জুমার খুতবা। মদীনার ইতিহাস ও ফজিলত শেষ পর্ব। Maulana Nizam Uddin Ja al haq
জিলহজ্ব মাসের শেষ খুতবা
মসজিদে নববীর ইতিহাস ফজিলতঃ
বর্তমানে মসজিদে নববী অনেক বড়, মুলত হুযুর (দঃ) এর জামানায় গোটা মদীনা শহরই মসজিদে নববীর ভিতর ঢুকে গেছে। হুযুর (দঃ) এরশাদ করেন যদি আমার এ মসজিদ বড় হতে হতে ইয়েমেন পর্যন্তও হয়ে যায় তবুও এটি আমারই মসজিদ হবে। সুতরাং বর্তমানে মসজিদে নববী হুযুরের সেই ছোট্ট মসজিদ নাই তবুও এর গোটা যে বিশাল এরিয়া আছে বর্তমানে পুরাটাই মসজিদে নববী হিসেবেই গন্য এর এর যে কোন অংশেই আপনি নামাজ পড়লে মসজিদে নববীর ফযিলত প্রাপ্ত হবেন। তবে আপনারা ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন হুযুরের জামানায় মসজিদে নববীর যতটুকু সীমানা ছিল সে সীমানা গুলিতে যে সব পিলার আছে তাতে গোল্ডেন কালারে লেখ আছে (হাজা হুদুদে মসজিদে নববী (দঃ) । ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক বিন মারওয়ান এর জামানায় মসজিদে নববী সম্প্রসারণ করার স্বার্থে হুযুর (দঃ) এর রওজার আশে পাশে উম্মাহাতুল মুমিনিনগনের যে সব ঘর যার জিকির কুরানে রয়েছে এবং সুরাতুল হুযরাত নামে গোটা ১টি সুরা নাজিল হয়েছে সে সব হুজরা মোবারকসমুহ ভেঙেগ ফেলা হয়, বর্তমানে যদি কেহ মসজীদে নববীতে জেয়ারতের সুযোগ হয় সেখানে মিউজিয়াম আছে তাতে সে সব ঘরসমুহের ডামি বানানো আছে যা দেখলে বুঝতে পারবেন হুযুরের ঘরসমুহ কতইনা সাদাসিদা ছিল।
সুলতান নুরুদ্দীন (রহঃ) এর সময়কার ঘটনা মহানবীর লাশ চুরী
সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী (রহঃ) এর সময়কার একটি ঘটনা যা আকাবিরে মুহাদ্দিসিন তাদের স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী (রহঃ) তাঁর যযবুল কুলুবেও এ ঘটনা নকল করেছেন।
সুলতান নুরুদ্দীন (রহঃ) এর ব্যপারে বর্ণিত আছে হযরত ওমর বিন আবদুল আজিজের পর একজন সফল মুসলিম রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সুলতান নুরুদ্দীন এর নাম প্রথমে চলে আসে। তিনি খুব বেশী দুরুদ শরীফ পাঠ করতেন। তাহাতাহাজ্জুদ গুজার ছিলেসারা দুনিয়ার এত মুসলিম রাষ্ট্র্রপ্রধান থাকা সত্বেও হুযুর (দঃ) সুলতান নুরুদ্দীনের স্বপ্নে আগমন করলেন এবং তাকে স্বপ্নে ২ জন লোকের চেহেরা দেখানো হল, এবং ফরমালেন আমাকে এ দুইজন লোক থেকে হেফাজত কর।
সুলতান নুরুদ্দীন তাঁর উজিরের সাথে যখন এ স্বপ্নের কথা আলোচনা করলেন উজির বললেন চলুন আমরা মদীনার দিকে ১৬ হাজার সৈন্য নিয়ে রওয়ানা দিলেন, সুলতান নুরুদ্দীন বললেন এ কথা কাউকে প্রকাশ করা যাবে না, সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা করতে হবে, সুলতান নুরুদ্দীন যখন মদীনায় পৌঁছেন দেখেন মদীনায় গত রাতে ভুমিকম্প হয়েছে প্রচুর বৃষ্টিপাতও হয়েছে, লোকজন মদীনা শরীফে ভুমিকম্প হওয়ায় খুবই পেরেশান, তিনি মদীনার যত জেয়ারতকারী আছেন সকলকে দাওয়াত দিলেন এবং সকলকে নিজের হাতে উপহার বন্টন করলেন, কিন্তু সুলতান নুরুদ্দীন স্বপ্নে দেখা সে ২ জন লোককে দেখলেন না, তিনি জিজ্ঞেস করলেন আর কেউ কি বাকী আছেনে যারা আমার দাওয়াতে আসেনি। তখন লোকজন বলতে লাগল ২ জন