রমজানের আমল সমূহ। রমজান মাসে করার মত শ্রেষ্ঠ ১০টি আমল

 

রমজানের প্রথম জুমার খুতবা

রমজানের করার মত শ্রেষ্ঠ ১০টি আমল



-প্রথম আমল- নামাজ ৫০ রাকাত

আল্লাহ তায়ালা ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন সেখান থেকে কমিয়ে ওয়াক্ত করেছেন যেহেতু রমজান মাসে নেকি বেশী সেহেতু দিনে অন্তত ৫০ রাকাত নামাজ পড়ার চেষ্টা করা।

# ওয়াক্ত নামাজের ফরজ হল : ১৭ রাকাত

(ফজর + যুহর + আছর + মাগরীব + এশা + বিতির )

# ওয়াক্ত নামাজের সুন্নত মুয়াক্কাদা হল : ১২ রাকাত

(ফজর + যুহর + মাগরীব + এশা২)

রাসুলুল্লাহ () এরশাদ করেন

عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ، قَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا بُنِيَ لَهُ بِهِنَّ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ ‏"‏ ‏.‏

ম্মে হাবীবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি দৈনিক বার রাকাত নফল নামায আদায় করবে, এর বিনিময়ে আল্লাহ্ তাআলা তাঁর জন্য বেহেশতের মধ্যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। (আবু দাউদ ১২৫০)

 

ফরয ১৭ রাকাত এবং সুন্নতে মুয়াক্কদা ১২ রাকাত মোট ২৯ রাকাত। এরপর সুন্নতে যায়েদা আছে নফল ১৪ রাকাত সহ মোট ৪৩ রাকাত। ৩ রাকাত বিতির সহ ৪৬ রাকাত।

 

- হজ্ব ও ওমরা ৪০ বার বন্ধ ছিল

ইতিহাসের পাতায় দেখা যায়  ৮৬৫ সালে, ৯৩০ সালে, ১২৫৮ সালে, ১৮১৪ সালে, ১৮৩১, ১৮৯২, ১৯৭৯, ১৯৮৭ সালে এভাবে ৪০ বছর হজ্ব বন্ধ ছিল।

এমনকি ৯৩০ সালে কারামতিয়ারা কাবা ঘরে হামলা করে হাজার হাজার হাজীকে শহিদ করে জমজমকুপে লাশ ফেলে দেয়, এবং হাজরে আসওয়াদ তারা নিয়ে যায় ২২ বছর পযন্ত কাবা ঘরে হাজরে আসওয়াদ ছিলনা। ২২ বছর পর সে হাজরে আসওয়াদ পুন উদ্ধার করে কাবা ঘরের সাথে পুনরায় লাগানো হয়।

গত বছর থেকে পুনরায় মহামারীর কারনে অসংখ্য মানুষ হজ্ব ও ওমরা করা থেকে বঞ্চিত-

অনেকে রমজান আসলে ওমরাহ করেন যেহেতু গত বছর থেকে সে রাস্তা বন্ধ তাই অনেকে পেরেশান কারন রমজানে একটি ওমরা করতে পারলে আল্লাহর প্রিয় হাবীবের সাথে হজ্ব করার ছাওয়াব, তাছাড়া রমজানে সাওয়াব ৭০ গুন বেশী আর মক্কায় ১ রাকাত আদায় করলে অন্য মাসে ১ লাখ আর রমজানে আদায় করলে ৭০ লাখ হবে। তাই যারা ওমরায় যেতে পারেননা তাদের জন্য ১টি সুসংবাদ

 

-দুই রাকাত (এশরাক) সুয উদিত হওয়ার পর আদায় করলে পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ হজ্ব ওমরার সাওয়াব পাবেন

 

ن أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ

আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে পড়ে, অতঃপর সূর্যোদয় অবধি বসে আল্লাহর যিকর করে তারপর দুই রাকআত নামায পড়ে, সেই ব্যক্তির একটি হজ্জ উমরার সওয়াব লাভ হয়

বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ। অর্থাৎ কোন অসম্পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব নয় বরং পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব

-দুই রাকাত চাশতের নামাজ

মনে রাখবেন এশরাকের নামাজ ২ রাকাত পড়ে ২ রাকাত চাশতের নামাজ পড়বেন চাশতের ২ রাকাত নামাজ আপনার শরীরের ৩৬০টি জোড়ার সদকা।

তাহলে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ও এশরাক ও চাশত সহ মোট ৫০ রাকাত হয়ে গেল। এছাড়া আপনি ২০ রাকাত তারাবী এবং ৮ রাকাত তাহাজ্জুদও যদি পড়েন তাহলে নুরুন আলা নুর হবে। মোট দিনে ৭৮ রাকাত।

-রমজানের দ্বীতৃয় আমল- জবানের হেফাজত দ্বারা রোজার রক্ষানাবেক্ষন

রমজান মাসে গুরুত্বপূণ আমল হল জবানের হেফাজত করা। সলফে সালেহিন রমজানে মানুষের গীবত থেকে বেঁচে থাকতেন এবং মসজিদে বসে বসে শুধু কুরআন তেলাওয়াত করতেন, যাতে গীবত থেকে বেঁচে থাকতে পারেন। কারন গীবত থেকে বেঁচে থাকার দ্বারা রোজাকে হেফাজত করা যায়।

সুনানে তিরমিযির ৭০৫ নং হাদীস

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ بِأَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ ‏"‏ ‏.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অন্যায় কথন (গীবাত, মিথ্যা, গালীগালাজ, তুহমত, লানত ইত্যাদি) তৎবিষয়ে আমল পরিত্যাগ না করে, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই

 

-কেহ আপনার গীবত করলে কি করবেন?

হযরত হাসান বসরী (রহ) এর কাছে এক লোক দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আসলেন। তিনি বললেন (এয়া হাসান আ-তারিফু মা কানা বিল আমছ?) হাসান জানেন গতকাল কি হযেছে?

হাসান বসরী (রহ) যার স্বভাব কতই সুন্দর ছিল, তিনি কত সুন্দর করে প্রশ্ন করে বললেন- গতকালকি কোন দরসে কুরআন ছিল? (কালা লা) সে বলল না। অমুক লোক আপনার অনেক সমালোচনা করেছে।

তখন হাসাব বসরী বললেন আপনি আমাকে বলুন রাস্তায় ইবলিশ শয়তান কি আপনাকে ছাড়া আর কাউকে পেলনা? আপনি একজন মুসলমান ভায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে চলে এলেন?

এরপর হযরত হাসান বসরী একটি খেজুরের টুকরি নিলেন আর সে সমালোচনাকারীর ঘরে চলে গেলেন, গিয়ে সালাম দিলেন আর বললেন (হাজিহি হাদিয়া মিন্নি লাক) এই নিন খেজুরের হাদিয়া আপনার জন্য আমার পক্ষ থেকে কবুল করে নিন।

হাদিয়া পেয়ে গিবতকারী চিন্তায় পড়ে গেলেন আর হাসান বসরীকে প্রশ্ন করলেন কি উদ্দেশ্যে হাদিয়া দিচ্ছেন? তখন হাসান বসরী বললেন হে আমার ভাই আপনি অনেক মেহনত করে আমার গুনাহ মাফ করিয়েছেন আমাকে নেকি দিয়েছেন।আমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের হকদার বানাতে সাহায্য করেছেন। আপনি আমার জন্য েএত কিছু করেছেন আমি কি আপনাকে মিষ্টিমুখ করানোর হক রাখিনা?

