আপনার ঘর বাঁচান, ঘরের নারীদের জন্য ১টি কাজ হারাম করে দিন
আপনার ঘর বাঁচান, ঘরের নারীদের জন্য ১টি
কাজ হারাম করে দিন
আমরা সকলেই চাই আমাদের ঘরে, জীবনে, টাকা
পয়সায়, রোজি রোজগারে বরকত হউক, আমাদের সময়ে বরকত হউক, মাল ও দৌলতে বরকত হউক, সন্তান
সন্তুতিতে বরকত হউক, সেহেত ও জিন্দেগিতে বরকত হউক, আমরা সকলেই এটি চাই।
শুধু বৃদ্ধি পাওয়ার নাম বরকত নয়, বরং বরকত
হল কোন কিছু বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যেন কল্যাণকর হয়, উপকারী হয়, সেটাই মুলত বরকত।
আর ঘরে, হায়াতে, রিযিকে, সন্তানে বরকত
তখনই হয় যখন আমাদের মধ্যে ঈমান ও তাকওয়া থাকে, কোন ঘরের লোকের মধ্যে যদি ঈমান থাকে
আল্লাহর ভয় থাকে তখণ সে ঘরে বরকত হয়। অল্প রিযিকও বেশী হয়ে যায়, কিন্তু এছাড়া যখন লোক
আল্লাহর নাফরমানি করে আল্লাহর মরজির খেলাফ কাজ করে, আল্লাহকে ভয় করেনা, আর যখন আল্লাহর
ভয় থাকেনা, তখন আল্লাহর এতাআতও হয়না, তখন সেখানে খায়র ও বরকত হয়না, সে ঘরে সবকিছু থাকার
পরও শান্তি থাকেনা, খুশি থাকেনা, এতমিনান থাকেনা।
আর সে ঘরের লোকেরা এক প্রকার ভয়, চিন্তা
ও ডিপ্রেশনের মধ্যে লিপ্ত থাকে। সব সময় তাদের এই ভয় থাকে যে জানিনা এই ঘর এই সংসার
এই টাকা এই মাল ও দৌলত থাকবে কি থাকবেনা? যদি বরকত হয় তাহলে দুনিয়ার কোন পেরেশানিতে
সে ভয় পায়না, সে সব কিছুকে আল্লাহর হকুম ভেবে স্বাভাবিক ভাবে কবুল করে নেয়। আর এর ফলে
অন্তরে এক প্রকার সুখ শান্তি অনুভব করে। এবং আল্লাহ সে দুঃসময়কে কাটিয়ে উঠা তার জন্য
সহজ করে দেন।
কুরআনে মজিদে আল্লাহ তায়ালা ফরমান 'ওয়ালাও
আন্না আহলাল কোরা আমানু ওয়াত্তাকাও লাফাতাহনা আলাইহিম বারাকাতিম মিনাস সামায়ি ওয়াল
আরদ' অর্থাৎ জনপদের অধিবাসীরা যদি আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাকওয়া অবলম্বনে
সক্ষম হয়, তবে আমি তাদের জন্য আকাশ ও জমিনের বরকতের ভাণ্ডার উন্মুক্ত করে দেব।
এ আয়াতে সাফ সাফ বলে দেয়া হয়েছে যদি আল্লাহর
ফরমাবরদারি হয় তাহলে বরকত ই বরকত, তেমনি ভাবে আমরা দেখতে পাই কুরআন ও নবী (দ) এর সুন্নতে
অসংখ্য বার এই জিকির করা হয়েছে। হযরত ইবরাহিম (আ) এর উপর আমরা প্রতি নামাজে বরকতের
দোয়া করি, আমরা বলি ( আল্লাহুম্মা বারেক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আমি মুহাম্মদ কামা বারাকতা
আলা ইবরাহিমা ওয়ালা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মজিদ) হে আল্লাহ মুহাম্মদ (দ) এবং তার আহাল এর উপর বরকত
নাজিল করুন যেভাবে ইবরাহিম ও তার আহাল এর উপর বরকত নাজিল করেছেন।
এটা এমন এক দোয়া যা আমরা প্রত্যেক নামাজে
আত্তাহিয়্যাতে পড়ি। কিন্তু যে লোক নামাজই পড়েনা সে বরকত কোথা থেকে পাবে? তাদেরতো এই
দোয়ার কোন হিস্সা হাছিল হবেনা কেননা সে বরকতের দোয়াও করেনা এবং বরকতের দোয়ার মধ্যে
অংশীদারও হয়না। কেননা যে লোক নামাজই পড়েনা, যে আল্লাহর সামনে ঝুকেও না, সেতো অনেক বড়
কল্যান থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখে। ইবরাহিম (আ) এর পর তার ছেলে ইসহাক (আ) এর ব্যপারে
কুরআনে মজিদে এসেছে আল্লাহ তায়ালা ফরমান সুরা সাফফাতে (ওয়া বারাকনা আলাইহি ওয়া আলা
ইসহাক) আর আমি তার উপরও বরকত নাজিল করেছি ও ইসহাক (আ) এর উপরও।
সে ইবরাহিম (আ এর বংশে সমস্ত নবী রসুল
দুনিয়াতে এসেছে হযরত ইসমাইল (আ) এর বংশে সবশ্রেষ্ঠ নবীর আগমন আর হযরত ইসহাক (আ) এর বংশে অসংখ্য নবী দুনিয়াতে
এসেছে। এভাবে ইবরাহিম আ এর সন্তানদের মধ্যে আল্লাহ বরকতই বরকত দান করেছেন। কারন ইবরাহিম
নিজের জন্য এবং সন্তানের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন, আমরাকি করি? সন্তানের জন্য বরকতের
দোয়া?
তেমনি ভাবে নবী (দ) যে ব্যক্তিকে বরকতের
দোয়া দিয়ে দিতেন সে মালামাল হয়ে যেত। যেমন নবী (আ) হযরত আনাস (রা) কে বরকতের দোয়া দিয়েছেন সে জন্য হযরত আনাস (রা) এর জিন্দেগীতে তিনি নিজের
আউলাদ ১০০ এর উপর সংখ্যা গননা করেছেন।
তিনি দীঘ হায়াত লাভ করেছেন এবং রিযিকেও
অফুরন্ত বরকত লাভ করেছেন। কেননা তিনি নবী (আ) এর পক্ষ থেকে বরকতের দোয়া লাভ করেছিলেন।
(আল্লাহুম্মা বারেকলাহু ফি উমুরিহি ওয়া মালিহি)
তেমনি ভাবে সাহাবায়ে কেরামও একে অপরকে
বরকতের দোয়া দিতেন, যেমন নবী (দ) যখন মদীনায় তশরীফ নিয়ে গেলেন তখন তিনি আনসার ও মুহাজির
সাহাবিদের মধ্যে একটি ভাতৃত্বের সম্পক সৃষ্টি করে দিলেন, তাদের মধ্যে একজন হিজরতকারী সাহাবী হযরত আবদুর রহমান
বিন আউফ (রা) এর সাথে হযরত সাদ বিন রবি আনসারীর সাথে ভাই করে দেন। তখন সাদ বিন রবি
আবদুর রহমান বিন আউফকে নিজের সম্পদের অর্ধেক এমনকি তার ২টি স্ত্রী থেকে ১টি স্ত্রীকে
তালাক দিয়ে আবদুর রহমান বিন আউফ এর সাথে বিয়ে দিতে চাইলেন, কিন্তু আবদুর রহমান বিন
আউফ সাদ বিন রবিকে ধন্যবাদ দিয়ে দোয়া দিয়ে বললেন (বারাকাল্লাহু লাকা ফি আহলিকা ও মালিকা ) আল্লাহ তোমার ঘরে ও মালে বরকত দান করুন।
(দুল্লুনি আলাস ছুক) আমাকে বাজারটি দেখিয়ে
দাও আমি নিজেই নিজের উপাজন করব। তারপর তিনি ব্যবসা শুরু করে দিলেন, আর তার ব্যবসায়
এতই বরকত হল যে কিছুদিন পর যখন তিনি বিয়ে করলেন তখন স্ত্রীকে মহর হিসেবে অঢেল স্বণ
দিলেন। দেখুন এতে বুঝা যায় যে অন্যের সম্পদের
দিকে লোভ না করে এবং অন্যের ঘরে ও সম্পদে মালের জন্য বরকত এর দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা
দোয়া কারীকেও মাল ও দৌলত সুখ শান্তিতে বরকত দিয়ে ভরিয়ে দেন। তাই সব সময় অপরের কল্যান
কামনা করতে হবে, বিশেষ করে আমাদের মহিলারা খুব বেশী লানত করে, বদদোয়া করে, সন্তানকে,
স্বামীকে, ভাইকে অতি টুনকু কারনে বদদোয়া দিয়ে দেয়, লানত দিয়ে দেয় যার কারনে যাকে বদদোয়া
দিল সেও বরকত শূন্য হয়ে গেল আর সে মহিলাটি বদদোয়া দিয়ে সেও বরকত থেকে খালি হেয় গেল।
আর মহিলাদের এই লানতের ব্যপারে বুখারীর ৩০৪ নং হাদীস
ঈদুল ফিতর
কিংবা কুরবানীর ঈদের দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং
নারীদের নিকট পৌঁছলেন। অতঃপর তাদের উদ্দেশে বললেন, ‘‘হে
নারী সমাজ! তোমরা দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) কর। কেননা আমাকে অবগত করানো হয়েছে যে, জাহান্নামের
অধিকাংশ অধিবাসী নারী সমাজেরই হবে।’’ (এ কথা
শুনে) তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল! এর কারণ কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, ‘‘তোমরা অধিক মাত্রায় অভিসম্পাত করে থাক এবং নিজ স্বামীদের প্রতি অবজ্ঞা
প্রদর্শন করে থাক।
অতএব আপনার ঘরকে বরকত করতে হলে ঘরের নারীদের
বদদোয়া দেয়া বন্ধ করতে হবে, কথায় কথায় লানত দেয়া বন্ধ করতে হবে। তাহলে আপনিও শান্তিতে
থাকতে পারবেন আপনার ঘর বাসীও সুখে থাকবে, আপনার কামাই রুজি রোজগারে বরকত হবে, আপনার
সন্তান সন্তুতিতে আল্লাহ বরকত দিবেন, তাদেরকে ফরমাবরদার বানাবেন এবং কল্যানকর করবেন।
কোন মন্তব্য নেই