আদর্শ নারী। আল্লাহর ওয়াস্তে ঘর বাঁচান। স্বামী রাগ ভাঙ্গানোর উপায়। স্ত্রীর অভিমান ভাঙ্গানোর উপায়।
স্বামী রাগ করলে কি করবেন?
আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু
আশা করি মহান রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন যদি আলোচনাটি স্ত্রী বা নারীদের উদ্দেশ্য করে কিন্তু বিষয়গুলি স্বামী স্ত্রী উভয়ের জন্যই খুবই কার্যকরী।
অনেক দিনের সম্পর্ক একটু একটু করে ভেঙে যেতে পারে অবহেলায়। যার প্রধান কারণ 'ইগো' নামক ঘুণ পোকা। এমন পোকার আবির্ভাব ঘটার আগেই সুরক্ষিত থাকুক ভালোবাসার সম্পর্ক। প্রিয়জনের টুকরো টুকরো রাগ থেকে সৃষ্টি হতে পারে 'ইগো' নামক ঘুণ পোকাটি। সেটি যাতে বংশ বিস্তর না করতে পারে সেজন্য আগে 'সরি' বলা শেখা উচিত।
ঝগড়া করার সময় আমাদের নিজেদের বাঁচানোর সবচেয়ে সাধারণ এবং পছন্দের উপায় হল পাল্টা দোষারোপ করে বেড়িয়ে পড়া।
প্রায়ই দেখা যায় ঝগড়া বা মান অভিমানে এক বিষয় থেকে কথা পরিবর্তন হতে হতে অন্য বিষয়ে চলে যায়।ছোট একটা কথা থেকে শুরু হয়েছিল, কিন্তু পুরাতন অনেক কথা যোগ হতে হতে সেটা বিশাল আকার ধারণ করে। তাই কোনভাবেই বিষয়টি বদলাতে দেবেন না। কথা বলার সময় সাবধানে থাকুন, যাতে অপরপক্ষ কোনভাবেই আপনার কথাকে কেন্দ্র করে আরও রেগে না যায়!
১। স্বামী রাগ হলে আর যদি সত্যিকারে স্ত্রীর কোনো অন্যায় নাও থাকে, তবুও সেই মুহূর্তে স্ত্রীর চুপ থাকা উচিত। স্বামীর সাথে তর্ক করা ঠিক নয়। কেননা তর্ক শুরু করলে স্বামীর রাগ আরও বেড়ে যাবে। এবং শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে। যেমন মারধর করতে পারে বা খোদা নাখাস্তা তালাকও দিতে পারে। রাগের মুহূর্তেই এসব ঘটে থাকে। অতএব স্বামীর রাগ না বাড়িয়ে, কমানোর চেষ্টা করা উচিত। স্ত্রীর যদি কোনো অন্যায় না থাকে, আর সে স্বামীর রাগের মুহূর্তেও চুপ থাকে কথা কাটাকাটি না করে, তাহলে পরে যখন স্বামীর রাগ ঠাণ্ডা হবে, তখন সে নিজের রাগের জন্য অনুতপ্ত হবে এবং অন্যায় রাগ হওয়া সত্ত্বেও
স্ত্রীর ধৈর্য্য এবং ভালো ব্যবহারের কারণে স্ত্রীর প্রতি মুগ্ধ হবে। তার অনুগত হয়ে পড়বে। আর
ভবিষ্যতে রাগ করতে গেলেও ভেবে চিন্তে রাগ করবে
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
إِن تُبْدُواْ خَيْرًا أَوْ تُخْفُوهُ أَوْ تَعْفُواْ عَن سُوَءٍ فَإِنَّ اللّهَ كَانَ عَفُوًّا قَدِيرًا
তোমরা যদি কল্যাণ কর প্রকাশ্যভাবে কিংবা গোপনে অথবা যদি তোমরা আপরাধ ক্ষমা করে দাও, তবে জেনো, আল্লাহ নিজেও ক্ষমাকারী, মহাশক্তিশালী। [ সুরা নিসা ৪:১৪৯ ]
নাসায়ী শরীফের এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের ওই সব নারীগণও জান্নাতী। যারা অধিক পরিমাণে সন্তান জন্ম দেয় ও অধিক পরিমাণে ভালোবাসে। স্বামীর রাগান্বিত অবস্থায় বা নিজের রাগের অবস্থায় স্বামীর কাছে এসে স্বামীর হাতে হাত রেখে বলে, আমি নিদ্রার স্বাদ গ্রহণ করছি না, যতক্ষণ না আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হন। এভাবে সে স্বামীকে সন্তুষ্ট করে নেয়।
২। স্বামীর রাগের পেছনে স্ত্রীর অন্যায় থাকুক বা না থাকুক স্ত্রীর উচিত খোশামোদ- তোশামোদ করে হলেও স্বামীর রাগ ভাঙ্গানো।
আপনি যদি এমনটি করেন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে মহান রবের পক্ষ থেকে সুসংবাদ
وَجَزَاء سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ
আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন নাই। [ সুরা শূরা ৪২:৪০ ]
আর স্ত্রীর যদি অন্যায় থাকে তাহলে তো তার জিদ ধরা চরম অন্যায় হবে। বরং সাথে সাথে তার ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত। যদি তার অন্যায় নাও থাকে, তবুও সে জিদ ধরলে হয়তোবা স্বামীকে নতো করা সম্ভব হবে না। স্ত্রীর জন্য আদৌ উচিত নয়, এমন কল্পনা করা যে আমার অন্যায় নেই। সুতরাং তোশামোদ করা অপমান।
বরং এই খোশামোদের ফলে স্বামীকে স্বাভাবিক করতে পারলে পরে স্বামীর স্বাভাবিক হওয়ার পর সে স্ত্রীর প্রতি মুগ্ধ হয়ে যাবে। এভাবেই স্ত্রীর মান বেড়ে যাবে।
এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখনই কোনো স্ত্রীলোক দুনিয়াতে তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখনই জান্নাতের ওই স্বামীর জন্য নির্ধারিত হুর বলতে থাকেন, হে নারী! তুমি তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন! তিনি তো তোমার কাছে (কয়েক দিনের) মেহমান। অচিরেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-১১৭৪)
৩। চুপ থেকে, তর্ক না করে, খোশামোদ করেও যদি স্বামীর রাগ ভাঙ্গানো না যায়, তাহলে নির্জনে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে তার কাছে তার চরিত্রের কথা বলবে এবং নিজের অন্যায় থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিবে। ইনশা-আল্লাহ স্বামীর রাগ দূর হয়ে যাবে। সংসারে শান্তি বাড়তে থাকবে।
তাছাড়া আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন করেছেন, সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে, তিনি তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। (মুসলিম, হাদিস: ২৫৮৮)
কোন মন্তব্য নেই