লাইট বন্ধ করে ঘুমালে কি হয়? ঘুমানোর সুন্নত আমল।
লাইট বন্ধ করে ঘুমালে কি হয়? ঘুমানোর সুন্নত আমল।
Turn off the lights at bedtime
বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম! আসসালামু আলাইকুম জা আল হকের প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আপনারা ভালো আছেন।
আমাদের দোয়া হল আল্লাহ রাব্বুল আলামিন
আপনাকে আপনার পরিবার পরিজনকে রহমত বরকত দিয়ে ভরপুর করে দিন।
প্রিয় বন্ধুরা রাতে ঘুমানোর আগে লাইট বন্ধ
করবেন নাকি লাইট জ্বালিয়ে রাখবেন? এটা এমন একটি প্রশ্ন অনেক লোক এ ব্যপারে প্রশ্ন করেন, অনেক লোক লাইট
জ্বালিয়ে রেখে ঘুমায় আর কিছু লোক লাইট বন্ধ করে সম্পূণ অন্ধকারে ঘুমাতে অভ্যস্ত।
আজকের এই ভিডিওতে আমি আপনাদেরকে এ বিষয়ে
বিস্তারিত ইনফরমেশন দিব যে ঘুমানোর আগে লাইট বন্ধ না করলে কি হয়? এবং এ ব্যপারে প্রিয়
আঁকা (দ) এর কি কি নির্দেশনা আছে?
এই বিষয়গুলি খুবই তথ্যবহুল ও আপনার ও আপনার
পরিবারের সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। তাই ১ সেকেন্ড ও বাদ না দিয়ে শেষ পযন্ত প্রতিটি
কথা প্রতিটি লাইন অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে শুনবেন।
আর আপনি আমাদের চ্যানেল জা আল হক প্রথমবার
দেখে থাকলে আর এখনো যদি আপনি আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব না করে থাকলে আপনার কাছে
অনুরোধ আমাদের চ্যানেলটি অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করে নিবেন আর প্রতিটি ভিডিওর নোটিশ পাওয়ার
জন্য পাশে থাকা বেল আইকনে গিয়ে অল এ ক্লিক করে দিবেন।
প্রিয় বন্ধুরা আগে বাড়ার আগে আপনি আমাকে
কমেন্টে একটি কথা লিখে জানান যে আপনি ঘুমানোর সময় লাইট বন্ধ করে ঘুমান নাকি লাইট জ্বালিয়ে
ঘুমান?
আমি আপনাকে লাইট বন্ধ না করার ব্যপারে
বলব- তবে তার আগে হাদীসে মুবারাকার আলোকে ঘুমানোর আদব গুলি বলছি
হযরত বারা বিন আযিব (রা) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যখন তুমি নিজের বিছানায় আস তার আগে অজু
করে নাও, যেভাবে নামাজের জন্য অজু করা হয়। আর ডান কাত হয়ে শয়ন করবে সুত্র = বুখারী
ও মুসলিম
এর কারন হল ঘুমানোর সময় অজু সহকারে থাকা
সুন্নত, আর অজু সহকারে ঘুমালে মানুষ ভয়ংকর স্বপ্ন ও শয়তানের হাত থেকে হেফাজতে থাকে,
আর সে রাতে যদি মৃত্যুও হয় তাহলে পবিত্রতার সাথে তার মৃত্যু হবে।
আর এ অবস্থায় যদি কোন ভালো স্বপ্ন দেখে
তা সত্যে পরিণত হবে। সুত্র-শরহে মুসলিম নববী
এছাড়া ঘুমানোর আগে বিসমিল্লাহ বলে বিছানা
ভালোভাবে ঝেড়ে নেয়া উচিত। কেননা আপনার অনুপস্থিতিতে বিছানায় কি কি বিচরন করেছে আপনার
জানা নাই, হয়ত কোন পোকা মাকড় বিচ্ছু বিছানায় বা বালিশে থাকতে পারে যা আপনার নাকে মুখে
কানে ঢুকে ক্ষতি করতে পারে। সুত্র বুখারী ও মুসলিম
আমাদের উচিত ঘুমানোর আগে এসব বিষয়ের প্রতি
বিশেষ খেয়াল রাখা।
এবার আসুন জেনে নিই রাতে লাইট বন্ধ না
করার বিষয়ে:
এ ব্যপারে রাসুলুল্লাহ (দ) এর হাদিস ঘুমানোর
আগে আগুন ও চেরাগ বন্ধ করে দাও, যেমন হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ
(দ) এরশাদ করেন রাতে যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন চেরাগ নিভিয়ে দিবে। আর দরজা বন্ধ করে
দিবে। সুত্র বুখারী ও মুসলিম
আর হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা) বলেন,
নবী করিম (দ) এরশাদ করেন, ঘুমানোর সময় আপন ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রেখনা। অপর এক বর্ণনায়
আছে চেরাগ বন্ধ করে দিও। কেননা অনেক সময় ইঁদুর চেরাগ বা আগুন নিয়ে টানা হেচরা করে ঘরেই
আগুন লাগিয়ে দেয়। সুত্র= বুখারী শরীফ
বন্ধুরা আপনারা লক্ষ্য করেছেন হাদীস শরীফে
রাতে ঘুমানোর সময় চেরাগ বন্ধ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আর এই নববী ফরমানের আলোকে বলা হয় - যদি
আগুন বা চেরাগ জ্বালিয়ে রাখার দরকার হয় তাহলে তা থেকে যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে সেটা
নিশ্চীত করতে হবে, এমনিতেই আপনারা এই আধুনিক যুগেও দেখবেন বেশীরভাগ অগ্নিকান্ড হয় শটসার্কিট
এর দ্বারা। সে জন্য লাইট জ্বালানোর দরকার হলেও দুর্ঘটনা বা অগ্নিকান্ড যাতে না হয় সে
বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে বিপদ থেকে বাঁচা যায়।
সে জন্য ইমাম কুরতুবি (রহ) বলেন ঘুমানোর
আগে আগুন নিভিয়ে দিবেন বা এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবেন যাতে সে আগুন ক্ষতি না করে।
সুত্র ফতহুল বারি।
মনে রাখবেন হুজুর (দ) এর প্রতিটি কথায়
অনেক বড় হেকমত লুকায়িত আছেন। যদি বতমান যুগের লাইটের কথা বলা হয় যদিও এর দ্বারা আগুন
ধরার সম্ভাবনা নাই কিন্তু তবুও এতে আলোতো আছে।
আর হাদীসে চেরাগের কথা আলাদা ভাবে এইজন্য
জিকির করা হয়েছে কারন সে জামানায় চেরাগ আলোর জন্য জ্বালানো হত। মনে রাখবেন যে রাতকে
আল্লাহ তায়ালা নিদ্রার জন্য বানিয়েছেন, আলোর কারনে মানুষ শান্তির ঘুম যেতে পারেনা।
হাদীসে যে চেরাগের কথা বলা হয়েছে তাকে বতমান যুগের লাইটের সাথে তুলনা করা যায়,
তাছাড়া রাতে লাইটের আলোতে ঘুমানোর ব্যপারে
চিকিৎসা বিজ্ঞান এর একটি গবেষনায় এসেছে, যে লোক রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমায় তার ওজন বৃদ্ধি
পায়, এমনকি ক্যান্সেরর মত মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হয়।
অন্ধকার শরীর থেকে ঘুমের সময় মেলাটোনিন
হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে, যা শান্তির ঘুমের সহায়ক। মেলাটোনিন মাথায় পিনেয়াল গ্ল্যান্ড
থেকে নিঃসৃত হওয়া এক বিশেষ ধরনের হরমোন, যা বুদ্ধি বাড়ায়। মাথার কাজ করার ক্ষমতাও বাড়াতে
সাহায্য করে। তা ছাড়া এই হরমোনটি ক্যান্সার ও আলঝেইমারস কমাতে সাহায্য করে। তাই চিকিৎসা
বিজ্ঞানের মতেও ঘুমের সময়টা ঘর অন্ধকার রাখা খুবই দরকার।
তাছাড়া রাতে ঘর অন্ধকার করে ঘুমানোর ফলে
সুন্নতের উপর আমলও হয়ে যায় যাতে সাওয়াবও হবে আর প্রতিটি সুন্নতের অনেক বড় বড় হেকমত
ও উপকারিত রয়েছে।
তাই রাতে ঘুমানোর সময়কার আরো কিছু সুন্নত
আমল আছে যা জেনে সে মোতাবেক আমল করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য খুবই কল্যানকর হবে যেমন
আল্লাহর নাম নিয়ে ঘুমানো, খাবারের পাত্র
পানির পাত্রসমুহ ঢেকে রাখা, দরজা জানালা বন্ধ করে রাখা, চোখে সুরমা লাগানো, ইবনে আব্বাস
(রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর একটি সুরমাদানি ছিল। প্রতি রাতে (ঘুমানোর আগে) তিনি ডান চোখে
তিনবার এবং বাঁ চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ৪১)
সারাদিনের ক্লান্তি দুর করার জন্য ৩৩ বার
সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করা। তাছাড়া আয়াতুল
কুরসি ১বার, সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত ১ বার, সুরা এখলাস ৩ বার সুরা ফালাক ৩ বার, সুরা
নাস ৩ বার পড়ে আল্লাহুম্মা বি ইসমিকা আমুতু ওয়া আহিয়া পড়ে ঘুমানো সুন্নত। ঘুমানোর আগে
এই কাজ ও আমলগুলি সুন্নত ও কল্যাণকর
তাছাড়া দেরি করে ঘুমানো, খোলা আকাশের নিচে
ঘুমানো, একাকি ঘরে ঘুমানো, টেলিভিশন দেখতে দেখতে ঘুমানো, মোবাইলে ব্রাউজ করতে করতে
ঘুমানো, গল্প গুজব ও বেহুদা সময় নষ্ট করে দেরী করে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর
তাছাড়া আল্রাহ না করুক এই রাতেই যদি ঘুমে
আপনার মৃত্যু হয় তাহলে আপনার মৃত্যুর আগের শেষ আমলটি কি হবে একবার চিন্তা করে দেখুন
তাই ঘুমানোর আগে দোয়া দরুদ পড়ে তওবা এসতেগফার করে গুনাহ থেকে মাফ চেয়ে সুন্নত আমলসমুহ
করে ঘুমাবেন।
কোন মন্তব্য নেই