মায়ের মমতা ও আল্লাহর ৭০ গুন বেশী দয়া
মায়ের মমতা ও আল্লাহর ৭০ গুন বেশী দয়া
হাদীসে পাকে বর্ণিত শয়তান যখন আল্লাহ তায়ালাকে বলল হে আল্লাহ
আমি তোমার বান্দাদেরকে ডান থেকে বাম থেকে আগে থেকে পিছে থেকে প্ররোচনা দিব।(ওয়ালা তাজিদু
আকছারাহুম শাকিরিন) তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবে না। তখন ফেরেশতারা খুবই আফসোস
করতে লাগল ফেরেশতারা বলতে লাগল হে আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য তো খুবই মুশকিল হয়ে গেল।
এ শয়তান ডান বাম আগে পিছে থেকে হামলা করতে থাকবে আদম সন্তানের জন্যতো বাঁচার কোন পথই
বাকি থাকল না। তখন আল্লাহ তায়ালা ফরমালেন হে ফেরেশতা শয়তান ২টি দিকের কথা ভুলে গেছে
একটি উপরের দিক একটি নিচের দিক। সুতরাং আমার কোন বান্দা শয়তানের ধোকায় পড়ে যদি গুনাহ
করে ফেলে আর তার ২ হাত উপরের দিকে তুলে আমার কাছে ক্ষমা চাই তার হাত উপরের দিক থেকে
নিচে নামানোর আগে আগেই আমি আমার সে গুনাহগার বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দিব। তেমনি ভাবে
শয়তান নিচের দিক থেকেও আক্রমন করতে পারবে না, তাই যখন আমার কোন বান্দা গুনাহ করে পেরেশান
হয়ে ক্ষমার নিয়তে নিচের দিকে আমার বারেগাহে সিজদায় লুটিয়ে পড়বে, সে নিচে থেকে মাথা
উঠানোর আগে আগেই সে বান্দার গুনাহ আমি মাফ করে দিব। সুবহানাল্লাহ। শয়তান আল্লাহর ইজ্জতের
কসম খেয়ে ব’েলছিল হে আল্লাহ তোমার ইজ্জতের কসম আমি তোমার বান্দাদের গোমরা করব। তখন
আল্লাহ শয়তানকে জবাবে বলল হে শয়তান তুমিও শুনে রাখ আমার বান্দারা তাদের বাতাকাজায়ে
বশরিয়ত গুনাহ করতে থাকবে আর সে যদি মৃত্যু আসার আগে আগে গুনাহ থেকে তওবা করে ফেলে
(ফাবিইজ্জাতি ওয়া জালালি) আমার ইজ্জত ও জালালের কসম আমি আমার বান্দার তামাম গুনাহকে
ক্ষমা করেদিব। শয়তান প্ররোচিত করতে ১টি কসম খেল আর রহমান মাফ করার জন্য ২ কসম খেল।
তাইতো আল্লাহ তায়ালার সকল সিফতের একটি করে নাম কিন্তু রহমতের সিফাতের ২টি নাম রহমান ও রহিম। আর কোন সিফাত এমন নাই যার ২টি নাম
আছে। তিনি এমন করিম আল্লাহ যিনি বান্দাকে মাফ করেই আনন্দিত হন।
এক বুযুর্গ বলেন আমি একদিন একটি গলি দিয়ে যাচ্ছিলাম এক ঘরের
দরজা খোলা ছিল সে ঘরে দেখলাম এক বুড়ি মা তার সন্তানকে মারপিট করছে, থাপ্পর মারছে, মা
মারতে মারতে বলছে তুই আমাকে অনেক অসম্মান করেছিস, অনেক পেরেশান করেছিস।তুই নাফরমান
তুই এখনই আমার ঘর থেকৈ বের হয়ে যা। সে বাচ্চা কান্না করছিল, মায়ের মার খেয়ে সে রাগ
করে ঘর থেকে বের হয়ে আসল, মাও রাগ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে
কিছুদুর গেল আবার ঘুরে ফিরে ঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে রইল, আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন চলে
এলে ছেলেটি জবাব দিল, প্রথমে বের হয়ে গিয়েছি ভেবেছি কোথাও চলে যাব পরক্ষনে চিন্তা করলাম
আমি দুনিয়ার সব কিছুই পেতে পারি, হাছিল করতে পারি, কিন্তু মায়ের মহব্বত তো আমি কোথাও
পাব না।তাই আমি ঘুরে ফিরে আবার চলে এলাম। মহব্বত ও ভালবাসা তো এ মায়ের কাছেই পাব। ছেলেটি
ঘরের দরজায় বসে বসে কাঁদছে কাঁদতে কাঁদতে ছেলে
ঘরের চৌখাটে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল। আমি সেখানে বসে রইলাম আর বাচ্চাটিকে দেখছিলাম, কিছুক্ষন পর মা দরজা খুলল দেখল সন্তান
ঘরের দরজায় ঘুমিয়ে আছে, মা ছেলেকে ঘুম থেকে উঠাল, জিজ্ঞাসা করল মাটিতে কেন শুয়ে আছ?
ছেলেটি বলল মা দুনিয়ায় আমি সব কিছু পাব কিন্তু একজন আমার মাতো কোথাও খুঁজে পাব না।
আমি কিভাবে এ ঘর ছেড়ে কোথাও যাব? ছেলের কথায় মায়ের চোখে পানি এসে গেল।মা ছেলেকে বুকের
সাথে লাগিয়ে নিল, আর বলতে লাগল হে আমার বাছাধন আয় ঘরে চলে আয় যখন তুই বুঝতে পেরেছিল
এখানেই তোর সব কিছু এখানেই তোর জন্য ভালবাসা, এখানেই আছে তোর জন্য মায়ের মমতা, এটাই
আমার জন্য যথেষ্ট আয় ঘরে এসে যা আমি তোর সব ভুল ক্ষমা করে দিলাম।
পেয়ারা হাজিরিন যখন কোন বান্দা এমনই করে আল্লাহর বারে গাহে
নিজের ভুলের কথা শিকার করে নেয়, ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে থাকে, ফরিয়াদ করতে থাকে হে
পরওয়ার দেগার, হে গুনাহসমুহ ক্ষমা কারী জাত, হে রহমত ওয়ালা জাত তুমি আমাকে ক্ষমা করে
দাও আমার ভুল ত্রুটি মাফ করে দাও, আমাকে মানুষের কাছে অসম্মান হওয়া থেকে বাঁচাও। আমাকে
মানুষের মুখাপেক্ষি হওয়া থেকে রক্ষা কর। আমাকে সকল মসিবত ও পেরেশানি থেকে মুক্তি দাও।
হে আল্লাম আমাকে তোমার অসন্তুষ্টি থেকে মুক্তি দাও। আমি সন্ধি করার জন্য হাজির হয়ে
গেছি । পরওয়ারদিগার আগামীতে আমি আর কোন দিন এমন ভুল করব না। বান্দা যখন এভাবে ফরিয়াদ
করতে থাকে আল্লাহ তায়ালা সে বান্দাকে কবুল করে নেন।
একদিন এক শিক্ষক তাঁর ছাত্র ছাত্রীদের প্রশ্ন করল তোমরা বল
দেখি দুনিয়ায় কাকে খুশি করা রাজি কারা সবচেয়ে সহজ? এক ছাত্রী জবাব দিল হুযুর মাকে রাজি
করা সবচেয়ে বেশী সহজ।শিক্ষক প্রশ্ন করল কিভাবে বুঝলে যে মাকে খুশি করা সবচেয়ে সহজ?
তখন ছাত্রীটি জবাব দিল হুযুর ঘরে আমার এক বড় ভাই আছেন তার কোন কাজে মা অসন্তুষ্ট হয়ে
খুব বকা ঝকা করল, তখন ভাইয়্যা রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল, ভাইয়্যা ঘর থেকে বের হয়ে
যাওয়ার পর মা কিছুক্ষন পর অযু করে জায়নামাযে বসে গেল দোয়া করতে লাগল হে আল্লাহ আমার
সন্তান যেন কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে না ফেলে। আমার সন্তান যেন দ্রুত আমার কাছে ফিরে
আসে তার মন পরিবর্তন করে দাও। যখন রাতে খাওয়ার সময় হয়ে গেল ঘরের সকলেই খেয়ে নিল, দেখলাম
আমার মা সবাইকে খাইয়ে দিল কিন্তু নিজে কিছুই খেল না। আমি মাকে প্রশ্ন করলাম মা আপনি
খানা খাবেন না? মা জবাব দিল বেটা আমি জানি না তোমার ভাই খেয়েছি কিনা? তািই আমার খেতে
ইচ্ছে করছে না। আব্বু অফিস থেকৈ এসে মাকেই বকাঝকা করল, বাবা বলল তোমার বেশী ভালবাসার
কারনেই তোমার ছেলে বিগড়ে গেছে।ছেলের জন্য বাবার কাছেও মা বকা খেল তবুও মা ভােইয়্যার
জন্য উদাস হয়ে যায়। রাত গভির হয়ে গেল ঘরের সকলেই শুয়ে গেল কিন্তু আমার মাকে দেখলাম
জেগে আছে। আমি মাকে বললাম মা তুমি ঘুমাচ্ছনা
কেন? মা জবাব দিল রাতে হয়ত তোর ভাইয়্যা আসবে যদি সে রাতে এসে যায় তাহলে তার জন্য দরজা
কে খুলবে? তাই আমি জেগে আছি। যাতে দরজা খুলতে দেরি নাহয়। আমি মাকে প্রশ্ন করলাম মা
তুমি ভাইয়্যাকে এতই ভালবাস তবে কেন আবার বকা দাও? মা তখন বলল বকা দিই শুধু তাকে সংশোধন
করার জন্য,েআমি তো মা আমি তো চাইনি সে ঘর ছেড়ে চলে যাক। এসব যখন বলছিলাম এমন সময় দরজার
খটখটারি আওয়াজ শুনা গেল তখন মা আমাকে বলল যাও দরজা খুলে দাও তোমার ভাইয়্যা এসেছে তার
