সিজারে শিশুজন্মের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? গর্ভবতী নারীর ফজিলত।

নরমাল ডেলিভারী বনাম সিজার


এক ডাক্তার বলল ভেজাল খেয়ে খেয়ে নাকি আমাদের দেশে সিজার বেড়ে যাচ্ছে, একজন ডাক্তারের মুখের উপর বলে দিল একই ভেজালতো এ দেশের কুকুর বিড়ালও খাচ্ছে কুকুর বিড়ালেরতো বাচ্চা প্রসব করতে সিজারের প্রয়োজন হচ্ছে না, শুধু মানুষের কেন সিজারের প্রয়োজন হচ্ছে?
সুপ্রিয় সুধী!
নারীর গর্ভকালীন সময়ের কষ্ট আল্লাহর দরবারে অনেক মর্যাদা সওয়াবের কারণ হয় দীর্ঘ ১০ মাস ১০ দিন প্রতিটি দিনে এবং প্রতিটি রাতে তার জন্য রয়েছে মহামহিম পালনকর্তার পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ  বিনিময় উত্তম প্রতিদান মহান আল্লাহ বলেন আমি তো মানুষকে তার পিতা মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে এরপর পর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে’(কুরআন মাজীদ, সূরা লুকমান-৩১/১৪)
বিখ্যাত মহিলা সাহাবি হজরত সুলামা (রাজি.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুল (সা.) তাকে বলেছেনতোমাদের কেউ কি এতে খুশি নয় যে, সে যখন স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হয় এবং স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্টও থাকে তখন (এই গর্ভকালীন) সে আল্লাহর পথে সর্বদা রোজা পালনকারী সারারাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পাবে? তার যখন প্রসব ব্যথা শুরু হয় তখন তার জন্য নয়ন শীতলকারী কী কী নিয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান জমিনের কোনো অধিবাসীই জানে না সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার পরিবর্তে একটি করে নেকি দেওয়া হয় সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (অসুখ ইত্যাদির কারণে বিরক্ত করে মাকে ঘুমুতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর পথে নিখুঁত সত্তরটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব পাবে (মেশকাত শরিফ, কানযুল উম্মাল)
প্রিয় পাঠক! গর্ভবতী নারীর কষ্টের কারণে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কী অপূর্ব সওয়াব! অভাবনীয় পুরস্কার! বাবার চেয়ে মায়ের মর্যাদা বেশি হওয়ার কারণ এটাই
প্রিয় নবী (সা.)-এর কাছে একবার এক সাহাবি এসে বললেন, আমি কার সেবা করব? তিনি বললেন, মায়ের আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কার? প্রিয় নবী আবারও বললেন, মায়ের আবার সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কার? রসুল (সা.) এবারও মায়ের সেবার আদেশ দিলেন চতুর্থবার যখন সাহাবি আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কার? বিশ্বনবী (সা.) তখন বললেন, তোমার বাবার (তিরমিজি)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, মায়ের মর্যাদা বাবার চেয়ে তিনগুণ বাড়িয়ে দিলেন এটা কারণে যে, মা গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান লালন-পালনে বাবার চেয়ে বহুগুণ বেশি অবদান রাখেন
গর্ভবতী মায়ের রোযাকে ইসলামী শরীয়ত মওকুফ করে দিয়েছেন। তেমনি ভাবে দুগ্ধবতি মায়েদের রোযাকেও মওকুফ করে দিয়েছে ইসলাম।
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর রা. রাতে ছদ্দবেশে ঘোরে ঘোরে জনগণের হাল হাকিকত নিজ চোখে দেখতেন এক রাতে মদীনার উপকন্ঠে দেখলেন এক লোক তার তাবুর বাইরে পায়চারী করছে তিনি কাছে গেলেন, বুঝলেন লোকটি পেরেশানীতে আছে জিজ্ঞেস করলে সে বলল,তাবুর ভেতরে তার স্ত্রী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে এমতাবস্থায় সে কি করবে বুঝতে পারছে না খলীফা তাকে শান্তনা দিয়ে দ্রুত ঘরে গেলেন তাঁর স্ত্রী উম্মে কুলসুম ধাত্রী বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন ঘরে গিয়ে স্ত্রীকে প্রস্তুত করে নিয়ে এলেন সাথে আনলেন কিছু নাস্তা পানি
ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় কনরণীয় :
1.ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা মসজিদে নববীর ইমাম তথা অধপৃথিবীর শাসক হয়ে একজন সাধারণ নাগরিকের গর্ভবতী স্ত্রীর প্রসবকালীন সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন
.দক্ষ ধাত্রীকে (চিকিৎসককে) রোগীর কাছে নিয়ে এসেছেন সে সময়ের মোবাইল /সেটেলাইট হাসপাতালের নমুনা পেশ করেছেন
.নিরাপদে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করেছেন
.নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করেছেন

এবার আসুন বর্তমান যুগের কিছু দৃশ্য দেখা যাক-

৩১ আগষ্ট ২০১৩ প্রথম আলোতে একটি রিপোর্ট ছাপানো হয়েছে তাতে লেখা হয়েছে শিশুজন্মে অযথাই অস্ত্রোপচার! কিছু সিজার হয় উচ্চবিত্ত নারীদের ডিমান্ডের কারনে, কিছু সিজার হয় লোভি ডাক্তারদের পকেট ভারি করার কু নিয়তে, আর খুব অল্প সংখ্যক সিজার হয় প্রকৃত কারনে। সিজারের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এক সরকারী জরিপে দেখা যায় ২০০১ সালে মাত্র ২.৬% শিশু সিজারে হয়েছে, আর ২০১০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১২.২%। আর এ জরিপে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে আমাদের দেশে প্রায় ৩২% সিজার হয় অপ্রয়োজনীয়।

এর মধ্যে আবার ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্লিনিক ও হাসপাতালে এর হার প্রায় ৭১%
অনেক মা প্রসবযন্ত্রণা পেতে চান না। অনেক মা মনে করেন, স্বাভাবিক প্রসবে তার যৌনাঙ্গের ক্ষতি হবে। এসব মা অস্ত্রোপচারে আগ্রহ দেখান। গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় কিছুসংখ্যক মা স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ করিয়ে নেন।
আমার এতক্ষনের কথাগুলির মাঝে ২টি বিষয় স্পষ্ট প্রথমত অসাধু ডাক্তাররা পকেট ভারি করার জন্য ভয় দেখিয়ে অপ্রয়োজনীয় সিজার করছেন। আমাদের দেশের বেশীরভাগ ডাক্তার হলেন মুসলিম অথচ মুসলমানদের জন্য একজন প্রসুতী মাকে কিভাবে সেবা দিতে হবে সে শিক্ষা প্রেকটিকেলি দিয়ে গেছেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ)।
২য় বিষয় যেটি সেটি হল কিছু বিশেষ করে ধনীর দুলালী মায়েরা প্রসবযন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে নিজে থেকেই সিজার করে বাচ্চা জন্ম দিচ্ছেন। অসাধু ব্যবসায়ী ডাক্তারগনের বিচারতো আল্লাহ করবেন কিন্তু যে প্রসবযন্ত্রনা ভোগের কারনে মায়ের এত সম্মান ও মর্যাদা ইসলাম দিয়েছেন যে ফজিলত ইসলামী শরীয়ত বর্ণনা করেছেন। স্বইচ্ছায় যে সব মায়েরা নরমাল ডেলিভারি হবে এমন সন্তানকেও সিজার করে বের করে নিচ্ছেন তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন। আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে যে মর্যাদা সম্মান ফজিলত দিয়েছেন যে নয়নশিতলকারী অকল্পনীয় নেয়ামতের ঘোষনা দিয়েছেন আপনি কি অপ্রয়োজনে সিজার করে সে ফজিলত ও নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না? আশা করি প্রত্যেক অপ্রয়োজনে সিজারকারীনি সম্মানিত মায়েরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন। ধন্যবাদ।  

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.