মসজিদে আকসা ও ইহুদী (ইসরাইল) ফিতনা । দাজ্জালের সাথে ইহুদীদের যোগাযোগ। দাজ্জালের ফিতনা
মসজিদে আকসা ও ইহুদী (ইসরাইল) ফিতনা । দাজ্জালের সাথে ইহুদীদের যোগাযোগ। দাজ্জালের ফিতনা
الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ
-আজ আমরা ঈদ করছি কিন্তু ফিলিস্তিনের মুসলমানদের কি অবস্থা?
তারাও আমাদের ভাই কিন্তু তাঁদের উপর ইহুদী হায়েনারা যে জুলুম করছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আল্লাহ তায়ালা সারা বিশ্বের মুসলমানদের সকল জালেমদের অত্যাচার নিপিড়ন থেকে হেফাজত করুন আমিন।
-মসজিদুল আকসা কে প্রতিষ্ঠা করেন?
আল-কুদস বলতে বোঝায় ফিলিস্তিনের জেরুজালেম পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত পবিত্র মসজিদ। যা মাসজিদুল আকসা বা ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ নামে পরিচিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের চল্লিশ বছর পর তাঁর ছেলে হজরত ইসহাক (আ.)-এর সন্তান হজরত ইয়াকুব (আ.) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে ‘আল-আকসা’ মসজিদটি নির্মাণ করেন। অতঃপর তাঁর ছেলে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর বংশধর হজরত দাউদ (আ.)-এর সন্তান হজরত সুলাইমান (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। তিনি রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন।
-মুসলমানদের প্রথম কাবা
প্রথমে ‘কাবা’ কিবলা থাকলেও মসজিদুল আকসা বা ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ স্থাপনের পর এটি কিবলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ওহি লাভ ও নবুয়ত প্রকাশের সময় ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ই কিবলা ছিল। নবীজি (সা.) মদিনায় হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই কিবলা পরিবর্তন হয়ে পুনরায় ‘কাবা’ কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়। মদিনা শরিফে দুই কিবলার মসজিদও রয়েছে। ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে ‘তাহবিলে কিবলা’ বা কিবলা পরিবর্তন বলা হয় - যা সুরা বাকারার ১৪৪ নং আয়াতে আছে
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاء فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّواْ وُجُوِهَكُمْ شَطْرَهُ
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হার ামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। [সুরা বাকারা - ২:১৪৪]
এই থেকেই ইসলামের দ্বিতীয় কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের প্রথম কিবলা হিসেবে পরিচিত হয়।
-মসজিদে আকসায় সফর করার ফজিলত
হাদিসে আছে, ‘কাবা শরিফ তথা মাসজিদুল হারামে নামাজে এক লাখ গুণ সওয়াব, মদিনা শরিফে মসজিদে নববিতে নামাজে পঞ্চাশ হাজার গুণ সওয়াব, বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজে পঁচিশ হাজার গুণ সওয়াব।’
সে জন্য বেশী সাওয়াব লাভের আশায় প্রত্যেক মুসলমানের মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদে আকসায় সফর করা উচিত
যেমন এ ব্যপারে সহিহ বুখারীর ১৭৪২ নং হাদীস
وَلاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِ الْحَرَامِ، وَمَسْجِدِي، وَمَسْجِدِ الأَقْصَى ".