জন্য খাবার টেবিলে রাখা আছে খেয়ে নিতে বল। আমি মা কে বললাম এতক্ষন তুমি ভাই্য়্যার জন্য
পেরেশান এখন ভাইয়্যা আসল তুমি ভাইয়্যাকে দেখতে যাচ্ছ না কেন? তখন মা বলল আমি চািই সে
আমার কাছে আসুন একবার সরি বলুক আমি তাকে মাফ করে দিব। একবার চিন্তা করুন মা তার সন্তানের
উপর রাগ, ছেলের প্রতি নারাজ তবুও নারাজ হওয়া সত্বেও মহব্বত বরাবর রয়েছে। আপনারা সব
সময় দেখবেন সন্তানের প্রতি মায়েরা মুখে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও অন্তর থেকে প্রত্যেক
মা ই সন্তানের প্রতি অসন্তুষ্ট নয়। যে মাকে এত কষ্ট দিল পেরেশান করল টেনশন দিল সে মা
আবার সে সন্তানের জন্য না খেয়ৈ বসে আছে, সন্তানের জন্য ঘুম না গিয়ে দরজার দিকে চেয়ে
আছে, আবার সে মা চাচ্ছে সন্তান এসে একবার বলে দিক সরি তাতেই যথেষ্ট। তাহলে বুঝা যায়
সন্তান যতই অপরাধ করুন মাকে পেরেশান করুন না কেন সে মাকে আবার খুশী করা রাজি করা অত্যন্ত
সহজ । শিক্ষক প্রশ্ন করল ছাত্রীকে যদি তোমার মা বেশী রাগান্বিত থাকে তবুও কি সরি বললে
ছেলেকে মাফ করে দিবেন? ছাত্রী বলল তখন সরিতে যদি কাজ না হয় ভাইয়্যা যদি মায়ের কাছে
খুবই কাকুতি মিনতি করে মাফ চাই তাহলে অবশ্যই মা মাফ করে দিবেন। শিক্ষক ছাত্রীকে আবার
প্রশ্ন করল যদি মা ছেলের কাকুতি মিনতিতে মাফ না করে মায়ের রাগ না কমে তখন ? তখন ছাত্রীটি
বলল হুযুর আমার ভাইয়্যা তখন যদি দু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মায়ের কাছে ক্ষমা চাই তখন
মা আর বরদাশত করতে পারবে না কারন আমার মা ভাইয়্যার চোখের পানি সহ্য করতে পারে না। তখন
শিক্ষক ছাত্র ছাত্রীদের বলল হে আমার প্রিয় ছাত্র ছাত্রীরা তোমরা জেনে রেখ দুনিয়ায় মা
নারাজ হলে সে মাকে আবার খুশী করা মা এর কাছ থেকে মাফ নিয়ে নেয়া যতটা সহজ তার চেয়ে ৭০
গুন বেশী সহজ মহান পরওয়ারদিগার আল্লাহ রহমানুর রহিমকে রাজি করা। মাকে তো মুখে বলতে
হয় হাত জোর করতে হয়, পায়ে ধরতে হয়, চোখের পানির ফেলতে হয়। কিন্তু এমন এক জাত যিনি পরওয়ারদিগার
যার সামনে বান্দা যদি শুধু অন্তরে অন্তরে লজ্জিত হয়ে বসেও থাকে আর অন্তরে অন্তরেই যদি
চাই যে হে রহমান তুমি আমার গুনাহকে মাফ করে দাও।মুখে কিছু বলতেও হয় না মনের এমন আগ্রহের
দিকে দেখেই আল্লাহ তায়ালা বান্দার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। সুতরাং যারা মনে করে মা
অনেক বেশী নারাজ মাকে কোন ভাবেই রাজি করা সম্ভব নয় তাদের জন্য এ ঘটনাটিতে শিক্ষীনীয়
রয়েছে, মা যতই নারাজ হউক যতই রাগ হউক সন্তান হিসেবে প্রত্যেক ছেলে মেয়ের জন্য ফরয মায়ের
কাছে মাফ চেয়ে নেয়া কারন দুনিয়াতে মাকে রাজি করার মত সহজ কাজ আর নাই। আর এ মা থেকে
৭০ গুন বেশী মহব্বত করেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে। সুতরাং সে ৭০ গুন বেশী মহব্বত
কারী আল্লাহকে রাজি করাতো আরো বেশী সহজ হবে। তাই আসুন আজই কৃত সকল পাপ থেকে তওবা করে
আল্লাহর দরবারে ওয়াদা করি হে আল্লাহ আমি পাপ করেছি ক্ষমা চাই তুমি ক্ষমা করে দাও। আল্লাহ
পাক আমাদের সকলের তওবাকে কবুল করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই