জুমা খুতবা। জিলহজ্ব-৩। আল্লাহর জিকিরের ফজিলত ও ঘটনা। Maulana Nizam Uddin...





জিলহজ্ব মাসের ৩য় খুতবা। আল্লাহর জিকির
ও জিকিরের ৭০টি আশ্চর্য্যজনক ফজিলত ও অলৌকিক ঘটনাবলী

(ফাজকুরুনি আজকুরুকুম)
মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরানে বান্দাকে এরশাদ করছেন বান্দা তোমরা আমার জিকির কর আমি তোমাদের জিকির করব। সুবহানাল্লাহ
এবার আসুন কুরান ও হাদীসের আলোকে জিকিরের অসংখ্যা উপকারিতা থেকে মাত্র ৭০ টি উপকারিতা জেনে নিই
১। আল্লাহর জিকির শয়তানকে তাড়িয়ে দেয় ও তার শক্তি খর্ব করে।
২। জিকির আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়।
৩।হ্রদয়ে বা মনের বিষন্নতা দুর করে।
৪।মনে আনে আনন্দ।
৫।উজ্জীবিত ও প্রফুল্ল রাখে হ্রদয় বা মন ও শরীরকে।
৬।চেহারা ও অন্তরকে করে জ্যোতির্ময়।
৭।উত্তম রিজিক আনয়ন করে।
৮।জিকির কারীকে প্রভাব ও প্রশান্তির পোশাক পরানো হয়।তাকে দেখলে সমীহবোধ যেমন জাগে, তেমনি জাগে ভালোবাসা।
৯।হ্রদয় বা মন ভরে দেয় আল্লাহর ভালবাসায়।
১০।জিকিরের দ্বারা লাভ হয় এহসানের স্তরে।
১১।জিকিরকারীর সকল বিষয়ে আল্লাহই হন একমাত্র আশ্রয়স্হল।
১২।লাভ হয় আল্লাহর নৈকট্য।
১৩।খুলে যায় মারেফাতের দরজা।
১৪।অর্জিত হয় আল্লাহর ভয়।
১৫।আল্লাহ তাকে স্বরন করেন।(তোমরা আমাকে স্বরন কর , আমিও তোমাদেরকে স্মরন করবো-সুরা বাকারা-১৫২ )
১৬।দিলকে জিন্দা করে।
১৭।জিকির হচ্ছে ক্বলব(মন) ও রুহের(আত্না) আহার।
১৮।ক্বলবের মরিচা দুর করে।
১৯।দুর করে দেয় ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ভুলভ্রান্তি।
২০। দুর করে দেয় গাফিলতি বা অমনোযোগিতা।
২১।বান্দা যে জিকির আজকার করে, তা আরশের চতুর্দিকে ওই বান্দার জিকির করে ঘুরতে থাকে।
২২।সুখের সময় যে আল্লাহর জিকির করে ,তার দুঃখের সময় আল্লাহ তাকে স্মরন করে।
২৩।জিকির আল্লাহর আযাব থেকে নাজাতের ওসিলা।
২৪।জিকিরের কারনে সাকিনা অবতীর্ন হয়।
২৫।জিকিরের বরকতে জবান,গীবত,চোগলখুরী,অসত্য ও অনর্থক কথা থেকে নিরাপদ থাকা যায়।
২৬।জিকিরের মজলিস ফেরেশতারা ঘিরে রাখে
২৭।জিকিরের বদৌলতে জিকিরকারীর সঙ্গীসাথিরাও সৌভাগ্যবান হয়।
২৮।কিয়ামতের দিন জিকিরকারীদের কোন আক্ষেপ কোন দুঃখ কোন পেরেশানি থাকবে না।
২৯।ক্রন্দনকারী -জিকিরকারী কিয়ামতের দিনে আল্লাহর আরসের ছায়ায় আশ্রয়লাভ করবে।
৩০।দোয়াকারীগনের চেয়ে জিকিরকারীদের অধিক প্রাপ্তি হবে।
হাদিসে কুদসিতে বর্নিত হয়েছে,আল্লাহ সুবহানাহুতাআলা এরশাদ করেন,আমার জিকিরের কারনে যে দোয়া করার ফুসরত পায় না,আমি তাকে দোয়াকারীদের চেয়ে বেশী দান করি।
৩১।সবচেয়ে সহজ এবাদৎ হওয়া সত্বেও জিকির সকল এবাদতের চেয়ে উ্ত্তম।
৩২।আল্লাহর জিকির জান্নাতের ছায়াগাছ।
৩৩।জিকিরের জন্য যে প্রতিদান ও পুরুস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে,অন্যকোন আমলের জন্য সেরকম প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি।হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন কাদির’, এই দোয়া যদি কেউ দিনে একশতবার পাঠ করে,তবে তাকে দেয়া হয় দশজন কৃতদাস মুক্ত করে দেয়ার সওয়াব,তার আমলনামায় লিখে দেয়া হয় একশত নেকি এবং গুনা মাফ করে দেয়া হয় একশতটি।আর সন্ধা পর্যন্ত সে শয়তানের আক্রমন থেকে হেফাজতে থাকে।
৩৪।নিজের কল্যানের কথা ভুলে যাওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করে।রোধকরে ক্বলবের মৃত্যুকে।
৩৫।জিকির মানুষের অশেষ উন্নতি সাধন করে।যার ক্বলব জিকিরে জাগ্রত,তার নিদ্রিত অবস্হাও গাফেল রাত্রী জাগরন কারীর চেয়ে উত্তম।
৩৬।জিকিরের নুর দুনিয়ায় সঙ্গে থাকে, সঙ্গে থাকে কবরেও।আর পুলসিরাতে চলতে থাকবে আগে আগে।রসুল পাক সাঃ এই নুরের জন্যই প্রার্থনা করতেন এভাবে, – হে আমার আল্লাহর ! আমার মাংশে অস্হিতে, চর্মে, পশমে, কানে, চোখে, উপরে, নিচে, ডানে, বামে, সন্মুখে , পশ্চাতে নুর দান কর।আরো বলতেন,আমার আপাদমস্তক নুরে ভরপুর করে দাও।
৩৭।জিকির তাসাউফ শাস্ত্রের মৌলিক বিষয় গুলির মুল।সকল তরিকার পীর মুর্শিদগন এব্যাপারে একমত।যার জন্য জিকিরের দার উন্মুক্ত হয়েছে,তার জন্য খুলে গিয়েছে মারেফাতের পথ।
