ইসলামে কি প্রতিশোধ নেয়া জায়েজ?

 

ইসলামে কি প্রতিশোধ নেয়া জায়েজ?



এক মহিলা এক হুজুরের কাছে ফোন করে বলতে লাগল হুজুর আপনার ওয়াজ আমি নিয়মিত শুনি কিন্তু আপনার ওয়াজ শুনে শুনে আমি ধ্বংস হয়ে গেছি।

কারন আপনি সারাক্ষণ ওয়াজে বলেন ধৈর্য্য ধারন করতে ক্ষমা করতে, আমি আজ ১০ বছর যাবৎ স্বামী ও শুশুড় বাড়ীর লোকদের জুলুম সহ্য করে আসছি, কোন প্রতিবাদ করিনি, প্রতিশোধ গ্রহণ করিনি।

 

আপনি ওয়াজে বলেন নিশ্চয়ই কষ্টের পর সুখ আছে, সে সুখের আশায় আমি বরবাদ হয়ে গেছি। মনে করেছিলাম তারা সংশোধন হবে কিন্তু দিন দিন তাদের অত্যাচার বাড়তেই আছে।আপনার সহ্য ধৈর্য়্যের ফর্মূলা ভুল।

 

তখন হুজুর সে মহিলাকে জবাব দিল আমি বরদাশত করার যে ওয়াজটি করেছি তা ঘর সংসারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, সেটা হল অপশন (এ), যদি অপশন এ তে সমস্যা হয় তাহলে কুরআনে অপশন (বি) ও আছে আর তা হল বরদাশত না করা। অণ্যায়ের জবাবে অন্যায় করা।

যেমন আল্লাহ তায়ালা সুরা শোরার ৪০ নং আয়াতে বলেন

وَ جَزٰٓؤُا سَیِّئَۃٍ سَیِّئَۃٌ مِّثۡلُهَا ۚ فَمَنۡ عَفَا وَ اَصۡلَحَ فَاَجۡرُهٗ عَلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیۡنَ

অন্যায়ের প্রতিবিধান হল অনুরূপ অন্যায়। অতঃপর যে ক্ষমা করে এবং সমঝোতা করে, তার প্রতিদান দেয়া আল্লাহর যিম্মায়। সীমাঙ্ঘনকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। (সুরা শুরা ৪০)



যদি বরদাশত করার ফলে অন্যায় আরো বৃদ্ধি পায় তখন কিন্তু বরদাশত না করে জবাব দিতে হবে, আবার প্রতিশোধও হতে হবে যতটুকু অন্যায় ততটুকু, প্রতিশোধ গ্রহণ করতে গিয়ে যেন সীমালংঘন না হয়, তবে যদি ক্ষমা ও সমঝোতা করার ফলে যদি পরিবেশ পরিস্থিতি সুন্দর থাকবে বলে মনে হয় তাহলে ক্ষমা করাই শ্রেয়।

 

যেমন সুরা শুরার ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

وَ لَمَنۡ صَبَرَ وَ غَفَرَ اِنَّ ذٰلِکَ لَمِنۡ عَزۡمِ الۡاُمُوۡرِ ﴿۴۳﴾

আর যে ব্যক্তি (অত্যাচারিত হওয়ার পরও) ধৈর্য ধারণ করে, আর (অত্যাচারীকে) ক্ষমা করে দেয়, তাহলে তা অবশ্যই বড় কলিজা ওয়ালার কাজ।

তাছাড়া ক্ষমা করা হল সকল নবীদেরও সুন্নত।

 

সুতরাং এর দ্বারা বুঝা গেল নাম্বার (১) ইসলামে প্রতিশোধ নেয়াও জায়েজ নাম্বার (২) মাফ করা হল উত্তম। কিন্তু মাফ করা কখন উত্তম? (ফামান আফা ওয়া আসলাহ) মাফ করার দ্বারা যদি সমাজ সংস্কার হয় সংশোধন হয় যাকে মাফ করেছেন সে শুধরে যায় তাহলে মাফ করা উত্তম। কিন্তু যদি মাফ করার দ্বারা যদি সমাজের লাভের পরিবর্তে ক্ষতি হয় পরিবেশ পরিস্থিতি নষ্ট হয় তাহলে মাফ না করে যথাযথভাবে প্রতিবাদ করা প্রতিহত করা প্রতিশোধ গ্রহণ করা উত্তম।

শোয়াবুল ঈমানের ৭৯৬০ নং হাদীস হযরত আনাস (রা) বয়ান করেন রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন কিয়ামতের দিন একজন আহ্বান কারী আহ্বান করবেন আর বলনে যে ব্যক্তির প্রতিদান আল্লাহর যিম্মায় সে যেন জান্নাতে প্রবেশ করে, তখন সে সব লোক জান্নাতে প্রবেশের জন্য দাঁড়াবে যারা দুনিয়াতে ক্ষমা করেছেন। আল্লাহ এরশাদ করেছেন (ফামান আফা ওয়া আসলাহ ফাআজরুহু আলাল্লাহ) যারা মাফ করেছে তাদের প্রতিদান আল্লাহর দায়িত্বে।

 

অপর এক হাদীস শরীফে আছে এক সাহাবী প্রশ্ন করে এয়া রাসুলাল্লাহ এক ব্যক্তি আমার মাল ছিনতাই করতে চাই আমি কি করব? নবীজি বললেন তোমার মাল তাকে ছিনতাই করতে দিও না, সাহাবী বলে হুজুর সে আমার সাথে যদি সে মালের জন্য লড়াই করে আমি কি করব? হুজুর বললেন তুমিও তার সাথে লড়াই কর, এই লড়াইতে যদি সে তোমাকে হত্যা করে তাহলে তুমি শহিদ আর যদি তুমি তাকে হত্যা করে দাও সে জাহান্নামে যাবে।

 

এই হাদীসে হুজুর (দ) এই তরগীব দিচ্ছেন যে নিজের হকের জন্য লড়াই কর। কেননা এখানে মাফ করার দ্বারা সমাজের উপকার হবেনা বরং লড়াই করার মধ্যেই উপকার। কেননা এই ছিনতাইকারীকে যদি আপনি প্রতিবাদ করা ছাড়া ছেড়ে দেন সে আগামীকাল আরেকজনকে ছিনতাই করবে। তাই লড়াই করে সে ছিনতাইকারীকে দমন করাতেই মানুষের উপকার সমাজের উপকার। কারন এসব ছিনতাকারী ছিনতাই করতে গিয়ে অনেককে জানেও মেরে ফেলার ঘটনা আছে। তাই এই ধরনের অপরাধীকে কুরআন এদেরকে মাফ করার অনুমতি দেয়না। তবে এক্ষেত্রেও যদি কেহ চাই নিজের জান বাঁচানোর খাতিরে ছিনতাইকারীকে সব দিয়ে দিলে তাও জায়েজ হবে।

 

ডাকাতদের মধ্যে যারা গ্রেফতার হওয়ার আগে তওবা করে তাদের ব্যপারে কুরআন বলে

إِلاَّ الَّذِينَ تَابُواْ مِن قَبْلِ أَن تَقْدِرُواْ عَلَيْهِمْ فَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

কিন্তু যারা তোমাদের গ্রেফতারের পূর্বে তওবা করে; জেনে রাখ, আল্লাহ ক্ষমাকারী, দয়ালু। [সুরা মায়েদা - ৫:৩৪]

 

দেখুন কুরআন আমাদেরকে কি সুন্দরভাবে গাইড করছে- ফরমায়েছেন যে ডাকাত বা ছিনতাইকারী গ্রেফতার হওয়ার আগেই তওবা করে নেয় তাহলে তাদের জন্য ক্ষমা জায়েজ

 

কিন্তু ডাকাতি কালিন যদি ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয় আর ডাকাত ডাকাতির সময় যদি কাউকে হত্যা করে তার শাস্তি ক্ষমা করার এখতেয়ার কারো নাই এমনকি সে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা যদি ডাকাতকে ক্ষমাও করে তবুও তার ক্ষমা হবেনা। এটাই হল ইসলামী শরীয়তের বিধান। সব জায়গায় ইসলাম ক্ষমা করতে উৎসাহ দেয় কিন্তু এ ক্ষেত্রে ক্ষমার কোন সুযোগ রাখেনি।কারন ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা হল সমাজের জন্য বিষফোঁড়া। তাই আপনি যদি কাউকে এমনে হত্যা করেন তাহলে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশরা আপনাকে ক্ষমা করতে পারবে, কিন্তু ডাকাতি করতে গিয়ে আপনি যদি কাউকে হত্যা করে ফেলেন তাহলে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশরা আপনাকে ক্ষমা করতে পারবেনা। ক্ষমা করলেও ক্ষমা গ্রহণযোগ্য হবেনা।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলসমুহের লিংক: সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকার অনুরোধ রইল

1) https://www.youtube.com/c/jaalhaq

2) https://www.youtube.com/allbangla1

3) https://www.youtube.com/c/Allahwalamedia

4) https://www.youtube.com/channel/UCpM_MlVrvE59Qia2XESn9AQ



আমাদের ব্লগ সমুহ

https://myjaalhaq.blogspot.com/

https://allbangladua.blogspot.com



আমাদের ফেসবুক পেজসমুহ

https://www.facebook.com/Jaalhaqbd

https://www.facebook.com/AllBanglaDua

https://www.facebook.com/karamatbd



আমাদের ফেসবুক গ্রুপ

https://www.facebook.com/groups/jaalhaqbd

 

ইনস্টাগ্রাম

https://www.instagram.com/jaalhaq.bd/


কোন মন্তব্য নেই

borchee থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.