সুসংবাদ! আশার বাণী। মসজিদে নববীর জুমা খুতবা। Masjid nabawi Bangla Khutba...





মসজিদে নববী জুমা খুতবা বাংলা ১৪ আগষ্ট ২০২০

হামদ ও ছানার পর সবচেয়ে উত্তম কিতাব আল্লাহর কিতাব এবং সবচেয়ে শানদার তরিকা মুহাম্মদ (দঃ) এর তরিকা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পাক পবিত্র আর আল্লাহ পাক পবিত্রকে কবুল করেন। সেজন্য হকুম পালন কর, গুনাহ থেকে বাঁচ, সন্দেহ প্রবনতা ছেড়ে দাও, রাগ করা থেকে বাঁচ, সব জায়গায় আল্লাহকে ভয় কর, তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর তাহলে তিনি তোমাদের হেফাজত করবেন, তার কাছে চাও তিনি দান করবেন, আর মনে রাখ সব বিপদ তকদীরের মোতাবেকই এসে থাকে, সে জন্য বলা হয় ধ্যৈর্য্যের সাথে সাহায্য, অভাবের সাথে স্বচ্ছলতা, কঠিনের সাথে সহজতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে শরীয়তের বিরোধী নিজের মন মত কাজ করল সে হায়ার পর্দাকে ছিড়ে ফেলল।

যে আল্লাহকে ভয় করল, পুত পবিত্রতাকে আঁকড়ে ধরল, নামাজ পড়ল, জিকির করল, দান খয়রাত করল, কুরান পাঠ করল, অনুসরন করল, নসিহত গ্রহণ করল, তার ইসলাম মজবুদ, ইমান পরিপূণ, মিজান ভরে গেল, দিল রওশন হয়ে গেল, এবং সে তার রবকে রাজি করে নিল। এসব সে আমল যার হিসাব করে পরিপুর্ণ বদলা দেয়া হবে।

বেহুদা কথা থেকে বেঁচে থাক, মনে রাখবে বেহুদা কথা জাহান্নামের কিনারায় করে দিবে,
হে আল্লাহর বান্দা! একে অপরের সাথে ভাই ভাই হয়ে যাও, খুব বেশী বেশী নেকি কর, আর আল্লাহর ফরমাবরদারি কর, নেকিকে আকড়ে ধরাই হল মুল সম্মান। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাক, আল্লাহ বলেন হে ইবনে আদম যতক্ষন তুমি আশার সাথে দোয়া করবে ততক্ষন আমি তোমাকে ক্ষমা করতে থাকব, তোমার গুনাহ যত বেশীই হউক আমার কোন পরওয়া নাই। হে ইবনে আদম যদি তোমার গুনাহ আসমান পযন্ত ছুয়ে যায় এরপর তুমি যদি গুনাহ মাফ চাও, তবুও আমি তোমাকে ক্ষমা করব। হে বনি আদম যদি তুমি সারা দুনিয়ার বরাবর ভুল করে ফেল আর যদি তুমি মুশরিক না হও তাহলে আমি তোমার সামনে সে সব ভুলের সমপরিমান মাগফেরাত বা ক্ষমা নিয়ে হাজির হব।

আল্লাহ পাক মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন, তাই মানুষ মাত্রই ভুল বা পাপ হতে পারে কিন্তু একজন প্রকৃত আল্লাহর বান্দা সে একই ভুল বার বার করে না। বর্তমান বিশ্বময় মহামারি চলছে। এরপরও আমরা প্রতিনিয়ত নানান পাপ কর্মে লিপ্ত। বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে তাওবা করা।

কেননা আমরা যতই পাপ করি না কেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের পাপ ক্ষমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষামান থাকেন। তিনি চান, তার বান্দারা যেন নিজের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে তাওবা করে এবং ক্ষমা চায়। আর এমনটি করলে আল্লাহ পাক অনেক খুশি হোন কিন্তু একজন প্রকৃত মুমিন কখনও বার বার ভুল করে না।

আমরা যেসব ভুলত্রুটি করি তার জন্য যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তাহলে তিনি ক্ষমা করবেন আর এ বিষয়ে আল্লাহপাক আমাদের শিক্ষাও দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-
'আর তারা কখনও কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোনো মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না। তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।' (সুরা ইমরান : আয়াত ১৩৫-১৩৬)

আল্লাহ তাআলার ইচ্ছে এটাই যে, কিভাবে তার বান্দাকে ক্ষমা করবেন কিন্তু এর জন্য বান্দাকেও ক্ষমা চাইতে হবে, তাওবা করে তার দিকে ফিরে আসতে হবে। হাদিসে এসেছে-
- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কোনো বিপদাপদ, কোনো দুঃখ-বেদনা, কোনো উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, এমনকি কাঁটার সামান্য এক খোঁচা লাগার কষ্টও ভোগ করে না বরং আল্লাহ তাআলা তার এই কষ্টকে তার পাপের প্রায়শ্চিত্তে পরিণত করে দেন।’ (মুসলিম)

অনেকে এমনও আছে যারা একের পর এক পাপকর্ম করতেই থাকে আর আল্লাহর কাছে ক্ষমাও চায় না এবং সে পাপকর্ম নিয়েই ভালোই দিন কাটাচ্ছে। তাকে দেখে অন্যরা ভাবে যে, এই লোক এত পাপ করছে তার পরেও আল্লাহ কেন তাকে শাস্তি দেন না।
আসলে আল্লাহ তাআলা তার কর্ম প্রত্যক্ষ করছেন আর একটা সময় পর্যন্ত তাকে ছাড় দিয়ে রেখেছেন যেন সে তার ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, যদি সে এটি না করে তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তার কৃতকর্মের শাস্তি দেবেন। আল্লাহ বলেন-
'আল্লাহ সম্পর্কে কি সন্দেহ আছে, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের স্রষ্টা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন যাতে তোমাদের কিছু গোনাহ ক্ষমা করেন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তোমাদের সময় দেন। তারা বলতঃ তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ! তোমরা আমাদেরকে ঐ উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চাও, যার ইবাদত আমাদের পিতৃপুরুষগণ করত। অতএব তোমরা কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ আনয়ন কর।' (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ১০)

তাই এটা ভাবা ঠিক নয় যে, আল্লাহ আমাকে কিছুই করবে না। অবশ্যই পাপের শাস্তি আল্লাহ দেবেন, এ থেকে কেউ রক্ষা পাবে না। কাউকে তিনি দ্রুত পাকড়াও করেন আবার কাউকে কিছু দিনের অবকাশ দেন।

আমরা যদি আল্লাহর কাছে আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা চাই এবং তাওবাহ করি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করতে পারেন। আল্লাহ চান যে, তার বান্দারা যেন তার কাছে ক্ষমা চায়।

আমরা যারা নিজেদের কৃতকর্মের কথা স্মরণ করে মর্মপীড়ায় ভুগছি আমাদের জন্যও আশার বাণী হচ্ছে দয়াময় প্রভু আমাদেরকে নিরাশ হতে বারণ করেছেন। তিনি আমাদেরকে সুপথে ফিরে আসার জন্য ক্ষমার সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন-
‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (সুরা যুমার : আয়াত ৫৩)

হতাশা ও নৈরাশ্যকে দূরে সরিয়ে আল্লাহ পাক আশার বাণী শুনিয়েছেন। তাই আমরা যারা বিভিন্ন ধরণের পাপে লিপ্ত, আমরা যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই তাহলে তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন।





আমরা যদি প্রকৃত অর্থে তাওবাহ করি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করবেন। তাই আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পাপ মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.