জাকাতের ফজিলত কি? যাকাত না দিলে কি পরিণতি?
জাকাতের ফজিলত কি?
জাকাত না দিলে কি পরিণতি?
এক ইহুদী নারীর যাকাত দানের ঘটনা
হাজী অলি মিয়া সওঃ জামে মসজিদ
খতিব মাওঃ মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন
ভিডিও লিংক https://youtu.be/nCFYv1_zrLU
-পবিত্র কুরআনে জাকাতের ফজিলত
১। জাকাত দিলে মালামাল পবিত্র হয় যেমন আল্লাহ তায়ালা সুরা তাওবার ১০৩ নং আয়াতে এরশাদ করেন
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلاَتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দোয়া কর, নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য সান্ত্বনা স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ সবকিছুই শোনেন, জানেন। [ সুরা তাওবা ৯:১০৩ ]
২। যাকাত দান করলে আল্লাহ তায়ালা সফলতা দান করেন যেমন সুরা মুমিনুনের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন
وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ
যারা যাকাত দান করে থাকে [ সুরা মু’মিনুন ২৩:৪ ]
৩। যাকাত দানকারীকে আল্লাহ তায়ালা সে যতটুক দান করেছেন তার চেয়ে আরো অধিক ফিরিয়ে দিবেন
যেমন সুরা সাবার ৩৯ নং আয়াতে এরশাদ করেন
قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ وَمَا أَنفَقْتُم مِّن شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
বলুন, আমার পালনকর্তা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং সীমিত পরিমাণে দেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেন। তিনি উত্তম রিযিক দাতা। [ সুরা সা’বা ৩৪:৩৯ ]
- যাকাত দিলে মালআল্লাহ হেফাজত করবেন-
হাদীস আবু দাউদ ১০৫ নং হাদীস হযরত হাসান বসরী (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করিম (দ) এরশাদ করেন
(হাচ্ছিনু আমওয়ালাকুম বিয্ যাকাত)
তোমরা যাকাত আদায় করে স্বীয় সম্পদকে সুদৃঢ় দুর্গে সংরক্ষিত করো।
-যাকাত দিলে আল্লাহ আপনার জীবন থেকে সব ধরনের ক্ষতি, দুঃখ পেরেশানি, মসিবত, দুর করে দিবেন
যেমন ইমাম তাবরানী তার মুজামুল আওসাতের ১৫১৭৯ নং হাদীস নকল করেন নবী করিম (দ) এরশাদ করেন
(মান আদ্দা যাকাতা মালিহি,
ফাকাদ জাহাবা আনহু শাররুহু)
যে নিজের সম্পদের যাকাত আদায় করলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তার নিকট থেকে সব অনিষ্ঠতা দুর করে নিলো।
- যাকাত আদায় না করার পরিণতি
১। যারা যাকাত আদায় না করে সম্পদ জমা করে রাখে তাদের পরিণতির ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা সুরা তওবার ৩৪-৩৫ নং আয়াতে সহজ ভাষায় বলেন
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। [ সুরা তাওবা ৯:৩৪ ]
يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَـذَا مَا كَنَزْتُمْ لأَنفُسِكُمْ فَذُوقُواْ مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ
সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার। [ সুরা তাওবা ৯:৩৫ ]
২। টেকো মাথার সাপ- যারা যাকাত দেয়না তাদের সম্পদ কেয়ামতের মাঠে টাক মাথার সাপ হয়ে কামড়াবে যেমন বুখারী শরীফের 1403 নং হাদীস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল।
৩। যাকাত না দিলে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে - ইমাম তাবরানী তার মুজামুল আওসাত গ্রন্থের ৪৫৭৭ নং হাদিস
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করিম (দ) এরশাদ করেন, যে গোত্র যাকাত আদায় করেনা, আল্লাহ তায়াল সে জাতিকে দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত করবেন।
৪। ফরয যাকাত আদায় না করলে নামাজ কবুল হবেনা- ইমাম তাবরানী মুজামুল কবীরের ১০০৯৫ নং হাদীস হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমাদেরকে সালাত আদায় ও যাকাত প্রদানের আদেশ করা হয়েছে কেননা (ফামান লাম ইউজাক্কি ফালা সালাতা লাহু) যে যাকাত প্রদান করবেনা তার সালাত/নামাজ কবুল হবেনা।
-এক ইহুদী নারীর যাকাত দান
যাকাত দান করলে আল্লাহই সম্পদের হেফাজত করেন এ কথা যখন নবীর মুখে এক ইহুদী নারী শুনল সে তার সম্পদের যাকাত দিয়ে দিল, তার একটি বানিজ্যিক কাফেলা তখন সিরিয়া থেকে আসছিল, তার কাফেলার সাথে আরো যারা ছিল সকলের মালই ডাকাত দল ছিনতাই করে নিয়ে যায় কিন্তু ইহুদী মহিলার মাল ডাকাতী হয়নাই, সে মহিলা তার মেনেজারকে প্রশ্ন করে কি ব্যপারে ম্যানেজার বলে যে স্পটে ডাকাতি হয়েছে তার আগেই আমার বহরের উটের সরদার পায়ে আঘাত লেগে বসে যায় সরদার উট যখন বসে যায় তখন অন্য গুলিও বসে যায় সে জন্য ডাকাতি হওয়ার স্পটে আমি পৌঁছিনি এবং আমার মাল বেচে যায়, কিন্তু ইহুদী মহিলা বলে নয় নয় বরং আমি মুসলমানদের নবীর কথামত যাকাত দিয়েছি তাই আল্লাহ আমার মালকে হেফাজত করেছেন, সুতরাং আমি আজ বুঝতে পারলাম ইসলাম সত্য মুহাম্মদ সত্য। এবং সে মহিলা ইসলাম কবুল করলেন।
একজন ইহুদী যদি যাকাত দিয়ে লাভবান হতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না? তাই আসুন আমরাও হিসাব করে সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ তথা ২.৫% যাকাত দিয়ে সারা বছরের জন্য আমাদের মাল গুলিতে আগুন, পানি তুফান চুরি ডাকাতি থেকে হেফাজত করি।
৫। সালাবার ঘটনা- যাকাত না দেয়া বাহাদুরী নয় বরং এটা একটা আল্লাহর গজব এ ব্যপারে সালাবা ইবনে আবু হাতিমের ঘটনা প্রনিধানযোগ্য
সা’লাবা ইবনে আবু হাতিম। রাসূলের জামানার অন্যতম মুনাফিক। মুখে এক কথা বাইরে আরেক কথা। স্বার্থান্বেষী এ মানুষটি আপন স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মুমিনের সূরত এখতিয়ার করেছিল। কিন্তু তার ভিতরটা ছিল কুফুরীর কালিমায় ঢাকা। পুরোপুরী যোগাযোগ ছিল কাফেরদের সাথেই। তার যত ভালবাসা, যত প্রেম, হৃদয়ের যত টান সব ছিল তাগুতী গোষ্ঠির জন্যে, খোদাদ্রোহী কাফের-মুশরিকদের জন্যে। মুখের চটকদার কথা ছাড়া ইসলাম কিংবা মুসলমানদের জন্য তার কোনো দয়া বা মমতা ছিল না।
একদিনের ঘটনা। প্রিয়তম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে আছেন। সা’লাবা ধীরে ধীরে এগিয়ে এল। আরজ করল
হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করুন। তিনি যেন আমাকে ধনী বানিয়ে দেন। সম্পদের পাহাড় নসীব করেন।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সা’লাবাকে ল্য করে বললেন। হক আদায় করতে পারো এমন অল্প সম্পদ, হক আদায় করতে অক্ষম এমন অধিক সম্পদের চাইতে অনেক ভালো। সালাবা বলল তা ঠিক। তবু আপনি আমার জন্য দোয়া করে দিন।
নবীজি বললেন সা’লাবা! তুমি কি আল্লাহর রাসূলের পথ ধরে চলতে রাজী নও? সন্তুষ্ট নও?
সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন, যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তবে মদীনার পাহাড় সোনা হয়ে আমার পিছনে পিছনে ঘুরত। আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে উহাকে নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আসল কথা হলো, এমন ধনী হওয়া আমার পছন্দ নয়।
এ কথা শোনার পর সা’লাবা বলল, সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, আল্লাহ যদি আমাকে সম্পদ দান করেন, তাহলে আমি তার সকল হক আদায় করব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা আর সামনে বাড়ালেন না। সা’লাবা ইবনে আবু হাতিমের জন্য দোয়া করে দিলেন। বললেন “হে আল্লাহ! সা’লাবাকে তুমি সম্পদ দান করো।”
নবীজীর দোয়া পেয়ে সা’লাবা মহা খুশি। আনন্দের আতিশয্যে তার দু’পা যেন মাটিতে পড়তে চায় না। সবাইকে বলতে থাকে নবীজীর দোয়ার কথা।
মহানবীর দরবার থেকে ফিরে এসে সা’লাবা বাজারে গেল। কিছু বকরী ক্রয় করল। তারপর বাড়িতে এনে পূর্ণোদ্যমে শুরু করল বকরী পালন।
দিন যায়। মাস যায়। সময় চলতে থাকে আপন গতিতে। সা’লাবার ছাগল বেড়ে চলে। বংশ বৃদ্ধি পায় পোকা মাকড়ের মতো। ছাগলের পাল বড় হয়। বাড়িতে জায়গা ধরে না। এমনকি এক পর্যায়ে এই বিশাল ছাগলের বহর নিয়ে মদীনায় অবস্থান করাও তার জন্য মুশকিল হয়ে পড়ে।
সা’লাবা চিন্তিত হয়। এতবড় ছাগলের পাল নিয়ে যাবে কোথায়? শেষ পর্যন্ত অনেক চিন্তাভাবনা করে মদীনার পাক লোকালয় ছেড়ে খোলা ময়দানে চলে যায়।
মদীনায় অবস্থানকালে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে নববীতে এসে জামাতের সাথে আদায় করত সা’লাবা। কিন্তু দূরে চলে যাওয়ার কারণে এখন আর তা হয়ে ওঠে না। শুধুমাত্র যোহর ও আছরের নামাজ মদীনায় এসে আদায় করে। অন্য নামাজে শরীক হয় না বা হতে পারে না।
এদিকে ছাগলের সংখ্যা কিন্তু বন্যার পানির মতই তর তর করে বেড়ে চলে। ফলে বাধ্য হয়ে তাকে মদীনা থেকে আরও দূরে চলে যেতে হলো। কারণ আগের অবস্থানস্থলে ছাগলের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না।
দূরে চলে যাওয়ায় সা’লাবার মদীনায় আসা আরও কমে গেল। কমে গেল জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের পরিমানও। সে এখন প্রতি শুক্রবারে জুমআর নামাজ আদায়ের জন্য মদীনায় আসে। সপ্তাহের বাকী চৌত্রিশ ওয়াক্ত নামাজই সে আপন স্থানে আদায় করে নেয়। অবশ্য সবগুলো নামাজ পড়ে কি না তারই বা খোঁজ কে রাখে!
ক্রমাগত বেড়ে চলল ছাগলের পাল। সা’লাবা সরে যেতে লাগল দূর থেকে বহু দূরে। এমনকি এক পর্যায়ে শুক্রবারেও মদীনায় আসা বন্ধ করে দিল। তখন শুধু পথচারীদের কাছে জানতে চাইতো মদীনার সংবাদ।
একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা করলেন, সা’লাবার খবর কী? তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে ছাগল পালে। তার ছাগলের পরিমাণ আস্তে আস্তে এত বেড়ে গেছে যে, মদীনায় থাকা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই সে বাধ্য হয়ে মদীনার বাইরে চলে গেছে। একথা শোনার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার বললেন “সা’লাবার জন্য আফসোস! সা’লাবার জন্য আফসোস! সা’লাবার জন্য আফসোস!”
এর কিছুদিন পরের কথা। যাকাতের বিধান অবতীর্ণ হলো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’ব্যক্তিকে সা’লাবার কাছে যাকাত আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করলেন। তারা দু’জন সা’লাবার কাছে গিয়ে নবীজির যাকাত সংক্রান্ত চিঠি পড়ে শোনালেন। চিঠির বক্তব্য শোনে সা’লাবা বলল, এ তো দেখছি ট্যাক্স ছাড়া আর কিছুই নয়। যা অমুসলমানদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। আমার ভালো করে বোধগম্য হচ্ছে না যে, নবীজি আমার কাছে কী চাচ্ছেন! আচ্ছা, তোমরা এখন যাও। পরে এসো। চিন্তা ভাবনা করে দেখি কী করা যায়।
একথা বলার পর যাকাত উসুলকারী লোক দু’জন বনু সুলাইমের এক ব্যক্তির কাছে গেলেন। সুলাইম গোত্রের লোকটি তাদেরকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করল। তারপর নিজের পালিত উট-বকরীসমূহের মধ্যে যেগুলো উৎকৃষ্ট ছিল, তা থেকে যাকাতের নেসাব অনুযায়ী পশু বাছাই করে তাদের নিকট নিয়ে এল। তারা বললেন, আমাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে, পশুসমূহের মধ্যে যেটি উৎকৃষ্ট, সেটি যেন না নেই। কাজেই আমরা এগুলো নিতে পারি না। সুলাইমী লোকটি বারবার অনুনয় বিনয় করে বললেন, আমি নিজের খুশিতে এগুলো দিতে চাই; আপনারা দয়া করে কবুল করে নিন।
অতঃপর দু’কর্মকর্তা অন্যান্য মুসলমানদের থেকে যাকাত আদায় করে ফেরার পথে আবার গেল সা’লাবার কাছে। কিন্তু এবারও সা’লাবা যাকাতকে ট্যাক্স বলে উড়িয়ে দিল। বলল, এ তো একরকম জিযিয়া-করই হয়ে গেল, যা মুসলমানদের কাছ থেকে নেওয়া উচিত নয়। যাহোক, এখন তোমরা যাও। আমি পরে চিন্তা করে একটা সিদ্ধান্ত নেব।
যাকাত আদায়কারী কর্মকর্তাদ্বয় ফিরে এলেন মদীনায়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালেন পুরো কাহিনী। সব শোনে তিনি ‘হায় সালাবা’ বলে দরদভরা কণ্ঠে আক্ষেপ করলেন। আর সুলাইমী লোকটির উপর খুশি হয়ে তার জন্য বরকতের দোয়া করলেন।
সুধীবৃন্ধ! আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে যে, সম্পদের জন্য দোয়া চাওয়ার সময় সা’লাবা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সুস্পষ্ট ভাষায় অঙ্গীকার করে বলেছিল যে, ‘আল্লাহ যদি আমাকে সম্পদ দেন তাহলে আমি উহার সকল হক আদায় করব।’ কিন্তু সে তাঁর ওয়াদা রা করে নি। সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হলো সে। তার এ সত্যচ্যুতি প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে আয়াত নাযিল করেন
وَمِنْهُم مَّنْ عَاهَدَ اللّهَ لَئِنْ آتَانَا مِن فَضْلِهِ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُونَنَّ مِنَ الصَّالِحِينَ
তাদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছে যারা আল্লাহ তা'আলার সাথে ওয়াদা করেছিল যে, তিনি যদি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ দান করেন, তবে অবশ্যই আমরা ব্যয় করব এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকব। [ সুরা তাওবা ৯:৭৫ ]
فَلَمَّا آتَاهُم مِّن فَضْلِهِ بَخِلُواْ بِهِ وَتَوَلَّواْ وَّهُم مُّعْرِضُونَ
অতঃপর যখন তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহের মাধ্যমে দান করা হয়, তখন তাতে কার্পণ্য করেছে এবং কৃত ওয়াদা থেকে ফিরে গেছে তা ভেঙ্গে দিয়ে। [ সুরা তাওবা ৯:৭৬ ]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সা’লাবার জন্য আফসোস করছিলেন, তখন সেখানে সা’লাবার কতিপয় আত্মিয় -স্বজনও উপস্থিত ছিল। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আফসোস শুনে তাদের মধ্য থেকে একজন সঙ্গে সঙ্গে রওয়ানা হয়ে সা’লাবার নিকট পৌঁছল। তারপর সা’লাবাকে তিরস্কার করে বলল, তোমার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আয়াত নাযিল হয়ে গেছে।
সা’লাবা ঘাবড়ে গেল এবং তৎণাৎ মদীনায় হাজির হয়ে নিবেদন করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার যাকাত গ্রহণ করুন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে তোমার যাকাত কবুল করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। একথা শুনার পর সা’লাবা নিজের মাথায় মাটি নিপে করতে লাগল। চিৎকার করে আওড়াতে লাগল আপে বাণী।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটা তো তোমার নিজেরই কৃতকর্ম। তোমারই মন্দকর্মের ফসল। আমি তোমাকে যাকাত আদায়ের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তুমি তা মান্য কর নি। এখন আর তোমার যাকাত কবুল হতে পারে না। শেষ পর্যন্ত সা’লাবা অকৃতকার্য হয়ে ফিরে গেল।
এ ঘটনার কিছুদিন পরই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলে গেলেন দুনিয়া থেকে। অতঃপর আবু বকর রা. খলীফা হলে সা’লাবা তাঁর খেদমতে হাজির হয়ে যাকাত কবুল করার আবেদন জানায়। হযরত আবু বকর রা. তার যাকাত কবুল করলেন না। বললেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার যাকাত নেন নি, আমরা নেই কী করে?
হযরত সিদ্দীকে আকবরের ওফাতের পর সা’লাবা ফারুকে আজম রা. এর দরবারে উপস্থিত হয়ে যাকাত কবুলের আবেদন করে। ওমর রা. তাকে ঐ উত্তরই দেন, যা সিদ্দীকে আকবর রা. দিয়েছিলেন। এরপর হযরত উসমান রা. এর খেলাফত কালেও সে এ নিবেদন করে। কিন্তু তিনিও একই কথা বলে যাকাত গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। হযরত ওসমান রা.-এর খেলাফতকালেই সা’লাবার মৃত্যু হয়। (দেখুন ইবনে কাছীর, নতুন সংস্করণ, পৃষ্ঠা- ৬২২)
সুতরাং যারা যাকাত দেয়ার ব্যপারে কৃপণতা করেন তাঁদের প্রতি আল্লাহও অসন্তুষ্ট, আল্লাহর রাসুল এবং সাহাবায়ে কেরাম অসন্তুষ্ট।
#কারুনও হযরত মুসা (আ) কাছে যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল, তখন যাকাত ছিল হাজারে ১ টাকা এখন জাকাত হল হাজারে ২৫ টাকা।
তার সম্পদের চাবি ছিল ৭০টি উটের বোঝা কিন্তু সে যাকাত দিতে রাজি হলনা, বরং হযরত মুসা (আ) এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, টাকা পয়সা দিয়ে গুন্ডা পালত, আর সেসব গুন্ডা পান্ডার পরামর্শে এক নারীকে টাকা পয়সা দিয়ে মুসার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটতে লাগল,
হযরত মুসা (আ) এতে জমিনকে নির্দেশ দিলেন (খুজিহে) হে মাটি ওকে গ্রাস কর, হযরত মুসার হকুমে মাটি কারুন ও তার প্রাসাদ ধন সম্পদ সবই গ্রাস করে ফেলল। নাউজুবিল্লাহ।
৬। যাকাত অস্বীকারকারী কাফের - হযরত আবু বকর (রা) এর জিহাদ
স্বেচ্ছায় যাকাত না দেওয়া ক্বতলযোগ্য অপরাধ এবং কুফরীর শামিল। ইসলামের প্রথম খলীফা মানবকুলে আম্বিয়ায়ে কেরামের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্বে আকবার রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু প্রিয়তম রাসূলের ওফাত শরীফের পর যখন সে খিলাফতের দায়িত্ব নিলেন তখন খাঁটি ও নির্ভেজাল মুমিনদের থেকে পৃথক হয়ে তিনটি দল স্বস্ব চরিত্রে আত্মপ্রকাশ করলো। এক দল সরাসরি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে মুর্তাদ্দ হয়ে গেলো দ্বিতীয় দল মুর্তাদ্দ হল আসওয়াদ আনাসী মুসাইলামা কাযযাব প্রমুখ ভন্ডনবী হয়ে এবং তাদের অনুসারি হয়ে আর তৃতীয় দল মুর্তাদ্দ হল নিজেদেরকে মুসলমান পরিচয় দেয়ার আড়ালে ইসলামের একটি জরুরী বিষয় ‘যাকাত’ অস্বীকার করার মাধ্যমে। খলীফাতুর রাসূল এদের সকলের বিরুদ্ধে সফল জিহাদ করছেন; কিন্তু সবার আগে জিহাদ ঘোষনা করেছেন শোষোক অর্থাৎ যাকাত অস্বীকার কারীদের বিরুদ্ধে। যেহেতু এরা ছিলো ‘ঘরশক্র বিভীষণ’। তাই ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতকে মুক্ত ও সাবধান করা সত্যিই জরুরী ছিলো। প্রথম প্রথম বাহ্যিকভাবে যাঁরা খলীফার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন তাঁরাও শেষ পর্যন্ত খলীফার অটল ও নির্ভুল সিদ্ধান্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন এবং তাঁর প্রশংসা করেছেন। খলীফাতুর রাসূল ঘোষণা করলেন- বিশাল অংকের যাকাত নয় বরং একটি ছাগলের ছোট বাচ্চাও যদি যাকাতের হিসেবে আসে, আর তা পরিশোধ করতে কেউ অস্বীকার করে তাঁর বিরুদ্ধেও আমি জিহাদ ঘোষণা করলাম। কারণ, ‘যাকাত’ও ইসলামের হক্ব। ওই হক্ব কাইকেও ধ্বংস করতে দেয়া হবে না
-সাহাবীরা নিজের জন্য খরচ কম গরীবের জন্য বেশী
হযরত ওসমান (রা) এর কাছে এক লোক সাহায্যের জন্য আসলে তিনি তাকে একজন সাহাবীর কাছে পাঠালেন তিনি ঘরের বাহিরে গিয়ে শুনতে পেলেন সে সাহাবী তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করছে চেরাগে বত্তি মোটা দেয়ার কারনে, কারন বত্তি মোটা লাগালে তেল বেশী খরচ হয়, তখন সে গরীব সাহাবী চিন্তা করছেন ওসমান (রা) আমাকে কোন কনজুসের কাছে পাঠালো যে কিনা স্ত্রীর সাথে সামান্য তেল খরচ বেশী হওয়ার জন্য ঝগড়া করছে, তবুও তিনি ডাক দিলেন সে লোক বাহিরে বের হলে তাকে হযরত ওসমান (রা) এর কথা বললে তিনি ঘর থেকে ১ থলে মুদ্রা এনে দিয়ে দিলেন, তিনি আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ভাই আপনি ঘরে সামান্য তেল বেশী খরচ হওয়ার জন্য ঝগড়া করছেন আর আমি বলার সাথে সাথে ১ থলে মুদ্রা বিনা প্রশ্নে দিয়ে দিলেন, তখন সে সাহাবী জবাব দিলেন ওটা ছিল আমার নিজের খরচ আর এটা হচ্ছে আল্লাহর জন্য খরচ।
কিন্তু আফসুস আজ আমরা নিজের জন্য খরচটা আলীশান ভাবে করি কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় খরচ করাটাকে মসিবত মনে করি।
অতএব আজই জাকাতের হিসাব করে নিই যে জাকাত কি জন্য দিব?
#ধন সম্পদকে ধ্বংস ও নষ্ট হওয়া থেকে হেফাজতের জন্য
#আল্লাহর অনুগ্রহ হাছিল করার জন্য
#রিজিকে বরকত লাভের জন্য
#সম্পদে বরকত লাভের জন্য
#সম্পদের ময়লা পরিস্কার করার জন্য
#আল্লাহ ও রাসুল (দ) কে সন্তুষ্ট করার জন্য
#গরীবের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য
#কিয়ামতের দিন টাক মাথা সাপের কামড় থেকে বাঁচার জন্য
#সোনা রুপার গরম ছেকা থেকে বাঁচার জন্য
#নামাজ কবুল করানোর জন্য
#জীবন থেকে সব ধরনের অনিষ্ঠতা যেমন দুঃখ কষ্ট মসিবত পেরেশানি দুর করার জন্য জাকাত দেয়া প্রত্যেক সাহেবে নিসাবের উপর জাকাত দেয়া ফরজ এবং অত্যন্ত জরুরী।
কোন মন্তব্য নেই