শবে বরাত কি বন্ধ হয়ে যাবে? শবে বরাতের রাতে মসজিদে তালা লাগানো কেন?
শবে বরাতে মসজিদে তালা কেন?
সুপ্রিয় সুধী আল্লাহ তায়ালার লাখো কোটি শোকর তিনি আমাদেরকে খুব কম এবাদতের সাওয়াব কয়েকগুনি বেশী দান করেন। এ আমাদের উপর আল্লাহ তায়ালা খাছ রহমত তার হাবিবের সদকায়। সে সুবাধে আল্লাহ পাক আমাদেরকে কম সময়ে পাহাড়সম সাওয়াব দেয়ার জন্য কিছু দিন ও রাত দান করেছেন। আর সেগুলির মধ্যে একটি রাত হল শবে কদর। একটি রাত হল আশুরার রাত, একটি লায়লাতুর রাগায়েব, একটি রাত ঈদুল ফিতরের রাত, একটি ঈদুল আযহার রাত। একটি রাত শবে বরাতের রাত যা আমাদের খুবই কাছে এসে পৌঁছেছে। এটা এমন একটি বরকত ময় রাত যে রাতটি আমাদের অনেক মুসলমান ভাই পালন করেছেন কিন্তু এ বছর আমাদের মাঝে নাই। আমরা যারা এ বছর বেঁচে আছি তাদের মধ্যে হয়ত অনেকে আগামী বছর শবে বরাত আসার আগে আগেই দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে যেতে হবে। তাই এ সব রাতকে গনিমত মনে করে আল্লাহর দেয়া নেয়ামত মনে করে মন প্রাণ দিয়ে আল্লাহর এবাদত করা। আমরা বেশী বেশী নফল নামাজ পড়তে পারি, যাদের নামাজ কাজা আছেন তাদের জন্য ভাল হয় কাজা নামাজ গুলি আদায় করে ফেলা, বেশী বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করা, বেশী বেশী এসতেগফার করা, বেশী বেশী কুরআনের তেলাওয়াত, জিকির আযকার, নাতে রাসুল পাঠ, যাতে েএ মূল্যবান সময়টুকু আল্লাহর ও তাঁর প্রিয় হাবিবের জিকিরে ওয়াকফ হয়। এবং সাথে সাথে এ মাসে বেশী বেশী রোযা রাখা, সাথে সাথে ১৫ শাবানের রোযাও রাখা। যা আমাদের আঁকা (দঃ) এরশাদ করেছেন। কিন্তু আফসুস কিছু লোক আমাদের সামনে এমন কিছু নতুন কথা পেশ করছে যে শবে বরাতে এবাদত করা, ১৫ শাবান রোযা রাখা এসব কিছু বিদয়াত, এসব করলে সাওয়াব হবে না বরং গুনাহ হবে। এমনকি তারা তাদের বক্তব্যের পক্ষে কোন দলিলতো দেয় না বরং শবে বরাতের ফজিলত সংক্রান্ত যত হাদীস আছে তাদের মতে এসব হাদীস জয়িফ বা দুর্বল। মুলত তারা এটা মেনে নিয়েছে যে শবে বরাত আছে তবে শবে বরাতের হাদীসসমুহ জয়িফ। তবে জয়িফ হাদীসের ব্যপারে হকুম যা সকলেই মানতে বাধ্য তা হল জয়িফ হাদীস কোন ফজিলত প্রকাশ করার জন্য ফজিলত বণনা করার জন্য গ্রহণযোগ্য। জয়িফ হাদীস মানে এটা নয় যে নাউজুবিল্লাহ আমাদের নবীজি যা বলেছেন তা দুবল, যদি কেহ এটা বলে যে হুযুর (দঃ) এর কথা জয়িফ তাহলে সে ঈমানহারা হয়ে যাবে। কেননা মুসলমান মাত্রেই এ আকিদায় বিশ্বাসী হতে হবে যে যে কোন নবীর কোন কথাকে অসম্মান করা কুফুরি। জয়িফ মানে হল হাদীসের বণনাকারীদের মধ্যে হতে কোন একজন বর্ণনাকারীর সামান্য ত্রুটির কারনে সে রেওয়ায়েতকে জয়িফ বলা হয়ে থাকে। যেমন একটি হাদীস সাহাবী থেকে তাবেয়ী, তাবীয়ী থেকে তবে তাবেয়ী রেওয়ায়েত করল আর এদের মধ্যে ধরুন তবে