জীবনের সবগুনাহ মাফের ১৭টি দোয়া ও আমল
জীবনের সবগুনাহ মাফের ১৭টি দোয়া ও আমল
আজকে হাদীস শরীফের আলোকে ১৭টি এমন আমল ও দোয়া আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব যে সব আমল ও দোয়া পড়ার কারনে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মাফের সুসংবাদ দিয়েছেন।
১। যে ব্যক্তি খাওয়ার খেয়ে এই দোয়া পড়বে তার আগের পরের সব গুনা মাফ হয়ে যাবে
مَنْ أَكَلَ طَعَامًا ثُمَّ قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا الطَّعَامَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ
(অর্থ) সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে পড়িয়েছেন এবং এর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আমার শক্তি ও চেষ্টা ছাড়া” তার আগের ও পরের জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (আবু দাউদ ৩৯৮২)
২। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয্যার আশ্রয় গ্রহণের সময় কেই যদি এই দোয়াটি তিনবার পাঠ করে তবে গুনাহর সংখ্যা যদিও হয় সমুদ্রের ফেনার মত, গাছের পাতার মত, মরুভূমির ঘন বালূকারাশির মত, দুনিয়ার দিবসগুলির মত তবুও আল্লাহ তা’আলা তার সে সব গুনাহ মাফ করে দিবেন। দু’আটি এইঃ
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি সে আল্লাহর কাছে যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। যিনি চিরঞ্জীব স্বাধিষ্ট বিশ্বধাতা। আর আমি তার কাছে তাওবা করছি। (তিরমিযি ৩৩৯৭)
৩। বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তাঁর জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (বুখারী-৪০)
৪।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমার মত এ রকম অযু করবে, তারপর দু রাক‘আত নামাজ আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে না, তার পেছনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী ১৬১)
৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমারও ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার ‘আমীন’ বলা ও ফিরিশতাদের ‘আমীন’ বলা এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী ৭৪৪)
৬-৭। হিজরীত ও হজ্ব পূর্ববতী সব গুনাহ মিঠিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলাম পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়। আর হিজরত পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়? আর হজ্জ পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়? (মুসলিম ২২০)
৮। সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে এই দু‘আ পড়বে, ‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারসূলুহূ, রযীতু বিল্লা-হি রববাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনা’’ (অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব, দীন হিসেবে ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানি ও মানি) এর উপর আমি সন্তুষ্ট, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। সহীহ : মুসলিম ৩৮৬, আবূ দাঊদ ৫২৫, নাসায়ী ৬৭৯, তিরমিযী ২১০, ইবনু মাজাহ্ ৭২১, আহমাদ ১৫৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৩,
৯। আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! আমি জানতে চাই, যদি দৃঢ়পদ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে পশ্চাদপদ না হয়ে সম্মুখপানে অগ্রসর হয়ে আল্লাহর পথে শহীদ হই, তবে কি আল্লাহ আমার সব গুনাহ মাফ করে দেবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর ঐ লোক চলে যেতে উদ্যত হলে পিছন থেকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ডেকে বললেন, কিন্তু ঋণ ক্ষমা করা হবে না। জিবরীল (আঃ) এসে এ কথাটিই বলে গেলেন। সহীহ : মুসলিম ১৮৮৫, নাসায়ী ৩১৫৬, তিরমিযী ১৭১২, আহমাদ ২২৫৮৫, সহীহ আল জামি‘ ১৪২৫।
১০। যখন কোন মুমিন বান্দা অসস্থ হয়ে দুর্বল হয়ে যায় এবং মৃত্যু মুখে পতিত হয় তখন সে রোগ বা অসুস্থতা তার বিগত জীবনের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়।
একদিন রাসুল (সা.) আয়েশার (রা.) কাছে গেলেন। দেখলেন আয়েশা কপালে একটি জলপট্টি দিয়ে আছেন এবং ব্যথার প্রকোপে কাঁপছেন।
রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে তোমার আয়েশা?’ বলেন, ‘জ্বর হয়েছে। আল্লাহ দ্রুত আরোগ্য দান করুন। ’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘জ্বরকে মন্দ বোলো না। এটি বনি আদমের গুনাহকে এভাবে দূর করে দেয়, যেভাবে আগুন শুকনো লাকড়িকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়। ’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫৭৫)
১১। কদরের রাতে এবাদতও পূর্বের পরের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয়। সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০১
১২। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের নিকট দাঁড়াতেন এবং তা স্পর্শ করতেন। এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
إِنّ مَسْحَهُمَا كَفّارَةٌ لِلْخَطَايَا.
এ দুইয়ের স্পর্শ গোনাহ মিটিয়ে দেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৫৯
১৩। বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا.
সাক্ষাৎকালে দুজন মুসলিম যখন মুসাফাহা করে তখন তারা পৃথক হওয়ার আগেই তাদেরকে মাফ করে দেওয়া হয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭২৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫২১২
১৪। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا يَزَالُ الْبَلَاءُ بِالْمُؤْمِنِ أَوِ الْمُؤْمِنَةِ، فِي جَسَدِهِ، وَفِي مَالِهِ، وَفِي وَلَدِهِ، حَتّى يَلْقَى اللهَ وَمَا عَلَيْهِ مِنْ خَطِيئَةٍ.
মুমিন পুরুষ, মুমিন নারী বিপদাক্রান্ত হতে থাকে; সে বিপদে কখনো আক্রান্ত হয় শরীর, কখনো সম্পদ, কখনো সন্তান-সন্ততি। (এসকল বিপদে মুমিন ধৈর্য ধারণ করে, ফলে আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করতে থাকেন।) একপর্যায়ে সে গোনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৮৫৯
এছাড়া হাদীস শরীফে ওমরাহ করলে গুনাহ মাফ, আরাফার দিনে রোজা রাখলে বিগত বছর ও বর্তমান বছর মোট ২ বছরের গুনাহ মাফ, মুহরমের ১০ তারিখ রোজা রাখলে বিগত ১ বছরের গুনাহ মাফের ঘোষনা রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার এবং গুনাহ সমুহ মাফ করানোর তৌফিক দান করুন। আমিন
কোন মন্তব্য নেই