নৈতিকতা, অশ্লীলতা, শালীন পোশাক ও ধর্মীয় অনুভূতি সম্পর্কিত
শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
বক্তার প্রশ্ন, কেন এই শব্দগুলো ব্যবহার করা যাবে না? শালীনতা তো সামাজিক মূল্যবোধ এবং কোনো ধর্মেই
অশালীনতা নেই।
১০. শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন:
শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্মতিতে যৌন মিলন সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত
করার কথা বলা হয়েছে।
"জেন্ডার স্টেরিওটাইপ" নিয়ে কোনো কথা
বলা যাবে না। যেমন, ঘরের কাজ শুধু নারীরা করবে বা নারীরা ধূমপান করে না - এমন কথা
বলা যাবে না।
ধূমপান কারো জন্যই ভালো নয়, তবে কেন শুধু নারীদের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখ
করা যাবে না?
১১. রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রভাব:
এই কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবন, পরিবার ও সমাজ ধ্বংসের পথে।
পার্বত্য চট্টগ্রামেও এর প্রভাব পড়বে।
১২. আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা:
আন্তর্জাতিক সকল সনদ (সিডো, পিএফ) পার্লামেন্টে পাশ করার কথা বলা হয়েছে।
স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কোনো আন্তর্জাতিক সনদ মানতে বাধ্য
নয় এবং রিজার্ভেশন রাখার অধিকার রাখে।
মানবাধিকারের নামে যারা অমুসলিমদের সমর্থন করে এবং ফিলিস্তিনের
মতো ঘটনায় নীরব থাকে, তাদের প্রেসক্রিপশন মানা উচিত নয়।
১৩. পাশ্চাত্য প্রেসক্রিপশন ও নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার:
এই সুপারিশগুলো একটি পাশ্চাত্য প্রেসক্রিপশনের অংশ, যা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের বাস্তবায়ন। এর
মূল লক্ষ্য ধর্মহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
শিক্ষা ব্যবস্থায় ট্রান্সজেন্ডার অন্তর্ভুক্ত করা এবং পতিতাবৃত্তিকে
উন্মুক্ত করার মাধ্যমে সমাজ ও পরিবার ভেঙে রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
১৪. জুলাই আন্দোলনের অবমূল্যায়ন:
জুলাই আন্দোলনের নারীদের ত্যাগ ও বৈষম্য দূর করার আকাঙ্ক্ষাকে
এই কমিশনের সুপারিশে মূল্যায়ন করা হয়নি।
১৫. নারীর ক্ষমতায়নের নামে প্রদর্শনী:
নারীর ক্ষমতায়নের নামে শুধু বিনোদন ক্ষেত্রে ৫০% প্রদর্শনী
এবং সংসদে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি (৩০০ থেকে ৬০০) প্রকৃত ক্ষমতায়ন নয়।
মমতাজ বা সমস্যার মতো নেত্রী তৈরি করাই যদি লক্ষ্য হয়, তবে তা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নয়।
১৬. গুণগত উন্নয়নের অভাব:
নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন হলো গুণগত, শিক্ষাগত ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন।
১৭. আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংস:
একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংস
করে নারী-পুরুষকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দুর্বল করা হচ্ছে।
১৮. ডক্টর ইউনুসের ভূমিকা ও ফ্যাসিবাদী নারী নেতৃত্ব:
ডক্টর ইউনুস যেভাবে দেশের হাল ধরেছেন, তা প্রশংসার যোগ্য।
গত পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার নারী হলেও, তাদের ফ্যাসিবাদী নেতৃত্ব অনেক পুরুষের চেয়েও
খারাপ ছিল।
শুধু নেতৃত্বে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধিই নারী ক্ষমতায়ন নয়।
১৯. উপদেষ্টা ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ:
উপদেষ্টা ও বর্তমান প্রশাসনের কাছে বক্তার বিনীত অনুরোধ, এই সমালোচিত কমিশন রিপোর্ট পুনর্বিবেচনা করা
হোক।
৯০% মুসলিমের দেশে ইসলাম বিশেষজ্ঞের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া এই রিপোর্ট
গ্রহণযোগ্য নয়।
এই রিপোর্ট একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য তৈরি, যা সার্বজনীন নয়।
২০. একটি সর্বজনগ্রাহ্য কমিশনের আহ্বান:
বক্তা একটি সর্বজনগ্রাহ্য কমিশনের মাধ্যমে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের
জন্য সুপারিশ প্রণয়নের অনুরোধ জানান, যা সমাজকে অস্থিতিশীল না করে এবং কোনো বৈষম্য তৈরি না করে রাষ্ট্রকে
এগিয়ে নিয়ে যাবে।
২১. ধন্যবাদ জ্ঞাপন:
বক্তা সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
কোন মন্তব্য নেই