৩৮।মানুষের অন্তরে এমন একটি কোন আছে,যা জিকির ছাড়া অন্য কোন কিছু দ্বারা পুর্ন করা যায় না।হ্রদয়ের পুর্ন পরিসর যখন জিকিরে ভরে যায়,তখন ঐ বিশেষ কোনটিও ভরপুর হয়ে যায় জিকিরের নুরে।তখন জিকিরকারী সম্পদ ব্যতিরেকেই হয়ে যায় সম্পদশালী।আত্নীয়স্বজন ও জনবল ছাড়াই লাভ করে প্রভুত সম্মান।সাম্রাজ্য ছাড়াই হয়ে যায় সম্রাট।আর যে জিকির করে না,সে আত্নীয়পরিজন,বিত্তসম্পদ ও রাজত্ব থাকা সত্বেও হয় লান্চিত ও অপদস্ত। যেমন খাজা গরীবে নেওয়াজের ব্যপারে একজন ইংরেজ মন্তব্য করেছেন ভারতবর্ষে ২ জন বাদশা একজন জীবন্ত একজন মৃত তবে জীবন্ত বাদশার চাইতে মৃত বাদশার ক্ষমতা বেশী।
৩৯।যিকির বিক্ষিপ্ত বিষয়াবলীকে একত্র করে, দুরবর্তীকে করে নিকটবর্তী, আর নিকটবর্তীকে ঠেলে দেয় দুরে।অর্থাৎ হ্রদয়ের সকল অসৎ ভাবনাকে দুরে ঠেলে দিয়ে অন্তরে আনে শান্তি ও আল্লাহর প্রেম।দুর্ভাগ্যকে করে দুরবতী,আর নিকটে এনে দেয় সকল সৌভাগ্যকে।
৪০।জিকির হ্রদয়ের ঘুম ভাঙ্গায়।সতর্ক করে।
৪১।জিকির এমন একটি বৃক্ষ,যাতে ফল ধরে মারেফাতের।সুফিয়ায়েকেরাম ঐ ফলকে বলেন হাল ও মাকামের ফল।জিকির যত গভীর হবে,ঐ বৃক্ষের শিকড় হবে তত সুদৃর।ফলও ধরবে বেশী।
৪২।জিকিরকারী আল্লাহপাকের সঙ্গী।
৪৩।জিকির ক্রীতদাস মুক্ত করে দেয়ার সমতুল্য।আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় তুল্য।আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করার সমান।
৪৪।জিকির শোকরের মুল।যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে না ,সে আল্লাহর শোকর আদায় করে না।
৪৫।পরহেজগারদের মাঝে আল্লাহর কাছে তারাই অধিক সন্মানিত যারা সব সময় জিকিরে মসগুল থাকে।কেননা তাকওয়ার শেষ ফল জান্নাত ।আর জিকিরের শেষফল আল্লাহর নৈকট্য।
৪৬।দিলের মধ্যে এমন এক ধরনের কাঠিন্য আছে, যা জিকির ছাড়া অন্য কিছুতে নম্র হয় না।
৪৭।জিকির সকল রোগের চিকিৎসা।
৪৮।আল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্বের মুল হচ্ছে জিকির।আর তার সাথে শত্রুতার মুল হচ্ছে- গাফলত।
৪৯।জিকিরের মত নেয়ামত আকর্ষনকারী ও আযাব দুরকারী কিছু নেই।
৫০।জিকিরকারীদের সাথে আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাদের দোয়া থাকে।
৫১।জিকিরের জলসা সমুহ জান্নাতের বাগান।
৫২। জিকিরের জলসা ফেরেসতাদের জলসা।
৫৩।আল্লাহপাক তার জিকিরকারীদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সমাবেশে গর্ব প্রকাশ করেন।
৫৪।সর্বদা জিকিরকারী হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৫৫।যাবতীয় আমলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে জিকিরের জন্যই।
৫৬।সেই আমলই সর্বোত্তম,যার মধ্যে আল্লাহর স্বরন থাকে।
৫৭।এক দরিদ্র সাহাবি রসুল পাক সাঃ কে বললেন,বিত্তবানেরা তাদের বিত্তের কারনে হজ্ব,যাকাত,ওমরা ও জেহাদের আমলগুলো করার সুযোগ পায়।এভাবে তারা পুন্যের দিক দিয়ে হয়ে যায় অধিক অগ্রগামী।রসুল পাক সাঃ বললেন,আমি তোমাদেরকে একটি সহজ আমলের কথা বলে দেই।তোমরা নামাজের পর ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ বেশী বেশী করে পড়ো।তাহলে তোমরাও পুন্ন্যার্জনের ক্ষেত্রে পিছনে পড়ে থাকবে না।
৫৮। জিকির অন্যান্য এবাদৎ পালনের সহায়ক।জিকির এবাদতে আস্বাদ আনয়ন করে।সকল এবাদৎকে সহজ করে দেয়।
৫৯।জিকিরের কারনে সকল কষ্টদায়ক কাজ সহজসাধ্য হয়ে যায়।সকল মুসিবত দুর হয়ে যায়।
৬০।যত জিকির করবে,ততই মন থেকে ভয়ভীতি দুর হয়ে যাবে।মনে আসবে শান্তি।
৬১।হযরত ফাতেমাতুজ্জাহরা রাঃ আটাপেশা, কুয়া থেকে পানি তোলা – এসকল কষ্টকর গৃহকর্ম করতেন।তিনি রসুল পাক সাঃ এর কাছে এসকল কাজের জন্য একজন পরিচারক চেয়েছিলেন।তিনি সাঃ তাকে রাতে সজ্জা গ্রহনের পুর্বে ৩৩ বার সোবহানআল্লাহ,৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহুআকবার পাঠ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন এই আমল খাদেম লাভ করার চেয়ে উ্ত্তম।
৬৩।জিকিরকারীদেরকে আল্লাহপাক ‘সত্যবাদী’ বলেন।আর যাদেরকে আল্লাহপাক সত্যবাদী বলেন,মিথ্যাবাদীদের সঙ্গে কখনই তাদের হাশর হতে পারে না।
৬৪।জিকির দ্বারা জান্নতে গৃহ নির্মান করা হয়।বান্দা যখন জিকির বন্ধ করে দেয়,তখন ফেরাশতাদের নির্মানকর্মও বন্ধ থাকে।তাদেরকে এর কারন জিজ্ঙেস করলে তারা বলে,নির্মান কাজের খরচ এখনো এসে পৌছেনি।এক হাদিসে এসেছে , যে ব্যক্তি ”সোবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সোবহানাল্লাহিল আজীম” সাতবার পাঠ করে, বেহেশতে তার জন্য একটি সবুজ গম্বুজ তৈরী হয়ে যায়।

৬৫।যিকির দোজখের দিকের প্রাচীর।কোন খারাপ আমলের কারনে দোজখ নির্ধারিত হলেও যিকির মাঝখানে প্রচির হয়ে দাড়ায়।

৬৬।ফেরেশতারা জিকিরকারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।হযরত আমর ইবনে আস রাঃ কতৃক বর্নীত হয়েছে,বন্দা যখন ”সোবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি” বলে অথবা বলে ”আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিলালামিন” তখন ফেরেশতারা বলে,হে আল্লাহ ! এলোকটিকে মাফ করে দাও।

৬৭।কোন পাহাড়ে বা প্রান্তরে আল্লাহর জিকির করা হলে তারা গর্ববোধ করে । এক পাহাড় অন্য পাহাড়কে ডেকে বলে তোমার উপর দিয়ে কোন জিকিরকারী পথ অতিক্রম করেছি কি ? পাহাড়টি হ্যাঁ বললে প্রশ্নকারী পাহাড়টি আনন্দিত হয়।

৬৮।অত্যধিক জিকির মোনাফেকি থেকে মুক্তি প্রদায়ক।আল্লাহ পাক মোনাফিকদের সম্পর্কে বলেন, ”আল্লাহকে তারা অল্পই স্বরন করে।” সুরা নিসা -১৪২।হযরত কাব আহবার রাঃ বলেন, যে বেশী বেশী জিকির করে সে মোনাফেকি থেকে মুক্ত।

৬৯।জিকিরের সতন্ত্র স্বাদ আছে,যা অন্যকোন আমলে নেই।
৭০।পৃথিবী ও পরবর্তী পৃথিবি – উভয় স্হানে জিকির কারীদের চেহারায় নুর জল জল করে ।

৭১।যে ব্যক্তি পথে ঘাটে ঘরে বাইরে দেশে বিদেশে অত্যধিক জিকির করবে,কিয়ামত দিবসে তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীদের সংখ্যা হবে অনেক বেশী।আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,”সেই দিন পৃথিবী তাহার বৃত্তান্ত বর্ননা করবে।” সুরা যিলযাল-৪।
কুরআনে জিকিরের ১০টি অথ
(১) মৌখিক ভাবে স্মরণ করা -সুরা নিসা ১০৩ (২) উপদেশ শিক্ষা গ্রহণ- সুরা জারিয়াত ৫৫ (৩) স্মরণ করা- ইমরান১৩৫ (৪) কুরআন- আম্বিয়া ৫০ (৫) মর্যাদা গৌরব- যুখরুফ ৪৪ (৬) খবর সংবাদ- কাহাফ ৮৩ (৭) শরীয়ত- জ্বিন ১৭ (৮)লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত ফলক - আম্বিয়া ১০৫ (৯) নামাজ- সাদ ৩২ (১০) আনুগত্য।
নুহ (আঃ) এর যুগের বৃদ্ধার ঘটনা
সেকালে আল্লাহ ভীরু  সৎ ও  বিশ্বাসী  এক    বৃদ্ধ নারী  ছিল।  সে   তার  ঝুপড়িতে   বসে   সবসময়   আল্লাহকে  স্মরণ    করত।  তারপর  যখন   তুফান শুরু     হলো-     নূহ      আলাইহিস      সালাম     সকল মুমিনকে কিশতিতে ওঠালেন। ভুলে গেলেন শুধু এই বৃদ্ধার কথা। ওয়াদা মাফিক তুফান এলো। এতে কাফের সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি সব   লণ্ডভণ্ড   হয়ে  গেল।   তুফান  থেমে   যাওয়ার  পর  হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এর মনে পড়ল সে বৃদ্ধার কথা।
তার খুবই দুঃখ হলো। আফসোস করতে করতে তার     ঝুপড়িতে    গেলেন।     গিয়ে      দেখেন     সে আরামে   বসে  বসে  আল্লাহ আল্লাহ করছে। নূহ আলাইহিস     সালাম   এর   তো    তাজ্জবের    শেষ নাই।   আল্লাহ   তা’য়ালার    দরবারে     হাত   তুলে জানতে চাইলেন, খোদা হে! এ কেমন রহস্যময় তা   আমাকে বলে  দাও না?  এরশাদ হল- নূহ!  এ   হলো   ‘ফাযকুরুনী  আযকুরুকুম’    এর  বাস্তব নমুনা। বুড়ি আমাকে ভুলেনি, আমি তাকে ভুলব কী করে?   এই   ঘটনা দ্বারা এ  কথাই  প্রতিভাত হয়,   ইবাদতের   দ্বারা  শুধু  পরকালীন  কল্যাণই নয়, পার্থিব জান-মালের সংরক্ষণও হয়।
ডাকাত দলের ঘটনা
ঘটনা:  এক  শহরে  কয়েকজন    ডাকাত  ঢুকল।  ঢুকে      তারা     পরস্পরে     পরামর্শ     করল।      খুব সাবধানে কাজ করতে হবে যাতে ধরা না পড়ি। পরামর্শে   ডাকাতদের   সরদার   বলল-   তোমরা  সকলে দরবেশের বেশ ধরে ফেল। সবাই বলল- এটা  কীভাবে করব। সকলে কাপড় রঙিন  করে নাও।    তারপর    প্রত্যেকে    হাতে    একটি    করে  তাসবীহ  নিয়ে সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ করতে থাক।      যেখানেই      যাবে,      জপ      ঐ      একটাই  সুবহানাল্লাহ।  এর  বাইরে কোন শব্দই   উচ্চারণ করবে না।
পরামর্শ     মাফিক    শহরে    প্রবেশ     করে    একটি অতিথিশালায়  আশ্রয়  নিল  এবং  বৃত্তাকার  হয়ে  সকলেই  সুবহানাল্লাহ তাসবীহ জপতে লাগল। তাদের    মুখে     তখন    অন্য    কোন    শব্দ    নেই।  সরদারের       হাতে       সবচেয়ে       বড়        ও        লম্বা তাসবীহ।
এদিকে    সমগ্র     শহরে    সংবাদ    ছড়িয়ে    পড়ল  অতিথিশালায়     বিদেশ      থেকে     এক       দরবেশ এসেছে।  বিশাল  জামাত সঙ্গে। তারা   আল্লাহর জিকির    ছাড়া   আর     কোন   কথাই   মুখে   আসে না।
এবার    দলে    দলে      সাক্ষাতে    আসতে     লাগল  মানুষ। মুসাফা করছে।  নিজেদের সমস্যাবলীর  কথা  বলছে।    অবশেষে  সে  অঞ্চলের    বাদশাহ পর্যন্ত  একদিন  বিরাট   ফৌজসহ   দরবারে   এসে হাজির।   এসে   আরয   করল-   দরবেশ   সাহেব!  আপনার       ফয়েজলাভে       ধন্য       হব।      তিনি       দরবেশকে    তার    দলসহ     দাওয়াত     করলেন। দরবেশ দাওয়াত কবুল করে নিলেন।
এদিকে    বাদশাহর    এক    পুত্র     দীর্ঘদিন    যাবৎ  পাঘাতগ্রস্ত ছিল।
বহু চিকিৎসা  করিয়েছেন। কাজ হয়নি কিছুই  । খানা-পিনার   পর    বাদশাহ    দরবেশ    সাহেবের  খেদমতে     আরজ     হুজুর!     আপনিতো     আল্লাহ  তা’য়ালার  বিশেষ  মাকবুল  বান্দা!  আপনি  দয়া  করে   আল্লাহ   তা’য়ালার   দরবারে   দোয়া   করে  দিন,   যাতে  তিনি  মেহেরবাণী  করে   আমার  এ  ছেলেকে সুস্থ করে দেন। আমার জীবনের এটাই শেষ স্বপ্ন।
অবশেষে   দরবেশ   তার   সঙ্গীদেরসহ   আল্লাহর  দরবারে   হাত   তুলে   নেহায়েত   বিনয়ের   সাথে  কাঁদতে     লাগল!    হে    আল্লাহ    আমরা     সকলই পাপী, গোনাহগার। কিন্তু এতেতো কোন সন্দেহ নাই,  আমরা তোমারই বান্দা।  তোমার দরবার ছেড়ে আমরা যাব কোথায়! কোথায় গিয়ে কাঁদব আমরা। আজ আমাদের ইজ্জত রাকারী একমাত্র তুমি মাওলা।
ডাকাতদল     কান্নায়     ভেঙ্গে      পড়েছে     রহমান   রাহীমের  দরবারে।  ওদিকে  রহমতের  দরিয়ায়  জোস ওঠেছে প্রবলভাবে। দুয়া কবুল হল। সঙ্গে সঙ্গে শাহজাদা সুস্থ হয়ে উঠল।
এই   অবস্থা  দেখে    দরবেশ  মনে  মনে    ভাবতে  লাগল।    হায়!   মানুষকে   ধোকা   দেয়ার    জন্যে দরবেশির   বেশ  ধরছিলাম।  এই   ভণ্ডামির  যদি  এই        ফসল      হয়       তাহলে       সত্যিকার      অর্থে এখলাসের সাথে যদি  আল্লাহকে  ডাকি   তাহলে তার    ফসল    কত   ব্যাপক   ও    অধিক   হবে   তা কেবল আল্লাহই জানেন। একথা বলে সকলেই আল্লাহু   আকবার     বলে    চিৎকার   করে    ওঠল। শহরের     নিভৃত   অঞ্চলে  গিয়ে  আল্লাহর   স্বরণে মশগুল  হয়ে    পড়ল।  বর্ণিত  আছে,   পরে  তারা সকলেই পূর্ণ ওলী হয়ে যায়।
#ঘটনা- হযরত আবদুল্লাহ বিন মুবারক ও এক গোলামের ঘটনা
#ঘটনা- হযরত আহমদ বিন হাম্বল ও রুটি মেকারের ঘটনা
#ঘটনা- কুরআন তেলাওয়াত ইমাম আহমদের ঘরে ইমাম শাফেয়ীর দাওয়াত, আহমদের কন্যা রান্নার সময় কুরআন পড়ে।
#ঘটনা- )(ইমাম গাযযালীর মুকাশাফাতুল কুলুব) তাওয়াফে দরুদ পাঠ, হযরত আবদুল ওয়াহেদ বিন যায়েদ (রা) বলেন আমি এক লোককে দেখলাম বেশী দরুদ পাঠ করতে।