বুযুর্গ আছে তারা রাত দিন এবাদতে মশগুল থাকে, সুলতান নরুদ্দীন নিজেই উনাদের সাথীদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন তাদের ঘরে ঢুকে দেখলেন সে ঘরটি হুযুর (দঃ) এর রওজার খুবই নিকটে ছিল, সুলতান নুরুদ্দীন তাদের দেখেই বলে উঠলেন এরাই সে লোক যাদের চেহেরা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। অতঃপর মদীনার প্রশাসনিক লোকজনকে খবর দেয়া হল তারা এসে সে ঘর যখন তালাশ করা আরম্ভ করল দেখা গেল তারা যে বিছানায় ঘুমাতো সে বিছানার নিজে বড় এক পাথর সে পাথর সরানো হলে দেখা গেল একটি সুরঙ্গ নাউজুবিল্লাহ। সে সুড়ঙ্গ তারা ৩ বছর যাবৎ করে আসছিল প্রতি রাতে অল্প অল্প করে মাটি তুলে তারা থলেতে ভরে জান্নাতুল বাকী জেয়ারতের নামে সেখানে রেখে আসত, রাতের অন্ধকারে করে আসছিল তাদের উদ্দেশ্য ছিল হুযুর (দঃ) এর শরীর মোবারক রওজা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, তারা প্রায় হুযুরের রওয়ার একেবারে নিকটে পৌঁছে গেলে ভুমিকম্প শুরু হয়ে যায় এবং তারা সে রাতে ফিরে আসে, আর পরের দিনই তারা গ্রেফতার হয়। সুবহানাল্লাহ। এ ঘটনার পর সুলতান নুরুদ্দীন এত বেশী কান্না করলেন, কারন সারা দুনিয়ায় অসংখ্য মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান আছেন কিন্তু হুযুর (দঃ) উনাকেই এ কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন। ৫৫০ হিজরী সনে এ ঘটনা সংগঠিত হয় হযরত নুরুদ্দীন জঙ্গীর মাজার দামেস্কে অবস্তিত।
গুনাহ মাফের জন্য হুযুরের দরবারে হাজিরি আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
(ওয়ালাউ আন্নাহুম ইজ জালামু আনফুসাহুম জাউকা ফাসতাগফারুল্লাহা ওয়াসতাগফারা লাহুমুর রাসুলা লাওয়াজাদুল্লাহা তাওয়্যাবার রাহিমা)
অর্থ্যাৎ যখন তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করে তখন তারা আপনার নিকট এলে ও আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করলে এবং রাসুলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইলে তারা আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালুরুপে পাবে।
অনেকে বলতে পারে এ আয়াত হুযুরের জীবদ্ধশায় কিন্তু সাহাবাদের আমল থেকে আমরা জানতে পারি এ আয়াত হুযুরের ইন্তেকালের পরও কার্যকর যেমন হাদীস শরীফে আছে-
এক আরাবী মসজিদে নববী শরীফে এসে হুযুর (দঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করতে চায়, সাহাবাগন তাকে সামনে যেতে বলে তিনি সামনে যেতে যেত একদম হুযুরের রওজার পাশে চলে আসে, সেখানে হযরত্ আলীকে সে আরাবী হুযুরের সাথে সাক্ষাতের দরখাস্ত করে আলী (রাঃ) সে আরাবীকে হুযুরের কবরে আনোয়ারকে দেখিয়ে দেয়, মুলত সে আরাবী জানত না হুযুর (দঃ) এর বেছাল হয়েছে, সে যখন দেখল হুযুর এর কবর তখন সে এত বেশী কান্না করল যে কাঁদতে কাঁদতে সে বেহুশ হয়ে পড়ে গেল, যখন হুশ ফিরে আসল সে উঠে চলে যাচ্ছিল তখন হুযুরের কবরে আনোয়ার থেকে আওয়াজ আসল (ক্বাদ গুফিরা লাকা) তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
নবীজির ইন্তেকালের পর রওজা মোবারকের প্রতি সাহাবাদের আদব কেমন ছিল?
হযরত বেলাল ও নবীজির রওজাঃ হযুর (দঃ) যখন ইন্তেকাল করলেন হযরত বেলাল (রাঃ) নবীর বিরহ সহ্য করতে না পেরে মদীনা থেকে শাম দেশে চলে গেলেন, বেশ কয়েম মাস পর তিনি মদীনায় হুযুরের জেয়ারতে আসলেন, বেলালকে দেখে হযরত আবু বকর (রাঃ) নবীর সামনে হযরত বেলাল যে আযান দিত সে আযান দেয়ার অনুরোধ করলেন, কিন্তু বেলাল অপারগতা প্রকাশ করলেন বললেন হে আমিরুল মুমিনিন আমি যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলতাম তখন হুযুরের চেহেরার দিকে দেখে দেখে বলতাম এখন যখন এ কলমা পড়ব হুযুরের চেহেরা দেখতে পাব না তখন আমি আর হুশ ঠিক রাখতে পারব না, কিন্তু সে সময় ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন হুজরা থেকে এসে গেলেন তারা নবীজির কলিজার টুকরা নাতি, তারা যখন অনুরোধ করতে রাগল চাচা আমার নানা জানের সামনে আপনি যে আযান দিতেন সে আযানটা একটাবার দেন, তখন হযরত বেলাল আযান দেয়া শুরু করলেন বেলাল এর কন্ঠ শুনে মদীনায় হৈচৈ পড়ে গেল সকলে দৌঁড়ে দৌঁড়ে মসজিদে নববীর দিকে ছুটে আসল যখন হযরত বেলাল আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলাল্লাহ বলছিল তখন গোটা মদীনা শহরে মসজিদে নববীতে এমন কান্নার রোল পরে গেল মনে হচ্ছিল আজই হুযুর (দঃ) ইন্তেকাল করেছেন, আর বেলালও কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে পড়ে গেল আযান শেষ করতে পারল না।
এমনই ছিল সাহাবাদের মহব্বত ও ভালবাসা।
আবু আইয়ুব আনসারীর কান্নাঃ হযরত মারওয়ান বিন হাকাম দেখলেন এক লোক নবীজির রওজার পাশে বসে বসে জারো কাতার কান্না করছেন তিনি তাকে পিছন থেকে ধরলেন বুঝাতে চাইলেন এখানে কাঁদিও না, তিনি মুখ ফিরালেন মারওয়ান দেখলেন যিনি কাঁদছেন তিনি হলেন হুযুরের সাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আনসারী, তখন আবু আইয়ুব বললেন ( ইন্নি লাম আতিল হাজর, ওয়ালাম আতিল লুবান, ইন্নামা জিইতু রসুলাল্লাহে ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম) অথ্যাৎ আমি কোন পাথর কিংবো কোন ইটের কাছে বসিনি আমি রসুলুল্লাহর কাছে এসেছি।
মদীনায় এজিদের হামলা ও হযরত সাঈদ বিন মুসায়্যেব (রাঃ)
এজিদী বাহিনি মসজিদে নববীতে কারবালার ঘটনার পর হামলা করে মসজিদে নববীতে তারা তাদের ঘোড়া বাঁধে, এজিদি বাহিনির ভয়ে কেহ মসজিদে নববীতে আসতে পারত না, হযরত সাঈদ বিন মুসায়্যেব (রাঃ) বলেন আমি পাগলের বেশ ধরে মসজিদে নববীতে অবস্থান করছিলাম এজিদি বাহিনি আমাকে পাগল ভেবে ছেড়ে দেয় আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যখনই নামাজের সময় হত তখন হুযুর (দঃ) এর রওজা মোবারক থেকে আমি আযানের আওয়াজ শুনতাম।
নবীর রওজায় উচ্চ আওয়াজঃ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন (লা তারফাউ আসওয়াতাকুম ফাউকা ছাউতিন নবিয়্যি) তোমরা তোমাদের কন্ঠস্বর নবীর আওয়াজের উপর উচ্চ করিওনা) এ আয়াতের হকুম নবীর বেছালের পরও মওজুদ, তাই খেয়াল করবেন মদীনা শরীফের মধ্যে একটা নিস্তব্দতা বিরাজ করে। শোর চিৎকার খুবই কম।
একদিন এক লোক হুযুরের বারেগাহের পাশে বড় আওয়াজে কথা বলছে দেখে হযরত ওমর (রাঃ) তাকে ধমকি দিলেন। সুবহানাল্লাহ।
মদীনায় সেলফিঃ মুলতঃ নবীজির রওজা হল অত্যন্ত আদবের স্থান, এখানে সকাল সন্ধ্যা ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রতিদিন হাজিরি দেন, যেখানে দুনিয়ার বড় বড় ওলিআল্লাহগন পর্যন্ত অত্যন্ত আদবের কারনে চোখ তুলতে সাহস করেনা, সেখানে আজ আমরা গিয়ে নবীর রওজার সামনে ছবি তুলি ভিডিও বানিয়ে থাকি, নাউজুবিল্লাহ।
হাদীসঃ হুযুর (দঃ) এরশাদ করেন (তুরাদু আলাইয়্যা আমালাকুম) তোমাদের আমলসমুহ আমার কাছে পেশ করা হয় যদি তাতে ভাল দেখি আমি খুশিহই এবং শোকর আদায় করি, আর যদি খারাপ দেখি তাহলে আমি গুনাহ মাফ চাই।
সুতরাং আমাদের আমল যে নবীর কাছে পেশ করা হয়, যে নবীর রওজায় গিয়ে মাফ চাইলে নবীও যদি আমাদের জন্য মাফ চান তাহলে আল্লাহ গুনাহ মাফ করে দিবেন বলে ঘোষনা করেছেন তখন আমাদের প্রত্যেকের উচিত সে দরবারে অত্যন্ত আদব বজায় রাখা এবং সেখানে নিজের গুনাহ সমুহ ক্ষমা করানোর জন্য বার বার হাজিরি দিয়ে গুনাহ মাফ চাওয়া, যদি একবার হুযুরের নজরে করম পড়ে যায় তাহলে আপনার বেড়া পার।
নবীজির রওজায় কোন দিকে ফিরে দোয়া করা উচিত?
আব্বাসীয় খেলাফতের বাদশা আবু জাফর মনসুর হযরত ইমাম মালেক (রহঃ) প্রশ্ন করল আমি কি নবীজির রওজার সামনে নবীজির চেহেরার দিকে ফিরে দোয়া করব নাকি কেবলার দিকে ফিরে দোয়া করব?
ইমাম মালেক (রহঃ) এ প্রশ্নে জবাব দিলেন (ওয়ালিমা তাছরিফু? ওয়াজহাকা আনহু?) তুমি হুজুরের দিক থেকে নিজের চেহেরা কিভাবে ফিরিয়ে নিবে? (ওয়াহুয়া ওয়াছিলাতুকা ওয়া ওয়াছিলাতু আবিকা আদম আলােইহিস সালাম) তিনি তোমারও অছিলা তোমার বাবা আদম (আঃ) ও অছিলা। (বাল ইসতাকবালহু) সুতরাং তুমি হুযুরের দিকে নিজের চেহেরা ফিরিয়ে নাও হুযুরের চেহেরাকে নিজের কেবলা বানিয়ে নাও। আল্লাহ তোমার জন্য হুযুরের শাফায়াত কবুল করবেন
কাবা দামী হয়েছে নবীর কারনে।
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاء فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّواْ وُجُوِهَكُمْ شَطْرَهُ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوْتُواْ الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে। [ সুরা বাকারা ২:১৪৪ ]
মুয়াত্ত মালেক ১৭০০ নং হাদীস
হযরত ওমরের আকিদা মদীনা আফযল, যদি কেহ বলত মক্কা মদীনা থেকে আফযল তখন তিনি তাকে ডাকাতেন, হযরত আবদুল্লা বিন আয়য়াশ (রাঃ) কোন কাজে হযরত ওমরের কাছে আসলে তিনি বলেন তুমি কি মদীনা থেকে মক্কা আফযল বল? তখন আবদুল্লাহ বিন আয়য়াশ বলেন আমি শুধু মক্কাতে কাবা ঘর আছে সেটা বলি।