দেখুন কি ‍সুন্দরভাবে সে গীবতকারীকে শিক্ষা দিলেন। এটাই হল মুখলিছ বান্দার নিশানি। কেহ প্রসংশা করুন তার পরওয়া করেনা। প্রসংশীত লোকের প্রসংশাতো সকলেই করে, আবার সমালোচনাকারীরা বড় থেকে বড় মাপের লোকেরও, আল্লাহর নেক বান্দা, এমনকি নবী রাসুলদেরও সমালোচনা করতে ছাড়েনি। আল্লাহর রাসুল (দ) এর চেয়ে মুত্তাকি দুনিয়াতে কেহ সৃস্টিও হয়নি, অথচ মুনাফিকরা উনার বিরুদ্ধেও মুখ খুলতে দ্বিধাবোধ করেনি। নাউজুবিল্লাহ। কিন্তু তবুও হুজুর (দ) সমালোচনাকারীদের সমালোচনায় কান দিয়ে নিজের মিশন থেকে বিরত হননি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমাদের নিয়তকে খালেছ করার তৌফিক দান করুন।

 

গীবত ছাড়াও আরো ৫টি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে কারন কুরআন হাদীসে আলোকে এ ৫টি কাজ করলে রোজা ব্যর্থতায় পযভুষিত হবে

১. ইফতার দেরী করে খাওয়া- সুনানে আবু দাউদ: ২৩৫৫ হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে কারণ, ইহুদি-নাসারারা ইফতার বিলম্বে করেঅতএব ইহুদী নাসারার মত দেরী করে ইফতার করা যাবেনা, বরং সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করে ফেলতে হবে

২.–সেহেরী না খাওয়া- সহিহ মুসলিম: ২৬০৪ রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো সাহরি গ্রহণ। ’

অতএব যারা বলে আমি সেহেরী না খেয়ে রোজা রেখেছি এটা কোন বাহাদুরী নয়। বরং সেহেরী খাওয়াতে আছে বরকত এবং সেহেরী খেয়ে রোজা রাখাই হল বাহাদুরী।

৩. ইফতারের সময় দোয়া না করা- জামিউস সাগির: ৩৯৩৩ হাদিসে এসেছে, ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহতায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন মুক্তির প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকেসুতরাং প্রত্যেক রোজাদারের উচিত জাহান্নাম থেকে মুক্তির সে ইফতারের মুহতে বসে বসে এসতেগফার পড়া, দোয়া দরুদ পাঠ করা, বেহুদা গল্প করে কিংবা ইন্টারনেটে সময় না কাটানো।

৪. বদগুমান- যে আমল করলে মানুষ ২৪ ঘন্টা গুনাহগার থাকে

সহিহ বুখারী শরীফের হাদীস ৬০৬৬

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوا، وَلاَ تَجَسَّسُوا، وَلاَ تَنَاجَشُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا ‏"‏‏.‏

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে চলো। কারণ অনুমান বড় মিথ্যা ব্যাপার। আর কারো দোষ খুঁজে বেড়িও না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পরকে ধোঁকা দিও না, আর পরস্পরকে হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করো না এবং পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণ করো না। বরং সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও

 

রাসুলে আকরাম () ফরমান- তোমরা বদগুমান/কুধারনা থেকে বেঁচে যাও, (ফাইন্না জ্জন্না আকজাবুল হাদিস) যখন কোন মুসলমানের ব্যপারে বদগুমান/কুধারনা পোষন করবেন সেটা ববেচেয়ে বড় মিথ্যা।

 

বুঝা গেল মুখে উচ্চারণ করা মিথ্যা ছোট হয়, আর কোন মুসলমানের ব্যপারে যখন কোন বদগুমান কুধারনা মনের মধ্যে আসে সেটা মুখে বলা মিথ্যা থেকেও বড় মিথ্যা

 

ওলামায়ে কেরাম এখানে কুধারনা ও মিথ্যার মধ্যে পাথক্য করেছেন যেমন মিথ্যা আপনি দিনে ধরুন ১০০ বার মুখে উচ্চারন করেছেন, যতক্ষন উচ্চারন করেছেন ততক্ষনই গুনাহগার হয়েছেন, কিন্তু যদি কারো ব্যাপারে আপনি বদগুমান করেন তাহলে সে বদগুমান নিয়ে যদি আপনি ঘুমান সে ঘুমের মধ্যেও আপনার সে বদগুমানের কারনে আপনার আমলনামায় মিথ্যার গুনাহ লিখা হচ্ছে।

 

আমাদের দেমাগের ডান সাইড হল পজেটিভ থিংকিং এর জন্য আর বাম সাইড নেগেটিভ থিংকিং এর জন্য, কিন্তু আফসুস আমাদের দেমাগের ডান সাইড অকেজু তবে বাম সাইড খুব বেশ একটিভ থাকে, ফলে সারাক্ষন আমরা মানুষের ব্যপারে কু খেয়াল কু ধারনা বদগুমানে লিপ্ত থাকি বিনিময়ে ২৪ ঘন্টাই আল্লাহর নাফরমান বান্দা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি। এবং গুনাহগার হিসেবে গন্য হই। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সদা পজেটেভি চিন্তা করার তৌফিক দান করুন

-মুসলমান সন্দেহযুক্ত কাজ থেকে বিরত থাকবে

অন্যের ব্যপারে কু ধারনা যেমন গুনাহ তেমনি এমন ভাবে চলাফেরাও করা যাবেনা যাতে অন্যরা কুধারনা করে, যেমন আপনি রমজানে দিনে হিন্দু হোটেলে প্রবেশ করেন সবার সামনে তখন মানুষ বুঝে নিবে যে আপনি রোজা রাখেননি, এখন কেহ যদি আপনাকে বলে আপনি রোজা রাখেননি কেন? তখন আপনি যদি বলেন আমি রোজা রেখেছি তুমি আমার ব্যপারে কুধারনা করছ - কু ধারনা মহা পাপ। আপনার এই ফতোয়া তখন কাজে আসবে না কারন আপনি নিজেই নিজের কমকান্ডের কারনে মানুষকে সন্দেহ করতে সুযোগ করে দিয়েছেন।

- অপচয় না করা -সূরা আরাফ: ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন

يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلاَ تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। [সুরা আরাফ:৩১]

 

 কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের অনেক মুসলমান ভায়েরা ইফতারের সময় এত বেশী আয়োজন করে সব খেতে পারেনা পরে তা নষ্ট করে ফেলে দেয়। যা আল্লাহর পছন্দ নয়। এবং রমজানের রোজার উদ্দেশ্যও সেটা নাই।

তাই এই কাজ গুলি থেকে আমাদের সতকতা অবলম্বন করতে হবে তাহলেই আমাদের রোজার সাথকতা অন্যথায় গোটা রমজান ব্যথতায় পযভুষিত হবে।

 

-রমজানের তৃতীয় আমল হল কুরআন তেলাওয়াত

রমজান মাস হল কুরআন নাজিলের মাস আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে এরশাদ করেন (

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ

রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন,  [সুরা বাকারা:১৮৫]

(বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৯০২) এসেছে, ‘জিবরাইল (.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং  কোরআন শরিফদাওরকরতেন অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাইল (.) একে অন্যকে কোরআন শুনাতেন

 

-কুরআন কতদিনে খতম করবেন?

এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন কতদিনে কুরআন খতম করবে? হুজুর (দ) ৪০ দিন ৩০ দিন ২৫ দিন ২০ দিন ১৫ দিন ১০ দিন ৭ দিন এবং সবশেষে বলেছেন ৩দিন।

সহিহুল জামের ১১৫৫ নং হাদীস হুজুর (দ) এরশাদ করেন (ইকরাইল কুরআনা ফি সালাসিন) যদি তোমার শক্তি থাকে তাহলে তুমি ৩ দিনেও কুরআন খতম করতে পার।

 

-ইমাম মালেক এর রমজানে কুরআন পাঠ

যখন রমজান মাস আসত তখন ইমাম মালেক কুরআন পাঠে বেশী মনযোগ দিতেন (ইজা দাখালা রামদান এয়াফিররু মিন কিরাআতিল হাদিসি) হাদীস পাঠ করা ছেড়ে দিতেন শুধু কুরআন পাঠে মশগুল হয়ে যেতেন।

 

-রমজানে কেন কুরআন নাজিল হল (তাকওয়া)

দেখুন রমজানও তাকওয়া হাছিলের মাধ্যম কুরআনও তাকওয়া হাছিলের মাধ্যম যেমন

রমজানের ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে এরশাদ করেন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। [সুরা বাকারা:১৮৩]

আবার কোরআন যদিও সমগ্র মানবজাতির জন্য অবতীর্ণ হয়েছে, কিন্তু এর দ্বারা শুধু মুত্তাকি ব্যক্তিরাই প্রকৃত উপকার লাভ করবেনতা- উল্লেখ রয়েছে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ

সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী মুত্তাকিদের জন্য, [সুরা বাকারা:]

সুতরাং বুঝা গেল রমজান এবং কুরআনের মধ্যে তাকওয়া অর্জনের মিল রয়েছে তাই এই তাকওয়া অর্জনের মাসেই আল্লাহ তাকওযা অর্জনকারীদের জন্য কুরআন নাজিল করেছেন।

-রমজানের ৪থ আমল হল তারাবী

তারাবির ফজিলত সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকীর আশায় কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে (বুখারী মুসলিম

রাসুল (সা:) তারাবিকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তারাবি যেন ফরজ না হয়ে যায়, যেটা আদায়ে উম্মতের কষ্ট হতে পারে, সেটা রাসুল (সা:) এর একটি হাদিসে থেকেই বোঝা যায়

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (.) একবার রমজান মাসে রাত্রিবেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবি) আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তার সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তারা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (.) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু ভয়ে আমি তোমাদের নিকট আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের ওপর উহা (তারাবি) ফরজ করে দেওয়া হয়। (বুখারী

তারাবি বিশ রাকাত সুন্নাত। এটা রাসুল (সা:), সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা)

সমস্ত সাহাবীদের আমলও বিশ রাকাত ছিল। রাসুল (সা:) এর নাতি হযরত আলী ইবনে হাসান (রা:) থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রা:) এর নির্দেশে লোকদেরকে নিয়ে উবাই বিন কাব (রা:) বিশ রাকাত তারাবি পড়েছেন। (আবু দাউদ)

এভাবে খলিফা ওমর, ওসমান, আলী (রা:) সহ সকল সাহাবীদের ঐক্যমতে বিশ তারাবি পড়া হয়েছে

 

করোনায় সবকিছু থমকে গেছে সংক্রমণ এড়াতে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়সহ অনেক কিছুতে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে তারাবির নামাজে সর্বোচ্চ ২০ জন অংশ নিতে পারবে বলে নির্দেশনা দেয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় যার কারণে মুসল্লিরা নিজ নিজ ঘরে এশা তারাবির নামাজ আদায় করছেন সবাই ব্যক্তিগতভাবে তেলাওয়াত, জিকির দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করছেন

 

-৫ম আমল হল ইফতার করানো খাবার বিলি করা

ইবনে মাজার ১৭৪৬ হাদীস

عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِمْ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا

যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রোযাদারকে ইফতার করায়, তার জন্য রয়েছে ইফতারকারীদের সমান সওয়াব এবং এজন্য তাদের সওয়াব থেকে কিছুই হ্রাসপ্রাপ্ত হবে না

 

-ইমাম জুহুরীর আমল (কুরআন ও খাবার বিলি করা)

হযরত ইমাম জুহুরী (রহ) এর নিয়ম ছিল যখন রমজান শুরু হল (ইজা দাখালা রামাদান কালা ফাইন্নামাহু তিলাওয়াতুল কুরআনে ওয়া ইতয়ামুত তোয়াম) যখন রমজান মাস প্রবেশ করত শুধু ২টি কাজই করতেন কুরআন তেলাওয়াত এবং ২য় মানুষকে বেশী বেশী খাবার বিলি করা।

সলফে সালেহিনের অনেকে নিজের ইফতার অন্যকে খাওয়াতেন এদের মধ্যে রয়েছেন- ইবনে উমর, দাউদ আল-তাঈ, মালিক বিন দিনার, আহমাদ ইবনে হাম্বল ইবনে উমর এতিম মিসকীনদের সঙ্গে না নিয়ে ইফতার করতেন না

-গরমে পানি দিয়ে ইফতার

ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) আরও বলেন, বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতকালে শুকনা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন এবং গ্রীষ্মকালে পানি দিয়ে

‏ قَالَ أَبُو عِيسَى وَرُوِيَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُفْطِرُ فِي الشِّتَاءِ عَلَى تَمَرَاتٍ وَفِي الصَّيْفِ عَلَى الْمَاءِ ‏.‏

 

-৬ষ্ঠ আমল হল সদকা করা

দান সদকা করা এমন একটি আমল যে আমলের জন্য ইর্ষা করা জায়েজ আছে

যেমন হাদীস শরীফে আছে - ২ ধরনের লোককে দেখে ঈর্ষা করা জরুরী। এবং তাদের মত হওযার আকাংখা করা জায়েজ। (১) যাকে আল্লাহ কুরআনের দৌলতে মালামাল করেছেন যে দিন রাত তা তেলওয়াত করে

(২) যাকে আল্লাহ সম্পদ দ্বারা ধনী করেছেন এবং সে দিন রাত আল্লাহর রাহে খরচ করে।

-সদকা দ্বারা রোগের শেফাও হয় নবী করিম (দ) এরশাদ করেন তোমরা তোমাদের রোগের চিকিৎসা সদকা দ্বারা কর।

এটা শারিরিক রোগেরও ঔষধ, ক্বলবের রোগেরও ঔষধ।

-সদকা মন সুন্দরও নরম করে

এক সাহাবী নিজের অন্তর কঠিন হওয়ার অভিযোগ নিয়ে আসলে হুজুর (দ) তাকে পরামশ দিলেন তুমি মিসকিনকে খাবার খাওয়াও এবং এতিমের মাথা হাত রাখ। অর্থ্যাৎ এতিমের দায়িত্ব গ্রহণ কর অন্তর নরম হবে সুন্দর হবে।

 

-সদকা দ্বারা সামাজিক ব্যধীও দুর হয়

এক লোক রাতের আধারে একদিন এক ধনীকে সদকা করে দিল, আরেকদিন এক জেনা করতে বের হওযা নারীকে সদকা করে দিল, আরেকদিন এক চুরি করতে বের হওয়া চোরকে দান করে দিলেন

আল্লাহ তায়ালা তার ৩টি দানই কবুল করলেন এবং তাকে সুসংবাদ শুনালেন তোমার সদকা ধনীর ব্যপারে এ জন্য কবুল হয়েছে যে সে ধনী ছিল কৃপন কিন্তু তোমার সদকা পেয়ে সেও সদকা করা শিখল

তোমার সদকা জেনাকারী নারীর ব্যপারে এ জন্য কবুল হয়েছে সে অভাবের তাড়নায় জেনা করতে বের হল কিন্তু তুমি তাকে এত বেশী দানকরেছ সে অভাব মুক্ত হয়ে গেল এবং জেনা থেকে তওবা করে নিল।

তৃতীয়ত তোমার সদকা চোরের ব্যপারেএ জন্য কবুল হয়েছে সে চোর এত বড় মাপের সদকা পেয়ে অভাব মুক্ত হয়ে গেল এবং চুরি করা ছেড়ে দিল।

-২৬টি সদকাহ

ইসলামের সৌন্দর্য্য দেখুন যারা ধন সম্পদের মালিক তারা ধন সম্পদ দিয়ে সদকা করবে কিন্তু যাদের ধন সম্পদ নাই তারা কি এই ফজিলত থেকে মাহরুম হবেন? না তাদের জন্যও সদকা করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে আজ ২৬টি সদাকার কথা বলল যা বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে জানা যায়। যেমন

মহানবী (দ) এরশাদ করেন

১) বিকুল্লি তাসবিহাতিন সাদাকাহ,

২) বিকুল্লি তাকবিরাতিন সাদাকাহ,

৩) বিকুল্লি তাহমিদাতিন সাদাকাহ।

(সুবহানাল্লাহ, আল্লাহুআকবর, আলহামদুলিল্লাহ) পড়া সদকা

৪) বিকুল্লি তাহলিলাতিন সাদাকাহ- (লা ইলাহা ইল্ল্লাল্লাহ) বলা সদকা

৫)আমরুন বিল মারুফি সাদাকাহ- (ভালো কাজের আদেশ করা সদকা

৬)নাহিউন আনিল মুনকারি সাদাকাহ- (খারাপ কাজে নিষেধ করাও সদকা

৭)ফি বুদুঈ আহাদিকুম সাদাকাহ- (বিবির হক পুরণ করাও সদকা) (হযরত আবু যর (রা) এর রেওয়ায়েত)

অপর রেওয়ায়েতে আছে

৮)এসতেগফার পড়া সদকা

৯) রাস্তা থেকে পাথর হাড্ডি কাটা রাস্তা সাফ করাও সদকা

১০)অন্ধকে রাস্তা দেখানো সদকা

১১) বোকা ও বধিরকে কথা বুঝিয়ে দেয়া সদকা

১২) যে আপনাকে সাহায্যের জন্য ডাকছে তার দিকে দৌঁড়ে যাওয়া সদকা

১৩) মানুষের সাথে ভালো কথা বলাও সদকা

অপর রেওয়ায়েতে আছে আল আদাবুল মুফরাতের ৮১ নং হাদীস

‏ مَا أَطْعَمْتَ نَفْسَكَ فَهُوَ لَكَ صَدَقَةٌ، وَمَا أَطْعَمْتَ وَلَدَكَ فَهُوَ لَكَ صَدَقَةٌ، وَمَا أَطْعَمْتَ زَوْجَكَ فَهُوَ لَكَ صَدَقَةٌ، وَمَا أَطْعَمْتَ خَادِمَكَ فَهُوَ لَكَ صَدَقَةٌ‏.‏

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ তুমি নিজেকে যা খাওয়াও তা তোমার জন্য সদাকা। তোমার সন্তানকে তুমি যা খাওয়াও তাও তোমার জন্য সদাকা, তোমার স্ত্রীকে তুমি যা খাওয়াও তাও তোমার জন্য সদকা এবং তোমার খাদেমকে যা খাওয়াও তাও তোমার জন্য সদাকা (আবু দাউদ)

 

অপর রেওয়ায়েতে আছে

১৪)কোন মুসলমানের সাথে হাসিমুখে মিলিত হওয়াও সদকা

১৫)কুল্লু মারুফিন সাদাকাহ- সব ধরনের নেক আমল সদকা।

১৬)৩ দিন মেহমানদারী করা জরুরী আর এর চেয়ে বেশী মেহমানকে খাওয়ানো সেটা সদকা

১৭) মানুষকে কষ্ট না দেয়া এটাও একটা সদকা

১৮) দুইজন মুসলমানের মধ্যে ঝগড়া মিটিয়ে তাদের মাঝে সন্ধি করে দেয়াও সদকা।

১৯) কারো বোঝা বহন করতে সাহায্য করাও সদকা

২০) নামাজের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ সদকা

২১) রোজা রাখা, হজ্ব করা, ওমরা করা, নামাজ পড়া সবই সদকা।

২২) কুল্লু করদিন সাদাকাহ- কাউকে ঋণ দেয়া সদকা

২৩) কাউকে ঋণ দিয়ে পরিশোধ করতে সময় দেয়াও সদকা

২৪) আপনি কোন ফলদার গাছ রোপন করেছেন আর তা থেকে যদি কোন পশু পাখি খেয়ে নেয় যা আপনি জানেন না সেটাও আপনার আমলনামায় সদকা লিখা হবে।

২৫) যখনই কোন মুসলমানের সাথে মিলিত হন তখন সালাম দেয়াও সদকা

 

২৬)নিজের ইজ্জতের মান সম্মানের সদকা

এক সাহাবী হযরত আবু দামদাম (রা) খুবই গরীব সাহাবী তিনি যখন সদকা করার ফজিলতের কথা শুনলেন প্রত্যেক সাহাবী সদকা করা আরম্ভ করলেন, কিন্তু আবু দামদাম গরীব হওয়ার কারনে কোন সম্পদ সদকা করতে অপারগ, তাই তিনি নবী করিম (দ) এর কাছে এসে বলেন এয়া রাসুলাল্লাহ (দ) আমার টাকা পয়সা নাই আমি সদকা করতে চাই, নবীজি প্রশ্ন করলেন তুমি কিভাবে সদকা করতে চাও? সে বলল আমি আমার ইজ্জতের সদকা করতে চাই, আজ থেকে যে কেহ যদি আমার সাথে বেয়াদবী করে, আমাকে অপমান করে অপদস্থ করে আমি আজ থেকে তার প্রতিবাদ করব না তার অপমানে বেয়াদবীতে রাগ করব না। আমি আমাকে অপমানকারীকে মাফ করে দিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (দ) বললেন হে আমার সাহাবী আল্লাহ তোমার এই সদকা কবুল করে নিয়েছেন।

 

-৭ম আমল হল তাহাজ্জুদ পড়া

সেহেরীর সময় যখন উঠেন তখন এমন একটি আমল বা ওজিফা করতে পারেন যে ওজিফাটির ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষনা করেছেন

ওজিফাটি করলে আপনার কুপ্রবৃত্তি দমন হবে, হৃদয় ও মনকে নির্মল করে দিবে। এমনকি এই আমলটি যে করে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন, এই আমলের পর আল্লাহর কাছে যা চাইবেন আল্লাহ তায়ালা তাই দিবেন।

আল্লাহ তায়ালা এমন নেয়ামত দান করবেন আপনি কল্পনাও করতে পারবে না। আসুন পবিত্র কুরআনের কোন কোন আয়াতে সে আমলটির কথা আছে একটু জেনে নিই।

আল্লাহ তায়ালা সুরা আল ইমরানের ১৭ নং আয়াতে এরশাদ করেন

الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالأَسْحَارِ

তারা ধৈর্য্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ সম্পাদনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। [সুরা ইমরান:১৭]

সেহেরীর সময়ের সে আমলটির ব্যপারে আল্লাহ সুরা সাজদার ১৬ নং আয়াতে আরো বলেন

تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ

তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। [সুরা সাজদা৩২:১৬]

 

এর পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদের যে নেয়ামত দিবেন তার ঘোষনা দিচ্ছেন


فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاء بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কি কি নয়ন-প্রীতি কর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে। [সুরা সাজদা৩২:১৭]

 

সুরা মুযযাম্মিলের ৬ নং আয়াতে বলেন

إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْءًا وَأَقْوَمُ قِيلًا

নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। [সুরা মুযযাম্মিল৭৩:]

وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا

এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে দন্ডায়মান হয়ে; [সুরা ফুরকান২৫:৬৪]

রমজানের রোজাতে সেহেরীর সময় যেহেতু উঠতেই হবে সেহেতু আপনি ১২/৮ / ৪ অথবা ২ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ে নিন তারপর আল্লাহর ওয়াদামত অফুরন্ত নেয়ামত আল্লাহর কাছে চেয়ে নিন। সকল পেরেশানি, দুঃখ, অভাব, মসিবত থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ তলব করুন। সকল রোগ শোক থেকে মুক্তি কমনা করুন, সকল সুখ সচ্ছলতার দোয়া করুন। নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে নিরাশ করবেন না। এটাই রমজানের সবচেয়ে বড় সার্থকতা।

 

 

 

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.