কুরবানির গোস্ত রান্না ও খাবারের সুন্নত ও বরকতময় নিয়ম। হাদীসের আলোকে।
খবরদার !! কুরবানির পশুর মাংস রান্না ও খাবার আগে সাবধান
কুরবানীর মাংস খাওয়ার সময় এই ভুলটি করলে বরকত চলে যায়
কুরবানীর পশুর মাংস রান্নায় কিছু সতর্কতা এবং খাওয়ার সময় প্রিয় নবীর বিজ্ঞান সম্মত সুন্নতগুলি যদি আপনার জানা থাকে এবং মানতে পারেন তাহলে ইনশা আল্লাহ যতখুশি আপনি কুরবানির গোস্ত খেতে পারবেন- সুতরাং আসুন আজ জেনে নিই সে সে চমৎকার নিয়ম পদ্ধতি যা আমাদের কুরবানিকে আরো সুন্দর ও মধুময় করে তুলবে, এই খাদ্যে থাকলে অফুরন্ত বরকত এবং দুর হবে সব অনাকাক্ষিত বিপদ।
অনুরোধ থাকবে প্রতিটি লাইন খুব মনযোগ দিয়ে শুনবেন তাহলেই উপকৃত হবেন। আমাদের মহানবী হলেন বিজ্ঞানিদের বিজ্ঞানি উনার দেখানো ও শিখানো পদ্ধতিই কিয়ামত পর্যন্ত সকলের জন্য কল্যানকর। তাই আসুন দেরী না করে সম্পূণ সুন্নত পদ্ধতিতে কিভাবে কুরবানীর গোস্ত খাবেন ও রান্না করবেন তা জেনে নিই।
কুরবানির মাংস রান্না করলে যে শুধুই মাংস খাবেন তা নয় বরং সাথে সবজিও খাবেন তাতে আপনার পেট খারাপ হবে না। সালাদ, কাঁচা ফল প্রচুর পরিমানে গোস্তের সাথে খেতে পারেন তাহলে গোস্ত আপনার শরীরে সাইট এফেক্ট করবে না। যেমন হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রসুল (সা.)-কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসুল (সা.)-এর সামনে বার্লির রুটি এবং গোশতের টুকরা ও কদু মেশানো ঝোল পরিবেশন করে। আমি দেখেছি, রাসুল (সা.) প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে কদু নিয়ে খাচ্ছেন। আর আমিও সেদিন থেকে কদুর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠি। (মুসলিম, ২০৬১; বুখারি, ৫০৬৪)
মাংস রান্নার সময় এক্সট্রা চবি দেয়া মোটেও স্বস্থ্য সম্মত নয়, বরং অতি অল্প তেল দ্বারা রান্না করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অনেকে অতিরিক্ত তেল ও এক্সট্রা চবি যোগ করে রান্না করে তাতে রান্না কিছুটা স্বাধের হলেও তা কিন্তু শরীরের জন্য অসম্ভব রকমের ক্ষতিকর। সবচেয়ে বেশী ভালো যদি অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করেন
অলিভ অয়েলের খাদ্য ও পুষ্টিগুণ অনেক। গবেষণায় দেখা গেছে অলিভ অয়েল ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী এবং বয়স ধরে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক বা বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে। এছাড়া অলিভ অয়েল পাকস্থলীর প্রদাহ নিরাময়ে সহায়ক। যদি তাও সম্ভব না হয় ঘানিতে ভাঙ্গা ষড়িসার তেল দিয়ে রান্না করবেন । সয়াবিন তেল ভুলেও ব্যবহার করবেন না, বতমানে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানিরা এই সয়াবিন তেল খেতে নিষেধ করছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এই যয়তুন ফলের শপথ করেছেন আর নিঃসন্দেহে এ ফল থেকে উৎপাদিত তেল স্বাস্থ্য সম্মত যে ব্যপারে সকল স্বাস্থবিজ্ঞানিরা একমত হয়েছেন।
এরপর খাবার যখন খাবেন তখন ঘরের সকলে একসাথে বসে খাবেন কেননা একসাথে বসে খেলে তাতেও বরকত আছে যেমন
হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা একত্রে খানা খাও, পৃথক পৃথক খেও না। কেননা জামাতের সঙ্গে (খাওয়ার মধ্যে) বরকত হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)।