হযরত বিশর হাফী-এর ঘটনা
==========
বিখ্যাত বুযুর্গ বিশর হাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর প্রথম       জীবনের       ঘটনা।       তিনি       মদ্যশালায়  যাচ্ছিলেন। পথে বিসমিল্লাহশরীফ লিখিত একটি চিরকুট  পেলেন।   পেয়েই  পরম তাযিমের সাথে তুলে  নেন। চোখে   লাগান। চুমু খান।   পানিতে ধুয়ে       পবিত্র      স্থানে       রেখে      দেন।      অতঃপর মদ্যশালায় গিয়ে    মদ্যপানে  পূর্ণ নেশাগ্রস্ত  হয়ে ঘুমিয়ে  পড়েন।  এদিকে আল্লাহ তায়ালার   পক্ষ থেকে  সমকালীন   বিখ্যাত   ওলী  হযরত  হাসান বসরী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর প্রতি  ইলহাম করা হল,  দ্রুত মদ্যশালায়   গিয়ে বিশরকে   সুসংবাদ দাও  এবং আমার রহমতের  ছায়ায়   তুলে নিয়ে আস। ছুটে যান হাসান বসরী সুসংবাদ শোনাতে এবং  তিনি   মদ্যশালায়    হাজির  হলেন।   তাকে  দেখে     বিস্ময়ের     সাথে     মদ্যশালায়     সকলেই   বলল- হযরত আপনি এখানে কীভাবে?
হযরত হাসান বসরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন- আমি  তো এখানে স্বেচ্ছায়  আসিনি  যে- পুনরায় স্বেচ্ছায়    চলে   যাব।    দয়াময়   আল্লাহ   আমাকে  এখানে   পাঠিয়েছেন   বিশরকে    নিয়ে    যাওয়ার  জন্যে বল বিশর কোথায়?
লোকেরা দেখিয়ে দিল বিশরের ঠিকানা। হযরত বসরী       রাদিয়াল্লাহু       আনহু       বিশরের       কাছে  গেলেন। বিশর তখন পূর্ণ নেশায় ডুবে আছেন। হযরত  বসরী রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন বিশরকে জাগিয়ে তোলেন এবং তাকে সঙ্গে করে বেরিয়ে আসেন   পাপের অন্ধশালা  থেকে  তাকে  পুণ্যের সুসংবাদ দেন। অদৃশ্য থেকে ডাক আসে-
يا     بشر      رفعت     اسمى     فرفعناك      وطيبت     اسمى  فطيبنا
হে বিশর! তুমি  আমার নামের তাযিম করেছো। আমি  তোমার মর্যাদাকে বাড়িয়ে দিয়েছি।   তুমি আমার নামকে  পবিত্র করেছ,  সুবাসিত  করেছ,  আমিও তোমাকে পবিত্র সুবাসিত করে দিয়েছি। সোবহানাল্লাহ! এই হলো বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ। খোদার অনুগ্রহের জন্যে কোন যোগ্যতা     শর্ত     নয়।     বরং    তাঁর     পক্ষ    থেকে  যোগ্যতা দান করাই শর্ত।
হে  আল্লাহ  আমাদেরকে  বিসমিল্লাহর   ফজিলত  হাসিল করার তৌফিক দান করুন।
জিকির না করলে দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ
আমাদেরকে একটি ছোট কাজ বা আমল করতে হবে নতুবা আমাদের দুনিয়ার জীবন বরবাদ হয়ে যাবে, আমরা দুনিয়ায় গরীব হয়ে যাব আমাদের রিজিক বা আয় রুজি রোজগার আল্লাহ তায়ালা সংকীর্ণ করে দিবেন এবং আখেরাতে আমরা অন্ধ হয়ে যাব, আল্লাহ তায়ালা সুরা ত্বাহায় এমনই ২টি মারাত্মক ধরনের হুমকি দিয়েছেন, আসুন আমরা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে শুনে জেনে নিই কি সে আমল যা আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের এমন মারাত্মক ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে, এবং আমরা কিভাবে সে আমলটি করব এবং সে আমলটি করার সহজ কিছু নিয়মও সংক্ষেপে জেনে নিব ইনশা আল্লাহ।
প্রথমত সুরা ত্বাহার ১২৪ নং আয়াতটি শুনে নিই আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى
এবং যে আমার জিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। [ সুরা ত্বা-হা ২০:১২৪ ]

জিকির মানে শুধু আল্লাহ আল্লাহু করা নয়, জিকির মানে হল সদা সর্বদা আল্লাহর স্মরণ করা, সকল কাজ আল্লাহর দেয়া বিধান মতে করা, নামাজ পড়া এটাও একটা জিকির, কুরান তেলাওয়াত এটাও একটা জিকির, কেহ প্রশ্ন করল কেমন আছেন আপনি জবাব দিলেন আলহামদুলিল্লাহ ভাল এটাও একটা জিকির, কেহ বলল আগামী কাল আমাদের বাড়ী আসবেন, আপনি জবাব দিলেন ইনশা আল্লাহ আসব এটাও একটা জিকির।
নবী হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে
মুনজর (রাঃ) রেওয়ায়েত করেন হাদীস খানা তাবরানী শরীফেও আছে মাজমাউয যাওয়ায়েদেও আছে, একটি দোয়া যা ফজরের সময় ৩ বার পড়বেন তাহলে পুরস্কার কি জানেন? যদি ফজীলত জানেন তাহলে জীবনের শেষ মুহুত পর্যন্ত এই আমল আপনি কোনদিন ভুলেও ছাড়তে পারবেন না। আল্লাহর প্রিয় হাবীব সু সংবাদ দিয়ে বলেন যে ফজরের সময় এই দোয়াটি ৩ বার পাঠ করবে আমি নিজে সে ব্যক্তির হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়ে নিব।
সুবহানাল্লাহ এত বড় সুযোগ মাত্র ৩ সেকেন্ড এর আমলে কিন্তু আমরা কতবড় বদবখত ৩ সেকেন্ড এর ছোট আমলটিও আমরা করি না। আসুন জেনে নিই সে দোয়াটি তা হল (রাদিতু বিল্লাহি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলামে দিনা ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা)
অথ্যাৎ হে আল্লাহ আপনি যে আমার রব সে জন্য আমি খুশি, ইসলাম আমার ধম সে কারনে আমি সন্তুষ্ট এবং মুহাম্মদ (দঃ) আমার নবি সে জন্য আমি খুশি।

ঘটনা- জিকীরের পর কিভাবে চাইবেন?
সুনানে বায়হাকিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই জিকির ও জিকিরের প্রাপ্তি সম্পর্কিত একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। আর তাহলো-
একদিন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক আরব বেদুইন এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে কোনো একটি ভালো কাজ শিক্ষা দিন-
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তার হাত ধরলেন। তাকে এ শব্দগুলো শেখালেন
- سُبْحَانَ الله : সুবহানাল্লাহ
- اَلْحَمْدُ للهِ : আলহামদুলিল্লাহ
- لَا اِلَهَ اِلَّا الله : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
- اَللهُ اَكْبَر : আল্লাহু আকবার।
লোকটির হাত ধরে প্রিয় নবি বললেন, এ শব্দগুলো বেশি বেশি পড়বে।
লোকটি এ কথা শুনে চলে গেলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর লোকটি আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে ফিরে আসে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে বললেন, লোকটি কি যেন চিন্তা করছে।
লোকটি ফিরে এসে প্রিয়নবির সামনে বসে বললেন-
‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ আপনি যে বাক্যগুলো আমাকে শেখালেন, এ বাক্যগুলোতে আল্লাহর জন্য আর আমার জন্য কী রয়েছে? এগুলো পড়লে আমি কী পাবো?
এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন-
তুমি যখন বলবে, ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ তখন প্রতিটি শব্দের উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি সত্য বলেছ।
তখন জিকিরকারী আল্লাহর কাছে নিজের (কাঙিক্ষত) চাহিদাগুলো (ধারাবাহিকভাবে) তুলে ধরবে-
>> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ) আল্লাহুম্মাগফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
>> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْزُقْنِىْ) ‘আল্লাহুম্মার জুক্বনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রিজিক দান করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমাকে ইতিমধ্যে রিজিক দান করেছি।’
>> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْحَمْنِىْ) আল্লাহুম্মার হামনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে অনুগ্রহ করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, ইতিমধ্যে তোমার প্রতি রহম করেছি।
জিকিরের পরে বান্দা এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অচিরেই তা দান করবেন বলেই আরব বেদুইনকে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি।

হাদীস-আল্লাহ দৌড়ে আসেন
বুখারী ও মুসলিম শরীফের মুত্তাফাক আলাই হাদীস
হজরতআবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন: বান্দা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা করবে তেমনি আমাকে পাবে। আমাকে যখন সে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে থাকি। সে যদি আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে তাহলে আমিও তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে কোনো জনগোষ্ঠির নিকট স্মরণ করে তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম জনগোষ্ঠির নিকটে স্মরণ করি। সে যদি আমার দিকে অর্ধ হাত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। আর যদি সে এক হাত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে একগজ পরিমাণ এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে তাহলে আমি তার দিকে দ্রুত হেঁটে আসি।

সুবহানাল্লাহ। তিনি কতই সৌভাগ্যবান যিনি সদা আল্লাহর জিকির করতে পারেন।

হাদীস-জীবিত ও মৃত
অন্য হাদিসে হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাঁর রবকে স্মরণ করে আর যে স্মরণ করে না, তাদের উদাহরণ হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তির ন্যায়। (বুখারি)
হাদীস-সোনা রুপা খরচ করা থেকেও উত্তম
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদেরকে উত্তম আমলের ব্যাপারে সংবাদ দিব কী? যেটা তোমাদের মালিকের নিকট বেশি প্রিয়। যার মর্তবা অনেক অনেক বেশি এবং সোনা ও রূপা খরচ করা থেকেও উত্তম। আর তোমাদের শত্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা থেকে উত্তম। অতপর তোমরা তাদের ঘাড়ে আঘাত কর এবং তারা তোমার ঘাড়ে আঘাত করে। তারা বলল, হ্যাঁ! নবীজী (সা.) বললেন, তা হলো আল্লাহর জিকির। মুআজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, আল্লাহর জিকির ছাড়া অন্য কোনো জিনিস তার আজাব থেকে বাঁচাতে পারবে না। (সুনানে তিরমিযী ২৬৮৮)
জিকির কিভাবে কখন করবেন?
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন
وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعاً وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ وَلاَ تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ
আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকো না। [ সুরা আরাফ ৭:২০৫ ]
অতএব আমরা জিকির করব কেঁদে কেঁদে নিচুস্বরে, ভীত হয়ে, সকালে সন্ধ্যায়।

কোরানের এ আয়াত দ্বারা নিচুস্বরে জিকিরের কথা আসলেও কোন কোন হাদীস দ্বারা উঁচু আওয়াজে জিকিরের ফজিলতও আমরা জানতে পারি যেমন