অথ্যাৎ হযরত ওমর (রাঃ) কেহ মদীনা থেকে মক্কা আফযল বললে তা পছন্দ করতেন না।
মদীনায় ডাবল বরকতের দোয়া
হযরত আনাস রা.বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ত্তয়াসাল্লাম মদীনার জন্য এই বলে দু’আ করেছেন, ‘ হে আল্লাহ! মক্কায় তুমি যে বরকত দান করেছ মদীনায় তার দ্বিগুণ দান কর।’ বুখারী ১/২৫৩
মক্কার জন্য হযরত ইবরাহিম (আঃ) বরকতের দোয়া করেছেন আর মদীনার জন্য আমাদের নবী বিশ্বনবী সকল নবীদের সরদার দোয়া করেছেন আল্লাহ যেন মক্কা থেকে মদীনায় যেন ডাবল বরকত দান করেন।
ঈমান মদীনায় ফিরে যাবে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ الإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا "
মুসলিম- আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ সাপ যেমন সংকুচিত হয়ে আপন গর্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তদ্রুপ ইসলামও সংকুচিত হয়ে মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭২, ইসলামিক সেন্টারঃ ২৮২)
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় মদীনা হল ঈমানের বাড়ী তাই কেয়ামতের আগে নিজ বাড়ীতে ঈমান ফিরে যাবে।
ঈমান মক্কায় না গিয়ে মদীনায় কেন যাবে?
ওলামায়ে কেরাম এ প্রশ্নের জবাবে বলেন-কারন মদীনায় এমন একটা স্থান আছে যা কেয়ামতের দিন ধ্বংস হবে না কারন সেটি হল জান্নাতের টুকরা, আর সে টুকরাতে গিয়ে ঈমান শেষ আশ্রয় গ্রহণ করবে। আর সে জান্নাতের টুকরাটি হল বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীস (মা বাইনা বাইতি ওয়া মিমবরি রাউজাতুন মিন রিয়াজিল জান্নাহ) আমার ঘর ও মিম্বরের মাঝে স্থান টি জান্নাতের একটি বাগান।
এ হাদীস থেকেও বুঝা যায় পৃথিবীর বুকে শুধু একটাই জান্নাতের বাগান আছে আর তা হল মদীনা নবীজির ঘর ও মিম্বর এর মাঝে।
রওজা শরীফের মাটি সবচেয়ে আফযল
হুযুরের সম্মানিত শরীর মোবারকের সাথে যে মাটি লেগে আছে তা তামাম জায়গা থেকে পাক সকল ওলামায়ে হক এ কথার উপর একমত। তবে মক্কা ও মদীনার মধ্যে কোন শহর আফযল এ ব্যপারে ওলামাদের মধ্যে মতপাথক্য আছে। কোন কোন ওলামা বলেছেন মক্কা আফযল কোন কোন ওলামা বলেছেন মদীনা আফযল। এক সাগরেদ তার উস্তাদকে প্রশ্ন করল হুযুর সবচেয়ে আফযল জায়গা যদি মদীনা হয় তাহলে আমরা জান্নাতে যাওয়ার জন্য কেন আমল করব? তখন উস্তাদ জবাব দিলেন হুযুর যখন মক্কায় ছিল তখন মক্কা আফযল ছিল এখন মদীনায় আছে এখন মদীনা আফযল আর হুযুর যখন জান্নাতে চলে যাবেন তখন জান্নাত আফযল হয়ে যাবে।