তাবেয়ী যিনি হাদীসটি রেওয়ায়েত করছেন তিনি কোন ১টি সুন্নত ছেড়ে দিয়েছেন, কিংবা কোন বিষয়ে বলল আমার এটা স্মরণ নাই, এসব কারনে তাঁর থেকে বণিত হাদীসকে জয়িফ বলা হয়। সুতরাং এর দ্বারা এটা কখনো উদ্দেশ্য হতে পারে না যে মুল হাদীসের যে ভাষ্য যা আমাদের প্রিয় নবীর বানী তা জয়িফ। তাই হাদীস বেত্তাগন কোন বিষয় হারাম কিংবা হালাল সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে, কোন বিষয়কে ফরয বা ওয়াজিব হিসেবে গন্য করার জন্য এমন ধরনের জয়িফ হাদীসকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকেছেন। কোন বিষয় হালাল হারাম সাব্যস্থ করার জন্য সহিহ হাদীসকে নিতে হবে।জয়িফ হাদীস এর হকুম গ্রহণ করা যাবে না। সুতরাং জয়িফ হাদীস মতলব এটা নয় যে নাউজুবিল্লাহ নবী করিম (দঃ) এর বানী জয়িফ বরং হাদীসের রাবি বা বণনাকারীদের মধ্য থেকে কোন একজনের মামুলি ভুলের কারনে সে হাদীসকে জয়িফ বলা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু মুল হাদীসের ভাষ্য নবী করিম (দঃ) এর তাই ফজিলত বর্ণনার ক্ষেত্রে এসব হাদীসকে গ্রহণযোগ্য বলে সকল মুহাদ্দিসিন একমত। সুতরাং যে সব মুহাদ্দিস বলেছেন এসব হাদীস জয়িফ সে সব মুহাদ্দিসরাই বলেছেন ফজিলতের ক্ষেত্রে এ সব হাদীস গ্রহণযোগ্য। সুতরাং শবে বরাতের রাতে এবাদতের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে যে সব হাদীসে সে সব হাদীস যদি সনদের দিক দিয়ে জয়িফ হয় তবুও তা দ্বারা দলিল গ্রহণযোগ্য হবে। তেমনি শবে বরাতের রোযা রাখার ফজিলত বণনা সহ যে হাদীস সেটার সনদও যদি জয়িফ হয় তবুও সে হাদীস ফজিলতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হবে এবং সে হাদীসের উপর আমল করতে পারবে। এখন যে সব ভায়েরা বলে যেহেতু হাদীস জয়িফ তাই আমল করব না তাদের প্রতি প্রশ্ন যে সব মুহাদ্দিসের কথায় হাদীস জয়িফ মানছেন সে সব মুহাদ্দিসরাই বলেছেন জয়িফ হাদীস ফজিলতের ক্ষেত্রে আমলযোগ্য, তাহলে আপনারা ঐ সব মুহাদ্দিসগনের একটি কথা মানছেন অন্যটি মানছেন না। এ দ্বারা বুঝা যায় উনারা মুহাদ্দিসগনকে মানেন না বরং নিজের নফসের পুঁজা করেন। যারা বর্তমানে শবে বরাতকে অস্বিকার করছেন তারা বেশী অনুসরন করেন ইমাম ইবনে তাইমিয়াকে, ২য় জন হলেন নাসির উদ্দীন আলবানি যিনি আজ থেকে ২০ বছর আগে মৃত্যু বরণ করেছেন তিনি যদি বলেন এ হাদিস জাল, এ হাদীস জঈফ, তাই এসব লোকের যত ওয়েবসাইট আছে তাতে তারা যতই হাদীস বয়ান করুন না কেন তার শেষে অবশ্যই লিখা থাকে যে আলবানি এ হাদীসকে সহিহ বলেছেন, আলবানি এ হাদীসকে জঈফ বলেছেন।অথচ এ নাসিরুদ্দীন আলবানি হলেন এ যুগের লোক। আপনারা ইমাম বুখারীর কথা নিয়ে আসুন, ইমাম মুসলিমের কথা নিয়ে আসুন, ইমাম ইবনে হাজর আসকালানির কথা নিয়ে আসুন, ইমাম নববীর তরফ থেকে দলিল পেশ করুন। এসব বড় বড় মুহাদ্দিস বড় বড় সাহাবি তাবেয়ী তাবে তাবেয়ী সকলকে লাইন ধরে রিজেক্ট করে দিয়ে এ যুগের একজন লোক নাসির উদ্দীন আলবানি উনার কথার উপর অন্ধের মত বিশ্বাস করেন। আলবানি সহিহ বললে সেটাই সহিহ, আলবানি জঈফ বললে সেটাই জঈফ এতে বুঝা যায় তারা নিজেদেরকে গাইরে মুকাল্লিদ মুখে বলে কিন্তু মুলত তারা হলেন নাসির উদ্দীন আলবানির মুকাল্লিদকারী।
এবার দেখা যায় শবে বরাত অস্বিকারকারীদের গুরু ইবনে তাইমিয়ার রচিত (একতেদা আস সিরাতাল মুসতাকিম) আর এ কিতাব উদূতে অনুবাদ হয়েছে নাম হল সিরাতে মুসতাকিম কি তাকাজে যা দারুস সালাম পাবলিকেশন ছাপিয়েছে। এ কিতাবে ইবনে তাইমিয়া শবে বরাতের ব্যপারে লিখেছেন তিনি এ কিতাবে শাবানের ১৫ তারিখে রাত নামে হেডিংও দিয়েছেন, তিনি লিখেন অনেকগুলি হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় যে শাবানের ১৫ তারিখের রাত অনেক বড় বুজুগ রাত। মানে বরকতময় রাত। এরপর লিখেণ সলফে সালিহিন এ রাতে খাস নফল নামাজ আদায় করতেন। হাদীস গুলি যদিও দুর্বল তবুও সালফে সালেহিন বুজুর্গানে কেরাম এ সব জঈফ হাদীসের উপর আমল করেছেন এবং এ রাতে এবাদতের মাধ্যমে উৎযাপন করেছেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের মতেও এ রাত ফজিলতময় রাত।
আমরা আগেও বলেছিলাম জঈফ হাদীস ফজিলতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য এদিকে ইবনে তাইমিয়াও লিখেন আগের বুযুর্গরা সালফে সালেহিনরা এ রাতটির ফজিলতের দিকে লক্ষ্য রেখে পালন করত। এখন আমরা কি ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের কথা মানব? সালফে সালিহিন আকাবিরগনের আমল দেখব? নাকি এ যুগের কিছু হিংসুক ফিতনাবাজদের কথা মানব? এরা সব কিছুতেই শটকাট খুঁজে এরা নামাজে ফরযের পাশাপাশি সুন্নতগুলি ছেড়ে দিয়েছে, নফল সমুহ ছেড়ে দিয়েছেন। টুপি পাগড়ি সুন্নত কিন্তু এরা এসবকিছুকে গুরুত্বদেয় না। নামাজ টুপি ছাড়াও পড়তে থাকে। যদি প্রশ্ন করা হয় তারা বলে টুপি পরিধান করার দরকার কি? এটা তো ফরয না। অথচ মাসায়ালা হল কোন একটি সুন্নতকে হেয় করা কুফুরি। যদি আল্লাহর নবীর কোন সুন্নতকে কেহ হেয় করে অবহেলা করে তাহলে সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।
ঘরে ভাল ভাল কাপড় রেখে থ্রি কোয়াটার পরিধান করে নামাজ পড়ে, প্রশ্ন করলে জবাব দিবে ফরয হল নাভি থেকে হাটুর নিচে আমি ফরয ঢেকে নামাজ পড়েছি, অথচ মাসায়ালা হল যদি অন্য কোন কাপড় না থাকে তখন কমপক্ষে ফরয পরিমান সতর যা তা ঢেকে নামাজ পড়া যাবে, কিন্তু ঘরে ভাল কাপড় রেখে নামাজের জন্য থ্রি কোয়াটার এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। অফিস আদালতে যাওয়ার সময় সুন্দর সুন্দর ড্রেসসমুহ আর আল্লাহর বারেগাহে দাঁড়াতে যেমন ইচ্ছা তেমন কাপড় পরিধান করে।
এভাবে রমযানের তারাবি ২০ এর জায়গায় ৮ এ চলে এসেছে, অথচ তারা কথায় কথায় বুখারী শরীফের দাবী করে কিন্তু এ বুখারী শরীফ দ্বারা ৮ রাকাত তারাবী প্রমাণিত হয় না। তারা বুখারী শরীফের যে হাদীসকে দলিল পেশ করা সেটা হল তাহাজ্জুদ নামাজের হাদীস, তাহাজ্জুদ নামাজের হাদীসকে তারা তারাবীর নামাজের দলিল পেশ করে ২০ রাকাত তারাবীহ কে অস্বিকার করে। নাউজুবিল্লাহ। এবার তারা আবার দাবী করছে তারাবীহ বলতে কোন নামাজ নাই শুধু তাহাজ্জুদ নামাজ আছে। নাউজুবিল্লাহ। অথচ হাদীসের কিতাবে দেখা যায় প্রায় সকল মুহাদ্দিস তাদের হাদীসের কিতাবে তারাবিহ নামে অধ্যায় রচনা করেছেন। মুলত এরা নিজেরাও গোমরাহ ও বঞ্চিত তারা অন্যদেরকেও বঞ্চিত করার মিশনে লিপ্ত।
এরা নফল নামাজ পড়ে না অথচ নফল নামাজের ব্যপারে বুখারী শরীফের হাদীসে কুদসী, যখন বান্দা ফরযের পর নফলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর চোখ হয়ে যান যা দ্বারা সে দেখে, (অথ্যাৎ তার চোখে আল্লাহ তায়ালা এমন শক্তি দেন যা সে দেখে তা আমরা দেখতে পায় না) তাদের কানে আল্লাহ তায়ালা এমন শক্তি দান করেন যা সে শুনে তা আমরা শুনতে পায় না।
এরা নফল থেকে দুরে তাই তাদের মধ্য থেকে কেহ আল্লাহর অলি হতে পারে না, আর তারা অন্যদেরকেও সুন্নত ও নফলসমুহ থেকে দুরে রেখে আল্লাহর নৈকট্যবান হতে দিতে চায় না।
এরা শবে বরাতের হাদীস যে শবে বরাতের রাতে আল্লাহ তাবারাক ওয়াতায়ালা মাগরিবের পর থেকে আহ্বান করতে থাকেন কেহ কি আছ গুনাহ মাফ চাওয়ার গুনাহ মাফ চাও আমি গুনাহ মাফ করব, কেহ কি আছ, কেহ কি আছে মছিবত থেকে মুক্তি কামনা করি আমি মুক্তি দিব। ৈএ হাদীসের ব্যপারে তারা বলে বেড়ায় এ ধরনের আহ্বান তো আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন তাহাজ্জুদের সময় দিয়ে থাকেন। তারা এটা দেখে না যে প্রতিদিন আল্লাহর আহ্বান হয় রাতের শেষ প্রহরে আর শবে বরাত যেহেতু খাস রাত তাই এ রাতে আল্লাহর এ নেয়ামত বন্টন শুরু হয় মাগরিবের পর থেকে। সুবহানাল্লাহ। জবাব দেয়ার পর ওরা দাবী করবে এ হাদীস জঈফ অথচ ফজিলতের ক্ষেত্রে জঈফ হাদীসও গ্রহণ যোগ্য, যারা হাদীসকে জঈফ বলেছেন তারাই এ সুত্র বেঁধে দিয়েছেন যে জঈফ হাদীস ফজিলতের জন্য গ্রহণযোগ্য। যে মুহাদ্দিসের কথায় এরা এ হাদীসকে জঈফ বলে সে সব মুহাদ্দিসগণই এ হাদীসগুলির উপর আমল করারও হকুম দিয়েছেন।
আমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দর তরিকা বলে দিয়েছেন, যারা আল্লাহর নেক বান্দা তারাতো প্রতিদিন নফল আদায় করে প্রতি রাত তাহাজ্জুদ আদায় করে কিন্তু যারা সাধারণ মুসলমান তারাতো প্রতিদিন তাহাজ্জুদ রাতভর এবাদতে লিপ্ত হতে পারেন না সুতরাং তারা অন্তত এসব বড় বড় রাত সমুহে যদি আল্লাহর এবাদতে লিপ্ত থাকে তাহলে তারাও আল্লাহর রহমত থেকে মাহরুম হবে না। তারা অন্তত এসব বড় রাতে বেশী বেশী নফল পড়বে, কুরআন তেলাওয়াত করবে, দরুদ পাঠ করবে, সুরা ইয়াসিন পাঠ করে দোয়া করবে। আর এ সবই হল কোরআন ও হাদীসের আলোকেই আমল। অথচ আজ এরা এগুলিকে বেদয়াত বলে মানুষকে আল্লাহর ণৈকট্য হাসিলে বাঁধা প্রদান করছে।
বতমানে কিছু স্বল্পজ্ঞানী লোক জঈফ হাদীস এর জিকির করে করে এসব মোবারক রাতসমুহ থেকে মানুষকে বিরত রাখতে খুবই তৎপর। দেখা যায় উনারা শবে বরাত আসলে মানুষকে নফল এবাদতসমুহ থেকে বিরত রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেন। মসজিদসমুহে এশারের পর পরই তালা লাগিয়ে দেয়। এবং শবে বরাতে নিজেরাতো এবাদত করেই না বরং অন্যরা এবাদত করলে তাতে বাঁধা সৃষ্টি করে সমাজ ও রাষ্ট্রে ফিতনার বিজ বপন করছে। এটা হল মুসলিম জাতির জন্য বড়ই দুঃখজনক।
এছাড়া যারা শবে বরাত পালন করেন তাদের উচিৎ এ রাতে মাগরিব এশা ও ফজরের নামাজ জামায়াতে পড়া, বেশী বেশী নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত, কাজা নামাজ আদায় করা, দরুদ পাঠ করা, জিকির ও নাতের মজলিসে বসা, কবর জেয়ারত করা এসবই কাম্য কিন্তু এসব না করে ফটকাবাজি, গল্পগুজব, মোবাইল নিয়ে বেহুদা সময় নষ্ট করা হল মারাত্মক ভুল।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল ষযযন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে মহান বরকতময় রাতসমুহতে যথাযথভাবে জাঁকজমকের সাথে অন্তর লাগিয়ে আল্লাহর এবাদত করে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নৈকট্য হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
এবার দেখা যায় শবে বরাত অস্বিকারকারীদের গুরু ইবনে তাইমিয়ার রচিত (একতেদা আস সিরাতাল মুসতাকিম) আর এ কিতাব উদূতে অনুবাদ হয়েছে নাম হল সিরাতে মুসতাকিম কি তাকাজে যা দারুস সালাম পাবলিকেশন ছাপিয়েছে। এ কিতাবে ইবনে তাইমিয়া শবে বরাতের ব্যপারে লিখেছেন তিনি এ কিতাবে শাবানের ১৫ তারিখে রাত নামে হেডিংও দিয়েছেন, তিনি লিখেন অনেকগুলি হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় যে শাবানের ১৫ তারিখের রাত অনেক বড় বুজুগ রাত। মানে বরকতময় রাত। এরপর লিখেণ সলফে সালিহিন এ রাতে খাস নফল নামাজ আদায় করতেন। হাদীস গুলি যদিও দুর্বল তবুও সালফে সালেহিন বুজুর্গানে কেরাম এ সব জঈফ হাদীসের উপর আমল করেছেন এবং এ রাতে এবাদতের মাধ্যমে উৎযাপন করেছেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের মতেও এ রাত ফজিলতময় রাত।
আমরা আগেও বলেছিলাম জঈফ হাদীস ফজিলতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য এদিকে ইবনে তাইমিয়াও লিখেন আগের বুযুর্গরা সালফে সালেহিনরা এ রাতটির ফজিলতের দিকে লক্ষ্য রেখে পালন করত। এখন আমরা কি ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের কথা মানব? সালফে সালিহিন আকাবিরগনের আমল দেখব? নাকি এ যুগের কিছু হিংসুক ফিতনাবাজদের কথা মানব? এরা সব কিছুতেই শটকাট খুঁজে এরা নামাজে ফরযের পাশাপাশি সুন্নতগুলি ছেড়ে দিয়েছে, নফল সমুহ ছেড়ে দিয়েছেন। টুপি পাগড়ি সুন্নত কিন্তু এরা এসবকিছুকে গুরুত্বদেয় না। নামাজ টুপি ছাড়াও পড়তে থাকে। যদি প্রশ্ন করা হয় তারা বলে টুপি পরিধান করার দরকার কি? এটা তো ফরয না। অথচ মাসায়ালা হল কোন একটি সুন্নতকে হেয় করা কুফুরি। যদি আল্লাহর নবীর কোন সুন্নতকে কেহ হেয় করে অবহেলা করে তাহলে সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।
ঘরে ভাল ভাল কাপড় রেখে থ্রি কোয়াটার পরিধান করে নামাজ পড়ে, প্রশ্ন করলে জবাব দিবে ফরয হল নাভি থেকে হাটুর নিচে আমি ফরয ঢেকে নামাজ পড়েছি, অথচ মাসায়ালা হল যদি অন্য কোন কাপড় না থাকে তখন কমপক্ষে ফরয পরিমান সতর যা তা ঢেকে নামাজ পড়া যাবে, কিন্তু ঘরে ভাল কাপড় রেখে নামাজের জন্য থ্রি কোয়াটার এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। অফিস আদালতে যাওয়ার সময় সুন্দর সুন্দর ড্রেসসমুহ আর আল্লাহর বারেগাহে দাঁড়াতে যেমন ইচ্ছা তেমন কাপড় পরিধান করে।
এভাবে রমযানের তারাবি ২০ এর জায়গায় ৮ এ চলে এসেছে, অথচ তারা কথায় কথায় বুখারী শরীফের দাবী করে কিন্তু এ বুখারী শরীফ দ্বারা ৮ রাকাত তারাবী প্রমাণিত হয় না। তারা বুখারী শরীফের যে হাদীসকে দলিল পেশ করা সেটা হল তাহাজ্জুদ নামাজের হাদীস, তাহাজ্জুদ নামাজের হাদীসকে তারা তারাবীর নামাজের দলিল পেশ করে ২০ রাকাত তারাবীহ কে অস্বিকার করে। নাউজুবিল্লাহ। এবার তারা আবার দাবী করছে তারাবীহ বলতে কোন নামাজ নাই শুধু তাহাজ্জুদ নামাজ আছে। নাউজুবিল্লাহ। অথচ হাদীসের কিতাবে দেখা যায় প্রায় সকল মুহাদ্দিস তাদের হাদীসের কিতাবে তারাবিহ নামে অধ্যায় রচনা করেছেন। মুলত এরা নিজেরাও গোমরাহ ও বঞ্চিত তারা অন্যদেরকেও বঞ্চিত করার মিশনে লিপ্ত।
এরা নফল নামাজ পড়ে না অথচ নফল নামাজের ব্যপারে বুখারী শরীফের হাদীসে কুদসী, যখন বান্দা ফরযের পর নফলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর চোখ হয়ে যান যা দ্বারা সে দেখে, (অথ্যাৎ তার চোখে আল্লাহ তায়ালা এমন শক্তি দেন যা সে দেখে তা আমরা দেখতে পায় না) তাদের কানে আল্লাহ তায়ালা এমন শক্তি দান করেন যা সে শুনে তা আমরা শুনতে পায় না।
এরা নফল থেকে দুরে তাই তাদের মধ্য থেকে কেহ আল্লাহর অলি হতে পারে না, আর তারা অন্যদেরকেও সুন্নত ও নফলসমুহ থেকে দুরে রেখে আল্লাহর নৈকট্যবান হতে দিতে চায় না।
এরা শবে বরাতের হাদীস যে শবে বরাতের রাতে আল্লাহ তাবারাক ওয়াতায়ালা মাগরিবের পর থেকে আহ্বান করতে থাকেন কেহ কি আছ গুনাহ মাফ চাওয়ার গুনাহ মাফ চাও আমি গুনাহ মাফ করব, কেহ কি আছ, কেহ কি আছে মছিবত থেকে মুক্তি কামনা করি আমি মুক্তি দিব। ৈএ হাদীসের ব্যপারে তারা বলে বেড়ায় এ ধরনের আহ্বান তো আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন তাহাজ্জুদের সময় দিয়ে থাকেন। তারা এটা দেখে না যে প্রতিদিন আল্লাহর আহ্বান হয় রাতের শেষ প্রহরে আর শবে বরাত যেহেতু খাস রাত তাই এ রাতে আল্লাহর এ নেয়ামত বন্টন শুরু হয় মাগরিবের পর থেকে। সুবহানাল্লাহ। জবাব দেয়ার পর ওরা দাবী করবে এ হাদীস জঈফ অথচ ফজিলতের ক্ষেত্রে জঈফ হাদীসও গ্রহণ যোগ্য, যারা হাদীসকে জঈফ বলেছেন তারাই এ সুত্র বেঁধে দিয়েছেন যে জঈফ হাদীস ফজিলতের জন্য গ্রহণযোগ্য। যে মুহাদ্দিসের কথায় এরা এ হাদীসকে জঈফ বলে সে সব মুহাদ্দিসগণই এ হাদীসগুলির উপর আমল করারও হকুম দিয়েছেন।
আমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দর তরিকা বলে দিয়েছেন, যারা আল্লাহর নেক বান্দা তারাতো প্রতিদিন নফল আদায় করে প্রতি রাত তাহাজ্জুদ আদায় করে কিন্তু যারা সাধারণ মুসলমান তারাতো প্রতিদিন তাহাজ্জুদ রাতভর এবাদতে লিপ্ত হতে পারেন না সুতরাং তারা অন্তত এসব বড় বড় রাত সমুহে যদি আল্লাহর এবাদতে লিপ্ত থাকে তাহলে তারাও আল্লাহর রহমত থেকে মাহরুম হবে না। তারা অন্তত এসব বড় রাতে বেশী বেশী নফল পড়বে, কুরআন তেলাওয়াত করবে, দরুদ পাঠ করবে, সুরা ইয়াসিন পাঠ করে দোয়া করবে। আর এ সবই হল কোরআন ও হাদীসের আলোকেই আমল। অথচ আজ এরা এগুলিকে বেদয়াত বলে মানুষকে আল্লাহর ণৈকট্য হাসিলে বাঁধা প্রদান করছে।
বতমানে কিছু স্বল্পজ্ঞানী লোক জঈফ হাদীস এর জিকির করে করে এসব মোবারক রাতসমুহ থেকে মানুষকে বিরত রাখতে খুবই তৎপর। দেখা যায় উনারা শবে বরাত আসলে মানুষকে নফল এবাদতসমুহ থেকে বিরত রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেন। মসজিদসমুহে এশারের পর পরই তালা লাগিয়ে দেয়। এবং শবে বরাতে নিজেরাতো এবাদত করেই না বরং অন্যরা এবাদত করলে তাতে বাঁধা সৃষ্টি করে সমাজ ও রাষ্ট্রে ফিতনার বিজ বপন করছে। এটা হল মুসলিম জাতির জন্য বড়ই দুঃখজনক।
এছাড়া যারা শবে বরাত পালন করেন তাদের উচিৎ এ রাতে মাগরিব এশা ও ফজরের নামাজ জামায়াতে পড়া, বেশী বেশী নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত, কাজা নামাজ আদায় করা, দরুদ পাঠ করা, জিকির ও নাতের মজলিসে বসা, কবর জেয়ারত করা এসবই কাম্য কিন্তু এসব না করে ফটকাবাজি, গল্পগুজব, মোবাইল নিয়ে বেহুদা সময় নষ্ট করা হল মারাত্মক ভুল।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল ষযযন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে মহান বরকতময় রাতসমুহতে যথাযথভাবে জাঁকজমকের সাথে অন্তর লাগিয়ে আল্লাহর এবাদত করে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নৈকট্য হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
surah maun bangla translation | সূরা আল-মাউন | Noor
উত্তরমুছুন