বদর যুদ্ধের গুরুত্ব, শবে কদরের নামাজ দোয়া আমল ও এতেকাফের মাসায়ালা

 বদর যুদ্ধের গুরুত্ব, শবে কদরের দোয়া আমল ও এতেকাফের মাসায়ালা




لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। [সুরা ক্বদর - ৯৭:৩]

-বদর যুদ্ধ
আজ ১৭ রমজান। ঐতিহাসিক বদর দিবস। হিজরি দ্বিতীয় সনের এ দিনে বদর প্রান্তরে রাসূল (সা.)-এর নেতৃত্বে মক্কার কুফরি শক্তির বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র যুদ্ধ হয় ইতিহাসে তাই বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ। মক্কার কাফেররা রাসূল (সা.) এবং মুমিন বাহিনীকে মক্কা থেকে বের করে দিয়েই চুপ করে বসে থাকেনি, তারা ইসলামকে শেষ করে দেয়ার জন্য নানা ফন্দি আঁটতে থাকে
সে সুবাদে আবু সুফিয়ান মক্কার কাফেরদের কাছ থেকে প্রচুর স্বর্ণালংকার নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সমরাস্ত্র সংগ্রহে যায়, আর সে তার সে কাফেলা নিয়ে যখন মক্কায় ফিরিছিল মদীনার পাশ দিয়েই যেতে হবে, তাই হুজুর (দ) ৩১৩ জন নিরস্ত্র সাহাবীকে নিয়ে আবু সুফিয়ানের বানিজ্য কাফেলাকে আটকাতে বের হলেন,
যুদ্ধের নিয়তে নয় বরং আবু সুফিয়ান যে সব অস্ত্র সস্ত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল তা আয়ত্বে নেয়ার নিয়তে বের হলেন।

এদিকে আবু সুফিয়ানও সতর্ক দৃষ্টি রাখছিল, সে একটি কুয়ার পাশে উটের গোবর দেখল সে গোবর হাতে নিয়ে দেখল তাতে খেজুরের বিচি এবং সে বুঝতে পারল এই উট মদীনার এবং সে আরো আঁচ করে নিল মুহাম্মদ (দ) হয়ত তাকে পথে বাঁধা দিবে তাই সে রাস্তা পরিবতন করে ফেলল এবং একজন অশ্বারোহিকে মক্কায় পাঠিয়ে দিল খবর দিল যে সে মদীনায় মুসলমানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।

সে খবর পেয়ে আবু জেহেল ১০০০ সশস্ত্র সৈন্য নিয়ে দ্রুত রওয়ানা হয়ে গেল, এদিকে মুসলমানরা বদর প্রান্তরে এসে অনাকাংখিত ভাবে আবু জেহেলের বিশাল সশস্ত্র বাহিনির সামনাসামনি হয়ে গেল, আর এক অসম যুদ্ধ শুরু হল
মুসলিম বাহিনী
>> সৈন্য সংখ্যা : ৩১৩জন। মুহাজির ছিলেন ৮২ জন। আর সবাই আনসার। আওস গোত্রের ৬১ জন এবং খাজরাজ গোত্রের ১৭০ জন।
>> মুসলিম সেনাপতি : বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
>> মুসলিমদের উট ও ঘোড়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে : ৭০টি ও ২টি।
>> মুসলিম বাহিনী শহীদ হয় : ১৪ জন। (৬জন মুহাজির, ৮জন আসনার)
>> আবু জাহেলকে হত্যা করেন ২ ভাই : হজরত মুআজ ও মুআওয়েজ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।

কুরাইশ বাহিনী
>> অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা ১০০০জন।
>> কুরাইশ বাহিনীর ছিল অসংখ্য উট। ১০০টি ঘোড়া এবং ৬০০ লৌহবর্ম। কুরাইশ বাহিনীর জন্য প্রতিদিন ৯-১০টি উট খাওয়ার জন্য জবাই করা হতো।
>> অমুসলিম সেনাপতি : ওতবা বিন রবীআ।
>> অমুসলিম নিহত ৭০ জন এবং বন্দিও হয় ৭০ জন।
>> বদর যুদ্ধে কুরাইশদের প্রায় গোত্র অংশগ্রহণ করলেও বনু আদি গোত্রের কেউ এই যুদ্ধে অংশ নেয়নি।

- বদর যুদ্ধে ফেরেশতা
এই অসম যুদ্ধের আগে হুজুর (দ) আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন আর সে দোয়ার ফলে আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাইল (আ) এর নেতৃত্বে ৫০০ এবং হযরত মিকাঈল আ এর নেতৃত্বে ৫০০ মোট ১০০০ ফেরেশতা প্রেরণ করেন। ফেরেশতারা এই যুদ্ধেই প্রথম অস্ত্র চালিয়েছেন। অন্যথায় ফেরেশতাদের কাজ যুদ্ধ বিগ্রহ নয়। কিন্তু বদর যুদ্ধে তারা তরবারী চালিযেছেন সে জন্য বদরী সাহাবীরা বলেন আমরা তরবারী যখন কাফেরেরর উপর তুলি মারার আগেই দেখি তার গর্দার আলাদা হয়ে গেছে। সে সাহায্যের কথা আল্লাহ সুরা আনফালের ৯ নং আয়াতে বয়ান করেন-
إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلْفٍ مِّنَ الْمَلآئِكَةِ مُرْدِفِينَ
তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করেছিলে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদিগকে সাহায্য করব ধারাবহিকভাবে আগত হাজার ফেরেশতার মাধ্যমে। [সুরা আনফাল - ৮:৯]

-আফযল সাহাবী ও আফযল ফেরেশতা
একদিন জিবরাইল প্রশ্ন করেন এয়া রাসুলাল্লাহ আপনার সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে আফযল কারা? মহানবী উত্তর দেন বদরে যারা শহিদ হয়েছেন তারা।
জিবরাইল (আ) বলেন আসমানে যত ফেরেশতা আছে তাদের মধ্যে ঐ ১০০০ ফেরেশতা সবচেয়ে আফযল যারা বদরে অংশ গ্রহণ করেছেন।

-বদরী সাহাবীদের ফজিলত
হাদীসে কুদসিতে আছে নবীজি এরশাদ করেন আল্লাহ তায়ালা বলেন (ইফয়ালু মা শিতুম ফাইন্নী কাদ গাফারতু লাকুম) তোমরা যা খুশি তাই কর কারন তোমাদেরকে ক্ষমা করা হয়েছে।


প্রঃ শবে কদর অর্থ কি?
শব মানে হল রাত আর কদর অথ হল মর্যাদা, মাহাত্ম, মূল্যায়ণ, ভাগ্য। এই রাতকে বান্দা যদি মূল্যায়ণ করে আল্লাহও বান্দাকে মুল্যায়ণ করবেন।

প্রঃ শবে কদরের বৈশিষ্ট্য কি?
# এই রাত হাজার মাস তথা ৮৩ বছর ৪ মাসের চেয়ে উত্তম।
# এ রাতে আল্লাহ তায়ালা সম্পূণ কুরআন একত্রে নাজিল করেছেন
# এই রাতে ফেরেশতারা হযরত জিবরাইল (আ) এর নেতৃত্বে দুনিয়ার জমিনে নাজিল হয় এবং ইবাদতকারীদের সাথে মুসাফাহা করেন।
# এই রাতের প্রতিটি মুহুতই শান্তি আর শান্তি।
# এই শান্তি সুয ডুবার পর থেকে সুবেহ সাদিক পযন্ত থাকে।
# এই রাতের ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ১টি সুরা নাজিল করেছেন

যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে। [সুরা ক্বদর - ৯৭:১]
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ
শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? [সুরা ক্বদর - ৯৭:২]
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। [সুরা ক্বদর - ৯৭:৩]
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। [সুরা ক্বদর - ৯৭:৪]
سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। [সুরা ক্বদর - ৯৭:৫]

প্রঃ জীবনে ১০/২০ বার শবে কদর পেলে কত বছরের এবাদত হবে?
- যদি কেহ জীবনে ১০ বার শবে কদর লাভ করতে পারে তাহলে সে কাল হাশরের মাছে ৮৩৪ বছরের এবাদত নিয়ে উঠবে, আর যদি ২০ বার শবে কদর পায় তাহলে ১৬৬৮ বছরের এবাদত নিয়ে উঠবে।

প্রঃ এ রাতে সম্পূণ কুরআন কোথায় নাজিল হয়েছে?
- শবে কদরের রাতে সম্পূণ কুরআন লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে বায়তুল ইজ্জতে একত্রে নাজিল করেন এবং আবার দীঘ ২৩ বছরে প্রয়োজনমত হযরত জিবরাইল (আ) এর মাধ্যমে সম্পূণ কুরআন আমাদের নবীর কাছে নাজিল হয়।

প্র: এই রাতে ফেরেশতারা কাদের সাথে মুসাফাহা ও সালাম করেন না
- শবে কদরের রাতে হযরত জিবরাইল (আ) এর নেতৃত্বে ফেরেশতারা নাজিল হয় এবং প্রত্যেক মুসলমান নর নারীকে সালাম বলে। কিন্তু যেসব ঘরে
(১) মদপানকারী (২) আত্মিয়তার সম্পক ছিন্নকারী (৩) মা বাবার নাফরমান (৪) হিংসুক থাকে তাদেরকে সালাম করেন না।
প্রঃ শবে কদর নিদৃষ্ট নয় কেন?
- শবে কদর এর তারিখ বলার জন্য একদিন হুজুর (দ) তশরিফ নিয়ে আসলেন তিনি বের হয়ে দেখেন দুইজন মুসলমান পরস্পর ঝগড়া করছিলো। হুজুর (দ) এরশাদ করেন আমি এই জন্য এসেছিলাম যে তোমাদেরকে শবে ক্বদর সম্পর্কে বলবো, কিন্তু অমুক অমুক ঝগড়া করছিলো। এ কারণে সেটার নিদৃষ্ট তারিখ তুলে নেয়া হয়েছে। আর হতে পারে এতে কল্যাণ থাকবে। (বুখারী ২য় খন্ড ৩১২ পৃ)
যদি এই মহান রাতটি নিদৃষ্ট থাকত আর জেনে শুনে কেহ যদি এর কদর না করত তাহলে তার উপর আল্লাহর গযব নাজিল হত।

- ইমাম ফখরুদ্দীন রাযি (রহ) তফসিরে কবীরে লিখেন
#আল্লাহ নিজের সন্তুষ্টিকে সকল নেক কাজের ভিতর লুকিয়ে রেখেছেন যাতে বান্দা সব নেক কাজই করে
#নিজের ক্রোধকে গুনাহর কাজগুলোর মধ্যে গোপন রেখেছেন যাতে সব গুনাহ থেকে মানুষ বেঁচে থাকে।
#আপন ওলীদেরকে সাধারণ মানুষের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন যাতে মানুষ সকল মানুষকে সম্মান করে
#দোয়া কবুল হওয়াকে দোয়াসমুহের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন যাতে মানুষ সব ধরনের দোয়া করে
#ইসমে আযমকে নিজের নামসমুহের মধ্যে লুকায়িত রেখেছেন যাতে সমস্ত নামসমুহের জিকির করে।
#সালাতুল ওসতা বা মধ্যবতী নামাযকে নামাজগুলির মধ্যে গোপন রেখেছেন যাতে নামাযগুলোর প্রতি সকলে যত্নবান হয়
#মৃত্যুর সময়কে গোপন রেখেছেন যাতে বান্দা সদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে
#তেমনি শবে কদরকে গোপন রেখেছেন যাতে রমযানের সমস্ত রাতের প্রতি সম্মান দেখায়।
প্রঃ রমজানের শেষ দশকে শবে কদর ২৯শে রমজান হলে কিভাবে শবে কদর তালাশ করব?
- আল্লাহর রাসুল (দ) এরশাদ করেছেন রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করার জন্য, এখন যদি রমজান ২৯ দিনে হয় তাহলে ১৯ রমজান দিবাগত রাত থেকে শবে কদর তালাশ করতে হবে, আর যদি ৩০শে রোজা হয় তাহলে ২০ রমজান দিবাগত রাত থেকে শবে কদর তালাশ করতে হবে এমন অভিমত অনেক গবেষক বয়ান করেছেন।
তবে জমহুরের মতে ২৯ হউক /৩০ হউক উভয় অবস্থাতেই শবে কদর ২০ রমজান দিবাগত রাত থেকে তালাশ করতে হবে।

প্রশ্নঃ শবে কদর কখন?
-রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে যেহেতু শবে কদর সে হিসেবে এ বছর শবে কদর আগামী ৩, ৫, ৭, ৯, ১১ মে শবে কদর হবে।

প্রশ্ন: এতেকাফ করলে কি লাভ?
#এতেকাফ করলে নিশ্চিত শবে কদর নসিব হবে কারন বান্দা যখন এতেকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করে যতদিন সে এতেকাফে থাককে যতক্ষন এতেকাফে থাকবে ততক্ষন সে এবাদতকারী হিসেবে গন্য হবে, সেখানে সে খাবার খেলে সেটাও এবাদত, ঘুমালে সেটাও এবাদত বলে গন্য হবে।

# কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে
وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
-‘আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে [বায়তুল্লাহকে] পবিত্র কর তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য।’ (সূরা বাকারা/১২৫)

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জন জলীলুল কদর ও বড় মাপের নবীকে বায়তুল্লাহ পুন:নিমার্ণের পর পরই ইতিকাফকারীদের জন্য তা পবিত্র করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর দ্বারাই মূলত ইতিকাফের গুরুত্ব ও মহত্ব আন্দায করা যায়।

#এতেকাফ আমাদের নবীজির সুন্নত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল দ্বারা। তিনি মদীনায় আগমনের পর অন্য অনেক আমল মাঝে-মধ্যে ছেড়ে দিলেও ইন্তেকাল পর্যন্ত ইতিকাফের আমল কোন সময় ছাড়েননি।
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ
আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্য পর্যন্ত রমাযানের শেষ দশকের ইতিকাফ করেছেন। এরপর তার পূণ্যবতী জীবন সঙ্গিনীগণও ইতিকাফ করেছেন। [বুখারী: হাদীস, ২০২৬; মসলিম: হাদীস, ১১৭২]

- এতেকাফ থেকে বের হয়ে মানুষের উপকার করা
সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. মসজিদে নববীতে ইতিকাফ অবস্থায় ছিলেন। এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি এসে তাঁকে সালাম দিয়ে চুপ করে বসে গেলন। তাকে দেখে ইবনে আব্বাস রা. বললেন, ব্যাপার কি? তোমাকে খুব বিষন্ন ও চিন্তাক্লিস্ট মনে হচ্ছে । তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূলের চাচাত ভাই! হাঁ, নিশ্চয় আমি চিন্তিত ও পেরেশান। কারণ জনৈক ব্যক্তির কাছে আমি ঋণী। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজার দিকে ইশারা করে বললেন, ঐ কবর ওয়ালার ইজ্জতের শপথ, সেই ঋণ আদায়ের সামর্থ আমার নেই। এ কথা শুনে ইবনে আব্বাস রা. বললেন, আমি কি তোমার জন্য তার কাছে সুপারিশ করব? লোকটি বললেন, আপনি যা ভাল মনে করেন। এ কথা শুনে ইবনে আব্বাস রা. তৎক্ষণাত জুতা পরে মসজিদের বাহিরে এলেন। এটি দেখে লোকটি বললেন, হযরত, আপনি হয়তো ইতিকাফের কথা ভুলে গেছেন। তিনি বললেন, না; ভুলি নাই। (তখন তার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল) বেশি দিনের কথা নয়, (মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রওজার দিকে ইশারা করে বললেন) আমি এই কবরওয়ালার নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজ মুসলিম ভাইয়ের কোন হাজত পুরণার্থে রওনা হয় এবং তাতে সে চেষ্টা করে, তা তার দশ বছর ইতিকাফ করার চেয়েও উত্তম হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করে আল্লাহ তাআলা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন, যার দূরত্ব আকাশ ও জমীনের মধ্যবর্তী স্থান হতেও বেশি। [শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৬৭৯]

-এক বর্ণনায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
(মান এতেকাফা ফি রামাদানা কানা কাহাজ্জাতাইত ওয়া ওমরাতাইন)
যে ব্যক্তি রমাযান মাসে দশ দিন ইতিকাফ করবে, তার এই ইতিকাফ নেকী ও শ্রেষ্টত্বের বিবেচনায় দুটি হজ¦ ও দুটি ওমরার সমপর্যায়ের হবে। [শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস: ৩৬৮০, ৩৬৮১]

-এতেকাফের প্রকারভেদ
এতেকাফ ৩ প্রকার
১) ওয়াজিব - যদি কেহ মান্নত করে আমার অমুক কাজ হলে আমি ১দিন এতেকাফ করব যদি সে কাজ সফল হয় তখন তার জন্য ১দিন এতেকাফ করা ওয়াজিব আর সে এতেকাফ করার জন্য আসরের নামাজ পড়ে মসজিদে ঢুকে যাবে আর রাতে সেহেরী খাবে এবং পরের দিন রোজা রাখবে আর মাগরীব পড়ে বের হয়ে যাবে।

২) সুন্নত মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়াহ- যদি এলাকা থেকে ১ জনও করে তাহলে সকলের দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে, কেহ না করলে সকলেই গুনাহগার হবে। ২০ রমজান আসরের পর মসজিদে ঢুকবে ঈদের চাঁদ দেখা গেলে বের হয়ে যাবে।
এতেকাফের নিয়ত- আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রমযানুর মুবারকের আখেরী দশ দিনের সুন্নত এতেকাফ এর নিয়্যত করছি।

৩) নফল এতেকাফ- যখনই মসজিদে ঢুকবেন এতেকাফের নিয়ত করবেন যতক্ষন মসজিদে থাকবেন কিছু পড়ুন বা না পড়ুন সাওয়াব পাবেন। যখন মসজিদ থেকে বের হয়ে আসবেন তখনই এতেকাফ শেষ হয়ে যাবে।
নিয়ত- (নাওয়াতু সুন্নাতিল এতেকাফ)

-এতেকাফে সতর্কতা
এতেকাফ করার মকসদ হল দুনিয়াদারী থেকে সব ধরনের লেনদেন কেটে একমাত্র আল্লাহর সাথে জোড়া লাগানো, তাই এতেকাফে বসে কথাবার্তা বলা, মোবাইলে ব্যস্ত থাকা, হাসাহাসি করা উচিত নয়

মোল্লা আলী কারী বলেন (আল কালামুল মুবাহু ফিল মাসজিদি মাকরুহুন এয়াকুলুল হাসানাত) অর্থ্যাৎ মসজিদে মুবাহ কথাবার্তা বলা মাকরূহ, নেকীগুলোকে গ্রাস করে ফেলে।

আনাস (রা) বলেন নবীজি এরশাদ করে (আদ্দাহাকু ফিল মাসজিদি জুলমাতুন ফিল কাবারী) মসজিদে হাসার দ্বারা কবরে অন্ধকার নেমে আসে। (আল জামেউস সগীর ৩২২ পৃ)

-শবে কদর এর ৫ রাতে, সহজ কয়েকটি আমল করবেন
১। অন্তত ১টি টাকা হলেও সদকা করবেন তাহলে ৮৩ বছর ৪ মাস ১ টাকা দান করার সাওয়াব পাবেন
২। অন্তত ২ রাকাত শবে কদরের নিয়তে নামাজ পড়বেন
৩। এশারের নামাজ ও ফজরের নামাজ জামায়াতে পড়বেন
৪। ৩ বার সুরা এখলাস পাঠ করবেন তাহলে ১০০০ মাস পবিত্র কুরআন খতমের সাওয়াব লাভ করবেন।
৫। ১ বার দরুদ শরীফ পাঠ করবেন ১০০০ মাস দরুদ পাঠ করার সাওয়াব লাভ করবেন
৬।গুনাহ মাফ চেয়ে দোয়া করবেন (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আপওয়া ফাফু আন্নি) হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাকারী গুনাহ ক্ষমা করতে ভালবাস আমাকে ক্ষমা কর।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বদরী সাহাবীদের উছিলায় ক্ষমা করুন, তাদের রূহানি ফয়েজ আমাদের দান করুন, তাঁদের উছিলায় আমাদের যাবতীয় নেক মকসদ পুরণ করুন। আগামী ৩রা মে, ৫,৭,৯,১১ই মে শবে কদর তালাশ করার তৌফিক দান করুন এবং এতেকাফের মাধ্যমে নিশ্চিত শবে কদর লাভ করার তৌফিক দান করুন।আমিন

কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.