মোট কথা ওলামায়ে কেরাম গনের মধ্যে এ ব্যপারে মতানৈক্য আছে মক্কা আফযল নাকি মদীনা আফযল, কিছু আলেম এর মতে মক্কা আফযল আর কিছু আলেম এর মতে মদীনা আফযল।
তবে পৃথিবীর সমস্ত ওলামায়ে কেরাম এর মতে সারা দুনিয়ার তথা কুল কায়েনাতের মধ্যে সবচেয়ে আফযল জায়গা হল যে জায়গা টুকুতে আমাদের প্রিয় নবীর শরীর মোবারক লেগে আছে। যে অংশ টুকুতে হুযুরের পবিত্র শরীর মোবারক দাফন করা হয়েছে সে কবরে আনোয়ারের টুকরা টুকু সকল ওলামায়ে কেরাম গনের ঐক্যমতে সবকিছু থেকে আফযল।
যেমন
১। তফসিরে রুহুল মাআনীর ১৩ খন্ডের ১১১ পৃষ্ঠায় আল্লামা আলুসী (রহঃ) সুরা দোখানের তফসীর করতে গিয়ে লিখেন।
البقعة التي ضمته صلّى الله عليه وسلّم فإنها أفضل البقاع الأرضية والسماوية حتى قيل وبه أقول إنها أفضل من العرش
জমিনের সে টুকরা যা নবী (দঃ) এর সাথে লেগে আছে, তা জমিন ও আসমানের সকল জায়গা থেকে আফজল। এমনকি তা আল্লাহর আরশ থেকেও আফজল।
২। আল মুনতাকা শরহে মুয়াত্তা ৩য় খন্ডের ২০৯ পৃষ্ঠায় একটি হাদীস লিখেন
কাউলুহু ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম
وَقَوْلُهُ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – مَا عَلَى الْأَرْضِ بُقْعَةٌ مِنْ الْأَرْضِ أَحَبُّ إلَيَّ مِنْ أَنْ يَكُونَ قَبْرِي بِهَا مِنْهَا ظَاهِرُهُ تَفْضِيلُ الْمَدِينَةِ عَلَى مَا سِوَاهَا مِنْ الْأَرْضِ وَلِذَلِكَ أَحَبَّ أَنْ يَكُونَ قَبْرُهُ بِهَا
রসুলুল্লাহ (দঃ) এরশাদ করেন মদীনার যে অংশে আমার কবর হবে তার চাইতে সারা দুনিয়ার কোন জমিনের টুকরা আমার কাছে পছন্দীয় নয়। অর্থ্যাৎ এ হাদীস দ্বারা রাসুলুল্লাহ (দঃ) এর মতামতও পাওয়া যায় যে সারা জাহানের মধ্যে আল্লাহর নবীর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হল মদীনার সে অংশ যে অংশে হুযুরের কবর মোবারক।
১টি গুরুত্বপূর্ণ নুসকা
আল্লাহ তায়ালা বলছেন (লা উকছিমু বিহাজাল বালাদ) হে নবী আপনার এ শহরের কসম, (ওয়া আনতা হিল্লুন বিহাজাল বালাদ) যেহেতু েএ শহরে আপনি অবস্থান করছেন।
বুঝা গেল কোন শহর ফজিলতময় হল নবীর অবস্থানের দ্বারা এখন সে নবী যদি সে শহর ছেড়ে চলে যায় অন্য শহরে চলে যায় স্বাভাবিক ভাবে যার কারনে েএত ফজিলত তিনিই যদি সেখান থেকে অনত্র চলে যান তিনার সাথে সাথে সে ফজিলতও চলে যাবে,
একটি সামান্য উদাহার দিলে বিষয়টা আরো ক্লিয়ার হবে
মসজিদে সবচেয়ে ফজিলত বেশী হল প্রথম কাতারে, এখন ইমাম সাহেব যে স্থানে আছেন তার পিছনের যে কাতার সেটিই হল প্রথম কাতার, এখন ইমাম সাহেব যদি ২য় তলায় চলে যান তখন সেখানে ইমাম যেখানে দাঁড়াবেন তার পরের কাতারই হবে সবচেয়ে বেশী ফজিলত, যদি ইমাম ছাদে চলে যায় তখন ইমাম যাওয়ার সাথে সাথে সে ফজিলত ছাদে চলে যাবে
৩। ইমাম ছামহুদ্দী (রহঃ) এর খোলাছাতুল ওয়াফার ১ম খন্ডের ৬৩ পৃষ্ঠা
৪। ইমাম ইবনে আকিল (রহঃ) যাকে জ্ঞানের সমুদ্র বলা হয় তিনি তার রচিত কিতাব সির আলামুন নুবুলা ১৯ তম খন্ডের ৪৪৩ পৃষ্ঠায় লিকেন আল্লাহর কসম রসুলের রওজায়ে আনওয়ারে যে অংশ তাঁর শরীর মোবারকের সাথে লেগে আছে তার আরশের চাইতেও আফযল। কারন রওজায়ে এমন একটি পবিত্র শরীর আছে তা যদি ২ জাহানের বিপরীতে ওজন করা হয় সে শরীর মোবারকই বেশী ওজন হবে।
৫। ইমাম ইবনুল কইয়ুম ইনি হলেন বিনে তাইমিয়ার সাগরেদ, তার কিতাব বাদায়েউল ফাওয়ায়েদেও বর্ণনা করেন।
৬। ইমাম কাজী আয়াজ আল মালিকি (রহঃ) তার কিতাবুস শিফা ২য় খন্ড ৯১ পৃষ্ঠায় লিখেন (ওয়ালা খিলাফা আন মাউদাআ কবরিহি আফদালু বিকাঈল আরদ) এ কথার উপর সকলে একমত যে বাকী সব জায়গা থেকে রাসুলের রওজা আফজল।
৭। কাজী আয়াজ এর কথাকে সমর্থন দিয়ে মুসলিম শরীফের শরাহ ৯ম খন্ড ১৬৩ পৃষ্ঠায় ইমাম নববী (রহঃ) লিখেন। যে
এ কথার উপর সকলে একমত যে বাকী সব জায়গা থেকে রাসুলের রওজা আফজল।
তেমনি ভাবে আরো অসংখ্য কিতাবে এটিকে অত্যন্ত মজবুত ভাবে দলিল সহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যাতে তামা জাহানের সকল ওলামায়ে কেরাম একমত যেমন
৮।ইমাম শিহাব উদ্দীন আহমদ তার নাছিমুর রিয়াজ শরহে শেফার ৫ খন্ডের ১২১ পৃষ্ঠার মধ্যে লিখেছেন
৯।ইমাম নববীর আরো ১টি কিতাব আল মাজমু লিন নববী ৮ম খন্ড ৪৭৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন
১০।ইমাম তকিউদ্দীন সুবকী তার কিতাব তানজিলুস সাকিনার মধ্যে লিখেন
মসজিদে নববীর পিলার (উসতুয়ানা) পরিচিতি
মসজিদে নববীতে দেখবেন হুযুর (দঃ) এর রওজা মোবারকের কাছাকাছি আশা পাশে যে সব পিলার আছে সে সব পিলারের উপর সবুজ রং এর উপর গোল্ডেন কালারের কিছু লেখা আছে তাতে পিলার সমুহের নাম এসব নাম ও পিলারের সাথে মসজিদে নববীর কিছু ঘটনা জড়িত আছে।
উসতুয়ানায়ে সারির: সারিরুন অর্থ হল খাট, পালং এ পিলারটি আপনি যদি মসজিদে নববীতে গিয়ে হুযুরের রওজার পাশে যান এবং কেবলার দিকে আপনার মুখ হয় তাহলে আপনার ডান দিকে প্রথম ১টি পিলার দেখতে পাবেন তাতে লেখা আছে উসতুয়ানায়ে সারির। এখানে হুযুর (দঃ) এতেকাফ করতেন আর এখানে হুযুরের বিছানা বা খাট স্থাপন করা হত তাই এখানের পিলারটির নাম করণ হয়েছে উসতায়ানায়ে সারীর।
উসতুয়ানায়ে উফুদঃ উসতুয়ানায়ে সারির এর সামান্য পিছনে আসলে আরো ১টি পিলার রয়েছে যার নামকরণ করা হয়েছে উসতুয়ানায়ে উফুদ। হুযুর (দঃ) এর জামানায় হুযুরের সাথে অন্যান্য কবিলা বা দেশ থেকে কোন দল উপদাল যখন দেখা করতে আসত তাদের সাথে হুযুর (দঃ) এখানে সাক্ষাৎ করতেন কথা বলতেন।
উসতুয়ানায়ে আলীঃ উসতুয়ানায়ে উফুদের পাশে অন্য একটি পিলার তার নাম উসতুয়ানায়ে আলী, এ পিলার যেখানে সেখানে হযরত সৈয়্যূদুনা হযরত আলী (রাঃ) হুযুরের বডি গার্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকতেন।
উসতুয়ানায়ে তওবাঃ আরো একটু ডানে আসলে ১টি পিলার যার নাম উসতুয়ানায়ে তওবা, যা হযরত আবু লুবাবা (রাঃ) এর ঘটনা যিনি নিজেকে এ পিলারের সাথে বেঁধে ফেলেছিলেন এবং কুরানে মজিদের আয়াত নাজিল হয়েছিল।
উসতুয়ানায়ে আয়শা সিদ্দিকাঃ নবী করিম (দঃ) একদিন এরশাদ করলেন আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা আছে যে ব্যক্তি সে স্থানে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়বে এবং দোয়া করবে তার সে দোয়া বাতিল হবে না, অবশ্যই কবূল হবে, সাহাবাগন খুবই আকাংখা প্রকাশ করল সে জায়গাটি সম্পর্কে জানার জন্য, সকলের মনে একটা আকাংখা সৃষ্টি হল, কিন্তু হুযুর সে স্থানটি কোনটি তা না বলে হুযুর (দঃ) নিজের হুজরা মোবারকে তশরীফ নিয়ে গেলেন, কিছুক্ষন পর আয়শা সিদ্দিকা বাহিরে এসে একটি স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া আরম্ভ করে দিলেন, তখন সাহাবাগন বুঝতে পারলেন এটাই সে জায়গা যেটির কথা কিছুক্ষন আগে হুযুর (দঃ) বলেছেন। সে স্থানে ১টি পিলার আছে তার নামকরণ করা হয়েছে উসতুয়ানায়ে আয়শা।
উসতুয়ানায়ে হান্নানার ঘটনাঃ
হুযুরের জীবদ্ধশায় তিনি এক খেজুর গাছের খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে খুতবা দিতেন, এক সাহাবী একদিন ১টি কাঠের মিম্বর নিয়ে এলেন হুযুর সে মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে লাগলেন, হঠাৎ উটের বাচ্চা যেমন তার মাকে হারিয়ে করুন সুরে কান্না করে সেরকম কান্নার আওয়াজ আসতে লাগল সকল সাহাবা আশ্চর্য্য হয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগল কে কাঁদছে বুঝতে পারছিলনা, হুযুর (দঃ) মিম্বর থেকে নেমে সে খুঁটির কাছে গিয়ে সে খুঁটিটি জড়িয়ে ধরলে এমন ভাবে হেচকি দিতে দিতে সে খুঁটিটি শান্ত হল যেমন কান্নারত সন্তানকে মা কোলে নিলে শান্ত হয়। হুযুর সে মরা খুঁটির সাথে কথা বললেন তাকে জিজ্ঞেস করলেন যদি তুমি চাও আমি তোমাকে মদীনার বাগানে লাগিয়ে দিতে পারি তুমি ফল ফুলে ভরপুর হবে অথবা তুমি যদি চাও আমি তোমাকে জান্নাতের বাগানে লাগিয়ে দিতে পারি সেখানে নবী ছিদ্দিকগন জান্নাতীগন তোমার ফল খাবে, খেঁজুর খুঁটি ২য় অপশন পছন্দ করল অতঃপর হুযুর (দঃ) সে খুঁটিটিকে মিম্বরের সামনে মাটি খুঁড়ে সেখানে দাফনের ব্যবস্থা করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ।
হায় হায় উসতুনে হান্নানা একটা খেজুর গাছের নাম
যাকে ধরে খুতবা দিতেন রাসুলে আকরাম (২)
ও ভাই নবীর বিরহে গাঁছ কাঁদিতে রহে
হতভাগ হইল যত সাহাবা একরাম
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরক হুযুর (দঃ) এর রওজা মোবারক জেয়ারতের সৌভাগ্য নসিব করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই