রমজানের প্রস্তুতি ও মাসায়ালা মাসায়েল ২০টি কমন প্রশ্নের উত্তর
রমজানের প্রস্তুতি ও মাসায়ালা মাসায়েল ২০টি কমন প্রশ্নের উত্তর
১৪৪২ হিজরী শাবান মাসের ৪র্থ ও শেষ খুতবা
খতিব মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আলকাদেরী, হাজী অলি মিয়া সওঃ জামে মসজিদ,
1. রমজানের ফজিলত কি?
2. রমজানের প্রস্তুতি কিভাবে করবেন?
3. রোজা না রাখলে কি শাস্তি হবে?
4. কি কি কারনে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ?
5. রোজার ফিদিয়া কিভাবে আদায় করতে হয়?
6. বাচ্চাদের কত বছর থেকে রোজা প্রেকটিস করতে হবে?
7. ঘুমে সকাল হয়ে গেলে কিভাবে নিয়ত করবেন?
8. ফজরের আজানের সময় সেহেরী খেলে কি হয়?
9. রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি হয়?
10. রোজা অবস্তায় ফরয গোসল (গড়গড়া/নাকে পানি) কিভাবে করবেন?
11. সেহেরী না খেলে কিভাবে রোজা রাখবেন?
12. তরকারীর লবন কিভাবে চেক করবেন?
13. রোজা রেখে তুথপেস্ট ব্যবহারের হকুম কি?
14. রোজা অবস্থায় নখ চুল কাটার হকুম কি?
15. ফরয গোসল না করে সেহেরী খাওয়া যাবে কিনা?
16. রক্ত মিশ্রিত থুথু গিলে ফেললে কি হয়?
17. থুথু গিলে ফেললে কি রোজা ভঙ্গ হয়?
18. মহিলারা বরি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা রাখার হকুম কি?
19. মসজিদে গিয়ে যদি দেখেন তারাবী শুরু হয়ে গেছে তখন কি করবেন?
20. রোজা রেখে ইনজেকশন ও টিকা গ্রহণের হকুম কি?
وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ
-রমজানের সংক্ষিপ্ত ফজিলত
#রমজান আসছে আকাশের দরজা সমুহ খুলে দেয়া হবে
#জান্নাতের দরজাসমুহ খুলে দেয়া হবে
#রহমতের দরজাসমুহ খুলে দেয়া হবে
#শয়তানকে বন্ধী করা হবে
#জাহান্নামের দরজাসমুহ বন্ধ করে দেয়া হবে
#আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকবে হে পূন্য অন্বেষনকারী অগ্রসর হও, হে মন্দের অন্বেষনকারী থাম
#এটি এমন মাস যে মাসে সকল আসমানি কিতাবসমুহ নাজিল হয়েছে ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর সহিফাগুলো রমজানের ১ম রাতে অবতীর্ণ হয়। রমজানের ৬ষ্ঠ দিনে তাওরাত অবতীর্ণ হয়। ১৩ রমজানে ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছে। জাবুর রমজানের ১৮তম দিনে অবতীর্ণ হয়। কোরআন অবতীর্ণ হয় রমজানের ২৪তম দিনে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৬৯৮৪)
#এ মাসে এমন এক রাত আছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম আর তা হল শবে কদর (লাইলাতুল কদরে খাইরুম মিন আলফি শাহার)
# যে এ মাসে ১টি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ফরয আদায় করল, আর যে ১টি ফরয আদায় করল সে যেন ৭০টি ফরয আদায় করল
#যে এ মাসে একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে তাকে এর বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেয়া হবে
#যারা রোজা রাখে তাদের জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই খোলা থাকবে যে কোন দরজা দিয়েই রোজাদার প্রবেশ করতে পারবে
# যে রমজানের রোজা ও তারাবী ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় পালন করবে তার বিগত জীবনের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে।
#রমজানের রোজা ও কুরআন রোজাদারের জন্য হাশরের মাঠে সুপারিশ করবে
#সবকিছুর প্রতিদান ১০-৭০ গুন তবে রমজানের রোজার প্রতিদান ব্যতিক্রম, আর তা হল রোজার প্রতিদান স্বয়ং মহান আল্লাহ নিজেই দিবেন।
#আর এই রোজা হল আমাদের শরীরের জাকাত যা দ্বারা মানুষ শরীরকে সব ধরনের রোগ ব্যধী বিপদ আপদ থেকে হেফাজত করতে পারেন।
-রমজানের সবচেযে বড় প্রস্তুতি কি?
একটি মশহুর হাদীস হুজুর একদিন বললেন এই দরজা দিয়ে এক জান্নাতি আসছে, সকলে দেখল এক আনসারী সাহাবী প্রবেশ করেছেন যার হাতে জুতা, দাড়িতে অজুর পানি, ২য় দিনও হুজুর বললেন এই দরজা দিয়ে এক জান্নাতি আসছে, দেখা গেল সে একই আনসারি সাহাবী প্রবেশ করলেন, ৩য় দিনও একই কথা এবং একই সাহাবী। এই সাহাবী পরপর ৩ দিন জান্নাতের সুসংবাদ পেলেন। আর সেখানে একজন সাহাবী ছিল হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস।
সাহাবীদের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ বিন আমরের মত বড় এবাদত গুজার অন্য কোন সাহাবী ছিল না। কারন হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর সারা রাত নফল পড়তেন, আর ১ দিনে এক খতম কুরআন পড়তেন, আর দিনে রোজা রাখতেন। উনাকে যখন উনার বাবা হযরত আমর বিন আস বিবাহ করিয়ে দিলেন । আর বিয়ের প্রথম রাত হযরত আবদুল্লাহ স্ত্রীর হক না দিয়ে নফল এবাদতে দাঁড়িয়ে গেলেন, স্বামী যখন নফল পড়ছেন যেহেতু তখন জামানা ছিল শ্রেষ্ঠ জামানা তাই স্ত্রীও স্বামীর পিছনে নফল এবাদতে লেগে গেলেন, সকালে যখন শশুড় বউমাকে প্রশ্ন করছেন বউমা তোমার রাত কেমন কেটেছে সে জবাব দিল মাশা আল্লাহ আপনাদের ছেলে খুবই এবাদত গুজার উনার সাথে আমার সারা রাত নফলেই কেটেছে।
হযরত আমর বিন আস এ কথা শুনে সোজা আল্লাহর হাবিবের কাছে চলে গেলেন - বললেন এয়া রাসুলাল্লাহ আমার ছেলে আবদুল্লাহ দেখুন কেমন নাদান, তাকে বিয়ে করালাম আর সে সারারাত নফল নামাজে মশগুল, স্ত্রীর হক আদায় করেনা। এ কথা শুনে হুজুর (দ) আবদুল্লাহকে ডাকলেন আর বললেন তুমি মাসে ৩ দিন রোজা রাখবে, আর ১ সপ্তাহে ১ খতম কুরআন পড়বে, কিন্তু আবদুল্লাহ বিন আমর বললেন এয়া রাসুলাল্লাহ আরো বেশী করার শক্তি আছে তাই আরেকটু বাড়িয়ে দিন, তখন সওমে দাউদ ১ দিন রোজা ১ দিন রোজা ছাড়া কাটানোর অনুমতি দিলেন আর ৩ দিনে ১ খতম কুরআন পড়ার অনুমতি দিলেন।
এখন হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর এত বেশী এবাদত গুজার হওয়া সত্বেও যখন দেখলেন আনসারী সাহাবীকে নবী করিম (দ) ৩ দিন জান্নাতি বলে ঘোষনা দিলেন, তখন তিনি সে আনসারী সাহাবীর সাথে থাকার জন্য বাহানা বানালেন বললেন আমার ঘরে আমার বাবার সাথে সামান্য সমস্য হয়েছে আপনি যদি অনুমতি দেন আমি আপনার সাথে কয়েক দিন থাক, তার মুলত উদ্দেশ্য ছিল তিনি কি আমল করেন যার কারনে জান্নাতের বেশারত পেলেন তা দেখার জন্য, যেমন কথা তেমন কাজ, আবদুল্লাহ সে আনসারী সাহাবীর ঘরে গেলেন দেখলেন আনসারী ঘুমের দোয়া পড়ে শুয়ে গেলেন আর ফজরের আজানের আগে উঠলেন, সারা রাত কোন নফল পড়েনি, শুধু ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন আর কোন অতিরিক্ত আমল করেননা, পরপর ৩ দিন তিনি আনসারী সাহাবীর আমল চেক করে হতাশ হয়ে গেলেন অবশেষে প্রশ্ন করলেন জনাব আপনার ব্যপারে আল্লাহর নবী জান্নাতের ঘোষনা দিয়েছেন, আমি মুলত আপনার আমল চেক করার জন্য আপনার সাথে থাকার বাহানা করেছি কিন্তু আমি দেখলাম আপনি তেমন কোন নফল এবাদত করেননা, আমাকে কি বলবেন আসলে আপনার এমন কি আমল আছে যার দ্বারা আপনি এত বড় মর্যাদার অধিকারী হলেন? তখন সে আনসারী সাহাবী বললেন হ্যাঁ আমার একটা আমল আছে আর তা হল আমার মনে দুনিয়ার কারো প্রতি কোন হিংসা বিদ্বেষ রাগ গোস্বা জমা করে রাখিনা, প্রতিদিন আমি আমার মনকে এসব থেকে পরিস্কার করে তারপর ঘুমাই। তখন হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বললেন হ্যাঁ এই আমলটিই মুলত আপনাকে এত বড় সুসংবাদের অধিকারী বানিয়েছেন।
প্রিয় বন্ধুরা রমজান আসছে আর এর জন্য প্রথম প্রস্তুতি হল আপনার অন্তরকে পরিস্কার করে নিন। যে অন্তরে হিংসা, বিদ্বেষ, কারো জন্য রাগ জমে আছে, তা প্রতিনিয়ত পরিস্কার করতে হবে। কারন অন্তরে ময়লা সেভাবে আসে যেভাবে উঠানে ময়লা হয়। আর আমরা নিয়মিত সে উঠান ঝাড়ু দিই। আমাদের অন্তর একটা উঠান তাতে হিংসা বিদ্বেষ রাগ সহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা এসে জমা হয়, আর তা দুর করার জন্য ঝাড়ু নিতে হবে, আর পরিস্কার করতে হবে। হে আল্লাহ মামলা আপনার কাছেই করব আর কারো কাছে করবনা। কেহ গালি দিল, কেহ গীবত করল, কেহ ধাক্কা দিল, কেহ হক মেরে দিল, হে আল্লাহ তোমার উপর সোপর্দ করলাম। এটা এত বড় সফলতা ও নেকি যে বড় বড় নফলওয়ালা, হজ্ব ওমরা ওয়ালা নেকিতে আপনার ধারে কাছেও যেতে পারবেনা। কারন নফল পড়ার লোক অগনীত আছে, সদকা কারী বেশুমার লোক আছে, হজ্ব ওমরা কারী লক্ষ লক্ষ আছে কিন্তু এই অন্তরকে পরিস্কারকারী লাখে ১জনও নাই। এটা খুবই কঠিন একটি কাজ। তাই এই কঠিন কাজ শিখে নিন। আর মনটাকে সাফ সুতরা করে নিন। এটাই রমজানের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি। আর জ্ঞান অজন করার জন্য মন সাফ করা সবচেয়ে বড় চাবি। আপনার অন্তরকে খোলা করে নিন। কারন কোন কিছু খোলা বা খালি হলেই তাতে অন্য কিছু প্রবেশ করতে পারবে। যে অন্তর হিংসা বিদ্বেষ নফরত, রাগ গোস্বা দিয়ে ভরে আছে সেখানে জ্ঞানের নুর কিভাবে প্রবেশ করবে?
