আল কুরআন ৭টি জীবন্ত মুযেজা

আল কুরআন ৭টি হৃদয়ছোয়া ঘটনা




কুরআন এমন একটি কিতাব যা মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়, ইসলামের আগে মক্কার কাফেররা খুবই অসম্মানিত অপমানজনক জীবন যাপন করত, কিন্তু যখনই তাদের মাঝে আসমানি কিতাব কুরআন এসে গেল সে কুরআনের নুরো সাহাবায়ে কেরাম কেয়ামত পযন্ত আকাশছোয়া সম্মানিত হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ।
আমরাও যদি কুরআন পাঠ করি বিসমিল্লাহর বা থেকে ওয়ান্নাস এর সিন এবং আমল করব মাথার চুল থেকে পায়ের আঙ্গুল পযন্ত কোরানের আলোকেই সাবাজ তাহলে আমরাও সাহাবায়ে কেরামগনের মত দুনিয়ার বুকে মর্যাদাবান সম্মানিত হতে পারব।
“ওয়াকাজালিকা আউহাইনা ইলাইকা রুহাম মিন আমরিনা” পবিত্র কুরআনকে আল্লাহ তায়ালা রুহ বলেছেন, আমাদের শরীরে যতক্ষন রুহ থাকে ততক্ষন এ শরীর নড়াচড়া করে এ শরীরে হরকত আছে বরকত আছে। কিন্তু যখন রুহ বের হয়ে যায় তখন শরীরও মুর্দা হয়ে যায়।তেমনিভাবে আমাদের সমাজের একটি রুহ আছে সে রুহের নাম হল ‍কুরআনে মজিদ ফুরকানে হামিদ। আমাদের সকলের জীবন যদি কুরআনে মজিদের মোতাবেক হয় তাহলে এ সমাজে সোসাইটিতে রুহ হবে। পরস্পর ভালবাসা হবে, সমবেদনা হবে, একে অপরের দুঃখে দুঃখি হবে, এ সকল নেয়ামত সোসাইটিতে থাকবে, কারন কোরানের কারনে সমাজের জীবিত আছে। আর যদি কোরানে মজিদের শিক্ষা নুর আমাদের সমাজে না থাকে তখন সমাজের সকলে একে অপরের সাথে অপরিচিতের মত জীবন যাপন করবে। নামের মুসলমান ভাই ভাই হবে কিন্তু অন্তরে থাকবে ঘৃনা, ধোকা, মুনাফেকি, হিংসা। বাহ্যিক ভাবে দেখতে মানুষ হবে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা হবে জানোয়ারের মত। সুতরাং আমাদের উচিৎ কুরআনে মজিদের শিক্ষাকে সমাজে বিস্তার করা যাতে আমরা সমাজে সম্মানের জীবন অতিবাহিত করতে পারি।
সাহাবায়ে কেরাম রাতের বিভিন্ন প্রহরে কুরআন তেলাওয়াত করত, হাদীসে পাকে আছে মদিনার গলিতে রাতে কেহ যদি হাটত তাহলে সে শুনতে পেত মদিনার প্রতিটি ঘর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজে কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ শুনা যেত, মনে হত যেন ভ্রোমর গুন গুন আওয়াজ করছে।
এক সাহাবি রাতে নামাজের মধ্যে কুরআন তেলাওয়াত করছিল পাশে চৌকিতে তাঁর ছোট বাচ্চাটিও শুয়ে ছিল তিনি যখন একটু উঁচু আওয়াজে তেলাওয়াত করতেন তখন ঘোড়াটি লাফাতে থাকত, তখন সাহাবি ঘোড়া বাচ্চাকে লাথি মারবে মনে করে কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ ছোট করে ফেলতেন তখন ঘোড়াটি শান্ত হয়ে যেত। আবার যখন একটু আওয়াজ বড় করত তখন ঘোড়া আবার লাফাতে থাকত, এভাবে তিনি যখন সালাম ফিরালেন তখন তিনি দেখলেন তাঁর কাছেই সাদা কি একটা আলোর মত কিন্তু তা আসমান পযন্ত বিস্তৃত ছিল। এ ঘটনা দেখে তিনি হয়রান হয়ে গেলেন। সকালে গিয়ে নবী (আঃ) কে সব ঘটনা বললেন। তখণ নবী করিম (দঃ) ফরমালেন এটা ফেরেশতা ছিল যে তোমার কোরান তেলাওয়াত শুনার জন্য আসমান থেকে নেমে এসেছিল। যদি তুমি কুরআন পড়তেই থাকতে তাহলে মদিনার লোকজন নিজের চোখে ফেরেশতাকে দেখতে পেত।
ফেরেশতা কুরআন শুনে কিন্তু পড়তে পারে না, শুধুমাত্র জিবরাইল (আঃ) পড়তে পারেন শুনতে পারেন, জিবরাইল ফেরেশতা আমাদের নবী করিম (দঃ) এর সাথে রমজানে দউর করতেন। কিছু ফেরেশতা এমন আছেন যারা দুনিয়ার জমিনে কোথায় তেলাওয়াত হচ্ছে তা তালাশ করতে থাকে এবং যখন কোথাও বান্দা কুরআন তেলাওয়াত করেন তখন তারা সে তেলাওয়াতকারীর পাশে এসে জমা হয়ে যান এবং মনযোগ সহকারে শুনতে থাকেন,
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাদের মিসওয়াক করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। কেননা যখন কোন বান্দা সালাতে দাঁড়ায় তখন তার কাছে ফেরেশতা এসে তার পিছনে দাঁড়ায় ও কুরআন পড়া শুনতে থাকে এবং তার নিকটবর্তী হতে থাকে, এমন কি ফেরেশতা তার মুখকে তেলাওয়াতকারীর মুখের সাথে লাগিয়ে দেয়। ফলে প্রত্যেক আয়াত ফেরেশতার পেটের ভিতর প্রবেশ করে (বাইহাকী)
একবার চিন্তা করুন আপনার মুখে যদি ফেরেশতা চুমু দেয় তাহলে আপনি কতই ভাগ্য বান।
পৃথিবীতে ৭ জন ক্বারীর তরিকায় কোরআন তেলাওয়াত হয় এ ৭জন ক্বারীর মধ্যে ইমাম আছেম (রহঃ)  অনেক বড় ক্বারী, আমরা উনার নিয়মেই কুরআন তেলাওয়াত করি, তিনি মসজিদে নববীতে নামাজ পড়াতেন। উনার মুখ থেকে খুব খুশবু বের হত। যে কোন ব্যক্তি উনার পাশে বসলেই এমন আজব করা পাগল করা খুশবুতে আশ্চর্য্য হয়ে যেতেন। উনার একজন শাগরিদ উনাকে একদিন প্রশ্ন করে ফেলল হযরত আপনি মুখে কি ব্যবহার করেন যে আপনার মুখ থেকে প্রচন্ড রকমের পাগল করা খুশবু বের হয়। তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ আমার মুখ থেকে খুশবু বের হয় তবে আমি কোন কিছু ব্যবহার করিনা। উনি কথাটা প্রকাশ করতে চাচ্ছিলেন না কিন্তু উনার শাগরেদ এমনই নাছোর বান্দা যে প্রতিদিন ইমাম আছেমকে বিরক্ত করা আরম্ভ করে দিল। প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করতেন হযরত প্লিজ বলেন না আপনার মুখের এমন খুশবু বের হওয়ার রহস্য কি? অবশেষে হযরত আছেম সে শাগরেদের পিড়াপিড়িতে বলে দিলেন রহস্য কি? তিনি নিজের মুখে বয়ান করেন এক রাতে আমি স্বপ্নে আমার প্রিয় নবী (দঃ) এর দিদার লাভে ধন্য হলাম,  আমার প্রিয় আঁকা আমাকে বলেন আছেম তুমি আমার মসজিদে খুব সুন্দর করে কুরআন পড়াও আস আমি আজ তোমার ঠোটে চুম্বন করব সেদিন আল্লাহর প্রিয় হাবীব আমার প্রিয় আঁকা (দঃ) আমার ঠোটে চুম্বন খেলেন, যেদিন থেকে তিনি আমাকে চুম্বন করলেন সেদিন থেকেই আমার মুখ থেকে এমন পাগলকরা খুশবু বের হতে লাগল। সুতরাং কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করা খুবই সম্মানের বিষয়। অত্যন্ত আদব ও মহব্বতের সাথে প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত। আমরা খুশী মনে যতটুকু কুরআন পাঠ করব ততটুকু প্রতিদান আমরা পাব। এটি এমন কিতাব যার এক একটি হরফ পাঠে মানুষের নেকি হাসিল হয়। সেজন্য এরশাদ হয়েছে- (তাবাররাক বিল কুরআন ফাইন্নাহু কালামুল্লাহ) কুরানে পাক থেকে বরকত হাসিল কর কেননা এটা আল্লাহর কালাম। এটি আমাদের জিন্দেগিতে বরকতে ভরপুর করে দেয়ার মত কিতাব। জিন্দেগীর সকল পেরেশানি দুর করে দেয়। মানুষকে ইজ্জত দান করেন।মানুষের ঈমানকে মজবুত করে দেয়। তাই প্রত্যেকের উচিত এ কুরআন পড়া এবং বুঝে সে মোতাবেক আমল করা। এরশাদ হচ্ছে (খায়রুকুম মান তায়াল্লামাল কুরআনা ওয়া আল্লামা) তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে আফযল লোক সে যে কুরআন পড়ে এবং পড়ায়।
সাহাবায়ে কেরাম কিভাব কুরআন পাঠ করত তার উদাহারন পাওয়া যায় একটি ঘটনায় ঘটনাটি হল এক সাহাবি যার নাম ইবনে কাব (রাঃ) তিনি অনেক বড় আলেম সাহাবি ছিলেন। তিনি কুরআন খুব সুন্দর করে পাঠ করতে একদিন নবী (আঃ) তাঁকে বললেন তুমি আমাকে সুরা বাইয়্যেনাহ শুনাও। ইবনে কাব বলল হুযুর এ কুরআন আপনার উপরই নাযিল হয়েছে আমি কিভাবে আপনার সামনে তা পাঠ করব? নবী (দঃ) বললেন হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি পাঠ কর। নবীজির কথায় ধরনে ইবনে কাব বুঝতে পারলেন যে এটা আল্লাহর ইশারায় নবী করিম (দঃ) নির্দেশ দিচ্ছেন। তখন ইবনে কাব প্রশ্ন করলেন এয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ) আল্লাহ কি আমার নাম উচ্চারন করে এরশাদ করেছেন? নবীজি বললেন হে ইবনে কাব হ্যাঁ আল্লাহ তায়ালা তোমার নাম নিয়ে বলেছেন, যে ইবনে কাবকে বলুন সে যেন কুরআন পাঠ করেন। হে মাহবুব আপনিও শুনবেন আমি পরওয়ার দিগার ও শুনব। একবার চিন্তা করুন কুরআনে মজিদ আল্লাহর বান্দাহ পাঠ করেন আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তা শ্রবন করেন।
হাদীসে পাকে আছে দুনিয়ার কোন গায়কের গান দুনিয়ার কেহ এত মনযোগের সাথে শ্রবণ করে না যতটুকু মনযোগের সাথে আল্লাহ পাক বান্দার কুরআনে পাকের তেলাওয়াত শ্রবণ করেন। (সুবহানাল্লাহ)
মিশরের প্রখ্যাত ক্বারী আবদুল বাসেত এর নাম আপনারা সকলেই জানেন তাঁর কুরআন তেলাওয়াত শুনলে বুঝবেন কিভাবে উনার তেলাওয়াত হৃদয়ের গভিরে পযন্ত আছর করে। তাঁর কাছে একজন প্রশ্ন করলেন হযরত আপনি এত সুন্দর করে কুরআন তেলাওয়াত করেন, আপনি কি কোন দিন কুরআনের কোন মুযেজা দেখেছেন? তিনি বলেন যে হ্যাঁ আমি কয়েক বার কুরানের মুযেজা নিজ চোখে দেখেছি তা মধ্যে একটি ঘটনা হল একবার মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদলে নাসের উনার সাথে আমাকে রাশিয়া নিয়ে গেলেন, সেখানেতো মুসলমান নাই, সবাই কমিউনিষ্ট লোক। প্রেসিডেন্ট সেখানকার কাজকর্ম শেষ করে তাদেরকে বলল আমার একজন সাথি আছে সে আপনাদেরকে কিছু পড়ে শুনাবেন। তারাতো বুঝবে না তবুও আমি প্রেসিডেন্টের ইশারায় কুরআন পড়তে লাগলাম। আমি যখন তাদের সামনে ১ রুকু তাদের সামনে পাঠ করা শেষ করলাম সেখানে দেখলাম সে মজলিশে প্রায় ৫/৬ জন লোক অঝোড় ধারায় কান্না করছে। অথচ তারা হল কমিউনিষ্ট যারা আল্লাহকেও মানে না এমন লোকের অন্তরে পযর্ন্ত কুরআনের তির আশ্চর্য্যজনকভাবে বিদ্ধ হতে আমি দেখেছি। যার ফলে তাঁদের চোখের পানির ফোয়ারা বইতে শুরু হয়ে গেল। প্রেসিডেন্ট তাদের প্রশ্ন করল তোমরা কাঁদছ কেন? তারা জবাব দিল আমরাতো বুঝিনি এখানে কি বলা হয়েছে, তবে এ কালামে এমন একটা অদ্ভুত শক্তি আছে আশ্চর্য্য আকর্ষন আছে যা সোজা আমাদের অন্তরে গিয়ে আছর করেছে যার পরিনতিতে আমরা কাঁদছি। একবার চিন্তা করুন যারা আল্লাহকে মানেন না তাঁদের অন্তরে যদি এভাবে কুরআনের প্রভাব প্রকাশিত হয়, যারা ঈমানওয়ালা তাঁদের অন্তরে কেমন আছর হতে পারে একবার চিন্তা করে দেখুন, তবে তাঁর জন্য দরকার কুরআনের প্রতি মহব্বত।
আপনারা দেখবেন নদীর রাস্তা কেহ তৈরী করে দেন না নদী নিজে নিজেই নিজের রাস্তা তৈরী করে নেয়, এ কুরআনও খোদা তায়ালা রহমতের এমন এক দরিয়া যা মানুষের অন্তরে নিজেই রাস্তা তৈরী করে নেয়।
আর কুরআন বুঝা তেমন কঠিন নয় খুবই সহজ, এর ২টি লেভেল রয়েছে। শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) বলেন ১টি হল সাধারন আম জনতার লেভেল তা এমন যে ক্বারী যখন তেলাওয়াত করে তখন আম জনতা বুঝতে পারে এখন জাহান্নামের আলোচনা হচ্ছে, এখন জান্নাতের আলোচনা হচ্ছে, এটা একজন সাধারণ জনতার জন্য যথেষ্ট ২য়টি হল কুরআনের গভিরে প্রবেশ করে তা থেকে মাসালা মাসায়েল বের করে আনা। এ জন্য ওলামায়ে কেরামের জন্য মাদরাসায় ১০/১২ বছর মেহনত করতে হয়। ১৫/১৬ প্রকারের বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয় তারপর সে তফসির বুঝার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠে।এটা শুধু ওলামাদের কাজ এটা সকলের কাজ নয়।
১ম লেভেলের কুরআন বুঝার জন্য তেমন কষ্ট করতে হয় না, তা সকলেই পারে যেমন আল্লাহ তায়ালা ফরমান (ওয়ালাকাদ এয়াচ্ছারনাল কুরআনা লিজ্জিকরি ফাহাল মিম মুদ্দাকির) অথ্যাৎ আমি কুরআনকে বুঝার জন্য সহজ করে দিয়েছি, কেহ কি আছে বুঝার?। সুতরাং আল্রাহ তায়ালা বলছেন কুরআন বুঝা খুবই সহজ। এবার আসুন এর ব্যাখ্যা কি তা জেনে নিই। কুরআনতো আজকাল কম্পিউটারে এসে গেছে তাতে এক এক শব্দ গননা করা যায়, কুরআনে সকল শব্দ গননা করে দেখা গেছে এতে রয়েছে ৪৮ হাজার থেকে কিছু বেশী । আবার সেগুলির মধ্যে অনেক গুলি শব্দ এমন যে যা বার বার ব্যবহার হয়েছে। যেমন (আকিমুস সালাহ ওয়া আতুয জাকাহ) এটা কুরানে মজিদে ৭০০ বার ব্যবহার হয়েছে। আপনি ১ জায়গায় এর তরজুমা শিখে নিলে বাকী ৭০০ জায়গার তরজুমাও আপনার শিখা হয়ে গেল। তেমনি ভাবে (এয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু) ৮৮ বার ব্যবহার হয়েছে যদি ১ বার এর তরজুমা শিখেন তাহলে ৮৮ জায়গায় আর শিখতে হবে না। এভাবে রিপিট হওয়া সকল শব্দকে যদি আমরা একত্রিত করি তাহলে দেখা যায় গোটা কুরআনের প্রকৃত শব্দ হল মাত্র ২ হাজার। অথ্যাৎ ২ হাজার ডিফারেন্টস ওয়ার্ডের দ্বারা কুরানে মজিদ আল্লাহ তায়ালা বানিয়ে দিয়েছেন। আবার তার মাঝে অসংখ্য শব্দ আমাদের বাংলায় ব্যবহৃত হয় যেমন কলম, রুহ, কিতাব, জান্নাত, জাহান্নাম, কবর, দোয়া, এ সবই কুরআনের শব্দ যা আমাদের বাংলায় আমরা সচরাচর ইউজ করি। প্রভাবে প্রায় ৫ শত শব্দ আছে যা আমাদের ভাষার সাথে মিল, তাহলে বাকী থাকল মাত্র ১৫ শত শব্দ এবার বলুন ১৫ শত শব্দের তরজুমা শিখে নেয়া কি কোন কষ্টের কাজ? আমরা যদি পড়াশোনা করে করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারি তাহলে কুরানে মজিদের ১৫শত ওয়ার্ড কেন শিখতে পারব না?। যদি প্রতিদিন প্রতি নামাজের পর ১টি করে কুরআনের শব্দ শিখেন তাহলে ১ বছরে গোটা কোরান আপনার শিখা হয়ে যাবে। খুবই সহজ কুরআন শিখা ও বুঝা, তবে কোন একজন শিক্ষকের মাধ্যমে শিখাই উচিত কারন শিক্ষক ছাড়া নিজে নিজে শিখতে গেলে এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এক গ্রাম্য লোক একদিন এক জায়গায় একটি বন্দুকের গুলি পড়ে থাকতে দেখল সে সেটি নিয়ে  এক লোককে জিজ্ঞেস করল ভাই এটি কি জিনিষ, সে লোকটি তাকে বলল এটি গুলি এটি যদি আপনি হাতিকে মারেন হাতিও মরে যাবে। গ্রাম্য লোক সে গুলি পকেটে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল পথে এক কুকুর তাকে তাড়া করল সে তার পকেট থেকে বন্দুকের গুলিটি বের করে কুকুরকে মারল কারন সে তো শুনেছে এটি দিয়ে হাতিও মারা