মসজিদে হারাম, আমার মসজিদ এবং মসজিদে আকসা – এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহন করবে না।
-মিরাজে মসজিদে আকসায় মহানবী (দ)
রাসুলুল্লাহ (সা.) মিরাজ রজনীতে মসজিদুল হারাম তথা কাবা শরিফ থেকে মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দাস প্রথম সফর করেন, যা ইসরা নামে পরিচিত- সুরা বনি ইসরাইলের ১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন
সুরা বনী-ইসরাঈল
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যা র চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। [সুরা বনী-ইসরাঈল - ১৭:১]
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মিরাজ গমনের সময় এই মসজিদে সব নবী–রাসুলের ইমামতি করে নামাজ আদায় করেন। এতে তিনি ‘ইমামুল আম্বিয়া’ সব নবীর ইমাম ও ‘সায়্যিদুল মুরসালিন’ সব রাসুলের নেতা হিসেবে স্বীকৃত হন।
- বায়তুল মুকাদ্দাস এর আশে পাশে বরকতময়
(আল্লাজি বারাকনা হাউলাহু)
এই অঞ্চল প্রাকৃতিক নদ-নদী, ফল-ফসলের প্রাচুর্য এবং নবীদের বাসস্থান ও কবরস্থান হওয়ার কারণে পৃথক বৈশিষ্ট্যের দাবী রাখে। আর এই কারণে একে বরকতময় আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এ এলাকা অসংখ্য নবী–রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত, এর আশপাশে অনেক নবী–রাসুলের মাজার রয়েছে। এটি দীর্ঘকালের ওহি অবতরণের স্থল, ইসলামের কেন্দ্র এবং ইসলামি সংস্কৃতির চারণভূমি ও ইসলাম প্রচারের লালনক্ষেত্র। এই পবিত্র ভূমির ভালোবাসা প্রোথিত রয়েছে প্রত্যেক মোমিনের হৃদয়ের গভীরে।
-মসজিদে আকসা মুসলিমদের দখলে
দ্বিতীয় খলিফাতুল মুসলিমিন ফারুকে আজম হজরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে ৬৩৮ সালে বায়তুল মুকাদ্দাস, জেরুজালেমসহ পুরো ফিলিস্তিন সম্পূর্ণরূপে মুসলমানদের অধিকারে আসে।
-মসজিদে আকসা আবার হাতছাড়া হয়
১০৯৬ সালে খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন জবরদখল করে নেয়।
-সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবীর পুঃণদখল
১১৮৭ সালে মুসলিম বীর সিপাহসালার সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি (র.) পুনরায় জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন।
-ইহুদীদের ষড়যন্ত্র
এরপর থেকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এ অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা তৎকালীন তুরস্কের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতির অনুমতি চায়; দূরদর্শী সুলতান তাদের এ দুরভি সন্ধিমূলক প্রস্তাবে রাজি হননি। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে এবং ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে; অল্প সময়ের মধ্যে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে ইহুদি সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দাঙ্গা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়। এ সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ফিলিস্তিন ভূমিকে মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ফলে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়ানবাদী অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে মুসলমানদের প্রতি জায়ানবাদী ইসরায়েলিদের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে, যা অদ্যাবধি চলছে।
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রাষ্ট্র ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে ‘মসজিদুল আকসা’ জবরদখল করে নেয়। এরপর থেকে সেখানকার মুসলিম জনগণ মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জায়ানবাদী ইসরায়েল একের পর এক মুসলিম–অধ্যুষিত এলাকা জবরদখল করে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখে এবং হত্যা-গুম চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের এই ঘৃণ্য পরিকল্পনা সচেতন মুসলমানদের সংগ্রামী প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখে পরিপূর্ণভাবে সফল হয়নি। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ ফিলিস্তিনিদের এই প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা ও সমর্থন করেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে ‘আল-আকসা’ মসজিদ মুক্তির লক্ষ্যে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকের শুক্রবারে ‘আল-কুদস’ দিবস পালন করে। তখন থেকে সারা বিশ্বে দিনটি মুসলিম মুক্তির প্রতীকরূপে পালিত হয়।
কিন্তু ইসরাইলিরা মুসলমানদের ইহুদী বিরোধী সে ঐক্যকে ভাঙ্গতে সক্ষম হয়েছে। এখন কিছু মুসলিম রাষ্ট্র ফিলিস্থিনি মুসলমানদের বাদ দিয়ে েইহুদীদের পক্ষ অবলম্বন করছে। যা কিয়ামতের আলামত
মহানবী (দ) এর যুগে ইহুদীরা কেমন ছিল?
-ইহুদীরা জিবরাইলকে শত্রু মনে করে
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘একদা আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে মদিনার বসতিহীন এলাকা দিয়ে চলছিলাম। তিনি একদল ইহুদির কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা একজন অন্যজনকে বলতে লাগল, তাঁকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো। আরেকজন বলল, ‘তাঁকে কোনো প্রশ্ন কোরো না, সে হয়তো এমন কোনো জবাব দেবে, যা তোমরা পছন্দ করো না।’ আবার কেউ কেউ বলল, ‘তাঁকে আমরা প্রশ্ন করবই।’ অতঃপর তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আবুল কাসিম, রুহ কী?’ অল্লাহর রাসুল (সা.) চুপ করে রইলেন, আমি মনে মনে বললাম, তাঁর প্রতি ওহি অবতীর্ণ হচ্ছে। তাই আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। অতঃপর সে অবস্থা কেটে গেলে তিনি তিলাওয়াত করলেন,
]
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُم مِّن الْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً
তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। [সুরা বনী-ইসরাঈল - ১৭:৮৫]
সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৫)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, তারা মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করে আপনার কাছে এই উত্তর কে নিয়ে এসেছে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে জিবরাইল এসেছেন। তারা বলল, তাঁকে তো আমাদের শত্রু উত্তর প্রদান করেছে।
-জিরাইলের ব্যপারে ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার জবাব
قُلۡ مَنۡ کَانَ عَدُوًّا لِّجِبۡرِیۡلَ فَاِنَّهٗ نَزَّلَهٗ عَلٰی قَلۡبِکَ بِاِذۡنِ اللّٰهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ هُدًی وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ
বল, ‘যে ব্যক্তি জিবরাঈলের শত্রু হয়েছে, (সে রাগে মরে যাক) কেননা সে তো আল্লাহর হুকুমে তোমার অন্তরে কুরআন পৌঁছিয়ে দিয়েছে, যা এর পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং যাতে ঈমানদারদের জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ রয়েছে’।
مَنۡ کَانَ عَدُوًّا لِّلّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ رُسُلِهٖ وَ جِبۡرِیۡلَ وَ مِیۡکٰىلَ فَاِنَّ اللّٰهَ عَدُوٌّ لِّلۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۹۸﴾
যে ব্যক্তি আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের ও তাঁর রসূলগণের এবং জিবরাঈলের ও মীকাইলের শত্রু সাজবে, নিশ্চয়ই আল্লাহও (এসব) কাফিরদের শত্রু। (সুরা বাকারা ৯৭-৯৮)
-ইহুদীদের পাদ্রির তাওরাতের যেনার শাস্তি পরিবর্তন
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এক ইহুদি পুরুষ ও এক ইহুদি নারীকে আনা হলো। তারা দুজনই ব্যভিচার করেছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এ সম্পর্কে তোমরা তোমাদের কিতাবে কী পেয়েছ? তারা বলল, আমাদের পাদ্রিরা চেহারা কালো করার ও দুজনকে গাধার পিঠে উল্টো বসিয়ে প্রদক্ষিণ করার নিয়ম চালু করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), তাদের তাওরাত নিয়ে আসতে বলুন। এরপর তা নিয়ে আসা হলো। তাদের একজন রজমের আয়াতের ওপর নিজের হাত রেখে দিল এবং এর আগে-পিছে পড়তে লাগল। তখন ইবনে সালাম (রা.) তাকে বললেন, তোমার হাত ওঠাও। দেখা গেল তার হাতের নিচে রয়েছে রজমের আয়াত। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের দুজনের ব্যাপারে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যার আদেশ দিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, তাদের উভয়কে সমতল স্থানে রজম করা হয়েছে। তখন পুরুষটাকে দেখেছি স্ত্রীলোকটির ওপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৮১৯)
-আবদুল্লাহ বিন সালামের ইসলামগ্রহণ
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) নবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করছি। এগুলোর ঠিক উত্তর নবী ছাড়া অন্য কেউ জানে না। ১. কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত কী?, ২. জান্নাতবাসীদের সর্বপ্রথম খাদ্য কী? ৩. কী কারণে সন্তান আকৃতিতে কখনো পিতার মতো, কখনো মায়ের মতো হয়? নবী (সা.) বললেন, এ বিষয়গুলো সম্পর্কে এই মাত্র জিবরাইল (আ.) আমাকে জানিয়ে গেলেন। তা হলো : ১. কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সর্বপ্রথম আলামত লেলিহান অগ্নি যা মানুষকে পূর্বদিক হতে পশ্চিম দিকে ধাবিত করে নিয়ে যাবে এবং সবাইকে একত্র করবে।
২. সর্বপ্রথম খাদ্য যা জান্নাতবাসী খাবে তা হলো মাছের কলিজার বাড়তি অংশ।
৩. যদি নারীর আগে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান পিতার মতো হয়। আর যদি পুরুষের আগে নারীর বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান মায়ের মতো হয়। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসুল। এরপর তিনি ইহুদিদের ডেকে তাঁর সম্পর্কে জানার পরামর্শ দিলেন। নবী (সা.) তাদের ডাকলেন, তারা হাজির হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির সন্তান। তিনি আমাদের সবচেয়ে মর্যাদাবান এবং সবচেয়ে মর্যাদাবান ব্যক্তির সন্তান। তখন আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বেরিয়ে এলেন এবং কলেমা শাহাদাত পাঠ করলেন। তা শুনে ইহুদিরা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে খারাপ লোক এবং খারাপ লোকের সন্তান। তারা তাকে তুচ্ছ করার উদ্দেশ্যে আরো অনেক কথা বলল। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি এটাই আশঙ্কা করেছিলাম। (সংক্ষেপিত : সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৯৩৮)
এভাবে ইহুদীরা তখনও ইসলামের শত্রু এখনও শত্রু কিয়ামত পযন্ত তারা ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু
-ইহুদীদের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র
১) ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যে টুইন টাওয়ারে হামলা তাও ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের ফল।
২) আই এস এর ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার যে ঘোষনা করেছে এবং জঙ্গি স্টাইলে বিভিন্ন কাজ করে ভিডিও করে মিডিয়ায় প্রকাশ করে মুসলমানদের সুনামকে নস্যাৎ করছে এই আই এসও মুলত ইসরাইলের সৃষ্টি।
আই এস এর যে নেতা খলিফা আবু বকর আল বাগদাদি সেও একজন ইহুদী যার আসল নাম হল আকা ইলিয়ট শিমন
৩) দাজ্জালের অপেক্ষায় ইহুদীরা- ইহুদি জাতির কাছে এ মসীহ হচ্ছেন দাজ্জাল। নবী মুহাম্মদ (স.) এর হাদীস অনুযায়ী কিয়ামতের আগে পৃথিবীতে দু'জন মসীহ আসবেন। একজন ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) বা ঈসা মসীহ, যিনি হবেন সত্যের ধারক। তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং কিয়ামতের আগে আবার আসবেন। আর অন্যজন মসীহ দাজ্জাল, যে হবে মিথ্যুক এবং সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী।
আমরা মুসলমানরা দোয়া করি (আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ফিতনাতি দাজাজল) আর ইহুদীরা দাজ্জালকে তাদের জন্য রহমত মনে করে।
মুহাম্মদ (স.) একইভাবে বলে গেছেন মিথ্যুক দাজ্জাল হবে ইহুদিদের নেতা এবং তাদের নিয়েই সে সারাবিশ্বে সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে। যাকে হত্যা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন ঈসা (আ.)।
- দাজ্জালের সাথে ইহুদীদের যোগাযোগ
দাজ্জালের সঙ্গে ইতিমধ্যে ইহুদিদের যোগাযোগ শরু হয়ে গেছে! বিষয়টি শুনতে বিস্ময়কর মনে হতে পারে এ কারণে যে, এ মুহুর্তে পৃথিবীতে দাজ্জালের অবস্থান কোথায় সুনির্দিষ্টভাবে কারো জানা নেই। তবে একজন শীর্ষ ইহুদি ধর্মযাজক দাবি করেছেন দাজ্জালের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং সে শীঘ্রই আত্নপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
চেইম ক্যানিভস্কি নামক ওই ইহুদি ধর্মযাজকের এ দাবি কতটুকু যোক্তিক তা রাসূল (সা.)এর একটি হাদীস বিশ্লেষণ করলে কিছুটা অনুমান করা যায়। মহিলা সাহাবি ফাতিমা বিনতে ক্বায়েস (রা.)বর্ণনা করেন। মুসলিম শরীফসহ কয়েকটি গ্রন্থে আসা বিখ্যাত সেই হাদীসটির সংক্ষিপ্ত হচ্ছে এই- রাসূল (সা.) বলেন, ‘তামিম আদ-দারি ছিল একজন খ্রিস্টান। সে আমার কাছে আগমন করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছে, যা তোমাদের কাছে আমার বলা দাজ্জালের ঘটনার সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে যায়।
তামিম আদ-দারি বলেছে, কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে আমি একবার সমুদ্রভ্রমণে বের হই। একসময় ঝড়ের কবলে পড়ে দিকভ্রান্ত হয়ে যাই। এক মাস পর্যন্ত সমুদ্রের ঢেউ আমাদের নিয়ে খেলা করতে থাকে। পরিশেষে, ঢেউ পশ্চিম দিকের একটি দ্বীপে আমাদেরকে নিয়ে পৌঁছায়। তারপর আমরা ছোট ছোট নৌকায় চড়ে দ্বীপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করি। সেখানে এক বিশেষ প্রাণীর সন্ধান পাই। প্রাণীটি স্থূল ও ঘনচুলবিশিষ্ট। কথপকথনে সে জানাল, সে জাসসাসাহ (সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা)। বলল, তোমরা ওই ঘরের দিকে যাও সেখানে একজন তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সেখানে আমরা দীর্ঘকায় এক মানবকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেলাম। এমন ভয়ংকর মানুষ আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি। তার হাত দু’টিকে ঘাড়ের সঙ্গে একত্রিত করে হাঁটু এবং গোড়ালির মধ্যবর্তী স্থানে লোহার শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হয়েছে।
সে শুরুতে আমাদের পরিচয় জানতে চায়। আমরা পরিচয় দিলে সে বলে, আমাকে তোমরা ‘বাইসান’ সম্পর্কে সংবাদ দাও। সেখানের খেজুর গাছগুলো কি এখনও ফল দেয়? আমরা জানাই, হ্যাঁ। সে বলে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন গাছগুলোতে কোন ফল ধরবে না। এরপর সে বলল, আমাকে তাবরিয়া উপসাগর সম্পর্কে সংবাদ দাও। সেখানে কি এখনও পানি আছে? বললাম, প্রচুর পানি আছে। সে বলল, অচিরেই সেখানকার পানি শেষ হয়ে যাবে। সে আবার বলল, আমাকে যুগার কূপ সম্পর্কে সংবাদ দাও, সেখানে কি এখনও পানি আছে? বললাম, প্রচুর পানি রয়েছে। লোকেরা সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে। আমাকে উম্মিদের নবি সম্পর্কে জানাও- সে প্রশ্ন করলে আমরা বলি, তিনি মক্কায় আগমন করে বর্তমানে মদিনায় হিজরত করেছেন। আরবরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছে? তার প্রশ্নের জবাবে আমরা বলি, হ্যাঁ। পার্শ্ববর্তী আরবদের উপর তিনি জয়লাভ করেছেন। ফলে তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলল, তার আনুগত্য করাই তাদের জন্য ভালো।
এরপর সে বলল, এখন আমার কথা শোনো- আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভেতরে পৃথিবীর সব দেশ ভ্রমণ করব। তবে মক্কা-মদিনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। এরপর রাসূল (সা.) সাহাবিদের লক্ষ্য করে বললেন, ‘তামিম আদ-দারির বর্ণনাটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তার বর্ণনা আমার বর্ণনার অনুরূপ হয়েছে। বিশেষ করে মক্কা ও মদিনা সম্পর্কে। শুনে রাখো! সে আছে সিরিয়ার সাগরে (ভূমধ্যসাগরে) অথবা ইয়েমেন সাগরে। না! বরং পূর্ব দিকে আছে, সে পূর্ব দিকে আছে। এই বলে তিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন।’
এই ঘটনা থেকে এটা সুস্পষ্ট, দাজ্জালের জন্ম হয়েছে অনেক আগেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সময়েই সে ছিল। এ হাদীসটি বিশ্লেষণ করলে আমরা কিছু বিষয় ধারণা পাই। ইসলামগ্রহণের পূর্বে দাজ্জালের সঙ্গে সাহাবি তামিম দারি (রা.)এর সাক্ষাৎ হয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায় দাজ্জালের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্ভব। তার একজন গুপ্তচরকে সেখানে দেখা গেছে। আর গুপ্তচরের কাজই হচ্ছে তথ্যের আদান প্রদান। দাজ্জালের কথা থেকেও স্পষ্ট সে পৃথিবীর খবরাখবর রাখছে এবং তথ্য জানতে খুবই আগ্রহী।
আরেকটি হাদীস অনুযায়ী তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে প্রচণ্ড রাগ থেকে। এ থেকেও অনুমান করা যায়, দাজ্জাল আগে থেকেই পৃথিবীর খবরাখবর সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট থাকবে। সে গায়েব জানে না। কোনো মাধ্যম ব্যবহার করেই তাকে আপডেট থাকতে হবে এবং আত্নপ্রকাশের প্রস্তুতি নেবে। দাজ্জাল যেহেতু ইহুদিদের নেতা সেহেতু ইহুদিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটতে পারে এটি অস্বাভাবিক নয়। বাকী আল্লাহই ভালো জানেন। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বের সবেচেয়ে প্রযুক্তি সক্ষম জাতি ইহুদি। ফলে এ সক্ষমতা তাদের দাজ্জালকে খুঁজে পেতে সহায়ক হতে পারে।
-মুসলমানরা ইহুদীদের কাছে আর কতদিন মার খাবে?