-রমজানের রোজা না রাখার শাস্তি
রমজান মাস আসলে আমাদের নবীর ঘোষনা ১টি ফরয ৭০টি ফরজের বরাবর হয়ে যায়। আর নফল ফরজের বরাবর হয়ে যায়। আর নফল আর ফরজের মধ্যে পাথ্যর্ক কি? এ ব্যপারে হযরত আলী (রা) বলেন- যদি কেন ১টি ফরয রোজা ছেড়ে দেয় এবং এর বদলায় যদি সে কেয়ামত পযন্ত নফল রোজা রাখতে থাকে তবুও ১টি ফরয রোজার বদলা হবেনা। ঠিক তেমনি কেহ যদি ১ ওয়াক্ত ফরয নামাজ ছেড়ে দেয় এর বদলায় যদি কেয়ামত পযন্ত নফল নামাজ পড়তে থাকে তবুও সে ১ ওয়াক্ত ফরজের ১টি সিজদার বরাবর হবেনা।
-রোজা ভঙ্গকারীর শাস্তি মহানবীর (দ) স্বপ্ন
হযরত আবু উমামা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, অমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার নিকট দুই ব্যক্তি আগমন করল। তারা আমার বাহুদ্বয় ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে এল। তারপর আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ের উপর উঠুন। আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারব না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সহজ করে দিব। আমি উপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌছালাম, হঠাৎ ভয়ঙ্কর আওযাজ শুনতে পেলাম। অমি বললাম, এ সব কিসের আওয়াজ? তারা বলল, এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ। তারপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশী দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এবং তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোযা ভেঙ্গে ফেলে। (-সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ১৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৭৪৪৮)
-কোন-কোন অবস্থায় রোজা না রাখা জায়েজ?
وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ
আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; [ সুরা বাকারা ২:১৮৫ ]
ফোকাহায়ে কেরাম কুরআন ও হাদীসের আলোকে কিছু ওজরের কথা বয়ান করেছেন যে সব কারনে রোজা না রাখা জায়েজ যেমন
(১) সফর - আর সফর বলা হয় কেহ যদি নিজ শহরের সীমানা থেকে বাহিরে বের হয়ে যায়, এবং নিয়ত এটা থাকে যে কমপক্ষে ৯২ কিলোমিটার দুরে যাবে, তাহলে তিনি শরীঈ ভাবে মুসাফীর বলে গন্য হন। অর্থ্যাৎ এতে ২টি শত (ক) শহরের সীমানা অতিক্রম করা (খ) কমপক্ষে ৯২ কিলোমিটার দুরে যাওয়ার নিয়ত করা। এখন সে যখন নিজ শহর সীমা থেকে বের হবে তখন থেকে সে মুসাফির হিসেবে গন্য হবে। আর ৯২ কিলোমিটার দুর যে জায়গায় গিয়েছে সেটা যদি তার জন্মস্থান হয়, যাকে পৈত্রিক ভুমি বলা হয়, অথবা এমন শহরে সে প্রবেশ করেছে যেখানে তার স্থায়ী নিবাস আছে। যখনই সে স্থায়ী নিবাস বা পৈত্রিক ভুমি বা জন্মস্থানে সে প্রবেশ করবে তখন তার মুসাফারাত শেষ হয়ে যাবে।
যদি এমন না হয় অর্থ্যাৎ জন্মস্থান বা স্থায়ী নিসাব না হয় তখন সে শহরে ১৫দিনের কম থাকার নিয়ত করে তাহলে মুসাফির হবে আর ১৫ দিনের বেশী থাকার নিয়ত করলে মুসাফির বলে গন্য হবেনা। আর এমন মুসাফিরের জন্য রোজা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে।
তবে কেহ যদি মুসাফির অবস্থায় রোজা রাখতে চাই তাহলে রাখতে পারবে আর রোজা রাখাটাই উত্তম। তবে সে যদি রোজা না রাখে তাহলে গুনাহগার হবে
তবে একটি মনে রাখবেন রোজা তখন ছাড়তে পারবে যদি মুসাফির অবস্থায় সেহেরীর সময় হয়, সুতরাং উদাহারন হিসেবে ঢাকায় আমার ঘর আমি ঢাকায় থাকি আর যদি আমি আগামী কাল সকালে চট্টগ্রাম সফরে বের হই, আর ঘরে সেহেরী খেয়েই বের হই তাহলে আগামী কালের সফর আমার জন্য রোজা ভাঙ্গার ওজর নয়। বরং ঘর থেকে সেহেরী খেয়ে বের হলে পরের দিন রোজা রাখতে হবে। হ্যা আমি যদি ঢাকা থেকে বের হয়ে সফর শুরু করে দিলাম এবং কমপক্ষে ৯২ কিলোমিটার দুরে যাওয়ার নিয়ত থাকে এখন দিন অতিবাহিত হয়ে সফর অবস্থায় রাত চলে আসে সেহেরীর সময় চলে আসে তাহলেই আমি পরের দিনের রোজা ছাড়তে পারব।
২। গর্ভবতী হওয়া- যদি গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাহলে রোজা ভাঙ্গার এজাজত আছে।
আর ক্ষতি কিভাবে নির্নয় করা যাবে?
ক্ষতি ৩ তরিকা থেকে যে কোন ১ তরিকায় প্রমাণিত হবে।
(১) কোন অভিজ্ঞ ডাক্তার যিনি কিছুটা হলেও আল্লাহকে ভয় করেন তিনি যদি বলে রোজা রাখলে মা বা সন্তানের ক্ষতি হবে তাহলে রোজা ভাঙ্গতে পারবে।
(২) পূর্বের অভিজ্ঞতা- সে যদি আগে কখনো গর্ভবতী হয় এবং রমজানের রোজা রাখার ফলে শরির খারাপ হয়ে যায়, সেটার উপর ভিত্তি করেও গভবতী মহিলা রোজা ভাঙ্গতে পারবে।
(৩) বর্তমান পরিস্থিতি- যদি কোন ডাক্তারও বলেনি, কিংবা পূর্বের কোন অভিজ্ঞতাও না থাকে তবে রোজা রাখার পর শরীর খারাপ হতে থাকে তাহলে তাৎক্ষনিক পরিস্থিতিতে গর্ভবতী মহিলা রোজা ভঙ্গ করতে পারবে।
৩। বাচ্চাকে দুধ পান করানো- দুধ দানকারী মা যদি রোজা রাখে তাতে নিজের ও সন্তানের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, কিংবা কোন ডাক্তার নিষেধ করে অথবা তাৎক্ষনিক শরীর খারাপ হয়ে যায় তাহলে রোজা ভঙ্গ করতে পারবে।
৪। রোগ হওয়া- এমন রোগ হওয়া যদি রোজা রাখে তাহলে রোগ বৃদ্ধি পাবে, কিংবা সুস্থ হতে দেরী হয়ে যাবে, কিংবা যদি রোগাক্রান্ত অবস্থায় রোজা রাখলে যদি প্রাণ নাশের সম্ভাবনা থাকে তাহলে রোজা ভঙ্গ করতে পারবে। তবে শত হল আগের ৩টি (১) যদি ডাক্তার বলে (২) পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা থাকে (৩) বতমানে তাৎক্ষনিক ভাবে শরীর খারাপ হয়ে যায়।
অনেকে সামান্য জ্বর সর্দি কাশি, মাথা ব্যথার কারনে যে রোজা ছেড়ে দেয় তা সহিহ নয়।
৫। বৃদ্ধ- যদি কোন খুব বৃদ্ধ হয়ে যায় আর সে বয়সের দুর্বলতার কারনে যদি রোজা রাখতে না পারে, তাহলে সে রোজা ছাড়তে পারবে। যদি পরবর্তীতে শরীর সবল হয় সুস্থতা ফিরে আসে তাহলে তার কাজা করে দিবে। আর যদি সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভবনা না থাকে এমন অবস্থায় সে রোজার ফিদিয়া দিতে পারবে। তবে অনেকে বৃদ্ধাবস্থায়ও রোজা রাখে। যদি সে রকম হিম্মত থাকে তাহলে রোজা রাখা ভালো। কিন্তু কেহ যদি হিম্মত করতে না পারে তাহলে বৃদ্ধ জনিত কারনে রোজা ছাড়তে পারবে।
-ফিদিয়া: ফিদিয়া হল, প্রতি রোযার জন্য একজন মিসকিনকে দুইবেলা খানা খাওয়ানো বা এর সমমূল্য প্রদান করা। যা সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা।
সেই হিসেবে প্রতিটি রোযার জন্য একটি সদকায়ে ফিতির পরিমাণ অর্থ ফিদিয়া হিসেবে গরীবকে দান করে দিবে। বা একজন মিসকিনকে দুইবেলা খাবার খাওয়াবে।
وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ۖ
আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে [সূরা বাকারা-১৮৩]
৬। মৃত্যুর ভয়- রোজা রাখলে মৃত্যুর ভয় থাকলেও রোজা ছাড়তে পারবে, তবে তখনও কোন ডাক্তার বলতে হবে কিংবা পূর্বের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা বতমান পরিস্থিতিতে যদি শরীর বেশী খারাপ হয় তখন রোজা ছাড়ার অনুমতি আছে
৭। একরাহ- যদি কেন গান পয়েন্টে রোজা ভঙ্গ করতে বলে আর যদি না ভাঙ্গেন তাহলে সে যদি সত্যি সত্যি গুলি করে দিবে বা হত্যা করে ফেলবে এমন ভয় হলে জান বাঁচানোর জন্য রোজা ভাঙ্গতে পারবে।
৮। কঠিন কাজ- যদি কেহ কোন হাড ওয়ার্ক করে, আর তার কাছে সে কাজটি ছাড়া ঘর চালানোর জন্য ভিন্ন কোন কাজ না হয় এমন অবস্থায় একান্ত অপারগ হলে রোজা ছাড়তে পারবে। এমন লোককে মজবুরে মখজ বলে।
তবে যদি রমজানে সে কাজ ছাড়া তার কাছে অন্য কোন অপশন থাকে, কিংবা কাজের টাইম পিরিয়ড কমিয়ে দেয়, কিংবা সে এমন হাডওয়াক করেও রোজা রাখতে সক্ষম হয় তাহলে অবশ্যই রোজা রাখবে।
৯। নারীদের হায়েজ নিফাস- কোন নারীর যদি হায়েজ নিফাস হয় তখন তার জন্য রোজা ছাড়ার এজাজত আছে।
-রোজা কার উপর ফরয?
প্রত্যেক আকেল, বালেগ, মুসলমান, নারী পুরুষ যে মুসাফির নয় রোগাক্রান্ত না হয়, রোজা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে এমন যদি না হয় তার উপর রোজা রাখা ফরজ। এটা ফরজে আইন। বিনা ওজরে রোজা ছেড়ে দেয়া কঠিন গুনাহের কাজ। আর কেহ যদি রোজাকে ফরজ বলে না মানে তাহলে সে ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাবে।
যারা মামুলি কারনে রোজা ছেড়ে দেন তাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। আমাদের বাংলাদেশেও এমন পরিবার আছে যে সম্পূণ পরিবারের কেহ রোজা রাখেনা। অনেকে সিগারেটের নেশার কারনে, পানের কারনে, রোজা ছেড়ে দেয়। মনে রাখবেন এটা কঠিন কবিরা গুনাহ।
-বাচ্চাদের কখন থেকে রোজা রাখাতে হবে?
বাচ্চা যখন ১০ বছর হয়ে যায় তখন তাঁকে রোজা রাখার জন্য তাগিদ দিবেন। নবী করিম (দ) ফরমান বাচ্চা যখন ৭ বছর বয়সের হবে তখন তাকে নামাজের হকুম দাও আর যখন ১০ বছর হয়ে যায় তখন মেরে নামাজ পড়াও।
এখন নামাজও ফরয রোজাও ফরয, যদিও রোজার ব্যপারে মহানবীর পক্ষ থেকে বাচ্চাদেরকে কঠোরতার নির্দেশ দেননি, কিন্তু এ থেকে ইশারা হয যে বাচ্চা যখন ১০ বছর হয় তখন তাকে রোজা রাখতে বলুন। যেহেতু নামাজ ফরয হওয়ার আগে নামাজের ব্যপারে কঠোরতার নির্দেশ দিয়েছেন, সেহেতু রোজার ব্যপারেও চিন্তা ভাবনা করা উচিত।
অনেকে বাচ্চা ছোট বলে বলে বাচ্চাকে রোজা রাখতে উৎসাহ দেয়না, ফলে বাচ্চা রোজা কাজা করতে অভ্যস্থ হয়ে যায়। ফলে বালেগ হওয়ার পরও সে রোজা রাখতে সাহস করেনা।
অনেক ঘরে দেখা যায় ছোট ছোট বাচ্চাও মাশাল্লাহ রোজা রাখে, সে রকম ছোট থেকে ২/৩টি করে রোজা রাখালে সে বালেগ হওয়ার পর আর রোজা ছেড়ে গুনাহে কবিরা করবেনা। সুতরাং ১০ বছর থেকে বাচ্চাদের ৩০টি রোজা না হউক প্রতি বছর বালেগ হওয়ার আগে কয়েকটি করে রোজা রাখা শুরু করে দেয়া উচিত।
-রোজার নিয়তের বিধান
নিয়ত অন্তরের পোক্তা এরাদাকে বলে, কোন কাজ করার সঠিক ইচ্ছাকে সে কাজের নিয়ত বলে। সুতরাং আমরা মুখে যে দোয়াটি পড়ি যাকে আমরা রোজার নিয়ত বলি তা পড়া জরুরী নয়। যদি আপনার মনে নিয়ত থাকে যে আমি আগামী কাল রোজা রাখব তাহলেই যথেষ্ট হবে।
সুর্য ডুবার পর থেকে ফজরের আগ র্পযন্ত মনে মনে খাঁটি ইচ্ছা পোষন করে নিলে নিয়ত হয়ে যাবে।
সুতরাং কেহ যদি রাতে ঘুমায় এবং নিয়ত থাকে আগামীকাল রোজা রাখব আর সেহেরীতে উঠব কিন্তু তিনি সেহেরীর সময় জাগ্রত হলেননা, ফজরের পর ঘুম ভাঙ্গল, সেহেরী খেতে পারলেন না, যেহেতু রাতে ঘুমানোর সময় নিয়ত ছিল তাই সেহেরী না খেলেও রোজা রাখতে পারবে।
তবে কেহ যদি রাতে ঘুমানোর সময় নিয়ত করে যে সে আগামীকাল রোজা রাখবে না, সে হিসেবে সে সকালে ঘুম থেকে উঠল সকাল ৮টায়, এখন সে যদি দ্বিপ্রহরের আগে আগে রোজার নিয়ত করে নেয় তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে।
সুতরাং রোজার নিয়ত সারা রাতও করা যায় এবং পরের দিন দাহওয়ায়ে কুবরা বা দ্বিপ্রহরের আগে আগেও রোজার নিয়ত করতে পারবে।
তবে কেহ যদি দিনে নিয়ত করে তাহলে সে এই নিয়ত করবে যে আমি ফজর থেকে রোজা আছি। এমন নিয়ত করবে না যে আমি এখন থেকে রোজা আছি।
-সেহেরীর বিধান
রোজার জন্য সেহেরী খাওয়া সুন্নত। এটা ফরজ বা ওয়াজিব নয়, সুতরাং কেহ যদি সেহেরী না খায় তাহলে রোজা রাখতে পারবে। ইচ্ছাকৃত সেহেরী না খেয়ে রোজা রাখা বাহাদুরী নয়। অনেকে বলে আমি সেহেরী ছাড়া ১০টি রোজা রেখেছি, এটা বাহাদুরীর বিষয় নয়। বরং সেহেরীতে যেহেতু বরকত আছে সেহেতু সেহেরীর নিয়তে ১টি খেজুর একঢোক পানি হলেও খাওয়া সুন্নত। আর কোন কারনে খেতে না পারলে তাতে রোজা রাখার ব্যপারে কোন বাঁধা সৃষ্টি হবেনা।