যায়, কিন্তু গুলিটি মারার পর কুকুর আরো বেশী তাড়াতে লাগল, অনেক কস্টে সে কুকুরের হাত থেকৈ বাঁচল, অনেক দিন পর সে গ্রাম্য লোকটি শহরের লোকের সাথে সাক্ষাৎ হল তখন গ্রাম্য লোকটি শহরের লোকটিকে বলল ভাই তুমি আমাকে মিসগাইড করেছ কেন? তুমি বলেছ গুলি দিয়ে হাতিও মারা যায় অথচ আমি একটি ছোট কুকুরও মারতে পারিনি। তখন শহরের লোক বুঝাল আরে ভাই শুধু গুলি মারলে কাজ হবে না এটি ব্যবহার করার একটা পদ্ধতি আছে এটি বন্দুকে ঢুকাতে হবে আর বন্দুকের টিগার চাপলে সে গুলি যখন বের হতে তা দিয়ে হাতি বাঘ সব মারা সম্ভব। তেমনি কুরআনে মজিদ এর মধ্যেও শক্তি আছে কিন্তু আমরা যদি কুরআনকে আতর গোলাপ লাগিয়ে গিলাপ পেঁচিয়ে আলমারিতে রেখে দিই সে কুরআন এর শক্তি মোজেজা আপনি কোনদিনও দেখতে পাবেন না।
আমাদের যে বডি তা হল বন্দুক আর কুরানের শিক্ষা আমাদের এ শরীরে প্রয়োগ করতে হবে তখন এ কুরআন পাগল বান্দার হাত তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহর সামনে উঠবে, মুখ থেকে দোয়া বের হবে তখন কুরানের পাওয়ার কত তখন প্রকাশ পাবে। ‍
দুনিয়ার বুকে আজো যদি কোন বান্দা কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, কুরআনের আলোতে নিজেকে সাজায়, তাহলে সে সাথে সাথে ইজ্জতের তাজ পরিধান করতে পারবে। যে জাতি এ কুরআনের শিক্ষাকে নিজেদের মধ্যে চর্চা করবে আল্লাহ তায়ালা সে গোটা জাতিকে ইজ্জাত দান করবেন।
হযরত ওমর এর ঘটনা তিনি একদিন তার লস্কর নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন পথে মরুভুমির এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলেন অনেকক্ষন কি যেন দেখছেন আর চিন্তা করছেন, তখন একজন প্রশ্ন করলেন হুযুর আপনি এ রোদে এখানে কেন দাঁড়িয়ে গেলেন? তখন হযরত ওমর (রাঃ) জবাব দিলেন আমি যখন ছোট ছিলামতখন আমার বাবার সাথে এখানে উট চড়াতে আসতাম কিন্তু আমি জানতাম না কিভাবে চড়াতেহয় আমার পিতা আমাকে বকাঝকা করত যে উমর তোমার দ্বারা কিছুই হবে না কারন তুমি সামান্য উটও চড়াতে যান না। যে উমর জাহেলি যুগে উট চড়াতে জানত না সে উমর আজ ইসলাম ও কুরআনের সদকায় আমিরুল মুমিনিন হয়ে গেছে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা এ কুরআনের সদকায় বান্দাকে দুনিয়াতেও ইজ্জত প্রদান করেন আখেরাতেরও ইজ্জত দান করেন।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন (ইকরা ওয়ারাব্বুকাল আকরাম) তোমরা কুরআন পড় আল্লাহ তায়ালা তোমাকে সম্মান দান করবেন। এ মহান কুরআন আজো আমাদের মাঝে রয়েছে এটাই আমাদের জন্য গনিমত, তাই এর কদর করা থেকে এক মুহুতও আর দেরী করা কোন মুসলমানের উচিত নয়, কারন েএমন একটি সময় আসবে যখন আল্লাহ তায়ালা আমাদের মাঝ থেকেেএ কুরআন উঠিয়ে নিবেন। তখন যদি আমরা হাজার বার চাই তবুও সে নেয়ামত আর ফিরে আসবে না।
কুরআন শুধু ঘরের মধ্যে রাখার জন্য নয় বরং একে পড়া এবং এ কুরআন মোতাবেক নিজের জীবনকে গঠন করাই হল আসল মকসদ। ডাক্তার প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন সে প্রেসক্রিপশন পকেটে রেখে ঘুরলে যেমন ফায়দা হয় না তেমনি কুরআনকে না বুঝলে কুরআনকে আমল না করলেও এর দ্বারা কোন ব্যক্তি পরিবার ও জাতি কোনদিন উপকৃত হতে পারবে না।
সাহাবায়ে কেরাম েএ কুরআনকে বুঝেছে কুরআনের আলোকে জীবন যাপন করেছে তাই তারা ছিল স্বণ মানব কিয়ামত পযন্ত তারা হয়ে আছেন আকাশের তারা। হযরত ওমর (রাঃ) এর জামানায় এক যুবতি এয়েমেন থেকে মদিনায় সফর করে আসল সাথে কিছু সমপদও ছিল একদম একাকি এক মাসের রাস্তা সফর করে আসল, হযরত ওমর সে যুবতীকে প্রশ্ন করল তুমি একাকি কেন সফর করলে? সে নিজের মজবুরির কথা প্রকাশ করল, তখন হযরত ওমর আবার প্রশ্ন করল তুমি এই যে এক মাস একাকি যুবতী মেয়ে মানুষ দিন রাত হেটে হেটে ইয়েমেন থেকে মদিনায় আসলে তুমিকি কোন সমস্যায় পড়েছ? সে মহিলা জবাব দিল আমিরুল মুমিনিন আল্লাহর কসম আমি এ এক মাস যাবত যে সফর করে আসলাম আমার মনে হল ইয়েমেন থেকে মদিনা তাইয়্যেবাহ পযন্ত সমস্ত মুসলমান সবাই একই মা বাবার সন্তান কারন আমি সকলকে আমি নিজের ভায়ের মত পেয়েছি আর সকল মুসলিম নারীকে নিজের আপন বোনের মত পেয়েছি, যার কারনে আমি মোটেও কোন সমস্যার সম্মুখিন হইনি। সুবহানাল্লাহ এটাই ছিল মুসলমানদের কুরআনের উপর আমল করার নতিজা। আজো যদি সারা বিশ্বের মুসলমান এ কুরআনকে আঁকড়ে ধরে অবশ্যই অবশ্যই এ বিশ্বে মুসলমানরা আবার সে গৌরব ফিরে পাবে। সারা বিশ্বে আবার মুসলমানদের উপর কুরআনের সদকায় রহমত বর্ষিত হতে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কুরআন পড়ার কুরআনকে মহব্বত করার কুরআনকে বুঝার চেষ্টা করা জীবনে অন্তত একবার হলেও কুরআনকে অনুবাদ ও তফসির সহ পাঠ করা এবং ‍কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সে মোতাবেক জীবনকে গঠন করা তৌফিক দান করুন আমিন।
আজকাল সকলের কাছেই এন্ডয়েট মোবাইল যেখানে আপনি ২/৩ এমবি খরচ করে কুরআনের অনুবাদ ও তফসির ডাউনলোড করতে পারেন। তফসিরে কানযুল ঈমান ও খাযায়েনুল ইরফান অথবা নুরুল ইরফান খুবই গ্রহণ যোগ্য নির্ভূল অনুবাদ সেটা ডাউনলোড করে নেয়ার পরামশ রইল। এখন থেকে শুরু করে দিন। ইনশা আল্লাহ এক সময় দেখবেন গোটা কুরআন আপনার অনুবাদ ও তফসির সহ পড়া শেষ হয়ে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.