মৃত্যু- ও মালাকুল মউত এর বিষ্ময়কর শতশত লোমহর্ষক তথ্য ঘটনা

 

জিলহ্জ্ব মাসের ৩য় খুতবা

 মৃত্যু- মালাকুল মউত এর

বিষ্ময়কর শতশত লোমহর্ষক তথ্য ঘটনা

 

১। কারা আগে থেকেই মৃত্যুর খবর জানতে পারেন?

২। দুনিয়াতে কোন বিষয়ে কারো কোন দ্বীমত নাই?

৩। হযরত আদম (আঃ) কাকে নিজের হায়াত দান করেন

৪।মুসা (আঃ) আজরাইলকে কেন থাপ্পর মারেন

৫। মৃত্যু থেকে কে পলায়ন করেছেন? (সুলাইমানের উম্মত)

৬। কি দেখে সকল ফেরেশতা ১০০০ বছর বেহুশ ছিল।

৭। সারা বিশ্বের লক্ষ প্রাণ একসাথে আজরাইল (আঃ) কিভাবে কবজ করেন

৮। জ্বিনের ও পশু পাখির রুহ কে কবজ করেন

৯। অবশেষে আজরাইলের রুহ কে কবজ করবেন?

১০। কাদের রুহ আল্লাহ নিজ হাতে কবজর করবেন?

১১। মৃত্যুর কষ্ট বা যন্ত্রনা কেমন?

১২। নেককারের মৃত্যুর যন্ত্রণা কেমন হবে?

১৩। গুনাহগারের রুহ কিভাবে বের করা হবে?

১৪। দিনে কতবার মৃত্যু দুত আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে

১৫। মৃত ব্যক্তি যে নেককার তার লক্ষণ কি?

 

কুল্লু নাফসিন জাঈকাতুল মাউত
১। মৃত্যু এমন এক জিনিষ কারো কাছে এর খবর নাই, কেউ জানে না কখন তার মৃত্যু আসবে

কারা আগে থেকেই মৃত্যুর খবর জানতে পারে?

নবী ও রাসুল গনকে আল্লাহ তায়ালা অহির মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে কখন তাদের মৃত্যু হবে। আর কিছু কিছু সাহাবা ও আল্লাহ প্রিয় বান্দা আছেন তারা মৃত্যুর আগে আঁচ করতে পারেন, তবে এই ধারনা ১০০ সিউর না, বরং তাঁরা ধারনা করে নিতে পারেন। কারন অহির মাধ্যমেই মৃত্যুর খবর সিউর হওয়া যায় আর অহি আসে শুধুমাত্র নবী রাসুলদের কাছে। আর আল্লাহর প্রকৃত অলিদের মনে এলহাম হয় সে এলহাম থেকে তারা মৃত্যু আগে জানতে পারে।

আর সাধারণ পাবলিক অনেক সময় অসুস্থতা বোধ করলে বলে দেয় আমার মনে হয় আমি বেশী দিন বাঁচবনা, সে এমন কথা বলার পর কাকতালিয় ভাবে সে যদি সেদিন বা কয়েকদিন পর মারা যায় তখন অনেকে মনে করে সে হয়ত আল্লাহর অলি, এটি এমন নয় বরং এটি একটি কাকতালিয় ঘটনা বলা যাবে।

 

২। দুনিয়াতে সবকিছু নিয়েই এখতেলাফ আছে, এমনকি আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়েও এখতেলাফ আছে, কিন্তু ১টি জিনিষ নিয়ে কারো কোন দ্বিমত নাই আর তা হল মৃত্যু

 

৩। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে এরশাদ করেন কুল্লা নাফসিন জাঈকাতুল মাউত, প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাধ আস্বাধন করতে হবে।

 

৪। তকদীর প্রকার ১টি হল তকদীরে মুতলাক যা পরীবর্তন হতে পারে, আর ১টি হল তকদীরে মুবাররম যার অটল যা পরিবর্তন হয়না, আর মৃত্যুটা হল তকদীরে মবাররম্।

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلاَّ بِإِذْنِ الله كِتَابًا مُّؤَجَّلاً

আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। [ সুরা ইমরান :১৪৫ ]

 

হাদীস আদম দাউদ (আঃ) এর ঘটনা- আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ যখন আদমকে সৃষ্টি করেন তার মধ্যে রূহ সঞ্চার করেন তখন সে হাঁচি দেয়। অতঃপর বলে: আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর নির্দেশে সে আল্লাহর প্রশংসা করল, তার রব তাকে বললেন: হে আদম তোমার রব তোমাকে রহম করুন, ফেরেশতাদের বসে থাকা দলটির কাছে যাও, তাদেরকে সালাম কর। তিনি বললেন: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ তারা বলল: وَعَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ অতঃপর তিনি তার রবের নিকট ফিরে আসেন, তিনি বলেন: হচ্ছে তোমার তোমার সন্তানের পরস্পর অভিবাদন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তখন তার দুহাত মুষ্টিবদ্ধ ছিল: দুটো থেকে যেটা ইচ্ছা গ্রহণ কর, তিনি বললেন: আমি আমার রবের ডান গ্রহণ করলাম, আমার রবের উভয় হাতই ডান বরকতপূর্ণ, অতঃপর তিনি তা প্রসারিত করলেন, তাতে ছিল আদম তার সন্তান। তিনি বললেন: হে আমার রব, এরা কারা? তিনি বললেন: হচ্ছে তোমার সন্তান, সেখানে প্রত্যেক মানুষের বয়স তার চোখের সামনে লিখা ছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল, অথবা তাদের থেকে একজন অতি উজ্জ্বল ছিল, যার জন্য শুধু চল্লিশ বছর লিখা ছিল, তিনি বললেন: হে আমার রব কে? তিনি বললেন: হচ্ছে তোমার সন্তান দাউদ, তার জন্য আমি চল্লিশ বছর লিখেছি। তিনি বললেন: হে আমার রব তার বয়স বৃদ্ধি করুন, তিনি বললেন: এটাই আমি তার জন্য লিখেছি। তিনি বললেন: হে আমার রব, আমি তার জন্য আমার বয়স থেকে ষাট বছর দান করলাম, তিনি বললেন: এটা তোমার তার বিষয়। আল্লাহর যতদিন ইচ্ছা ছিল তিনি জান্নাতে অবস্থান করেন, অতঃপর সেখান থেকে অবতরণ করানো হয়, এরপর থেকে তিনি নিজের বয়স হিসেব করতেন। রাসূল বলেন: তার নিকট মালাকুল মউত আসল, আদম তাকে বলেন: দ্রুত চলে এসেছ, আমার জন্য এক হাজার বছর লিখা হয়েছে। তিনি বললেন, অবশ্যই; কিন্তু তোমার ছেলে দাউদের জন্য তার থেকে ষাট বছর দান করেছ। আদম তা অস্বীকার করল

 

হাদীস হযরত মুসা আজরাইলের ঘটনা- মুহাম্মাদ ইবনু রাফি' (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুসা (আঃ) এর কাছে মালাকুল মউতকে প্রেরণ করা হলো। যখন মালাকুল মউত তার কাছে পৌছলেন তিনি তাকে এক চড় মারলেন যাতে তার একটি চক্ষু বের হয়ে গেল। তিনি তার প্রভুর কাছে গিয়ে বললেনঃ আপনি আমাকে এমন এক বান্দার কাছে প্রেরণ করেছেন মৃত্যুর ইচ্ছা পোষণ করেন না। আল্লাহ তা'আলা তার চক্ষু ফিরিয়ে দিয়ে বললেন যে, এবার তার কাছে ফিরে গিয়ে বলবে, তিনি যেন একটি গরুর পিঠে তার হাত রাখে

তার হাতের নীচে যতগুলো পশম পড়বে প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে এক বৎসর করে তার আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তিনি মুসা (আঃ) বললেন, হে পরওয়ারদিগার! তারপর কি হবে? তিনি বললেন, মৃত্যূ। তখন মুসা (আঃ) বললেন, তাহলে এখনই মৃত্যূ হয়ে যাক। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, তাকে যেন পবিত্রভূমি (বায়তুল মুকাদ্দাস) হতে একখানা প্রস্তর নিক্ষেপের দূরত্ব পরিমাণ নিকটবর্তী স্থানে রাখা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি আমি তথায় থাকতাম তাহলে তোমাদেরকে তাঁর কবর দেখিয়ে দিতাম। যা পথের এক পার্শে লাল বালুকা স্তূপের নীচে রয়েছে


৫। মৃত্যু যেমন নির্ধারিত সময় হবে তেমনি নির্ধারিত স্থানেই হবে।

ঘটনা- হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের যুগে তাঁর নিজের এক মন্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। যা মুসলিম উম্মাহর জন্য চিন্তা খোরাক এবং শিক্ষণীয় বিষয়। যা তুলে ধরা হলো-

হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম নিজের এক মন্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। এমন সময় খুব সুন্দর চেহারা দামি পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি সুলাইমান আলাইহিস সালামের মজলিশে প্রবেশ করল এবং কিছুক্ষণ বসার পর চলে গেল

তার যাওয়ার পর মন্ত্রী হজরত সুলাইমান আলাইসি সালামকে জিজ্ঞাস করলেন, হে আল্লাহর নবি! মাত্র আপনার নিকট যে লোকটি এসেছিলে, সে কে?

হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, আমার নিকট (দামি পোশাক পরিহিত সুদর্শন) যে ব্যক্তি (এসে) বসেছিল, সেমালাকুল মাউতঅর্থাৎ মৃত্যুর ফেরেশতা

মন্ত্রী (মালাকুল মাউত-এর) কথা শুনে তাঁর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং শরীর কাঁপতে থাকে আর বলতে থাকে, হজরত! অনুগ্রহ করে বাতাসকে হুকুম দেন, সে যেন আমাকে হিন্দুস্তানে (সেখান থেকে অনেক দূর) পৌঁছে দেয়

কারণ আমার জন্য অসম্ভব যে আমি জায়গায় (স্থানে) বসি যেখানে মৃত্যুর ফেরেশতা বসেছে

হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম মন্ত্রীর আবেদন মঞ্জুর করে বাতাসকে নির্দেশ দেন, মন্ত্রীকে হিন্দুস্তান পৌঁছে দেয়ার জন্য। বাতাস (নির্দেশ মোতাবেক) তাই করল

কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর পুনরায় মৃত্যুর ফেরেশতা সুলায়মান আলাইহিস সালামের নিকট উপস্থিত হলো এবং বলল (হে আল্লাহর নবি) আপনার মন্ত্রী কোথায়?

হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম জানালেন, আপনার ভয়ের কারণে বাতাস তাঁকে হিন্দুস্তান পৌছে দিয়েছে


মৃত্যুর ফেরেশতা বলল, কিছুক্ষণ পূর্বে আমি যখন আপনার মজলিসে এসেছিলাম, তখন মন্ত্রীকে দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম। কেননা আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন যে, হিন্দুস্তান থেকে তার জান (রুহ) কবজ করার জন্য। কিন্তু আমি এসে দেখলাম সেই ব্যক্তি হাজার মাইল দূরে আপনার নিকট বসে আছে?

সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ আল্লাহর কি অপার খেলা, (মানুষের মৃত্যুর) সময় এবং স্থান পরিবর্তন হয় না

মৃত্যুর ফেরেশতা আরো বলেন, আমি নির্দিষ্ট সময়ে হিন্দুস্তান পৌঁছি তখন আপনার মন্ত্রী হিন্দুস্তানে উপস্থিত ছিল এবং তার জান কবজ করে আবার আপনার নিকট ফিরে আসলাম

সুতরাং আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যার যখন মৃত্যু আসবে, সে যে অবস্থায় যেখানেই থাকুক না কেন; মৃত্যুর সময় হলে কোনো ব্যক্তিকেই এক কদম সামনেও যেতে দেয়া হবে না আবার পিছনেও যেতে দেয়া হবে না

সে জন্য আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- সুরা নিসার ৭৮ নং আয়াতে

أَيْنَمَا تَكُونُواْ يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ

তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। [ সুরা নিসা :৭৮ ]

 

৬। ইমাম গাজ্জালি (রহঃ) এর দাকায়েকুল আখবার নামক কিতাবে মৃত্যু সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে উল্লেখ আছে

আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম মৃত্যুকে সৃষ্টি করে ৭০ হাজার জিঞ্জীর দ্বারা আবদ্ধ করে ৭০ হাজার পর্দার আড়ালে রেখে দিয়েছিলেন। সেই জিঞ্জীর এত বড় ছিল যে একটা তেজী ঘোড়া সহস্র বছর পাড়ি দিলেও তার একটি প্রান্ত অতিক্রম করতে পারবে না। ফেরেশতাগণ কেউই জিঞ্জীরের শব্দের ভয়ে মৃত্যুর কাছে যেতো না। আর মৃত্যু যে কি জিনিস তারা সেটা জানতোই না।একদিন আল্লাহ তাআলা সকল ফেরেশতাদের ডেকে মৃত্যুকে পর্দার আড়াল থেকে উন্মোচন করলেন। মৃত্যুর এমন ভয়ংকর ছুরত দেখে ফেরেশতারা বেহুশ হয়ে গেল, আল্লাহ তায়ালা ১০০০ বছর পর তাদের হুশ ফিরিয়ে দিলেন,

ফেরেশতাগণ জিজ্ঞেস করলো, “হে আল্লাহ এর থেকে বড় কিছু কি আপনি সৃষ্টি করেছেন।তখন মহান আল্লাহ তাআলা বললেন - “আমি মৃত্যুকে সৃষ্টি করেছি এবং আমি এর চেয়েও বড়।অতঃপর আল্লাহ তাআলা আজরাঈল (আঃ)

কে বললেন, “হে আজরাঈল! আমি তোমাকে মৃত্যুর উপর ক্ষমতাবান করলাম।তখন আজরাঈল (আঃ) বললেন, “হে আল্লাহ! আমার কি এমন ক্ষমতা আছে যে আমি মৃত্যুকে আয়ত্তে রাখতে পারি?” তখন আল্লাহ তাআলা আজরাঈল (আঃ) কে মৃত্যুর চেয়েও সহস্র গুন শক্তি প্রদান করলেন। ফলে আজরাঈল (আঃ) মৃত্যুকে স্বীয় ডান হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করে ফেললেন। আর তখন থেকে আজরাঈল (আঃ) এর নাম হল মালাকুল মউত অর্থাৎ মৃত্যুর অধিপতি। তারপর মালাকুল মউত আল্লাহর কাছে আবেদন করলেন, “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তা আমি আসমান জমিনের সর্বত্র ঘোষনা করতে চাই।আল্লাহ তাআলা মালাকুল মউতকে অনুমতি দান করলে তিনি বজ্র কন্ঠে ঘোষনা করলেন, " হে সৃষ্ট জীব! আমি সেই মৃত্যু যে বন্ধু বান্ধব, পিতা মাতা, ভাই বোন, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাই। ঘর বাড়ি, দালান কোঠা ধ্বংস স্তুপে পরিনত করি। তোমরা গগনস্পর্শী অট্টলিকায় থাকলেও আমি তোমাদের কাছে পৌছাবো। সকলকেই আমার স্বাধ গ্রহন করিতে হইবে"

৭। আজরাইল সারা বিশ্বে একই সময় এত প্রাণ কিভাবে কবজ করেন?

গোটা পৃথিবী হজরত আজরাইল (.)-এর কাছে দানাভর্তি ছোট্ট পেয়ালার মতো। আল্লাহ মহান যখন যে দানাটি উঠিয়ে নেওয়ার জন্য তার প্রতি হুকুম প্রদান করেন, তৎক্ষণাৎ তিনি তা বাস্তবায়ন করেন। গোটা পৃথিবী আজরাইলের (.) চোখের সামনে উপস্থিত। আদেশ হওয়া মাত্র হজরত আজরাইল (.) জান কবজ করেন

পবিত্র কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে,

إِذَا جَاء أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَهُمْ لاَ يُفَرِّطُونَ

অবশেষে যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার প্রেরিতরা তার মৃত্যু ঘটায় এবং তারা এতে কোনো ত্রুটি করে না। (সুরা আনআম, আয়াত৬১)

আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আবি হাতেম ইবনে আবি শায়বা (রহ.) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেনউক্ত আয়াতে রুসুল শব্দ দ্বারা রুহ কবজ করার সময় হজরত আজরাইলের সঙ্গে উপস্থিত সহকারী ফেরেশতাগণকেই বোঝানো হয়েছে। হজরত রবি ইবনে আনাস (রহ.) বলেন, রুহ কবজ করার সময় মালাকুল মউতের সঙ্গে তাঁর সহকারী হিসেবে একদল ফেরেশতা উপস্থিত থাকেন। কিন্তু হজরত আজরাইলই (.) মূল দায়িত্ব পালন করেন। রুহ কবজ করার পর রুহকে রহমতের ফেরেশতা অথবা আজাবের ফেরেশতার হাতে সোপর্দ করা হয়

 

৮।জ্বিন পশু পাখি কিট পতঙ্গের রুহ কে কবজ করেন?

যত প্রাণী আছে সকলের রুহ মালাকুল মওতই কবজ করে থাকেন। যেমন সুরা সাজদাহয় আল্লাহ তায়ালা বলেন

قُلْ يَتَوَفَّاكُم مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَى رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ

বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। [ সুরা সাজদা ৩২:১১ ]

 

৯। আজরাইলের রুহ কে কবজ করবে?

প্রত্যেক রুহকে মৃত্যুর স্বাধ গ্রহণ করতেহবে, হযরত আজরাইল (আঃ) জানদার প্রাণী তাঁর রুহ কে কবজ করবে?

পৃথিবী ধ্বংস হবার প্রাক্কালে হযরত আজরাঈল (আঃ) আরশ বহনকারী চারজন ফেরেশতা অন্য প্রধান তিন জন ফেরেসতা ব্যতীত সকল প্রাণীর আত্মা কবয করবেন। পরে কিয়ামত তথা পুনরুত্থানের পূর্বে তার জানও কবয করে ফেলবেন



আজরাঈল (আঃ) সকল প্রাণীর আত্মা কবয করে, অবশেষে নিজের আত্মা নিজেই কবয করবেন। যখন তিনি সকল জীবজন্তু, জিন ফেরেশতা, সবারই আত্মা কবয করে শেষ করবেন। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে আজরাঈল এবার তোমার নিজের আত্মা নিজে কবয করো

 

১০। কাদের রুহ আল্লাহ নিজে কবজ করেন?

সুনানে ইবনে মাজায় হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনআমি রসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা রুহসমূহ কবজ করার দায়িত্ব আজরাইলকে (.) দান করেছেন, কিন্তু পানিতে নিমজ্জিত শহিদের রুহ আল্লাহ নিজে কবজ করেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) প্রমুখ থেকে অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে।

 

১১। মৃত্যুর কষ্ট কেমন?

() হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার হজরত কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেন, আমাকে মৃত্যুর অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন। তখন হজরত কা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘মৃত্যু হলো কাঁটাদার গাছের মতো। কাঁটাযুক্ত সে গাছটি যখন মানুষের পেটে ঢোকানোর পর তার প্রতিটি কাঁটা শিরায় শিরায় লেগে যায়

তখন একজন শক্তিশালী মানুষ যদি গাছিটি ধরে জোরে টেনে বের করার চেষ্টা করে। ওই মুহূর্তে শিরায় শিরায় বিদ্ধ হওয়া কাঁটার আঘাতের কষ্ট মানুষটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে

অনুরূপভাবে মানুষের মৃত্যুকালীন সময়ে মৃত্যুপথযাত্রীর কাছেও মনে হয় যেন, তার শরীরের গোশতগুলো যেন একটি কাঁটার সঙ্গে বেরিয়ে আসছে। সে মৃত্যুযন্ত্রণা মানুষ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে থাকে

হলো মৃত্যুকালীন সময়ে মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণার নমুনা।

 

()ইবনে আবি শাইবা, ইবনে আবিদ দুনিয়া এবং ইমাম আহমদ রহ. হযরত জাবের রা. হতে বর্ণনা করেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা বনি ইসরাঈলের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করো। কেননা সেখানে তোমাদের জন্যে অনেক চমকপ্রদ শিক্ষা রয়েছে। এরপর নবি করিম সা. নিজেই সেই জাতির বেশ কিছু ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করলেন, বনি ইসরাঈলের একটি দল একদা একটি কবরস্থানের নিকটে এসে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, আমরা দুই রাকাত নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে মিনতি করবো, তিনি যেনো কবর হতে কোনো একজনকে উঠিয়ে আমাদের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমরা তার কাছ থেকে মৃত্যুর অবস্থা জেনে নিতে পারবো। যদি আমরা কাজটি করতে পারি তাহলে তা আমাদের জন্যে অনেক উপকারী হবে। এরপর তারা সেরকম সিদ্ধামত্ম নিয়ে দুরাকাত নামায আদায় করে আল্লাহর দরবারে আরজি জানালো। ইত্যবসরে একজন কালো বর্ণের মুরদা কবর থেকে উঠে আসলো। লোকটির কপালে সেজদার নিশান পড়া ছিলো। সে বললো, তোমরা আমার কাছে কী জানতে চাও? একশ বছর পূর্বে আমার মৃত্যু হয়েছে কিন্তু এখন পর্যমত্ম মৃত্যুর তিক্ত বিভীষিকা আমি ভুলতে পারিনি। তোমরা আমার জন্যে আল্লাহর কাছে দুআ করো, তিনি যেনো আমাকে পূর্বের মতো করে দেন।

 

()হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. হতে বর্ণিত আছে, করাত দিয়ে চিড়লে বা কাঁচি দিয়ে চামড়া ছিললে কিংবা কাউকে তপ্ত পানির পাতিলায় নিক্ষেপ করলেও সে পরিমাণ কষ্ট বোধ হবে না যে পরিমাণ কষ্ট মৃত্যুর সময় বোধ হবে। -ইয়াইইয়াউল উলুম ৩৯৪/


কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। [ সুরা ইমরান :১০২ ]

 

১২। নেককারের মৃত্যু যন্ত্রনা কেমন হয়?

তবরানি শরিফে হযরত আবু কতাদা রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, পিপড়ার কামড়ের কারণে যতটুকু কষ্ট বোধ হয় একজন শহিদ মৃত্যুর সময় অনেকটা সেরকম কষ্ট বোধ করবে

#এক বর্ণনা আছে পানির পাত্র কাত করলে যেমন সহজে তা থেকে পানি বের হয়ে আসে তেমনি নেককারের রুহ সহজে বের হয়ে আসে।

# অপর বণনা আছে আটারর খামির ভিতর যদি চুল থাকে সে চুল যত সহজে বের করা যায় তত সহজে নেককারের রুহ বের করা হয়।

 

১৩। বদকারের রুহ কিভাবে বের করা হয়

পাপাচারী ব্যক্তির জন্যে আজাবের ফেরেশতারা আসেন আজাবের ফেরেশতাদের ভয়ংকর চেহারা রূপ দেখেই কাফের, মুশরেক পাপাচারী মুসলমানদের আত্মাটা ভয়ে শরীরের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যংগে পালানোর চেষ্টা করে এমনকি পাপাচারী ব্যক্তির আত্মাটা তার নখের নীচে, পশমের নিচে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে মালাকুল মউত পলায়নপর এই আত্মাকে পিটিয়ে পিটিয়ে টেনে বের করে আনার চেষ্টা করেন বের করার সময় আত্মাটার এমন কষ্ট হয়, যেনো একটা চটের বস্তার মধ্যে দিয়ে একটা লোহার আংটা ঢুকিয়ে দিয়ে টেনে বের করার সময় যেভাবে ছিড়েফুড়ে বের হয়ে আসে, আত্মাটাও সেইভাবে ছিড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে বের হয়ে আসে আর এইজন্যইসাখারাতুল মউতেরসময় পাপী লোকদের এতো কষ্ট হয়

 

১৪।প্রতি ঘরে ৫ বার মালাকুল মউতঃ আতায়া-বিন- ইয়াসার (রাঃ) বলেছেন, দুনিয়ায় এমন কোন ঘর নাই যে ঘরে দৈনিক পাঁচবার মালাকুল মউত অনুসন্ধান করে না, যে ঘরে রুহ্ কবজ করার মত কোন লোক আছে কি না? ছাবেত-বিন-বনানী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, দিনরাতে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এমন একটি ঘর বাদ যায না, যে ঘরে মালাকুল মউতের একবার গমনাগমন না হয় রুহ্ কবজ করার নির্দেশ হলে সে রুহ্ কবজ করে নিয়ে যায় না হলে খালি হাতে ফিরে যায়

 

১৫। মৃত ব্যক্তি নেককার তার লক্ষন কি?

() কপালে ঘাম নিয়ে মৃত্যু বরণ করা। মৃত্যুর সময় মৃত্যু ব্যক্তির কপালে ঘাম দেখা দিলে বুঝতে হবে তার শেষ পরিণতি ভাল হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

موت المؤمن بعرق الجبين. رواه النسائي(১৮২৯) وصححه الألباني.

'ঈমানদারের মৃত্যু হল কপালের ঘামের সাথে।' অর্থাৎ যে মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুকালে কপালে ঘাম দেখা যাবে ধরে নেয়া হবে তার ভাল মৃত্যু হয়েছে। ”[মুসনাদে আহমাদ (২২৫১৩), জামে তিরমিযি (৯৮০), সুনানে নাসায়ি (১৮২৮)

() শুক্রবার দিনে অথবা রাতে মৃত্যু বরণ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

ما من مسلم يموت يوم الجمعة أو ليلة الجمعة إلا وقـاه الله فتنة القبر. رواه الترمذي(১০৭৪) وصححه الألباني.

'যে মুসলিম শুক্রবার দিবসে অথবা রাতে ইন্তেকাল করবে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের আজাব থেকে রেহাই দেবেন।' শুক্রবার রাত বলতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতকে বুঝানো হয়ে থাকে [মুসনাদে আহমাদ (৬৫৪৬), জামে তিরমিযি (১০৭৪),



()মৃত্যৃকালে কালেমার স্বাক্ষ্য দেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

من كان آخر كلامه لا إله إلا الله دخل الجنة. أخرجه الحاكم(১২৯৯)

'যার শেষ কথা হবে 'আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই' সে জান্নাতে প্রবেশ করবে

 

()নেক আমল করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

من قال لا إله إلا الله ابتغاء وجه الله ختم له بها دخل الجنة، ومن صام يوما ابتغاء وجه الله ختم له بها دخل الجنة، ومن تصدق بصدقة ختم له بها دخل الجنة . رواه أحمد(২৩৩২৪)

'যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বলবে, 'আল্লাহ ব্যতিত কোন উপাস্য নেই' এবং কথার সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সওম পালন করবে এবং কাজের সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ছদকাহ করবে এবং এর সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।'



() প্লেগ রোগে মারা যাওয়া। দলীল হচ্ছে নবী আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “প্লেগ রোগে মৃত্যু প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য শাহাদাত।”[সহিহ বুখারী (২৮৩০) সহিহ মুসলিম (১৯১৬)] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি তখন তিনি আমাকে জানান যে, “এটি হচ্ছে- আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব। আল্লাহ যাদেরকে শাস্তি দিতে চান তাদের উপর এই রোগ নাযিল করেন। আর আল্লাহ এই রোগ মুমিনদের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। যে মুমিন প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ এলাকাতে অবস্থান করবে, ধৈর্যধারণ করবে, সওয়াবের প্রত্যাশা করবে এবং এই একীন রাখবে যে, আল্লাহ তার জন্য যা লিখে রেখেছেন সেটাই ঘটবে সে ব্যক্তি শহিদের সমান সওয়াব পাবে।” [সহিহ বুখারি (৩৪৭৪)]

 

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নেককার হিসেবে কবুল করুন এবং মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দান করুন আমিন।

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.