ঈদুল আযহা খুতবা। কুরবানীর ইতিহাস। ইবরাহিমের (আঃ) সাথে ইসলাম ধর্মের আশ্চর...
ঈদুল আযহা ২০২০ খুতবা
কুরবানির ইতিহাস ও হযরত ইবরাহিম (আঃ) এর সাথে ইসলাম ধর্মের সম্পর্কের বিষ্ময়কর তথ্যসমুহ!!!
মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কুরবানি হল, হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল-এর প্রদত্ত কুরবানি। পবিত্র কুরআন কারিমে বর্ণিত হয়েছে—
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِن أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
অর্থাৎ, আদমের দুই পূত্রের বৃত্তান্ত আপনি তাদেরকে যথাযথভাবে (যেমনটি ঘটেছিল) শুনান, যখন তারা উভয়ে কুরবানি করেছিল, তখন তাদের একজনের কুরবানি কবুল হল এবং অপরজনের কবুল হলনা।
(সূরা আল্-মা-ইদাহ : ২৭)
সংক্ষেপে ঘটনাটি হল, হযরত মা হাওয়া-এর গর্ভে হাবিলের সাথে ‘লিওয়া’ আর কাবিলের সাথে এক্বলিমা’ জন্মগ্রহন করেন। আর ঐ শরিয়তের বিধি অনুযায়ী 'একলিমা’ কাবিলের জন্য হারাম ছিল, তার জন্য হালাল ছিল “লিওয়া। কিন্তু এক্বলিমা’ অধিকতর সুন্দরী হওয়ায় কাবিল তাকেই বিয়ে করতে চাইল। হযরত আদম আলাইহিস সালাম নিষেধ করলে কাবিল বলল, এটা আপনার নিজস্ব অভিমত, রবের হুকুম নয়। তখন তিনি বললেন, তোমরা দুজনেই কুরবানি কর, যার কুরবানিকে আগুন এসে জালিয়ে দিয়ে যায় সেই সত্য। সুতরাং কাবিল গমের স্তুপ আর হাবিল উট কিংবা দুম্বা জবাই করে পাহাড়ের উপর রাখল। অদৃশ্য আগুন এসে হাবিলের গোশতগুলো জালিয়ে দিয়ে গেল, আর কাবিলের গমগুলো এমনি পড়ে রইল। এটা দেখে কাবিল হিংসায় জ্বলে উঠল।
এ ছিল মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কুরবানি এবং কুরবানি করার পদ্ধতি।
হযরত ইবরাহিম (আঃ) এর জানের কুরবানি
আল্লাহ’র নবি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহ’র দ্বিনের দাওয়াত দিতে লাগলেন। এতে নমরূদ ক্ষিপ্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিল যে, তাঁকে সম্পূর্ণ বিলীন করে দিতে হবে। সে অনুযায়ী নমরূদের প্রজ্জ্বলিত আকাশচুম্বী আগুনের লেলিহান শিখায় ফেলার জন্য খলিলুল্লাহকে চাক্কিতে ঘুরানো হচ্ছিল অথবা মিনজানিক দ্বারা নিক্ষেপ করার আয়োজন করছিল। কাফেররা উল্লাসে মেতে উঠল যে, আজ থেকে তাদের কথিত মাবুদদেরকে গালী দেয়ার আর কেউ থাকবে না, চিরদিনের জন্য তাঁকে ধ্বংশ করে দেয়া হবে। এদিকে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে গেলেন। বললেন, হে আল্লাহ’র খলিল! কোন নির্দেশ কি আছে? কিংবা কোন প্রয়ােজন? আল্লাহ’র নবি খলিল বললেন, তোমার কাছে আমার কোন প্রয়োজন নেই। জিব্রাইল বললেন, তবে রবের নিকটই আবেদন করুন। তিনি বললেন--
“তিনি আমার পরাক্রমশালী রব, তিনি জানেন যে, এখনই তাঁর বন্ধু আগুনে পড়ছেন।” এদিকে আল্লাহ’র নবি ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হল, ঐদিকে আল্লাহ তা'য়ালা আগুনকে আদেশ করলেন--
یانارکوني بردا وسلاما علي ابراهيم
অর্থাৎ, হে অগ্নি! তুমি ইব্রাহিমের উপর আরামদায়ক শীতল হয়ে যাও।
(সূরা আল-আম্বিয়া : ৬৯)
আল্লাহ’র নবি খলিল আলাইহিস সালাম প্রথম এবং সবচেয়ে প্রিয় জানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন।
সে অগ্নিকুন্ডে টিকটিকি/গিরগিট ফুক দিয়েছিল
টিকটিকি মারা সাওয়াব কেন?