তাছাড়া মেহমানদের সাথে নিয়ে খাওয়াতেও আছে বরকত, কুরবানির গোস্ত শুধু নিজে খেলে তাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নাই কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন কোন না কোন মেহমানকে নিয়ে খান তাতে আপনার সে খাবারে বরকত হবে, সে চাই আপনার প্রতিবেশী হউক, চাই আপনার দুয়ারে আসা ফকির হউক, কিংবা আপনার কোন আত্মিয় কিংবা ভাই বোন হউক যে কাউকে আপনার মেহমান বানাতে পারেন
মেহমানের যারা আপ্যায়ন করে তাদের মর্যাদা সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেন, উটের চোটের দিকে ছুরি যত দ্রুত অগ্রসর হয় তার চেয়েও দ্রুত অগ্রসর হয় কল্যাণ (বরকত) ওই ঘরের দিকে যাতে (মেহমানদের অনর্গল) খানা খাওয়ানো হয়। অর্থাৎ বেশি মেহমানদারি করা হয়। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
তাছাড়া আমাদের প্রিয় নবীর আরেকটি সুন্নত হল পেটের ৩ ভাগের এক ভাগ খাওয়া ১ ভাগ পানি আর ১ ভাগ বাসাতের জন্য খালি রাখা। তাই গলায় গলায় খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তবেই কল্যান ও বরকত হবে।
মহানবী (স) কখনো রান্না করা মাংস ছুরি বা কাঁটা চামচ দিয়ে কেটে খেতেন না। তিনি বলেছেন, তোমরা ছুরি দ্বারা গোশত কেটো না। কেননা তা আজমিদের (অনারব) আচরণ-অভ্যাস। বরং তোমরা তা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খাও। কারণ এটা অতি সুস্বাদু এবং বেশি হজমদার। (আবু দাউদ, মিশকাত)।
শুধু কুরবানির মাংস নয় যে কোন খাবার যত বেশী পরিমাণ চিবাবেন তত বেশী হজমের জন্য ভালো হবে। তাই গোস্ত খাবার সময় অনেক্ষন ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবেন।
খাদ্যপাত্রের তলচাট (নিচে লেগে থাকা অংশ) রসুলুল্লাহ (সা.)-কে মোহিত করত। অর্থাৎ রসুল (সা.) পাত্রের অবশিষ্ট খাদ্য যা তার গায়ে লেগে থাকত তা খেতে খুব পছন্দ করতেন। (তিরমিজি, মিশকাত)। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সা.) আঙ্গুলসমূহ ও খাদ্যপাত্র চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমরা জানো না যে, কোন আঙ্গুল বা কোন লোকমায় বরকত নিহিত রয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত)। হজরত নুবায়শা (রা.) রসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো পেয়ালায় খাবার খায় এবং খাবারের শেষে তা চেটে খায়, পাত্রটি তার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করে। (আহমাদ, তিরমিজি, মিশকাত)।
খাসির পায়া : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসুল (সা.) কোরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন।’ (বুখারি : ৫১২২)
অতএব সম্পূণ আলোচনার সারসংক্ষেপ হল- যয়তুন তেল দিয়ে রান্না করা, সয়াবিন তেলা পরিহার করা, কম খাওয়া, বেশীক্ষন চিবানো, ছুরি বা কাটা চামচ দিয়ে না খেয়ে হাত দিয়ে খাওয়া, পেয়ালা ও আঙ্গুল চেটে খাওয়া, ঘরের সকলে একসাথে খাওয়া, সব সময় মেহমান রাখা, মাংসের সাথে সবজি সালাদ খাওয়া। তাহলে কুরবানির গোস্ত আপনার কোন ক্ষতি করবে না। বরং বরকতময় হবে ইনশা আল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই