সুরা ফাতেহার ১০০টি বিষ্ময়কর ফজিলত। হাদীসের রেফারেন্স সহ।
ইমাম বুখারী (রহঃ) এর সহিহ বুখারীর ২য় খন্ডের হাদিস হযরত আবু সাঈদ বিন মুয়াল্লা বর্ননা করেন যার সার সংক্ষেপ হল আমি নামাজে ছিলাম প্রিয় নবী আমাকে ডাকলেন আমি নামাজ শেষ করে গেলাম নবীজি আমাকে বললেন তুমি আমার ডাকে সাড়া দাওনি কেন? আমি বললাম আমি নামাজে ছিলাম, তখন হুযুর (দঃ) বললেন তুমি সুরা আনফালের ২৪ নং আয়াত জাননা
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَجِيبُواْ لِلّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُم لِمَا يُحْيِيكُمْ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহবান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন। । [ সুরা আনফাল ৮:২৪ ]
সুতরাং আল্লাহ ও রাসুল ডাকলে নামাজে থাকলেও জবাব দিতে হবে, এরপর হুযুর (দঃ) বললেন আমি আজ তোমাকে এক মহান সুরার শিক্ষা দিব তা হল সাবআ মাছানি বা বারবার পঠিত ৭টি আয়াত এবং কুরানে আজিম। অথ্যাৎ সুরা ফাতেহা। এ থেকে বুঝা যায় কুরানে করিমের সবচেয়ে মহান সুরা হল সুরা ফাতেহা।
বুখারী শরীফের ২য় খন্ডে ৭৪৯ নম্বর পৃষ্ঠায় আরো একটি হাদীস যার সার সংক্ষেপ হল- যা আবু সাঈদ খুদুরী (রাঃ) হতে বর্ণিত এক সফরে এক কবিলার সরদারকে সাপে কাটে তারা অনেক চেষ্টা করে কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হয়না অবশেষে এক সাহাবী ৩০টি ছাগলের বিনিময়ে ঝাড়ফুক করতে রাজি হলেন, েএবং ঝাড়ফুক করলেন সে সরদার মুহুর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন, সে সাহাবী বলেন আমি শুধুমাত্র সুরা ফাতেহা পড়ে কবিলার সরদারকে ফুঁক দিয়েছি তাতেই সে সুস্থ হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ। সুতরাং বুঝা গেল যে কোন ব্যথা, দুঃখ, অসুস্থতা, বিষাক্ত প্রাণীর আক্রমন সবকিছুর জন্য এ সুরা ফাতেহা পড়ে ফুক দিলে ইনশা আল্লাহ শেফা পাওয়া যাবে। সে জন্য এ সুরাকে সুরা শেফাও বলে।
ইমাম মুসলিম রেওয়ায়েত করেন হাদীসটি ১ম খন্ডের ১৭০ পৃষ্ঠায় রয়েছে যার সার সংক্ষেপ হল
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলে করিম (দঃ) এরশাদ করেন আল্লাহ তায়ালা বলেন আমি ও আমার বান্দার মধ্যে সুরা ফাতেহাকে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করা হয়েছে, সুরা ফাতেহার অর্ধেক অংশ বান্দার জন্য অর্ধেক অংশ আল্লাহর জন্য যেমন
বান্দা বলে- আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন
আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা আমার প্রসংশা করেছে
বান্দা বলে- আররাহমানির রাহিম
আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা আমার গুনগাণ করেছে
বান্দা বলে- মালিকি এয়াউমিদ্দিন
আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা আমার সম্মান করেছে
বান্দা বলে- ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন
আল্লাহ বলেন- আমার বান্দার জন্য তাই নির্ধারিত আছে যা আমার বান্দা আমার কাছে চায়
বান্দা বলে- ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম সিরাতাল্লাজিনা আন আমতা আলাইহিম গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লিন
আল্লাহ বলেন- ইহা আমার বান্দার জন্য, এবং আমার বান্দার জন্য সেই জিনিষ রয়েছে যার জন্য সে দোয়া করে।
নাসাঈ শরীফের ৫ম খন্ডের ১২ পৃষ্ঠায় একটি হাদীস যার সার সংক্ষেপ হল একটি হযরত জিবরাইল (আঃ) হুযুরের পাশে ছিলেন এমন সময় আসমানে একটি আওয়াজ হল, হযরত জিবরাইল বলেন এটি আসমানের দরজা খোলার আওয়াজ যে দরজাটি আর কখনো খোলা হয়নি, সে দরজা দিয়ে এক ফেরেশতা আজ প্রথমবারের মত জমিনে নাজিল হয়েছে, সে ফেরেশতা এসে সালাম দিয়ে বলল আপনাকে ২ নুরের সু সংবাদ, ১টি হল সুরা ফাতেহা ২য় নুর হল সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত।
ইমাম দারেমি (রহঃ) সুনানে দারেমির ২য় খন্ডে ৩২০ পৃষ্ঠায় হাদীস বর্ণনা করেন- আবদুল মালেক বিন ওমায়ের থেকে বর্ণিত তিনি বলেন হুযুর (দঃ) এরশাদ করেন সুরা ফাতেহা দ্বারা সকল রোগের শেফা হয়।
মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩১০ পৃষ্ঠা হাফেজ নুরুদ্দীন হায়ছমি (রহঃ) বয়ান করেন, হযরত আবু জায়েদ (রাঃ) বর্ণনা করেন আমি নবী করিম (দঃ) এর সাথে মদীনার কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম এক লোক তাহাজ্জুদ নামাজে সুরা ফাতেহা পাঠ করছিল, নবী করিম (দঃ) তাঁর তেলাওয়াত শুনে দাঁড়িয়ে গেলেন সুরা ফাতেহা তেলাওয়াত শেষ হলে নবী করিম (দঃ) ফরমালেন পবিত্র কুরআনে এর মত আর কোন সুরা নাই।
সর্বপ্রথম পুর্নাঙ্গ সুরা হিসাবে এই সুরা ফাতেহা নাজিল হয়েছে, এর আগে সুরা আলাক ও সুরা মুদ্দাচিছর এর কিছু আয়াত নাযিল হয়েছে।
ইমাম ইবনে আবি শায়বা তাঁর মছনফে এবং আবু নুয়াইম এবং বায়হাকী আপন আপন কিতাবে বর্ননা করেন- যার সার সংক্ষেপ হল
রাসুলে আকরাম (দঃ) মা খাদিজাতুল কুবরাকে বললেন- যখন আমি একাকি থাকি তখন এক আওয়াজ শুনি, হযরত আবু বকরের পরামর্শে মা খাদিজা হুযুরকে নিয়ে ওয়ারাকা বিন নওফেলের কাছে গেলেন হুযুর ওয়ারাকাকে বললেন আমি যখন একাকী থাকি তখন আওয়াজ শুনি কি আওয়াজ প্রশ্ন করলেন হুযুর (দঃ) সম্পূর্ণ সুরা ফাতেহা পড়ে শুনালেন, এ কথা শুনে ওয়ারাকা বললেন আপনাকে সু সংবাদ আমি সাক্ষি দিচ্ছি, আপনি সে হাস্তি যার ব্যপারে হযরত ঈসা ও হযরত মুসা (আঃ) বলে গেছেন, আপনি হলেন প্রেরিত রসুল।
সুরা ফাতেহা হল পবিত্র কুরআনের ১ম সুরা
এই সুরার অনেকগুলি নাম আছে, কোন কিছুর নাম বেশী হওয়া তার ফজিলত বেশী হওয়ার প্রমান
সুরা ফাতেহার অসংখ্য নাম থেকে কিছু নাম হল যেমন (১) ফাতেহাতুল কিতাব, এ নামটি হুযুর (দঃ) দিয়েছেন যেমন তিরমিযি শরীফের হাদীস হযরত উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) বর্ণনা করেন নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন যে ব্যক্তি ফাতেহাতুল কিতাব পড়েনি তার নামাজ পূর্ন হবে না (২) উম্মুল কুরআন- উম্মুন বলা হয় কোন কিছুর মুলকে, এটিও হুযুরের দেয়া নাম যেমন সুনানে দারেমির ২য় খন্ডের হাদীস হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেন আলহামদুলিল্লাহ উম্মুল কোরআন, উম্মুল কিতাব এবং সাবয়ে মাসানি। (৩) সুরাতুল হামদ (৪)সাবউ মাসানি যা বার বার পড়া যায় যেমন আল্লাহ তায়ালা সুরা ফাতেহার ব্যপারে সুরা হিজরের ৮৭ নং আয়াতে বলেন
وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ
আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কোরআন দিয়েছি। [ সুরা হিজর ১৫:৮৭ ]
(৫) উম্মুল কিতাব (৬) ওয়াফিয়া - হযরত সুফিয়ান বিন উনাইদ বলেন এটিকে ওয়াফিয়া এ জন্য বলা হয় কারন এ সুরাটি নামাজে অর্ধেক পড়া যায় না। (৭) কাফিয়া এটিকে কাফিয়া এ জন্য বলা হয় এ সুরার পরিবর্তে বা এ সুরার স্তানে অন্য সুরা পড়া যায় না। (৮) আশশিফা ইমাম দারেমী রেওয়ায়েত করেন হযরত আবদুল মালেক বিন ওমায়ের (রাঃ) বয়ান করেন রাসুলুল্লাহ (দঃ) এরশাদ করেন সুরা ফাতেহা সকল রোগের শেফা। আর সে রোগ শারীরীক হউক কিংবা মানসিক, সব ধরনের রোগের চিকিৎসা এ সুরাতে আছে। (৯) সুরাতুস সালাত (১০) সুরাতুদ দোয়া - এ সুরাতে দোয়া আছে তাই এর নাম সুরাতুদ দোয়া। (১১) সুরাতুল কানজ বা খাজানার সুরা
এসব নাম দ্বারা আমরা বুঝতে পারি
#প্রতিটি ভাল কাজ সুরা ফাতেহা দিয়ে শুরু করা উচিত
# উম্মুন দ্বারা বুঝা যায় এটি সকল ভাল ও উত্তমের মুল
# মাছানি দ্বারা বুঝা যায় এটি বার বার পড়া উচিত
# সকল রোগের জন্য এটি শেফা হিসেবে ব্যবহার করা চায়
# সকল বিপদের জন্য সহায়ক
সুরা ফাতেহা পবিত্র কুরআনের সার সংক্ষেপ
যেমন িএতে তওহিদের বাণী আছে, নবুয়তের কথা আছে, শারিরিক আর্থিক এবাদতের দিকে ইশারা আছে, নাফরমান বান্দার প্রতি আযাবের ভয় ও ওয়াদা আছে, পূর্বের উম্মতের নেককার ও নাফরমানদের উল্লেখ আছে, মৃত্যুর পর পুনরায় জীবনের কথা আছে, দোয়া আছে। সুবহানাল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন...........
কোন মন্তব্য নেই