মারধোর ছাড়াই বাচ্চাকে সব কথা শুনানোর ৬টি সহজ উপায়।6 Easy practical ways ...





মারপিট ছাড়াই বাচ্চা আপনার
কথা শুনবে ৬টি টেকনিক

বাচচারা কথা না শুনা এটা শুধু
বাংলাদেশে নয় বরং গোটা দুনিয়ার একটি সমস্যা, আর বাচ্চা যখন জিদ করে তখন তাকে কথা শুনানোর
জন্য অভিভাবকরা মারপিট করেন।

অথচ এমন ৬টি পদ্ধতি আছে যা
ফলো করলে আপনার বাচ্চা আপনার সব কথাই শুনবে। মারপিট করে সাময়িক ভাবে আপনি বাচচাকে কথা
শুনাতে পারবেন কিন্তু পরবর্তীতে এটি মারাত্মক ক্ষতির কারন হবে। সে জন্য বাচ্চাকে মারধর
করে কথা শুনানোটা মুলত নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার সমতুল্য। আপনি যদি মারপিট করেন
তাহলে সে ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে যায়, খুব এগ্রেসিভ ও রাগি হয়,  তাই আসুন আজ শিখে নিই কিভাবে বাচ্চাকে মারপিট করা
ছাড়াই কথা শুনাবেন।

এই কাজগুলি আপনাকে ধারাবাহিক
করতে হবে, এমন নয় আজ থেকে শুরু করলেন কাল থেকেই আপনার বাচ্চা সব কথা শুনা আরম্ভ করবে,
তাই কিছুদিন ধৈর্য্যের সাথে এসব টেকনিক এপ্লাই করতে হবে। আর এই মেহনতের যে ভালো ফল
আপনি পাবেন তা আপনি সারা জীবনই পাবেন।

প্রথম পদক্ষেপ- প্রিয় দর্শক
আপনি আপনার বাচচাকে সংশোধন করতে রাগ দেখাবেন না, কারন যে সব বাচ্চা কথা শুনেনা তাঁদের
অর্ধেকেরও বেশী বাচ্চা রাগী হয়, এই রাগের কারনে বাচ্চারা আপনার কথা শুনে না, আর রাগকে
আপনি কখনো রাগ দিয়ে দমন করতে পারবেন না, বরং রাগকে দমন করতেহবে মহব্বত দিয়ে। চিকিৎসকরা
বলেন বর্তমানে সবচেয়ে বেশী লোক হাটের রোগী এর একমাত্র কারন হল রাগ, কিন্তু আমরা এই
রাগকে দমন করে এ ধরনের মরন রোগ থেকে মাহফুজ থাকতে পারি, এই রাগ বড়দের জন্য যেমন ক্ষতিকারন
ছোটদের জন্যও ক্ষতিকারক। তাই আপনি রাগী বাচ্চাকে কখনো রাগ দেখিয়ে মারপিট করে কথা শুনাতে
সমথ হবেন না, তাই রাগ করা বিলকুল বন্ধ করে দিন। তাতে আপনার জন্যও ফায়দা বাচ্চার জন্যও
ফয়দা।

দ্বিতীয়ত- আপনি যদি প্রসংশা
করেন তাহলে তার দ্বারা আপনি কাজ আদায় করে নিতে পারবেন।
আমাদের অভ্যাস হল দুইজন বাচ্চা
১ ঘন্টা খেলাধুলা করে তার মধ্যে ৫ মিনিটের জন্য ঝগড়া করলে আমরা সেটা দেখি বাকী ৫৫ মিনিট
যে বন্ধুর মত খেলেছে সেটাকে এপ্রিসিয়েট করিনা, তেমনি ভাবে বাচ্চা যখন পড়ালোখা করে তখন
তাকে বাহবা দিইনা কিন্তু কিছুক্ষনের জন্য না পড়লে সেটার জন্য ধিক্কার দিই, চিৎকার করি,
বকাঝকা করি, তখন রাগী বাচ্চারা পড়ালেখা থেকে একেবারেই বিমুখ হয়ে যায়। কথায় আছে যে আচরনের
ব্যপারে আমরা বেশী বলব সেটাই বাচ্চা বেশী করে, তাই বাচ্চা ভুল করলে সে ভুলের ব্যপারে
বেশী না বলে বরং যখন পড়ছে বা ঝগড়া ছাড়া খেলছে তখন তার পাশে গিয়ে তাদের প্রসংশা করুন,
বলুন দেখ তোমরা কত বন্ধুত্বসুলভ ভাবে খেলছ, কত সুন্দর করে পড়ছ, এভাবে যখন প্রসংশা করবেন
তখন দেখবেন সে আরো সুন্দর ভাবে খেলার আরো সুন্দর ভাবে পড়ার জন্য আগ্রহী হবে।

তৃতীয়ত- আপনার ঘরে সাজা ও জাজা
অথ্যাৎ শাস্তি ও পুরস্কারের একটি নিয়ম হওয়া দরকার। আমরা কি করি যখন বাচ্চার আশানুরুপ
রেজাল্ট আসলনা তখন আমরা রাগ দেখাই, এতে তার রেজাল্ট ভালো হয়ে যাবে না, বরং আপনার উচিত
প্রতিদিনই তার অগ্রগতির খবর রাখা, তাহলেই বছর শেষে সে একটি স্বাস্থ্যবান রেজাল্ট আপনার
সামনে হাজির করতে পারবে। প্রতিদিনই যদি আপনার সন্তান ভালো করে আর আপনিও যদি প্রতিদিনই
তার তারিফ করতে থাকেন তাহলে তার পারফরমেন্স দিন দিন উন্নত হতে থাকবে। আর বছরে একবার
রেজাল্ট দেখে রাগ দেখানো আর প্রসংশা করাতো কোন ফায়দা হবেনা।
ধরুন আপনি আপনার সন্তানকে বললেন
যদি তুমি এ কাজটি কর তাহলে তোমাকে আইসক্রিম কিনে দিব, এখন সে যদি সে কাজটি করে দেয়
আর আপনি আইসক্রিম কিনে না দেন তাহলে সে বলবে আমার বাবা আমার মা প্রমিস করে তা রক্ষা
করে না, আবার ধরুন আপনার ২ বাচ্চা আপনি তাদের ১টি কাজ দিলেন আর বললেন যে করবে না তার
শাস্তি হল তাকে আইসক্রিম কিনে দিব না, এখন আপনি দেখলেন আপনার বড় বাচ্চাটি কাজটি করল
ছোট বাচ্চাটি করল না এখন আপনি যদি ২ জনকেই আইসক্রিম কিনে দেন তাহলে ছোট বাচ্চা ভাববে
আমার বাবা শুধু বলে ভয় লাগানোর জন্য কিন্তু করে না, তাই বাচ্চাদের সংশোধনের জন্য ঘরে
পুরস্কার ও সাজার একটি রুলস হওয়া জরুরী তাতে সন্তান ডিসিপ্লিন শিখবে। প্রমিসের গুরুত্ব
বুঝবে।

চতুর্থত- আপনার বাচ্চা যখন
রাগের মধ্যে থাকে তখন তাকে যদি আপনি উপদেশ দেন তা বেকার হবে। বরং যখন তার রাগ কমবে
তখন তাঁকে এর লাভ ক্ষতি বুঝাতেহবে। রাগের সময় বুঝালে উল্টা রিয়েকশন হবে।

পঞ্চমত- ঘরে বাচ্চাদের ছোট
খাট ভুল গুলির উপর বড় ধরনের রিয়েকশন দেখানো একটি বড় ভুল, মা বাবার উচিত বাচ্চাদের ছোট
খাট ভুল গুলিকে গুরুত্ব না দেয়া, আপনি সারাক্ষন ছোট খাট বিষয়গুরির জন্য যদি বাচ্চাকে
বকাঝকা করতে থাকেন আরেক সময় বড় কোন ভুল করে বসলে তাতে বকাঝকা করলে সেটা তার কাছে ছোটই
মনে হবে।

৬ষ্ঠতম- নিজেকে শান্ত রাখা
শিখুন, যখন আপনি িএবাদত করতে থাকেন বলা হয় (আলা বিজিকরিল্লাহি তাতমাইন্নুল কুলুব) অন্তরের
প্রশান্তি আল্লাহর জিকিরেই আছে। যদি আপনি আপনার সম্পর্ক আল্লাহর সাথে দৃঢ় করবেন তখন
আপনার মনের যে প্রশান্তি তা আপনার চেহেরাতে প্রস্ফুটিত হবে। আপনার কথার মাধ্যমে প্রকাশিত
হবে। তখন আপনি হবেন শোকর কারী বান্দা। শোকর করাকে আপনার অভ্যাসে পরিনত করুন। আপনার
জিন্দেগীতে শান্তি আসা শুরু হয়ে যাবে।

প্রিয় দর্শক সন্তানকে মারপিট
করা  অনেক বেশী ক্ষতিকর, আমাদের সমাজে এমন লোকও
আছে যারা বলে আমরা ছোট থেকে মার খেয়ে খেয়ে বড় হয়েছি, আমরা আমাদের সন্তানকে মারলে কেন
ভুল হবে?
দশক এই মারপিটের পরিণতি আপনারা
আশে পাশে কি দেখতে পাচ্ছেন না? সকল সিগন্যালে, প্রতিটি বাড়িতে, প্রতিটি কলেজে, মানুষ
যেন ঝগড়া করার জন্যই তৈরী হয়ে বসে আছে, মানুষের অন্তর রাগ গোস্বায় ভরপুর হয়ে আছে, এর
কারন হল এরা ছোট কাল থেকেই মার খেয়ে খেয়ে বড় হয়েছে। সে কাজটাকি আমরা আমাদের সন্তানদের
মধ্যে ট্রান্সফার করে দিব? যে সব দেশে ১০০ বছর আগে বাচ্চাদের মারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে
সে রকম প্রায় ১২টি দেশ আছে যেখানে রাস্তা ঘাটে পুলিশ দেখা যায় না, অপরাধের মামলা নাই
বললেই চলে। তারা মারপিট দেখেনি তাই তারা শিখেনি। আজ আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে মারেন
তাহলে আপনার বাচচা মারপিট শিখবে, ঘরে ভাই বোন মারপিট করবে, স্কুলে বন্ধুদের সাথেমারপিট
করবে, সামান্য কারনেই তার রাগ এসে যাবে আর প্রতিদিন সে এক একটি কেইস মাথাই নিয়ে ঘরে
আসবে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী হয়ে যাবে।

তাই বাচ্চাদের সব কিছু পজেটিভ নিয়মে সমাধান করার চেষ্টা করুন, মারপিট করে সাময়িক
সমাধান দেখা গেলেও এর পরবর্তী পরিনতি খুবই খারাপ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার তৌফিক
দান করুন  

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.