জুমার খুতবা কোন গুনাহের কি আযাব বা শাস্তি
মুহররম ১৪৪২ হিজরীর মাসের ৫ম খুতবা
১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং
বিষয়বস্তুঃ কোন গুনাহের কি শাস্তি (25টি গুনাহ)
দান করে
খোটা দেয়া
উপকার করে বা দান করে খোটা দানের দ্বারা আপনার সেটার কোন সাওয়াব আপনি আর পাবেন না। সুরা বাকারার ২৬৪ নং আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ
لاَ تُبْطِلُواْ صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالأذَى كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ
رِئَاء النَّاسِ وَلاَ يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ
صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا لاَّ يَقْدِرُونَ
عَلَى شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُواْ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। [ সুরা বাকারা ২:২৬৪ ]
খোঁটা দেওয়া যে কত গর্হিত এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে কত ঘৃণ্য, হযরত আবূ যর (রাযি.)-এর একটি হাদীস দ্বারা তা অনুমান করা যায়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَ لَا يَنْظُرُ اِلَيْهِمْ وَ لَا يُزَكِّيْهِمْ وَ لَهُمْ
عَذَابٌ اَلِيْمٌ، قَالَ اَبُوْ ذَرٍّ فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ ثَلَاثُ مِرَارٍ، قَالَ اَبُوْ ذَرٍّ : خَابُوْا وَ خَسِرُوْا،
مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ : اَلْمُسْبِلُ وَ الْمَنَّانُ وَ
الْمُنْفِقُ سِلْعَتَه بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.
‘তিন ব্যক্তি এমন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা যাদের সংগে কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আবূ যর (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিন-তিনবার বললেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা, তারা তো সর্বস্বান্ত
ও ক্ষতিগ্রস্ত
হয়ে গেল? তিনি বললেন, (ক) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে; (খ) যে ব্যক্তি উপকার করার পর খোঁটা দেয় এবং (গ) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য চালায়।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৬
অহংকার
অহংকারের কারনে আল্লাহ তায়ালা নেয়ামত ছিনিয়ে নেন। আল্লাহর গযব নেমে আসে আপনি যদি ব্যক্তি হিসেবে অহংকারী হন তাহলে আপনার জন্য শয়তানের ধ্বংসের দৃষ্টান্ত আছে আর আপনি যদি জাতি হিসেবে অহকারী হন তাহলে আল্লাহ গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার নমুনাও আছে যেমন আদ সামুদ সম্প্রদায়। আল্লাহ তায়ালা কুরআনের সুরা কাসাসের ৫৮ নং আয়াতে বলেন
وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ
بَطِرَتْ مَعِيشَتَهَا فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَن مِّن بَعْدِهِمْ
إِلَّا قَلِيلًا وَكُنَّا نَحْنُ الْوَارِثِينَ
‘এমন কত জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, সেখানকার লোকেরা ধন-সম্পদের অহংকার করত। এই যে তাদের বাড়িঘর পড়ে আছে, যেখানে তাদের পর কম লোকই বসবাস করেছে। শেষ পর্যন্ত আমি (এ সবেরই) ওয়ারিশ হয়েছি।’ -সুরা আল কাসাস: ৫৮
অহংকারকে নিরুৎসাহিত করে আল্লাহ তায়ালা সুরা বনি ইসরাইলের ৩৭ নং আয়াতে এরশাদ করেন-
وَلاَ تَمْشِ فِي الأَرْضِ مَرَحًا
إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولاً
পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩৭ ]
মুতাররিফ ইবনে আবদুল্লাহ রাহ. ছিলেন বিখ্যাত এক বুযুর্গ। মুহাল্লাব নামক এক লোক তার পাশ দিয়ে রেশমি কাপড় পরে অহংকার করে হেঁটে যাচ্ছিল। বুযুর্গ তাকে বললেন : এভাবে হাঁটছ কেন? সে পাল্টা প্রশ্ন করে-আপনি জানেন, আমি কে? মুতাররিফ রাহ. উত্তরে যা বলেছিলেন তা প্রতিটি মানুষের মনে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত। তিনি বলেছিলেন-
أوَّلُكَ نُطْفَةٌ مَذِرَةٌ،
وَآخِرُكَ جِيْفَةٌ قَذِرَةٌ، وَأَنْتَ فِيْمَا بَيْنَ ذلِكَ تَحْمِلُ
الْعَذِرَةَ.
(আউয়্যালুকা নুতফাতুন মাজিরাতুন, ওয়া আখিরুকা জিফাতুন কাজিরাতুন, ওয়া আনতা ফিমা বাইনা জালিকা তাহমিলুল আজিরাহ)
তোমার সূচনা পুঁতিগন্ধময়
বীর্যে, সমাপ্তি গলিত লাশে আর এ দুয়ের মাঝে তুমি এক গোবরবাহী দেহ।
(তাফসীরে কুরতুবী, সূরা মাআরিজের ৩৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
#অহংকারী থেকে আল্লাহ নেয়ামত ছিনিয়ে নেন
#অহংকারীর উপর আল্লাহর গযব নাজিল হয়
#অহকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।
হারাম কামাই
২য় নাম্বার এমন একটি গুনাহ যার কারনে আমাদের দোয়াসমুহ কবুল হয়না। নামাজ কবুল হয়না। ঘর থেকে বরকতও চলে যায়; আর তা হল হারাম কামাই।
হজরত আবুদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, হুজুর (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো বান্দা যদি হারাম মাল উপার্জন করে এবং আল্লাহর রাহে সদকা করে, তাহলে ওই সদকা বা দান তার পক্ষ হতে কবুল করা হবে না এবং যদি তার নিজের জন্য এবং পরিবারের জন্য ব্যয় করা হয়, তবে তা ‘বরকত’ শূন্য হয়।
হজরত আবুদল্লাহ ইবনে উমর (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি ১০ দেরহাম মূল্যের একখানা কাপড় খরিদ করছে, আর এতে একটি দেরহাম যে কোনো হারাম উপায়ে অর্জিত, এমতাবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত ওই কাপড়খানা তার শরীরে থাকবে, আল্লাহপাক তার নামাজ কবুল করবেন না।’
যিনা
৩য় নাম্বার হল যিনা আল্লামা জাজিরি (রহ) লিখেন যিনা এমন একটি গুনাহ যার কারনে ঈমানের নুর চলে যায়, যে দেশে যিনা বৃদ্ধি পায় সেখানে আল্লাহ তায়ালা রহমতের বৃষ্টি বন্ধ করে দেন, এমনকি যিনা হত্যা করা থেকেও মারাত্মক গুনাহ, কারন হত্যার দ্বারা একজন ক্ষতিগ্রস্থ হয় আর যিনার দ্বারা গোটা সমাজ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাছাড়া যিনার কারনে আল্লাহ তায়ালা এমন এমন রোগ দান করেন মহামারী দান করেন যার কোন চিকিৎসা দুনিয়ার জমিনে নাই। যেমন এইডস একটি রোগ, করোনার মত মহামারী যিনার কারনেই হয়ে থাকে।
যেমন (বাজজার, মুয়াত্তার হাদীস মহানবী (দঃ) বলেন কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার বিস্তারলাভ করলে তাদের মধ্যে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া
আল্লাহ তায়ালা সুরা বনি ইসরাইলে এরশাদ করেন
وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ
كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩২ ]
ঘটনা- একদা এক মজলিসে এক যুবক এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ,আমাকে যিনা করার অনুমতি দিন।’একথা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠলেন এবং তাকে তিরস্কার করতে লাগলেন, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (আদরের সহিত) আমার কাছে এসো,
সে কাছে এল। বললেন, বসো, সে বসলো। এরপর (তার ঊরুতে হাত রেখে) বললেন, ‘তুমি কি
তোমার মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে?’ সে বলল, না ইয়া রাসূলুল্লাহ। আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি উৎসর্গিত করুন।
কোনো মানুষই তার মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তাহলে
তোমার মেয়ের জন্য?’ যুবকটি বলল, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি উৎসর্গিত।
কোনো মানুষই তার মেয়ের জন্য এটা পছন্দ করবে না।’ নবীজী (সা) জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে তোমার
বোনের জন্য?’ যুবক বলল, ‘না ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি উৎসর্গিত। কোনো মানুষই তার বোনের জন্য এটা পছন্দ করবে না।’ নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাহলে তোমার ফুফুর জন্য?’ যুবক বলল,‘না ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি উৎসর্গিত। কোনো মানুষই তার ফুফুর জন্য এটা পছন্দ করবে না।’
নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে তোমার খালার জন্য?’ যুবক বলল, না কক্ষনো না। আল্লাহ আমাকে আপনার
জন্য উৎসর্গিত করুন। কোনো মানুষই তার খালার জন্য এটা পছন্দ করবে না।’
এরপর নবীসাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম তার শরীরে হাত রাখলেন এবং দুআ করলেন- ইয়া আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করুন, তার অন্তর পবিত্র করুন এবং তার চরিত্র রক্ষা করুন।
বর্ণনাকারী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষার ফলাফল এই হল যে, পরবর্তী
জীবনে সে (রাস্তায় চললে) কোন দিকে চোখ তুলেও তাকাত না।- [মুসনাদে আহমদ ৫/২৫৬-২৫৭ ]
* এই হাদীস থেকে শিক্ষা দেয় যে, একজন পুরুষ যার সাথে যেনা করবে সে নিশ্চই অন্য একজনের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু কিংবা খালা... তাই সে
যেমন নিজ মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালাদের কে সম্মানের চোখে দেখে তেমন যদি অপরের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালাদেরকেও সম্মানের সাথে দেখে তাহলে সে এই অপরাধ করতে পারবেনা! -দেখুন কেমন ছিল বিশ্ব মানবতার দূত নাবী মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি অয়াসাল্ললাম এর শিক্ষাদানের পদ্ধতি !
নিশা
মদ বা নেশাগ্রস্থ মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আর সব ধরনের অপরাধ করে বসে। ইবনে মাজার ৪০৩৪ নং হাদীস নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন- মদ পান করবেনা। কেননা তা সমস্ত পাপ কাজের উৎস। [ইবনে মাযাহ ৪০৩৪]
মদের ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ
إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ
الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, পূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর হচ্ছে শয়তানের অপবিত্র কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা : মায়িদাহ, আয়াত : ৯০)
আর মদপানকারী বহনকারী বিক্রিকারীর উপর আল্লাহ অভিশাপ দেন যেমন আবু দাউদ শরীফের হাদীস
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ মদের ওপর, তা পানকারীর ওপর, যে পান করায় তার ওপর, যে বিক্রি করে তার ওপর, যে তা নিষ্কাশন করে এবং যার আদেশে নিষ্কাশন করে তার ওপর আর যে ব্যক্তি তা বহন করে এবং যার কাছে পৌঁছে দেয়, সবার ওপর।’
বুখারী শরীফের ৬৩০২ নং হাদীস হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)হতে বর্ণিত নবী করিম (দ) এরশাদ করেন কোন শরাব পানকারী শরাব পান করার সময় ঈমানদার থাকেনা।
ইবনে মাজার ৩৩৭৭ নং হাদীস নবীজির ফরমান মদপানকারীর ৪০ দিনের নামাজ কবুল হয়না, আর কেয়ামতের দিন তাকে পান করানো হবে তিনাতুল খাবাল থেকে সাহাবারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! ত্বীনাতুল খাবাল
কি? তিনি বললেন: জাহান্নামীদের ঘাম অথবা জাহান্নামীদের থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত নিকৃষ্ট রস।
মিথ্যা
মিথ্যাবাদীকে আল্লাহ ও রাসুল পছন্দ করেন না।
মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হয়।
মিথ্যা সব পাপাচারের মুল।
(এক লোক অনেক গুনাহ করত সে আরজ করল এয়া রাসুলাল্লাহ আমি অনেক পাপে জড়িত এ থেকৈ মুক্তির উপায় কি? নবীজি ফরমালেন তুমি মিথ্যা বলা ত্যাগ কর, আর এই একটি পাপ ত্যাগ করার ফলেই সে এক সময় সব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারল।
আল্লাহর নবী আরো বলেন
মুসলমান অন্যকিছু হতে পারে কিন্তু মিথ্যাবাদী হতে পারেনা।
মিথ্যা মুনাফেকির আলামত- আর মুনাফেকির পরিণাম হল (ইন্নাল মুনাফিকিনা ফিদ দারকিল আসফালি মিনান নার) জাহান্নামের সর্বনিন্ম স্তর।
মিথ্যাবাদীর সাক্ষি গ্রহণযোগ্য হয়না।
মিথ্যাবাদীর চেহেরা থেকে নুর চলে যায়।
কিয়ামতের দিন মিথ্যা বাদির চোয়াল গর্দান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে।
জুলুম করা
জালেমের মতো হতভাগা আর কেউ নেই। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা কি জানো- গরিব কে? সাহাবিরা বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নেই সে হলো গরিব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরিব, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিকে সেদিন তার নেক আমলনামা দিয়ে দেওয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [তিরমিযি :৪১৮]
সুরা আনয়ামের ২১ নং আয়অতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করেন
إِنَّهُ لاَ يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
নিশ্চয় জালেমরা সফলকাম হবে না।
তাছাড়া আপনি যার উপর জুলুম করবেন সে যদি আপনার জন্য বদদোয়া করে সে বদদোয়া কবুল হবেই হবে। (তিরমিজি ৩৫৯৮)
আর জুলুমের শাস্তি শুধু আখেরাতে নয় বরং দুনিয়াতেও ভোগ করতে হবে
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)
#ভিক্ষাবৃত্তি- যে ব্যক্তি উপার্জনে সক্ষম, তার জন্য ভিক্ষা চাওয়া জঘণ্য পাপ ও লজ্জাকর বিষয়। দুনিয়াতেও সে কোন সম্মান লাভ করতে পারবে না, আখেরাতেও নয়। বরং সেখানে তাকে এমন অবস্থায় উপস্থিত হতে হবে যে, তার মুখ মন্ডলে গোশতের কোন চিহ্ন থাকবে না’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই যে, কোন ব্যক্তির কাছে একদিনের খাদ্য বা একদিনের খাবারের অর্থ থাকবে তার পক্ষে ভিক্ষা চাওয়া সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ।
# ঋণ পরিশোধ না করা- হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন, নবী করীম সা. এর নিকট জানাযা আনা হলো যেন তিনি জানাযার নামায পড়ান।
অতঃপর তিনি বললেন, ‘তার উপর ঋণ আছে কী?’ লোকেরা বলল, ‘হ্যাঁ’। রাসুল সা. বললেন,
‘জিবরাইল আ. আমাকে যার উপর ঋণ রয়েছে তার জানাযা পড়াতে নিষেধ করেছেন।’ (তারগীব)
#গানবাজনা - নবী করিম (দঃ) বলেন আমার উম্মতের
একটি সম্প্রদায় হবে যারা বাদ্য যন্ত্রকে গান বাজনাকে হালাল মনে করবে তাঁদের চেহেরা
বানর শুকরের চেহেরা হয়ে যাওয়ার ধমকি রয়েছে
# অন্যের ঘরে উঁকি
মারা- পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মুমিন নর-নারীর দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় ওপর তলার বাসিন্দারা জানালা কিংবা ছাদ থেকে নিচের অধিবাসীদের সতরও দেখে ফেলেন। নিঃসন্দেহে এটা খেয়ানত, প্রতিবেশীর সম্মানে আঘাত এবং হারাম পথের মাধ্যম। এর ফলে অনেক রকম বিপদাপদ ও ফেতনা দেখা দেয়। এ ধরনের দৃষ্টিপাতের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।
হাদিসে এমন ব্যক্তির চোখ ফুঁড়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কারও বাড়িতে অনুমতি ছাড়া উঁকি দেয় তার চোখ ফুঁড়ে দেওয়া বৈধ।’ (মুসলিম : ২১৫৮)।
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যদি তারা তার চোখ ফুঁড়ে দেয় তাহলে সে জন্য কোনো দিয়াত বা রক্তমূল্য ও কিসাস দিতে হবে না’। (নাসাঈ: ৪৮৬০)
# আত্মসাৎ করাও জঘন্য
গুনাহ- এক ব্যক্তি মাত্র ২ দেরহামের সম্পদ আত্মসাৎ করায় আল্লাহর হাবিব তার জানাযা
পড়ান নি।
# পরিমাপে ও ওজনে কম দেওয়া নিষেধ। এটি জঘন্যতম খিয়ানত ও গুনাহে কবিরা। এর ফলে আল্লাহ তাআলা ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দেন ও দুর্ভিক্ষ দেন।
#ওয়াদা ভঙ্গ করাও কবিরা গুনাহ আর ওয়াদা ভঙ্গ করা
হল মুনাফিকের আলামত আর (বুখারী মুসলিম) মুনাফিকের স্থান হল জাহান্নামের সবনিন্ম স্তরে।
# হিংসা- আগুন যেমন কাটকে জ্বালিয়ে ফেলে তেমনি হিংসা
নেক আমলের ছাওয়াবকে জ্বালিয়ে ফেলে। (আবু দাউদ)
# সুদ
খাওয়া
: সুদের ৭০ ধরনের গুনাহ রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নতম গুনাহ হলো, স্বীয় মাকে বিবাহ করা। (বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা : ২৪৬) আর সর্বোচ্চ গুনাহ হলো আল্লাহর বিরুদ্ধে জিহাদ করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যারা সুদ খায় (বিচার দিবসে) তারা সে ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে (জ্বিনে) শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দিয়েছে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
#মজুদদারি
ও
কালোবাজারি
: মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশে খাদ্যদ্রব্য মজুদ রাখা এবং কালোবাজারি সম্পূর্ণরূপে হারাম। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য আটকে রাখে (মজুদদারি করে) আল্লাহ তাআলা তার ওপর মহামারি ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন।’ (ইবনে মাজাহ ও বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা : ২৫১)
#পুরুষ ও মহিলার বেশ ধারনঃ হাদিসে পাকে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺃَﻥَّ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
ﻟَﻌَﻦَﺍﻟﺮَّﺟُﻞَ ﻳَﻠْﺒَﺲُ ﻟُﺒْﺴَﺔَ
ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﺗَﻠْﺒَﺲُ ﻟُﺒْﺴَﺔَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ
- হযরত আবূ হুরায়রাহ (রাদ্বি.) বলেন, রাসূল (দ.) সেই পুরুষের ওপর অভিশাপ করেছেন যে, মহিলার পোষাক পরিধান করে এবং সে মহিলার উপর অভিশাপ করেছেন যে পুরুষের পোষাক পরিধান করে (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪৬৯,বাংলা ৮ম খণ্ড, হা/৪২৭০, )।
#আড়ি পাতা আঁড়ি পেতে অন্যের গোপন কথা শোনা ও তা প্রচার করা হারাম
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيراً مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ
إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ
أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ
اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। [ সুরা হুজুরাত ৪৯:১২ ]
#চোগলখুরি- এই অপরাধের পরিচয় তুলে ধরে আল্লাহ বলেন
وَلَا تُطِعْ
كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِينٍ
যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, আপনি তার আনুগত্য করবেন না। [ সুরা কালাম ৬৮:১০ ]
هَمَّازٍ
مَّشَّاء بِنَمِيمٍ
যে পশ্চাতে নিন্দা করে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে ফিরে। [ সুরা কালাম ৬৮:১১ ]
হাদিসের অন্য জায়গায় এসেছে, ‘কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ঐ ব্যক্তিকে দেখতে পাবে; যে ছিল দু’মুখো- যে এক জনের কাছে এক কথা আরেক জনের কাছে আরেক কথা নিয়ে হাজির হত।’ (মুসলিম)
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মদিনার একটি খেজুর বাগান দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেখানে তিনি দুই ব্যক্তির আহাজারি শুনতে পেলেন। তখন তাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ (ব্যক্তি) দু’জনকে বড় কোনো কারণে আযাব দেয়া হচ্ছে না; অবশ্য এগুলো কবিরা গোনাহ। তাদের একজন পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করত না; আর অন্যজন চোগলখুরি করে বেড়াত।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)
#অভিশাপ দেয়াঃ মানুষকে অভিশাপ দিলে তা নিজের ওপর পড়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো বান্দা কোনো বস্তুকে অভিশাপ দেয়, তখন ওই অভিশাপ আকাশের দিকে অগ্রসর হয়। অতঃপর সেই অভিশাপের আকাশে ওঠার পথকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন তা আবার দুনিয়ায় প্রত্যাবর্তনের জন্য রওনা হয়, কিন্তু দুনিয়ায় আসার পথও বন্ধ করে দেওয়ায় সে ডানে-বাঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অবশেষে অন্য কোনো পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ করা হয়েছে, তার কাছে ফিরে আসে। তখন সেই বস্তু যদিও অভিশাপের যোগ্য হয়, তাহলে তার ওপর ওই অভিশাপ পতিত হয়, অন্যথায় অভিশাপকারীর ওপরই তা পতিত হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৫)
#ছবি লটকানো- ঘরে কোন মানুষ বা প্রাণীর ছবি সম্মানের
সাথে লটকিয়ে রাখলে এতে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেনা। অনেকে ঘরে মৃত মা বাবা, কিংবা
ছোট বাচ্চাদের জন্ম তারিখ লিখে আয়না বাঁধিয়ে দেওয়ালে লটকিয়ে রাখে এসব করলে ঘরে রহমতের
ফেরেশতা আসবে না ফলে ঘর বরকত শূণ্য হয়(আবু দাউদ)
#শ্রমিকের পাওনা দিতে
দেরী করা- সামর্থ্য থাকার পরও মানুষের প্রাপ্য ও অধিকার প্রদানে টালবাহানা করা
অন্যায়।
আর ঠুনকো অজুহাতে
বেতন-ভাতা ও প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ভয়ংকর অপরাধ। মহানবী (সা.) বলেন,
কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিপক্ষে থাকব। ... আর একজন সে যে কাউকে শ্রমিক
নিয়োগ দেওয়ার পর তা থেকে কাজ বুঝে নিয়েছে অথচ তার প্রাপ্য দেয়নি। (বুখারি, হাদিস :
২২২৭)
#চুলে কালো কলপ ব্যবহার
করা- আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, শেষ যুগে এমন এক শ্রেণির লোক হবে, যার পায়রার
ছাতির মতো কালো কলপ ব্যবহার করবে, তারা জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। (আবু দাউদ
৪২১২, নাসাই, সহিহুল জামে ৮১৫৩ নং)
মা বাবার সামনে মোবাইল ব্যবহারের আদব
সবশেষে এয়াং ছেলেদের
প্রতি নসিহত- আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের পর সবচেয়ে বেশী সম্মান পাওয়ার যোগ্য পিতা
মাতা, পিতা মাতার সামনে এমন কোন আচরন করবেন না যাতে তাঁদের মনে কষ্ট পৌঁছে, বিশেষ
করে পিতা মাতার সাথে যখন কোন কথা বলেন, তাঁরা যখন কোন কথা বলে তখন যদি মোবাইলে কল
আসে সেটা যারই হউক রিসিভ করবেন না, এটাই হল আদব। যদি মা বাবা রিসিভ করতে বলে তবেই
রিসিভ করবে।
আজ ২৫টি কবিরা গুনাহ এবং
এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে জানলাম আল্লাহর কাছে আকুল ফরিয়াদ আল্লাহ তায়ালা আমাদের
সকলকে সব ধরনের ছগিরা কবিরা গুনাহ থেকে হেফাজত করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই