জুমার খুতবা। বড়পীর আবদুল কাদের জিলানীর মা বাবার চরিত্র ও বর্তমান সমাজ







রবিউস সানি ২য় জুমা
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)
জন্মের আগে ও শৈশবকালীন কারামাত ও ইলমে দ্বীনের খেদমত
সম্মানিত সুধীবৃন্ধ হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ) এর জন্মের আগে জন্মের
পরে এবং শৈশবকালীন বিষ্ময়কর কিছু অলৌকিক ঘটনা আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব- আশা
করি গেয়ারবী শরীফের এই মাসে আমার এই উপস্থাপনাটি আপনাদের ভাল লাগবে এবং অনেক কিছু
শিখতে পারবেন
হযরত বড়পীর (রঃ) পিতা ও মাতা উভয় দিক থেকেই আমাদের প্রিয় নবীর
আউলাদ
পিতৃকুলের দিক থেকে যেমন
) হযরত
আলী ও ফাতেমা
(রাঃ)
) ইমাম
হাসান
(রাঃ)
) হাসানুল
মুসান্না
(রহঃ)
) আবদুল্লাহ
আল মহয
(রহঃ)
) মুসা
আল জুন
(রহঃ)
) আবদুল্লাহ
ছানী
(রহঃ)
) মুছা
ছানী
(রহঃ)
দাউদ
(রহঃ)
মোহাম্মদ
(রহঃ)
১০ইয়াহিয়া
জাহেদ
(রহঃ)
১১আবু
আবদুল্লাহ আল জিবিল্লী
(রহঃ)
১২আবু
ছালে মুছা জঙ্গী
(রহঃ)
১৩আবদুল
কাদের জিলানী 
(রহঃ)

মায়ের দিক থেকে বংশ তালিকা হল
হযরত
আলী ও ফাতেমা
(রাঃ)
ইমাম
হোসাইন
(রহঃ)
জয়নাল
আবদীন
(রহঃ)
ইমাম
বাকের
(রহঃ)
ইমাম
জাফর সাদেক
(রহঃ)
মুসা
কাজেম
(রহঃ)
আলী
রেজা
(রহঃ)
মুহাম্মদ
জাওয়াদ
(রহঃ)
কামালুদ্দিন
ইসা 
(রহঃ)
১০আবুল
ফাতাহ আবদুল্লাহ
(রহঃ)
১১মাহমুদ
(রহঃ)
১২মুহাম্মদ
(রহঃ)
১৩আবু
জামাল
(রহঃ)
১৪আবদুল্লাহ
সাওমাঈ জাহেদ
(রহঃ)
১৫উম্মুল
খায়ের ফাতেমা
(রহঃ)
১৬আবদুল
কাদের জিলানী
(রহঃ)

হযরত আবদুল কাদের
জিলানী
(রহঃ) শিয়া সম্প্রদায়ের
বিরুদ্ধে অত্যন্ত সোচ্ছার ছিলেন
, তিনি তাঁর কিতাব গুনিয়াতুত
তালেবিন কিতাবে শিয়াদের আকিদাকে ইহুদীদের আকিদার সাথে তুলনা করেন তাই শিয়ারা বড়পীর
আবদুল কাদের জিলানী
(রহঃ) কে মানে না।

বড়পীরের
আব্বা ও আম্মার মহান চরিত্রের আশ্চর্য্য ঘটনা
হযরত আরমান সারহাদী
রচিত
সাওয়ানেহে গাউসে আজমনামক
গ্রন্থে বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী
(রহঃ) এর পিতা হযরত আবু ছালে মুসা জঙ্গী (রহঃ) এর এক চমকপ্রদ ঘটনা পাওয়া যায়-
বড়পীরের আব্বাজান হযরত
আবু ছালে মুসা জঙ্গী জিলানের নদীর তিরে এবাদতে লিপ্ত থাকতেন একদিন দেখলেন নদীর তীর
ঘেষে একটি আপেল ভেসে যাচেছ
, ক্ষুধার তাড়নায় আবু ছালে মুসা জঙ্গী (রহ) ফলটি খেয়ে ফেললেন, পরক্ষনেই
অনুশোচনা করতে লাগলেন এই ফল প্রকৃত মালিকের অনুমতি ছারা খাওয়া ঠিক হয়নি
, তাই মালিক খুঁজতে খুঁজেতে উজানের দিকে চলেতে চলেতে নদীর পারে এক ফলের
বাগান দেখতে পেয়ে ফলের মালিক পেলেন যার নাম হযরত আবদুল্লাহ ছাওমাঈ
, যুবক যখন সামান্য একটি ফল এর জন্য ক্ষমা চাইতে এতটুকু আসতে পারে সে কোন
সাধারণ যুবক নয় ভেবে সে যুবককে কাছে রাখার জন্য তিনি বাহানা করলেন
, বললেন আমি মাফ করব তবে শর্ত হল আমার এখানে ১২ বছর আমার খেদমত করতে হবে,
আবু ছালে বান্দার হক বড়ই কঠিন না হয় আখেরাতে মুক্তি পাওয়া মুশকিল এ
কথা ভেবে রাজি হয়ে গেলেন
,
১২ বছর হযরত আবদুল্লাহ
ছাওমেঈ
(রহঃ) এর সংসর্গে থেকে
তিনি আধ্যাত্মিকতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেলেন
, এভাবে ১২ বছর
পার হয়ে গেল
, ১২ বছর পর বিদায়ের পালা এবার আবদুল্লাহ ছাওমেঈ
বললেন তুমি যদি আমার আরো ১টি শর্ত পুরণ কর তাহলে আমি তোমাকে সে আপেল এর হক মাফ করব
,
তা হল আমার এক অন্ধ খোড়া বধির কন্যা আছে তাকে বিয়ে করতে হবে।
আবু ছালে চিন্তা করলেন
এই মাফের জন্য ১২ বছর কষ্ট করেছেন এখন যদি রাজি না হই তাহলে আখেরাতে মুক্তি নাই
, তাই রাজি হয়ে গেলেন, বিয়ের পর বাসর ঘরে গিয়ে দেখেণ
এক সুন্দরী রমনী
, সুস্থ রমনী, দেখে ভয়
পেয়ে পিছপা হয়ে বের হয়ে গেলেন
, তখন শশুর আবদুল্লা ছাওমেঈ
বললেন আমি তোমাকে বলেছি আমার মেয়ে অন্ধ কারন সে কোনদিন পরপুরুষের দিকে তাকায়নি
,
খোড়া বলেছি কারন সে কখনো অন্যায় পথে পা বাড়ায়নি, বধির বলেছি কারন সে অশ্লিল অধর্মের কথা নেনি। এই নব পরিনীতি বিবির নামই হল
উম্মুল খায়ের ফাতেমা। ১২ বছর সে ঘরে থেকেও আবু ছালেন মুনিবের সে কন্যাকে একবারও
দেখলেন না। সুবহানাল্লাহ এমন মেয়ে হলে সে গর্ভের সন্তান অলিকুল সম্রাট হবে।

বড়পীর
মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় অলৌকিক ঘটনা
বিয়ের পর আবু ছালে মুছা
জঙ্গী ও উম্মুল খায়ের ফাতেমার ঘরে কোন সন্তান হয়না
, উম্মুল
খায়ের ফাতেমার বয়স যখন ৬০ বছর আল্লাহর রহমতে উম্মুল খায়ের ফাতেমার গর্ভের এক
সন্তান  আসে
,
সন্তান মায়ের গর্ভের আসার পরপরই শুরু হয় নানা অলৌকিক ঘটনা
১ম মাসে বিবি হাওয়া (আঃ) স্বপ্নে এসে মোবারকবাদ দেন
২য় মাসে বিবি সারাহ (আঃ)
৩য় মাসে বিবি আছিয়া (আঃ)
৪থ মাসে বিবি মরিয়ম (আঃ)
৫ম মাসে বিবি খাদিজা (রাঃ)
৬ষ্ঠ মাসে হযরত আয়েশা (রাঃ)
৭ম মাসে বিবি ফাতেমা (রাঃ)
৮ম মাসে বিবি জয়নব (রাঃ)
৯ম মাসে বিবি ছকিনা (রাঃ)

পিতা আবু ছালের স্বপ্নঃ
যেদিন বড়পীর জন্ম গ্রহণ
করেন সেদিন আবু ছালে মুছা জঙ্গী স্বপ্নে দেখেণ নবী করিম
(দঃ) সাহাবাদের নিয়ে আমার ঘরে তশরীফ আনেন এবং আমাকে
বলেন
(এয়া আবু
ছালেহ আতাকাল্লাহু ইবনান ছোয়ালেহা
) (ওয়াহুয়া ওয়ালাদি,
ওয়া মাহবুবী, ওয়া মাহবুবুল্লাহ)

অথ্যাৎ হে আবা ছালে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে একজন নেককার সন্তান দান করেছেণ সে আমার
বংশধর আমার প্রিয় এবং আল্লাহরও প্রিয়

জন্ম ও রোজা> জন্ম থেকেই শরীয়তের বিধান পালনঃ
বড়পীর ইরান এর জিলান বা
গিলান শহরে ৪৭১ হিজরীতে ১লা রমজান সোমবার সুবেহ সাদেকের সময় জন্ম গ্রহণ করেন
, উম্মুল খায়ের ফাতেমা বলেন আবার এ সন্তান জন্মের দিন থেকে রোজা রাখে,
সে দিনে দুধ পান করত না ইফতারের সময় হলে দুধ পান করত, এভাবে রমজানের ৩০টি রোজা সে পালন করেছে।
ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে
সকলের মনে সন্দেহ ছিল কিন্তু সকলে সেহেরী খেলেও চাঁদ দেখা গিয়েছে কিনা দ্বিধাদন্দে
ছিল
, তখন তখনকার জামানার এক বুযুর্গ সকলকে বললেন
আবু ছালেহ মুছার কাছে গিয়ে জেনে নাও তাঁর ঘরের শিশুটি সকাল থেকে দুধ খেয়েছে কিনা
সকলে খোঁজ নিয়ে দেখল শিশু আবদুল কাদের সুবে সাদেক থেকেই দুধ পান করেনি
, তখন সকলে কনফার্ম হয়ে গেল ঈদের চাঁদ দেখা যায়নি।
দুনিয়ায় এসেই উম্মতকে
ফরয রোজা পালন এর শিক্ষা দিলেন। শরীয়তের হকুম পালনের শিক্ষা দিলেন। সুবহানাল্লাহ
, আল্লাহ বড়পীরকে কবুল করুন উনার সদকায় আমাদের গুনাহ সমুহ মাফ করুন।
বড়পীর নিজেই বলেন-
(বেদায়াতু আমরি জিকরুহু মালাউল ফাদা)
(ওয়া ছাওমি ফি মাহদি বিহি কানা)
আমার
শৈশবকালের জিকির আযকারে জগত পরিপূর্ণ
দোলনার
রোজা পালনটিও প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

প্রথম মাদরাসায় ফেরেশতাদের
প্রটোকল
যেদিন বড়পীর প্রথম
মাদরাসায় যাচ্ছিল ফেরেশতারা তাঁকে বেষ্টন করে মাদরাসায় নিয়ে গেল
, ছাত্রদের ভিরে খালি জায়গা ছিল না তখন সকলে গায়েবী আওয়াজ শুনল (তাফাচছাহু লি ওয়ালিয়্যিল্লাহ)
অথ্যাৎ আল্লাহর অলির জন্য জায়গা করে দাও।
এ আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি
সকলে আবদুল কাদের জিলানির জন্য জায়গা করে দিল।

১ম দিন ১৮ পারা কুরআনঃ
ওস্তাদ যখন শিশু আবদুল
কাদেরকে কুরান এর ছবক দেয়া আরম্ভ করল শিশু আবদুল কাদের গড়গড় করে ১৮ পারা মতান্তরে
১৫ পারা কুরান শুনাতে লাগল এবং ওস্তাদ প্রশ্ন করল তুমি এসব কখন শিখল শিশু আবদুল
কাদের জবাব দিল আমি আমার মায়ের গভে থাকতেই ১৮ পারা কুরান মুখস্থ করে ফেলি। কারন
উম্মুল খায়ের ফাতেমা ১৮ পারার হাফেজ ছিলেন তিনি সারাক্ষন গুনগুন করে এ কুরআন
তেলাওয়াত করতেন
,

গর্ভবতী নারীর চিন্তার
প্রভাব সন্তানের মনেঃ
বর্তমানের গবেষকরা
গর্ভবতী নারীদের নিয়ে গবেষনা করে প্রমাণ পেয়েছেন সন্তান গর্ভে থাকা কালিন মায়ের মন
মেজাজ চিন্তা চেতনা
, কাজ কর্ম, আমল,
গুনাহ, নেকি, এসবের
প্রভাব পরে। তাই আজ আমাদের সন্তানেরা যে মা বাবার কথা শুনেনা আল্লাহর ভয় নাই
,
সুন্নতের এত্তেবা নাই কারন সে যখন তার মায়ের গর্ভে ছিল তখন তার মা
তাঁকে গর্ভে ধারন করে খোদাভীতি থেকে দুরে ছিল তাই আজ সন্তানের এ অবস্থা। তাই
গর্ববতী মাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও গর্ভাবস্থায় ধার্মিকতা
,
পরহেজগারিতা, খোদাভিতির জীন্দেগী অতিবাহিত
করতে হবে।
নেপোলিয়ন বলেছেন-
আমাকে একটি ভাল মা দাও আমি
একটি ভাল জাতি উপহার দিব

মসজিদে জাহান্নামী ও
জান্নাতীদের জুতা পৃথক করার ঘটনাও প্রনিধানযোগ্য
একদিন ছোট বেলায় হযরত
বড়পীর পিতার সাথে মসজিদে গেলেন তিনি বাহিরে জুতা গুলিকে ২ ভাগে ভাগ করে দিলেন
, তখন লোকজন বড়পিরের শিশুশুলভ আচরনে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করলেন তখন আবু
ছালে ছেলেকে শাসনের সুরে ধমক দিলেন
, তখন বড়পীর জবাব দিলেন
আমি দেখছি জান্নাতী লোকদের জুতা জাহান্নামী লোকদের জুতার সাথে মিশে আছে তাই আমি
জুতা গুলি দুই ভাগে ভাগ করে দিলাম
, ছোট শিশুর এমন আশ্চর্য্য
কথা শুনে মুসল্লিরা তাজ্জব হয়ে গেলেন। আর বলতে লাগলেন এ শিশু পরে বড় কিছু হবে।
শিশু আবদুল কাদেরকে গাভীর
সতর্কতাঃ
বড়পীরের পিতা
ইন্তেকালের পর সংসারের হাল ধরতে মাঠে গাভি নিয়ে যাচ্ছিলেন
, কিন্তু গাভি হঠাৎ পিছন ফিরে বলে উঠল
(এয়া আবদাল
কাদের মা লিহাজা খুলিকতা ওয়ালা বিহাজা উমিরতা
) 
অথ্যাৎ হে আবদুল কাদের
এ জন্য তোমাকে সৃষ্টি করা হয়নাই
, এবংএ জন্য তোমাকে
আদেশও করা হয় নাই।
এ কথা শুনে বড়পীর
চিন্তিত হয়ে গেলেন এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য মনস্থ করে নিলেন।

ডাকাত দলের কবলে শিশু আবদুল
কাদেরঃ
একদিন মায়ের অনুমতি
নিয়ে আবদুল কাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য এক বানিজ্য কাফের সাথে বাগদাদ রওয়ানা হলেন
, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর আর মায়ের বয়স ছিল ৭৮ বছর,
মা সন্তানের বিদায়ের
সময় জামার আস্তিনে ৪০ টি স্বণমুদ্রা দিল এবং উপদেশ দিয়ে বললেন বেটা কখনো মিথ্যা
বলিও না। কারন আল্লাহ তায়ালা মিথ্যাবাদীকে পছন্দ করে না। তাছাড়া
(আসসিদকু ইউনজি ওয়াল কিজবু ইউহলিকু)
নিশ্চয়ই সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে।
কাফেলা বাগদাদের
উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে পথে ৬০ জন অশ্বরোহী ডাকাতদল কর্তৃক কাফেলা আক্রান্ত হল
, ডাকাতদল সকলকে লুট করে নিল, শেষে এই ছোট বালককে
প্রশ্ন করল তোমার কাছে কি কিছু আছে বালক মায়ের উপদেশ পালনার্থে বলে দিল হ্যাঁ আমার
জামার আস্তিনে ৪০ টি স্বর্ণমুদ্রা আছে। ডাকাত সর্দার বলল সকলেই নিজ নিজ সম্পদ
বাঁচাতে মিথ্যা বলেছে তুমি কেন সত্য বলছ
? তখন আবদুল কাদের
বলল সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় মিথ্যা ধ্বংস করে আর আমার মায়ের হকুম হল আমি যেন
যে  কোন পরিস্থিতিতে মিথ্যা না বলি
,
আজ মায়ের সে আদেশ পালন করছি। ডাকাত দলের সর্দার আহমদ বদভীর অন্তরে
বড়পীরের েএই কথাগুলি দারুনভাবে আছর করল
, আর বলতে লাগল হায়
হায় দেখ এই ছোট ছেলে মায়ের সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করেনি
, আর
আমরা প্রতিনিয়ত মহান রবের হাজারো ওয়াদাকে ভঙ্গ করছি। এ কথা বলতে বলতে ডাকাত দলের
সর্দার কাঁদতে কাঁদে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ল
, সকল ডাকতরাও
সর্দারের এ কাঁদা দেখে তারাও কাঁদা আরম্ভ করল এবং নিজেদের সরা জীবনের কৃত সকল ভুল
এর জন্য তওবা করে সকলের কাছে তাদের মাল ফেরত দিয়ে দিল।
(নেগাহে অলি মে ইয়ে তাছির দেখি
বদলতি
হাজারো কি তকদীর দেখি
)
অথ্যাৎ আল্লাহর অলিদের
নেক নজরের এমন তাছির রয়েছে যে
, এক মুহুর্তে হাজারো
তকদীর পরিবর্তন হয়ে যায়।
এই ৬০ জন ডাকাতই মুলত
বড়পীরের প্রথম মুরিদ
, যারা পরবর্তীতে এক একজন আল্লাহর অলিতে
রুপান্তরিত হয়ে যান।
তোমারী
নামের গুনে আগুন হয়ে যায় পানি
যেই
নজরে চোরকে তুমি ‍দিলে কুতুব বানাইয়া
সে
নজরে কর দয়া ওগো দয়াল গাউছিয়া
সকলেরে
দাওগো তুমি তোমার সে নজরখানি
তোমারি
নামের গুনে আগুন হয়ে যায় পানে
  
৪০ দিনার শেষ হয়ে গেলে..
বড়পীর মাদ্রসায়
অধ্যায়নরত অবস্থায় অল্পদিনেই মায়ের দেয়া সে ৪০ দিনার খরচ হয়ে গেল
, বড়পীর একদিন ক্ষুধায় কাতর হয়ে অনেক চেষ্টা করেও হালাল রুজির কোন ব্যবস্থা
করতে না পেরে পেরেশান হয়ে
- নামাজ পড়ে মসজিদের এক কোনায় বসে
বসে জিকির করছিলেন এমন সময় এক যুবক কিছু গোস্ত ও রুটি নিয়ে মসজিদে আসল খাবার জন্য
এমন সময় বড়পীরকে দেখে প্রশ্ন করল তুমি কি আবদুল কাদেরকে চিন
? বড়পীর বললেন আমিই হলাম আবদুল কাদের, তখন সে যুবক বলল
আমি আপনার মায়ের কাছ থেকে আপনার জন্য চালানি এনেছি ৮ দিনার আপনার অনেক খোঁজ নিলাম
কিন্তু পেলাম না অবশেষে এখন আপনার ৮ দিনার থেকে কিছু রুটি ও গোস্ত নিয়ে আসলাম খেতে
আর ভাগ্যক্রমে আপনাকে পেয়ে গেলাম সুতরাং এই নিন এসব আপনারই হক
, কিন্তু বড়পীর সে  লোককে সাথে নিয়ে
একসাথে খেলেন এবং যুবককে কিছু টাকা দিয়ে দিলেন খরচের জন্য। এটাই হল সৌজন্যবোধ। এ
ঘটনায় ছাত্রদের জন্য শিক্ষা আছে
, আপনারা যারা শিক্ষা অর্জনের
জন্য দুর দুরান্তে চলে যান তারাও হালাল ছাড়া খাবে না
, হারাম
থেকে বেঁচে থাকবে তাহলে আল্লাহ তায়ালা একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।