আর টিকটিকির ব্যপারে বা গিরগিটের ব্যপারে সহিহ মুসলিমের হাদীস যখন হযরত ইবরাহিম (আঃ) এর জন্য আগুন জ্বালানো হচ্ছিল তখন সে তাকে প্রজ্জলিত করার জন্য ফুক মারছিল, বুখারী শরীফের ৩০৭৪ নং হাদীসে (লি ওয়াজাগিল ফুয়াইছিক) নিকৃষ্টতম ফাসিক বলে অভিহিত করেছেন।
বুখারী শরীফের ৩০৭৫ নং হাদীস (আমারাহা বিকাতলিল আওজাগ) মহানবী (দঃ) টিকটিকি হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
১ বাড়িতে মারলে ১০০ নেকি, (মান কাতালা ওয়াজাগাতান, ফি আউয়্যালি দারাবাতিন ফালাহু কাজা ওয়া কাজা হাসানাতান, ওয়ামান কাতালাহা ফিত দারবাতিস ছানিয়া ফালাহু কাজা ওয়া কাজা হাসানাতান লিদুনিল উলা)
যারা আল্লাহর প্রিয়জনদের সাথে দুষমনী করে আল্লাহ দুনিয়ার সকল সৃস্টিকে তার দুষমন বানিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ! তাই আমাদের উচিত আল্লাহ প্রিয়জনদের সাথে মহব্বত রাখা।
হযরত ইবরাহিম শুধু নিজের জানের কুরবানিই দেননি বরং জানের চেয়ে প্রিয় সন্তানকেও কুরবানি দিতে দিধা বোধ করেননি-
হযরত ইবরাহিম (আঃ) এর প্রিয় সন্তান কুরবানি
কেমন আশ্চর্যের দৃশ্য!আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পিতা কর্তৃক পূত্রকে কুরবানি!(আল্লাহু আকবার)।যখন পিতা-পুত্র উভয়েই রবের ফায়সালার উপর অবনতচিত্তে রাজী, তখন পিতা পূত্রকে উপূর করে শোয়ালেন।
কুরআনের ভাষায়- (ফালাম্মা আসলামা ওয়াতাল্লাহু লিলজাবিন) (যখন পিতা-পূত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহিম তাঁকে জবাই করার জন্য শায়িত করলেন)।
(সূরা আস-সাফফাত : ১০৩)
ছুরি চালাবার আগে পূত্র বলল, আব্বাজান! তিনটি আবদার রক্ষা করুন—
প্রথমত, আমার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে দিন, যেন নড়াচড়ার কারনে আপনার কষ্ট না হয় এবং আপনার শরীরে রক্তের ছিটা না পড়ে।
দ্বিতীয়ত, আমার চোখে কাপড় বেঁধে দিন, যেন মহাব্বতের আতিশয্যে ছুরি চালানো বন্ধ না হয়ে যায়।
তৃতীয়ত, আমার রক্ত মাখা জামাটি আমার মায়ের কাছে পৌঁছে দিবেন, যেন তাঁর অন্তরে একটু স্বস্তি আসে।
এদিকে পিতা পুত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন, ঐদিকে ছুরি ভোতা হয়ে গেছে। দু’বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ছুরিটি যখন পাহাড়ের দিকে নিক্ষেপ করলেন, তখন একটি পাথরের উপর পড়ে তা ছুরির আঘাতে দু’খন্ড হয়ে যায়। ছুরির বক্তব্য--
الخليل يأمرني بالقطع والجليل ينهاني
(আল খালিলু এয়ামুরুনি বিল কাতিঈ ওয়াল জালিলু এয়ানহানি)
অর্থাৎ, খলিল আমাকে কাটতে হুকুম করেন, আর জলিল (আল্লাহ) আমাকে নিষেধ করেন।
আবার ছুরি হাতে যখন পূত্রকে জবাই করতে প্রস্তুত হলেন, তৎক্ষনাৎ জিব্রাইল আমিন বেহেশত হতে একটি দুম্বা নিয়ে ইব্রহিম আলাইহিস সালাম-এর ছুরি ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর গলায় পৌঁছার আগেই হাজির হলেন এবং ইসমাইল আলাইহিস সালাম-কে সরিয়ে তদস্থলে দুম্বাটি রেখে দিলেন। দুম্বা কুরবানি হয়ে গেল। রবের পক্ষ হতে আওয়াজ আসল--
وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ
তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম, [ সুরা সাফফাত ৩৭:১০৪ ]
قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। [ সুরা সাফফাত ৩৭:১০৫ ]
إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاء الْمُبِينُ
নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। [ সুরা সাফফাত ৩৭:১০৬ ]
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ
আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। [ সুরা সাফফাত ৩৭:১০৭ ]
জ্ঞাতব্য যে, ইবনু কাছির বর্ণনা করেন, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর পরিবর্তে জান্নাতি যে দুম্বা বা ভেড়াটি দান করা হয়েছিল, এর নাম জারির, রং ছিল সাদা, বড় বড় চক্ষু ও শিং বিশিষ্ট। এটা জান্নাতে প্রতিপালিত হয়েছিল। এটা সে জন্তু যা হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর বড় ছেলে হযরত হাবিল কুরবানি করেছিলেন।
হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম-এর কুরবানি আল্লাহ কবুল করে নিলেন, আর এ স্মরণিকা স্বরূপ সেই কুরবানি ধারা কিয়ামত পর্যন্ত জারি করে দিলেন। এখানে প্রতি বৎসর সে স্মরণকেই উজ্জীবিত করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ
আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, [ সুরা সাফফাত ৩৭:১০৮ ]
জিবরাইলের পূর্ণ শক্তির প্রয়োগ ৪ বার
ফাতহুল বারি শারহুল বুখারি এবং আইনি শারহুল বুখারিতে এসেছে যে, একবার হুযুর পাক (ﷺ) জিব্রাইল আমিনকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কখনো তোমার পূর্ণাঙ্গ শক্তি প্রয়োগ করেছ? জবাবে জিব্রাইল আমিন বললেন, আমি চার বার আমার পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেছি।
প্রথমবার, ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হচ্ছিল তখন আমি সিদরাতুল মুনতাহায় ছিলাম, আল্লাহর আদেশে ততক্ষনাৎ আমি তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করার পূর্বেই হাজির হয়ে যাই এবং আগুনকে ফুলবাগানে পরিণত করে দেই।
দ্বিতীয়বার, আমি সিদরায় ছিলাম, ছুরি হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর দিকে আসছিল। মাত্র দু'ফুট দুরত্বের ব্যবধান এবং ছুরি সে দু’ফুট অতিক্রম করার আগেই জান্নাত হতে দুম্বা নিয়ে সেখানে পৌঁছাই।
তৃতীয়বার, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে যখন তাঁর ভাইয়েরা কূপে ফেলে দেওয়ার জন্য তাঁর বাহুতে রশি বেধে কূপের ভেতরে ঝুলিয়ে দিল এবং তরবারী দিয়ে রশি কাটতে এখনো অর্ধেক বাকী, তখন রবের আদেশ হলো এবং আমি জান্নাত হতে তখত এনে তিনি নিচে পড়ার পূর্বেই বিছিয়ে দিলাম।
চতুর্থবার, উহুদ যুদ্ধে যখন ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার দাঁত মুবারক শহিদ হলো, জমিনে আপনার রক্ত মুবারক পড়তে ছিল, তখন আল্লাহ পাক আদেশ করলেন, হে জিব্রাইল সিদরা থেকে তারাতারি যাও এবং আমার হাবিবের রক্ত মুবারক মাটিতে পড়ার পূর্বেই সংরক্ষণ কর; না হয় জমিন পুড়ে ভষ্ম হয়ে যাবে। তখন আমি এসে তা সংরক্ষণ করি।
হযরত ইবরাহিম (আঃ) এর কিছু আশ্চর্য্যজনক বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ তা’য়ালা কর্তৃক প্রেরিত নবী-রাসূলদের মধ্যে হযরত ইব্রাহীম (আ:) অন্যতম। তাঁর উপনাম আবুল আম্বিয়া- নবীদের আদি পিতা, আবুল মিল্লাত- মুসলমানদের জাতির পিতা। কারণ, কয়েকজন ছাড়া সকল নবী রাসূল তাঁর বংশ থেকে এসেছেন এবং তিনি মুসলিম নামটি প্রথম রেখেছেন। তিনি একজন উলুল আযম- শক্তিশালী নবী। সমকালীন শাসক নমরুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছেন। ইবরাহীম শব্দটি সুরিয়ানী শব্দ। অর্থ- আবে রাহীম- দয়ালু পিতা। শিশুদের প্রতি দয়ালু হিসেবে খ্যাত ছিলেন বলে তিনি এ নামে ভূষিত হন। আর এ কারণে পরকালে তিনি ও তাঁর স্ত্রী সারা মুমিনদের অপ্রাপ্ত বয়সে মৃত সকল সন্তানের দায়িত্বশীল হবেন (তাফসীরে কুরতুবী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৭৩)।
হযরত ইবরাহীম (আ:) থেকে প্রচলিত প্রথা : তিনিই সর্বপ্রথম খাতনা করেন, প্রথম মেহমানদারীর প্রথা তিনিই চালু করেন, তিনিই প্রথম নাভীর নীচের পশম মুণ্ডান, নখ কাটেন, গোঁফ খাটো করেন,
এবং তাঁরই প্রথমে চুল পাকে। তিনি পাকা চুল দেখে বলেন- হে আল্লাহ্! এটা কী? আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন- তা হলো- সম্মানের প্রতীক। তখন তিনি বলেন- তাহলে আমার সম্মান আরো বাড়িয়ে দিন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন- তোমরা শুভ্রতাকে (বার্ধক্যকে) ঘৃণা করো না। কেননা, ইসলামে কালাতিপাতে যার কেশ শুভ্র হয়ে গিয়েছে শেষ বিচারের দিন তা তার জন্য নূর হিসেবে পরিগণিত হবে, এর বিনিময়ে সে পুণ্য লাভ করবে এবং তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে (আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪২০২, তিরমিযি হাদীস নং- ২৮২১)।
হযরত ইব্রাহীম (আ) প্রথমে মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিয়েছেন, তিনি প্রথম মিসওয়াক করার প্রথা, ইস্তিঞ্জা করার প্রথা এবং পায়জামা পরার রীতি চালু করেন। (মুয়াত্তা, কুরতুবী, প্রঞ্চম খণ্ড, পৃ-৭৫)
সুন্নাতে ইবরাহিমী : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রসঙ্গে সুন্নতে ইবরাহিমী হলো দশটি। পাঁচটি মাথায় ও পাঁচটি অবশিষ্ট শরীরে । মাথার পাঁচটি হলো- ১. গোঁফ খাটো করা, ২. কুলি করা, ৩.নাক সাফ করা, ৪. মিসওয়াক করা, ৫. মাথার চুল দু’ভাগ করে আঁচড়ানো।
শরীরের পাঁচটি হলো- ১. নখ কাটা, ২. নাভীর নীচের পশম মুণ্ডানো, ৩. খাতনা করা, ৪. বগলের পশম উপড়ে ফেলা, ৫. মলদ্বার ও মূত্রদ্বার পানি দ্বারা ধৌত করা (তাফসীরে কুরতুবী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং- ৭৪)।
খতনা করার বিধান : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- পুরুষের জন্য খতনা করা সুন্নত আর নারীদের জন্য উত্তম (মুসনাদে আহমদ, ৫/৭৫)। কারো কারো মতে খতনা করা ফরয, তা বর্জন করা উচিত নয়। কেননা আল্লাহ্ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন- ইবরাহীমের দ্বীন অনুসরণ কর, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ।
চৌদ্দ মতান্তরে তের জন নবী-রাসূল খতনা অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেছেন- যেমন- ১. হযরত আদম, ২. শীশ, ৩. ইদ্রীস, ৪. নূহ, ৫. সাম, ৬. যাকারিয়া, ৭. লুত, ৮. ইউসুফ, ৯. মুসা, ১০ শুয়াইব, ১১. সুলাইমান, ১২. ইয়াহিয়া, ১৩. ঈসা (আ:), ১৪. হযরত মুহাম্মদ (সা:)। (তাফসীরে কুরতবী- ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ৭৬)
হযরত ইবরাহীম (আ) কত বছরে খতনা করেন : হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী ১২০ বছর বয়সে হযরত ইবরাহীম (আ) খতনা করেন, এরপর তিনি ৮০ বছর জীবিত ছিলেন। অপর বর্ণনানুযায়ী ৮০ বছর বয়সে কুঠার জাতীয় অস্ত্র দিয়ে খতনা করেন।
খতনার করার বয়স : হযরত ইবরাহীম (আ:) স্বীয় পুত্র ইসমাঈল (আ:) এর খতনা করান ১৩ বছরের সময়, আর ইসহাক (আ:) এর খতনা করান ৭ বছরের সময়।
হযরত ফাতেমা (রা:) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি সপ্তম দিবসে সন্তানের খতনা করান। হযরত লাইস ইবন সা’দ বলেন, সন্তানের খতনা করাতে হবে সাত থেকে দশ বছরের মধ্যে।
মানব দেহের কর্তিত অঙ্গের বিধান: মানব দেহ খুবই মর্যাদা ও সম্মানের। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- আমি আদম সন্তানদেরকে সম্মানিত করেছি (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত নং- ৭০)।
সুতরাং মানব দেহের কর্তিত বা বিচ্ছিন্ন অংশ হেফাযত করা আবশ্যক। হেফাযতের উত্তম পন্থা হলো মাটির নিচে পুঁতে ফেলা। মহানবী (স) মানব দেহের সাতটি জিনিস পুঁতে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- কর্তিত পশম, নখ, নির্গত রক্ত, ঋতুস্রাবের রক্ত, দাঁত, বিচ্ছিন্ন অংশ ও বমি।
ইবরাহিম (আঃ) এর ঘরে ফেরেশতা
আল্লাহর হুকুমে কয়েকজন ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে প্রথমে হযরত ইবরাহীমের বাড়ীতে পদার্পণ করলেন। তিনি তাদেরকে মেহমানদারীর জন্য একটা আস্ত বাছুর গরু যবেহ করে ভুনা করে তাদের সামনে পরিবেশন করলেন। কিন্তু তারা তাতে হাত দিলেন না। এতে ইবরাহীম (আঃ) ভয় পেয়ে গেলেন (হূদ ১১/৬৯-৭০)। কেননা এটা ঐ সময়কার দস্যু-ডাকাতদেরই স্বভাব ছিল যে, তারা যে বাড়ীতে ডাকাতি করত বা যাকে খুন করতে চাইত, তার বাড়ীতে খেত না।
ফেরেশতাগণ নবীকে অভয় দিয়ে নিজেদের পরিচয় দিয়ে বললেন, ‘আমরা এসেছি অমুক শহরগুলি ধ্বংস করে দিতে। ইবরাহীম একথা শুনে তাদের সাথে ‘তর্ক জুড়ে দিলেন (হূদ ১১/৭৪) এবং বললেন, ‘সেখানে যে লূত আছে। তারা বললেন, সেখানে কারা আছে, আমরা তা ভালভাবেই জানি। আমরা অবশ্যই তাকে ও তার পরিবারকে রক্ষা করব, তবে তাঁর স্ত্রী ব্যতীত। সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে (আনকাবূত ২৯/৩১-৩২)। অতঃপর তারা ইবরাহীম দম্পতিকে ইসহাক-এর জন্মের সুসংবাদ শুনালেন।
বিবি সারা ছিলেন নিঃসন্তান। অতি বৃদ্ধ বয়সে এই সময় তাঁকে হযরত ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় ইসহাকের পরে তার ঔরসে যে ইয়াকূবের জন্ম হবে সেটাও জানিয়ে দেওয়া হল (হূদ ১১/৭১-৭২)। উল্লেখ্য যে, ইয়াকূবের অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল এবং তাঁর বংশধরগণকে বনু ইস্রাঈল বলা হয়। যে বংশে হাযার হাযার নবীর আগমন ঘটে।
ইবনুজ জাবিহাইন
আর হযরত ইসমাইল (আঃ) এর বংশ ধারাতেই হযরত মুহাম্মদ (দ) এর জন্ম, যে ইসমাইল আমাদের প্রিয় নবীজির পূর্ব পুরুষ আবার সে বংশের শেষজন হলেন হযরত আবদুল্লাহ যিনি প্রিয় নবীর পিতা তিনিও জবেহের জন্য নির্বাচিত হন,
নবী করিম (সা.) কে ‘ইবনুজ জাবিহাইন’ ‘বা দুই কোরবানির ছেলে’ অবহিত করা হয়। এক কোরবানি ইসমাঈল (আ.), অপরজন তার মহামতি পিতা খাজা আবদুল্লাহ। রাসুল (সা.) এর দাদা আবদুল মুত্তালিব জমজম কূপ পুনরুদ্ধার ও খননের সময় মানত করেছিলেন, আল্লাহপাক যদি জমজম কূপ খুঁজে পেতে ও আবার খনন কাজে সফলকাম করেন, তাহলে তার ১০ সন্তানের মধ্য থেকে একজনকে কোরবানি দেবেন। সে মানত পূরণে লটারিতে কোরবানির জন্য যার নামটি উঠেছিল তিনি ছিলেন নবীজির আব্বাজান খাজা আবদুল্লাহ।
হুযুরের জানের কুরবানি
হযরত ইবরাহিম (আঃ) যেমন প্রান ও সন্তানের কুরবানি দিয়েছেন মহানবী (দ)ও জান ও সন্তানের কুরবানি দিয়েছেন-
তবকাতু ইবনি সা'দ-এ বর্ণিত হয়েছে যে, খায়বর যুদ্ধের সময় যয়নব বিনতে হারেসা নামি জনৈকা ইহুদি রমনী বকরির ভুনা গোশতে বিষ মিশ্রিত করে হুযুর পাকের খেদমতে পাঠিয়ে দেয়। গায়বের খবরদাতা নবি এর থেকে কিছু খেয়েও নিলেন। স্বয়ং ভূনা গোশত তাঁকে জানিয়ে দেয় যে, আমি বিষ মিশ্রিত গোশত তাঁর সাথে তাঁরই প্রিয় সাহাবি হযরত বিশর ইবনু বারাও ওই গাশত খেয়ে ফেলেন। আর ঐ বিষক্রিয়ায় তিনি তখনই শাহাদাত বরণ করেন। আর তখন নবি পাক ইহুদি মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এরূপ করেছ কেন? উত্তরে মহিলা বলল, আমি জানতে চেয়েছি, আপনি নবি না বাদশা! যদি নবি হন তবে এই বিষ আপনার কোন ক্ষতি করবে না, আর যদি না হন আপনার হাত থেকে মানুষজন স্বস্তি পাবে। যাহোক, ঐ ইহুদি মহিলাকে তাঁর নির্দেশে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
আল্লামা যারকানি এই বিষয়ে উল্লেখ করেন যে, “নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হলো, আমাদের প্রিয় নবি শহিদি ওফাত লাভ করেছেন। কেননা তিনি খায়বরের দিন এমন তীব্র বিষ মিশ্রিত বকরির গোশতের কিছু খেয়ে ছিলেন, যে বিষের প্রতিক্রিয়ায় মানুষের ততক্ষনাৎ মৃত্যু হয়। যে ভাবে সে বিষক্রিয়ায় বিশর ইবনু বারা সেই মূহুর্তেই প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন। আর হুযুর পাকের বেঁচে থাকা (অর্থাৎ তখনই বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত না হওয়া) তার অন্যতম মুজেজা ছিল। কিন্তু সেই বিষ তাঁকে প্রায়শঃ যন্ত্রণা দিতে থাকত। এমনকি শেষ পর্যন্ত এরই প্রভাবে তাঁর ওফাত সংঘটিত হয়। সুতরাং সুস্পষ্ট হল হুযুর পাকের জানের কুরবানি হযরত ইব্রাহিম থেকেও উত্তম ছিল। কেননা হযরত ইব্রাহিম কুরবানির পরেও জীবিত ছিলেন আর নবি পাক কুরবানি করেছেন এবং জাহেরিভাবে ওফাতও বরণ করেছেন। নবিজি আরও ইরশাদ করেন, ما اوذی نبی کما اوذیت (আল্লাহ’র রাহে আমি যতটা যাতনাগ্রস্থ হয়েছি, আর কোন নবি তেমটি হননি)।
হুযুরের সন্তানের কুরবানি
হযরত আল্লামা জামি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, একদিন সরকারে দু’আলম (ﷺ) হযরত ইমাম হুসাইনকে ডানে এবং স্বীয় সাহেবজাদা হযরত ইব্রাহিমকে বামে বসিয়ে ছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাইল উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আল্লাহ তাআলা এ দু’জন আপনার কাছে এক সঙ্গে রাখতে দিবেন না, ওনাদের মধ্যে একজনকে ফিরিয়ে নিবেন। অতএব এ দুজনের মধ্যে আপনি যাকে ইচ্ছা পছন্দ করুন। হুযুর ফরমালেন, যদি হুসাইনকে নিয়ে যায় তাহলে এর বিরহে ফাতেমা ও আলি উভয়েরই কষ্ট হবে এবং আমার মনটাও ক্ষুন্ন হবে। আর যদি ইব্রাহিমের ওফাত হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি দুঃখ একমাত্র আমিই পাব। এজন্য নিজে দুঃখ পাওয়াটাই আমি পছন্দ করি। এ ঘটনার তিনদিন পর হযরত ইব্রাহিম ইন্তেকাল করেন।
এরপর থেকে যখনই ইমাম হুসাইন হুযুর পাকের সমীপে আসতেন, হুযুরপাক তাকে মা বারকবাদ দিতেন ও কপালে চুমু খেতেন এবং উপস্থিত লোকদেরকে সম্বোধন করে বলতেন, আমি হুসাইন এর জন্য আপন সন্তান। ইব্রাহিমকে কুরবানি দিয়েছি।
(শাওয়াহেদুন নবুওয়াত)।
এদিকে ফোরাতকুলে ইমাম হুসাইনও কুরবানি হলেন নানাজির আদর্শের জন্য-দ্বিন ইসলামের জন্য। নবিজি এ কুরবানির কথা জেনেও তাঁর হেফাজতের জন্য দোয়া করলেন না, শুধু দোয়া করলেন যেন আল্লাহ ধৈৰ্য্য ধারনের তৌফিক দান করেন। আল্লাহু আকবার! কতইনা উত্তম কুরবানি।
ফেসবুকে কুরবানির পশু ছবি দিয়ে থাকলে জবেহ করার আগে সে ছবিগুলি ডিলিট করে দিবেন
লোক দেখানো ইবাদত মানুষকে শিরকের অপরাধের দিকে ধাবিত করে। কেননা লোক দেখানো ইবাদতকারী ছোট শিরকের অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয়। এক সময় একাধিক ছোট শিরক বড় শিরকে পরিণত হয়।
সুরা মাউন ও সুরা নিসার ১৪২ নং আয়াতে রিয়া বা লোক দেখানো এবাদতের ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন।
হজরত মাহমুদ ইব্ন লাবিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের ওপর যা ভয় করি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শিরকে আসগর তথা ছোট শিরক।’ তাঁরা (সাহাবায়েকেরাম) বলল, হে আল্লাহর রাসুল! শিরকে আসগর কি?
তিনি বললেন, ‘রিয়া’ (লোক দেখানো ইবাদত);
জবেহ করার নিয়ম
▪ কুরবানি করার পূর্বে পশুকে ঘাস-পানি দিবে, যেন ক্ষুদার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থায় জবাই করা না হয়।
▪ একটি পশুর সামনে অন্যটি জবাই করবে না।
▪ প্রথমে ছুরি ধারালো করে নিতে হবে।
▪ অতপর পশুটিকে বাম পাশে কেবলা মুখী করে শুইয়ে দিবে এবং নিজের ডান পা পশুটির রানের উপর রেখে তারাতারি জবাই করে দিবে।
▪ জবাই করার প্রথমে এ দোয়া পড়ে নিবে—
اني وجهت وجهي للذي فطر السموات والارض حنيفا وما انا من المشركين. ان صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العالمين. لاشريك له وبذالك امرت وانا من المسلمين
উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জা'হতু ও্যাজুহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বা হানীফা ওয়ামা আনা- মিনাল্ মুশরিকীন। ইন্না ছলা তী ওয়া নুসুকী ওয়া মা'হ্ইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাব্বিল আ- লামীন। লা-শারীকা লাহু ওয়া বিযা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা- মিনাল্ মুসলিমীন।
বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবেহ করবেন
▪ কুরবানি নিজের পক্ষ হতে হলে জবাই করার পর এ দোয়াটি পড়বে—
اللهم تقبل مني كما تقبلت من خليلك ابراهيم عليه السلام وحبيبك سيدنا محمد صلي الله عليه وسلم
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা তাক্বাব্বাল্ মিন্-নী কামা- তাক্বাব্বালতা মিন খালীলিকা ইবরা-হীমা ‘আলাইহিস্ সালাম, ওয়া হাবীবিকা সায়্যিদিনা মু'হাম্মাদিন্ (ﷺ)।
▪ আর যদি অন্যদের পক্ষ হতে জবাই করা হয় তবে مني (মিন্-নী) এর স্থলে من (মিন্) বলে তাদের নাম বলবে।
▪ যতক্ষণ পর্যন্ত পশুটি নিরব ও ঠান্ডা না হয়ে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত হাত পা কাটবে না, চামড়া আলাদা করবে না।
# জবেহের সময় ৪টি রগ স্বাশ নালি, খাদ্য নালি ও ২টি রক্ত নালি কাটবেন, এর বেশী বা কম কাটবেন না, এবং ছুরি কন্ঠের ভিতরে ঢুকিয়ে দিবেন না।
কুরবানির মাংস রান্না ও খাওয়ার সুন্নত
কুরবানির মাংস রান্না করলে যে শুধুই মাংস খাবেন তা নয় বরং সাথে সবজিও খাবেন তাতে আপনার পেট খারাপ হবে না। সালাদ, কাঁচা ফল প্রচুর পরিমানে গোস্তের সাথে খেতে পারেন তাহলে গোস্ত আপনার শরীরে সাইট এফেক্ট করবে না। যেমন হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রসুল (সা.)-কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসুল (সা.)-এর সামনে বার্লির রুটি এবং গোশতের টুকরা ও কদু মেশানো ঝোল পরিবেশন করে। আমি দেখেছি, রাসুল (সা.) প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে কদু নিয়ে খাচ্ছেন। আর আমিও সেদিন থেকে কদুর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠি। (মুসলিম, ২০৬১; বুখারি, ৫০৬৪)
মাংস রান্নার সময় এক্সট্রা চবি দেয়া মোটেও স্বস্থ্য সম্মত নয়, বরং অতি অল্প তেল দ্বারা রান্না করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অনেকে অতিরিক্ত তেল ও এক্সট্রা চবি যোগ করে রান্না করে তাতে রান্না কিছুটা স্বাধের হলেও তা কিন্তু শরীরের জন্য অসম্ভব রকমের ক্ষতিকর। সবচেয়ে বেশী ভালো যদি অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করেন
অলিভ অয়েলের খাদ্য ও পুষ্টিগুণ অনেক। গবেষণায় দেখা গেছে অলিভ অয়েল ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী এবং বয়স ধরে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক বা বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে। এছাড়া অলিভ অয়েল পাকস্থলীর প্রদাহ নিরাময়ে সহায়ক। যদি তাও সম্ভব না হয় ঘানিতে ভাঙ্গা ষড়িসার তেল দিয়ে রান্না করবেন । সয়াবিন তেল ভুলেও ব্যবহার করবেন না, বতমানে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানিরা এই সয়াবিন তেল খেতে নিষেধ করছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এই যয়তুন ফলের শপথ করেছেন আর নিঃসন্দেহে এ ফল থেকে উৎপাদিত তেল স্বাস্থ্য সম্মত যে ব্যপারে সকল স্বাস্থবিজ্ঞানিরা একমত হয়েছেন।
এরপর খাবার যখন খাবেন তখন ঘরের সকলে একসাথে বসে খাবেন কেননা একসাথে বসে খেলে তাতেও বরকত আছে যেমন
হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা একত্রে খানা খাও, পৃথক পৃথক খেও না। কেননা জামাতের সঙ্গে (খাওয়ার মধ্যে) বরকত হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)।
তাছাড়া মেহমানদের সাথে নিয়ে খাওয়াতেও আছে বরকত, কুরবানির গোস্ত শুধু নিজে খেলে তাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নাই কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন কোন না কোন মেহমানকে নিয়ে খান তাতে আপনার সে খাবারে বরকত হবে, সে চাই আপনার প্রতিবেশী হউক, চাই আপনার দুয়ারে আসা ফকির হউক, কিংবা আপনার কোন আত্মিয় কিংবা ভাই বোন হউক যে কাউকে আপনার মেহমান বানাতে পারেন
মেহমানের যারা আপ্যায়ন করে তাদের মর্যাদা সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেন, উটের চোটের দিকে ছুরি যত দ্রুত অগ্রসর হয় তার চেয়েও দ্রুত অগ্রসর হয় কল্যাণ (বরকত) ওই ঘরের দিকে যাতে (মেহমানদের অনর্গল) খানা খাওয়ানো হয়। অর্থাৎ বেশি মেহমানদারি করা হয়। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
তাছাড়া আমাদের প্রিয় নবীর আরেকটি সুন্নত হল পেটের ৩ ভাগের এক ভাগ খাওয়া ১ ভাগ পানি আর ১ ভাগ বাসাতের জন্য খালি রাখা। তাই গলায় গলায় খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তবেই কল্যান ও বরকত হবে।
মহানবী (স) কখনো রান্না করা মাংস ছুরি বা কাঁটা চামচ দিয়ে কেটে খেতেন না। তিনি বলেছেন, তোমরা ছুরি দ্বারা গোশত কেটো না। কেননা তা আজমিদের (অনারব) আচরণ-অভ্যাস। বরং তোমরা তা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খাও। কারণ এটা অতি সুস্বাদু এবং বেশি হজমদার। (আবু দাউদ, মিশকাত)।
শুধু কুরবানির মাংস নয় যে কোন খাবার যত বেশী পরিমাণ চিবাবেন তত বেশী হজমের জন্য ভালো হবে। তাই গোস্ত খাবার সময় অনেক্ষন ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবেন।
খাদ্যপাত্রের তলচাট (নিচে লেগে থাকা অংশ) রসুলুল্লাহ (সা.)-কে মোহিত করত। অর্থাৎ রসুল (সা.) পাত্রের অবশিষ্ট খাদ্য যা তার গায়ে লেগে থাকত তা খেতে খুব পছন্দ করতেন। (তিরমিজি, মিশকাত)। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সা.) আঙ্গুলসমূহ ও খাদ্যপাত্র চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমরা জানো না যে, কোন আঙ্গুল বা কোন লোকমায় বরকত নিহিত রয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত)। হজরত নুবায়শা (রা.) রসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো পেয়ালায় খাবার খায় এবং খাবারের শেষে তা চেটে খায়, পাত্রটি তার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করে। (আহমাদ, তিরমিজি, মিশকাত)।
ঈদের নামাজের নিয়ম
১। প্রথমত, স্বাভাবিক নামাজের মতোই তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধবেন। তারপর ছানা পাঠ করবেন।
২। তারপর অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবেন। প্রথম দুই তাকবিরে হাত তুলে ছেড়ে দেবেন এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বেঁধে ফেলবেন।
৩। তারপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর ইমাম সুরা ফাতিহা পড়ে এর সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলাবেন।
৪। তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই রুকু-সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।
৫। দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবির দেবেন। প্রতি তাকবিরের সঙ্গে হাত উঠাবেন এবং ছেড়ে দেবেন। তারপর চতুর্থ তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবেন।
৬। তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই নামাজ শেষ করবেন।
৭। নামাজ শেষে ইমাম মিম্বারে উঠবেন। দুটি খুতবা দেবেন। এ সময় ইমামের খুতবা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে। কোনো ধরনের কথা বলা বা অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়া যাবে না।
৮। খুতবা শেষে সবাই ঈদগাহ ত্যাগ করবেন।
কোন মন্তব্য নেই