কুরআনের আলোকে যুগে যুগে ইহুদীদের উপর আল্লাহর আযাব। ইসরাইলিরা কখন ধ্বংস হবে?

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

কুরআনের আলোকে যুগে যুগে ইহুদীদের উপর আল্লাহর আযাব এবং ফাইনাল আযাব কখন আসবে? কিভাবে ইসরাইলিরা সমুলে ধ্বংস হবে তার নকশা।



وَقَالَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى نَحْنُ أَبْنَاء اللّهِ وَأَحِبَّاؤُهُ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُم بِذُنُوبِكُم
ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান ও তাঁর প্রিয়জন। আপনি বলুন, তবে তিনি তোমাদেরকে পাপের বিনিময়ে কেন শাস্তি দান করবেন? [সুরা মায়েদা - ৫:১৮]
يُرِيدُونَ لِيُطْفِؤُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। [সুরা সফ - ৬১:৮]
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
তিনি তাঁর রসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্যধর্ম নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। [সুরা সফ - ৬১:৯]
-ভুমিকা বিষয়বস্তু
আমি সুরা মায়েদার ১৮ নং এবং সুরা সফ এর ৮ ও ৯নং আয়াত তেলাওয়াত করেছি।
আপনারা জানেন সারা পৃথিবীতে ইহুদী সম্প্রদায় মাত্র দেড় কোটি কিন্তু তারাই মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুপ্রিম পাওয়ার। কিন্তু কেন এমন হল? তারাই কি শেষ পযন্ত সারা বিশ্বে শেষ পযন্ত টিকে থাকবে, অন্য সব ধর্মাবলম্বীরা শেষ হয়ে যাবে? নাকি ইহুদীরাই ধ্বংস হবে, যদি ইহুদীরা ধ্বংস হয় তাহলে কখন হবে কিভাবে হবে? এসব বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনা করার চেষ্টা করব।



-ইহুদী সম্প্রদায়ের উৎপত্তি
ইহুদীরা মুসলিমদের মতই বংশ পরম্পরা হিসেব করে হযরত ইব্রাহিম (আ) থেকে। অর্থাৎ পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ)। ইব্রাহিমের (আ) প্রধান ২ ছেলে ইসমাইল আর ইসহাক (ইহুদী তাওরাত অনুযায়ী ইব্রাহিম (আ) এর পরে আরো ছয় পুত্র হয় তৃতীয় স্ত্রী কেতুরার গর্ভে)। এর মাঝে, হযরত ইসহাক (আ) (ইংরেজিতে Isaac) এর ছেলে ছিলেন ইয়াকুব (আ) (Jacob)। ইয়াকুব (আ) এর আরেক নাম ছিল ইসরাইল (আ); এ নামটাই ইহুদীরা গ্রহণ করেছে।
-ইহুদীদের হিব্রুভাষা
মুসলিমদের পবিত্র ভাষা আরবি ও ইহুদীদের পবিত্র ভাষা হিব্রু দুটোই সেমিটিক ভাষা হবার কারণে এদের মাঝে অনেক মিল। দুটোই ডান থেকে বামে লিখা হয়। তবে আরবিতে ২৯/৩০টি বর্ণ থাকলেও হিব্রুতে মাত্র ২২টি বর্ণ; তবে আরবির চেয়ে হিব্রুতে স্বর উচ্চারণ বেশি করা যায়।
-ইহুদীদের উচ্চ মর্যাদা দান
হযরত এয়াকুব (আ) এর এই জাতিকে আল্লাহ তায়ালা উচ্চ মর্যাদা দান করেছিলেন যা পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ৪৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেন
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُواْ نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ
হে বনী-ইসরাঈলগ ণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর। [সুরা বাকারা - ২:৪৭]
-ইহুদীদের উপর আল্লাহর আযাবের কারন
পবিত্র কুরআনে ইহুদীদের উপর আযাবের কয়েকটি কারন উল্লেখ করা হয়েছে
১। নবী রসুলদের হত্যা করা
২। হযরত মরিয়াম (আ) এর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া
৩। ন্যায়পরায়ন নেককার লোকদেরও হত্যা করেছে
৪। হযরত ইসা (আ) এর সাথে দুষমনি এবং শূলিতে চড়ানো এদের কাজ। এসব অপকম ও নবী রাসুলকে হত্যা ও হত্যা অপচেষ্টার কারনে আল্লাহ এই অনুগ্রহপ্রাপ্ত জাতিকে লাঞ্চিত জাতিতে পরিণত করে দিলেন
যেমন সুরা বাকারার ৬১ নং আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন
وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَآؤُوْاْ بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُواْ يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ذَلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعْتَدُونَ
আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী। [সুরা বাকারা - ২:৬১]

#ইহুদী লাঞ্চিত হবে, পরমুখাপেক্ষি হবে, আল্লাহর রোষানলে পতিত হবে।



-ইহুদীরা কি হযরত ইসা কে শূলিতে চড়িয়েছে?
ইহুদীরা দাবী করে তারা হযরত ঈসা (আ) কে হত্যা করেছে, আর খ্রিষ্টানরা দাবী করে হযরত ঈসা (আ) কে হত্যা করার পর তারা তার লাশ একটি গুহায় রেখে দেয় আর সেখান থেকে আল্লাহ হযরত ইসা কে পুনরায় জিবীত করেন এবং আসমানে তুলে নেন।
আর মুসলমানদের দাবী হল হযরত ইসা (আ) কে ইহুদীরা হত্যা করতে পারেনি বরং আল্লাহ তায়ালা হযরত ইসা (আ) কে জীবিত আসমানে তুল নিয়েছেন।
কোরআন শরীফের উল্লিখিত আয়াতটি সূরা নিসার ১৫৮ নং আয়াতে এইরূপে উল্লেখ আছে:
ۚ وَمَا قَتَلُوْهُ وَمَا صَلَبُوْهُ وَلٰكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ ؕ
অনুবাদঃ ইহুদিদের এইরূপে দাবি যে তারা মসীহ্ ঈসা ইবনে মরিয়ম, রসূলুল্লাহ্কে হত্যা করেছে, পরন্তু তারা (ইহুদিরা) তাকে হত্যা করে নি এবং ক্রুশবিদ্ধ করেও হত্যা করেনি বরং এ ঘটনা তাদের নিকট সন্দেহযুক্ত হয়ে রয়েছে।*
-ইসা (আ) এর ব্যপারে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের ২টি বিষয় একই
খ্রিষ্টানরাও মনে করে ইসা (আ) কে আসমানে তুলে নেয়া হয়েছে, মুসলমান ও কুরআনের দাবীও ইসা (আ) কে আসমানে তুলে নেয়া হয়েছে,
আর খ্রিষ্টানদের সাথে ২য় মিল হল তারাও দাবী করে ইসা পুনরায় দুনিয়ায় আসবে আর আমাদের দাবীও হল হযরত ইসা কেয়ামতের আগে পুনরায় দুনিয়ায় আগমন করবেন তবে আমাদের নবীর উম্মত হয়ে। দাজ্জালের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন।
-ইহুদীরা নবী রসুল হত্যা করেও সম্পূণ ধ্বংস হলনা কেন?
আমরা যদি কুরআন পড়ি সেখানে দেখতে পাই আল্লাহ তায়ালা অনেক জাতিকে সমুলে ধ্বংস করেছেন শুধু রাসুলকে অমান্য করার কারনে, ইহুদীরাও অনেক নবী রাসুলকে অমান্য করেছে হত্যা করেছে কিন্তু তাদের সমুলে ধ্বংস করলেন না কেন?
মনে রাখবেন ইহুদীরাও আযাবের হকদার হয়েগেছে, যেমন ফাসির হকুম হয়ে যাওয়া আর ফাসিতে চড়ানোর মধ্যে একটা সময় থাকে, তেমনি ইহুদীদের উপর আল্লাহর আযাবের হকুম হয়ে গেছে কিন্তু তা বাস্তাবায়ন হচ্ছে ধীরে ধীরে।
প্রথম আযাব- ইহুদীদের উপর দুনিয়াবি আযাবের প্রথম চাবুক সাথে সাথেই বষিৃত হয়। হযরত ইসা (আ) কে ইহুদীরা ৩৩ বছর বয়সে হত্যা চেষ্টা করে, আর এর ৩৭ বছর পর ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমীয়রা ইহুদীদের উপর আক্রমন করে বসে আর রোমীয়রা জেরুজালেমে এসে ১ লাখ ৩৩ হাজার ইহুদী এক দিনেই হত্যা করে। এবং হযরত সুলায়মান (আ) যে এবাদতগৃহ নির্মান করেছিলেন যাকে হায়কলে সুলায়মানি বলা হয় সেটি ধ্বংস করেন।
হায়কলে সুলায়মানি প্রথমে ইসার আগমনের ৫৮৭ বছর আগে একবার ধ্বংস করা হয়, তার ১৫০ বছর পর পুনরায় তা নিমান করা হয়, সে জন্য সেটাকে তারা সেকেন্ড টেম্পল বলে। আর ৭০ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় ধ্বংস করা হয় তা আজো ইহুদীরা তৈরী করতে পারেনি।
-২য় আযাব -ইহুদীরে ফিলিস্তিন থেকে বহিস্কার
রোমিয়রা আরো বলল সকল ইহুদী এই ফিলিস্তিন থেকে বের হয়ে যাও, এই পবিত্র ভুমিতে তোমরা থাকতে পারবেনা। তখন ইহুদীরা যে যেদিকে পারে পালিয়ে গেল। বনু কায়নুকা, বনু কুরায়যা, বনু নজির এসব হল ফিলিস্তিনি ইহুদী সম্প্রদায় তারা ফিলিস্তিন থেকে ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমীয়দের ভয়ে পালিয়ে মক্কা মদীনায় আশ্রয় নিয়েছিল।
৭০ খ্রিঃ থেকে ১৯১৭ পযন্ত ইহুদীরা খরখুটার মত যাযাবরের মত জীবন যাপন করতে থাকে।
-ইহুদী খ্রিষ্টানদের উপর রোমানদের ৩০০ বছর অত্যাচার
৭০ সাল থেকে ৩০০ বছর পযন্ত রোমানরা ইহুদীদেরকেও মারত খ্রিষ্টানদেরকেও মারত, রোমীয়রা মনে করত ইহুদী খ্রিষ্টান একই জাতি, কিন্তু ইহুদী খ্রিষ্টান ছিল মুল একে অপরের দুষমন। এভাবে ৩০০ বছর পার হয়ে যায়।
-৩য় আযাব ৩০০ বছর পর রোমান রাজার খ্রিষ্টান হয়
রোমানদের একজন বড় রাজা খ্রিষ্টান ধম গ্রহণ করেন, ফলে গোটা রাজ্যই খ্রিষ্টান হয়ে গেল আর সকল খ্রিষ্টান এক হয়ে ইহুদীদের উপর মার শুরু করল। তখন ইহুদী নামটি একটা গালিতে পরিণত হল। তাদেরকে ইউরোপ দেশ থেকে ধিক্কার ও লাঞ্চি ত করে তাড়ানো শুরু হল।
ইহুদী খ্রিষ্টানদের মধ্যে এক বড় দুষমনি চলতে লাগল যা আল্লাহ কুরআনে বলেন (বাইনাহুমুল আদাওয়াতা ওয়াল বাগদা) আমি ইহুদী খ্রিষ্টানদের মধ্যে দুষমনি পয়দা করে দিলাম।
এভাবে রোমীয় ও খ্রিষ্টানদের হাতে ইহুদীরা একটি নিকৃষ্ট অপমানিত অপদস্থ জাতি হিসেবে যাযাবরের মত পরাধিন জীবন যাপন করতে লাগল।
-৫৭১ খ্রিঃ নবীজির আগমন ও ইহুদীদের কমকান্ড
৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নিয়ে ৫৭১ খ্রিঃ প্রায় ৫০০ বছর ইহুদীরা লাঞ্চনার জীবন যাপন করে আসছে যখন আমাদের নবী মুহাম্মদ (দ) এর জন্ম হল তখন ইহুদীরা কি করল? আসুন জেনে নিই
যখন আমাদের নবী (দ) ইসলাম প্রচার শুরু করলেন তখন ইহুদীরা কুরাইশ কাফেরদেরকে নানা ধরনের প্রশ্ন শিখিয়ে দিত, যা সুরা বনি ইসরাইলে বিস্তারিত বয়ান রয়েছে। (রুহ কি? আসহাবে কাহাফ কে ছিল?) এভাবে মক্কার কাফেরদের ইন্ধন দিত।
কিন্তু হুযুর (দ) যখন মদীনায় হিজরত করলেন সেখানে অনেক ইহুদী গোত্র ছিল তাদেরকে সহ নিয়ে হুজুর (দ) একটি চুক্তি করেন যখন মক্কার কাফেরেরা মদীনা আক্রমন করবে তখন সকল ধম বণ মিলে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়বে।
কিন্তু ইহুদীরা সদা সবদাই খেয়ানতকারীই ছিল। বিভিন্নভাবে হুজুর (দ) কে ক্ষতি করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকত সুরা মায়েদার ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন
ِ وَلاَ تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَىَ خَآئِنَةٍ مِّنْهُمْ
(হে রাসুল) আপনি সর্বদা তাদের কোন না কোন প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হতে থাকেন, [সুরা মায়েদা - ৫:১৩]

-ইহুদীরা দুষ্ট ও ইন্ধনকারী, যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রকারী জাতি।
মদীনায় বদর উহুদ ও আহযাবের যুদ্ধের পিছনে বড় ইন্ধন ছিল ইহুদী গোত্র বনু কায়নুকা, বনু নযির ও বনু কুরায়জা তাই বদর যুদ্ধর পর কায়নুকাকে মদীনা থেকে বের করা হল, উহুদের পর নযিরকে বের করা হল, আহযাবের যুদ্ধের পর কুরায়জাকে মদীনা থেকে বের করে দেয়া হল।
আল্লাহ সুরা মায়েদার ৬৪ নং আয়াতে ইহুদীদের এসব ইন্ধনের কথা ইশারা করে বলেন
أَوْقَدُواْ نَارًا لِّلْحَرْبِ أَطْفَأَهَا اللّهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الأَرْضِ فَسَادًا وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ
তারা যখনই যুদ্ধের আগুন প্রজ্জলিত করে, আল্লাহ তা নির্বাপিত করে দেন। তারা দেশে অশান্তি উৎপাদন করে বেড়ায়। আল্লাহ অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না। [সুরা মায়েদা - ৫:৬৪]
-মহানবীর (দ) ইন্তেকালের পর ইহুদী
এতক্ষন মহানবীর (দ) যুগে ইহুদীদের কাযক্রমের কিছুটা নমুনা তুলে ধরলাম, যখন হুজুর (দ) ইন্তেকাল করলেন হযরত ওমর (রা) খলিফা হলেন তখন বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের দখলে এসে গেল।
-ওমরের বায়তুল মুকাদ্দাস দখলের আযব ঘটনা
হযরত ওমর (রা) খেলাফত আমলে বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুসলিম সৈন্যরা ঘেরাও করে নিল। কিন্তু উঁচু প্রাচিরের কারনে মুসলিম সৈন্যরা ভিতরে প্রবেশ করতে পারছিলনা। অনেক দিন এভাবে ঘেরাও করার পর তাদের কিছু বিজ্ঞ লোক প্রচারের উপর উঠে মুসলমান সৈন্যদের উদ্দেশ্য বলল। হে মুসলিম সম্প্রদায় যদি তোমরা কিয়ামত পযন্ত আমাদের ঘিরে রাখ এই এলাকা তোমরা বিজয় করতে পারবেনা। তবে এক দরবেশ বাদশার হাতে এই শহর বিজয় হবে। কিন্তু তোমাদের মধ্যে আমরা সে বাদশাকে দেখতে পাচ্ছিনা। তখন হযরত আবু উবায়দু ইবনুল জাররাহ (রা) বুঝতে পারলেন তারা হযরত ওমরের কথা বলছে যিনি মদীনায় খলিফা হয়ে বসে আছেন। তখন হযরত আবু উবায়দা (রা) সাথে সাথে হযরত ওমর (রা) কে আসার জন্য দুত প্রেরণ করে দিলেন। যাতে এই পবিত্র শহর বিজয় হয়।
সে সফর ছিল বড়ই বিষ্ময়কর ৭০০ মাইলের সফর ১টি উট একজন খাদেম ১ মনজিলে ওমর (রা) উপর ২য় মঞ্জিলে খাদিম উটের উপর। যখন শহরে পৌঁছলেন তখন উটের উপর ছিল খাদেম।
এই অবস্থা দেখে আবু উবায়দা হযরত ওমরকে বললেন হুজুর আপনি এভাবে তাদের সামনে যাবেন? আপনর কাপড় ময়লা ছিড়া, পরিস্কার কাপড় পড়ুন, তখন হযরত ওমর বললৈন (নাহনু কওমুন আআজ্জামাল্লাহু লিল ইসলাম) আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ইজ্জত দিয়েছেন ইসলামের কারনে কাপড়ের কারনে নয়।
এসব আচরন গুল তারা উপর থেকে দেখতে লাগল, তারা তাদের কিতাবে যা যা লিখা আছে সব গুলি হযরত ওমরের মধ্যে মিল পেল ফলে তারা আর দেরী করলনা হযরত ওমরের হাতে এই বায়তুল মুকাদ্দাসের চাবি তুলে দিল। সুবহানাল্লাহ। ১ ফোটা রক্তপাতও হলনা বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় হয়ে গেল।
কিন্তু সে সময় হযরত ওমর (রা) ইহুদীদের জন্য এই বায়তুল মুকাদ্দাসকে জিয়ারতের জন্য খুলে দেন। এর আগে ইহুদীরা বায়তুল মুকাদ্দাসে আসারও অনুমতি ছিলনা। কিন্তু হযরত ওমর (রা) ইহুদীদের প্রতি অনেক বড় এহসান করলেন। তবে ইহুদীদেরকে এই এলাকায় বসতী স্থাপনের অনুমতি ছিলনা। শুধু জেয়ারতের অনুমতি ছিল।

এই হকুম বনু উমাইয়া আমলেও ছিল, বনু আব্বাসের সময়ও ছিল। তুকীরাও হযরত ওমরের সে হকুম পুরাপুরি বজায় রাখেন। ইহুদীরা ফিলিস্তিনে শুধু জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসতে পারবে তবে এখানে বসতী স্থাপন করতে পারবেনা।
-হযরত ওসমান (রা) এর যুগে ইহুদীদের বড় ষড়যন্ত্র ইহুদী আবদুল্লাহ বিন সাবা
হযরত ওসমান (রা) এর খেলাফত কালে এক ইহুদী আবদুল্লাহ বিন সাবা যে মুসলমান সেজে মুসলমানদের মধ্যে ঢুকে গেল, আর সে মুসলমান লেবাছ ধরে মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্ধ মতপার্থ্যক্য সৃষ্টি করা শুরু করে দিল। হযরত ওসমান যেহেতু উমাইয়া বংশের লোক সেজন্য সে হাশেমীদেরকে বুঝাতে লাগল খেলাফত হাশেমিদের হাতে থাকার কথা ওসমান হল উমাইয়া বংশের লোক। এইভাবে সে ইন্ধন দিতে শুরু করল। নানা ধরনের মিথ্যা গুজব রটানো শুরু করে দিল। আর এসব কিছুর পিছনে ছিল আবদুল্লাহ বিন সাবা ইহুদীর ষড়যন্ত্র। আর এ ষড়যন্ত্রের কারনে হযরত ওসমান (রা) শহিদ হন, এর পর ৫ বছর পযন্ত মুসলমান মুসলমান একে অপরের সাথে মারামারিতে লিপ্ত থাকে। সে ইহুদীরা উম্মতে মুসলিমাকে সে জখম করেছে যা থেকে আজো রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। সুন্নি আর শিয়া নামে মুসলমানদের মধ্যে ২টি ভাগ হয়ে গেল। এই ফিতনা শুধু একজন ইহুদীই সৃষ্টি করে দিয়েছে, গোটা মুসলিম জাতিকে বিভক্ত করে দিয়েছে।
#ইহুদীরা এভাবে খ্রিষ্টানদের মধ্যেও বিবেধ সৃষ্টি করতে সক্ষম হল।

সুরা মায়েদার ৬৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন ইহুদী হল ‍যুদ্ধের আগুন জ্বালানো ওয়ালা জাতি, পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টিকারী, সে হিসেবে দুনিয়ার যত বড় বড় ফিতনা ফাসাদ যুদ্ধ বিগ্রহ সব কিছুর পিছনের কলকাঠি কিন্তু ইহুদীদের। তারা যেহেতু অনেক নবী রাসুলকে হত্যাকারী তাই তাদের প্রতি আল্লাহর আযাব জারি থাকবে, যে আযাবে আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পূণ ধ্বংস করে দিতে পারতেন কিন্তু তাদেরকে আল্লাহ সারা দুনিয়াবাসীর জন্য শিক্ষার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন, যুগে যুগে তাদের উপর বার বার আযাব এসেছে
১৯৩৩-১৯৪৫ সাল পযন্ত হিটলারের হাতে প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদী মারা যায় এটা হল ইহুদীদের প্রতি আরো একটি বড় আযাব।
বতমানে ইহুদীরা প্রায় ১কোটি ৫০ লাখ, শুধু ইসরাইলেই ৬০ লাখ ইহুদীর বসবাস, কিন্তু এরাই মনে হচ্ছে সুপার পাওয়ার। অথচ আল্লাহ কুরআনে বলেছেন তারা হবে লাঞ্চিত অপদস্থ।
যদিও সাময়িক তারা শক্তিশালি মনে হচ্ছে কিন্তু তাদের জন্য আসল আযাব অপেক্ষা করছে হযরত ইসা (আ) এর আগমনের দ্বারা, হযরত ইসা (আ) যখন আসবেন তখন তিনি উম্মতে মুসলিমাদের নিয়ে এই ইহুদীদেরকে যথাযথ শায়েস্থা করবেন আর দুনিয়াতে তখন ইহুদী খ্রিষ্টান নামের কোন প্রাণী থাকবে না যারাই থাকবে শুধু মুসলমান।
যারা হযরত ঈসা (আ)কে হত্যা প্রচেষ্টা করেছিল সে জাতি ইহুদী জাতিরা শেষ পযন্ত সে ঈসা (আ) এর হাতেই আল্লাহর হকুমে ধ্বংস হবে। ইনশা আল্লাহ।
-হযরত ঈসার আসমানে হিজরত
প্রায় সকল বড় বড় নবীই হিজরত করেছেন। এক্ষণে পৃথিবী থেকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া, অতঃপর পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু দান করা- এটা ঈসা (আঃ)-এর জন্য এক ধরনের হিজরত বৈ কি! পার্থক্য এই যে, অন্যান্য নবীগণ দুনিয়াতেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে হিজরত করেছেন। পক্ষান্তরে ঈসা (আঃ) দুনিয়া থেকে আসমানে হিজরত করেছেন। অতঃপর আসমান থেকে দুনিয়াতে ফিরে আসবেন।
হাদীসের মাধ্যমে জানা যায়
#হযরত ইসা নবীর উম্মত হয়ে আসবেন
#দাজ্জাল দেখে গলে যাবে,
#তবে ধ্বংস হবেনা সে হযরত ঈসার হাতেই মরবে
#খ্রিষ্টানদের ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন
#খ্রিষ্টানরা শুকর খায় তিনি শুকর ধ্বংস করবেন
#যেহেতু হযরত ইসাও উম্মতে মুহাম্মদী হয়ে যাবেন সেহেতু সকল খ্রিষ্টানরাও মুহাম্মদ (দ) এর উম্মত হয়ে মুসলমান হয়ে যাবেন। আর মুসলমানরাই হযরত ঈসার কওম হবে আর এই মুসলমানরাই কিয়ামত পযন্ত বিজয়ী থাকবেন।
-ইহুদীদের বিপক্ষে হযরত ঈসা (আঃ)-কে সাহায্যের ব্যাপারে আল্লাহ পাঁচটি ওয়াদা করেছিলেন এবং সবক’টিই তিনি পূর্ণ করেন। (১) হত্যার মাধ্যমে নয় বরং তার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে (২) তাঁকে ঊর্ধ্বজগতে তুলে নেওয়া হবে (৩) তাকে শত্রুদের অপবাদ থেকে মুক্ত করা হবে (৪) অবিশ্বাসীদের বিপক্ষে ঈসার অনুসারীদেরকে ক্বিয়ামত অবধি বিজয়ী রাখা হবে এবং (৫) ক্বিয়ামতের দিন সবকিছুর চূড়ান্ত ফায়ছালা করা হবে। এ বিষয়গুলি বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতে। যেমন আল্লাহ বলেন,