হুযুর
গউছে আযম এর বড় কারামাত এলমঃ
হযুর
গউছে পাকের সবচেয়ে বড় কারামত উনার জ্ঞান, কিভাবে উনার জ্ঞান উনার বড় কারামত তা
ইনশা আল্লাহ আজ সহজ ভাষায় বর্ণনা করব আশা করি সম্পূর্ণ আলোচনা শুনলে আপনাদের অনেক
অজানা বিষয় জানা হবে, মনে শান্তি লাগবে,
হুযুর গউছে পাক নিজেই
বলেন
দারাছতুল
ইলমা হাত্তা ছিরতু কুতুবান
ওয়া
নিলতুল সা
দা মিম মাওলাল মাওয়ালি
অথ্যাৎ- আমি এলম অর্জন করেই গেলাম আর এলম হাছিল করতে করতে কুতুব হয়ে গেলাম।
হুযুর গউছে পাক বেলায়েত
এর উঁচু স্তর হাসিল করার পিছনে ফাউন্ডেশন হল এলম। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল আমরা
কিছু কিছু বেলায়েত এর দাবীদার দেখতে পায় যাদের সাথে এলম এর কোন সম্পর্কই নাই।
এলম ছাড়া কেহ বেলায়েত
এর দাবী করতে পারে না
, তবে যাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা করুনা করেন
তাদের জাহেরী এলম না থাকলেও বাতেনি ভাবে সে এলম দিয়ে দেন। যেমন হযরত খিজির
(আঃ) তিনি কারো কাছে বা মাদরাসায় গিয়ে পড়ালেখে করেননি
কিন্তু আল্লাহ তায়ালা উনাকে এলম  এর খজিনা
দিয়ে রাখলেন।

বাগদাদে ৪৮৮ হিজরীতে
হুযুর গউছে পাক পৌঁছেন। ৫২১ হিজরী থেকে ৫৬১ হিজরী পর্যন্ত ৪০ বছর খুতবা দিয়েছেন
এবং জ্ঞান বিতরন করেছেন। গউছে পাকের বেছাল হয়েছে ৫৬১ হিরীতে।
হুযুর গউছে পাক সপ্তাহে
৩ দিন খুতবা দিতেন
, জুমার দিন জুমার আগে, রবিবার সকালে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। উনার সে খুতবা
শুনার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ জমায়েত হতেন। এবং তিনি নিজের জামেয়াতে
৫২৮ হি
থেকে ৫৬১ হি পর্যন্ত ৩৩ বছর
যাবৎ প্রতিদিন তিনি
হাজার হাজার ছাত্রকে পড়িয়েছেন
প্রতিদিন ১৩টি বিষয়ে
তিনি দরস দিতেন। তফসীর
, হাদীস, ফিকাহ,
আকিদা, আদব, বালাগাত,
মানতেক ও তাসাউফ শিক্ষা দিতেন। হুযুর গউছে পাকের খুতবাগুলি শুনার
জন্য তৎকালিন বড় বড় ওলামা ফোকাহা গন বড় বড় স্কলারগন একত্রিত হতেন এবং ৪০০ জন
ওলামায়েকেরাম হুযুর গউছে পাকের খুতবাসমুহ লিখতেন। প্রতিবছর ৩ হাজার ছাত্র হুযুর
গউছে পাকের কাছ থেকে সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করে ফারেগ হতেন।
সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী
যিনি ফিলিস্তিন জয় করেছেন তার সেনাবাহিনিতে বেশীরভাগই হুযুর গউসে পাকের ছাত্র
ছিলেন।

বড়পীরের তফসীর ও আল্লামা
ইবনুল জওযীঃ
আল্লামা ইবনুল যওযী
(রহঃ) বলেন আমি একবার বড়পীরের মজলিশে গেলাম সেখানে অসংখ্যা বড় বড় ওলামা মুফাসসির
বসা ছিল, বড়পীর (রহঃ) তিনি  কুরানের ১টি আয়াতের
তফসীর করতে লাগলেন ১টি তফসীর করেন আমাকে প্রশ্ন করেন আপনি কি এ তফসীর জানেন? আমি
বললাম হ্যাঁ, ২য় তফসীর করলেন প্রশ্ন করলেন আপনি কি এ তফসীর জানেন আমি বললাম নাআম,
অথ্যাৎ হ্যাঁ এভাবে তিনি ১১টি তফসীর করলেন আমি বললাম আমি জানি, এর পর থেকে তিনি
তফসীর করতে করতে ৪০টি তফসীর করলেন ১১টির পর যে বাকী ২৯টি  তফসীর করলেন তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না,
বড়পীর এত সুন্দর ও চমৎকার ভাবে তফসীর করলেন শুধু ১টি আয়াতের ৪০ ধরনের তফসীর,
সুবহানাল্লাহ। এরপর বড়পীর বললেন এসব তফসীর আমি পুরানা তফসীর থেকে বলেছি এবার আসুন
আমি এ আয়াতের বর্তমান যুগের সাথে মিলিয়ে তফসীর পেশ করি, এ কথা যখন বলল আল্লামা
ইবনে যওজী ওয়াজদের মধ্যে এসে গেলেন। এবং বেহুশ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ। এমন অগাধ
পান্ডিত্য ছিল বড়পীরের। আল্লাহ বড়পীরের জ্ঞানকে কবুল করুন উনার সদকায় আমাদেরকেও জ্ঞান
অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।
বড়পীরের রচিত কিতাবসমুহঃ
বড়পীরের লিখিত অসংখ্য
কিতাব যেমন গুনিয়াতুত ত্বালেবিন, সিররুল আসরার, ফতহুল গায়ব, এসব বই বাংলায়ও পাওয়া
যায়।

বড়পীরের ফতোয়াঃ
হাফেজ ইবনে হাজার
আসকালী
(রহঃ) লিখেন হুযুর গউছে
পাক
(রহঃ) তিনি মাযহাবে শাফেয়ী এবং
মাযহাবে হাম্বলীর ফিকহ মোতাবেক ফতোয়া দিতেন
, উনার কাছে
প্রতিদিন অসংখ্য বিষয়ে গোটা দেশ থেকে মানুষ ফতোয়ার জন্য আসতেন তিনি সাথে সাথে যে
কোন বিষয়ে সহসাত ফতোয়া দিয়ে দিতেন। এত গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন যে ফতোয়া লিখার
জন্য চিন্তাও করতে হত না।
এবং হুযুর গউছে পাকের
এসব ফতোয়া তৎকালিন বড় বড় ফকিহগন দেখতেন কোন ভুল ফতোয়া দিয়েছেন কিনা কিন্তু কোনদিন
কেহ সামান্যতম ভুল বের করতে পারেননি।

১০০ ফকিহের পরীক্ষাঃ
একদিন তৎকালীন ১০০ জন বড় বড় আলেম ও ফকিহ একত্রিত হয়ে একমত হল যে বড়পীর কিভাবে এত
জ্ঞানের অধিকারী
, তঁর জ্ঞানের গভিরতা কতটুকু তা পরীক্ষা করবে,
সে সুবাদে তারা হুযুরের মজলিসে গিয়ে পৌঁছল, কঠিন
কঠিন প্রশ্ন রেডি করে মজলিশে বসে গেল
, কিন্তু হুযুর গউছে
পাকের মজলিশে বসে তারা হুযুরের খুতবা শুনে সকলেই ওয়াজদে এসে গেল সকলে পাগলের মত
নিজেদের কাপড়চোপর ছিড়তে আরম্ভ করল
, অবশেষে হুযুর সৈয়্যদেনা
গউছে আজম তাঁদের শান্ত করলেন এবং কাছে ডাকলেন এবং তাঁরা প্রত্যেকে যে প্রশ্ন মনে
মনে ঠিক করে এনেছে তিনি তাঁদের মনে থাকা প্রতিটি প্রশ্নের উল্লেখ করে করে সে
প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ।

কিতাবুল মুগনী লেখক
ইমাম ইবনে কুদামা আল মাকদাসীঃ
হাম্বলী মাযহাবের
সবচেয়ে বড় ফিকহীর কিতাব হল কিতাবুল মুগনী যে কিতাবখানি লিখেছেন ইমাম ইবনে কুদামা
আল মাকদাসী
(রহঃ) আর আল মুগনী হল
মুলত ইমাম আবুল কাসেম আল খিরাকি
(রহঃ) এর
একটি কিতাব যার নাম আল
মুখতাছারুল খিরাকি আর এর ব্যাখ্যা গ্রন্থই হল কিতাবুল মুগনী।
আর যিনি মাযহাবে
হাম্বলীর সবচেয়ে গুরুত্বপূণ ফিকার কিতাব আল মুগনী লিখেছেন তিনি আল মুখতাছারুল
খিরাকি কিতাবটি হুযুর গউছে আযম এর কাছে পড়েছেন।
ইমাম ইবনে কুদামা বলেন
আমরা গউছে পাকের কাছে ৫৬১ হিজরী সনের শুরুতে গিয়ে পৌঁছি মাত্র ৪৯ দিন উনার কাছে
মুখতাছারুল খিরাকি পাঠ করি।

গউছে পাকের খেদমত ও বর্তমান
পীরের খেদমতঃ
হুযুর গউছে পাক শুধু
খানকা নিয়ে বসে থাকেন নি
, দ্বীনকে জিন্দা করেছেন জ্ঞান বিতরনের
দ্বারা
, কিতাব লিখেছেন, খুতবা দিয়েছেন,
কুরআনের খেদমত করেছেন, হাদীসের খেদমত করেছেন,
মানুষের মরা ক্বলবকে জিন্দা করেছেন, মারেফাতের
শিক্ষা দিয়েছেন। যারা আমাদের দেশে পীর আছেন হক্কানী পীর যদি হয়ে থাকেন তারা
দ্বীনের খেদমত আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন
, যেমন মাদরাসা প্রতিষ্ঠা
করা
, মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা, দ্বীন
প্রচার করা। আমরা যারা বড়পীরের ভক্ত আমাদেরও উচিত নিজেদের সন্তানদের মাদরাসায় দেয়া
দ্বীনের এলম দেয়া
, যদি সম্ভব না হয় অন্ত একটি মাদরাসায়
ধারাবাহিক সাহায্য সহযোগীতা করে যাওয়া যেন আপনার একজনের সাহায্যের দ্বারা অন্তত
১টি ছাত্র দ্বীনী এলম হাসিল করতে পারে এবং দ্বীনের খেদমত করতে পারে
, আর তার দ্বীনের খেদমত আপনার জন্য সদকায়ে জারিয়া হবে। আর যারা শুধু পীরের
উপাধি ধারন করে খানকা নিয়ে বসে আছে, মুরিদ বানাচ্ছেন, নাই কোন এলম চর্চা, নাই কোন
দ্বীনের খেদমত, নাই কোন কুরান হাদীসের আলোচনা, নাই কোন দ্বীনী এদারা প্রতিষ্ঠার
প্রচেষ্টা তাঁদের উচিত বড়পীরের জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
আল্লাহ সকলকে বুঝার
তৌফিক দান করুন। আমিন

কবি
সুন্দর বলেছেন-
গাউসে আজম দরমিয়ানে আউলিয়া
চুঁ জনাবে মুস্তফা দর আম্বিয়া।
অর্থাৎ,নবীগণের
উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে ফজিলত
, গাউসে পাকেরও অন্যান্য
অলিদের উপর সেই ফজিলত।


1 টি মন্তব্য:

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.