জোরে যিকিরকারীগণ আল্লাহ ও নবী (সাঃ) এর প্রিয় হয়ে থাকেন ।
হযরত আব্দুল্লাহ জুল বাজাদাইন (রা.) একজন সাহাবী, যিনি শৈশবে এতীম হয়ে যান। চাচার কাছে থাকতেন। চাচা অত্যন্ত যত্নের সাথে তাঁকে লালন-পালন করতেন। ঘরের কাউকে না জানিয়েই তিনি গোপনে মুসলমান হয়ে যান। চাচা তা জানতে পেরে খুবই রাগান্বিত হয়ে উলঙ্গ করে তাঁকে বাড়ি হতে বের করে দেন। মাও তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। তবুও মায়ের মন, ছেলেকে উলঙ্গ দেখে তাঁকে একটি মোটা চাদর দিয়ে দিলেন। তিনি চাদরটি দুই ভাগ করে নিচে এবং ওপরে পরিধান করলেন। অতঃপর মদীনা শরীফ হাজির হলেন। এখানে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরজায় পড়ে থাকতেন এবং অত্যধিক পরিমাণে ও উচ্চস্বরে যিকির করতেন। হযরত উমর (রা.) বললেন, এইভাবে উচ্চস্বরে যিকির করে; লোকটা কি রিয়াকার। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, না সে কোমল প্রাণ লোকদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি তবুক যুদ্ধে ইন্তিকাল করেন।
عن جابر بن عبد الله رض قال رأي ناس نارا في المقبرة فاتوها فاذا رسول الله صلي الله عليه وسلم في القبر واذا هو يقول ناولوني صابحكم فاذا هوالرجل الذي كان يرفع صوته بالذكر وفي البيهقي روينا عن أبي ذر رض ان ذلك كان ليلا وكان معه المصباح (أبو داؤد شريف رقم الحديث ৩১৬৬ بيهقي شريف رقم الحديث৭১৬০, ৭২৯৬)
অর্থ : হযরত জাবের (রা.) বলেন, একবার সাহাবা কেরাম (রা.) কবরস্থানে আলো দেখতে পেলেন। কবরস্থানের কাছে গিয়ে তাঁরা দেখলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি কবরের মধ্যে নেমে বলছেন, তোমাদের সাথীকে আমার কাছে দাও। তখন জানতে পারলাম, তিনি সেই সাহাবী (রা.) যিনি জোরে জোরে যিকির করতেন। বায়কাহী শরীফে আছে, হযরত আবু যর (রা.) বলেন, তখন রাত ছিল তাই তাদের সাথে বাতির আলো দেখা গিয়েছিল।
(আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৩১৬৬, বায়হাকী শরীফ, হাদীস নং ৭১৬০,৭২৯৬)
এ সাহাবী জোরে জোরে যিকির করতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তাঁকে দাফন করার জন্য কবরে নামলেন। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, উচ্চ আওয়াজে ও জোরে জোরে যিকির করা শুধু সুন্নত ইবাদত নয় বরং তা বড় ফজীলত পাওয়ারও মাধ্যম। যেমন এ সাহাবী (রা.) জোরে জোরে ও উচ্চ আওয়াজে যিকির করার বরকতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজ হাতে দাফন হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করলেন। হযরত জাবের (রা.) বলেন, তিনি ঐ সাহাবী (রা.) যিনি জোরে জোরে ও উচ্চস্বরে যিকির করতেন। যে যিকির করার কারণে তিনি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র হাতে কবরে দাফন হওয়ার সৌভাগ্য পেলেন। জোরে জোরে যিকির করার ফজীলত ও বরকতময় আমল এর চেয়ে আর কি হতে পারে?
তাঁকে দাফন করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! আমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট আপনিও তাঁর প্রতি রাজি-খুশী হয়ে যান। হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, এই দৃশ্য দেখে আমার মনে বড় আশা হল, এই লাশ যদি আমার হত তাহলে কতইনা ভাল হত। কতই না আমি সৌভাগ্যবান হতাম।

জিকির কর লোকে যেন পাগল মনে করে
হাদীসে এসেছে-
عن أبي سعيد الخدري عن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : أكثروا ذكر الله عز و جل حتى يقال إنه مجنون(مسند عبد بن حميد، من مسند أبي سعيد الخدري، رقم الحديث-925)
অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা অধিক পরিমাণ আল্লাহর জিকির কর যেন লোকেরা তোমাদের পাগল বলে। (মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-৯২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৮১৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১১৬৫৩, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৫২৩}
এ হাদীসে লক্ষ্য করুন-জিকির এমনভাবে করতে বলা হয়েছে যে, লোকেরা যেন পাগল বলতে শুরু করে দেয়, আর কোন ব্যক্তি যদি মনে মনে জিকির করে তাহলে কোন ব্যক্তি তাকে কোনদিন পাগল বলবে? মনের খবর কে রাখে? তাহলে পাগল বলবে কিভাবে? পাগল বলবে তাকেই যে জোরে জোরে পাগলের মত সর্বদা জিকির করতেই থাকে। এ হাদীস দ্বারা একথাই স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, জিকির জোরে করতে হবে ক্ষেত্র বিশেষে। সব সময় চুপ চাপ নয়।
জোরে জিকির করার শর্ত
তবে জোরে জিকির করার শর্ত হল যাতে কারো নামাজ, কুরান তেলাওয়াত ও ঘুমের ক্ষতি না হয়।

আল্লাহর জিকির কি শুয়ে শুয়েও করা যাবে?
সুরা আল এমরানের ১৯১ নং আয়াতে এরশাদ করেন
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىَ جُنُوبِهِمْ
যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে [ সুরা ইমরান ৩:১৯১ ]

আল্লাহর জিকির কি বেশী করতে হবে নাকি কম?
এ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ তায়ালা সুরা আহযানের ৪১ নয় আয়াতে বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيراً

মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। [ সুরা আহযাব ৩৩:৪১ ]

বেশী জিকির কারীর প্রতিদান কি?
সুরা আহযাবের ৩৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন
وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيراً وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। [ সুরা আহযাব ৩৩:৩৫ ]

ফরয নামাজের পর জিকির সমুহ
সহীহ সুন্নাহ থেকে ফরজ সালাত সমাপান্তে ইমাম-মুক্তাদী সবার জন্য পঠিতব্য দুয়া ও জিকির সমূহ উপস্থাপন করা হল:
(1) اَللهُ أَكْبَرُ، أَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ-
উচ্চারণ : ১. আল্লা-হু আকবার (একবার পড়বে)। আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ (তিনবার)।
অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।[ 📚মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, 📚মিশকাত হা/৯৫৯, ৯৬১ ‘ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।]
(2) اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَ الْإِكْرَامِ.
২. আল্লা-হুম্মা আন্তাস্ সালা-মু ওয়া মিন্কাস্ সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক’।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَال أَخَذَ بِيَدِه رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَقَالَ إِنِّيْ لَاحِبُّكَ يَا مُعَاذُ فَقُلْتُ وَاَنَا اُحِبُّكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ فَلَا تَدَعْ اَنْ تَقُوْلَ فِـىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَوةٍ رَبِّ أَعِنِّيْ عَلـى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَائِـيُِّ اِلَّا اَنَّ اَبَا دَاؤُدَ لَمْ يَذْكُرْ قَالَ مُعَاذُ وَّاَنَا اُحِبُّكَ
গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৪ঃ সলাত (كتاب الصلاة)
হাদিস নম্বরঃ ৯৪৯
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমিও সবিনয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি প্রত্যেক সলাতের পর এ দু‘আ পাঠ করতে ভুল করো নাঃ ‘‘রব্বি আ‘ইন্নী ‘আলা- যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবা-দাতিকা।’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিকর, শুকর ও উত্তমরূপে ‘ইবাদাত করতে সাহায্য কর)। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)
#৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার, ১ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহয়ি ওয়া ইউমিত ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির
# আয়াতুল কুরসি ১বার
৭টি অত্যন্ত ফযিলতময় জিকির শিখব-

এছাড়া হাদীস শরীফের মাধ্যমে আমরা অসংখ্য জিকির জানতে পারি তা থেকে ৭টি সেরা ও অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতমন্ডিত জিকির হল
১। (আফযালু জ্জিকরে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আফযালুদ্দোয়া আলহামদুলিল্লাহ)
অথ্যাৎ উত্তম জিকির হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং উত্তম দোয়া হল আলহামদুল্লিাহ বলা।
তাছাড়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ফজিলতে আরো বর্ণিত আছে কেয়ামতের মাঠে বান্দার গুনাহের হিসাব লিখা থাকবে ৯৯টি দপ্তর পরিপূর্ণ সবগুলি এক পাল্লায় দেয়া হবে আর অপর পাল্লায় শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দেয়া হবে আর তাতেই বান্দার নেকির পাল্লা ভারি হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ।

নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন- আল্লাহর জিকির ব্যতীত আল্লাহর গযব থেকে বাঁচানোর মত আর কিছু নাই, তখন সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন এয়া রাসুলাল্লাহ জিহাদ ফি সাবিল্লিাহও কি গযব থেকে বাঁচাতে পারবে না? তখন প্রিয় নবীজি এরশাদ করলেন যদি জিহাদ করতে করতে তরবারী ভেঙ্গে যায় এভাবে ৩ বার তরবারে ভেঙ্গে যায় তাহলে তা গযব থেকে বাঁচাতে পারবে,
তাহলে চিন্তা করে দেখুন জিহাদের ময়দানে কঠিনতম জিহাদে ৩/৩টি তরবারী ভেঙ্গে যাওয়ার পর যে গযব থেকে বাঁচা যায় সে গযব থেকে আমরা শুধু জবানে আল্লাহর জিকির করে বেঁচে যেতে পারি।
২য় জিকির হল-
আত তারগিব ওয়াত তারহিব নামক হাদীস গ্রন্থে রয়েছে- নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন যে ১০ বার পড়বে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদির)
অথ্যাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি একক, তার কোন শরীক নাই, রাজত্ব তারই, প্রসংশা তারই, তিনিই সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
যে এটি ১০ বার পাঠ করবে বনি ইসমাইল গোত্রের ৪ জন গোলাম আযাদ করার সমান নেকি সে অর্জন করতে পারবে।
৩য় জিকির হল
এটিও আত তারগিব ওয়াত তারহিব এর হাদীস- নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন যে নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহুআকবর এবং ১ বার (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদির)
পাঠ করবে তার সকল গুনাহ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিবেন যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমান হয়।
৪র্থ জিকির হল
এটি বুখারী শরীফের সর্বশেষ হাদীসে এ জিকিরটি রয়েছে
كلمتان حبيبتان إلى الرحمن، خفيفتان على اللسان، ثقيلتان في الميزان : سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم.
দুটি কালিমা আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়, কিন্তু পড়তে খুব সহজ, আর মীযানের পাল্লায় খুব ভারি : সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহ্ সুবহানাল্লাহিল আযীম।

৫ম জিকিরটি হল
এটিও আততারগিবের হাদীস নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন (লা হাউলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ) এটি হল (ফাইন্নাহা কানজুন মিন কুনুজিল জান্নাহ) জান্নাতের খাযানা সমুহের ১টি খাজানা।

৬ষ্ঠ জিকির
নবী (সঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতিদশ বার রহমত বরষন এবং তিনি (সঃ) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে দশবার এবং বিকেলে দশবার দুরুদ পাঠ করবে সেব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত পাবে ।" [তাবারানী, মাজময়াউজ জাওয়াঈদ-১০/১২০, সহীহ আত-তারগীব ওয়াততারহীব-১/২৭৩]

৭ম জিকির
যে ব্যক্তি 'সুবহানাল্লাহিল আযীমি ওয়াবি হামদিহী' পাঠ করবে প্রতিবারে তার জন্য জান্নাতে একটি করে (জান্নাতী) খেজুর গাছ রোপনকরা হবে । [আত-তিরমিযী-৫/৫১১,আল-হাকীম-১/৫০১, সহীহ আত-তিরমিজী-৩/১৬০]

আল্লাহ পাক আমাদেরকে সদা সর্বদা আল্লাহর জিকির দ্বারা আমাদের জিহ্বাকে সজিব রাখার তৌফিক দান করুন আমিন।





কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.