আর মনে রাখবেন সেহেরীর সময় উঠে পরের দিন রোজা রাখার নিয়তে কিছু খাওয়াও এক প্রকারের রোজার নিয়ত।
-সেহেরীর শেষ সময়
وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ [٢:١٨٧]
আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। [সূরা বাকারা-১৮৭]
আমি প্রায় সময় বলি সেহেরীর শেষ সময় ফজরের আজানের সাথে সম্পর্কিত নয়। অনেকে ফজরের আজান দিলে তখন সেহেরী খাওয়া বন্ধ করে। তাদের জেনে রাখা প্রয়োজন যে ফজরের আজান দেয়া হয় ফজর হওয়ার পর। আর সেহেরী শেষ করতে হবে ফজরের আগে। তাই কেহ যদি ফজরের আজান দেয়ার সময়ও সেহেরী খাই মুলত তার রোজা হবেনা। কেননা ফজরের সাথে সাথেই রোজা শুরু হয়ে যায়। আর ফজরের আজানের জন্য শত হল ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরে আজান দেয়া। অর্থ্যাৎ ফজর শুরু হওয়ার পরে আজান দেয়া। কেহ যদি ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে আজান দেয় তা কবুল হবেনা। যারা এ ধরনের ভুল করেছেন তাদের রোজা হয়নি এবং এমন কাজের কারনে তারা গুনাহে কবিরার মুরতাকিব হবেন। যারা এতদিন এমন কাজ করেছেন তারা খালেস তওবা করে িনবেন। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাকারী।
১৪ এপ্রিল সেহেরীর শেষ সময় ৪:১২ আর ফজর হবে ৪:১৭
মনে রাখবেন সেহরীর শেষ সময় যেটা কেলেন্ডারে লেখা থাকে সতকতা বশত তারো ৫ মিনিট আগে সেহেরী শেষ করে নিবেন। সেহেরীর শেষ সময়ের আরো প্রায় ৫/১০ মিনিট পরেই ফজরের আজান দেয়, সুতরাং ফজরের আজান হওয়ার অন্তত ১0 মিনিট আগে সেহেরী শেষ করবেন।
-রমজানের রোজার কিছু কমন প্রশ্ন
১। স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হয় কিনা?
রোযা রাখা অবস্থায় দিনের বেলা স্বপ্নদোষ হলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلاَثٌ لاَ يُفْطِرْنَ الصَّائِمَ: الحِجَامَةُ، وَالقَيْءُ، وَالاِحْتِلاَمُ
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। তিন কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না: সিঙ্গা লাগানো, বমি করা এবং স্বপ্নদোষ হওয়া। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৭১৯,
২। দিনে এহতেলাম হয়ে গোসল ফরয হয়ে গেলে কিভাবে গোসল করব?
দিনে যদি এহতেলাম হয়ে গোসল ফরয হয়ে যায় তখন গোসলের সব নিয়ম ঠিক থাকবে তবে গড়গড়া করবে না বরং ভালো ভাবে কুলি করবে, নাকের নরম স্থানে পানি পৌছানোতে বেশি চেষ্টা করা প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিকভাবে কুলি ও নাকে পানি দিবে। গড়গড়া ও নাকের গভীরে পানি প্রবেশের চেষ্টা না করাই উচিত। গোসল আদায় হবে যাবে। পেরেশান হবার কোন কারণ নেই।
قوله: “غسل الفم والأنف” أي بدون مبالغة فيهما فإنها سنة فيه على المعتمد (طحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الطهارة، فصل بيان فرائض الغسل–102
৩।সেহরী খেয়ে নিয়ত না করে ঘুমিয়ে পড়লে রোযা হবে কি?
রমজানের রাতে সেহরী খাওয়া মানেই রোযার নিয়ত করে ফেলা। আলাদাভাবে আর কোন নিয়তের প্রয়োজন নেই। যেহেতু আপনি রাতের বেলা রোযার জন্যই খানা খেয়েছেন, উক্ত খানা খাওয়াটাই রোযার নিয়ত হিসেবে ধর্তব্য হয়ে গেছে। আলাদাভাবে আর কোন নিয়তের দরকার নেই।
৪। তরকারীর স্বাদ বুঝার জন্য তরকারী মুখে নিয়ে চেখে দেখলে রোযা হবে কি?
তরকারীর লবন চেক করার জন্য সামান্য জিহ্বাতে লাগিয়ে আবার থুথু ফেলে দিলে তাতে রোজার ক্ষতি হবেনা, তবে স্বাদ যেন হলকে না পৌঁছে।
৫।রোজা রেখে তুথপেস্ট ব্যবহার করা কি যাবে?
রোজা রেখে এমন কিছু ব্যবহার করা যার স্বাধ অনুভুত হয় তা জায়েজ নাই, এখন কেহ যদি তুথপেস্ট ব্যবহার করে তার একটি স্বাদ আছে সেজন্য রোজা অবস্থায় তুথপেস্ট ব্যবহার করবেন না, তবে মিসওয়াক ব্যবহার করবেন। কিংবা খালি ব্রাশ তুথপেস্ট ছাড়া ব্যবহার করবেন।
৬। রোযা রেখে চুল নখ কাটলে বা মাথার চুল কাটলে রোযার কোন ক্ষতি হয় কি?
রোযা অবস্থায় উপরোক্ত কাজ করলে রোযা ভঙ্গ হয় না। [কিতাবুল ফাতাওয়া-৩/৩৮৩]
৭। অসুস্থ্য ব্যক্তি রোযার মাসের শুরুতেই পুরো মাসের ফিদিয়া আদায় করে দিতে পারবে কি?
রোগী যেমন হয় যে, তার ভাল হবার কোন সম্ভাবনাই না থাকে, তাহলেই কেবল রোযার মাসের শুরুতেই পুরো রমজানের ফিদিয়া আদায় করতে পারবে। আর যদি রোগী ভাল হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে প্রতি রোযা কাযা হবার পর ফিদিয়া আদায় করবে (রদ্দুল মুখতার ৩/৪১০)3
৮। ফরজ গোসল না করে সেহরী খেয়ে সকালে গোসল করলে রোযা হবে কি?
গোসল ফরয হলে যদি সেহেরীর সময় গোসল করতে করতে সেহেরীর ওয়াক্ত চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে অজু করে সেহেরী খেয়ে নিবে, এরপর গোসল করে নিবে, তবে গোসলের বাহানা দিয়ে যেন ফজরের নামাজ কাজা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيقٍ العُقَيْلِيِّ، قَالَ: كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الأَعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلاَةِ.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাকীক রহঃ বলেছেন, হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ কোন আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফরী মনে করতেন না শুধু নামায ব্যতীত। অর্থাৎ নামায ছেড়ে দেওয়াকে তারা কুফরীর প্রায় নিকটবর্তী কাজ মনে করতেন। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬২২]
৯। রোযাদারের রক্ত মিশ্রিত থুথু পেটের ভিতরে চলে গেলে রোযার হুকুম কী?
যদি থুথু ও কফের তুলনায় রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হয়, আর তা গলার ভিতর চলে যাওয়া নিশ্চিত হয়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা করিয়ে নেয়া উচিত। অনিচ্ছাকৃত ভঙ্গ হওয়া রোযা পরবর্তীতে কাযা করে নিতে হবে।
وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ [٢:١٨٥]
আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। [সূরা বাকারা-১৮৫]
১০। রোজার সময় ওযু করার পর মুখে যে পানি বা থুথু থাকে তা কি খাওয়া যাবে, খাওয়া না গেলে থুথু কতবার ফেলতে হবে?
রোযা রেখে স্বাভাবিকভাবে কুলি করার পর মুখে যে পানির সামান্য সিক্ততা অনুভূত হয়, সেই ঢুক গিলে ফেলার দ্বারা রোযার কোন সমস্যা হয় না। তবে ইচ্ছাকৃত ঘন ঘন কুলি করে শীতলতা নেয়া যাবেনা।
থুথু- আর অনেকে রোজা রেখে বার বার থুথু ফেলে সে ভাবে থুথু গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে, এটা ঠিক নয়, থুথু গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়না তবে কেহ মুখে থুথু জমা করে তা গিলে ফেলা মাকরুহ।
১১। রোজা রেখে ভুলে কিছু খেয়ে ফেললে রোজার কি হবে?
ভুলে পানাহার করলে রোযা ভঙ্গ হয় না। যেমন নবীজি ফরমান-
যে ব্যক্তি ভুলে আহার করল বা পান করল সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে।
(ফাইন্নামা আতআমাহুল্লাহু ওয়াসাকাহু) কারণ আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।-সহীহ মুসলিম ১/২০২
১২। মেডিসিন খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ করে মহিলাদের রোজা রাখার প্রচলন কতটুকু বৈধ?
মহিলারা যদি মেডিসিন নিয়ে ৩০ রোজা রাখে তা জায়েজ তবে ইসলামীক বিধান মতে এটি পছন্দনীয় নয়, কারন মহিলাদের জন্য এটি একটি খোদা প্রদত্ত নেচারেল বিষয়, সেটিকে যখন বাধা গ্রস্থ করা হয় তখন তা পরবর্তীতে নানা ধরনের শারিরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তাই এটি যদিও জায়েজ তবুও পছন্দনীয় আমল নয় এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও এটি একটি ক্ষতিকর বিষয়। তাই মহিলাদের উচিত নেচারেল পদ্ধতিতে কায়েম থাকা এবং যে কটি রোজা ভঙ্গ হয়েছে সেগুলি রমজান পরবর্তীতে সুযোগ সুবিদা মত কাজা করে দেয়া।
১৩। মসজিদে গিয়ে যদি দেখেন তারাবী শুরু হয়ে গেছে তখন কি এশা পড়বেন নাকি তারাবীতে শরিক হবেন?
-মসজিদে গিয়ে যদি দেখেন তারাবী শুরু হয়ে গেছে আর আপনি যদি এশা নামাজ না পড়েন তাহলে আগে এশা পড়ে নিবেন তারপর তারাবী পড়বেন, যে কয় রাকাত তারাবী ছুটে গেছে তা পরে পড়ে দিবেন।
১৪। কি করলে রোজা ভঙ্গ হয়না
(১) ভুলে পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হয়না (২) চোখে সুরমা লাগালে রোজা ভঙ্গ হয়না, (৩) রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরলে বা চুমু খেলে যদি বীযপাত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়না (৪)অনিচ্ছাকৃত বমি হলে রোজা ভঙ্গ হয়না (৫) শরীরে ও মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হয়না। (৬)অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতর ধুলা-বালি, ধোঁয়া অথবা মশা-মাছি প্রবেশ করা (৭)নিজ মুখের থুথু, গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়না।(৮) রোজা অবস্থায় এহতেলাম হলে (৯) কানে পানি প্রবেশ করলে (১০) ইনজেকশন ব্যবহার করলে- একদল ফোকাহার মতে রোজা ভঙ্গ হয়না, আরেক দল ফোকাহার মতে ভঙ্গ হয়। এখন আপনি যদি যে সব ফোকাহায়ে কেরাম রোজা ভঙ্গ হয়না বলে মত প্রকাশ করেছেন তাদের ফলো করে ইনজেকশন লাগান তাহলে আপনার রোজা হয়ে যাবে এবং আপনি রোজা ভঙ্গকারী হিসেবে গুনাহগার হবেন না।
-রমজানে জন্য ৯টি প্রস্তুতিমুলক কাজ
১। যারা বিগত বছর কোন রোজা কাজা করেছেন তারা আগামী রমজান আসার আগেই বিগত সব গুলি রোজার কাজা আদায় করে নিন। বিশেষ করে মহিলারা পিরিয়ডের রোজাগুলির কাজা আদায় করে নিবেন।
২। এমন কিতাব পড়ুন যা পড়ার পর এই মহান মাসটিতে যেন কোন ধরনের ভুল ভ্রান্তি না হয়। কিংবা এমন লেকচার শুনুন যাতে রমজানের রোজাকে যথাযথভাবে আদায় করা যায়।
৩।ঘরের সকল সদস্যদের সাথে রমজানের ব্যপারে আলাপ আলোচনা করে সকলেই রমজানের রোজা ও এবাদতের ব্যপারে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করুন
৪। রমজানে প্রয়োজন হবে এমন সব কিছু কিনে ফেলুন যেন রমজানে বারবার বাজারে গিয়ে সময় নষ্ট করতে না হয়।
৫।জাকাত ও সদকার হিসাব করে টাকা ভাংতি করে রাখুন কাকে কাকে কত করে দিবেন তার লিষ্ট তৈরী করে রাখুন। যাতে রোজা অবস্থায় এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে না হয়।
৬।রমজানে কুরআন তেলাওয়াত, নফল এবাদত, জিকির দোয়া, এসব কিছুর জন্য সময়সুচী তৈরী করে নিন। মনে রাখবেন রমজান মাস দোয়া কবুল করানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময় তাই এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবেনা।
৭। এই নিয়ত করে নিন এবারের রমজানে ঈমানী, রুহানি, আখলাকি উন্নতি হাসিল করবেন, বিগত রমজান থেকে এবারের রমজানে আরো বেশী এবাদত করবেন। আরো বেশী তাকওয়া হাসিল করবেন।আরো বেশী দোয়া করবেন। আরো বেশী তাহাজ্জুদ পড়বেন, আরো বেশী কুরআন মুখস্থ করবেন, আরো বেশী কুরআন বুঝবেন।
৮। টিভি দেখা, স্যোশেল মিডিয়ায় সময় কাটানো, বেহুদা গল্প গুজব, আড্ড বাজি, পবিত্র মেগাজিন, গল্প বই পড়া এসব কাজ থেকে রমজানে সম্পূণভাবে বিরত থাকার নিয়ত করে নিন। এবং সে সময়টুকুতে কুরআন পড়া, কুরআন শুনা, কুরআন বুঝাতে ব্যয় করুন। দোয়া দরুদের মধ্যে কাটানোর এরাদা করুন, কারন হতে পারে এই রমজানই আপনার জন্য জীবনের শেষ রমজান। দেখুননা গত বছর আপনার কত পরিচিত জন রমজান পালন করেছেন কিন্তু এ বছর তারা কবরের বাসিন্দা হয়ে গেছেন। তাই রমজানকে গনিমত মনে করে আমল করার নিয়ত করুন।
৯। রমজানের চাঁদ দেখে দোয়াটি পড়বেন
হজরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন-
اَللهُ اَكْبَرُ اَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَ الْاِيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَ الْاِسْلَامِ وَ التَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَ تَرْضَى رَبُّنَا وَ رَبُّكَ الله
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস্সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিকি লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ : আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তাওফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেক মুসলমান নর নারীকে রমজানের রোজাকে যথাযথভাবে গুরুত্বের সাথে আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন
কোন মন্তব্য নেই