ওমর (রাঃ) এর জীবনী ৪০টি ঘটনা ও বিষ্ময়কর কারামত
হিজরী সনের গুরুত্ব ও হযরত ওমর (রাঃ) এর জীবনী ৪০টি ঘটনা ও বিষ্ময়কর কারামত
ইসলামের
২য় খলিফা ২৪ হিজরীতে
১লা মুহররম ৬৩ বছর বয়সে শহিদ হন। অগ্নি উপাসক আবু লুলু ফজরের নামাজ রত অবস্থায় হযরত ওমর ফারুককে শহিদ করেন।
আবু জেহেল ও হযরত ওমর (রাঃ) এর জন্য মহানবীর দোয়া
যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তাদের উপর নেমে এসেছিল মক্কার প্রভাবশালীদের নির্যাতন। অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করার মত ছিল ন। তবুও কালিমার পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছিলেন অসহায় সাহাবিরা। এক পর্যায়ে নবী মুহাম্মদ সা. দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, ওমর ইবনে খাত্তাব এবং আবু জাহেলের মধ্যে তোমার কাছে যে বেশি পছন্দনীয়, তাকে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ দাও এবং তার দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করো।’ প্রিয় হাবিবের দোয়া। কবুল না করে পারেলেন না মাহবুব। কার্যকর হতে দেরি হল না। হযরত ওমরের অন্তর আল্লাহ পরিবর্তন করেন দিলেন।
হযরত ওমরের ইসলাম কবুলের ঘটনা
নবীকে (সা.) হত্যার উদ্দেশে তলোয়ার নিয়ে রওনা দিলেন ওমর। পথে সাহাবি নঈম বিন আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত। নঈম ওমরের উদ্দেশ্য আঁচ করতে পেরে বললেন, ‘আগে নিজের বোন, ভগ্নিপতির খোঁজ নাও, তারপর যেখানে যেতে চাও যেও।’ ওমর ছুটে চললেন বোনের বাড়ি অভিমুখে। যেয়ে দেখেন বোন ফাতেমা কোরআন পড়ছেন। পায়ের শব্দ কানে আসা মাত্রই চুপ হয়ে গেলেন বোন ফাতেমা। লুকিয়ে ফেললেন কোরআনের পাতা। হযরত ওমর ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি পড়ছিলে? বোন নিরুত্তর। ওমর বললেন, আমি জেনে ফেলেছি, তোমরা উভয়ই ধর্মত্যাগী হয়েছ। এই বলে ওমর ঝাপিয়ে পড়লেন ভগ্নিপতির ওপর। বোন স্বামীকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে তাকেও পেটালেন। বোনের দেহ রক্তাক্ত। রক্তাক্ত ভগ্নিপতি। অশ্র“ভরা চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দৃপ্ত কন্ঠে ফাতেমা বললেন,
‘ওমর! যা ইচ্ছে করতে পার। কিন্তু আমাদের পক্ষে ইসলাম ত্যাগ করা সম্ভব নয়।’
ক্ষতবিক্ষত দেহ, রক্তাক্ত পোশাক পরিচ্ছদ, চোখ ভরা অশ্র“ ও আবেগভরা মন নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক নারী। শুধু নারী নয়-সহোদরা বোন। আর তার মুখে এমন তেজোদীপ্ত কথা। কিছুক্ষণের জন্য ভাবলেন ওমর। হার মানলো ওমরের আগ্রাসী শক্তি। তার ইস্পাত কঠিন হৃদয় মোমের মত গলে গেল। তিনি বললেন, আচ্ছা! তোমরা যা পাঠ করছিলে আমাকে একটু পড়তে দাও তো। তাঁর বোন বললেন, তুমি নাপাক। এই কিতাব শুধু পাক পবিত্র লোকই স্পর্শ করতে পারে। যাও! গোসল করে এসো। গোসল করে এলেন ওমর। পড়লেন কোরআন। গাল বেয়ে ঝড়ে পড়ল অশ্রুকণা। সে অশ্রু বেদনার নয়, ঈমানের।
সেই তলোয়ার হাতেই ওমর ছুটে চললেন নবীর দরবারে। নবী সা.-র দরবারের ওমরের খটখট আওয়াজ। একজন সাহাবী দরজায় উঁকি দিয়ে দেখলেন যে, তলোয়ার হাতে ওমর। আশে-পাশেই সবাই একত্রিত হলেন। ভয়ে কাঁপছে সাহাবিরা। না জানি আজ কি হয়? হযরত হামযা (রা) জিজ্ঞাসা করলেন কি ব্যাপার? তাঁকে বলা হল যে, ওমর এসেছেন। তিনি বললেন, ওমর এসেছে? দরজা খুলে দাও। যদি ভালোর জন্যে এসে থাকে, তবে ভলোই পাবে। আর যদি খারাপ উদ্দেশ্যে এসে থাকে, তবে তার তলোয়ার দিয়েই আমরা তাকে শেষ করে দেবো।
এদিকে রসুলুল্লাহ সা. ভেতরে ছিলেন, নবীর ওপর ওহি নাযিল হচ্ছিলো। ওহি নাযিল হওয়ার পর হযরত ওমরের কাছে এলেন নবী সা. এবং তার পরিধানের পোশাক এবং তলোয়ারের একাংশ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, ওমর! তুমি কি ততক্ষণ পর্যন্ত বিরত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তোমার ওপরও ওলীদ ইবনে মুগিরার মতো অবমাননাকর শাস্তি নাযিল না করবেন? হে আল্লাহ, ওমর ইবেন খাত্তাবের দ্বারা দ্বীনের শক্তি ও সম্মান দান করো। একথা বলার সাথে সাথে হযরত ওমর রা. ইসলাম গ্রহণ করে নিলেন। ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল। হযরত ওমরের কালেমা পাঠ শোনামাত্র ভেতরে অবস্থিত সাহাবিদের ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির আওয়াজ কাবাঘরে অবস্থিত লোকজনও আওয়ায শুনতে পেলেন।
হযরত ওমরের ব্যপারে প্রিয় নবীর বাণী
১। তিরমিযি ৩৪০৭- (মা তালায়াতিশ শামসু আলা রাজুলিন খাইরিম মিন উমারা (ওমরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন ব্যক্তির উপর সুয উদিত হয়নি)
২।মাজমাউজ জাওয়ায়েদ- ১৪৪৬১ (উমারু সিরাজু আহলিল জান্নাহ) হযরত ওমর জান্নাত বাসিদের জন্য বাতি স্বরুপ
৩।তিরমিযি- ৩৭০২ (ইন্নাল্লাহা জায়ালাল হাক্কা আলা লিছানি ওমারা ওয়া কালবিহি) আল্লাহ তায়ালা ওমরের মুখে ও অন্তরে সত্যকে জারি করেছেন।
৪। আল মুজামুল আওসাত- ৬৭২৭ (মান আবগাদা উমারা ফাকাদ আবগাদানি ওয়ামান আহাব্বা উমারা ফাকাদ আহাব্বানি) যে উমরের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে, যে উমরকে ভালবাসে সে আমাকে ভালবাসে।
হযরত ওমর (রাঃ) সম্পর্কে আরো কিছু অজানা তথ্য
এক. হযরত ওমর (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবের গুটিকয়েক শিক্ষিত লোকদের মধ্যে অন্যতম। সমগ্র আরবে স্বল্প যে কয়জন লোক অক্ষরজ্ঞানের অধিকারী ছিল, হযরত ওমর (রা.) ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।
দুই. যৌবনে হযরত ওমর (রা.) কুস্তিগীর, মল্লযোদ্ধা এবং বক্তা হিসেবে খ্যাত ছিলেন।
তিন. হযরত ওমর (রা.) এর উৎসাহেই রাসূল (সা.) কাবার চত্ত্বরে মুসলমানদের নিয়ে জাময়াতে নামায আদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং এর মাধ্যমে মুসলমানরা প্রথমবারের মত মক্কায় প্রকাশ্যে নামায আদায় করে।
চার. উমরের হিজরাত এ অন্যান্যদের হিজরাতের মধ্যে একটা বিশেষ পার্থক্য ছিল। অন্যদের হিজরাত ছিল চুপে চুপে। সকলের অগোচরে। আর উমরের হিজরাত ছিল প্রকাশ্য। তার মধ্যে ছিল কুরাইশদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ও বিদ্রোহের সুর। মক্কা থেকে মদিনায় যাত্রার পুর্বে তিনি প্রথমে কা’বা তাওয়াফ করলেন। তারপর কুরাইশদের আড্ডায় গিয়ে তিনি ঘোষনা করলেন, আমি মদিনা চলছি। কেউঋ যদি তার মাকে পুত্র শোক দিতে চায় সে যেন এ উপত্যকার অপর প্রান্তে আমার মুখোমুখি হয়। এমন একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি মদীনার পথ ধরলেন।কিন্ত কেউ এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণের দুঃসাহস করল না।
পাঁচ. নামাযের জন্য আযান দেওয়ার ব্যবস্থা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) এবং হযরত ওমর (রা.) এর স্বপ্নের ভিত্তিতেই গ্রহণ করা হয়।
ছয়. হযরত আবু বকর (রা.) হযরত ওমর (রা.) এর পরামর্শেই প্রথম কুরআন সংকলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এই লক্ষ্যে হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) এর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন।
সাত. মুসলিম খিলাফতের সচিবালয়, বাইতুল মাল (কোষাগার), সেনানিবাস, প্রাদেশিক শাসন ও বিচারব্যবস্থা ওমর (রা.) প্রথম প্রবর্তন করেন। এছাড়া মুসলিম মুদ্রা ব্যবস্থা এবং হিজরী ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন তার হাত ধরেই সম্পন্ন হয়।
আট. তাবুক অভিযানের সময় রাসুল (সা) এর আবেদনে সাড়া দিয়ে হযরত উমর (রা) তাঁর মোট সম্পদের অর্ধেক রাসুল (সা) এর হাতে তুলে দেন।
নয়. রাসুল (সা) এর ইন্তিকালের খবর শুনে হযরত উমর কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকেন। তারপর মসজিদে নববীর সামনে গিয়ে তরবারী কষমুক্ত করে ঘোষনা দেন, যে বলবে আল্লাহর রাসুল ইন্তেকাল করেছেন, আমি তার মাথা দ্বিখন্ডিত করে ফেলবো। এ ঘটনা থেকে রাসুল (সা) এর এর প্রতি উমরের ভক্তি ও ভালবাসার পরিমাণ সহজেই অনুমান করা যায়।
দশ. হুদাইবিয়ার সন্ধির শর্তগুলো বাহ্য দৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য অপমানজনক মনে হলো। উমর উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। প্রথমে আবু বকর পরে রাসুল (সা) এর নিকট এ সন্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন। রাসুল (সা) বললেনঃ আমি আল্লাহর রাসুল । আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিত কোন কাজ আমি করিনে। উমর শান্ত ও অনুতপ্ত হলেন। নফল রোযা রেখে, নামাজ পড়ে, গোলাম আযাদ করে এবং দান খয়রাত করে এ গোস্তাখীর কাফ্ফারা আদায় করলেন।
হযরত ওমর (রাঃ) এর জামানায় মহামারীর ঘটনা
ফিলিস্তিনের আল কুদস ও রামলার মধ্যভাগে অবস্থিত একটি অঞ্চল হলো আমওয়াস বা ইমওয়াস। সেখানে প্লেগ রোগ প্রথম প্রকাশ পায়। অতঃপর তা শামে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামের ইতিহাসে তা ‘তাউন ইমওয়াস’ নামে পরিচিত। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল ইমওয়াস অঞ্চল পুরোপুরি ধ্বংস করে ওই স্থানে কানাডাভিত্তিক ইহুদি তহবিলের অর্থায়নে একটি পার্ক তৈরি করা হয়। বর্তমানে তা ‘কানাডা পার্ক’ নামে সবার কাছে পরিচিত।
১৭ হিজরি ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে ওমর (রা.) দ্বিতীয়বারের মতো শাম পরিদর্শনের জন্য বের হন। ওমর (রা.) শামে পৌঁছার পর শুনতে পান যে সেখানে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। তা ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস থেকে বর্ণিত, উমর বিন খাত্তাব (রা.) শামের উদ্দেশে বের হন। শামে অবস্থিত তাবুক গ্রামের ‘সারগ’ নামক এলাকার কাছে এলে সেনাপতি আবু উবাদাহ ও অন্য নেতাদের সঙ্গে দেখা হয়। ওমর (রা.)-কে তাঁরা অবহিত করল যে শামে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের কথা শুনে ওমর (রা.) আমাকে বলেন, ‘ইসলামের প্রথম পর্যায়ের মুহাজিরদের ডাক দাও।’ তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। কেউ বললেন, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। তা না করে ফিরে যাওয়া আমরা সমীচীন মনে করছি না। অনেকে বলল, আপনার সঙ্গে অনেক মানুষ ও রাসুল (সা.)-এর মহান সাহাবিরা আছেন। এমতাবস্থায় তাঁদের নিয়ে আপনি মহামারি আক্রান্ত এলাকায় যাবেন না।
সবার কথা শুনে ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা চলে যাও।’ অতঃপর ওমর (রা.) আমাকে বললেন, ‘আনসারদের আমার কাছে ডেকে আনো।’ তাঁদের ডেকে পরামর্শ করলেন। তাঁরাও মুহাজিরদের মতো মতবিরোধ করল। তিনি বলেন, ‘তোমরা চলে যাও।’ অতঃপর আমাকে বলেন, ‘এখানে কুরাইশ বংশের প্রবীণ মুহাজির সাহাবিদের ডাক দাও।’ আমি তাদের ডেকে আনি। তাঁদের মধ্যে দুজনও মতবিরোধ করল না। সবাই অভিন্ন কথা ব্যক্ত করে বলল, আমরা মনে করছি, আপনি সব মানুষকে নিয়ে ফিরে যাবেন। মানুষকে এই মহামারিতে নেবেন না।’
অতঃপর ওমর (রা.) সবাইকে সামনে নিয়ে ঘোষণা দিলেন, ‘আমি চলে যাব। তোমরাও চলে যাও।’ [তখন শামের গভর্নর ছিলেন আবু উবাদায় বিন জাররাহ (রা.)] এ কথা শুনে আবু উবাদাহ (রা.) বললেন, ‘আপনি আল্লাহর তাকদির থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন?’ ওমর (রা.) বলেন, ‘আহ, হে আবু উবাদাহ, এমন কথা তুমি ছাড়া অন্য কেউ বলত!’ মূলত ওমর (রা.) তাঁর মতভিন্নতাকে অপছন্দ করেছেন।
ওমর (রা.) আবু উবায়দার প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর এক তাকদির থেকে অন্য তাকদিরের দিকে পালিয়ে যাচ্ছি। যেমন মনে করো, তোমার অনেক উট আছে। তা নিয়ে তুমি এক উপত্যকায় এসেছ। উপত্যকার দুটি প্রান্ত আছে। এক প্রান্ত উর্বর। আরেক প্রান্ত শুষ্ক। তুমি উর্বর প্রান্তে উট চরালে কি আল্লাহর তাকদিরের ওপর নির্ভর করবে না? এবং শুষ্ক প্রান্তে চরালেও কি আল্লাহর তাকদিরের ওপর নির্ভর করবে না?’
কিছুক্ষণ পর আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) এলেন। কোনো এক প্রয়োজনে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, এ বিষয় সম্পর্কে আমার জ্ঞান আছে। আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে শুনেছি, ‘তোমরা কোনো অঞ্চলে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা শুনলে তাতে প্রবেশ করবে না। তবে সেখানে থাকাবস্থায় প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়লে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।’ এ কথা শুনে ওমর (রা.) আলহামদুলিল্লাহ বললেন। অতঃপর সবাই ফিরে গেলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭২৯)
ওমর (রা.) মহামারি চরম আকার ধারণের খবর অবগত হন। ওমর (রা.) চাইলেন সেনাপতি আবু উবায়দা (রা.)-কে ফিরিয়ে আনতে। তাই ওমর (রা.) একটি চিঠি লিখলেন, ‘তোমার ওপর শান্তি বর্ষণ হোক। তোমার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ সম্পর্কে সরাসরি তোমাকে বলতে চাই। তাই তোমাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলছি, আমার পত্র পড়ে আমার উদ্দেশে বের হওয়ার আগে পত্রটি তোমার হাতছাড়া করবে না। রাতে পত্র পৌঁছলে সকাল হওয়ার আগেই যাত্রা শুরু করবে। আর দিনের বেলায় পৌঁছলে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যাত্রা শুরু করবে।’ আবু উবায়দা (রা.) পত্র পড়ে উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমিরুল মুমিনিনকে ক্ষমা করুন।’ অতঃপর ওমর (রা.)-এর উদ্দেশে একটি পত্র লিখলেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন, আমি আপনার প্রয়োজনের বিষয় বুঝেছি। আমি এখন মুসলিম সেনাবাহিনীতে অবস্থান করছি। তাদের ছেড়ে যেতে চাই না। আল্লাহ তাআলা আমিসহ সবার ব্যাপারে ফায়সালা করবেন। অতএব হে আমিরুল মুমিনিন, আপনার সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে মুক্ত করুন। আমার সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে আমাকে ছেড়ে দিন।’
আবু উবায়দা (রা.)-এর পত্র পড়ে ওমর (রা.) কাঁদতে থাকেন। আশপাশের মুসলিমরা ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আমিরুল মুমিনিন, আবু উবায়দা কি শহীদ হয়েছেন? ওমর (রা.) বলেন, ‘না, তিনি এখনো শহীদ হননি। কিন্তু ...।’ অর্থাৎ শিগগির তিনি শহীদ হবেন।’ এর পরই আবু উবায়দা (রা.) প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৭/৪৪)
হযরত ওমর (রা.)-কে ৪টি ঐতিহাসিক প্রশ্ন করেছিলেন ইহুদি ধর্মজাযকরা
ইসলামী খেলাফতের তখন স্বর্ণযুগ চলছে। ফারুকে আজম, আমীরুল মুমিনিন হযরত ওমর (রা.) ছিলেন খলীফা। তৎকালীন পরাশক্তি পারস্য ও রোমসহ প্রায় অর্ধেক পৃথিবী মুসলমানদের পদানত।
ইসলামের এই বিজয়কে থামাতে একের পর এক কূটকৌশল সাজাতে ব্যস্ত ইহুদীরা। তেমনই এক অপকৌশলের অংশ হিসেবে কয়েকজন ইহুদী ধর্মযাজক হজরত ওমর (রা.) এর দরবারে এলেন।
তারা খলীফাকে প্রস্তাব দিল যে, তারা চারটি প্রশ্ন করবে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আসমানী কিতাব থেকে দিতে হবে। সেটা হোক তাওরাত যাবুর বা ইনজিল অথবা কুরআন থেকেই হোক, উত্তর আসমানী কিতাব থেকেই হতে হবে।
বলা বাহুল্য, প্রশ্নগুলোর উত্তর আসমানী কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে। মুসলমানদের কেউ এর উত্তর দিতে পারলে যাজকরা সবাই ইসলাম গ্রহণ করবে। কিন্তু যদি কেউই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে না পারেন তবে যাজকরা ইসলামী খেলাফতের সর্বত্র এই পরাজয়ের কথা ছড়িয়ে দিবে। যার পরিণতিতে ইসলামী খেলাফতের ভাবমর্যাদা চরম সংকটের সম্মুখীন হবে।
আমীরুল মুমিনিন হযরত ওমর (রা.) তাদের শর্তে রাজি হলেন। তারা চারটি প্রশ্ন করলো-
প্রথম প্রশ্ন: দুজন জমজ ভাই। যারা এক সঙ্গে জন্মগ্রহণ করে ও পরবর্তীতে একই সঙ্গে মারা যায়। কিন্তু তাদের উভয়ের বয়সের মধ্যে ১০০ বছরের পার্থক্য। এরা কোন দুই ভাই? এদের মাঝে বয়সের এই পার্থক্য কেনো?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: পৃথিবীর এমন একটি স্থান যেখানে সূর্যের কিরণ মাত্র একবারই পড়েছিল। এর আগে কখনো সেখানে সূর্যের আলো পড়েনি, ভবিষ্যতে পড়বেও না। কোন জায়গা এটি?
তৃতীয় প্রশ্ন: একটি কবর, তার ভেতরে একটি লাশ। কিন্তু কথা হলো, এই কবরেরও প্রাণ আছে, তার ভেতরকার লাশটিরও প্রাণ আছে। ওই কবরটি লাশকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। একসময় লাশটি কবর থেকে বের হয়ে আসে। এটি কোন কবর ও কোন লাশ?
চতুর্থ প্রশ্ন: একটি কারাগারের ভেতর একজন বন্দী। বন্দীটি সেখানে কোনো প্রকার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারলেও দিব্যি বেঁচে থাকে। এটি কোন কারাগার? বন্দীটিইবা কে?
আমীরুল মুমিনিন ওমর ফারূক (রা.) এই বিচিত্র প্রশ্ন গুলো শুনে প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদকে ডেকে পাঠালেন। তিনি ছিলেন আসমানী কিতাবসমূহের গবেষক ও বিশারদ, বিজ্ঞ ফকীহ এবং মুফাসসিরে কুরআন। হজরত ইবনে মাসঊদ খলীফার কাছ থেকে প্রশ্নগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। শুনে বললেন, আমীরুল মুমিনিন!
আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। তারা এখনই তাদের উত্তর পেয়ে যাবে। অতঃপর তিনি উত্তর দিতে শুরু করলেন-
প্রথম প্রশ্নের উত্তর: এই দু ভাই হলেন ইহুদীদেরই নবী হজরত উযাইর (আ.) ও উনার ভাই। তারা দুজন একই সঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। একদিন উযাইর আ. এক জনমানবহীন প্রান্তর অতিক্রম করছিলেন। প্রাণশুন্য খাঁ খাঁ ময়দান দেখে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! এরকম স্থানও কী কখনো আবাদ হতে পারে? একথা বলার কিছুক্ষণ পর তিনি এক গাছের তলায় ঘুমিয়ে গেলেন।
আল্লাহ পাক স্বীয় কুদরত দেখানোর জন্য নবীকেই বেছে নিলেন, তিনি নবী উযাইরের প্রাণ নিয়ে নিলেন। ১০০ বছর নবী উযাইর আ. প্রাণহীনভাবেই ঘুমিয়ে রইলেন। তাই উনার বয়স আর বাড়ল না। তারপর ঘুম থেকে উঠে নবী দেখলেন সেই প্রান্তর জনমানুষের কোলাহলে ভরপুর। সেখানে আবাদ হয়ে গেছে, পরবর্তীতে নবী উযাইর ও উনার ভাই একই দিনে মারা যান।
উল্লেখ্য, সেই জায়গাটি ছিল বায়তুল মুকাদ্দাসের এলাকা তথা জেরুজালেম।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর: সেই স্থানটি হলো নীলনদের ওপর ভেসে ওঠা রাস্তা। বনি ইসরাঈলদের নিয়ে নীলনদ পার হবার সময় যখন হযরত মূসা (আ.) পানিতে তাঁর লাঠি দ্বারা আঘাত করেছিলেন তখন আল্লাহ পাকের কুদরতে পানির ওপর ১২টি রাস্তা ভেসে উঠেছিল। পরবর্তীতে ফেরাউন ও তার দলবল নীলনদ পার হতে গেলে রাস্তাটি ডুবে যায়। এই রাস্তাটিতেই মাত্র একবার সূর্য্যের কিরণ পতিত হয়েছিল। ওই রাস্তাটি আর কখনো ভাসবেও না, আলোও কখনো পড়বে না।
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর: সেই কবর হলো হযরত ইউনুস (আ.) কে গিলে ফেলা মাছটি। আর লাশ হলেন হযরত ইউনুস (আ.)। মাছটিও জীবিত ছিল, নবীও জীবিত ছিলেন। পরে হযরত ইউনুস (আ.) সেখান থেকে পরিত্রাণ লাভ করেন।
চতুর্থ প্রশ্নের উত্তর: সেই বন্দীটি হচ্ছে মায়ের গর্ভে থাকা বাচ্চা। মায়ের গর্ভে থাকা শিশুটি কোনো প্রকার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারলেও আল্লাহ তায়ালার অসীম দয়ায় সুস্থভাবে বেঁচে থাকে।
আমীরুল মুমিনিন হযরত ওমর (রা.) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের উত্তর শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। তার জ্ঞানের গভীরতার প্রশংসা করলেন। আর ইসলামী খেলাফতের মানমর্যাদা ধুলায় মিশিয়ে দেবার আকাংখায় আসা পাদ্রীরা এই উত্তর শুনে চমকে গেল। লজ্জায় তাদের মাথা নত হয়ে এলো।
কুরআনিক জ্ঞানের অসীমতায় অভিভূত হয়ে তারা সবাই হযরত ওমর (রা.) এর হাতে ইসলাম কবুল করলেন।
হিজরী সনের প্রচলন
দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফত কাল ছিলো ইসলামের বিজয় ও সম্প্রসারণের স্বর্ণযুগ। আরবের সীমা পেরিয়ে রোম ও পারস্য পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ব সম্প্রসারণের ফলে নতুন এলাকার কর্মচারী-কর্মকর্তা নিয়োগ করে সদর দফতর হতে বিভিন্ন নির্দেশ সম্বলিত চিঠি ইস্যু করা হতো। কর্মকর্তাগণও প্রয়োজনবোধে খলীফার কাছে দিক নির্দেশনার জন্য চিঠি পাঠাতেন। কিন্তু তাতে সুনির্দিষ্ট সন তারিখ না থাকায় বিপাকে পড়তে হতো। হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.) একদা এ বলে খলীফা উমর (রা.)-এর দরবারে নিবেদন করলেন “আমীরুল মুমিনীন! আপনার পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা। আমরা পেয়ে থাকি, তাতে সন তারিখ না থাকায় কোন সময়ের লিখা তা বুঝা যায় না। ফলে নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। অতএব, সন তারিখ নির্ধারণ করা দরকার।” এরপর হযরত উমর (রা.) হিজরীসন প্রবর্তন করেন।
একইভাবে একদিন স্বয়ং খলীফা হযরত উমর (রা.) কোনো এক মোকদ্দমা সম্পর্কীয় চিঠিতে শুধু শাবান মাস লিখা থাকায় ঘটনার সময় নিরূপন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। দিন দিন রাষ্ট্র ব্যবস্থার ক্রমোন্নতিতে এ সমস্যাটা আরো তীব্রতর হয়ে উঠলো। মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট একটা সন তারিখ নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৭ হিজরীতে হযরত উমর (রা.) বিশিষ্ট সাহাবীদের নিয়ে এ বিষয়ে এক পরামর্শ সভার আয়োজন করেন। কতিপয় সাহাবী রোম ও পারস্যের ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর অনুসরণীয় সালকে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলে, অধিকাংশ সাহাবীই এ মত পছন্দ করেননি। তৎকালীন বহুল প্রচলিত যাবতীয় সাল গণনার পদ্ধতি বর্জনে সাহাবীদের মাঝে কোন ধরনের গোঁড়ামী ছিলো না, বরং ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় যে, অন্যান্য প্রয়োজনে বিজাতীয় অনেক মতামতকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হতো তখনকার দিনে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হযরত উমর (রা.) ও সাহাবীগণ অনুভব করছিলেন যে, সাল গণনা প্রত্যেক জাতির জাতীয় অস্তিত্বের একটি মৌলিক ভিত্তি। নিজস্ব সন তারিখ একটি জাতির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। জাতির উত্থান-পতন, জন্ম-মৃত্যু, জয়-পরাজয়, উন্নতি-অগ্রগতির সমুজ্জ্বল ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এ সাল।
বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত উল্লেখিত প্রথাসমূহ প্রত্যাখ্যান করে সাহাবীগণ একটা অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন। আর তা হচ্ছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরতকে কেন্দ্র করে হিজরিসাল গণনা শুরু করা।
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) যেহেতু দ্বীনে ইসলামের অনুসারীদের তথা মুসলমানদের আদর্শের প্রতীক। তাই সর্বস্তরের মুসলমানদের এ হিজরী সালের প্রতি গুরুত্বারোপ করা উচিত।
হযরত ওমর (রাঃ) এর ন্যায় বিচার
১।উমর (রা) মনিব ও চাকরকে একসাথে খাওয়ালেন:
মক্কা শরীফের একটি ঘটনা। উমর (রা) তখন মক্কায়। তিনি পথ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখ গেল পাশেরই এক বাড়ীতে। বাড়ীর মালিকরা বসে খাচ্ছে আর চাকর-বাকররা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ক্রুদ্ধ হলেন উমর (রা)। তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং গিয়ে উঠলেন সেই বাড়ীতে।
বললেন, “ব্যাপার কি! নিজেদের চাকর-বাকরদের সাথে এই বৈষম্যমূলক ব্যবহার করছ কেন?” বাড়ীর মালিকরা লজ্জিত ও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।
চাকর-বাকরদের সাথে এই ব্যবহার জাহেলিয়াতের যুগে চলে আসা বহু বছরের অভ্যাস।
এই অভ্যেস এখনও নির্মূল হয়নি!
উমর (রা) চাকর-বাকরদেরকে ডেকে মনিবদের সাথে খানয় বসিয়ে দিলেন।
তারপর আবার ফিরে চললেন আপন গন্তব্য।
২। হযরত ওমরের(রা) শাসনে প্রজাদের সম অধিকারঃ
মিশর বিজয়ী সেনাপতি আমর ইবনুল আস তখন মিশরের গভর্নর। তাঁর শাসনে মিশরের জনগণ বেশ শান্তিতেই কাটাচ্ছিল। কিন্তু তাঁর একটা বেয়াড়া ছেলে তাঁর ন্যায়পরায়নার সুনাম প্রায় নষ্ট করতে উদ্যত হয়েছিল।
সে যখনই পথে বেরুত, সবাইকে নিজের চালচলন দ্বারা বুঝিয়ে দিত যে, সে কোনো সাধারণ মানুষ নয়, বরং গভর্নরের ছেলে।
একদিন সে জনৈক মিশরীয় খৃস্টানের ছেলেকে প্রহার করলো। দরিদ্র মিশরীয় গভর্নরের কাছে তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পেল না। তাই নীরবে হজম করলো।
কয়েকদিন পর তার জনৈক প্রতিবেশি মদীনা হতে ফিরে এসে জানালো যে, খলিফা ওমর অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ শাসক। তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করেন এবং কেউ কারো ওপর যুলুম করেছে জানলে কঠোর শাস্তি দেন।
এ কথা শুনে ঐ মিশরীয় খৃস্টান একটি উটের পিঠে চড়ে দীর্ঘ সতেরো দিন চলার পর মদীনায় খলিফার কাছে পৌছলো এবং গভর্নরের ছেলের বিপক্ষে মোকদ্দমা দায়ের করলো। হযরত ওমর তৎক্ষণাত হযরত আমর ইবনুল আস এবং তার ছেলেকে মদীনায় ডেকে আনলেন। অতঃপর বিচার বসলো।
সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা হযরত আমর ইবনুল আসের(রা) ছেলে দোষী প্রমাণিত হলো।
খলিফা ওমর(রা) অভিযোগকারীর ছেলেকে দেখিয়ে বললেন, সে তোমাকে যেভাবে যে কয়বার প্রহার করেছে তুমিও সেই কয়বার তদ্রুপ প্রহার কর। ছেলেটি যথাযথভাবে প্রতিশোধ নিল।
তারপর খলিফা বললেন, “প্রজারা শাসকের দাস নয়। শাসকরা প্রজাদের সেবক।
প্রজারা ঠিক তেমনি স্বাধীন যেমন তাদের মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হবার সময় স্বাধীন।
৩. হযরত ওমর(রা) ও গভর্নর হরমুযানঃ
পারস্যের নাহাওয়ান্দ্র প্রদেশের গভর্নর হরমুযান ইসলামের এক কট্টর দুশমন ছিল। সে মুসলমানদের সাথে পারস্যের যুদ্ধ বাধানোর প্রধান হোতা ছিল। সে নিজেও খুবই শৌর্য বীর্যের সাথে যুদ্ধ করেছিল। অবশেষে হরমুযান মুসলমানদের হাতে ধরা পড়ে ও কারাবন্দী হয়। কারাবন্দী হবার পর সে ভেবেছিল এবার আর তার রেহাই নেই। মুসলমানরা হয় তাকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিবে নচেৎ মৃত্যুদন্ড দিবে। কারণ তার অতীত কার্যকলাপ দ্বারা সে মুসলমানদের সাথে নিজের সম্পর্ক খুবই খারাপ করে ফেলেছিল। কিন্তু তাকে এই দুই শাস্তির কোনোটাই দেওয়া হলো না। তাকে কিছু করের বিনিময়ে মুক্তি দেয়া হলো। হরমুযান নিজের রাজধানীতে ফিরে এল, তৎক্ষণাত আরো দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে বিদ্রোহী তৎপরতা শুরু করলো এবং এক বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে ফিরে এলো। এবারও হরমুযান ধরা পড়ে বন্দী হলো। হরমুযানকে পাকড়াও করে যখন হযরত ওমরের(রা) কাছে নিয়ে আসা হলো তখন হযরত ওমর তাঁর উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন। বন্দী এবার তার মৃত্যুদন্ড সম্পর্কে প্রায় নিশ্চিত ছিল। প্রতি মুহুর্তে সে তাই মৃত্যুর আশংকা করেছিল।
সহসা হযরত ওমর জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমিই নাহাওয়ান্দ্রের বিদ্রোহী গভর্নর?
হরমুযানঃ জ্বি, আমিই।
হযরত ওমরঃ তুমি কি সেই ব্যক্তি যে বার বার মুসলমানদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে?
হরমুযানঃ জ্বী, আমিই।
হযরত ওমরঃ এ ধরনের শাস্তি যে মৃত্যুদন্ড তা তুমি জান?
হরমুযানঃ জ্বী, জানি।
হযরত ওমরঃ বেশ, তাহলে তুমি এই শাস্তি এখনি নিতে প্রস্তুত?
হরমুযানঃ আমি প্রস্তুত। তবে মৃত্যুর পূর্বে আপনার নিকট আমার্ একটিমাত্র আবেদন আছে।
হযরত ওমরঃ সেটি কী?
হরমুযানঃ আমি খুব পিপাসা বোধ করছি। আমি এক গ্লাস পানি চাইতে পারি?
হযরত ওমরঃ অবশ্যই।
এই সময় হযরত ওমরের নির্দেশে তাকে এক গ্লাস পানি দেয়া হলো।
হরমুযানঃ আমিরুল মু’মিনীন, আমি আশংকা করছি যে, আমি পানি খাওয়ার সময়েই আমার মস্তক ছিন্ন করা হতে পারে।
হযরত ওমরঃ কখনো নয়। তোমার এই পানি খাওয়া শেষ হবার আগে কেউ তোমার চুলও স্পর্শ করবে না।
হরমুযানঃ (একটু থেমে) আমিরুল মু’মিনীন, আপনি আমাকে কথা দিয়েছেন যে আমি এই পানি খাওয়া শেষ না করা পর্যন্ত আপনারা আমার চুলও স্পর্শ করবেন না। আমি পানি পান করবো না। (এই বলেই সে পানি ঢেলে ফেলে দিল)। এখন আপনি আমাকে হত্যা করতে পারেন না।
হযরত ওমরঃ (মুচকি হেসে) ওহে গভর্নর, এটা তোমার চালাকী। যাহোক, ওমর যখন কথা দিয়েছে, তখন সে তার কথা রাখবেই। যাও, তুমি মুক্ত।
এর কিছুকাল পরে একদিন হরমুযান একদল সঙ্গী পরিবেষ্টিত হয়ে আবার মদীনায় এল এবং হযরত ওমরের সাথে সাক্ষাত করলো। সে বললো, “আমিরুল মু’মিনীন, এবার আমি নতুন জীবনের সন্ধানে এসেছি। আমাদের সবাইকে ইসলামে দীক্ষিত করুন।”
৪. হযরত ওমরের(রা) ন্যায় বিচারের একটি উদাহরণঃ
একবার কিছু সুগন্ধী দ্রব্য বাহরাইন থেকে হযরত ওমরের নিকট পাঠানো হলো।
তিনি সমবেত জনতাকে লক্ষ্য করে বললেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এই সুগন্ধী দ্রব্যটিকে মেপে সমান ভাগ করে মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করতে পারে?”
তাঁর স্ত্রী হযরত আতেকা বললেন, “আমিরুল মু’মিনীন, আমি পারবো।”
হযরত ওমর বললেন, “আতেকা ছাড়া আর কেউ আছে কি?”
হযরত আতেকা বললেন, “আমিরুল মু’মিনীন, আমি মেপে দিলে অসুবিধা কী?”
হযরত ওমর বললেন, “আমার আশংকা হয় যে, মাপার সময় তুমি জিনিসটা হাত দিয়ে ধরবে এবং তোমার হাত সুবাসিত হয়ে যাবে। অতঃপর সেই সুবাসিত হাত তুমি মুখে মেখে নেবে এবং সুগন্ধী উপভোগ করবে। অন্যদের চাইতে এতটুকু বাড়তি সুবিধা তুমি পেয়ে যাও, তা আমি পছন্দ করি না।”
৫. রাখাল ছেলের খোদাভীতি
একবার হযরত ওমর গভীর রাতে ছদ্মবেশে মদীনার পথ ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন এবং প্রজাদের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। এই সময়ে দেখতে পেলেন এক রাখাল এক পাল ছাগল নিয়ে তার সামনে দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি রাখালকে পরীক্ষা করার মানসে বললেনঃ “এই ছাগলগুলির মধ্যে যে কোন একটি ছাগল আমার কাছে বিক্রী করে দাও।”
রাখাল বললো, “এই ছাগলগুলো আমার নয়, আমার মনিবের। আমি তার ক্রীতদাস।”
ওমর বললেন, “আমরা যে জায়গায় আছি, এখানে তোমার মনিব আমাদেরকে দেখতে পাবে না। একটা ছাগল বেঁচে দাও। আর মনিবকে বলে দিও যে, একটি ছাগল বাঘে খেয়ে ফেলেছে।”
রাখাল রাগান্বিত হয়ে চিৎকার করে বলে উঠলোঃ “আল্লাহ কি দেখতে পাচ্ছেন না?”
ওমর চুপ করে রইলেন। রাখাল তার দিকে রাগত চোখে তাকিয়ে গরগর করতে করতে ছাগল হাঁকিয়ে নিয়ে চলে গেল।
পরদিন সকালে ওমর ঐ রাখালের মনিবের কাছে গেলেন এবং তাকে মনিবের কাছ হতে কিনে নিয়ে স্বাধীন করে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ “ওহে যুবক! কালকে তুমি আল্লাহর সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলে, তা আজ তোমার দুনিয়ার গোলামী চুকিয়ে দিল।
আমি আশা করি তোমার এই খোদাভীতি তোমাকে কেয়ামতের দিন দোজখের আজাব থেকেও মুক্তি দিবে।
৬. হযরত ওমর (রা) ও কাযী শুরাইহের ন্যায়বিচার:
একবার হযরত ওমর (রা) জনৈক বেদুইনের কাছ থেকে একটি ঘোড়া কিনলেন। ঘোড়ার দাম পরিশোধ করেই তিনি ঘোড়ায় চড়লেন এবং তাকে হাঁকিয়ে নিয়ে গেলেন। কিছুদূর যেতেই ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে খোঁড়া হয়ে গেল।
তিনি তৎক্ষণাৎ ঘোড়াকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে ঐ বেদুইনের কাছে নিয়ে গেলেন। হযরত ওমর ভেবেছিলেন ঘোড়াটির আগে থেকেই পায়ে কোনো খুঁত ছিল, যা সামান্য ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে গেছে। তিনি ঘোড়ার মালিককে বললেন, “তোমার ঘোড়া ফেরত নাও। এর পা ভাঙ্গা।”
সে বললোঃ “আমিরুল মু’মিনীন! আমি ফেরত নিতে পারবো না। কারণ আমি যখন বিক্রী করেছি, তখন ঘোড়াটি ভাল ছিল।”
হযরত ওমর বললেনঃ “ঠিক আছে। একজন সালিশ মানা হোক। সে আমাদের বিরোধ মিটিয়ে দিবে।”
লোকটি বললোঃ শুরাইহ বিন হারিস কান্দী নামে একজন ভালো জ্ঞানী লোককে আমি চিনি। তাকেই শালিশ মানা হোক। হযরত ওমর রাজী হলেন। উভয়ে শুরাইহের খলিফাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আমিরুল মু’মিনীন! আপনি কি ঘোড়াটি সুস্থ অবস্থায় কিনেছিলেন?”
হযরত ওমর বললেন, হ্যাঁ।
শুরাইহ বললেন, তাহলে হয় আপনি ঘোড়াটি মূল্য দিয়ে কিনে নিন। নচেত যে অবস্থায় কিনেছিলেন সে অবস্থায় ফেরত দিন।
এ কথা শুনে খলিফা ওমর(রা) চমৎকৃত হয়ে বললেনঃ “এটাই সঠিক বিচার বটে। তুমি সম্পূর্ণ নির্ভূল মত ও ন্যায্য রায় দিয়েছ। তুমি কুফা চলে যাও। আজ থেকে তুমি কুফার বিচারপতি।”
সেই থেকে দীর্ঘ ষাট বছর যাবত পর্যন্ত তিনি মুসলিম জাহানের বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। যতদূর জানা যায়, হযরত আলীর সময়ে তিনি খলিফার বিরুদ্ধে অনুরূপ আর একটি রায় দিয়ে প্রধান বিচারপতির পদে উন্নীত হন।
তারপর উমাইয়া শাসনকালে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের অবর্ণনীয় অত্যাচারে বিরক্ত হয়ে তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কোনো শাসকই তাকে পদচ্যূত করার সাহস পান নি।
৭.জাবালার ঔদ্ধত্য ও হযরত ওমর (রা)
একবার হযরত ওমর(রা) হজ্জ করতে মক্কায় এলেন।
তিনি কা’বার চারপাশে তওয়াফ করছিলেন। তাঁর সাথে সাথে একই কাতারে তওয়াফ করছিলেন সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী প্রতিবেশী এক রাজা জাবালা ইবনে আইহাম। জাবালা কা’বার চারপাশ প্রদক্ষিণ করার সময় সহসা আর এক তওয়াফকারী জনৈক দরিদ্র আরব বেদুইনের পায়ের তলায় চাপা পড়ে জাবালার বহু মূল্যবান ইহরামের চাদরের এক কোণা। চাদরটি রাজার কাঁধের ওপর থেকে টান লেগে নীচে পড়ে যায়।
ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন জাবালা। লোকটির কোনো ওজর আপত্তি না শুনে জাবালা তার গালে প্রবল জোরে একটি চড় বসিয়ে দেন।
লোকটি তৎক্ষণাত খলীফার নিকট গিয়ে নালিশ করে এবং এই অন্যায়ের বিচার চায়।
খলিফা জাবালাকে তৎক্ষণাত ডেকে পাঠান এবং জিজ্ঞাসা করেন যে, অভিযোগ সত্যি কি না।
জাবালা উদ্ধত স্বরে জবাব দেন, “সম্পূর্ণ সত্য। এই পাজিটা আমার চাদর পদদলিত করে আল্লাহর ঘরের সামনে আমাকে প্রায় উলংগ করে দিয়েছে।”
খলিফা দৃঢ়তার সাথে জবাব দেন, “কিন্তু এটা ছিল একটা দুর্ঘটনা।” জাবালা স্পর্ধিত কন্ঠে বললেন, “আমি তার পরোয়া করি নে। কা’বা শরীফের সম্মানের খাতিরে ও কা’বার চত্ত্বরে রক্তপাত নিষিদ্ধ থাকার কারণে আমি যথেষ্ট ক্রোধ সংবরণ করেছি।
নচেত ওকে আমি চপেটাঘাত নয় হত্যাই করতাম।”
জাবালা হযরত ওমরের একজন শক্তিশালী মিত্র ও ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন।
খলিফা তাই একটু থামলেন এবং কিছু চিন্তাভাবনা করলেন।
অতঃপর শান্ত অথচ দৃঢ় কন্ঠে বললেন, “জাবালা, তুমি নিজের অপরাধ স্বীকার করেছ। এখন বাদী ক্ষমা না করলে তোমাকে ইসলামী আইনের শাস্তি মাথা পেতে নিতে হবে এবং বাদীর হাতে পাল্টা একটি চপেটাঘাত খেতে হবে।”
স্তম্ভিত হয়ে জাবালা বললেন, “আমি একজন যোদ্ধা। আর ও হচ্ছে একজন সাধারণ কৃষক।”
হযরত ওমর(রা) বললেন, “তোমরা উভয়ে মুসলমান এবং আইনের চোখে সবাই সমান।”
জাবালা বললো, “যে ধর্মে রাজা ও একজন সাধারণ প্রজাকে সমান চোখে দেখা হয়, আমি তার আনুগত্য করতে পারি নে। ঐ চাষা যদি আমাকে চপেটাঘাত করে তবে আমি ইসলাম ত্যাগ করবো।”(নাউযুবিল্লাহ)।
হযরত ওমর ততোধিক কঠোর স্বরে জবাব দিলেন, “তোমার মত হাজার জাবালাও যদি ইসলাম ত্যাগ করে চলে যায়, তবে সেই ভয়ে ইসলামের একটি ক্ষুদ্রতম বিধিও লংঘিত হতে পারে না।
তোমাকে এ শাস্তি পেতেই হবে। আর একথাও জেনে রাখ, ইসলাম কাউকে জোরপূর্বক মুসলমান বানায় না। তোমাকেও বানায় নি। কিন্তু ইসলাম ত্যাগ করা সহজ নয়। মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।”
হযরত ওমরের শেষোক্ত কথাটা শুনে জাবালা রাগে ও ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো।
হযরত ওমরের নির্দেশে বাদী তৎক্ষণাত সজোরে জাবালার মুখে ঠাস করে একটি চড় বসিয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে নিল।
জাবালা ক্রোধে চক্ষু লাল করে বাদীর দিকে একবার তাকালো।
অতঃপর রাগে গরগর করতে করতে কা’বার চত্ত্বর ত্যাগ করে নীরবে চলে গেল।
জানা যায়, এরপর জাবালা ইবনে আইহাম ইসলাম ত্যাগ করে প্রাণের ভয়ে সোজা রোম সম্রাটের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলি কাটায়।
হযরত ওমর (রাঃ) এর কারামতসমুহ
কারামত-১: ২টি বাঘ: তসফীরে কবীর ৭ম খন্ডে ৪৩৩ পৃ. এক ব্যক্তি হযরত ওমর (রাঃ) কে একাকী পেয়ে হত্যা করতে আক্রমন করতে চাইলে সামনে ২টি বাঘ দেখতে পেয়ে ভয়ে চিৎকার করে উঠল এবং হযরত ওমর জেগে গেলেন আর সে লোক হযরত ওমর (রাঃ) কে সব ঘটনা বললেন এবং ইসলাম কবুল করে নিলেন।
২।কারামত-২ মৃতের সাথে কথা বলা: তারিখে দামেশক লি ইবনে আসাকির ৪৫ তম খন্ডের ৪৫০ পৃষ্ঠায়
উল্লেখ
আছে একদিন হযরত ওমর (রাঃ) এক নেককার যুবকের কবরে গিয়ে ডাক দিয়ে বলেন হে যুবক আল্লাহ কুরানে বলেছেন (ওয়ালিমান খাফা মাকামা রাব্বিহি জান্নাতান) যে ব্যক্তি আপন রবের সামনে দন্ডায়মান হতে ভয় পায় তার জন্য ২টি জান্নাত।
হে যুবক তোমার কি অবস্থা বল? কবর থেকে আওয়াজ আসল ( কাদ আতানিহিমা রাব্বি ফিল জান্নাহ) আমার রব সে দুটি জান্নাতই আমাকে দান করেছেন।
৩। কারামত-৩ নীল নদে চিঠি: আল আযমাতু লি আবি শায়খ আল আছবাহানি ৩১৮ পৃ ৯৪০ নং হাদীস মিশরের নীল নদে কুমারি বলি না দিলে নদীর পানি প্রবাহিত হত না, মিশরের গভনর হযরত আমর বিন আস এই বিষয়টি খলিফা ওমর (রাঃ) কে জানালেন হযরত ওমর (রাঃ) নীল নদকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখলেন সে চিঠি নীল নদে রাখার সাথে সাথে নীল নদ আগের মত প্রবাহিত হতে শুরু হয়ে গেল। কুমারি বলি দেয়ার প্রথা বন্ধ হয়ে গেল।
৪। সারিয়ার ঘটনা-দালালেলুল নবুয়াত
লিল বায়হাকি ৬ষ্ঠ খন্ড ৩৭০ পৃ বর্ণিত ঘটনা- মদিনা থেকে শত শত মাইল দুরে নাহাওয়ান্দ নামক জায়গায় যুদ্ধ পরিোলনা করছিল হযরত সারিয়া এদিকে মসজিদে নববীতে জুমার খুতবা দেয়ার সময় হযরত ওমর (রাঃ) ডাক দেলন (িএয়া সারিয়া আল জাবাল) এই ডাক শুনলেন হযরত সারিয়া এবং তিনি সাথে সাথে পাহাড়ের দিকে পিট করে শত্রুর সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সে যুদ্ধে বিজয়ী হলেন,
এ ঘটনায় বুঝা যায় আল্লাহর দেয়া শক্তিতে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা দুরের জিনিষও দেখতে পান।
যদি হযরত সুলায়মান (আঃ) এর সাহাবী আসেফ বিন বরখিয়া পারে নবীদের সরদার এর সাহাবী কেন পারবেন না?
৫।বুখারী
শরীফের
১৩৯০ নং হাদীস- খলিফা অলিদ বিন আবদুল মালিকের শাসনামলে যখন রওজা ধসে গেল, তখন সেটা সংস্কারের কাজ করা অবস্থায় একটি পা বাহিলে প্রকাশি পেল সকলে ভয় পেয়ে গেল। সকলে বলল এটা রাসুলে পাকের পা কিন্তু হযরত ওরওয়া বিন যুবাইর (রাঃ) বললেন আল্লাহর কসম এটি হযরত ওমরের পা। (এটা এমন পা যেন জীবিত মানুষের পা) সুবহানাল্লাহ!
কোন মন্তব্য নেই