ইন্নালিল্লাহ! এয়াজুজ মাজুজ এসে গেছে? সব ধ্বংস হয়ে যাবে?
ইন্নালিল্লাহ! এয়াজুজ মাজুজ এসে গেছে? সব ধ্বংস হয়ে যাবে?
এয়াজুজ মাজুজ তারা হচ্ছে আদম সন্তানেরই এক সম্প্রদায়। হাফেয ইবনে হাজার (রহ:) এর মতে- তারা নূহ (আ:) এর পুত্র ইয়াফিছের পরবর্তী বংশধর।
ফাতাহুল বারীর ৬ষ্ঠ খন্ডে হযরত কাতাদা (রাঃ) বলেন এরা মানুষের আকৃতি হবে তাফসীরে তাবারী গ্রন্থ মতে তারা পৃথিবীর উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দা হবে, বর্তমানের আরমেনিয়া ও আযারবাইযানে তাদের আবাসস্থল উল্লেখ্য করা হয়।
হযরত জুল করনাইন সারা পৃথিবীকে দখলে করে নিয়েছিলেন। কুরআন বলছে জমিনের পূব প্রান্তেও সে পৌঁছেছে জমিনের পশ্চিম প্রান্তেও পৌছেছে। আর তিনি এমন এক জাতির কাছে পৌঁছে গেলেন যারা হযরত জুল করনাইনের ভাষা বুঝত না। তারা দোভাষির দ্বারা জুল করনাইনকে নিজেদের সমস্যার কথা বললেন, আবেদন করে বললেন- আপনি অনেক বড় শক্তিধর বাদশা, আমরা অনেক বড় মসিবতে গ্রেফতার হয়ে আছি, আপনি আমাদেরকে সে মসিবত থেকে বাঁচান। সুরা কাহাফের ৯৪ নং আয়াতে আছে-
قَالُوا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَى أَن تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا 94
তারা বললঃ হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন।
হযরত জুল করনাইন লোহা ও সিসা দ্বারা দেওয়াল তৈরী করে এয়াজুজ মাজুজ জাতিকে বন্ধী করে দিল, ফলে দুনিয়ার মানুষ এদের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেল।
হাদীসে আছে এই এয়াজুজ মাজুজ প্রতিদিন জুল করনাইন এর তৈরী কৃত এই দেওয়ালটি জিহ্বা দিয়ে লেহন করতে থাকে এভাবে লেহন করতে করতে সন্ধ্যা পযন্ত দেওয়ালটি একদম পাতলা হয়ে যায় তখন তারা বলে বাকীটা আগামী কাল শেষ করব তবে তারা ইনশা আল্লাহ বলেনা তাই পরের দিন এসে দেখে দেওয়াল আগের মত মোটা হেয়ে গেছে। এভাবে কিয়ামত পযন্ত তাদের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, কিয়ামতের আগে একদিন তারা বলবে ইনশা আল্লাহ এই দেওয়ালকে আমরা কাল খতম করে দিব। যখন ইনশা আল্লাহ বলবে তখন তারা পরের দিন এসে সে দেওয়াল ধ্বংস করে দিবে এবং পৃথিবীতে ছড়িয়ে
পরবে, সুরা কাহাফের ৯৮ নং আয়াতে আছে
قَالَ هَذَا رَحْمَةٌ مِّن رَّبِّي فَإِذَا جَاء وَعْدُ رَبِّي جَعَلَهُ دَكَّاء وَكَانَ وَعْدُ رَبِّي حَقًّا 98
যুলকারনাইন বললেনঃ এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য।
সেদিন ইয়াজুজ-মাযুযের দল স্রোতের ন্যায় মানুষের এলাকায় ডুকে পড়বে। তারা সব কিছু খেয়ে ফেলবে। পানির পিপাসায় তারা দুনিয়ার সব সাগর মহাসাগরের সব পানি খেয়ে ফেলবে। তাদের দৌরাত্মে দুনিয়া তছনছ হয়ে যাবে।
এমনকি তাদের প্রথম দলটি নদীর পানি খেয়ে শেষ করে ফেলবে এবং শেষ দলটি এসে বলবে ‘হয়ত এখানে কোন একসময় নদী ছিল’
☞ এক সময় তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের এক পাহাড়ে গিয়ে বলবে,”দুনিয়াতে যারা ছিল তাদের হত্যা করেছি। এখন আকাশে যারা আছে তাদের হত্যা করব।” তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। ।
☞ এসময় ঈসা (আঃ) তাদের জন্য বদদো‘আ করবেন। এতে কাঁধের দিক থেকে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করবেন। তারা সবাই মারা যাবে ও পঁচে দুর্গন্ধ হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের লাশ থাকবে । আল্লাহ শকুন পাঠাবেন। লাশগুলোকে তারা নাহবাল নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। মুসলিমরা তাদের তীর ও ধনুকগুলো ৭ বছর জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করবে।
( বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৫) ।
এয়াজুজ মাজুজুজের ধ্বংসের পর হযরত ঈসা (আ) এর যুগ চলবে, তখন দুনিয়াতে আর কোন কাফের থাকবে না, সকলেই ঈমানদার হবে, খোদা ভিরু মুত্তাকি হবে, তখন দুনিয়াতে এমন ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা হবে এমন শাসন প্রতিষ্ঠা হবে যে দুনিয়াতে বরকত নাজিল হবে, ১টি আঙ্গুর খেয়ে কয়েকজনের পেট ভরে যাবে, জমিনে যদি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয় তখন বরকত আসমান থেকে নাজিল হয়।
এত বড় বড় আনার হবে সে আনারের ছিলকার ছায়ায় কয়েকজন আশ্রয় নিতে পারবে। এভাবে যখন মানুষ তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহর এবাদত করে, আল্লাহর দেয়া বিধানকে সব জায়গায় প্রতিষ্ঠা করে তখন আল্লাহ তায়ালা বরকত নাজিল করেন।
-এয়াজুজ মাজুজ স্যাটেলাইটে ধরা পরেনা কেন?
এই এয়াজুজ মাজুজের ব্যপারে অনেকে এই অভিযোগ করে যদি সত্যিকারের এয়াজুজ মাজুজ নামক কোন জাতি থাকত তাহলে দুনিয়াতে এত শক্তিশালি স্যাটেলাইট/ গুগোল ম্যাপ এর মধ্যে এদেরকে দেখা যায়না কেন?
এর কারন হল মানুষের তৈরী এই স্যাটেলাইট থেকে আল্লাহর শক্তি অনেক অনেক বড়, আল্লাহ রব্বুল আলামিন এদেরকে কেয়ামত পযন্ত গোপন রাখার ইচ্ছা তাই দুনিয়ার কোন স্যাটেলোইট এদেরকে ধরতে পারবেনা।
আবার অনেকে দাবী করেন চাইনা জাতেই হল এয়াজুজ মাজুজ, আবার অনেকে দাবী করেন ইহুদীরাই হল এয়াজুজ মাজুজ। যারা সারা দুনিয়ায় নানান ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করে রেখেছে প্রকাশ্যে ও গোপনে। এমন এমন ধ্বংসাত্মক জিবানু অস্ত্র তারা তৈরী করছে যা মুহুর্তেই সবকিছুকে ধুলিস্যাৎ করে দিতে সক্ষম, সে অথে অনেকে চীনাকে অনেকে ইসরাইলীদেরকে এয়াজুজ মাজুজের সাথে তুলনা করেছেন।
এসব হল বিভিন্ন জনের দাবী, তবে এ ব্যপারে কুরআন ও সুন্নতে যতটুকু আছে ততটুকু বয়ান করাই শ্রেয়। তবে এই এয়াজুজ মাজুজ অবশ্যই কিয়ামতের আগে হযরত ঈসা (আ) এর সময় দুনিয়াতে ছড়িয়ে পরবে। আর হযরত ঈসা (আ) এর দোয়ার বরকতে এই ফিতনাবাজ জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
ইমরান বিন হুছাইন (রা:) থেকে বর্ণিত, কোন এক ভ্রমণে আমরা নবীজীর সাথে ছিলাম। সাথীগণ বাহন নিয়ে এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়ল। নবীজী উচ্চকণ্ঠে পাঠ করলেন- হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্য-ধাত্রী তার দুধের শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুত: আল্লাহ্র আযাব বড় কঠিন…[সূরা হাজ্ব, আয়াত:১-২] নবীজীর উচ্চবাচ্য শুনে সাহাবিগণ একত্রিত হতে লাগলেন, সবাই জড়ো হলে বলতে লাগলেন- তোমরা কি জান-আজ কোন দিবস? আজ হচ্ছে সেই দিবস, যে দিবসে আদমকে লক্ষ্য করে আল্লাহ্ বললেন: জাহান্নাম বাসী বের কর! আদম বলবে: জাহান্নাম বাসী কে হে আল্লাহ্…!?আল্লাহ্ বলবেন- প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন জাহান্নামে আর একজন শুধু জান্নাতে!! নবীজীর কথা শুনে সাহাবীদের চেহারায় ভীতির ছাপ ফুটে উঠল। তা দেখে নবীজী বলতে লাগলেন- আমল করে যাও! সুসংবাদ গ্রহণ কর! সেদিন তোমাদের সাথে ধ্বংস-শীল আদম সন্তান, ইয়াজূজ-মাজূজ এবং ইবলিস সন্তানেরাও থাকবে, যারা সবসময় বাড়তে থাকে (অর্থাৎ ওদের থেকে ৯৯৯ জন জাহান্নামে, আর তোমাদের থেকে একজন জান্নাতে), সবাই তখন আনন্দ ও স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল। আরো বললেন- আমল করে যাও! সুসংবাদ গ্রহণ কর! ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! মানুষের মাঝে তোমরা সেদিন উটের গায়ে ক্ষুদ্র চিহ্ন বা জন্তুর বাহুতে সংখ্যা চিহ্ন সদৃশ হবে…[তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ]
কোন মন্তব্য নেই