إِذْ قَالَ اللّهُ يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُواْ وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُواْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বলবেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে নিয়ে নেবো এবং তোমাকে নিজের দিকে তুলে নিবো-কাফেরদ ের থেকে তোমাকে পবিত্র করে দেবো। আর যারা তোমার অনুগত রয়েছে তাদেরকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তাদের উপর জয়ী করে রাখবো। বস্তুতঃ তোমাদের সবাইকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তখন যে বিষয়ে তোমরা বিবাদ করতে, আমি তোমাদের মধ্যে তার ফয়সালা করে দেবো। [সুরা ইমরান - ৩:৫৫]

-মুসলমানরা মার খাচ্ছে কেন লাঞ্চিত কেন?
সুতরাং শেষ কথা আজ আমরা মুসলমান জাতি ইহুদীদের হাতে মার খাচ্ছি, তবে ইহুদীরা চুড়ান্ত বিজয় অজন করতে পারবেনা, মুসলমানদের সমুলে ধ্বংস করতে পারবেনা, মুসলমানরা আজ মার খাচ্ছে শুধু ইসলাম থেকে দুরে থাকার কারনে, কারন আমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূণ ভাবে প্রবেশ করতে পারিনি, আমরা নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, হজ করি, দান সদকা করি, কিন্তু আল্লাহর বিধানকে আমরা পুরাপুরি মান্য করিনা। সুদ হারাম, কিন্তু আপনি একটি মুসলিম দেশ পাবেন না যেখানে সুদ মুক্ত অথনীতি চালু আছে, আমরা চুরি শান্তি যেনার শাস্তি আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করিনা। অথচ আমরা বলি আমরা মুসলমান, অথচ মুসলমান সেই হতে পারে যে সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহর হকুমকে মান্য করে। আজ সারা বিশ্সে মুসলমানদের এই লঞ্চনার কারন আল্লাহ কুরআনের ৮৫ নং আয়াতে বয়ান করেছেন
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاء مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ إِلاَّ خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। [সুরা বাকারা - ২:৮৫]
-সবশেষে সুসংবাদ
আজ আমরা ইসলাম ধম কুরআনের বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি তাই আজ মুসলমানরা লাঞ্চিত তবে যেদিন হযরত ঈসা (আ) এসে এই পৃথিবীতে ইসলাম ধমকে এবং কুরআনের বিধানকে পরিপূণভাবে স্টাবলিস্ট করবেন তখন মুসলমানরা সারা বিশ্বে প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজিত্ব করবে। শেষ হাসিটি মুসলমানরাই হাসবেন, ইহুদীরা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান নাস্তিক তাদের কোন অস্তিত্ব তখন বাকী থাকবেনা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সত্যিকারের পরিপূণ মুসলিম হিসেবে কবুল করুন আমিন।






কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.