গত ১০০ বছর ধরে ফিলিস্তিনের ভাইয়েরা অভিশপ্ত ইহুদীদের হাতে মার খেয়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে, ১৯৬৭ সালের পর থেকে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত, অপমানিত, উচ্ছেদ, হত্যা, দেশান্তর হয়েই যাচ্ছে। এখান প্রশ্ন হল, মুসলমানরা আর কত দিন অভিশপ্ত ইহুদীদের হাতে মার খাবে? আর কতদিন ফিলিস্তিনের ভাইদের রক্ত দিতে হবে? কবে আসবে মুসলমানদের সুদিন? উত্তর হল, ইনশাল্লাহ খুব শীঘ্রই মুসলমানদের সুদিন ফিরে আসছে। খুব শীঘ্রই ইহুদীদের অত্যাচার, লাঞ্ছনা, উচ্ছেদ, হত্যা, গনহত্যা, ধর্ষণ, ও দেশান্তর থেকে মুক্তি পাবে। মুসলমানরা খুব শীঘ্রই জেরুজালেমকে খেলাফতের রাজধানী করবে।
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ آمَنُواْ الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُواْ وَلَتَجِدَنَّ أَقْرَبَهُمْ مَّوَدَّةً لِّلَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ قَالُوَاْ إِنَّا نَصَارَى ذَلِكَ بِأَنَّ مِنْهُمْ قِسِّيسِينَ وَرُهْبَانًا وَأَنَّهُمْ لاَ يَسْتَكْبِرُونَ
আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরেকদেরকে পাবেন এবং আপনি সবার চাইতে মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী তাদেরকে পাবেন, যারা নিজেদেরকে খ্রীষ্টান বলে। এর কারণ এই যে, খ্রীষ্টানদের মধ্যে আলেম রয়েছে, দরবেশ রয়েছে এবং তারা অহঙ্কার করে না। [সুরা মায়েদা - ৫:৮২]
♣️Greater Israel এর সিমানা কতটুকু?
বর্তমান সময়ে যারা Eschatology বা, আখিরুজ্জামান নিয়ে পড়াশোনা করেন তাদের কারো কারো ধারণা পৃথিবীর ভবিষ্যত সুপার পাওয়ার রাষ্ট্র হবে ঈসরাইল এবং ইহুদীরা খুব শীঘ্রই তাদের Greater Israel প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে এবং একই সাথে তারা পুরো পৃথিবীর নেতৃত্ব দিবে। সাধারণত Greater Israel বা, বৃহত্তর ঈসরাইল বলতে সম্পূর্ণ ফিলিস্তিন, মিশর, ইরাক, কুফা, কুয়েত, সিরিয়া, তুরস্ক, সৌদিআরব এর উত্তরাংশ নিয়ে ইসরাইল তাদের বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করবে। যদিও পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তাদের ধারণার উল্টো বলেছেন,
আল্লাহ সুরা আম্বিয়ার ৯৫ নং আয়াতে বলে দিয়েছেন
وَ حَرٰمٌ عَلٰی قَرۡیَۃٍ اَهۡلَکۡنٰهَاۤ اَنَّهُمۡ لَا یَرۡجِعُوۡنَ
আমি যে সব জনবসতি ধ্বংস করেছি তাদের জন্য এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে তারা আর ফিরে আসবে না।
(সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং - ৯৫)
এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, ইহুদীরা কখনো Greater Israel বা, ইহুদীদের কল্পিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। ভবিষ্যতে ঈসরাইল কোন ভাবেই সুপার পাওয়ার হবে না, এটা একেবারেই নিশ্চিত করে বলা যায়।
আল্লাহ তায়ালা এই অভিশপ্ত জাতি, ফিতনা বাজ জাতির সকল ষড়যন্ত্র থেকে সারা বিশ্সের মুসলমানদেরকে হেফাজত করুন, বাংলাদেশকে হেফাজত করুন, ফিলিস্তিন সহ গোটা আরব বিশ্বকে হেফাজত করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই