ভয়ংকর স্বপ্ন। খারাপ স্বপ্ন দেখলে কি করবেন। স্বপ্নের ব্যাখ্যা Shopner tab...
সেক্সুয়াল, নোংড়া, খারাপ স্বপ্ন কাউকে বলার পরিণতি
অনেকে স্বপ্ন দেখে মানুষকে বলে, আমি ভয়ংকর স্বপ্নে দেখেছি, বিশ্রি স্বপ্ন দেখেছি যাকে তাকে বলে দেয় এবং এর অর্থ জিজ্ঞেস করে, বিশ্রি স্বপ্ন দেখলেই যে তার তাবির বা ব্যাখ্যা বিশ্রি হবে এমনটি নয় অথচ হুযুর (দঃ) বলেন স্বপ্ন ২ প্রকার একটি হল রহমানি, অন্যটি হল শয়তানি, রহমানি স্বপ্নের আলামত হল তা তাহাজ্জুদের সময় দেখা যায়, এবং পাক পবিত্র অবস্থায় দেখা যায়, এ ধরনের স্বপ্ন সকলকে বলতে হুযুর (দঃ) নিষেধ করেছেন। কেননা স্বপ্নের তাবির যেমন করা হয় ফলাফল তেমনই হয়। সে জন্য কোন জ্ঞানি, সমজদার, নেক লোকের কাছে আপনার স্বপ্ন বয়ান করবেন।যাতে সে আপনাকে সঠিক তাবির বা ব্যাখ্যা দিতে পারে।
কতিথ আছে খীলফা হারুন রশিদ এর স্ত্রী রানী জুবাইদা একরাত্রে স্বপ্ন দেখলেন অসংখ্য মানুষ তাকে ভোগ করছে। ঘুম ভাঙ্গার পর তিনি খুব বিব্রতকর বোধ করছিলেন।
এক বিচক্ষণ দাসীকে তার স্বপ্ন বলে শিখিয়ে দিয়ে বাগদাদের বিখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তি হযরত আবু ইউসুফ এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য। দাসী থেকে স্বপ্নের কথা শুনে ইমাম আবু ইউসুফ বললো- এটি তোমার স্বপ্ন হতে পারে না। স্বপ্ন কার তুমি আগে খুলে বলো, তারপর আমি ব্যাখ্যা দেবো।
ফলে দাসী রানী জুবাইদার কাছে গিয়ে তা বললে, রানী জুবাইদা সেটা যে তার স্বপ্ন সে সত্যটা আবু ইউসুফকে বলে দেয়ার জন্য বলেন। দাসীর কথায় ইমাম আবু ইউসুফ ব্যাখ্যায় বলেন, রানী জুবাইদা এমন কাজ করবেন যাতে অগণিত মানুষ উপকৃত হবেন।
এই স্বপ্ন দেখার পর রানি এমন কাজ করেছিলেন যা কেয়ামত পযন্ত স্বর্নাক্ষরে লিখিত থাকবে। মরুভূমিপ্রবণ পবিত্র মক্কায় জমজমের পানি বাদে তেমন পানির উৎস ছিলো না। ফলে হাজীরা সেখানে গমন করলে সেকালে পানির অভাবে কষ্ট পেত।
১৯৩ হিজরিতে খলিফা হারুন এর মৃত্যুর পর রানী জুবাইদা হজ্বব্রত পালনে গেলেন। পবিত্র মক্কায় পানির সমস্যা দেখে তাকে এতই ব্যথিত করেছিল যে পানির সমস্যা চির অবসানের জন্য একটি খাল খননের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হাজীদের কল্যাণে পবিত্র মক্কানগরী পর্যন্ত একটি খাল খননের আদেশ দিলেন। এখনও এই নহর মক্কায় আইনে জুবাইদা নামে ইতিহাসর বিষ্ময়কর সাক্ষি হয়ে আছে।
রানি জুবাইদা বিচক্ষন ছিলেন তাই তিনি তাঁর স্বপ্নের ব্যাখ্যা এমন একজন প্রকৃত জ্ঞানীর কাছে চেয়েছেন যিনি তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন, এবং সত্যি সত্যি ইমাম আবু ইউসুফ যেমনটি ব্যাখ্যা করেছেন তেমনটিই হয়েছে। সুতরাং আমাদেরও উচিত ভালো হউক খারাপ হউক স্বপ্ন যাকে তাকে না বলা। বরং আল্লাহ ওয়ালা কল্যানকামি নেককার লোক যিনি কুরআন হাদীসের গভীর জ্ঞান রাখেন, যিনি আপনার স্বপ্নের একটা ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন তাকে বলা উচিত।
আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. বলেছেন, ভাল ও সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে আর দুঃস্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। যদি কেউ ভাল স্বপ্ন দেখে, তাহলে তা শুধু তাকেই বলবে, যে তাকে ভালোবাসে। অন্য কাউকে বলবে না।
আর কেউ যদি স্বপ্নে খারাপ কিছু দেখে, ঘুম থেকে জাগার পরপর শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বলবে) এবং বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করবে। আর কারো কাছে স্বপ্নের কথা বলবে না। এমনটি করলে সেই স্বপ্ন কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি ও মুসলিম)
দুঃস্বপ্ন দেখলে যা করতে হবে
১) দুঃস্বপ্নের ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। এভাবে সকল প্রকার ক্ষতি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত।
২) শয়তানের অনিষ্ট ও কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। এবং এর জন্য আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়তে হবে। কারণ, খারাপ স্বপ্ন শয়তানের কুপ্রভাবে হয়ে থাকে।
৩) ঘুম ভাঙার পর বাঁ দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করতে হবে। এটা করতে হবে শয়তানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ ও তার চক্রান্তকে অপমান করার জন্য।
৪) যে দিক ফিরে দুঃস্বপ্ন দেখেছে তা পরিবর্তন করে অন্য দিক ফিরে ঘুমাতে হবে। অবস্থাকে বদলে দেয়ার ইঙ্গিত স্বরূপ এটা করতে বলা হয়েছে।
৫) খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে বলা যাবে না। আর নিজেও এর ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
হাদিসে এসেছে, নবী করিম সা. এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। এ কথা শুনে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন। আর বললেন, ঘুমের মধ্যে শয়তান তোমাদের কারো সাথে যদি দুষ্টুমি করে, তবে তা মানুষের কাছে বলবে না। (মুসলিম শরীফ)
হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম, সাহাবীগণ কোনো স্বপ্ন দেখলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তার ব্যাখ্যা জানতে চাইতেন। তারা এভাবে কোনো স্বপ্নকে অযথা মনে না করে এর গুরুত্ব দিতেন।
কোন মন্তব্য নেই